আন নাসর মিডিয়া পরিবেশিত
“ফিতনার যুগে
মুজাহিদদের প্রতি নসিহত” ।।
ড. শায়খ সামী আল-উরাইদী হাফিযাহুল্লাহ ||
এর থেকে– ৫ম পর্ব
“ফিতনার যুগে
মুজাহিদদের প্রতি নসিহত” ।।
ড. শায়খ সামী আল-উরাইদী হাফিযাহুল্লাহ ||
এর থেকে– ৫ম পর্ব
দোয়া ও যিকির
দোয়া ও যিকির মুমিন বান্দার সবসময়ের অস্ত্র; বিশেষকরে ফিতনার জমানায়। সুতরাং ফিতনার সময়কালে মুসলমান বেশি বেশি দোয়া-ইস্তেগফার ও যিকিরে মশগুল থাকবে; কারণ ফিতনার জমানায় কেউ দ্বীনের উপর অটল থাকতে পারবে না, কেবল আল্লাহ যাকে অটল রাখেন, যাকে ফিতনা থেকে বাঁচিয়ে রাখেন- সে ছাড়া। আল্লাহ তা’আলা বলেন,
وَقَالَ رَبُّكُمُ ادْعُونِي أَسْتَجِبْ لَكُمْ ۚإِنَّ الَّذِينَ يَسْتَكْبِرُونَ عَنْ عِبَادَتِي سَيَدْخُلُونَ جَهَنَّمَ دَاخِرِينَ﴿٦٠﴾
‘তোমাদের পালনকর্তা বলছেন, তোমরা আমাকে ডাকো, আমি তোমাদের দোয়া কবুল করব। নিশ্চয় যারা আমার ইবাদত থেকে অহমিকা প্রদর্শন করে তারা অচিরেই লাঞ্ছিত অবস্থায় জাহান্নামে প্রবেশ করবে।’ (সূরা গাফির ৪০: ৬০)
فَاذْكُرُونِي أَذْكُرْكُمْ وَاشْكُرُوا لِي وَلَا تَكْفُرُونِ﴿١٥٢﴾
‘তোমরা আমাকে স্মরণ কর, আমি তোমাদেরকে স্মরণ করব। আর আমার শুকরিয়া আদায় কর, অকৃতজ্ঞ হয়ো না।’ – (সূরা বাকারা ২: ১৫২)
اتْلُ مَا أُوحِيَ إِلَيْكَ مِنَ الْكِتَابِ وَأَقِمِ الصَّلَاةَ ۖإِنَّ الصَّلَاةَ تَنْهَىٰ عَنِ الْفَحْشَاءِ وَالْمُنكَرِ ۗوَلَذِكْرُ اللَّـهِ أَكْبَرُ ۗوَاللَّـهُ يَعْلَمُ مَا تَصْنَعُونَ﴿٤٥﴾
আপনি আপনার প্রতি প্রত্যাদিষ্ট কিতাব পাঠ করুন এবং নামাজ কায়েম করুন। নিশ্চয় নামাজ অশ্লীল ও গর্হিত কাজ থেকে বিরত রাখে। আল্লাহর স্মরণ সর্বশ্রেষ্ঠ। আল্লাহ জানেন তোমরা যা কর। (সূরা আনকাবুত 29:৪৫)
اذْهَبْ أَنتَ وَأَخُوكَ بِآيَاتِي وَلَا تَنِيَا فِي ذِكْرِي﴿٤٢﴾
‘তুমি এবং তোমার ভাই আমার নিদর্শনাবলীসহ যাও, আর আমার যিকির থেকে গাফেল হয়ো না। (সূরা ত্বহা 20: 42)
أَمَّن يُجِيبُ الْمُضْطَرَّ إِذَا دَعَاهُ وَيَكْشِفُ السُّوءَ وَيَجْعَلُكُمْ خُلَفَاءَ الْأَرْضِ ۗأَإِلَـٰهٌ مَّعَ اللَّـهِ ۚقَلِيلًا مَّا تَذَكَّرُونَ﴿٦٢﴾
‘বল তো কে অসহায়ের ডাকে সাড়া দেন যখন সে ডাকে এবং কষ্ট দূর করেন এবং তোমাদেরকে পৃথিবীতে পূর্ববর্তীদের স্থলাভিষিক্ত করেন? সুতরাং আল্লাহর সাথে অন্য কোনো উপাস্য আছে কি? তোমরা অতি সামান্যই ধ্যান কর।’ (সূরা নামল 27:৬২)
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন,
إِنَّ الدُّعَاءَ هُوَ الْعِبَادَةُ، ثُمَّ قَرَأَ: {ادْعُونِي أَسْتَجِبْ لَكُمْ}
‘নিশ্চয়ই দোয়া-ই ইবাদত। অতঃপর তিনি এই আয়াত পাঠ করেছেন: (অনুবাদ তোমাদের প্রতিপালক বলেন,) ‘তোমরা আমাকে ডাকো, আমি তোমাদের ডাকে সাড়া দেব।’ -আবু দাউদ, তিরমিযী
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন,
عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ قَالَ قَالَ النَّبِيُّ صلى الله عليه وسلم يَقُولُ اللهُ تَعَالَى أَنَا عِنْدَ ظَنِّ عَبْدِي بِي وَأَنَا مَعَهُ إِذَا ذَكَرَنِي فَإِنْ ذَكَرَنِي فِي نَفْسِهِ ذَكَرْتُهُ فِي نَفْسِي وَإِنْ ذَكَرَنِي فِي مَلاَ ذَكَرْتُهُ فِي مَلاَ خَيْرٍ مِنْهُمْ وَإِنْ تَقَرَّبَ إِلَيَّ بِشِبْرٍ تَقَرَّبْتُ إِلَيْهِ ذِرَاعًا وَإِنْ تَقَرَّبَ إِلَيَّ ذِرَاعًا تَقَرَّبْتُ إِلَيْهِ بَاعًا وَإِنْ أَتَانِي يَمْشِي أَتَيْتُهُ هَرْوَلَةً
আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ আল্লাহ্ ঘোষণা করেন, আমার ব্যাপারে বান্দা যেমন ধারণা করে আমি তেমন আচরণ করি। বান্দা যতক্ষণ আমাকে স্মরণ করে আমি তার সাথে থাকি। যদি আমাকে মনে মনে স্মরণ করে আমিও মনে মনে স্মরণ করি। যদি আমাকে কোনো লোকসমাজে স্মরণ করে আমি তাকে এমন ব্যক্তিদের মাঝে স্মরণ করি যারা তাদের চেয়ে শ্রেষ্ঠ। যদি আমার জন্য এক বিঘাত অগ্রসর হয় তাহলে আমি তার জন্য এক হাত অগ্রসর হই, যদি এক হাত অগ্রসর হয় তাহলে আমি দু’হাত প্রসারিত সমান অগ্রসর হই, যদি আমার দিকে হেঁটে আসে তাহলে আমি দৌড়ে আসি।’ – [বুখারী-৭৪০৫,মুসলিম ৪৮/১, হাঃ ১৬৭৫, আহমাদ ৭৪২৬]
ইবনে আব্বাস রা. থেকে বর্ণিত, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যখন কোনো সমস্যার সম্মুখীন হতেন তখন বলতেন,
لا إله إلا الله الحليم العظيم، لا إله إلا الله رب العرش الكريم، لا إله إلا الله رب العرش العظيم، لا إله إلا الله رب السماوات ورب الأرض ورب العرش الكريم
এরপর দোয়া করতেন। - আহমাদ
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আমাদেরকে ফিতনার সময়গুলোতে বেশি বেশি আউযুবিল্লাহ পড়ার নির্দেশ দিতেন এবং বলতেন,
«تَعَوَّذُوا بِاللَّهِ مِنَ الْفِتَنِ مَا ظَهَرَ مِنْهَا وَمَا بَطَنَ»
‘তোমরা প্রকাশ্য-গোপন সব রকম ফিতনা থেকে আল্লাহর কাছে আশ্রয় প্রার্থনা কর।’ –মুসলিম
আনাস রা. থেকে বর্ণিত, লোকেরা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের কাছে প্রশ্ন করত। এমন কি প্রশ্ন করতে করতে তারা তাঁকে বিরক্ত করে তুলত। একদিন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মিম্বরে আরোহণ করলেন এবং বললেন, তোমরা (আজ) আমাকে যাই প্রশ্ন কর আমি তার উত্তর দেব। আনাস রা. বলেন, আমি ডানে বামে তাকাচ্ছিলাম। দেখতে পেলাম প্রত্যেকেই আপন বস্ত্রে মাথা গুজে কাঁদছে। তখন এমন এক ব্যক্তি -পারস্পরিক বাক-বিতণ্ডার সময় যাকে অন্য ব্যক্তির সন্তান বলে সম্বোধন করা হতো- উঠে জিজ্ঞেস করল, ইয়া রাসূলাল্লাহ! আমার পিতা কে? তিনি বললেন, হুযাইফা তোমার পিতা। এরপর উমর রা. সম্মুখে এসে বললেন, আমরা রব হিসেবে আল্লাহকে, দ্বীন হিসেবে ইসলামকে এবং মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে রাসূল হিসেবে মেনে পরিতুষ্ট। ফিতনার অনিষ্ট থেকে আমরা আল্লাহর নিকট আশ্রয় প্রার্থনা করছি। এরপর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, আজকের মত এত উত্তম বস্তু এবং এত খারাপ বস্তু আমি আর কখনো প্রত্যক্ষ করিনি। আমার সম্মুখে জান্নাত ও জাহান্নাম পেশ করা হয়েছে। এমনকি আমি সে দুটিকে এ দেয়ালের পাশেই দেখতে পাচ্ছিলাম।’
কাতাদা রহ. বলেন, উপরে বর্ণিত হাদিসটি নিম্নোক্ত আয়াত প্রসঙ্গে উল্লেখ করা হয়। ইরশাদ হল,
يا أيها الذين آمنوا لا تسألوا عن أشياء إن تبد لكم تسؤكم
‘হে ঈমানদারগণ! তোমরা এমন বিষয়ে প্রশ্ন কর না, যা প্রকাশিত হলে তোমরা দুঃখিত হবে।’ –বুখারী
সা’দ রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, لا إله إلا أنت سبحانك إني كنت من الظالمين মাছের পেটে থাকা অবস্থায় ইউনুস আ. এর এ দোয়ার মাধ্যমে যে মুসলমান ব্যক্তিই কোনো বিষয়ে দোয়া করবে, অবশ্যই আল্লাহ তার দোয়া কবুল করবেন।’ -তিরমিযী, আলবানী রহ. হাদিসটিকে ‘সহীহ’ বলেছেন
ইবনে উমর রা. সাফা পাহাড়ের কাছে গিয়ে পাঠ করতেন,
اللهم أحيني على سنة نبيك صلى الله عليه وسلم وتوفني على ملته وأعذني من مضلات الفتن
‘হে আল্লাহ! তুমি আমাকে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সুন্নতের উপর বাঁচিয়ে রেখো, তাঁর দ্বীনের উপর আমাকে মৃত্যু দান কর, আর আমাকে ফিতনার খারাপি থেকে রক্ষা কর।’ - আল-বায়হাকী
হুযাইফা রা. থেকে বর্ণিত তিনি বলেন,
ليأتينّعلىالناسزمان،لا ينجو فيه إلاالذي يدعو الله بدعاءٍ كدعاءالغريق
‘মানুষের নিকট এমন সময় আসবে, যখন ডুবন্ত ব্যক্তির মত দোয়াকারী ছাড়া কেউ রেহাই পাবে না।’ –(মুসান্নাফে ইবনে আবি শাইবা)
ফিতনার জমানায় নববী দোয়া ও যিকিরের অনেক হাদিস উলামায়ে কেরামের বিভিন্ন কিতাবে আলোচিত হয়েছে। অতএব, সেখানে নজর দেয়ার অনুরোধ রইল।
Comment