Announcement

Collapse
No announcement yet.

পাঠচক্র- ৩২ || “ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে একবিংশ শতাব্দীর গণতন্ত্র (সূরা আসরের আলোকে) ” ।। মাওলানা আসেম উমর হাফিজাহুল্লাহ || ১৫তম পর্ব

Collapse
This is a sticky topic.
X
X
 
  • Filter
  • Time
  • Show
Clear All
new posts

  • পাঠচক্র- ৩২ || “ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে একবিংশ শতাব্দীর গণতন্ত্র (সূরা আসরের আলোকে) ” ।। মাওলানা আসেম উমর হাফিজাহুল্লাহ || ১৫তম পর্ব

    আন নাসর মিডিয়াপরিবেশিত

    ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে
    একবিংশ শতাব্দীর গণতন্ত্র’’

    (সূরা আসরের আলোকে)

    ।।মাওলানা আসেম উমর হাফিজাহুল্লাহ ||
    এর থেকে৫তম পর্ব



    নেতৃত্ব পরীক্ষার অগ্নিচুল্লির মাঝে


    বাতিল ও ভ্রান্ত আন্দোলনের মতো হক্বপন্থীদের আন্দোলনে এমন হয় না যে, ত্যাগ ও কুরবানির জন্য শুধু কর্মীদেরকেই সামনে বাড়ানো হয় এবং নেতৃবৃন্দ ও তাদের সন্তানেরা বিলাসিতা ও আরাম আয়েশে মত্ত থাকে। এমনকি একসময় এ নেতৃত্ব ও তাদের সন্তানেরা বিলাসিতার এ নোংরামিতে ঢুকে নিজেরাই জুলুমকারীর অংশে পরিণত হয়ে যায়; যে জুলুমের বিরুদ্ধে তারা আন্দোলনের স্লোগান তুলেছিল। বরং আহলে হক্বের আন্দোলনে কর্মীদের পূর্বে নেতাদেরকেই পরীক্ষার অগ্নিচুল্লিতে যাচাই করা হয়। আল্লাহ তা‘আলা প্রথমে নবীগণকে পরীক্ষার সম্মুখীন করেছেন, তারপর তাঁদের অনুসারীদের পালা এসেছে।

    হযরত ইবরাহীম আ. কে কত কঠিন কঠিন পরীক্ষার সম্মুখীন হতে হয়েছে। এভাবে আল্লাহ তা‘আলা তাঁর প্রিয় হাবীব কে সব ধরনের পরীক্ষার সম্মুখীন করেছেন, তাঁর মেয়েদেরকে, তাঁর পরিবারকে এবং তাঁর জামাতা ও নাতিদেরকে কঠিন পরীক্ষার এ স্তর অতিক্রম করতে হয়েছে।

    সর্ব সম্মতিক্রমে হযরত আবূ বকর সিদ্দীক রাযি.কে প্রথম খলীফা নিযুক্ত করা হয়েছিল। এর কারণ কী ছিল? কে ছিলেন তিনি? তাঁর কী অবদান ছিল? ইসলামের পরিচর্যা ও আল্লাহর রাসূল এর জন্য কুরবান ও উৎসর্জনে তাঁর অবস্থান কী ছিল? সকল আরববাসী এ মহান ব্যক্তিত্ব, তাঁর যোগ্যতা, তাঁর ত্যাগ এবং নেতৃত্বের অধিকারকে খুব ভালভাবে জানত। একইভাবে দ্বিতীয় খলীফা হযরত ওমর ইবনে খাত্তাব রাযি. কে ছিলেন? ইসলাম এবং মুসলমানরা তাঁর থেকে কী উপকার লাভ করেছে? আল্লাহর রাসূল এর সাথে তিনি কীভাবে সময় কাটিয়েছেন? আরবের মরুভূমি ও পাহাড় এ সাধক বীরপুরুষকে খুব ভালভাবেই চিনত। এভাবে দ্বীনের জন্য হযরত উসমান রাযি. ও হযরত আলী রাযি. এর কুরবানির ব্যাপারে আপন-পর সকলেই অবগত ছিলেন।

    এ নিয়মটাই আল্লাহ তা‘আলা হক্বপন্থীদের সাথে আজ পর্যন্ত জারি রেখেছেন। আন্তর্জাতিক কুফরী ব্যবস্থাপনার বিরুদ্ধে দাঁড়ানো জিহাদী সংগঠনের নেতৃবৃন্দই সর্বপ্রথম কুরবানি দিয়েছেননিজেদের ঘরবাড়ি, ধনসম্পদ এবং আরাম-আয়েশ উম্মাহর ভবিষ্যতের জন্য কুরবানি করে দিয়েছেন। এ পথে নিজেদের সন্তানদেরকে চোখে দেখা মৃত্যুর মুখে পতিত করেছেন এবং উম্মাহর জন্য উৎসর্গ করে দিয়েছেন।

    আমীরুল মু’মিনীন মোল্লা উমর মুজাহিদ রহ. কুরবানির এমন এক ইতিহাস সৃষ্টি করেছেন, যার উপর ইসলামী জাগরণের আন্দোলন আজীবন গর্ব করতে পারবে। হক্কানী উলামায়ে কেরাম কাফেরগোষ্ঠীর সামনে বুক ফুলিয়ে এ মহান ব্যক্তিত্বকে নিজেদের নেতা হিসেবে পরিচয় দিয়ে বলতে পারেন, ইনি মু’মিনদের নেতা। আল্লাহ এ মর্দে মুজাহিদকে উম্মাহর পক্ষ থেকে উত্তম বদলা দান করুন। তিনি আপন সত্তা ও সন্তান-সন্ততির কুরবানি, ক্ষমতা ও নেতৃত্বের কুরবানি দিয়েছেন। একইভাবে তাঁর সহযোদ্ধাগণও নিজের জান-মাল, সন্তান-সন্ততি এবং নিজ জাতি ও গোষ্ঠীর কুরবানি দিয়েছেন। মুজাদ্দিদে জিহাদ শাইখ উসামা ইবনে লাদেন রহ. সর্বপ্রথম নিজের জানমাল, ঘরবাড়ির কুরবানি দিয়েছেন। নিজের সন্তানদেরকে এ রাস্তায় উৎসর্গ করেছেন। তাঁর মেয়েগণ বিধবা-জীবন বরণ করে নিয়েছেন। এভাবে শাইখ আইমান আয-যাওয়াহিরী হাফি. নিজের যৌবন কাটিয়েছেন বন্দীশালার কষ্ট এবং হিজরত, দেশান্তর ও যুদ্ধের কষ্টের মাধ্যমে। তাঁর জীবনসঙ্গিনী আল্লাহর রাহে এমনভাবে শহীদ হয়েছেন যে, কবরে মাটি দেওয়াও সম্ভব হয়নি। তাঁর সাথে শাইখের ছেলেও ইসলাম ও উম্মাহর তরে কুরবান হয়ে যান। তারপর তাঁর মেয়েগণ, নাতি-নাতনিগণ বছরের পর বছর বন্দী জীবনের নির্মম কষ্ট-যাতনার মধ্যে দিন কাটিয়েছেন। দীর্ঘদিন পর্যন্ত আকাশ দেখারও তাঁদের নসীব হয়নি। তারপর দুই মেয়ের প্রেমময় স্বামীরা আল্লাহর পথে শাহাদাত বরণ করেছেন

    হিজরত, বিচ্ছেদ, দেশান্তর, জেল-জুলুম এবং শাহাদাত... এ ধরনের মর্যাদা আলহামদুলিল্লাহ, ইমারাতে ইসলামিয়া আফগানিস্তান ও আন্তর্জাতিক জিহাদী সম্প্রদায়ের নেতাগণ অর্জন করেছেন। এ স্পষ্ট দ্বীনের জন্য, উম্মাহর সম্মান ও ইজ্জতের জন্য তাঁরা নিজেদের সবকিছু উৎসর্গ করেছেন এবং এখনো করে যাচ্ছেন। মনে রাখতে হবে, আহলে হক্বের নেতৃবৃন্দ কৃত্রিম আন্দোলন, দাজ্জালী মিডিয়ার প্রচার-প্রসার ও পূর্বসূরিদের উত্তরাধিকার থেকে নেতৃত্ব লাভ করেন না, তারা তো যুদ্ধের বিকট চিৎকার ও চেঁচামেচির মধ্যে পাখা মেলেনহিজরত তাঁদেরকে এ পৃথিবীর প্রতি অশ্রদ্ধা শিক্ষা দেয়। আগত দিনগুলোর শাহাদাত তাঁদেরকে নশ্বর দেহের বাস্তবতা উপলব্ধি করায়। বন্দীশালা তাঁদেরকে জীবন যাপনের পদ্ধতি শেখায়। ড্রোন থেকে নিক্ষিপ্ত মিসাইল তাঁদের সাহসিকতার জুতোয় ফিতা বেঁধে দেয়। সব সময় মৃত্যুর ছায়া তাঁদের প্রবৃত্তি ও চাহিদা পরিষ্কার করার কাজ দেয়, যা তাঁদেরকে বর্তমান অবস্থাকে কুরবান করার প্রতি উদ্বুদ্ধ করে; যাতে তাঁরা নিজেদের ভবিষ্যৎ (পরকাল) সজ্জিত ও সমৃদ্ধ করতে পারেন।

    গণতন্ত্রবাদীদের মতো আহলে হক্বের নেতৃত্বে কোনো আসন নয়; বরং ছাপ্পড় খাট বা কাঁটায় সাজানো বিছানা হয়ে থাকে, যার উপর ঘুমালেও মানুষ আরাম পায় না। এটি চিন্তা ও টেনশনের এমন এক বোঝা, যা পাহাড়ের উপরও যদি তুলে দেওয়া হয়; তাহলে এত কঠিন কষ্ট সইতে না পেরে তাও কালো হয়ে যাবে। তাঁরা নেতৃত্বের দোহাই দিয়ে আলীশান প্রাসাদ বানান না; বরং নিজেদের ঘর-বাড়িকে জীর্ণশীর্ণ করে উম্মাহর দ্বীন, আকীদা, ঈমান ও ঘরবাড়ির হেফাযত করেন। আল্লাহর শাসনব্যবস্থা থেকে বঞ্চিত এ উজাড় অনাবাদি জমিনকে নিজেদের তপ্ত খুন দ্বারা সিক্ত করেন; যাতে তার উপর শরীয়াহ প্রতিষ্ঠা করে তাকে আবাদের যোগ্য করে তোলা যায়। তাদের এ আবাদ করার সাথে মিশে আছে তাঁদের হা হুতাশ ও শোক-চিৎকার। এ আবাদির সৌন্দর্য ও আরাম আয়েশ জারি আছে তাঁদের আশা-আকাঙ্ক্ষার জলাঞ্জলি দিয়ে এবং তাঁদের ইচ্ছা ও চাহিদার মৃত্যু ঘটিয়ে।

    হক্ব ও বাতিলের এ পার্থক্য খুব ভালভাবে বুঝতে হবে, বর্তমান যুগেও বাতিল দলসমূহের নেতা তৈরি করার প্রক্রিয়া কৃত্রিমতা ও ধোঁকার উপর প্রতিষ্ঠিত। বাতিল শক্তি কাজ হিসেবে কর্মী খোঁজে তারপর কোনো এক কুশপুত্তলিকাকে নেতা বানিয়ে পৃথিবীর সামনে পেশ করে দেয়। আসমান-জমিনের সৃষ্টিকর্তা সাক্ষী, ইউরোপের দ্বিতীয় নবযৌবন (আসলে খৃষ্টবিশ্বের প্রাথমিক ধ্বংস) থেকে আজ পর্যন্ত বিশেষ করে উসমানী খেলাফতের পতন থেকে এ প্রতারণার মাধ্যমে পৃথিবীর সামনে এমন কর্মীদেরকে নেতা বানিয়ে পেশ করা হয়েছে, যারা অতিমাত্রায় অযোগ্য ও নিষ্কর্মা। কিন্তু প্রচারমাধ্যমের প্রতারণা এবং বর্তমান যুগের ইতিহাস বিকৃতকারীদের ধোঁকাবাজি নর্তকী, ভাঁড়, গায়ক এবং গর্হিত সমকামিতায় জড়িত লোকদেরকেও এই জাহেলী সমাজের হিরু বানিয়ে পেশ করেছে। মূলকথা হলো, যদি স্যান্ট ভ্যালেন্টাইনের মতো অশ্লীল ও নোংরা মানসিকতাধারী লোককে নেতা, আদর্শ ও বীর হিসেবে পেশ করা যেতে পারে; তাহলে অন্যান্য নির্বোধ লোক তো তার থেকেও যোগ্য হবেই।


    বাস্তবতা হলো, গণতন্ত্র একটা তামাশা যেখানে রাষ্ট্রের প্রভাবশালী শক্তি (সেনাবাহিনী ও গোপন এজেন্সিসমূহ) এ গণতান্ত্রিক জনগণকেই নেতা বানিয়ে পেশ করে এবং একের পর এককে ব্যবহার করে লাথি মারতে থাকে। সবাই জানে, প্ল্যান কোথায় তৈরি করা হয় এবং অর্থনৈতিক পরিকল্পনা, অভ্যন্তরীণ ও বাহ্যিক বিষয়াবলি সম্পর্কে পরিকল্পনা কোথায় নেওয়া হয়?

    বর্তমান যুগের প্রতারণা ও ধোঁকা হলো, এ যুগের ইতিহাস সাজাচ্ছে শয়তান। প্রচারমাধ্যম, আন্তর্জাতিক বার্তাসংস্থা এ সাজানো ইতিহাস রচনার মৌলিক ভিত্তি। এজন্য তারা যাকে ইচ্ছা নায়ক বানিয়ে দেয়, আর যাকে ইচ্ছা সন্ত্রাসী প্রমাণ করে। যাকে চায় পথপ্রদর্শনকারী আর যাকে চায় লুটেরা সাব্যস্ত করে। এ সবকিছুই হচ্ছে দাজ্জালী যুগের কারসাজি (?)শুধু দেখতে থাকুন! আর নিজ প্রভুর সত্যতার চাক্ষুষ প্রমাণ দেখুন! তিনি কীভাবে লোকদের মাঝে বাতিল পন্থাগুলোকে স্পষ্ট করে দিয়েছেন যে, এ ধরনের পন্থা দ্বারা দ্বীনের বিজয় তো দূরের কথা, মাথার পাগড়ি বড় করা ছাড়া আর কিছুই করা যাবে না।

    যাইহোক, হক্ব ও বাতিলের নেতৃবৃন্দের মাঝে এতটা স্পষ্ট পার্থক্য আছে, যেমনটা দুনিয়া ও আখিরাতের মাঝে আছে, স্বার্থত্যাগ ও স্বার্থপরতার মাঝে আছে, আলো আর অন্ধকার, জ্ঞান আর অজ্ঞতার মাঝে আছে।

    তাই যে আন্দোলন স্পষ্ট দ্বীন তথা ইসলামের দাওয়াত নিয়ে গড়ে ওঠে, সেটা তার প্রবর্তকের বাতলানো তরীকা অনুযায়ী পরিচালিত হয়। সে এ পন্থাই অবলম্বন করে; যা আল্লাহর শেষ রাসূল অবলম্বন করেছিলেন। সে এ দায়িত্বকে আল্লাহর পক্ষ থেকে প্রদত্ত আমানত মনে করে। এটার মাধ্যমে সে আখিরাতের কামিয়াবি এবং জান্নাতের দরজা বুলন্দির প্রার্থী হয়এজন্য সে এ পথের প্রত্যেক ত্যাগ ও কুরবানিকে আল্লাহর সন্তুষ্টি এবং আখিরাতের মর্যাদা বৃদ্ধির উপায় মনে করে।

    وَتَوَاصَوْا بِالْحَقِّএর পথে আগত সমস্যা সত্ত্বেও একই স্লোগান, একই দৃঢ়তা, একই লড়াই- যার উপর আন্দোলন ও জামাআতের ভিত্তি রাখা হয়েছে এবং তারপর একই মানহায ও ফিকিরের উপর وَتَوَاصَوْا بِالصَّبْرِএর স্লোগান কখনো ফাঁসির কাষ্ঠ থেকে, কখনো বন্দীশালা থেকে, কখনো শাস্তির গোপন প্রকোষ্ঠ থেকে আবার কখনো তপ্ত তক্তার উপর দাঁড়িয়ে বজ্রকণ্ঠে দিয়ে যায়। وَمَا بَدَّلُوا تَبْدِيلًا রাস্তা বদলায়নি, সহযাত্রী বদলায়নি, কাফেলা ত্যাগ করেনি, কাফেলা থেকে বিচ্ছিন্নও হয়নি। এ স্তরগুলো ইসলামী আন্দোলনগুলোর জীবনে জীবন-মৃত্যু এবং সফলতা-ব্যর্থতার মারহালা বা স্তর হয়। কারণ যদি নেতৃবৃন্দ নিজের মিশনের উপর নিজেদের জান কুরবান করে দেন; তাহলে এটা তাঁদের বিজয় হয় এবং বাতিল শাসনব্যবস্থার মুখে পরাজয়ের চুনকালি পড়ে, যা দূর করা যায় না।

    এ পরীক্ষা ও বিপদে পতিত করা তো আল্লাহর সুন্নাত। আল্লাহ চাইলে তো কুফরকে এমনিতেই ধ্বংস করে দিতে পারেন। সূরা মুহাম্মাদে আল্লাহ তা‘আলা ইরশাদ করেছেন-

    ذَٰلِكَ وَلَوْ يَشَاءُ اللَّهُ لَانتَصَرَ مِنْهُمْ وَلَٰكِن لِّيَبْلُوَ بَعْضَكُم ﴿محمد: ٤﴾


    “এটা এজন্য যে, আল্লাহ ইচ্ছা করলে তাদের কাছ থেকে প্রতিশোধ নিতে পারতেন। কিন্তু তিনি তোমাদের কতককে কতকের দ্বারা পরীক্ষা করতে চান।”(সূরা মুহাম্মাদ: ৪)





    আরও পড়ুন​
Working...
X