আন নাসর মিডিয়া পরিবেশিত
“ফিতনার যুগে
মুজাহিদদের প্রতি নসিহত” ।।
ড. শায়খ সামী আল-উরাইদী হাফিযাহুল্লাহ ||
এর থেকে– ৬ষ্ঠ পর্ব
মুজাহিদদের প্রতি নসিহত” ।।
ড. শায়খ সামী আল-উরাইদী হাফিযাহুল্লাহ ||
এর থেকে– ৬ষ্ঠ পর্ব
তওবা-ইস্তেগফার
গুনাহ থেকে তওবা এবং ইস্তেগফারের পাবন্দি বান্দাকে ফিতনা ও বিপদ-আপদের সময় সাহায্য করে, তার ভিতরে শক্তি পয়দা করে। আল্লাহ তা’আলা বলেন,
وَيَا قَوْمِ اسْتَغْفِرُوا رَبَّكُمْ ثُمَّ تُوبُوا إِلَيْهِ يُرْسِلِ السَّمَاءَ عَلَيْكُم مِّدْرَارًا وَيَزِدْكُمْ قُوَّةً إِلَىٰ قُوَّتِكُمْ وَلَا تَتَوَلَّوْا مُجْرِمِينَ﴿٥٢﴾
‘আর হে আমার কওম, তোমাদের পালনকর্তার কাছে তোমরা ক্ষমা প্রার্থনা কর, অতঃপর তাঁরই প্রতি মনোনিবেশ কর। তিনি আসমান থেকে তোমাদের উপর বারিধারা প্রেরণ করবেন এবং তোমাদের শক্তির উপর শক্তি বৃদ্ধি করবেন, তোমরা কিন্তু অপরাধীদের মত বিমুখ হয়ো না।’ -সূরা হুদ 11: ৫২
قَالَ يَا قَوْمِ لِمَ تَسْتَعْجِلُونَ بِالسَّيِّئَةِ قَبْلَ الْحَسَنَةِ ۖلَوْلَا تَسْتَغْفِرُونَ اللَّـهَ لَعَلَّكُمْ تُرْحَمُونَ﴿٤٦﴾
‘সালেহ আ. বললেন, হে আমার সম্প্রদায়, তোমরা কল্যাণের পূর্বে দ্রুত কেন অকল্যাণ কামনা করছ? তোমরা আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করছ না কেন? সম্ভবত তোমরা দয়া প্রাপ্ত হবে।’ সূরা নামল 27:৪৬
وَأَنِ اسْتَغْفِرُوا رَبَّكُمْ ثُمَّ تُوبُوا إِلَيْهِ يُمَتِّعْكُم مَّتَاعًا حَسَنًا إِلَىٰ أَجَلٍ مُّسَمًّى وَيُؤْتِ كُلَّ ذِي فَضْلٍ فَضْلَهُ ۖوَإِن تَوَلَّوْا فَإِنِّي أَخَافُ عَلَيْكُمْ عَذَابَ يَوْمٍ كَبِيرٍ﴿٣﴾
‘আর তোমরা নিজেদের পালনকর্তা সমীপে ক্ষমা প্রার্থনা কর। অনন্তর তাঁরই প্রতি মনোনিবেশ কর। তাহলে তিনি তোমাদেরকে নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত উৎকৃষ্ট জীবনোপকরণ দান করবেন এবং অধিক আমলকারীকে বেশি দান করবেন আর যদি তোমরা বিমুখতা প্রদর্শন কর তবে আমি তোমাদের উপর এক মহা দিবসের আযাবের আশঙ্কা করছি।’ -সূরা হুদ 11:৩
ইমাম শানকিত্বী রহ. أضواء البيان في إيضاح القرآن بالقرآن (২/১৬৯)-এ উল্লেখ করেন, ‘আয়াতে কারিমাটি এ কথার প্রমাণ বহন করছে যে, আল্লাহর সমীপে গুনাহ থেকে তওবা ও ইস্তেগফার নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত আল্লাহর পক্ষ থেকে উত্তম জীবনোপকরণ লাভের মাধ্যম। কারণ আল্লাহ তা’আলা এ বিষয়টিকে ধারাবাহিকভাবে তওবা-ইস্তেগফারের পর উল্লেখ করেছেন। এটি ‘শর্ত’ উল্লেখের পর ‘জাযা’ এর ধারাবাহিকতা রক্ষা করার মত।
আসল কথা হলো, مَّتَاعًا حَسَنًا ‘দ্বারা উদ্দেশ্য, প্রশস্ত রিজিক, স্বাচ্ছন্দময় জীবন, দুনিয়ার সচ্ছলতা। আর أجل مسمي দ্বারা উদ্দেশ্য, মৃত্যু। এই সূরার মধ্যেই হুদ আ. এবং আমাদের নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম প্রসঙ্গে আল্লাহর বাণী এর সুস্পষ্ট প্রমাণ,
وَيَا قَوْمِ اسْتَغْفِرُوا رَبَّكُمْ ثُمَّ تُوبُوا إِلَيْهِ يُرْسِلِ السَّمَاءَ عَلَيْكُم مِّدْرَارًا وَيَزِدْكُمْ قُوَّةً إِلَىٰ قُوَّتِكُمْ وَلَا تَتَوَلَّوْا مُجْرِمِينَ﴿٥٢﴾
‘আর হে আমার কওম, তোমাদের পালন কর্তার কাছে তোমরা ক্ষমা প্রার্থনা কর, অতঃপর তাঁরই প্রতি মনোনিবেশ কর। তিনি আসমান থেকে তোমাদের উপর বারিধারা প্রেরণ করবেন এবং তোমাদের শক্তির উপর শক্তি বৃদ্ধি করবেন। তোমরা কিন্তু অপরাধীদের মত বিমুখ হয়ো না।’ -সূরা হুদ ১১:৫২
নূহ আ. সম্পর্কে আল্লাহর বাণী,
فَقُلْتُ اسْتَغْفِرُوا رَبَّكُمْ إِنَّهُ كَانَ غَفَّارًا
অতঃপর বলেছিঃ তোমরা তোমাদের পালনকর্তার ক্ষমা প্রার্থনা কর। তিনি অত্যন্ত ক্ষমাশীল। (সূরা নূহ ৭১:১০)
يُرْسِلِ السَّمَاء عَلَيْكُم مِّدْرَارًا
তিনি তোমাদের উপর অজস্র বৃষ্টিধারা ছেড়ে দিবেন, (সূরা নুহ ৭১;১১)
وَيُمْدِدْكُمْ بِأَمْوَالٍ وَبَنِينَ وَيَجْعَل لَّكُمْ جَنَّاتٍ وَيَجْعَل لَّكُمْ أَنْهَارًا
তোমাদের ধন-সম্পদ ও সন্তান-সন্ততি বাড়িয়ে দিবেন, তোমাদের জন্যে উদ্যান স্থাপন করবেন এবং তোমাদের জন্যে নদীনালা প্রবাহিত করবেন। (সূরা নূহ ৭১:১২)
আল্লাহ বলেন:
مَنْ عَمِلَ صَالِحًا مِّن ذَكَرٍ أَوْ أُنثَى وَهُوَ مُؤْمِنٌ فَلَنُحْيِيَنَّهُ حَيَاةً طَيِّبَةً وَلَنَجْزِيَنَّهُمْ أَجْرَهُم بِأَحْسَنِ مَا كَانُواْ يَعْمَلُونَ
যে সৎকর্ম সম্পাদন করে এবং সে ঈমানদার, পুরুষ হোক কিংবা নারী আমি তাকে পবিত্র জীবন দান করব এবং প্রতিদানে তাদেরকে তাদের উত্তম কাজের কারণে প্রাপ্য পুরষ্কার দেব যা তারা করত। (সূরা আন-নাহল ১৬;৯৭)
আল্লাহর বাণী
وَلَوْ أَنَّ أَهْلَ الْقُرَى آمَنُواْ وَاتَّقَواْ لَفَتَحْنَا عَلَيْهِم بَرَكَاتٍ مِّنَ السَّمَاء وَالأَرْضِ وَلَـكِن كَذَّبُواْ فَأَخَذْنَاهُم بِمَا كَانُواْ يَكْسِبُونَ
আর যদি সে জনপদের অধিবাসীরা ঈমান আনত এবং পরহেযগারী অবলম্বন করত, তবে আমি তাদের প্রতি আসমানী ও পার্থিব নেয়ামত সমূহ উম্মুক্ত করে দিতাম। কিন্তু তারা মিথ্যা প্রতিপন্ন করেছে। সুতরাং আমি তাদেরকে পাকড়াও করেছি তাদের কৃতকর্মের বদলাতে। (সূরা আল-আরাফ ৭;৯৬)
وَلَوْ أَنَّهُمْ أَقَامُواْ التَّوْرَاةَ وَالإِنجِيلَ وَمَا أُنزِلَ إِلَيهِم مِّن رَّبِّهِمْ لأكَلُواْ مِن فَوْقِهِمْ وَمِن تَحْتِ أَرْجُلِهِم مِّنْهُمْ أُمَّةٌ مُّقْتَصِدَةٌ وَكَثِيرٌ مِّنْهُمْ سَاء مَا يَعْمَلُونَ
যদি তারা তওরাত, ইঞ্জিল এবং যা প্রতিপালকের পক্ষ থেকে তাদের প্রতি অবতীর্ণ হয়েছে, পুরোপুরি পালন করত, তবে তারা উপর থেকে এবং পায়ের নীচ থেকে ভক্ষণ করত। তাদের কিছুসংখ্যক লোক সৎপথের অনুগামী এবং অনেকেই মন্দ কাজ করে যাচ্ছে। (সূরা আল-মায়েদা ৫;৬৬)
আল্লাহর বাণী,
وَمَنْ يَتَّقِ اللَّهَ يَجْعَلْ لَهُ مَخْرَجًا
*
وَيَرْزُقْهُ مِنْ حَيْثُ لَا يَحْتَسِبُ
*
وَيَرْزُقْهُ مِنْ حَيْثُ لَا يَحْتَسِبُ
‘যে আল্লাহকে ভয় করে আল্লাহ তার জন্য (সমাধানের) পথ বের করে দেন এবং তাকে এমন জায়গা থেকে রিজিক দান করেন, যা তার কল্পনাতেও ছিল না।’(সূরা আত-তালাক ৬৫:২-৩)
ইত্যাদি অনেক আয়াতে কারিমা।
আল্লাহর বাণী,
وَمَا كَانَ اللَّـهُ لِيُعَذِّبَهُمْ وَأَنتَ فِيهِمْ ۚوَمَا كَانَ اللَّـهُ مُعَذِّبَهُمْ وَهُمْ يَسْتَغْفِرُونَ﴿٣٣﴾
‘অথচ আল্লাহ কখনই তাদের উপর আযাব নাযিল করবেন না যতক্ষণ আপনি তাদের মাঝে অবস্থান করবেন। তাছাড়া তারা যতক্ষণ ক্ষমা প্রার্থনা করতে থাকবে আল্লাহ কখনও তাদের উপর আযাব দেবেন না।’ সূরা আনফাল 8:৩৩
ইমাম তবারী রহ. এ আয়াতের তাফসীর করতে গিয়ে আবু মুসা আশআরী রা. থেকে বর্ণনা করেন,
وما كان الله ليعذبهم وأنت فيهم وما كان الله معذبهم وهم يستغفرون
এ আয়াত প্রসঙ্গে তিনি বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম দুনিয়া ছেড়ে চলে গেছেন, কিন্তু ইস্তেগফার তোমাদের মাঝে কিয়ামত পর্যন্ত বাকি থাকবে।’ -তাফসীরে তবারী: ১৩/৫১৩
Comment