'আমি শরীয়ত মোতাবেক চলি’
বাক্যটি প্রায় সকলের মুখেই শোনা যায়। কিন্তু কারো মুখে তা হীরের খনি, আবার কারো কাছে মুখের বুলি।
এ বাক্যটি তাঁর জন্যই ফিটিং বা মানানসই, যিনি শরীয়তের দলিলগুলোকে মাথায় রেখে, সর্বক্ষেত্রে তা বাস্তবায়ন করার চেষ্টা করে থাকেন। কিছু করার আগে ভেবে দেখেন, যে শরীয়ত কী বলে? শরীয়তের নির্দেশনা অনুযায়ী সে কাজ সম্পাদন করার চেষ্টা করেন।
পক্ষান্তরে ওই ব্যক্তির জন্য এ বাক্যটি মানানসই নয় , যে তার দল, মত বা আত্মপক্ষকে মাথায় রেখে শরীয়তের দলিল খুঁজে বেড়ায়। কোনো দলিল যদি নিজেদের দল বা মতের পক্ষে না আসে, তখন বিভিন্ন রকম হের-ফের করে, টেনেহিঁচড়ে তা পক্ষে আনার চেষ্টা করে। আবার কোন যঈফ বা দুর্বল দলিল পেয়ে থাকলেও এটাকে এমন ভাবে উপস্থাপন করা হয়, মনে হয় মজবুত দলিলের চেয়েও বেশি শক্তিশালী। এটা হল, নিজ ‘মত/দল মোতাবেক শরীয়ত’। যা গর্হিত ও অমার্জনীয় অপরাধ।
সম্প্রতি তালেবে এলমদের মাঝে; বরং সকল শ্রেণীর মাঝে একটি বিষয় পরিলক্ষিত, তারা ওস্তাদগণের ইলম পরিমাপ করে থাকে। এ নিয়ে নিজেদের মাঝে বিভিন্ন আঙ্গিকে ব্যাখ্যা বিশ্লেষণ করে। দল বা মতের আত্মপক্ষে ব্যাখ্যা করে। যদি ওস্তাদের কোনো উক্তি বা ব্যাখ্যা নিজেদের মতের পক্ষে না যায়, তখন তাকে ‘দালাল’ ও ‘দরবারী’ ইত্যাদি নামে উপাধিত করা হয়। এটা অবশ্যই তাদের চরম বিপর্যয়।
আমাদের প্রথম ধাপেই ভাবা উচিত, কোনো মাসায়েল বা ব্যাখ্যাকে কুরআন-সুন্নাহ ও সালাফদের জীবনাদর্শের আলোকে যাচাই করা। তা সঠিক, নাকি অপব্যাখ্যা? জমহুরের খেলাফ, নাকি মুয়াফেক? কিন্তু পরিস্থিতি এমন হয়েছে যে, ওস্তাদের মুখ থেকে কোনো কথা বের হলেই আগে ভাবা হয়, কথাটি আমার আত্মপক্ষের কি না? আমার পক্ষে আসলে তা- হক, বিপক্ষে গেলে তা-বাতিল।
এটি হল, ‘আমি শরীয়ত মোতাবেক চলি, মনমতো জীবন গড়ি!’ স্লোগানের মত। শরীয়তকে-ই নিজের মতো করে বানিয়ে নেই।
অথচ শরীয়তকে নিজের মতো নয়; বরং মুমিনের কাজ হল, নিজেকে-ই শরীয়তের আলোকে শোভিত করা। কুরআনের আলোকে জীবন সাজানো। নিজের সর্বক্ষেত্র সুন্নাহের রঙে রঙিন করা। সালাফদের পদাঙ্ক অনুসরণ করা। তাহলেই বলা যাবে ‘আমি শরীয়ত মোতাবেক চলি’।
আল্লাহ তা‘আলা আমাদের সকলকে শরীয়তের পথে অবিচল রাখুন। শরীয়তের আলোকে হক-বাতিল নির্ণয় করার যোগ্যতা দান করুন। সালাফদের মানহাজের কদম-বকদম অনুসরণ করার তাওফীক দান করুন। আমীন।
Comment