বইমেলায় একটা প্রকাশনীর স্টলে তসলিমা নাসরিনের বই বিক্রি হচ্ছে। সেই স্টলের সামনে গিয়ে প্রতিবাদ করেছে মেলায় আগতদের একটা অংশ। প্রতিবাদকারীদের বেশিরভাগ মাদ্রাসা স্টুডেন্ট। স্টলের সামনে উত্তপ্ত বাক্যবিনিময়, চিৎকার চেচামেচি।
পুলিশ আসলো। ঝগড়ার মধ্যেই প্রকাশক; যিনি একজন হিন্দু, জয় বাংলা স্লোগান দিলো। চড় মেরে বসলো একজন মাদ্রাসা ছাত্রকে। উত্তেজনা আরও বেড়ে গেল। পুলিশ স্টল বন্ধ করে দিল। যে বই নিয়ে তর্ক, সেটা মেলায় নিষিদ্ধ করা হলো।
ওদিকে সোশ্যাল মিডিয়াতে ছড়ানো হল, প্রকাশনীর স্টলে আক্রমণ আর ভাঙচুর হয়েছে। সরকারের উপদেষ্টা, সরকারি দলের ছাত্র-সংগঠন, ফেসবুক ইনফ্লুয়েন্সার, এবং রাজনৈতিক উদ্যোগের সাথে জড়িত লোকেরা একযোগে ঝাঁপিয়ে পড়লো তাওহিদী জনতার গুষ্টি উদ্ধারে।
সরকারের একজন উপদেষ্টা ফেসবুকে পোস্টে এসে তাওহিদী জনতা-কে মিষ্টিমধুর ভাষায় রীতিমতো হুমকি দিলো। তারপর সরকারের পক্ষ থেকে অফিশিয়ালি দোষীদের বিচারের আওতায় আনার ঘোষণা দেওয়া হল।
পুরো ব্যাপারটার মধ্যে বাংলাদেশের সমাজ ও রাষ্ট্রের কাঠামোগত ইসলামবিদ্বেষ এবং সেক্যুলার-প্রগতিশীল গোষ্ঠীর কালচারাল হেজেমনির ব্যাপারটা খুব ভালোভাবে ধরা পড়ে। এবং এটার সবচেয়ে প্রকট রূপ পাওয়া যায় উপদেষ্টা মাহফুযের ফেসবুক স্ট্যাটাসে। নিওকলোনিয়াল ক্ষমতার ভাষা, প্রভুত্ববাদী মনোভাব, হুমকি এবং হেজেমনিক বয়ানের একটা ভালো মিশ্রণ বলা যায় তার এই লেখাকে।
সংক্ষেপে কয়েকটা দিক দেখাচ্ছি। এটা একটা অসম্পূর্ণ লিস্ট।
১। চড় মারলো প্রকাশক কিন্তু সহিংসতার অভিযোগ করা হল মাদ্রাসার ছাত্রদের বিরুদ্ধে। উপদেষ্টা মাহফুয সেই ন্যারেটিভেই লিখলো। পুরো ঘটনা না জেনেই আগেই মাদ্রাসা ছাত্রদের দোষ দেওয়া, এটা একটা ক্লাস-সেক্যুলারিস্ট বায়াস।
যেহেতু মাদ্রাসার ছাত্র তার মানে এরা সহজাতভাবেই সহিংস, এধরণের মনোভাব। যার ফলে একজন উচ্চপদস্থ সরকারি অফিশিয়াল হয়েও সে একটা ভুল ন্যারেটিভকে কার্যত অ্যামপ্লিফাই করলো। সে মাদ্রাসার ছাত্রদের ব্যাপারে নেতিবাচক স্টেরিওটাইপকে প্রচার করলো।
২। কিছু মানুষ একজন কুখ্যাত ইসলামবিদ্বেষী লেখিকার বই প্রকাশের প্রতিবাদ করছেন। অহিংসভাবেই করেছেন, কিন্তু এটাকে উপস্থাপন করা হলো মব হিসেবে। এই একই কাজ যদি ভিন্ন কোনো লেখকের বইয়ের বিরুদ্ধে ভিন্ন কোনো জনগোষ্ঠীর সদস্যরা করতো তাহলে কি সেটা মব হতো?
ইসলামপন্থীদের জমায়েত মানেই মব, দেশের স্থিতিশীলতা, নিরাপত্তা আর উন্নতির জন্য হুমকি। তাদের কাজ মানেই অরাজকতা, তাদের দাবিদাওয়া মাত্রই অযৌক্তিক, উন্মাদনা এইধরনের ফ্রেমিং।
৩। উপদেষ্টা মাহফুয তার ফেসবুক পোস্টে স্বীকার করলো ইসলামপন্থীরা গত দেড় দশক যাবত কাঠামোগত যুলুমের শিকার। তারপর এর সাথে হুমকি যুক্ত করলো। চিন্তা করুন তো, এটা কি পাহাড়ের এথনিক গ্রুপ কিংবা অন্য ধর্মের অনুসারীদের এভাবে বলা হতো?
তোমরা পাহাড়িরা ১৫ বছর পর একটু আর সংস্কৃতি পালনের সুযোগ পাচ্ছো, এখন আহাম্মকি আর উগ্রতা করে এটা নষ্ট করো না। তোমরা হিন্দুরা ১৫ বছর পর শান্তিতে ধর্ম আর সংস্কৃতি পালনের সুযোগ পাচ্ছো, আহাম্মকি আর উগ্রতা করে নষ্ট করো না। যুলুম করবা না, যুলুমের শিকারও হবা না -শুনতে কেমন লাগছে?
উপদেষ্টা মাহফুয আর সরকার যেন কলোনাইযারদের টোনে কথা বলছে।
৪। লক্ষণীয় বিষয় হল রাষ্ট্র, মিডিয়া আর সুশীল সমাজ যে ১৫ বছর ধরে ইসলামপন্থীদের সাথে যুলুম করেছে, এর জন্য এই গোষ্ঠীগুলোর পক্ষ থেকে কখনো দুঃখপ্রকাশ করা হয়নি। সম্ভবত প্রথমবারের মতো রাষ্ট্রের একজন উচ্চপদস্থ অফিশিয়াল এখানে সেটা স্বীকার করলো, তবে সেটাও থ্রেট দেওয়ার জন্য। আর কোনো জনগোষ্ঠীর সাথে এমন আচরণ করা হয়?
৫। জুলাই গণঅভ্যুত্থানে ইসলামপন্থীরা সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করেছেন, আহত হয়েছেন, প্রাণ দিয়েছেন। যাত্রাবাড়ী এবং উত্তরার মতো গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টে ইসলামপন্থীরা আন্দোলনের ফ্রন্টলাইনে ছিলেন। কিন্তু উপদেষ্টা মাহফুযের কথার ধাঁচে মনে হচ্ছে বৈছাআ, জানাক আর ইউনুস সরকার মনে হয় তাদের ওপর দয়া করছে। অদ্ভুত ঔদ্ধত্য!
যেন তাওহিদী জনতা-কে আর সবার সমান হক দেওয়া রাষ্ট্রের দয়াদাক্ষিণ্যের বিষয়। অন্য সবাই ধর্ম আর সংস্কৃতি পালন করতে পারবে, এটা নিশ্চিত করা রাষ্ট্রের দায়িত্ব। কিন্তু মুসলিমদের এটা পালন করতে দেওয়া হল রাষ্ট্রের খয়রাতি ঔদার্য! এখন মুসলিমরা যদি ভক্তিভরে সরকারবাহাদুরের কথা না শোনে তাহলে কিন্তু এগুলো আবার সরিয়ে নেওয়া হবে।
৬। উপদেষ্টা মাহফুযের বক্তব্য প্রচ্ছন্ন হুমকি। "এটাই শেষ অনুরোধ, যুলুম অবধারিত হবে এসব কথার অর্থ স্পষ্ট। পাশাপাশি 'মব', 'আহাম্মকি', 'উগ্রতা', এসব শব্দের মাধ্যমে ইসলামপন্থীদের ওপর সহিংসতার বৈধতা তৈরির চেষ্টাও স্পষ্ট।
৭। বইমেলায় একজন কুখ্যাত এবং সক্রিয় ইসলাম বিদ্বেষী, ভারতীয় এজেন্ট, এবং আওয়ামী জাহেলিয়াতের কট্টর সমর্থকের বই বিক্রি হওয়া কতটা যৌক্তিক, এটা নিয়ে প্রশ্ন উঠতে পারে। একজন উচ্চ-মধ্যবিত্ত হিন্দু প্রকাশক কেন মুসলিম মাদ্রাসা ছাত্রকে চড় মারবে? কেন জয় বাংলা স্লোগান দেওয়া হলো -এগুলো নিয়ে প্রশ্ন উঠতে পারতো।
কিন্তু উপদেষ্টা মাহফুয এবং তার অনুসারীরা এ পুরো বিষয়টাকে এড়িয়ে গিয়ে কাল্পনিক মব আর সহিংসতার ওপর বয়ান দাঁড় করানোর চেষ্টা করেছে। উল্লেখ্য চড় মারা প্রকাশকের বিচারের কথা কিন্তু উপদেষ্টা বলেনি, সরকারও বলেনি।
৮। মাদ্রাসা ছাত্ররা এই সিনারিওতে সব দিক থেকে ভিকটিম। তসলিমার বই বিক্রি করতে দেওয়ার মাধ্যমে একদিকে তাদের সেন্টিমেন্টে আঘাত করা হলো। প্রকাশকের কাছ থেকে মৌলবাদী বলে গালি শুনলো। প্রকাশকের চড় মারলো। তারপর উপদেষ্টা মাহফুয আর তার সোশ্যাল মিডিয়া মিনিয়নরা হুমকি দিলো, তারপর আবার সরকারের পক্ষ থেকে বিচারের আওতায় আনার কথা বলা হল।
ভিকটিমকে আক্রমণকারী হিসেবে দেখানোর এ ব্যাপারটা বারবার হয়ে আসছে। এটা শাপলা চত্বরে হেফাজতের তাণ্ডব ন্যারেটিভের পুনরাবৃত্তি কেবল।
বইমেলার ঘটনা দেখিয়ে দিল বাংলাদেশে কাঠামোগত ইসলামবিদ্বেষ কতটা গভীর। মিডিয়া, রাষ্ট্র, ক্ষমতাসীন গোষ্ঠী একসঙ্গে ঝাঁপিয়ে পড়লো ইসলামপন্থীদের ভিলিফাই করতে, হুমকি দিতে, মিথ্যা ন্যারেটিভ ছড়াতে। এটা বাংলাদেশের আর কোনো গোষ্ঠীর সাথে হয়নি, হতো না, হবে না। ইসলামকে আকড়ে ধরে জনপরিসরে এলে মুসলিম কার্যত দ্বিতীয় শ্রেণির নাগরিক।
৯০% মুসলিমের দেশ হওয়া সত্ত্বেও এই বাস্তবতা এটা হাসিনার বানানো না, শাহবাগেরও না। এ বাস্তবতার শেকড় নিহিত সেক্যুলার-প্রগতিশীলদের কালচারাল হেজেমনি, বাঙালি জাতীয়তাবাদের বয়ান এবং পোস্ট-কলোনিয়াল রাষ্ট্রের ইসলাম নিয়ন্ত্রণের রাজনীতিতে।
বিষবৃক্ষ উপড়ে ফেলতে হলে গোঁড়াতে হাত দিতে হবে।
পুলিশ আসলো। ঝগড়ার মধ্যেই প্রকাশক; যিনি একজন হিন্দু, জয় বাংলা স্লোগান দিলো। চড় মেরে বসলো একজন মাদ্রাসা ছাত্রকে। উত্তেজনা আরও বেড়ে গেল। পুলিশ স্টল বন্ধ করে দিল। যে বই নিয়ে তর্ক, সেটা মেলায় নিষিদ্ধ করা হলো।
ওদিকে সোশ্যাল মিডিয়াতে ছড়ানো হল, প্রকাশনীর স্টলে আক্রমণ আর ভাঙচুর হয়েছে। সরকারের উপদেষ্টা, সরকারি দলের ছাত্র-সংগঠন, ফেসবুক ইনফ্লুয়েন্সার, এবং রাজনৈতিক উদ্যোগের সাথে জড়িত লোকেরা একযোগে ঝাঁপিয়ে পড়লো তাওহিদী জনতার গুষ্টি উদ্ধারে।
সরকারের একজন উপদেষ্টা ফেসবুকে পোস্টে এসে তাওহিদী জনতা-কে মিষ্টিমধুর ভাষায় রীতিমতো হুমকি দিলো। তারপর সরকারের পক্ষ থেকে অফিশিয়ালি দোষীদের বিচারের আওতায় আনার ঘোষণা দেওয়া হল।
পুরো ব্যাপারটার মধ্যে বাংলাদেশের সমাজ ও রাষ্ট্রের কাঠামোগত ইসলামবিদ্বেষ এবং সেক্যুলার-প্রগতিশীল গোষ্ঠীর কালচারাল হেজেমনির ব্যাপারটা খুব ভালোভাবে ধরা পড়ে। এবং এটার সবচেয়ে প্রকট রূপ পাওয়া যায় উপদেষ্টা মাহফুযের ফেসবুক স্ট্যাটাসে। নিওকলোনিয়াল ক্ষমতার ভাষা, প্রভুত্ববাদী মনোভাব, হুমকি এবং হেজেমনিক বয়ানের একটা ভালো মিশ্রণ বলা যায় তার এই লেখাকে।
সংক্ষেপে কয়েকটা দিক দেখাচ্ছি। এটা একটা অসম্পূর্ণ লিস্ট।
১। চড় মারলো প্রকাশক কিন্তু সহিংসতার অভিযোগ করা হল মাদ্রাসার ছাত্রদের বিরুদ্ধে। উপদেষ্টা মাহফুয সেই ন্যারেটিভেই লিখলো। পুরো ঘটনা না জেনেই আগেই মাদ্রাসা ছাত্রদের দোষ দেওয়া, এটা একটা ক্লাস-সেক্যুলারিস্ট বায়াস।
যেহেতু মাদ্রাসার ছাত্র তার মানে এরা সহজাতভাবেই সহিংস, এধরণের মনোভাব। যার ফলে একজন উচ্চপদস্থ সরকারি অফিশিয়াল হয়েও সে একটা ভুল ন্যারেটিভকে কার্যত অ্যামপ্লিফাই করলো। সে মাদ্রাসার ছাত্রদের ব্যাপারে নেতিবাচক স্টেরিওটাইপকে প্রচার করলো।
২। কিছু মানুষ একজন কুখ্যাত ইসলামবিদ্বেষী লেখিকার বই প্রকাশের প্রতিবাদ করছেন। অহিংসভাবেই করেছেন, কিন্তু এটাকে উপস্থাপন করা হলো মব হিসেবে। এই একই কাজ যদি ভিন্ন কোনো লেখকের বইয়ের বিরুদ্ধে ভিন্ন কোনো জনগোষ্ঠীর সদস্যরা করতো তাহলে কি সেটা মব হতো?
ইসলামপন্থীদের জমায়েত মানেই মব, দেশের স্থিতিশীলতা, নিরাপত্তা আর উন্নতির জন্য হুমকি। তাদের কাজ মানেই অরাজকতা, তাদের দাবিদাওয়া মাত্রই অযৌক্তিক, উন্মাদনা এইধরনের ফ্রেমিং।
৩। উপদেষ্টা মাহফুয তার ফেসবুক পোস্টে স্বীকার করলো ইসলামপন্থীরা গত দেড় দশক যাবত কাঠামোগত যুলুমের শিকার। তারপর এর সাথে হুমকি যুক্ত করলো। চিন্তা করুন তো, এটা কি পাহাড়ের এথনিক গ্রুপ কিংবা অন্য ধর্মের অনুসারীদের এভাবে বলা হতো?
তোমরা পাহাড়িরা ১৫ বছর পর একটু আর সংস্কৃতি পালনের সুযোগ পাচ্ছো, এখন আহাম্মকি আর উগ্রতা করে এটা নষ্ট করো না। তোমরা হিন্দুরা ১৫ বছর পর শান্তিতে ধর্ম আর সংস্কৃতি পালনের সুযোগ পাচ্ছো, আহাম্মকি আর উগ্রতা করে নষ্ট করো না। যুলুম করবা না, যুলুমের শিকারও হবা না -শুনতে কেমন লাগছে?
উপদেষ্টা মাহফুয আর সরকার যেন কলোনাইযারদের টোনে কথা বলছে।
৪। লক্ষণীয় বিষয় হল রাষ্ট্র, মিডিয়া আর সুশীল সমাজ যে ১৫ বছর ধরে ইসলামপন্থীদের সাথে যুলুম করেছে, এর জন্য এই গোষ্ঠীগুলোর পক্ষ থেকে কখনো দুঃখপ্রকাশ করা হয়নি। সম্ভবত প্রথমবারের মতো রাষ্ট্রের একজন উচ্চপদস্থ অফিশিয়াল এখানে সেটা স্বীকার করলো, তবে সেটাও থ্রেট দেওয়ার জন্য। আর কোনো জনগোষ্ঠীর সাথে এমন আচরণ করা হয়?
৫। জুলাই গণঅভ্যুত্থানে ইসলামপন্থীরা সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করেছেন, আহত হয়েছেন, প্রাণ দিয়েছেন। যাত্রাবাড়ী এবং উত্তরার মতো গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টে ইসলামপন্থীরা আন্দোলনের ফ্রন্টলাইনে ছিলেন। কিন্তু উপদেষ্টা মাহফুযের কথার ধাঁচে মনে হচ্ছে বৈছাআ, জানাক আর ইউনুস সরকার মনে হয় তাদের ওপর দয়া করছে। অদ্ভুত ঔদ্ধত্য!
যেন তাওহিদী জনতা-কে আর সবার সমান হক দেওয়া রাষ্ট্রের দয়াদাক্ষিণ্যের বিষয়। অন্য সবাই ধর্ম আর সংস্কৃতি পালন করতে পারবে, এটা নিশ্চিত করা রাষ্ট্রের দায়িত্ব। কিন্তু মুসলিমদের এটা পালন করতে দেওয়া হল রাষ্ট্রের খয়রাতি ঔদার্য! এখন মুসলিমরা যদি ভক্তিভরে সরকারবাহাদুরের কথা না শোনে তাহলে কিন্তু এগুলো আবার সরিয়ে নেওয়া হবে।
৬। উপদেষ্টা মাহফুযের বক্তব্য প্রচ্ছন্ন হুমকি। "এটাই শেষ অনুরোধ, যুলুম অবধারিত হবে এসব কথার অর্থ স্পষ্ট। পাশাপাশি 'মব', 'আহাম্মকি', 'উগ্রতা', এসব শব্দের মাধ্যমে ইসলামপন্থীদের ওপর সহিংসতার বৈধতা তৈরির চেষ্টাও স্পষ্ট।
৭। বইমেলায় একজন কুখ্যাত এবং সক্রিয় ইসলাম বিদ্বেষী, ভারতীয় এজেন্ট, এবং আওয়ামী জাহেলিয়াতের কট্টর সমর্থকের বই বিক্রি হওয়া কতটা যৌক্তিক, এটা নিয়ে প্রশ্ন উঠতে পারে। একজন উচ্চ-মধ্যবিত্ত হিন্দু প্রকাশক কেন মুসলিম মাদ্রাসা ছাত্রকে চড় মারবে? কেন জয় বাংলা স্লোগান দেওয়া হলো -এগুলো নিয়ে প্রশ্ন উঠতে পারতো।
কিন্তু উপদেষ্টা মাহফুয এবং তার অনুসারীরা এ পুরো বিষয়টাকে এড়িয়ে গিয়ে কাল্পনিক মব আর সহিংসতার ওপর বয়ান দাঁড় করানোর চেষ্টা করেছে। উল্লেখ্য চড় মারা প্রকাশকের বিচারের কথা কিন্তু উপদেষ্টা বলেনি, সরকারও বলেনি।
৮। মাদ্রাসা ছাত্ররা এই সিনারিওতে সব দিক থেকে ভিকটিম। তসলিমার বই বিক্রি করতে দেওয়ার মাধ্যমে একদিকে তাদের সেন্টিমেন্টে আঘাত করা হলো। প্রকাশকের কাছ থেকে মৌলবাদী বলে গালি শুনলো। প্রকাশকের চড় মারলো। তারপর উপদেষ্টা মাহফুয আর তার সোশ্যাল মিডিয়া মিনিয়নরা হুমকি দিলো, তারপর আবার সরকারের পক্ষ থেকে বিচারের আওতায় আনার কথা বলা হল।
ভিকটিমকে আক্রমণকারী হিসেবে দেখানোর এ ব্যাপারটা বারবার হয়ে আসছে। এটা শাপলা চত্বরে হেফাজতের তাণ্ডব ন্যারেটিভের পুনরাবৃত্তি কেবল।
বইমেলার ঘটনা দেখিয়ে দিল বাংলাদেশে কাঠামোগত ইসলামবিদ্বেষ কতটা গভীর। মিডিয়া, রাষ্ট্র, ক্ষমতাসীন গোষ্ঠী একসঙ্গে ঝাঁপিয়ে পড়লো ইসলামপন্থীদের ভিলিফাই করতে, হুমকি দিতে, মিথ্যা ন্যারেটিভ ছড়াতে। এটা বাংলাদেশের আর কোনো গোষ্ঠীর সাথে হয়নি, হতো না, হবে না। ইসলামকে আকড়ে ধরে জনপরিসরে এলে মুসলিম কার্যত দ্বিতীয় শ্রেণির নাগরিক।
৯০% মুসলিমের দেশ হওয়া সত্ত্বেও এই বাস্তবতা এটা হাসিনার বানানো না, শাহবাগেরও না। এ বাস্তবতার শেকড় নিহিত সেক্যুলার-প্রগতিশীলদের কালচারাল হেজেমনি, বাঙালি জাতীয়তাবাদের বয়ান এবং পোস্ট-কলোনিয়াল রাষ্ট্রের ইসলাম নিয়ন্ত্রণের রাজনীতিতে।
বিষবৃক্ষ উপড়ে ফেলতে হলে গোঁড়াতে হাত দিতে হবে।
---কালেক্টেড---
Comment