শাহবাগের প্রত্যাবর্তন: সত্যের অপলাপ ও প্রতিরোধের প্রয়োজনীয়তা
গতকাল বাংলাদেশের ইতিহাসে একটি গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা ঘটেছে। শাহবাগ আন্দোলনের অনুসারীরা একটি মিছিল নিয়ে প্রধান উপদেষ্টার বাসভবন ‘যমুনা’ ঘেরাও করতে গেলে পুলিশের বাধার মুখে পড়ে। পুলিশ শাহবাগিদের প্রতিনিধিদল পাঠানোর প্রস্তাব দিলেও তারা তা অগ্রাহ্য করে পুলিশের ওপর হামলা চালায়। একপর্যায়ে তারা রমনা বিভাগের ডিসি মাসুদকে গুরুতরভাবে আঘাত করে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশকে শক্তি প্রয়োগ করতে হয় এবং শেষ পর্যন্ত আন্দোলনকারীদের ছত্রভঙ্গ করে দেওয়া হয়।
মজার বিষয় হলো, এই আন্দোলনের নেতৃত্বে ছিল ‘ফ্যাসিবাদের অগ্নিকন্যা’ খ্যাত লাকি আক্তার। এই ঘটনার মাধ্যমে কয়েকটি বিষয় স্পষ্ট হয়ে ওঠে—
১. গণমাধ্যমের পক্ষপাতিত্ব ও মিথ্যাচার
প্রথম আলো, ডেইলি স্টার, টিবিএস ও সমকাল পত্রিকাগুলো আন্দোলনকারীদের একপেশে সমর্থন দিয়েছে। পুলিশের ওপর হামলার সত্যতা গোপন করে তারা উল্টো আন্দোলনকারীদের উপর হামলার বিভ্রান্তিকর খবর প্রকাশ করে। দেখুন লিংক-
https://web.facebook.com/share/p/18X4HFEz7k/
শাহবাগীরাই যে আগে হামলা করেছে, এর কিছু ভিডিও প্রমাণ:
https://web.facebook.com/share/v/1A4KTKDXMd/
https://web.facebook.com/share/v/1BPfxfFAPy/
https://web.facebook.com/share/v/19Jc6W1hXY/
https://web.facebook.com/share/v/19YKfAZv1y/
ভিডিওতে দেখা যাচ্ছে, আন্দোলনকারীরা সংঘবদ্ধ হয়ে পুলিশের ওপর আক্রমণ চালায়। প্রথমে একজন আন্দোলনকারী লাঠি নিয়ে পুলিশের ওপর আঘাত করে, তারপর আরেকজন ঘুষি মারে। পুলিশ প্রতিরোধ করতে গেলে তারা একসঙ্গে পুলিশকে আক্রমণ করে। অথচ গণমাধ্যমগুলো পুলিশকে দোষারোপ করে প্রকৃত সত্যকে বিকৃত করেছে।
২. ফ্যাসিবাদী শাহবাগের পুনর্জাগরণ
এই ঘটনার মাধ্যমে স্পষ্ট হয়ে গেছে যে, আওয়ামী ফ্যাসিবাদের প্রাণভোমরা শাহবাগ আবার সক্রিয় হতে চাইছে। লাকি আক্তারের মতো ‘ফ্যাসিবাদের আইকনরা’ সামনে চলে আসছে এবং ধর্ষণ-নির্যাতনের মতো সংবেদনশীল ইস্যুগুলোকে ব্যবহার করে ইসলাম ও ধর্মীয় গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে অবস্থান মজবুত করতে চাইছে। মাতাল ভবরা ধর্ষণের জন্য ওয়াজ-মাহফিলকে দায়ী করে বক্তব্য দিচ্ছে। ধর্ষণ বিরোধী মিছিলে এসে যৌন স্বাধীনতার দাবী করছে। কি চরম পর্যায়ের দ্বিমুখী এই লোকগুলো। লিংক-
https://web.facebook.com/share/p/18QX1srhzk/
৩. শাহবাগের প্রকৃত প্রতিপক্ষ কে?
শাহবাগের বিরুদ্ধে প্রথমবার গর্জে উঠেছিল শাপলার তাওহিদি জনতা, যারা নিজেদের রক্ত দিয়ে এই ফ্যাসিবাদী শক্তিকে পরাজিত করেছিল। কিন্তু আজ অনেকেই শাপলার সেই অবদানকে ভুলিয়ে দিতে চাচ্ছে। নতুন রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে কিছু ব্যক্তি বলছেন, “শাহবাগের প্রতিপক্ষ শাপলা নয়, বরং ইনসাফ।” আসুন আমরা তাদের কয়েকজনের কিছু পোস্ট দেখি-
রিফাত রশিদ বলছে-
"বাজারে একটা আলাপ জোরেশোরে চালু হয়েছে "আবার যদি নতুন করে কেউ শাহাবাগ বানায়, আমরা শাহাবাগের বিপরীতে শাপলা গড়ে তুলবো" এমন আলাপকে আমি খারিজ করছি, ইনকার করি। বরং আরেকটা শাহাবাগ হইতেই দেয়া যাবে না এই নীতিতে আমাদের স্ট্রিক্ট থাকতে হবে।"
https://web.facebook.com/share/p/16GLBXDspn/
সাদিকুর রহমান খান লিখেছে-
"শাহবাগের কাউন্টার শাপলা না। শাহবাগের কাউন্টার ইনসাফ। শাহবাগের কাউন্টার ইনকিলাব। শাহবাগের কাউন্টার আপোষহীন নেত্রী খালেদা জিয়াও।"
https://web.facebook.com/share/p/1WWPHCyNp4/
উমামা ফাতেমা বলছে-
"শাহবাগ- শাপলা বাইনারির চাপে নারী আন্দোলনগুলোই দূর্বল হয়ে যাচ্ছে। আওয়ামী লীগের বিচার করে নিষিদ্ধ করে সোসাইটির এই বিভাজনের রাজনীতির পথ বন্ধ করতে হবে।"
https://web.facebook.com/share/p/1GhtvNDER3/
এই উমামা কিন্তু কিছু দিন আগেই ওড়না ইস্যুতে তাওহিদি জনতাকে 'হারামজাদা' বলে গালি দিয়েছে।
লিংক- https://web.facebook.com/share/v/15wc31M8Wc/
এটি আমাদেরকে অবশ্যই মনে রাখতে হবে যে, শাহবাগকে কেবল একটি আন্দোলন নয়, বরং এটি একটি সাংস্কৃতিক প্রকল্প, যা মিডিয়া ও প্রগতিশীল সংগঠনগুলোর মাধ্যমে ফ্যাসিবাদী চিন্তাধারাকে প্রতিষ্ঠিত করার চেষ্টা করে। তাই কেবল নতুন কোনো আন্দোলন গড়ে তুলতে না দেওয়াই যথেষ্ট নয়; বরং এর আদর্শিক শিকড়কেও নির্মূল করতে হবে।
৪. জামাত-শিবিরের নীরবতা
শাহবাগের প্রত্যাবর্তনের পর জামাত-শিবিরের ভূমিকা প্রশ্নবিদ্ধ হচ্ছে। এই শাহবাগ আন্দোলনের মাধ্যমেই কিন্তু জামাতের কেন্দ্রীয় নেতাদের ফাঁসির পথ সুগম হয়েছিল। অথচ আজ যখন শাহবাগের অনুসারীরা আবার সক্রিয়, তখন জামাত-শিবিরের পক্ষ থেকে কার্যকর কোনো প্রতিরোধ লক্ষ্য করা যাচ্ছে না। বরং তারা বিভিন্ন ইস্যুতে সুশীলতার খোলসে নিজেদের দায় এড়াতে চাইছে। বইমেলার তাসলিমা নাসরিনের বই রাখায় তাওহিদি জনতার প্রতিবাদ করার ঘটনায় সুশীল সাজতে গিয়ে জামাত শিবিরের লোকেরা তাওহিদি জনতাকে এক হাত নিয়েছে। এটা তো হল, শত্রুকে বুকে টেনে নিয়ে বন্ধুকে তাড়িয়ে দেওয়ার মতো বিষয়।
এদিকে দেখুন কাদারুদ্দীন শিশির সুশীল হওয়ার ভং ধরে এখনো বলতেছে যে, "গতকালের শাহবাগের ঘটনায় কে আগে হামলা শুরু করেছে-- পুলিশ না প্রতিবাদকারীরা-- তা বিচ্ছিন্ন ফুটেজ দেখে এই মূহূর্তে নিশ্চিত করে বলা সম্ভব না।"
লিংক- https://web.facebook.com/share/p/15rwJHgUo4/
স্পষ্ট এতো ফুটেজ থাকার পরও এই ঘটনায় পুলিশকে দায়মুক্তি দিতে চাচ্ছে না সে। অথচ বইমেলার ঘটনা ও অর্ণবের ঘটনায় সে সরাসরি তাওহিদিকে জনতাকে দোষারোপ করেছিল। অথচ ওই দুই ঘটনায় তাওহিদি জনতার পক্ষ থেকে কোন হামলা-ই হয়নি। একে চিনে রাখুন, ইসলামপন্থীদের দোষারোপ করার কোন সুযোগই সে হাতছাড়া করবে না।
উপসংহারে আমাদের মনে রাখতে হবে যে,
শাহবাগ কেবল একটি মঞ্চ বা নির্দিষ্ট কিছু ব্যক্তির সমষ্টি নয়, বরং এটি একটি সাংস্কৃতিক প্রকল্প, যা ফ্যাসিবাদী চিন্তাধারাকে লালন করে এবং বিভিন্ন মিডিয়া ও সংগঠনের মাধ্যমে প্রতিষ্ঠিত। তাই কেবল নতুন কোনো আন্দোলন গড়ে উঠতে না দেওয়াই যথেষ্ট নয়; বরং এর অন্তর্নিহিত আদর্শের বিরুদ্ধেও লড়াই করা জরুরি।
অন্যদিকে, শাপলা শুধু একটি নির্দিষ্ট স্থান বা কোনো সাময়িক প্রতিক্রিয়ার নাম নয়, বরং এটি একটি চেতনা, যা শাহবাগের সাংস্কৃতিক আধিপত্যের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলে। এই দ্বন্দ্ব শাহবাগ ও শাপলার মধ্যে নতুন কিছু নয়; এটি চলবে যতক্ষণ না শাহবাগের মতাদর্শ নিঃশেষ হয় এবং ইসলাম বিজয়ী হয়।
*****
Comment