আন নাসর মিডিয়াপরিবেশিত
“ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে
একবিংশ শতাব্দীর গণতন্ত্র’’
(সূরা আসরের আলোকে)
।।মাওলানা আসেম উমর হাফিজাহুল্লাহ ||
এর থেকে– ১২তম পর্ব
“ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে
একবিংশ শতাব্দীর গণতন্ত্র’’
(সূরা আসরের আলোকে)
।।মাওলানা আসেম উমর হাফিজাহুল্লাহ ||
এর থেকে– ১২তম পর্ব
হক্কানী উলামায়ে কেরাম ও وَتَوَاصَوْا بِالْحَقِّ
উপরোক্ত আয়াত ও হাদীস যেগুলো হক্ব বলা এবং হক্বকে লুকানোর ব্যাপারে এসেছে, এগুলোই উলামায়ে হক্কানীর ঘুম হারাম করে দেওয়ার জন্য যথেষ্ট। বিশেষ করে, বর্তমান প্রেক্ষাপটে যেহেতু অডিও-ভিডিও ভাষণের জয়জয়কার চলছে এবং দ্বীনের নামে বিচিত্র রকমের কথা বলে হক্বকে বাতিল, কুফরকে ইসলাম আর ইসলামকে ইসলামের বাহিরের প্রমাণ করার অপপ্রয়াস চলছে।
প্রভাবশালীগোষ্ঠী তাদের পদলেহী সরকারি মোল্লাদের মাধ্যমে তাদের প্রবৃত্তি ও ইচ্ছাকে ইসলাম প্রমাণ করার চেষ্টায় লিপ্ত। এহেন পরিস্থিতিতে হক্কানী উলামায়ে কেরামের উপর ফরয হলো- তারা দ্বীনকে তার মূল অবস্থার উপর প্রতিষ্ঠিত রাখবেন। শরয়ী পরিভাষা, তার সঠিক অর্থ ও ব্যাখ্যাকে হেফাযত করবেন। কুফর ও ইসলামের সীমারেখা রক্ষা করবেন। তার জন্য যদিও আসলাফ ও আকাবিরদের পদ্ধতি তথা শাসকগোষ্ঠীর আক্রোশ, জেল-জুলুম, দেশান্তর এবং ফাঁসি বরণ করে নিতে হয়। এটাই তো সত্যিকারের উলামাদের উত্তরাধিকার। উত্তরসূরি তো ওরাই হয়- যারা উত্তরাধিকার অর্জন করে নেয়।
কুফরী নেযাম ও ব্যবস্থাপনার প্রতি আপনি দৃষ্টি মেললে দেখবেন, তারা কতটা পাবন্দি ও ধারাবাহিকতার সাথে কুফরী ও পাপাচারের প্রচার-প্রসার করে যাচ্ছে। মিডিয়ার মাধ্যমে দিনরাত মেহনত করে যাচ্ছে তারা। তাদের মেহনতের উদ্দেশ্য একটাই- অপব্যাখ্যা ও মিথ্যাচারের মাধ্যমে কুফর ও ইসলামকে গোঁজামিল করে দেওয়া; যাতে সাধারণ মুসলমান তো বটেই, বিশেষ মুসলমানরাও ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে যায়। এসব দেখতে দেখতে সমাজে এমন সব পাপাচার ছড়িয়ে পড়ে, কয়েক বছর পূর্বে যার কল্পনাও করা যেত না। এমনকি দ্বীনদার শ্রেণীরাও এমন এমন পাপাচারে জড়িয়ে পড়ে, যার কল্পনা করাও ধার্মিক পরিবারে পাপ মনে করা হতো। সবচেয়ে দুঃখের কথা হলো, এ পাপগুলোকে পাপ মনে করার অনুভূতিটুকুই বের হয়ে যাচ্ছে মানুষের অন্তর থেকে।
এভাবে কোনো ভাল কাজ থেকে বাধা দেওয়ার প্রক্রিয়া চালানো হলে তার প্রভাবও সমাজের উপর পড়ে। ফলে সমাজ এ ভাল কাজকে ভাল মনে করা সত্ত্বেও তা থেকে বিরত থাকতে শুরু করে। তারপর এমন একটা সময় আসে, যখন ঐ কাজটা করতে সমাজের সামনে লজ্জা অনুভব করতে শুরু করে।
বর্তমান নতুন সমাজব্যবস্থার প্রতি গভীরভাবে দৃষ্টি মেললে স্পষ্টভাবে বুঝে আসে যে, মানুষ কিন্তু জন্মগতভাবে খুব একটা খারাপ নয়, কিন্তু সমাজ ও পারিপার্শ্বিক পরিবেশের কারণে সে মন্দ হতে বাধ্য হয়ে যায়। অথবা সে খারাপ তো হয় না, কিন্তু নিজেকে সমাজের সাথে তাল মিলিয়ে চলার জন্য খারাপ সাজার চেষ্টা করে।
বুঝা গেল وَتَوَاصَوْا بِالْحَقِّ এর আমল সমাজের পরিবর্তন সাধন ও সংশোধনের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। তাই যদি দ্বীনের দায়ীগণ সমাজকে সংশোধন করতে চান; তাহলে তাদেরকে প্রতিটি ক্ষেত্রে وَتَوَاصَوْا بِالْحَقِّ এর আমলকে খুব জোরালোভাবে চালু করতে হবে। বরং তার উপরের স্তরের দাওয়াত তথা বলপূর্বক দাওয়াতের সাথে মিলিয়ে দাওয়াতকে জোরালো ও মজবুত করার দিকে ক্রমান্বয়ে অগ্রসর হতে হবে। যে যতটুকু শক্তি ব্যয় করে এ আমল করার সামর্থ্য রাখে, তাকে ততটুকুই করা চাই। আল্লাহর হুকুম পালনে নির্দেশ দিতে কাউকে ভয় করা উচিত নয়। আল্লাহ কর্তৃক নিষিদ্ধ বিষয় থেকে নিষেধ করতে কাউকে পরোয়া করা যাবে না। এ আমল ব্যক্তিগতভাবেও করতে হবে। পারিবারিক, গ্রামভিত্তিক, গোত্রভিত্তিক এবং সর্বোপরি রাষ্ট্রীয়ভাবেও করা চাই। এতে যে যতটুকু অংশ নেবে, সে ততটুকুই ক্ষতি ও অনিষ্ট থেকে বাঁচতে পারবে এবং ততটুকুই ফায়দা অর্জন করতে পারবে। কারণ প্রবহমান সময়ের স্রোতে হয়তো ক্ষতির বোঝা ভারী করে চলছে, নয়তো লাভের স্টক সমৃদ্ধ করে যাচ্ছে।
Comment