হেযবুত তওহীদের কিছু অপকৌশল
___________________
হেযবুত তওহীদের এসব ভ্রান্ত ও কুফুরী মতবাদ দেখার পর স্বভাবতই একজন মানুষের মনে প্রশ্ন জাগবে, এতসব কুফুরী মতবাদ সত্ত্বেও কীভাবে তারা মুসলমানদেরকে ধোঁকা দিচ্ছে? কোন্ কৌশলে তারা সরলমনা মুসলমানদের ঈমান হরণের পাঁয়তারা করছে? সামনের আলোচনায় আমরা তাদের এজাতীয় কয়েকটি অপকৌশল ধরিয়ে দিতে চেষ্টা করব ইনশাআল্লাহ।
১. উলামায়ে কেরামের সমালোচনা
যে কোনো ভ্রান্তি ছড়ানোর পেছনে প্রধান বাধা উলামায়ে কেরাম। তাই হেযবুত তওহীদের লোকেরা কথায় কথায় উলামায়ে কেরামের সমালোচনা করে। ‘ধর্মব্যবসায়ী’ বলে গালি দেয়। তাদের নামে মিথ্যা প্রোপাগান্ডা ছড়ায়। জনমানুষের মনে উলামায়ে কেরামের প্রতি বিতৃষ্ণা ও বিদ্বেষ ছড়িয়ে দিতে তারা যেন বদ্ধ পরিকর। অথচ যে কেউ একটু চিন্তা করলেই বুঝতে পারবেন, বাস্তবিকই যদি তাদের ইসলাম প্রচারের উদ্দেশ্য থাকত, তবে উলামায়ে কেরামের সমালোচনা করার কোনো প্রয়োজন ছিল না।
২. কথার মারপ্যাঁচ
এটি তাদের ভ্রান্তি ছড়ানোর অন্যতম একটি কৌশল। অনেকগুলো ভালো ভালো কথার মাঝখানে তারা দুয়েকটা ভ্রান্তির কথা ঢুকিয়ে দেয়। কিংবা কুফুরী মতবাদগুলোকে এমনভাবে উপস্থাপন করে যে, সরলমনা মুসলমানগণ তা ঠিক ধরতে পারেন না। তাদের কথায় প্রভাবিত হয়ে যান। বিষয়টা বোঝার জন্য আমরা একটি উদাহরণ টানছি। ‘সব ধর্মের লোকেরাই জান্নাতে যেতে পারবে’ এমন ভ্রান্ত মতবাদকে বাস্তবায়ন করার জন্য ‘দৈনিক দেশেরপত্র সংকলন, সংখ্যা– ২৪’-এর ২৫ নং পৃষ্ঠায় বলা হয়েছে– “এখানেই প্রশ্ন, এসলামের শেষ সংস্করণ এসে যাওয়ার পরও এসলাম গ্রহণ না করে, পূর্ববর্তী বিশ্বাসে স্থির থেকে কেউ কি স্বর্গে যেতে পারবেন? এর জবাব হচ্ছে, হ্যাঁ, অবশ্যই তাদেরও জান্নাতে যাওয়ার পথ খোলা আছে। এক্ষেত্রে শর্ত হলো, তাদেরকে শেষ নবী ও শেষ গ্রন্থ কোর’আনকে সত্য বোলে বিশ্বাস কোরতে হবে।”
যে কোনো বুদ্ধিমান মানুষ একটু গভীরভাবে চিন্তা করলেই বুঝতে পারবেন, উপরিউক্ত কথার প্রথম অংশ দ্বিতীয় অংশের সম্পূর্ণ বিপরীত। শেষ নবী ও কুরআনকে বিশ্বাস করে কারো পক্ষে পূর্ববর্তী বিশ্বাসে স্থির থাকা সম্ভব নয়। আবার পূর্ববর্তী ধর্মে বহাল থেকে কারো জন্য আখেরী নবী ও কুরআনের প্রতি ঈমান আনাও সম্ভব নয়। অথচ এভাবে কথার মারপ্যাঁচেই তারা সরলমনা মানুষদের ধোঁকা দিয়ে থাকে।
৩. কুরআন-হাদীসের অপব্যাখ্যা
ইসলামকে বিকৃতভাবে উপস্থাপন করতে গিয়ে স্বভাবতই হেযবুত তওহীদের লোকদেরকে কুরআনের বহু আয়াত এবং বহু হাদীসের মধ্যে অপব্যাখ্যার আশ্রয় নিতে হয়েছে। সেসবের তালিকা অনেক দীর্ঘ। এখানে কেবল বোঝার জন্য আমরা মাত্র একটি উদাহরণ উল্লেখ করছি। হেযবুত তওহীদের লোকেরা ‘ইসলাম বিকৃত এবং সকল মুসলমান কাফের’ এই কুফুরী মতবাদকে প্রতিষ্ঠা করার জন্য দলীল হিসেবে একটি হাদীস উল্লেখ করে। হাদীসটি হল, রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন–
عُمْرُ أُمَّتِيْ مِنْ سِتِّيْنَ سَنَةً إِلَى سَبْعِيْنَ سَنَةً.
আমার উম্মতের সদস্যদের বয়স (বা আয়ু) হবে ৬০ থেকে ৭০ বছর। –জামে তিরমিযী, হাদীস ২৩৩১
এই হাদীসে পুরো উম্মতের বয়সের কথা বলা হয়নি; বরং উম্মতের সদস্যদের গড় আয়ুর কথা আলোচনা করা হয়েছে যে, এই উম্মতের অধিকাংশ লোক ৬০/৭০ বছরের বেশি বাঁচবে না। যেমনটা এই হাদীসেরই আরেকটি বর্ণনায় একেবারে সুস্পষ্ট শব্দে এসেছে–
أعْمَارُ أُمَّتيْ مَا بَيْنَ السِّتِّيْنَ إِلَى السَّبْعِيْنَ، وَأَقَلُّهُمْ مَنْ يَجُوْزُ ذূلِكَ.
আমার উম্মতের সদস্যদের বয়স ৬০ থেকে ৭০ এর মাঝামাঝি। তাদের মধ্যে কম লোকই এমন থাকবে, যারা এই বয়স পার করবে। –জামে তিরমিযী, হাদীস ৩৫৫০
হাদীসের অর্থ ও মর্ম এরকম সুস্পষ্ট হওয়া সত্ত্বেও হেযবুত তওহীদের লোকেরা এই হাদীসটিতে অপব্যাখ্যার আশ্রয় নিয়েছে। ‘ইসলামের প্রকৃত রূপরেখা’ নামক বইয়ের ৪৮ নং পৃষ্ঠায় উপরিউক্ত হাদীসটির ব্যাখ্যায় বলা হয়েছে– “অর্থাৎ তাঁর প্রকৃত উম্মাহ পৃথিবীতে থাকবে ৬০/৭০ বছর, তারপর যেটা থাকবে সেটা নামে মাত্র উম্মতে মোহাম্মদী, সেটা প্রকৃত পক্ষে উম্মতে মোহাম্মদী নয়।”
৪. জাল হাদীস
রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নামে বানোয়াট হাদীস চালিয়ে দেওয়া অত্যন্ত গর্হিত একটি কাজ। হাদীস শরীফে এ বিষয়ে কঠিন হুঁশিয়ারী উচ্চারিত হয়েছে। কিন্তু তা সত্ত্বেও হেযবুত তওহীদের লোকেরা নিজেদের মতবাদ প্রতিষ্ঠা করতে বারবার এ কাজটি করেছে। কোনো কোনো ক্ষেত্রে মনে হয়, হাদীসগুলো তারা নিজেরাই জাল করেছে। এবং সেগুলো করেছে নিজেদের দল ও মতবাদের স্বার্থে অত্যন্ত সুপরিকল্পিতভাবে। আমরা এখানে দুটি উদাহরণ তুলে ধরছি।
এক. পন্নী সাহেব তার ‘এ ইসলাম ইসলামই নয়’ নামক বইয়ের শেষ পৃষ্ঠায় একটি হাদীস উল্লেখ করেছেন। তিনি লিখেছেন– “রসুলাল্লাহ (দ.) একদিন আসরের নামাযের পর হঠাৎ পূর্ব দিকে চেয়ে খুশী হয়ে হাসলেন। সাহাবারা জিজ্ঞেস করলেন তিনি অমন করে হাসলেন কেন? জবাবে বিশ্বনবী (দ.) বললেন- ভবিষ্যতে ইসলাম বিকৃত হয়ে যাবার পর হিন্দের (ভারতের) পূর্বে একটি সবুজ দেশ থেকে প্রকৃত ইসলাম পুনর্জীবন লাভ করবে।”
নানানভাবে তালাশ করেও এরকম কোনো হাদীস আমরা খুঁজে পাইনি। আর এরকম কোনো হাদীস হওয়াও সম্ভব নয়। কারণ, রাসূলের যামানায় ভারতের পূর্বে আলাদা সবুজ কোনো দেশের অস্তিত্বই ছিল না; বরং তখন বাংলাদেশসহ পুরো অঞ্চলটাকেই ‘হিন্দ’ বলা হত। অথচ পন্নী সাহেব অন্যান্য জায়গায় হাদীসের সাথে কিতাবের নাম উল্লেখ করলেও এখানে কোনো কিতাবের নাম লেখেননি; বরং তিনি তার এই বানোয়াট হাদীসকে নিজের বানোয়াট মু‘জেযা দিয়ে প্রমাণ করতে চেয়েছেন। এজন্য ২০০৮ সালে মু‘জেযা দাবি করার পর তিনি এই হাদীস উল্লেখ করে বলেছেন– “০২/০২/২০০৮ তারিখের মো’জেজার মাধ্যমে আল্লাহ এ হাদীসটিরও সত্যায়ন কোরলেন।” (দ্র. আল্লাহর মো’জেজা হেযবুত তওহীদের বিজয় ঘোষণা, পৃ. ৮৬)
দুই. ‘মহাসত্যের আহ্বান’ নামক সংকলনটির ১৯ নং পৃষ্ঠায় আরেকটি জাল হাদীস উল্লেখ করা হয়েছে। সেখানে বলা হয়েছে– “বিশ্বনবী বলেছেন, “অভিশপ্ত দাজ্জালকে যারা প্রতিরোধ করবে তাদের মরতবা বদর ও ওহুদ যুদ্ধে শহীদের মরতবার সমান হবে।”
এরপর ‘বুখারী’ ও ‘মুসলিম’ এই দুই কিতাবের নাম লেখা আছে। অথচ বুখারী ও মুসলিম শরীফ তো দূরের কথা, কোনো হাদীসের কিতাবেই আমরা তা খুঁজে পাইনি। কিন্তু হেযবুত তওহীদের লোকেরা তাদের নিজেদের বানানো এই হাদীসের ওপর ভিত্তি করে নিজেদের দলের ব্যাপারে তারা দাবি করে– “হেযবুত তওহীদ ছাড়া পৃথিবীতে আর কেউই দাজ্জালকে দাজ্জাল বলে চিনছেন না, সুতরাং তাকে প্রতিরোধও করছেন না। কাজেই বিশ্বনবীর হাদিস মোতাবেক হেযবুত তওহীদের প্রত্যেক অকপট মোজাহেদ মোজাহেদা জীবিত অবস্থাতেই দুই জন করে শহীদের সমান।” (দ্র. মহাসত্যের আহ্বান, পৃ. ১৯-২০)
৫. ইতিহাসের বিকৃতি
এটিও একটি ঘৃণ্যতম কাজ। নিজেদের স্বার্থ হাসিলের উদ্দেশ্যে ইতিহাসকে বিকৃতভাবে উপস্থাপন করা। কিন্তু হেযবুত তওহীদের লোকেরা এ কাজটিও অনেকবার করেছে। আমরা এখানে দুটি উদাহরণ তুলে ধরছি।
এক. আমরা সবাই হয়তোবা জানি, হাবশার বাদশাহ নাজাশী রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ওপর ঈমান এনে মুসলমান হয়েছিলেন। এজন্য রাসূল তার জানাযার নামাযও আদায় করেছেন। ইতিহাসের এটি একটি স্বীকৃত ঘটনা। (দ্র. সহীহ বুখারী, হাদীস ১২৪৫; আলইসাবাহ, ইবনে হাজার ১/৩৪৭-৩৪৮)
অথচ হেযবুত তওহীদের লোকেরা নিজেদের মতবাদ প্রতিষ্ঠা করতে এই ইতিহাসকে বিকৃত করেছে। ‘দৈনিক দেশেরপত্র সংকলন, সংখ্যা– ২৪’-এর ২৫ নং পৃষ্ঠায় বলা হয়েছে– “নাজ্জাশী মুসলিম না হয়েও শেষ নবীকে আত্মা থেকে বিশ্বাস করে তাঁর সত্য প্রতিষ্ঠার সংগ্রামে সাহায্য করার জন্য জান্নাতবাসী হয়েছেন। সুতরাং একই কথা হিন্দু-বৌদ্ধ-ইয়াহুদীসহ সকল ধর্ম সম্প্রদায়ের জন্য সমভাবে প্রযোজ্য।”
দুই. সাহাবা যুগের মুসলমানগণ কোনো অবস্থাতেই নামায ছাড়তেন না। এমনকি যুদ্ধকালীন সময়ও তাদের জন্য সালাতুল খাওফের বিধান ছিল। [দ্র. সূরা নিসা (০৪) : ১০১-১০২; সহীহ বুখারী, হাদীস ৯৪২]
সাহাবা যামানার পুরো ইতিহাস থেকে কেউ এটা দেখাতে পারবে না যে, সাহাবীগণ যুদ্ধের জন্য নামায ছেড়ে দিতেন। কখনো কখনো হয়তোবা বিশেষ পরিস্থিতিতে নামায কাযা হয়ে গিয়েছে। কিন্তু পরবর্তীতে অবশ্যই তা আদায় করে নিয়েছেন। অথচ পন্নী সাহেব এই বিষয়ে কী বলেছেন দেখুন। পন্নী সাহেব তার ‘এ ইসলাম ইসলামই নয়’ বইয়ের ২৫৪ নং পৃষ্ঠায় লিখেছেন– “যুদ্ধ যখন এসে যেত তখন মুসলিমরা নামায পড়তেন না, এটা ইতিহাস এবং একবারের ইতিহাস নয়, বহুবারের ইতিহাস।”
নাউযুবিল্লাহ। এরকম আরো কত ঘৃণ্য কৌশলেই না তারা মুসলমানদের ঈমান হরণ করে নিচ্ছে। ধোঁকা দিয়ে একে একে সরলমনা মুসলমানদের নিজেদের দলে ভেড়াচ্ছে। মাশরেকী থেকে ধার করে আনা কুফুরী মতবাদকে তারা ধীরে ধীরে এদেশের মাটিতে পাকাপোক্ত করে তুলছে। অথচ আমরা যদি তাদের চিন্তা ও মতবাদগুলোর দিকে একটু গভীরভাবে তাকাই তাহলে দেখতে পাব, এটি এমন একটি কুফুরী মতবাদ, যেখানে ধর্মের কোনো বালাই নেই। যেখানে ইসলামের আলাদা কোনো স্বাতন্ত্র্য নেই। মুসলমানরা যাদের কাছে সবচেয়ে বেশি ঘৃণিত ও অভিশপ্ত। ইসলামের নামায, রোযা, হজ্ব ও অন্যান্য ইবাদত যেই মতবাদে তেমন কোনো গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নয়। রাসূলের সুন্নাহ যেখানে ঠাট্টা ও বিদ্রুপের পাত্র। পক্ষান্তরে নাচ-গান, নাটক-উৎসব যেখানে কেবল বৈধই নয়, বরং ক্ষেত্রবিশেষে ইবাদততুল্য।
এগুলো দেখার পরও কি হেযবুত তওহীদের লোকদেরকে মুসলমানদের দলভুক্ত মনে করার কোনো অবকাশ আছে? আশ্চর্যের বিষয় হল, তারা নিজেরাও নিজেদেরকে মুসলমানদের দলভুক্ত মনে করে না। হেযবুত তওহীদের ওয়েবসাইটে তাদের সদস্য হওয়ার যেই অঙ্গীকারপত্র, সেখানে চতুর্থ নং ধারায় স্পষ্ট বলা আছে– “আমি বিশ্বাস করব যে, আমি নিজে এবং এ আন্দোলনের অন্যান্য সদস্য-সদস্যারা হেদায়াতপ্রাপ্ত ... এই হেদায়াতে যারা নেই, অর্থাৎ বাকী দুনিয়ার সমস্ত মানুষ থেকে আমি ভিন্ন ও বিচ্ছিন্ন। ওদের মধ্যে বাস করলেও আমি ওদের একজন নই। ... আমি তাদের সাথে কোন এবাদত করব না। আমি এবাদত করব শুধু এই আন্দোলনের ভাই ও বোনদের সঙ্গে।”
শেষ কথা
এনায়েতুল্লাহ মাশরেকীর খাকসার আন্দোলনে তৎকালীন যুগে অনেক মুসলমান এ কথা ভেবে যোগদান করতেন যে, এরা তো বিভিন্ন ভালো ভালো সামাজিক কাজকর্ম করছে। ব্রিটিশদের বিরুদ্ধে আন্দোলন করছে। বর্তমানের হেযবুত তওহীদ আন্দোলনেও বাংলার অনেক সরলপ্রাণ মুসলমান এসব ভেবে যোগ দিয়ে বসছেন। তাদেরকে আমাদের এ কথা স্মরণ করিয়ে দেওয়া উচিত যে, ভাই, ঈমান সবার আগে। ঈমানের মূল্য সবচেয়ে বেশি। ঈমানের কোনো বিনিময় হতে পারে না। দুনিয়াবি কোনো সফলতা অর্জন করতে গিয়ে যদি আমি ঈমান হারিয়ে বসি, তবে নিজের জীবন বিলিয়ে দিয়েও কখনোই এই ক্ষতি আমি পুষিয়ে উঠতে পারব না।
পাশাপাশি আমাদের নিজেদের মধ্যেও সচেতনতা গড়ে তোলা উচিত। কারণ, প্রতিটি ফেতনার গোড়ায় রয়েছে আমাদের নিজেদের গাফলত ও ঈমানী দুর্বলতা। তাই আমাদের প্রত্যেকের কর্তব্য, নিজেদের ভেতরে ঈমানী গায়রত ও ইসলামী মূল্যবোধ জাগিয়ে তোলা। পরস্পর বেশি বেশি ঈমান ও আমলের মুযাকারা করা। পাশাপাশি সমাজের সর্বস্তরে ফরযে আইন ইলমকে ব্যাপক করতে সচেষ্ট হওয়া। তবেই আশা করা যায় যে, আমাদের প্রিয় এই দেশ এজাতীয় সুদূরপ্রসারী কুফুরী ফেতনা থেকে রক্ষা পাবে ইনশাআল্লাহ।
টীকা
উল্লেখ্য, সংগঠনটির নাম এবং তাদের বক্তব্যগুলো উল্লেখের ক্ষেত্রে সম্পূর্ণরূপে তাদের বানানরীতি অনুসরণ করা হয়েছে।
-সংগৃহীত
___________________
হেযবুত তওহীদের এসব ভ্রান্ত ও কুফুরী মতবাদ দেখার পর স্বভাবতই একজন মানুষের মনে প্রশ্ন জাগবে, এতসব কুফুরী মতবাদ সত্ত্বেও কীভাবে তারা মুসলমানদেরকে ধোঁকা দিচ্ছে? কোন্ কৌশলে তারা সরলমনা মুসলমানদের ঈমান হরণের পাঁয়তারা করছে? সামনের আলোচনায় আমরা তাদের এজাতীয় কয়েকটি অপকৌশল ধরিয়ে দিতে চেষ্টা করব ইনশাআল্লাহ।
১. উলামায়ে কেরামের সমালোচনা
যে কোনো ভ্রান্তি ছড়ানোর পেছনে প্রধান বাধা উলামায়ে কেরাম। তাই হেযবুত তওহীদের লোকেরা কথায় কথায় উলামায়ে কেরামের সমালোচনা করে। ‘ধর্মব্যবসায়ী’ বলে গালি দেয়। তাদের নামে মিথ্যা প্রোপাগান্ডা ছড়ায়। জনমানুষের মনে উলামায়ে কেরামের প্রতি বিতৃষ্ণা ও বিদ্বেষ ছড়িয়ে দিতে তারা যেন বদ্ধ পরিকর। অথচ যে কেউ একটু চিন্তা করলেই বুঝতে পারবেন, বাস্তবিকই যদি তাদের ইসলাম প্রচারের উদ্দেশ্য থাকত, তবে উলামায়ে কেরামের সমালোচনা করার কোনো প্রয়োজন ছিল না।
২. কথার মারপ্যাঁচ
এটি তাদের ভ্রান্তি ছড়ানোর অন্যতম একটি কৌশল। অনেকগুলো ভালো ভালো কথার মাঝখানে তারা দুয়েকটা ভ্রান্তির কথা ঢুকিয়ে দেয়। কিংবা কুফুরী মতবাদগুলোকে এমনভাবে উপস্থাপন করে যে, সরলমনা মুসলমানগণ তা ঠিক ধরতে পারেন না। তাদের কথায় প্রভাবিত হয়ে যান। বিষয়টা বোঝার জন্য আমরা একটি উদাহরণ টানছি। ‘সব ধর্মের লোকেরাই জান্নাতে যেতে পারবে’ এমন ভ্রান্ত মতবাদকে বাস্তবায়ন করার জন্য ‘দৈনিক দেশেরপত্র সংকলন, সংখ্যা– ২৪’-এর ২৫ নং পৃষ্ঠায় বলা হয়েছে– “এখানেই প্রশ্ন, এসলামের শেষ সংস্করণ এসে যাওয়ার পরও এসলাম গ্রহণ না করে, পূর্ববর্তী বিশ্বাসে স্থির থেকে কেউ কি স্বর্গে যেতে পারবেন? এর জবাব হচ্ছে, হ্যাঁ, অবশ্যই তাদেরও জান্নাতে যাওয়ার পথ খোলা আছে। এক্ষেত্রে শর্ত হলো, তাদেরকে শেষ নবী ও শেষ গ্রন্থ কোর’আনকে সত্য বোলে বিশ্বাস কোরতে হবে।”
যে কোনো বুদ্ধিমান মানুষ একটু গভীরভাবে চিন্তা করলেই বুঝতে পারবেন, উপরিউক্ত কথার প্রথম অংশ দ্বিতীয় অংশের সম্পূর্ণ বিপরীত। শেষ নবী ও কুরআনকে বিশ্বাস করে কারো পক্ষে পূর্ববর্তী বিশ্বাসে স্থির থাকা সম্ভব নয়। আবার পূর্ববর্তী ধর্মে বহাল থেকে কারো জন্য আখেরী নবী ও কুরআনের প্রতি ঈমান আনাও সম্ভব নয়। অথচ এভাবে কথার মারপ্যাঁচেই তারা সরলমনা মানুষদের ধোঁকা দিয়ে থাকে।
৩. কুরআন-হাদীসের অপব্যাখ্যা
ইসলামকে বিকৃতভাবে উপস্থাপন করতে গিয়ে স্বভাবতই হেযবুত তওহীদের লোকদেরকে কুরআনের বহু আয়াত এবং বহু হাদীসের মধ্যে অপব্যাখ্যার আশ্রয় নিতে হয়েছে। সেসবের তালিকা অনেক দীর্ঘ। এখানে কেবল বোঝার জন্য আমরা মাত্র একটি উদাহরণ উল্লেখ করছি। হেযবুত তওহীদের লোকেরা ‘ইসলাম বিকৃত এবং সকল মুসলমান কাফের’ এই কুফুরী মতবাদকে প্রতিষ্ঠা করার জন্য দলীল হিসেবে একটি হাদীস উল্লেখ করে। হাদীসটি হল, রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন–
عُمْرُ أُمَّتِيْ مِنْ سِتِّيْنَ سَنَةً إِلَى سَبْعِيْنَ سَنَةً.
আমার উম্মতের সদস্যদের বয়স (বা আয়ু) হবে ৬০ থেকে ৭০ বছর। –জামে তিরমিযী, হাদীস ২৩৩১
এই হাদীসে পুরো উম্মতের বয়সের কথা বলা হয়নি; বরং উম্মতের সদস্যদের গড় আয়ুর কথা আলোচনা করা হয়েছে যে, এই উম্মতের অধিকাংশ লোক ৬০/৭০ বছরের বেশি বাঁচবে না। যেমনটা এই হাদীসেরই আরেকটি বর্ণনায় একেবারে সুস্পষ্ট শব্দে এসেছে–
أعْمَارُ أُمَّتيْ مَا بَيْنَ السِّتِّيْنَ إِلَى السَّبْعِيْنَ، وَأَقَلُّهُمْ مَنْ يَجُوْزُ ذূلِكَ.
আমার উম্মতের সদস্যদের বয়স ৬০ থেকে ৭০ এর মাঝামাঝি। তাদের মধ্যে কম লোকই এমন থাকবে, যারা এই বয়স পার করবে। –জামে তিরমিযী, হাদীস ৩৫৫০
হাদীসের অর্থ ও মর্ম এরকম সুস্পষ্ট হওয়া সত্ত্বেও হেযবুত তওহীদের লোকেরা এই হাদীসটিতে অপব্যাখ্যার আশ্রয় নিয়েছে। ‘ইসলামের প্রকৃত রূপরেখা’ নামক বইয়ের ৪৮ নং পৃষ্ঠায় উপরিউক্ত হাদীসটির ব্যাখ্যায় বলা হয়েছে– “অর্থাৎ তাঁর প্রকৃত উম্মাহ পৃথিবীতে থাকবে ৬০/৭০ বছর, তারপর যেটা থাকবে সেটা নামে মাত্র উম্মতে মোহাম্মদী, সেটা প্রকৃত পক্ষে উম্মতে মোহাম্মদী নয়।”
৪. জাল হাদীস
রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নামে বানোয়াট হাদীস চালিয়ে দেওয়া অত্যন্ত গর্হিত একটি কাজ। হাদীস শরীফে এ বিষয়ে কঠিন হুঁশিয়ারী উচ্চারিত হয়েছে। কিন্তু তা সত্ত্বেও হেযবুত তওহীদের লোকেরা নিজেদের মতবাদ প্রতিষ্ঠা করতে বারবার এ কাজটি করেছে। কোনো কোনো ক্ষেত্রে মনে হয়, হাদীসগুলো তারা নিজেরাই জাল করেছে। এবং সেগুলো করেছে নিজেদের দল ও মতবাদের স্বার্থে অত্যন্ত সুপরিকল্পিতভাবে। আমরা এখানে দুটি উদাহরণ তুলে ধরছি।
এক. পন্নী সাহেব তার ‘এ ইসলাম ইসলামই নয়’ নামক বইয়ের শেষ পৃষ্ঠায় একটি হাদীস উল্লেখ করেছেন। তিনি লিখেছেন– “রসুলাল্লাহ (দ.) একদিন আসরের নামাযের পর হঠাৎ পূর্ব দিকে চেয়ে খুশী হয়ে হাসলেন। সাহাবারা জিজ্ঞেস করলেন তিনি অমন করে হাসলেন কেন? জবাবে বিশ্বনবী (দ.) বললেন- ভবিষ্যতে ইসলাম বিকৃত হয়ে যাবার পর হিন্দের (ভারতের) পূর্বে একটি সবুজ দেশ থেকে প্রকৃত ইসলাম পুনর্জীবন লাভ করবে।”
নানানভাবে তালাশ করেও এরকম কোনো হাদীস আমরা খুঁজে পাইনি। আর এরকম কোনো হাদীস হওয়াও সম্ভব নয়। কারণ, রাসূলের যামানায় ভারতের পূর্বে আলাদা সবুজ কোনো দেশের অস্তিত্বই ছিল না; বরং তখন বাংলাদেশসহ পুরো অঞ্চলটাকেই ‘হিন্দ’ বলা হত। অথচ পন্নী সাহেব অন্যান্য জায়গায় হাদীসের সাথে কিতাবের নাম উল্লেখ করলেও এখানে কোনো কিতাবের নাম লেখেননি; বরং তিনি তার এই বানোয়াট হাদীসকে নিজের বানোয়াট মু‘জেযা দিয়ে প্রমাণ করতে চেয়েছেন। এজন্য ২০০৮ সালে মু‘জেযা দাবি করার পর তিনি এই হাদীস উল্লেখ করে বলেছেন– “০২/০২/২০০৮ তারিখের মো’জেজার মাধ্যমে আল্লাহ এ হাদীসটিরও সত্যায়ন কোরলেন।” (দ্র. আল্লাহর মো’জেজা হেযবুত তওহীদের বিজয় ঘোষণা, পৃ. ৮৬)
দুই. ‘মহাসত্যের আহ্বান’ নামক সংকলনটির ১৯ নং পৃষ্ঠায় আরেকটি জাল হাদীস উল্লেখ করা হয়েছে। সেখানে বলা হয়েছে– “বিশ্বনবী বলেছেন, “অভিশপ্ত দাজ্জালকে যারা প্রতিরোধ করবে তাদের মরতবা বদর ও ওহুদ যুদ্ধে শহীদের মরতবার সমান হবে।”
এরপর ‘বুখারী’ ও ‘মুসলিম’ এই দুই কিতাবের নাম লেখা আছে। অথচ বুখারী ও মুসলিম শরীফ তো দূরের কথা, কোনো হাদীসের কিতাবেই আমরা তা খুঁজে পাইনি। কিন্তু হেযবুত তওহীদের লোকেরা তাদের নিজেদের বানানো এই হাদীসের ওপর ভিত্তি করে নিজেদের দলের ব্যাপারে তারা দাবি করে– “হেযবুত তওহীদ ছাড়া পৃথিবীতে আর কেউই দাজ্জালকে দাজ্জাল বলে চিনছেন না, সুতরাং তাকে প্রতিরোধও করছেন না। কাজেই বিশ্বনবীর হাদিস মোতাবেক হেযবুত তওহীদের প্রত্যেক অকপট মোজাহেদ মোজাহেদা জীবিত অবস্থাতেই দুই জন করে শহীদের সমান।” (দ্র. মহাসত্যের আহ্বান, পৃ. ১৯-২০)
৫. ইতিহাসের বিকৃতি
এটিও একটি ঘৃণ্যতম কাজ। নিজেদের স্বার্থ হাসিলের উদ্দেশ্যে ইতিহাসকে বিকৃতভাবে উপস্থাপন করা। কিন্তু হেযবুত তওহীদের লোকেরা এ কাজটিও অনেকবার করেছে। আমরা এখানে দুটি উদাহরণ তুলে ধরছি।
এক. আমরা সবাই হয়তোবা জানি, হাবশার বাদশাহ নাজাশী রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ওপর ঈমান এনে মুসলমান হয়েছিলেন। এজন্য রাসূল তার জানাযার নামাযও আদায় করেছেন। ইতিহাসের এটি একটি স্বীকৃত ঘটনা। (দ্র. সহীহ বুখারী, হাদীস ১২৪৫; আলইসাবাহ, ইবনে হাজার ১/৩৪৭-৩৪৮)
অথচ হেযবুত তওহীদের লোকেরা নিজেদের মতবাদ প্রতিষ্ঠা করতে এই ইতিহাসকে বিকৃত করেছে। ‘দৈনিক দেশেরপত্র সংকলন, সংখ্যা– ২৪’-এর ২৫ নং পৃষ্ঠায় বলা হয়েছে– “নাজ্জাশী মুসলিম না হয়েও শেষ নবীকে আত্মা থেকে বিশ্বাস করে তাঁর সত্য প্রতিষ্ঠার সংগ্রামে সাহায্য করার জন্য জান্নাতবাসী হয়েছেন। সুতরাং একই কথা হিন্দু-বৌদ্ধ-ইয়াহুদীসহ সকল ধর্ম সম্প্রদায়ের জন্য সমভাবে প্রযোজ্য।”
দুই. সাহাবা যুগের মুসলমানগণ কোনো অবস্থাতেই নামায ছাড়তেন না। এমনকি যুদ্ধকালীন সময়ও তাদের জন্য সালাতুল খাওফের বিধান ছিল। [দ্র. সূরা নিসা (০৪) : ১০১-১০২; সহীহ বুখারী, হাদীস ৯৪২]
সাহাবা যামানার পুরো ইতিহাস থেকে কেউ এটা দেখাতে পারবে না যে, সাহাবীগণ যুদ্ধের জন্য নামায ছেড়ে দিতেন। কখনো কখনো হয়তোবা বিশেষ পরিস্থিতিতে নামায কাযা হয়ে গিয়েছে। কিন্তু পরবর্তীতে অবশ্যই তা আদায় করে নিয়েছেন। অথচ পন্নী সাহেব এই বিষয়ে কী বলেছেন দেখুন। পন্নী সাহেব তার ‘এ ইসলাম ইসলামই নয়’ বইয়ের ২৫৪ নং পৃষ্ঠায় লিখেছেন– “যুদ্ধ যখন এসে যেত তখন মুসলিমরা নামায পড়তেন না, এটা ইতিহাস এবং একবারের ইতিহাস নয়, বহুবারের ইতিহাস।”
নাউযুবিল্লাহ। এরকম আরো কত ঘৃণ্য কৌশলেই না তারা মুসলমানদের ঈমান হরণ করে নিচ্ছে। ধোঁকা দিয়ে একে একে সরলমনা মুসলমানদের নিজেদের দলে ভেড়াচ্ছে। মাশরেকী থেকে ধার করে আনা কুফুরী মতবাদকে তারা ধীরে ধীরে এদেশের মাটিতে পাকাপোক্ত করে তুলছে। অথচ আমরা যদি তাদের চিন্তা ও মতবাদগুলোর দিকে একটু গভীরভাবে তাকাই তাহলে দেখতে পাব, এটি এমন একটি কুফুরী মতবাদ, যেখানে ধর্মের কোনো বালাই নেই। যেখানে ইসলামের আলাদা কোনো স্বাতন্ত্র্য নেই। মুসলমানরা যাদের কাছে সবচেয়ে বেশি ঘৃণিত ও অভিশপ্ত। ইসলামের নামায, রোযা, হজ্ব ও অন্যান্য ইবাদত যেই মতবাদে তেমন কোনো গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নয়। রাসূলের সুন্নাহ যেখানে ঠাট্টা ও বিদ্রুপের পাত্র। পক্ষান্তরে নাচ-গান, নাটক-উৎসব যেখানে কেবল বৈধই নয়, বরং ক্ষেত্রবিশেষে ইবাদততুল্য।
এগুলো দেখার পরও কি হেযবুত তওহীদের লোকদেরকে মুসলমানদের দলভুক্ত মনে করার কোনো অবকাশ আছে? আশ্চর্যের বিষয় হল, তারা নিজেরাও নিজেদেরকে মুসলমানদের দলভুক্ত মনে করে না। হেযবুত তওহীদের ওয়েবসাইটে তাদের সদস্য হওয়ার যেই অঙ্গীকারপত্র, সেখানে চতুর্থ নং ধারায় স্পষ্ট বলা আছে– “আমি বিশ্বাস করব যে, আমি নিজে এবং এ আন্দোলনের অন্যান্য সদস্য-সদস্যারা হেদায়াতপ্রাপ্ত ... এই হেদায়াতে যারা নেই, অর্থাৎ বাকী দুনিয়ার সমস্ত মানুষ থেকে আমি ভিন্ন ও বিচ্ছিন্ন। ওদের মধ্যে বাস করলেও আমি ওদের একজন নই। ... আমি তাদের সাথে কোন এবাদত করব না। আমি এবাদত করব শুধু এই আন্দোলনের ভাই ও বোনদের সঙ্গে।”
শেষ কথা
এনায়েতুল্লাহ মাশরেকীর খাকসার আন্দোলনে তৎকালীন যুগে অনেক মুসলমান এ কথা ভেবে যোগদান করতেন যে, এরা তো বিভিন্ন ভালো ভালো সামাজিক কাজকর্ম করছে। ব্রিটিশদের বিরুদ্ধে আন্দোলন করছে। বর্তমানের হেযবুত তওহীদ আন্দোলনেও বাংলার অনেক সরলপ্রাণ মুসলমান এসব ভেবে যোগ দিয়ে বসছেন। তাদেরকে আমাদের এ কথা স্মরণ করিয়ে দেওয়া উচিত যে, ভাই, ঈমান সবার আগে। ঈমানের মূল্য সবচেয়ে বেশি। ঈমানের কোনো বিনিময় হতে পারে না। দুনিয়াবি কোনো সফলতা অর্জন করতে গিয়ে যদি আমি ঈমান হারিয়ে বসি, তবে নিজের জীবন বিলিয়ে দিয়েও কখনোই এই ক্ষতি আমি পুষিয়ে উঠতে পারব না।
পাশাপাশি আমাদের নিজেদের মধ্যেও সচেতনতা গড়ে তোলা উচিত। কারণ, প্রতিটি ফেতনার গোড়ায় রয়েছে আমাদের নিজেদের গাফলত ও ঈমানী দুর্বলতা। তাই আমাদের প্রত্যেকের কর্তব্য, নিজেদের ভেতরে ঈমানী গায়রত ও ইসলামী মূল্যবোধ জাগিয়ে তোলা। পরস্পর বেশি বেশি ঈমান ও আমলের মুযাকারা করা। পাশাপাশি সমাজের সর্বস্তরে ফরযে আইন ইলমকে ব্যাপক করতে সচেষ্ট হওয়া। তবেই আশা করা যায় যে, আমাদের প্রিয় এই দেশ এজাতীয় সুদূরপ্রসারী কুফুরী ফেতনা থেকে রক্ষা পাবে ইনশাআল্লাহ।
টীকা
উল্লেখ্য, সংগঠনটির নাম এবং তাদের বক্তব্যগুলো উল্লেখের ক্ষেত্রে সম্পূর্ণরূপে তাদের বানানরীতি অনুসরণ করা হয়েছে।
-সংগৃহীত