নতুন বাংলাদেশ নতুন ফিতনা (০৩ - সমাপ্তি পর্ব)
ক. আসুন আমরা সকলে মিলে একটা সম্প্রীতির বাংলাদেশ গড়ি, আমাদের পরিচয় হবে আমরা আগে বাংলাদেশি এরপরে মুসলমান।
- এ ধরনের বক্তব্য দিচ্ছিলেন দেশের একজন শ্রদ্ধেয় ও প্রসিদ্ধ ওয়ায়েজ। এ ধরনের কোনো বক্তব্য কোনো আলেম ও দায়ীর মুখ থেকে কাঙ্খিত না। হতে পারে কোনো বিশেষ কল্যাণের কথা ভেবে তিনি এটি বলেছেন, যদিও তা মনেপ্রাণে বিশ্বাস করেন না। তবে ভুল তা ভুলই। ক’দিন আগে এই বাঙ্গালী পরিচয়ের স্লোগানটা ছিল শাহরিয়ার কবিরদের। দুঃখের কথা, এখন তা ইসলামিকদের স্লোগান হয়ে যাচ্ছে।
খ. হিন্দু মুসলিম সবাই দেশের নাগরিক, সবার অধিকার সমান। সংখ্যালঘু বলে কোনো শব্দই থাকার দরকার নাই, বরং আমি চাই সংখ্যাগুরু আর সংখ্যালঘু শব্দের কবর হোক। আমরা চাই এক সম্প্রীতিরবাংলাদেশ গড়তে।
- এ ধরনের বক্তব্য জামাতে ইসলামীর আমীরের। হতে পারে তিনিও কথাগুলো কোনো বিশেষ কল্যাণের বিবেচনায় বলেছেন, যদিও মনেপ্রাণে বিশ্বাস করেন না। কিংবা হতে পারে, এটাই তাঁর এবং তাঁর দলের আদর্শ।
এভাবে ঈমান-কুফর, মুমিন-কাফেরের ব্যবধান তুলে দিয়ে “সম্প্রীতি” নামক এক অতি ভয়ানক ফেতনার ঘন কালো মেঘ দেখা যাচ্ছে এদেশের আকাশে।
প্রিয় ভাই, আপনি যদি মাসলাহাত আর কল্যাণের দোহাই দিয়ে নিজের পরিচয় বিকৃত করেন, তাহলে আপনি পথ হারাবেন, আর কখনও পথে ফিরে আসার সম্ভাবনা থাকবে না। পক্ষান্তরে আপনি যদি আপনার আসল পরিচয় ধরে রাখেন, তাহলে একদিন আপনি প্রতিষ্ঠা পাবেন আশা আছে।
ঝড় তুফান যতই আসুক, আত্ম পরিচয় বিকৃত করা যাবে না, ভোলা যাবে না। আজ সম্প্রীতির নামে আমরা আমাদের আত্ম পরিচয় ভুলে যেতে বসেছি। আল্লাহ রাব্বুল ইজ্জত আমরা মুসলিমদেরকে যে স্বাতন্ত্র ও সম্মান দিয়েছেন তা ভুলে নিজেদেরকে আল্লাহর দুশমনদের সমান বানিয়ে ফেলছি।
{أَفَنَجْعَلُ الْمُسْلِمِينَ كَالْمُجْرِمِينَ (35) مَا لَكُمْ كَيْفَ تَحْكُمُونَ (36)} [القلم: 35، 36]
“আচ্ছা, আমি কি অনুগতদেরকে অপরাধীদের সমান গণ্য করবো? তোমাদের কি হল? তোমরা কি রকম সিদ্ধান্ত করছো?” –সূরা কলম: ৩৫, ৩৬মুসলিম কাফের কখনও সমান হতে পারে না। মুসলিম আল্লাহর হুকুমের সামনে আত্মসমর্পণকারী, আল্লাহর হুকুমের অনুগত। পক্ষান্তরে কাফের আল্লাহর অবাধ্য, চরম অপরাধী। তো যারা অনুগত আর যারা অবাধ্য- উভয়ে কি সমান হতে পারে? আগুন পানি কি এক হতে পারে? আগুন পানিতে কি সম্প্রীতি হতে পারে? সম্পূর্ণ বিপরীতধর্মী এই দুয়ের মাঝে কখনও সম্প্রীতি, ঐক্য সম্ভব নয়। তাদের অধিকারও সমান হতে পারে না।
সম্প্রীতি ও সমান অধিকারের ফলে যা হবেঃ
- প্রথমত আল্লাহ তাআলা নারাজ হবেন। যার ফলে নতুন নতুন পরীক্ষা ও আযাব গজব আসতে থাকবে।
- ইসলামের যে স্বাতন্ত্র তা হারিয়ে যেতে থাকবে। দ্বীনে ইসলাম বিকৃত হবে। দ্বীনের এমন একটি বিকৃত ভার্সন দাঁড় হবে, যার সাথে দাজ্জালের নিউ ওয়ার্লড অর্ডারের তেমন কোনো ব্যবধান থাকবে না।
- হিন্দুরা এতোদিন যেসব কুফরি শিয়ার প্রকাশ্যে করতে পারতো না, সেগুলো এখন সমানাধিকারের ছত্রছায়ায় প্রকাশ্যে করার সাহস করবে। মসজিদে আযান যদি মাইকে হতে পারে তাহলে মন্দিরের উলুধ্বনি কেন মাইকে হতে পারবে না? – এমন দাবি ইতোমধ্যেই শুনা যাচ্ছে।
- প্রশাসনসহ দেশের সব গুরুত্বপূর্ণ পদে কাফেররা নিয়োগ পাবে। এভাবে মুসলিমদের উপর আল্লাহর দুশমনরা চেপে বসে ষড়যন্ত্র করবে। এরা এসব পদের সুবিধায় অখণ্ড ভারত প্রতিষ্ঠার মিশনে ভারতের এজেন্ট হিসাবে কাজ করবে। এভাবে দেশ এক সময় স্বাধীনতা হারাবে। অধিকন্তু কাফেরদেরকে পদে বসানোর মতো হারামটি জাতিগতভাবে করার অপরাধে পুরো জাতির উপর আল্লাহর গজব ও শাস্তি নাযিল হতে থাকবে।
- কাফেরদের বিরুদ্ধে জিহাদ ও তাদের উপর জিযিয়া আরোপ করা সহ হারবি ও আহলে যিম্মার সংশ্লিষ্ট বিধান শুধু জাতিগতভাবে পরিত্যক্ত হবে তাই না, বরং তাকে সাম্প্রদায়িক ও বর্বর বলে জ্ঞান করা হবে।
মোটকথা পুরো দ্বীন বিকৃত হওয়ার পথ খুলবে। ঈমান আকিদা নষ্ট হবে। কাফেরদের সাথে সখ্যতা বাড়তে থাকবে। তাদের উপর বিশ্বাস বাড়তে থাকবে। আমাদের শত্রুরা আমাদের উপর চেপে বসার পথ তৈয়ার হবে।
এভাবে “সম্প্রীতি” নামক জঘন্য অপরাধে লিপ্ত হওয়ার দরুন আল্লাহর দৃষ্টি থেকে আমরা পড়ে যাবো। তিনি তার শত্রুদের আমাদের উপর চাপিয়ে দিবেন। আখেরাতের আগে দুনিয়াতেই আমরা শাস্তি ভোগ করবো। আমরা নষ্ট হয়ে এমনভাবে ময়লা আবর্জনায় পরিণত হয়ে যাবো যে, এই দুনিয়াতে ইসলাম ও মুসলমান এবং মানবজাতির কল্যাণে ব্যবহার হওয়ার উপযুক্ত থাকবো না। তখন আল্লাহ তাআলা আমাদের সরিয়ে নতুন এক প্রজন্ম নিয়ে আসবেন, যারা হবে:
{يُحِبُّهُمْ وَيُحِبُّونَهُ أَذِلَّةٍ عَلَى الْمُؤْمِنِينَ أَعِزَّةٍ عَلَى الْكَافِرِينَ يُجَاهِدُونَ فِي سَبِيلِ اللَّهِ وَلَا يَخَافُونَ لَوْمَةَ لَائِمٍ } [المائدة: 54]
“যাদেরকে আল্লাহ ভালবাসবেন এবং তারাও তাঁকে ভালবাসবে। তারা মুমিনদের প্রতি হবে কোমল, কাফেরদের প্রতি হবে কঠোর। তারা আল্লাহর রাস্তায় জিহাদ করবে। কোনো নিন্দুকের নিন্দার ভয় করবে না।” –সূরা মায়িদা: ৫৪
***
Comment