মামুনুল হক সাহেবের হেনস্থার ঘটনা- কল্যাণই বয়ে আনবে ইনশাআল্লাহ
মামুনুল হক সাহেবের হেনস্থার ঘটনায় সবাই মর্মাহত।
সবচে’ বড় পেরেশানির ব্যাপার ছিল, তাগুত সরকার হুজুরকে অপবাদে ফাঁসিয়ে ফেলতে পারে কি’না; তাহলে গোটা উলামা সমাজের মুখ নষ্ট হতো। আল্লাহ তাআলার মেহেরবানি: সরকারের অপচেষ্টা সফল হতে পারেনি। অনেক চড়াও উৎরাই পার হয়ে শেষে প্রমাণ হলো, মহিলা হুজুরের বিবাহিতা স্ত্রী।
অপবাদের ঘটনা আজ নতুন নয়। হযরত ইউসুফ আলাইহিস সালামকেও অপবাদ দেয়া হয়েছিল। ফলে তিনি বেশ কয়েক বছর জেল খেটেছেন। শেষে তিনি নির্দোষ প্রমাণ হয়েছেন। আল্লাহ তাআলা তাকে সম্মানিত করেছেন।
আম্মাজান আয়েশা রাদি.কে অপবাদ দেয়া হয়েছিল। আল্লাহ তাআলা কুরআনে কারীমে আয়াত নাযিল করে তার পবিত্রতার ঘোষণা দিয়েছেন এবং মুনাফিকদের মুখোশ উন্মোচন করেছেন।
আল্লাহ তাআলা বলেন,
{ لَا تَحْسَبُوهُ شَرًّا لَكُمْ بَلْ هُوَ خَيْرٌ لَكُمْ لِكُلِّ امْرِئٍ مِنْهُمْ مَا اكْتَسَبَ مِنَ الْإِثْمِ وَالَّذِي تَوَلَّى كِبْرَهُ مِنْهُمْ لَهُ عَذَابٌ عَظِيمٌ (11) لَوْلَا إِذْ سَمِعْتُمُوهُ ظَنَّ الْمُؤْمِنُونَ وَالْمُؤْمِنَاتُ بِأَنْفُسِهِمْ خَيْرًا وَقَالُوا هَذَا إِفْكٌ مُبِينٌ (12)} [النور: 11، 12]
তোমরা এ (অপবাদের তুফান)কে নিজেদের জন্য ক্ষতির কারণ মনে করো না, বরং (শেষ পরিণতিতে) এটি তোমাদের জন্য কল্যাণেরই বিষয় (হবে)। তাদের (অর্থাৎ অপবাদ আরোপকারীদের) প্রত্যেকে যে যতটুকু করেছে ততটুকুর গুনাহ তার ঘাড়ে বর্তিয়েছে। তাদের মধ্য থেকে (এ তুফান)-এর প্রধান ভূমিকা নিয়েছে তার কঠিন শাস্তি হবে।
(হে মুমিনগণ!) যখন তোমরা এ কথা শুনেছিলে তখন মুমিন পুরুষ ও মুমিন নারীরা নিজেদের ব্যাপারে কেন ভাল ধারণা পোষণ করল না এবং (যবানে) এ কথা কেন বললো না যে, এ তো সুস্পষ্ট অপবাদ?! –নূর: ১১-১২ তোমরা এ (অপবাদের তুফান)কে নিজেদের জন্য ক্ষতির কারণ মনে করো না, বরং (শেষ পরিণতিতে) এটি তোমাদের জন্য কল্যাণেরই বিষয় (হবে)। তাদের (অর্থাৎ অপবাদ আরোপকারীদের) প্রত্যেকে যে যতটুকু করেছে ততটুকুর গুনাহ তার ঘাড়ে বর্তিয়েছে। তাদের মধ্য থেকে (এ তুফান)-এর প্রধান ভূমিকা নিয়েছে তার কঠিন শাস্তি হবে।
আল্লাহ তাআলা আদব শিখাচ্ছেন যে, পূত:পবিত্র কোনো মুমিনের ব্যাপারে এ ধরনের কোনো কথা শুনলে অন্যান্য মুমিনরা একে বিশ্বাস করে বসবে না। বরং মুমিনের ব্যাপারে ভাল ধারণা পোষণ করবে এবং তার ব্যাপারে যে কথা উঠানো হয়েছে, সুস্পষ্ট বলে দেবে যে, এ অপবাদ ছাড়া কিছু নয়। যদি তোমরা সুস্পষ্ট শরয়ী দলীল প্রমাণ দেখাতে না পারো, তাহলে তোমরা মিথ্যাবাদী। অপবাদ আরোপকারী। তোমরা এহেন জঘন্য কথা কেন উঠালে? শরীয়ত সম্মত প্রমাণ পেশ কর, নইলে তোমাদের শাস্তির সম্মুখীন করা হবে।
আর অপবাদ আরোপকারীদের ব্যাপারে আল্লাহ তাআলা জানিয়ে দিয়েছেন যে, এ অপবাদে যে যতটুকু ভূমিকা নিয়েছে সে ততটুকু অপরাধী। যে প্রধান ভূমিকা নিয়েছে তার জন্য প্রস্তুত আছে ভয়ানক শাস্তি।
সকলের জানা যে, এ নাটকের প্রধান ভূমিকা পালন মূলত সরকারই করেছে। আমরা আশাবাদী আল্লাহ তাআলা এ অপবাদের কারণে এ মিথ্যুক সরকারকে কঠিন শাস্তির সম্মুখীন করবেন।
মিডিয়া কর্মী, লীগের ছেলেপেলে ও প্রশাসনের লোকেরা যে যতটুকু ভূমিকা নিয়েছে সে অনুপাতে তারাও সম্মুখীন হবে শাস্তির।
এমনিভাবে সাধারণ জনতা ও সাধারণ মুসলিমদের যারা শুনতে না শুনতেই এ অপবাদ বিশ্বাস করতে শুরু করেছেন, প্রচার করতে শুরু করেছেন, তারাও মাত্রা অনুপাতে শাস্তির সম্মুখীন হবেন।
কাজেই মুসলিম ভাইদের আহ্বান জানাবো, হুজুরের সাথে দুশমনি করেই হোক আর এমনি এমনিই হোক- আপনারা যারা এ ঘটনায় হুজুরকে হেনস্থা করতে কোনো না কোনোভাবে অংশ নিয়েছেন: আপনারা প্রথমত আল্লাহর দরবারে তাওবা করুন। আল্লাহর কাছে মাফ চান। দ্বিতীয়ত সরাসরি হুজুরের কাছে মাফ চেয়ে মাফ নিন। নইলে আল্লাহ তাআলা কাউকে ছাড় দেবেন না। আপনারা একে সাধারণ কিছু মনে করেছেন। কিন্তু আল্লাহ তাআলার কাছে এটি সাধারণ কিছু নয়-
{ وَتَحْسَبُونَهُ هَيِّنًا وَهُوَ عِنْدَ اللَّهِ عَظِيمٌ (15)} [النور: 15]
তোমরা একে একটি মামুলি ব্যাপার মনে করেছিলে অথচ আল্লাহর কাছে এ অত্যন্ত গুরুতর এক ব্যাপার। -নূর: ১৫
তোমরা একে একটি মামুলি ব্যাপার মনে করেছিলে অথচ আল্লাহর কাছে এ অত্যন্ত গুরুতর এক ব্যাপার। -নূর: ১৫
বিশেষত যখন এর সাথে গোটা উলামা সমাজ, বরং গোটা মুসলিম জাতির মান-সম্মান জড়িত। সময় থাকতে মাফ চেয়ে নিন। নইলে গোটা মুসলিম সমাজের ইজ্জতে আঘাত দেয়ার অপরাধের শাস্তি আপনাকে বইতে হবে।
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন,
من كانت له مظلمة لأخيه من عرضه أو شيء، فليتحلله منه اليوم، قبل أن لا يكون دينار ولا درهم، إن كان له عمل صالح أخذ منه بقدر مظلمته، وإن لم تكن له حسنات أخذ من سيئات صاحبه فحمل عليه. (صحيح البخاري: 2449)
যে ব্যক্তি তার ভাইয়ের সম্ভ্রমহানি বা অন্য কোন বিষয়ে জুলুমের জন্য দায়ী থাকে, সে যেন আজই তার কাছ থেকে দায়মুক্ত হয়ে নেয়, সেদিন আসার পূর্বে, যেদিন তার কোন দিনার বা দিরহাম থাকবে না। তার কোন সৎকর্ম থাকলে জুলুমের সমপরিমাণ সেখান থেকে নিয়ে নেয়া হবে। কোন সৎকর্ম না থাকলে প্রতিপক্ষের ঘাড় থেকে সমপরিমাণ পাপ নিয়ে তার উপর চাপিয়ে দেয়া হবে। –সহীহ বুখারী: ২৪৪৯
যে ব্যক্তি তার ভাইয়ের সম্ভ্রমহানি বা অন্য কোন বিষয়ে জুলুমের জন্য দায়ী থাকে, সে যেন আজই তার কাছ থেকে দায়মুক্ত হয়ে নেয়, সেদিন আসার পূর্বে, যেদিন তার কোন দিনার বা দিরহাম থাকবে না। তার কোন সৎকর্ম থাকলে জুলুমের সমপরিমাণ সেখান থেকে নিয়ে নেয়া হবে। কোন সৎকর্ম না থাকলে প্রতিপক্ষের ঘাড় থেকে সমপরিমাণ পাপ নিয়ে তার উপর চাপিয়ে দেয়া হবে। –সহীহ বুখারী: ২৪৪৯
পাশাপাশি আল্লাহ তাআলা মুমিনদের শান্তনা দিয়ে এ কথাও জানিয়ে দিয়েছেন যে, মুনাফিক শ্রেণী তোমাদের সম্মানহানি করতে চেয়েছিল। তোমরা ঘাবড়াবে না। এ অপচেষ্টা শেষে তোমাদের কল্যাণই বয়ে আনবে।
আমরা ইনশাআল্লাহ এ কল্যাণের প্রত্যাশায় আছি।
বিশেষত একটি কল্যাণ তো ইতিমধ্যেই প্রকাশ হয়ে গেছে যে, সরকার যে মিথ্যাবাদী ও ষড়যন্ত্রের মূল হোতা তা মোটামুটি সকলের আন্দাজ হয়ে গেছে। প্রকাশ হয়ে গেছে যে, রাবেয়া বসরী সাহেবা হিজাব আর তাহাজ্জুদের বুলির আড়ালে ইসলাম ধ্বংসের পায়তারায় লিপ্ত। যে দেশে পারস্পরিক সম্মতিতে যিনা বৈধ, যে দেশে দশটা বান্ধবী নিয়ে হোটেলে রাত্রি যাপন কোনো অপরাধ নয়: সে দেশের সরকার কত বড় সুফি যে, ঘটনা ঘটতে না ঘটতেই পার্লামেন্টে ভাষণ দিয়ে দিয়েছে। দেশবাসীর কাছে বিচারও চেয়েছে। কত বড় রাবেয়া বসরী তিনি। কথায় আছে, অতিভক্তি চুরির লক্ষণ।
অধিকন্তু তার কথার মাঝেই একটি মিথ্যা প্রকাশ পেয়েছে: হাসিনা বলেছে মেয়েটি একটি পার্লারের মেয়ে। অথচ সবাই জেনেছেন, মহিলা মূলত অন্য একজন আলেমের সাবেক বিবি। তাদের ছাড়াছাড়ির পর মামুনুল হক সাহেব উনাকে বিবাহ করেছেন।
অধিকন্তু এতগুলো মিডিয়া কর্মী, লীগের গুণ্ডা ও প্রশাসনের লোক হঠাৎ একজন সম্মানীত আলেমের উপর এভাবে হুমড়ি খেয়ে পড়া, হেনস্থা করা, গালিগালাজ করা, গায়ে হাত তুলা: এসব কিছু প্রমাণ বহন করে যে, সব পূর্ব পরিকল্পিত।
আর একটি প্রমাণ: ফোনালাপ ফাঁস। মিডিয়ার লোকেরা ফোনালাপ আয়ত্ব করার প্রযুক্তি কোথায় পেল? তাদের কাছে এ ধরনের প্রযুক্তি থাকার কথা নয়। নিশ্চয় সরকার ও প্রশাসন তাদেরকে এ ফোনালাপ সরবরাহ করেছে।
আরও একটি কল্যাণ ইতিমধ্যে প্রকাশ হয়ে গেছে যে, অনেকে এ ঘটনার পর আওয়ামীলীগ ত্যাগ করেছেন। অনেকে ছাত্রলীগ ত্যাগ করেছেন।
আমরা আশাবাদী: এগুলো কোনো বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়। আল্লাহ তাআলা পরিকল্পনামাফিক এগুলো ঘটাচ্ছেন।
{وَمَكَرُوا وَمَكَرَ اللَّهُ وَاللَّهُ خَيْرُ الْمَاكِرِينَ (54)} [آل عمران: 54]
{مَا كَانَ اللَّهُ لِيَذَرَ الْمُؤْمِنِينَ عَلَى مَا أَنْتُمْ عَلَيْهِ حَتَّى يَمِيزَ الْخَبِيثَ مِنَ الطَّيِّبِ} [آل عمران: 179]
***
Comment