চীনের দুঃখ হুয়াংহো নদী, আর বিপ্লবের দুঃখ মাহফুজ আলমের গদি!
গতকাল তথ্য উপদেষ্টা মাহফুজ আলম একটি পোস্ট দিয়েছেন। যদি আমরা সেটি বিশ্লেষণ করি, তাহলে তার স্বভাব--চরিত্র ও বিশ্বাস সম্পর্কে কিছুটা ধারণা পাওয়া সম্ভব, ইনশা আল্লাহ। আমি নিম্নে কিছু পয়েন্টে বিষয়গুলো আলোচনা করছি ইনশা আল্লাহ।
পোস্ট লিংক:
১. মাহফুজের বিভাজন সৃষ্টির কৌশল
মাহফুজ ওই পোস্টে অত্যন্ত কৌশলে ইসলামপন্থীদের মধ্যে বিভেদ তৈরির চেষ্টা করেছেন এবং তার কথার মাঝে কিছু আবেগও মিশিয়ে দিয়েছেন।
তার বক্তব্য:
"আমি শর্ষিণাপন্থী যে মাদ্রাসায় পড়েছি, সেখানে জামায়াত নেতাদের ভ্রান্ত আকিদার অনুসারী হিসেবে গণ্য করা হত। তাদের ফাঁসিকে দেখা হত তাদের আলেম ও সহি 'ইসলাম' বিরোধিতার ফসল হিসেবে। আমরা ছোটবেলা থেকেই জামায়াতকে আলেম-ওলামা বিরোধী হিসেবেই জেনে এসেছি।"
"অনেকেই হয়তো খেয়াল করেন না, অধিকাংশ শাপলার কর্মীরাই জামায়াতের আকিদা ও নেতৃত্বের বিরোধী। শাপলার অনেক নেতা জামায়াতের আলেম ও পীরপন্থার বিরোধিতার শিকার। এমনকি অনেকে জামায়াত ও শিবির নেতাদের দ্বারা নিগৃহীত ও নিপীড়িত হয়েছেন।"
মাহফুজের এই বক্তব্যে কিছু সত্যতা থাকলেও, মাহফুজ অত্যন্ত ধূর্ততার সাথে কওমি ধারার আলেম ও পীরধারার সিলসিলাকে জামায়াতের প্রতিপক্ষ হিসেবে দাঁড় করিয়ে দিয়েছেন। এটি আসলে আওয়ামী লীগ ও শাহবাগীদের একটি পুরনো কৌশল। আপনারা নিশ্চয়ই মনে করতে পারবেন, হাসানুল হক ইনু, মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেলসহ অনেকে বিভিন্ন দরবারে গিয়ে জামায়াতের বিরুদ্ধে গোমরাহির বয়ান দিত। কথিত লোকজ ইসলাম বা নদিয়ার ইসলামকে প্রমট করতো। অবশ্য পরবর্তীতে তারা সেই একই অভিযোগ আলেমদের বিরুদ্ধেও দিতে শুরু করে যে, তারাও নাকি ইসলামের মূলধারা নয়। সংশ্লিষ্ট কিছু নিউজ লিংক-
জামাত যেহেতু করছেন, আপনারা দেশের শত্রু, ইসলামের শত্রু: ইনু - https://archive.ph/6NIOW
বাউলদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার আহ্বান ইনুর - https://archive.ph/ddV9P
ভাস্কর্যবিরোধীরা কোরআনবিরোধী: ইনু - https://archive.ph/aPS35
বাড়াবাড়ি করলে ঘাড় মটকে দেবো: নওফেল - https://archive.ph/e80Uu
হ্যাঁ, এটি সত্য যে, জামায়াতের নির্যাতনের শিকার অনেক ইসলামপন্থী গ্রুপ হয়েছিল। আমরা এটা আশা রাখি যে, জামাত ভুল থেকে শিক্ষা নিবে এবং ভবিষ্যতে এহেন কর্মকাণ্ড থেকে নিজেদের হাতকে বিরত রাখবে। আল্লাহ তা'আলা তাদেরকে ইসলাহ করে দিন, আমীন। তবে এটিও বাস্তবতা যে, তারা ইসলামপন্থী একটি গোষ্ঠী। কেউ যখন তাদের রাজনৈতিক ও আদর্শিক জায়গা থেকে মোকাবিলা করতে চায়, তার অর্থ সে নিজেও ইসলামপন্থী নয়। তার মূল মোকাবিলা ইসলামপন্থীদের সাথেই, শুধুমাত্র জামায়াতের সাথে নয়। যেমন, মাহফুজ তার পোস্টে লিখেছে,
"রাজনৈতিক ও আদর্শিক লড়াই করেই তাদের বিরুদ্ধে জিততে হবে। তাদের প্রোপাগান্ডা ওয়ারের জবাব দিতে হবে সত্য দিয়ে।"
এমনকি পূর্বেও সে আলেমদের মধ্যে বিভেদ তৈরির চেষ্টা করেছে। সে বলেছিল, গণতান্ত্রিক উলামাদের সাথে মিত্রতা করবে, কিন্তু অন্য আলেমদের সাথে নয়।
লিংক: https://web.facebook.com/share/p/1ABJkW6eFc/
২. মাহফুজের দ্বিমুখী নীতি
মাহফুজ একদিকে মুজিববাদ বিরোধিতার কথা বলে, আবার নিজেকে সেক্যুলার হিসেবে পরিচয় দেয়। সে সেক্যুলারদের থেকে দূরে সরে যাওয়ার হুমকি দেয় এবং মুজিববাদের কবর রচনা করার কথাও বলে।
তার বক্তব্য:
"শাহবাগে অংশ নেওয়া অনেক ছাত্র-তরুণই তাদের ভুল বুঝতে পেরে মুজিববাদী বয়ানের বাইরে যেতে চেয়েছে। গত কয়েক বছর ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে তারা অংশ নিয়েছে, আহত-নিহত হয়েছে। তারা আমাদের সহযোদ্ধা, আমাদের কমরেড! এ অভ্যুত্থানে শক্তিশালী ভূমিকা রেখে তারা লীগ ও মুজিববাদের পরাজয় নিশ্চিত করেছে। তারা ইতোমধ্যে তাদের রাজনৈতিক ভুলের প্রায়শ্চিত্ত তথা কাফফারা আদায় করেছে।"
আমাদের প্রথমে বোঝা দরকার, মুজিববাদ কী?
মুজিববাদ হল বাংলাদেশের প্রথম রাষ্ট্রপতি শেখ মুজিবুর রহমানের প্রচারিত রাজনৈতিক দর্শন। এর মূল চারনীতি হলো: জাতীয়তাবাদ, সমাজতন্ত্র, গণতন্ত্র ও ধর্মনিরপেক্ষতা।
লিংক- https://archive.ph/9Gaa0
মাহফুজ একদিকে মুজিববাদের বিরোধিতা করছে, আবার নিজেকে বাংলাদেশপন্থী বলে দাবি করছে, যা জাতীয়তাবাদী অবস্থান। সে শাহবাগিদের 'কমরেড' বলছে, যারা সমাজতন্ত্রের দোসর। আবার গণতন্ত্র ও সেক্যুলারিজমের পক্ষে কথা বলছে। তাহলে সে কি আদৌ বোঝে, মুজিববাদ কাকে বলে?
আরেকটি বিষয়—জুলাই আন্দোলনে আহত ও নিহতদের মধ্যে ঠিক কতজন শাহবাগি ছিল? মাহফুজ কি তার কোনো হিসাব দিতে পারবে? আমরা তো দেখেছি, আবু সাঈদ, শাইখ আসহাবুল ইয়ামিন এর মতো প্রাকটিসিং মুসলিম ও মাওলানা খুবাইব বিন আবদুর রহমানদের মতো খাঁটি উলামাই সেই আন্দোলনে জান দিয়েছেন। সাধারণ মুসলিমরাই হতাহত হয়েছেন।
৩. হেফাজত কি জামায়াতের প্রক্সি ছিল?
তার বক্তব্য:
"কিন্তু, জামায়াত সফলভাবেই তাদেরকে প্রক্সি হিসেবে ব্যবহার করতে পেরেছে, যেমন লীগ 'শাহবাগী'দের ব্যবহার করেছে।"
এখানে সে বোঝাতে চাইছে, শাপলার অধিকাংশ কর্মী জামায়াতের মতাদর্শের বিরোধী ছিলেন। তারপরও জামায়াত তাদের ব্যবহার করতে সক্ষম হয়েছে। অথচ বাস্তবতা হল, হেফাজত এসেছে নবী অবমাননাকারীদের প্রতিহত করতে, জামায়াতের হাতিয়ার হিসেবে নয়।
এখানে মাহফুজ বিভ্রান্তির শিকার হয়েছে। বরং সে আওয়ামী লীগ ও শাহবাগিদের প্রচারিত মিথ্যাকে প্রতিষ্ঠিত করার চেষ্টা করছে। ২০১৩ সালে হেফাজতের আন্দোলন যখন তুঙ্গে, তখন আওয়ামী লীগ ও শাহবাগিরা বলতে শুরু করলো, হেফাজত আসলে জামায়াতকে রক্ষা করতে নেমেছে। অথচ হেফাজত তখন স্পষ্ট করেই বলেছিল, "আমরা কাউকে ক্ষমতা থেকে নামাতে বা বসাতে আসিনি, আমরা নবীপ্রেমে এসেছি।"
সুতরাং, মাহফুজ হেফাজতকে জামায়াতের প্রক্সি বলার মাধ্যমে আওয়ামী লীগ ও শাহবাগিদের প্রচারণাকে পুনরুজ্জীবিত করতে চাচ্ছে।
সংশ্লিষ্ট কিছু নিউজ লিংক-
হেফাজত জামায়াতেরই ছায়া: তথ্যমন্ত্রী - https://archive.ph/lEa6O
হেফাজত ইসলামের কথার সঙ্গে ইসলামের কোনো সম্পর্ক নেই- https://archive.ph/sll2X
৪. মাহফুজ আলম: ধূর্ত ও সুবিধাবাদী
মাহফুজ আলম ১২ ঘাটের পানি খাওয়া লোক। সে শর্ষিণা মাদরাসায় পড়ে, শিবিরের মেসে থাকে, আহলে হাদিস মেয়েকে বিয়ে করে, আবার শাহবাগিদের কোলেও ওঠে। তারপর ইসলামপন্থীদের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করে।
তাকে নিয়ে এত কথা বলার কারণ কী?
জুলাই আন্দোলনে সে কিছু ভূমিকা রাখলেও, কখনোই মাস্টারমাইন্ড ছিল না। বরং সে চালাকির মাধ্যমে নিজেকে নেতৃত্ব পর্যায়ে নিয়ে আসে। ড. ইউনুস ও তার প্রেস সচিব শফিকুল আলমকেও ধোঁকা দিয়ে নিজেকে বড় কিছু হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করতে চেয়েছে। তবে আল্লাহর রহমতে, মাত্র সাত মাসেই তার আসল চেহারা প্রকাশ পেয়ে গেছে।
উপসংহার
জুলাই আন্দোলনের নেতৃত্বকারী সংগঠন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ও তাদের রাজনৈতিক সংগঠন জাতীয় নাগরিক পার্টির মাহফুজঘেঁষা নেতারা সাধারণ ধর্মপ্রাণ মুসলিমদের আবেগ নিয়ে খেলছে। মাহফুজ ও তার অনুসারীরা ইসলামবিরোধী এজেন্ডা বাস্তবায়ন করতে চায়।
সুতরাং, তারা সাধারণ মুসলিমদেকে সমর্থন পাবেন কিনা, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ও তাদের রাজনৈতিক সংগঠন জাতীয় নাগরিক পার্টির মুখলিস নেতাকর্মীদের এখনই গভীরভাবে চিন্তা করার সময়।
কৃতজ্ঞতা স্বীকারঃ শিরোনামে ব্যবহার করা বাক্যটি ফেসবুকে একজন ভাইয়ের পোস্ট থেকে নেওয়া।
Comment