Announcement

Collapse
No announcement yet.

পাঠচক্র- ৩২ || “ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে একবিংশ শতাব্দীর গণতন্ত্র (সূরা আসরের আলোকে) ” ।। মাওলানা আসেম উমর হাফিজাহুল্লাহ || ১৬তম পর্ব

Collapse
This is a sticky topic.
X
X
 
  • Filter
  • Time
  • Show
Clear All
new posts

  • পাঠচক্র- ৩২ || “ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে একবিংশ শতাব্দীর গণতন্ত্র (সূরা আসরের আলোকে) ” ।। মাওলানা আসেম উমর হাফিজাহুল্লাহ || ১৬তম পর্ব

    আন নাসর মিডিয়া পরিবেশিত

    ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে
    একবিংশ শতাব্দীর গণতন্ত্র’’

    (সূরা আসরের আলোকে)

    ।।মাওলানা আসেম উমর হাফিজাহুল্লাহ ||
    এর থেকে৬তম পর্ব





    কী এই পরীক্ষা?


    ঈমানদারদের পরীক্ষা হলো, মুখে কালিমা পাঠ করার পর এ কালিমার সত্যতার উপর কতটুকু একীন আছে? এবং এ কালিমার জন্য কে জান-মাল উৎসর্গ করতে পারবে?

    কালিমার সত্যতা ও তার বিনিময়ে আসন্ন নেয়ামতের প্রতি এমন একীন হয়ে যায়, যেমনটি দুনিয়াবাসী চোখে দেখা দুনিয়ার উপর করে। তখন সে নিজের সবকিছু উৎসর্গ করতে দ্বিধা করে না। এ কালিমা কার অন্তরে কতটুকু জায়গা করে নিয়েছে?- তা দুনিয়া ও আখিরাতের প্রতি তার একীন দেখে বোঝা যায়। যে ব্যক্তি আখিরাতের উপর এমন বিশ্বাস রাখে; যেন পলক পড়তেই সে আল্লাহর সামনে গিয়ে দাঁড়াবে, তার অর্থ হলো, তাওহীদের কালিমা তাঁর অন্তরে এমনভাবে বদ্ধমূল হয়েছে যে, এটা ছাড়া অন্য সবই তাঁর অন্তর থেকে বের হয়ে গেছে। পক্ষান্তরে কেউ যদি আখিরাতের পরিবর্তে চোখে দেখা পৃথিবীকে প্রাধান্য দেয়, তার নশ্বর জীবন ও মাল-দৌলতকে প্রাধান্য দেয়; তাহলে এটা স্পষ্ট যে, তার অন্তরে তাওহীদ কতটুকু আছে এবং অন্য বিষয় কতটুক জায়গা জুড়ে বসে আছে? আল্লাহ তা‘আলা সূরা তাওবার এক আয়াতে এ পুরো বিষয়টাকে খুব ভালভাবেই বুঝিয়ে দিয়েছেন; যাতে উপদেশ গ্রহণকারীদের জন্য কোনোরূপ জটিলতা না থাকে। তিনি ইরশাদ করেছেন-

    لَا يَسْتَأْذِنُكَ الَّذِينَ يُؤْمِنُونَ بِاللَّهِ وَالْيَوْمِ الْآخِرِ أَن يُجَاهِدُوا بِأَمْوَالِهِمْ وَأَنفُسِهِمْ وَاللَّهُ عَلِيمٌ بِالْمُتَّقِينَ ﴿التوبة: ٤٤﴾


    “আল্লাহ ও রোজ কেয়ামতের প্রতি যাদের ঈমান রয়েছে তারা মাল ও জান দ্বারা জেহাদ করা থেকে আপনার কাছে অব্যাহতি কামনা করবে না, আর আল্লাহ সাবধানীদের ভাল জানেন। (সূরা তাওবা: ৪৪)

    অর্থাৎ আল্লাহ ও আখিরাতের উপর যার ঈমান আছে, সে জিহাদ থেকে অব্যাহতির অনুমতি চায় না। সে তো আল্লাহর সাথে মোলাকাত এবং কিয়ামতের দিন এ কালিমার জন্য প্রাণ-উৎসর্গকারীদের জন্য বরাদ্দ নেয়ামত পাওয়ার জন্য অস্থির থাকে।

    অনুমতি তো সেই চাইবে, যার অন্তরে এ কালিমা প্রবেশই করেনি এবং সে আখিরাতের পরিবর্তে এ পৃথিবীকেই আসল মনে করে। আখিরাতের চেয়ে দুনিয়ার প্রতি তাদের একীন ও বিশ্বাস বেশি। কালিমা তো তারা এমনিতেই পড়েছে। কিছু রসম-রেওয়াজ আদায় করবে আর মুসলমানদের তালিকায় প্রবেশ করবে- কালিমা দ্বারা এটাই তাদের উদ্দেশ্য।

    ইমামুল মুফাসসিরীন ইমাম ইবনে জারীর তবারী রহ. এ আয়াতের তাফসীরে খুব কঠিন ও শক্ত কথা বলেছেন-

    وهذا إعلامٌ من الله نبيَّه صلى الله عليه وسلم سِيمَا المنافقين: أن من علاماتهم التي يُعرفون بها تخلُّفهم عن الجهاد في سبيل الله، باستئذانهم رسول الله صلى الله عليه وسلم في تركهم الخروجَ معه إذا استنفروا بالمعاذير الكاذبة


    ‘এটার মাধ্যমে আল্লাহর পক্ষ থেকে রাসূল কে মুনাফিকদের আলামতসমূহ জানিয়ে দেওয়া হলো যে, তাদের ঐ আলামতসমূহ যেগুলোর মাধ্যমে তাদেরকে চেনা যাবে, তার অন্যতম হলো- তারা মিথ্যা অজুহাত দেখিয়ে আল্লাহ এবং রাসূল থেকে জিহাদে না যাওয়ার অনুমতি প্রার্থনা করে আল্লাহর পথে জিহাদ করা থেকে পিছুটান মারবে।
    إِنَّمَا يَسْتَأْذِنُكَ الَّذِينَ لَا يُؤْمِنُونَ بِاللَّهِ وَالْيَوْمِ الْآخِرِ وَارْتَابَتْ قُلُوبُهُمْ فَهُمْ فِي رَيْبِهِمْ يَتَرَدَّدُونَ ﴿التوبة: ٤٥﴾


    “নিঃসন্দেহে তারাই আপনার কাছে (জিহাদে যাওয়া থেকে) অব্যাহতি চায়, যারা আল্লাহ ও রোজ কেয়ামতে ঈমান রাখে না এবং তাদের অন্তর সন্দেহগ্রস্ত হয়ে পড়েছে, সুতরাং সন্দেহের আবর্তে তারা ঘুরপাক খেয়ে চলেছে।” (সূরা তাওবা: ৪৫)

    এ কথা স্পষ্ট যে, যখন অন্তরেই সংশয় সৃষ্টি হয়েছে এবং যা কিছু হযরত মুহাম্মাদ আনয়ন করেছেন, সে ব্যাপারেই সন্দেহে পড়ে গেছে যে, মুহাম্মাদ এর আনীত শরীয়ত ক্ষতি থেকে বাঁচাতে পারবে, না ঐ ‘শরীয়ত’ যাকে আন্তর্জাতিক সুদখোরেরা বৈশ্বিক নেজাম বা ব্যবস্থাপনার নামে জাতিসংঘের মাধ্যমে চাপিয়ে দিয়েছে, তা বাঁচাতে পারবে?

    সুতরাং যাদের কালিমা পড়ার ব্যাপারে আল্লাহপাক সাক্ষী দিচ্ছেন যে, তাদের ঈমান আনা ও কালিমা পাঠ করা মিথ্যা। তাদের কেবল মৌখিক কালিমা পাঠ করা তাদেরকে কতটুকু ক্ষতি থেকে বাঁচাতে পারবে?- তা অনুধাবন করা মুশকিল নয়।

    নিজের দ্বীন ও ঈমানকে পরাজিত দেখেও বাতিল ব্যবস্থার বিরুদ্ধে কিতাল না করা, কুফরের গোলামির জিন্দেগি গ্রহণ করে প্রাণ বাঁচিয়ে ফেরাকে কোন জাতির অভিধানে ‘বিজয়’ বলা হয়েছে? নিজের ঘরবাড়ি বাঁচাতে মুসলমানদের ঘরবাড়ি পুড়তে ও উজাড় হতে দেখে, জীর্ণশীর্ণ হয়ে যেতে দেখে তামাশার নিরব দর্শক হয়ে বসে থাকা কোথাকার ভদ্রতা? যখন একদিকে আল্লাহর দল ও অপরদিকে শয়তানের দল মুখোমুখি অবস্থানে, যখন উভয় দলই নিজ নিজ আকীদা ও দৃষ্টিভঙ্গি প্রতিষ্ঠা করতে নিজের সর্বস্ব বিলীন করতে প্রস্তুত। মুমিনগণ ইসলামের জন্য আর কাফেররা কুফরী নেজাম বাস্তবায়নের জন্য যুদ্ধ করছে। এ যুদ্ধে নিজেকে যুদ্ধের কাতার থেকে আলাদা করে যদি এটা মনে করা হয় যে, আমি তো নিরেপক্ষ, তখন প্রশ্ন হলো- আপনি কোন দল থেকে নিরপেক্ষ হয়েছেন? ইসলাম থেকে?- যার জন্য প্রাণ দেওয়া আপনার উপর ফরয ছিল। রাহমাতুল্লিল আলামীন এর আনীত কুরআন থেকে?- যার জন্য ঘর-বাড়ি, মাল-সম্পদ, সন্তান-সন্ততি সবকিছু কুরবান করে দেওয়ার আদেশ আছে। আপনি তো ইসলাম থেকে শুধু এ কারণে নিরপেক্ষ অবস্থানে গেছেন; যেন কুফরী ব্যবস্থার ধারকবাহক শক্তি আপনার প্রতি অসন্তুষ্ট না হয়ে পড়ে। আল্লাহর পরিপূর্ণ দ্বীনের দাওয়াত উলামায়ে কেরামের জিম্মাদারি; যদিও গোটা বিশ্ব তাঁদের প্রতি অসন্তুষ্ট হয়ে যাক না কেন। বর্তমান সময়ে দ্বীনের দায়ীগণের বিশেষ করে ইসলামী আন্দোলনের কর্মীদের মনে রাখতে হবে, إِنَّ الْإِنسَانَ لَفِي خُسْرٍতথা সকল মানুষ ক্ষতির মধ্যে আছে, এর স্লোগান তোলার পর এ সূরার দ্বিতীয় অংশ: وَتَوَاصَوْا بِالْحَقِّ وَتَوَاصَوْا بِالصَّبْرِ(একে অপরকে হক্ব ও ধৈর্যের উপদেশ দান)-কেও মজবুতভাবে আঁকড়ে ধরতে হবে। তা না হলে ইসলামী আন্দোলনের দুর্বল ভিত্তি, অন্তঃসারশূন্য স্লোগান বা দুর্বল ভূমিকার কারণে মানুষ ইসলামী জাগরণ সম্বন্ধেও ধোঁকা ও প্রতারণার শিকার হবে।

    একবার যখন ‘আমাদের প্রভু আল্লাহ’ এ ঘোষণা দিয়ে দিয়েছেন, তখন আবশ্যক হলো: এটার উপরই অটল ও অবিচল থাকতে হবে। এটার উপরই জীবনযাপন করতে হবে, এর উপরই মরতে হবে। গাইরুল্লাহ’র প্রত্যেক নেজাম থেকে বিদ্রোহের ঘোষণা দিতে হবে। কেবল মুহাম্মাদ এর আনীত নেজাম প্রতিষ্ঠার জন্যই চেষ্টা চালিয়ে যেতে হবে। আর এর জন্যই শত্রুতা, দুশমনি, অন্ধকার কুঠরি, ফাঁসির কাষ্ঠ এবং দেশান্তর- এগুলো ক্ষতি নয়, এগুলোই হলো চূড়ান্ত সফলতা। কেননা, এসব আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্যই, তাঁর দ্বীনের বিজয়ের জন্যই বরণ করা হয়।

    তাই দ্বীনের দায়ীগণ এবং আল্লাহর জমিনে আল্লাহর কালিমাকেই বুলন্দ করার মহান ব্রত নিয়ে জাগ্রত হওয়া লোকদের জন্য আবশ্যক হলো, এ সূরার শেষ আয়াতকে নিজের মানহায ও কর্মপদ্ধতি হিসেবে বেছে নেওয়া; যাতে কাফেলা সফলতার পথে চলমান থাকে।

    মুসলিম উম্মাহর চিন্তাশীল শ্রেণীকেও এটা বুঝতে হবে যে, নিজেদের দাওয়াত এবং মানহায ও দৃষ্টিভঙ্গিকে বিজয়ী করার জন্য ক্ষমতাশীল শক্তির সামনে বিদ্রোহের ঘোষণা দেওয়া আম্বিয়ায়ে কেরাম আ. এর সুন্নাত। আল্লাহ তা‘আলার পক্ষ থেকে নাযিলকৃত দ্বীনের পরিপূর্ণ দাওয়াত- কাফেরদের যতই খারাপ লাগুক, সর্বাবস্থায় তা চালু আছে। এর জন্য যখন নিজের জান, ঘরবাড়ি এবং দেশ ত্যাগ করতে হয়েছে, তখন নিঃসঙ্কোচে সেটাই করা হয়েছে। এমনকি দলের পর দল এ দাওয়াত ও মানহাযের জন্য শহীদ হয়ে গেছেন। লড়াইয়ের ময়দানে দলের পর দল শহীদ হয়ে যাওয়া ও ক্ষমতাশীল শক্তির অন্ধকার কালো প্রকোষ্ঠ থেকে তাঁদের জানাযা বের হওয়াকে পুরুষোচিত ইতিহাস পরাজয় বলে না। এতে তো তাঁদের মানহায ও মতবাদের বিজয়ই হয়। পরাজয় হলো, দলের নেতৃবৃন্দ নিজের প্রাণ বাঁচাবার জন্য কর্মীদের কুরবানির সাথে গাদ্দারি করে নিজেদের মানহায ও মতবাদ থেকে দূরে সরে আসা। তারা দুনিয়ার ক্ষণিকের জীবন থেকে উপকৃত হওয়ার জন্য আখিরাতের স্থায়ী ও অবিনশ্বর জীবন থেকে গাফেল হয়ে যায়। বিপ্লবের ইতিহাসে শোচনীয় পরাজয় এটাকেই বলা হয় যে, নেতৃবৃন্দ নিজেদের মৌলিক মতবাদ ও চিন্তাধারা থেকে ভীত হয়ে, ক্লান্ত হয়ে সাহস হারিয়ে ফেলে বা অন্য কোনো কারণে সরে পড়ে। হক্বের কাফেলা নিজেদের স্লোগান ও মতবাদ প্রতিষ্ঠা করতে গিয়ে প্রাণ বিসর্জন দেন, এটা এমনই এক বিজয়; যার মাধ্যমে ইতিহাসের পাতা সব সময় জ্বলজ্বল করতে থাকে। যাঁরা হক্বের পথে নানা রকম কষ্ট-ক্লেশ সহ্য করেছেন, কঠিন পরিস্থিতির মোকাবেলা করেছেন এবং প্রাকৃতিক ক্ষতি বরদাশত করেও এ পথে অবিচল থেকেছেন, কুরআন মজীদে আল্লাহ তা‘আলা এ পাগলদের ব্যাপারে ইরশাদ করেছেন-
    وَكَأَيِّن مِّن نَّبِيٍّ قَاتَلَ مَعَهُ رِبِّيُّونَ كَثِيرٌ فَمَا وَهَنُوا لِمَا أَصَابَهُمْ فِي سَبِيلِ اللَّهِ وَمَا ضَعُفُوا وَمَا اسْتَكَانُوا وَاللَّهُ يُحِبُّ الصَّابِرِينَ ﴿آل‌عمران: ١٤٦﴾


    “আর বহু নবী ছিলেন, যাঁদের সঙ্গী-সাথীরা তাঁদের অনুবর্তী হয়ে জেহাদ করেছে; আল্লাহর পথে-তাদের কিছু কষ্ট হয়েছে বটে, কিন্তু আল্লাহর রাহে তারা হেরেও যায়নি, ক্লান্তও হয়নি এবং দমেও যায়নি। আর যারা সবর করে, আল্লাহ তাদেরকে ভালবাসেন।” (সূরা আলে-ইমরান: ১৪৬)

    ইমাম ইবনে জারীর তবারী রহ. বলেন, আহলে হেজায ও বসরার কেরাতের (তিলাওয়াতরীতি) মধ্যে এ আয়াতে قٰتَلَ এর জায়গায় قُتِلَ পড়া হয়েছে। অর্থাৎ কত নবী ছিলেন, যাঁদের সাথে উলামা ও ফকীহগণ শহীদ হয়ে গিয়েছেন, কিন্তু তাঁদের পরবর্তীরা তাঁদের পর কিতাল করা থেকে সাহস হারায়নি এবং দুর্বলতাও প্রকাশ করেনি।




    আরও পড়ুন
    ১৫তম পর্ব









































































































Working...
X