Announcement

Collapse
No announcement yet.

পাঠচক্র- ৩২ || “ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে একবিংশ শতাব্দীর গণতন্ত্র (সূরা আসরের আলোকে) ” ।। মাওলানা আসেম উমর হাফিজাহুল্লাহ || ২৫তম পর্ব

Collapse
This is a sticky topic.
X
X
 
  • Filter
  • Time
  • Show
Clear All
new posts

  • পাঠচক্র- ৩২ || “ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে একবিংশ শতাব্দীর গণতন্ত্র (সূরা আসরের আলোকে) ” ।। মাওলানা আসেম উমর হাফিজাহুল্লাহ || ২৫তম পর্ব


    আন নাসর মিডিয়াপরিবেশিত

    ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে
    একবিংশ শতাব্দীর গণতন্ত্র’’

    (সূরা আসরের আলোকে)

    ।।মাওলানা আসেম উমর হাফিজাহুল্লাহ ||
    এর থেকে২৫তম পর্ব



    ৭. বেহায়াপনা


    এ সময়ের জাতীয়তাবাদী রাষ্ট্রগুলোতে (মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ হোক বা কাফের সংখ্যাগরিষ্ঠ) যে জীবনধারা প্রচলিত আছে, তার বাস্তবতা অনুধাবনকারীর জন্য এ কথা বুঝা মোটেও কঠিন নয় যে, এ পুরো ধারাটিই প্রবৃত্তির উপর দাঁড়িয়ে আছে। এ জীবনব্যবস্থার বাগডোর না; বরং শাহরগ যাদের (কর্পোরেট, বিশ্বব্যাংক ও মাল্টিন্যাশনাল) হাতে, তাদের প্রথম উদ্দেশ্যই হলো, মুসলমানদেরকে নয় শুধু, পুরো মানবতাকে বেহায়াপনার গর্তে নিক্ষেপ করা, যেখানে মানবতা লজ্জিত। এ পর্যায়ে মানুষকে দেখে ইবলিশ খুবই আনন্দিত হয়।

    ইসলাম বিজয়ী হওয়ার অবস্থায় শরীয়াহব্যবস্থা যে স্পর্শকাতর বিষয়টির প্রতি (দমনের লক্ষ্যে) সবচেয়ে খেয়াল রাখে, তা হলো বেহায়াপনা। এর সূক্ষ্মানুভূতি এ কথার দ্বারা স্পষ্ট যে, ব্যভিচার একজন মানুষ গোপনভাবেই করে। যদি সাক্ষী না থাকে এবং সে নিজেও তা স্বীকার না করে, তখন আলামত পাওয়া যাওয়া সত্ত্বেও তাকে শরীয়াহ শাস্তি দেয় না। অথচ অপরাধ তো সংঘটিত হয়েছে। কিন্তু এ অপরাধ যদি খোলামেলা পরিবেশে করার চেষ্টা করা হয়, তখন এর শাস্তি খুবই কঠিন।

    বুঝা গেল, শরীয়াহর কাছে গোনাহর প্রসার করা গোনাহ করার চেয়ে মারাত্মক।
    আল্লাহ তা‘আলা ইরশাদ করেছেন-

    إِنَّ الَّذِينَ يُحِبُّونَ أَن تَشِيعَ الْفَاحِشَةُ فِي الَّذِينَ آمَنُوا لَهُمْ عَذَابٌ أَلِيمٌ فِي الدُّنْيَا وَالْآخِرَةِ وَاللَّهُ يَعْلَمُ وَأَنتُمْ لَا تَعْلَمُونَ ﴿النور: ١٩﴾


    “যারা পছন্দ করে যে, ঈমানদারদের মধ্যে ব্যভিচার প্রসার লাভ করুক, তাদের জন্যে ইহাকাল ও পরকালে যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি রয়েছে। আল্লাহ জানেন, তোমরা জান না।” (সূরা নূর: ১৯)

    বর্তমান গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রগুলোতে যেহেতু এলিটশ্রেণীর প্রবৃত্তিই আসল, তাই বেহায়াপনা ও অশ্লীলতার প্রসার ঘটাতে রাষ্ট্র সাধ্যের সবটুকু ঢেলে দেয়। বেহায়াপনার খবরসমূহ নতুন নতুন মোড়কে প্রচার করা হচ্ছে, যা দেখে আশ্চর্য না হয়ে কোনো উপায় নেই। গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার স্তম্ভ এ বেহায়াপনা শয়তানের ইচ্ছার যেন জ্যান্ত প্রতিচ্ছবি।

    বেহায়াপনা ও অশ্লীলতা ছড়ানোর কত যে গুরুত্ব এ ব্যবস্থায়, তা আপনি এ কথা থেকে আন্দাজ করতে পারবেন যে, কোনো ধর্মনিষ্ঠ মুসলমান যদি ঘরে ঘরে সংযোগ দেওয়া ক্যাবল তারগুলো কাটার চেষ্টা করে, অথবা নাচগান ও নাইট ক্লাবগুলো বন্ধ করতে চায় এবং এ লক্ষ্যে ঈমানী আত্মমর্যাদার সর্বোচ্চ স্তর ‘হাত’ ব্যবহার করে, তখন রাষ্ট্র তাঁকে কেমন দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দেবে? রাষ্ট্রের আইনশৃংখলা বাহিনী (তাঁর বিরুদ্ধে) পদক্ষেপ নেবে। সেই ব্যক্তির বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করা হবে। লাল-মাসজিদ ট্র্যাজেডি আপনাদের সামনে আছে। তাঁদের অপরাধ ছিল, তাঁরা এ নাপাকি থেকে সমাজকে বাঁচাতে চেয়েছেন, যা দেশের রাজধানীতে ছড়িয়ে পড়েছিল। এমনকি এমন ঘটনা ঘটছিল, যা শুনে মেজাজ ঠিক রাখা মুশকিল ছিল। বাপ-মেয়ে, ভাই-বোনের পার্থক্য শেষ হয়ে যাচ্ছিল। কিন্তু রাষ্ট্র এসবের প্রতি রুষ্ট হয়নি। রুষ্ট হয়েছে সেই নষ্টামি প্রতিহতকারী ধার্মিকশ্রেণীর কিছু নিরীহ ছাত্র-ছাত্রীর প্রতি।

    ধার্মিক ধনীশ্রেণীকে এ কথা ভালো করে বুঝে নিতে হবে যে, বেহায়াপনা এ ব্যবস্থায় লাইফস্টাইল হিসেবে অন্তর্ভুক্তপ্রবৃত্তির কামনা-বাসনার পূর্ণতাদানে মেয়েদের পর্যন্ত পৌঁছতে ছেলেদের জন্য যেসব প্রতিবন্ধকতা আছে, তা শেষ করে দেওয়া জাতিসংঘের প্রতিষ্ঠিত বিশ্বকুফরী ব্যবস্থার অন্যতম উদ্দেশ্য। আর জাতীয়তাবাদী সরকারগুলো তো জাতিসংঘেরই অনুগত।

    সুতরাং কোনো শক্তি আল্লাহর হুকুম সৎকর্মের আদেশ ও অসৎকর্মের নিষেধ করবে এবং নিজের চোখের সামনে ঘটমান হারামকে প্রতিহত করার লক্ষ্যে শক্তিপ্রয়োগ করবে, তা কখনো রাষ্ট্র বরদাশত করবে না।




    সারকথা


    এ তো অল্প কিছু মন্দ দিক আলোচনা করা হয়েছে, না হয় এ গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় ঘটে না- এমন আর কী বাকি আছে?

    এখানে একটি প্রশ্ন হতে পারে, সমাজে বিভিন্ন আন্দোলন জোরদার হওয়া সত্ত্বেও সমাজে পাপাচার কেন বেড়ে চলছে? অর্থাৎ একদিকে আমরা ধর্মীয় আধ্যাত্মিক শক্তিগুলো (তাবলীগ জামাত, মাদরাসা, খানকা) কে যখন দেখি, তো আল-হামদুলিল্লাহ খুশিতে হৃদয় নেচে ওঠে। ফেতনাভরা এ যুগে কত কষ্ট করে দিনরাত মেহনতের মাধ্যমে জাতিকে ইসলামের বাণী পৌঁছে দেওয়া হচ্ছে। এমন এক পরিস্থিতির মাঝে, যখন রাষ্ট্র নয় শুধু, আন্তর্জাতিকভাবে পাপাচারের পৃষ্ঠপোষকতা করা হচ্ছে। এ দ্বীনি শক্তিগুলো বড় বড় শহরে যুবকদেরকে ইসলামের রঙে রাঙিয়ে দিচ্ছে।

    কিন্তু এসব কিছুর পরও সমাজে সামগ্রিকভাবে বেহায়াপনা বেড়েই চলছে। অর্থাৎ যে মন্দ কাজকে কালও ধার্মিকরা ফেতনা মনে করত; কিন্তু আজ অনেক ধার্মিক বা তাদের সন্তানরাও তাতে জড়িয়ে পড়ছে।

    এর কারণ স্পষ্ট, যে ব্যবস্থা বিজয়ী থাকবে, তারই জীবনধারা বিজয়ী থাকবে। সেই ব্যবস্থার ছায়াতলে থেকে যতই সংশোধনের চেষ্টা করা হোক না কেন। আল্লাহ তা‘আলা এ বাস্তবতা ভালোভাবেই জানেন। তাই কুফরের কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠার আগেই তিনি তা ভেঙে দিতে বলেছেন-

    ﴿ وَقَاتِلُوهُمْ حَتَّى لَا تَكُونَ فِتْنَةٌ ﴾

    “শরীয়াহ’র দুশমনদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করো, যতক্ষণ না ফেতনা নির্মূল হয়।”


    সুতরাং যতদিন ফেতনা তথা গাইরুল্লাহ’র মতবাদ বিদ্যমান থাকবে, ততদিন মুহাম্মাদ এর শরীয়াহ বাস্তবায়িত হবে না। তাই প্রথমে সেই শক্তিকে ভেঙে দিতে বলা হয়েছে, যা এসব নষ্টামির পৃষ্ঠপোষকতা করছে। আপনি সুদের বিরুদ্ধে যত কর্মশালাই করুন না কেন, যত তাবলীগ করুন না কেন। কিন্তু যখন রাষ্ট্র স্বীয় শক্তিবলে জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে সুদকে আবশ্যক করে দেয় এবং তা আদায় করা রাষ্ট্রীয়ভাবে ফরয করে দেয়, তখন তার বিরোধিতা রাষ্ট্রদ্রোহিতা নামেই অবিহিত হয়। তাই মুসলমানদের ইচ্ছায় অনিচ্ছায় এ সুদি কারবারে জড়াতে বাধ্য করা হচ্ছে, যাতে তারা সুদি লেনদেনে জড়িয়ে কামাই রুজি করে।

    অনেকে মনে করেন, সুদ পাকিস্তান বা অন্য যে কোনো রাষ্ট্রের অভ্যন্তরীণ বিষয়। তাই চাইলে তা শেষ করে দেওয়া যাবে। বিশ্বব্যবস্থা ও জাতিসংঘের নিয়ম-কানুন বুঝতে ভুল করার কারণেই এমন ধারণা হতে পারে। দেশীয় সরকারের পেছনে দাঁড়িয়ে আছে বিশ্বকুফর সরকার। তা সব দেশকে আন্তর্জাতিক আইন মানতে বাধ্য করছে। তাই জিহাদ ছাড়া শুধু বুঝিয়ে এসব পরিবর্তন করা অসম্ভব। তাই সর্বপ্রথম সেই হাত ভাঙতে হবে, যা পুরো পৃথিবীকে জিম্মি বানিয়ে রেখেছে। সুদ ছাড়া জীবনোপকরণ অসম্ভব করে দিয়েছে।

    পাপাচারের সহায়ক শক্তিগুলো যতদিন বিদ্যমান থাকবে, ততদিন সেই পাপাচারের জোর ভাঙা যাবে না। সেই শক্তিকে প্রথমে ভেঙে দিলে এমনিতেই পুরো পরিস্থিতি আল্লাহর আইনের নিয়ন্ত্রণে চলে আসবে। আগে কুফরীশক্তিকে ভেঙে দেওয়া ব্যতীত পুরো পরিবেশ দ্বীনমুখী হয়ে যাওয়া অসম্ভব।





    আরও পড়ুন
    ২৪তম পর্ব --------------------------------------------------------------------------------------------- ২৬তম পর্ব
    Last edited by tahsin muhammad; 22 hours ago.
Working...
X