আন নাসর মিডিয়াপরিবেশিত
“ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে
একবিংশ শতাব্দীর গণতন্ত্র’’
(সূরা আসরের আলোকে)
।।মাওলানা আসেম উমর হাফিজাহুল্লাহ ||
এর থেকে– ২৭তম পর্ব
“ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে
একবিংশ শতাব্দীর গণতন্ত্র’’
(সূরা আসরের আলোকে)
।।মাওলানা আসেম উমর হাফিজাহুল্লাহ ||
এর থেকে– ২৭তম পর্ব
কৃষিক্ষেত্রে সব ধরনের অত্যাধুনিক আবিষ্কারের পরও বর্তমানে কৃষিক্ষেত্রে যে অবস্থা তা বিশ্বের সকলের সামনে স্পষ্ট। প্রাথমিকভাবে আবাদযোগ্য ভূমি থেকে ফসল উৎপাদনে কতই না কষ্ট স্বীকার করতে হয়। সর্বপ্রথম বীজের প্রতি মুখাপেক্ষিতা, তারপর নতুন নতুন ঔষধের প্রয়োগ, অতঃপর সারের পর সার দেওয়া, ডিজেল আর বিদ্যুতের ব্যবস্থা, তারপর পানির সেঁচের ব্যবস্থা করা, আরও কত কিছু? এত কষ্টের পর যা বের হয়ে আসে, তাতে দেখা যায়¬- সে ফসল পুষ্টিকর উপাদানশূন্য। লাভের চেয়ে ক্ষতিকর বেশি। আর তখন খোদ কৃষি বিজ্ঞানীই ঘোষণা দিয়ে দেয় যে, নব আবিষ্কৃত ঔষধ আর সার দিয়ে ফলানো ফসল মানুষের শরীরের জন্য ক্ষতিকর।
ফুলের দোকানগুলোতে ফুলের আকৃতিতে অনেক ফুল দেখা যায় ঠিকই; কিন্তু সেখানে সুঘ্রাণ বলে কিছু নেই। খাবারে পুষ্টিদ্রব্য নেই, আর যখন পুষ্টিদ্রব্যই নেই; তো সেটা রিযিক কিভাবে হবে? আর এজন্যই সর্বসাধারণের মহান হাকিম ঘোষণা দিলেন-
لَا يَخْرُجُ إِلَّا نَكِدًا অর্থাৎ আর মন্দ ভূমি থেকে অল্পস্বল্প ছাড়া কিছুই গজায় না। আল্লাহ তা‘আলা তাকে শস্যের মাঝে অন্তর্ভুক্তই করেননি। সেটাকে রদ্দি বা আগাছা হিসেবেই উল্লেখ করেছেন।
আল্লাহ তা‘আলা’র নাযিলকৃত শরীয়তকে না মেনে মানুষ যুগে যুগে ক্ষতি ও বিপর্যয়ের সম্মুখীন হয়েছে। ইহকালীন ও পরকালীন সব ধরনেরই ক্ষতি ও বিপর্যয়ের সম্মুখীন হয়েছে। শুধু ক্ষতি আর ক্ষতি, বিপর্যয় আর বিপর্যয়। এ বিপর্যয় তাদের জন্য, যাদের কাছে দুনিয়ার সবকিছু আছে এবং তাদের জন্যও যাদের কাছে কোনো কিছুই নেই।
আল্লাহ তা‘আলা ঘোষণা করেছেন-
وَمَنْ أَعْرَضَ عَن ذِكْرِي فَإِنَّ لَهُ مَعِيشَةً ضَنكًا وَنَحْشُرُهُ يَوْمَ الْقِيَامَةِ أَعْمَىٰ ﴿طه: ١٢٤﴾
“আর যে আমার স্মরণ থেকে মুখ ফিরিয়ে নেবে, তার জীবিকা সংকীর্ণ হবে এবং আমি তাকে কেয়ামতের দিন অন্ধ অবস্থায় উত্থিত করব।” (সূরা ত্বহা: ১২৪)
আল্লাহর নাযিলকৃত শরীয়তের সাথে বিদ্রোহ করে নিজেদের জীবনকে উপভোগকারী শক্তিগুলোর কী পরিণতি হয়েছিল?- সেই ক্ষতিগ্রস্থতাই তো! ইহকাল ও পরকাল কোনোটিতেই তারা সার্থক হতে পারেনি। মুসলমানদেরকে গণহারে হত্যা করার জন্য এবং আফগানিস্তানের ভূমি থেকে আল্লাহর আইনকে রহিত করার জন্য বিশ্বকুফরী শক্তির সঙ্গ এজন্যই দিয়েছিল যে, এটা পার্থিব ভোগবিলাসে তাদের জন্য কল্যাণ বয়ে আনবে। এটা কত বড় প্রতারণাই না ছিল যে, আল্লাহর সাথে কুফরী করে, আল্লাহর শরীয়তের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে এবং মুসলমানদের উপর গণহত্যা পরিচালনা করার জন্য নিজেদের সৈন্য পাঠিয়ে আল্লাহর যে ক্রোধের তারা শিকার হবে, যার কারণে তাদের জিন্দেগী দুর্বিষহ হয়ে ওঠার কথা, উল্টো তারা আগের চেয়েও আরাম আয়েশে থাকার ইচ্ছে পোষণ করছে। কিন্তু, কে বিশ্বাস করবে? যাঁদের অন্তরে এ কুরআন অবতীর্ণ হয়েছে এবং যাঁরা আমেরিকার বিধানের বিপরীতে আল্লাহর বিধানকেই বেশি গুরুত্ব প্রদান করে তাঁরা ছাড়া?
ইতিহাস সাক্ষী যে, আল্লাহর শরীয়তের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করার পরিণামে উন্নতির সর্বোচ্চ শিখরে উপনীত ও ভোগ বিলাসিতায় মত্ত লোকদের বসতিগুলো আল্লাহ তা‘আলা এমনভাবে গুড়িয়ে দিয়েছেন যে, আর কেউ সেখানে গিয়ে বসবাসের কল্পনাও করতে পারেনি। মহান আল্লাহ তা‘আলা ইরশাদ করেছেন-
وَكَمْ أَهْلَكْنَا مِن قَرْيَةٍ بَطِرَتْ مَعِيشَتَهَا فَتِلْكَ مَسَاكِنُهُمْ لَمْ تُسْكَن مِّن بَعْدِهِمْ إِلَّا قَلِيلًا وَكُنَّا نَحْنُ الْوَارِثِينَ ﴿القصص: ٥٨﴾
“আমি অনেক জনপদ ধবংস করেছি, যার অধিবাসীরা তাদের জীবন যাপনে মদমত্ত ছিল। এগুলোই এখন তাদের ঘর-বাড়ী। তাদের পর এগুলোতে মানুষ সামান্যই বসবাস করেছে। অবশেষে আমিই মালিক রয়েছি।” (সূরা ক্বাসাস: ৫৮)
সব ধরনের আরাম আয়েশে মত্ত জাতিগোষ্ঠী যখন আল্লাহর শরীয়ত পালনে অস্বীকৃতি জানাল, তখন আল্লাহ তা‘আলাও তাঁর নেয়ামতসমূহ থেকে তাদেরকে বঞ্চিত করলেন।
বঞ্চিত আর বঞ্চিত। মধ্যপ্রাচ্যের ব্যাপারে তো বলার অপেক্ষা রাখে না। খোদ পশ্চিমাদের বঞ্চিতকরণের মাঝে শিক্ষা রয়েছে। যদিও দাজ্জালী মিডিয়া সেটা গোপন করতে চায়; কিন্তু বাস্তবতা গভীর অন্ধকারাচ্ছন্ন। রিযিকের নামে তারা যা খাচ্ছে, তাতে খাদ্য-পুষ্টি বলতে কিছুই নেই। তারা বিভিন্ন বাহারের ফল খায়; কিন্তু, তাতে কোনো স্বাদ বা তৃপ্ততা নেই। নিরেট বানানো বীজ থেকে বানানো খাদ্য। বিভিন্ন ধরনের রাসায়নিক বিষাক্ত সার দিয়ে তাদের জন্য গম-ভুট্টা তৈরি করা হয়। তাদের কোনো খালেস ও প্রাকৃতিক রিযিক জুটে না। এটাও এক ধরনের বঞ্চিতকরণ। আল্লাহ তা‘আলা যাকে চান তাকে তাঁর নেয়ামতসমূহ থেকে বঞ্চিত করেন। এভাবে যে, সব উপকরণ তাদের কাছে থাকা সত্ত্বেও তারা সেই খাদ্য থেকে বঞ্চিত।... কেন?
পৃথিবীতে এর উৎকৃষ্ট উপমা হিসাবে মিশর বিদ্যমান। নীল নদের উপকূলে অবস্থিত উর্বর ভূমি এক সময় বিশ্বের সবচেয়ে উৎকৃষ্ট ফসল উৎপাদন করত। কিন্তু, মিশরের নেতৃবর্গ ও প্রশাসন আল্লাহর শরীয়তের বিরুদ্ধে যুদ্ধ শুরু করল। তারা চিন্তা করল, বর্তমানে রিযিক তো আল্লাহ দেন না, আমেরিকা ও ইসরাঈল দেয়। আর তাই মিশর বানর আর শূকরের বংশধরদের সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে আল্লাহর শরীয়তের বিরুদ্ধে প্রকাশ্য যুদ্ধ ঘোষণা করল। পরিণামে, অতিরিক্ত রিযিক তো দূরের কথা, ভূগর্ভের যে খাযানা ও বরকত ছিল; আল্লাহ তা‘আলা তাও বন্ধ করে দিলেন। সেই নীল দরিয়া আজও বিদ্যমান, আর মিশরের ভূমিও অপরিবর্তিত; কিন্তু মিশরের বর্তমান কৃষিব্যবস্থার প্রতি একটু দৃষ্টি দিন এবং স্বীয় প্রভুর নিকট তাওবা আর ইস্তিগফার করুন এ মর্মে যে, নব আবিষ্কৃত টেকনোলোজির এ যুগেও রিযিকের কর্তৃত্ব মহামহিম আল্লাহর হাতেই সংরক্ষিত। বাকি কথা হলো, শয়তান আর তার অনুসারীরা যে অঙ্গীকার করে, তা মিথ্যা বৈ কিছু নয়।
উপমহাদেশের জনগণ কি এ বাস্তবতাকে স্বচক্ষে প্রত্যক্ষ করছে না? যে ভূমি ইসলামী শাসনাধীনে থাকাকালীন স্বর্ণ উদগিরন করত; আজ কী হলো যে, সে ভূমির কৃষকেরা তাকে আত্মহত্যা করতে বাধ্য করে দিয়েছে? বিশ্বের সবচেয়ে উৎকৃষ্ট ফসল উৎপাদনকারী ভূমি অন্যের কাছে ফসলের জন্য হাত প্রসারিত করছে? কখনো চিনির হাহাকার, কখনো গমের জন্য চিৎকার, কখনোবা চাউলের সংকট আর কখনো অন্য কিছুর?
ভারত উপমহাদেশে ধন-সম্পদ আর ফসলাদির এত প্রাচুর্য ছিল যে, ইউরোপিয়ান ডাকাতরা তা লুট করে নিয়ে গেছে; আর সেখানে ‘শিল্প বিপ্লব’ সাধিত হয়েছে। মুসলমানদের সম্পদ লুটপাট করে ইংরেজ চোরেরা বিশ্বের নেতৃত্ব দিচ্ছে!
পুরো মুসলিম বিশ্বের অবস্থা এমনই। অথচ, আল্লাহ তা‘আলা সব ধরনের মাধ্যম তাদেরকে এজন্যই দিয়েছেন যে, এগুলোকে ব্যবহার করে তারা বিশ্বকে নেতৃত্ব দেবে। যে দায়িত্ব আল্লাহ তা‘আলা তাদের উপর আরোপ করেছেন, সেটা পালন করবে। কাফেরদের দাসত্ব করার পরিবর্তে তাদেরকে দাস বানানোর মূলনীতি গ্রহণ করবে।
কিন্তু তারা যখন তাদের উপর আল্লাহর শরীয়তের পরিবর্তে জাতিসংঘের শরীয়তকে ঊর্ধ্বে উত্তোলন করেছে, তখন আল্লাহ তা‘আলা তাদের কাছে সবকিছু থাকা সত্ত্বেও তাদেরকে আন্তর্জাতিক সুদখোরদের দয়া-অনুগ্রহের সামনে ছেড়ে দিয়েছেন। এখনো কি এ বাস্তবতা উপলব্ধি করার সময় আসেনি যে, সৌদি আরবের মতো এক রাষ্ট্র কেন সংকীর্ণ জীবনযাপনের শিকার এবং কুফরী শক্তিগুলোর মাশুলদাতা হয়ে আছে?
যে উম্মাহর কাছে দুনিয়ার উৎকৃষ্ট সব উর্বর ভূমি বিদ্যমান, যাদের কাছে মূল্যবান সমুদ্রবন্দর মওজুদ, সুয়েজ খাল থেকে মধ্য এশিয়া পর্যন্ত সব ধরনের ভূগর্ভস্থ সম্পদ যাদের করতলগত। কিন্তু এসব কিছুর পরও কুফরীশক্তির সামনে পরাজিত এবং এতই নত যে, তারা বর্তমানে সুদি ঋণে স্বীয় জনগণকে এমনভাবে জড়িয়ে ফেলেছে, যার কারণে বংশের পর বংশ গোলামে পরিণত হয়েছে। এসব কিছু কেন?
খোদ পশ্চিমা বিশ্ব আল্লাহর শরীয়তের বিরুদ্ধে যুদ্ধে লিপ্ত হয়ে কেমন অবস্থানে আছে; যাদের শ্লোগান অন্যদের সচ্ছল বানাবে? আর এখন সব ধরনের আবর্জনা এবং জৈবিক উপকরণ ও ঢেকে রাখা ব্যাপারগুলো জিহাদী অপারেশনের সকল আবরণকে প্রকাশ করে দিয়েছে যে, এ মিথ্যা প্রবঞ্চনাগুলো কেমন সূক্ষ্ম ও প্রতারণাপূর্ণ ছিল?
এটা হলো, আল্লাহর শরীয়তের সাথে বিদ্রোহের শাস্তি। আর তাই, আল্লাহর ভূমিগুলো ক্রোধান্বিত হয়ে স্বীয় বরকত ও ধনগুলো আটকে রেখেছে। আধুনিক কৃষি প্রযুক্তি থাকা সত্ত্বেও কোনো শক্তি জমিন থেকে তার গুপ্তধন বের করিয়ে নিতে পারবে না, যতক্ষণ পর্যন্ত না সেই ভূমির উপর আল্লাহর নাযিলকৃত শরীয়ত পুনরায় বাস্তবায়িত হয়।
পবিত্র কুরআন বিভিন্ন জায়গায় সচ্ছল ও শক্তিশালী জাতিগোষ্ঠীর দৃষ্টান্ত পেশ করেছে, যারা আল্লাহর শরীয়তের সাথে শত্রুতা পোষণ করত; যাতে সাম্প্রতিককালের শত্রুরা এখনই শিক্ষাগ্রহণ করতে পারে এবং “হয়তো শরীয়ত নয়তো শাহাদাত” এর সম্মানিত স্লোগানকে গ্রহণ করে নেয়।
আল্লাহ তা‘আলা সাবা গোত্রের উন্নতি ও সচ্ছলতার উদাহরণ দিতে গিয়ে বলেন-
لَقَدْ كَانَ لِسَبَإٍ فِي مَسْكَنِهِمْ آيَةٌ جَنَّتَانِ عَن يَمِينٍ وَشِمَالٍ كُلُوا مِن رِّزْقِ رَبِّكُمْ وَاشْكُرُوا لَهُ بَلْدَةٌ طَيِّبَةٌ وَرَبٌّ غَفُورٌ ﴿سبإ: ١٥﴾
“সাবার অধিবাসীদের জন্যে তাদের বাসভূমিতে ছিল এক নিদর্শন-দুটি উদ্যান, একটি ডানদিকে, একটি বামদিকে। তোমরা তোমাদের পালনকর্তার রিযিক খাও এবং তাঁর প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ কর। স্বাস্থ্যকর শহর এবং ক্ষমাশীল পালনকর্তা।” (সূরা সাবা: ১৫)
فَأَعْرَضُوا فَأَرْسَلْنَا عَلَيْهِمْ سَيْلَ الْعَرِمِ وَبَدَّلْنَاهُم بِجَنَّتَيْهِمْ جَنَّتَيْنِ ذَوَاتَيْ أُكُلٍ خَمْطٍ وَأَثْلٍ وَشَيْءٍ مِّن سِدْرٍ قَلِيلٍ ﴿سبإ: ١٦﴾
“অতঃপর তারা অবাধ্যতা করল ফলে আমি তাদের উপর প্রেরণ করলাম প্রবল বন্যা! আর তাদের উদ্যানদ্বয়কে পরিবর্তন করে দিলাম এমন দুই উদ্যানে, যাতে উদগত হয় বিস্বাদ ফলমূল, ঝাউ গাছ এবং সামান্য কুলবৃক্ষ।” (সূরা সাবা: ১৬)
ذَٰلِكَ جَزَيْنَاهُم بِمَا كَفَرُوا وَهَلْ نُجَازِي إِلَّا الْكَفُورَ ﴿سبإ: ١٧﴾
“এটা ছিল কুফরের কারণে তাদের প্রতি আমার শাস্তি। আমি অকৃতজ্ঞ ব্যতীত কাউকে শাস্তি দেই না।” (সূরা সাবা: ১৭)
وَجَعَلْنَا بَيْنَهُمْ وَبَيْنَ الْقُرَى الَّتِي بَارَكْنَا فِيهَا قُرًى ظَاهِرَةً وَقَدَّرْنَا فِيهَا السَّيْرَ سِيرُوا فِيهَا لَيَالِيَ وَأَيَّامًا آمِنِينَ ﴿سبإ: ١٨﴾
“তাদের এবং যেসব জনপদের লোকদের প্রতি আমি অনুগ্রহ করেছিলম সেগুলোর মধ্যবর্তী স্থানে অনেক দৃশ্যমান জনপদ স্থাপন করেছিলাম এবং সেগুলোতে ভ্রমণ নির্ধারিত করেছিলাম। তোমরা এসব জনপদে রাত্রে ও দিনে নিরাপদে ভ্রমণ কর।” (সূরা সাবা: ১৮)
আল্লাহর নাযিলকৃত জীবনব্যবস্থা ছেড়ে মানুষ ক্ষতিগ্রস্থতা থেকে বাঁচতে পারে না। (যে এমন করবে, তাকে) সব ধরনের কল্যাণ থেকে বঞ্চিত করা হবে। যে নেয়ামত তার কাছে অর্জিত ছিল; তাও ছিনিয়ে নেওয়া হবে।
আল্লাহ তা‘আলা ইয়াহুদীদের বিদ্রোহ ও অবাধ্যতার কারণে কত নেয়ামত থেকে তাদেরকে বঞ্চিত করেছেন।
আল্লাহ তা‘আলা ইরশাদ করেছেন-
فَبِظُلْمٍ مِّنَ الَّذِينَ هَادُوا حَرَّمْنَا عَلَيْهِمْ طَيِّبَاتٍ أُحِلَّتْ لَهُمْ وَبِصَدِّهِمْ عَن سَبِيلِ اللَّهِ كَثِيرًا ﴿النساء: ١٦٠﴾
“বস্তুতঃ ইহুদীদের জন্য আমি হারাম করে দিয়েছি বহু পূত-পবিত্র বস্তু যা তাদের জন্য হালাল ছিল-তাদের পাপের কারণে এবং আল্লাহর পথে অধিক পরিমাণে বাধা দানের দরুন।” (সূরা নিসা: ১৬০)
সূরা আনআমে আল্লাহ তা‘আলা এ ব্যাপারে আরও বিস্তারিতভাবে আলোচনা করেছেন-
وَعَلَى الَّذِينَ هَادُوا حَرَّمْنَا كُلَّ ذِي ظُفُرٍ وَمِنَ الْبَقَرِ وَالْغَنَمِ حَرَّمْنَا عَلَيْهِمْ شُحُومَهُمَا إِلَّا مَا حَمَلَتْ ظُهُورُهُمَا أَوِ الْحَوَايَا أَوْ مَا اخْتَلَطَ بِعَظْمٍ ذَٰلِكَ جَزَيْنَاهُم بِبَغْيِهِمْ وَإِنَّا لَصَادِقُونَ ﴿الأنعام: ١٤٦﴾
“ইহুদীদের জন্যে আমি প্রত্যেক নখবিশিষ্ট জন্তু হারাম করেছিলাম এবং ছাগল ও গরু থেকে এতদুভয়ের চর্বি আমি তাদের জন্যে হারাম করেছিলাম, কিন্তু ঐ চর্বি, যা পৃষ্টে কিংবা অন্ত্রে সংযুক্ত থাকে অথবা অস্থির সাথে মিলিত থাকে। তাদের অবাধ্যতার কারণে আমি তাদেরকে এ শাস্তি দিয়েছিলাম। আর আমি অবশ্যই সত্যবাদী।” (সূরা আন‘আম: ১৪৬)
পাশ্চাত্যের অজ্ঞতাপূর্ণ অন্ধকারাচ্ছন্ন সংস্কৃতিকে জীবনব্যবস্থা হিসেবে গ্রহণকারীদের জন্য এ আয়াতগুলোতে অনেক বড় শিক্ষা রয়েছে। কেননা, আল্লাহ তা‘আলা আজ তাদেরকে প্রাকৃতিক অনেক নেয়ামত থেকে বঞ্চিত করেছেন। ইউরোপ আমেরিকার জীবন চরিত্রের দিকে যদি লক্ষ্য করা যায়; তাহলে বুঝা যাবে যে, তাদের ঔদ্ধত্য এবং আল্লাহর শরীয়তের সাথে যুদ্ধংদেহী মনোভাবের কারণে সব ধরনের নেয়ামত থেকে তাদেরকে বঞ্চিত করা হয়েছে। টাটকা ফল-ফুল, খাঁটি দুধ, ঘি, মাখন এবং আরও অসংখ্য নেয়ামত থেকে আধুনিক অজ্ঞ সোসাইটি বঞ্চিত। এমনকি নিরেট গম আর খাঁটি পানীয় থেকেও। এভাবে যে, তারা আল্লাহ প্রদত্ত খাঁটি পানীয় পান করার পরিবর্তে বোতলে আবদ্ধ দুর্গন্ধযুক্ত পানীয় পান করে। খাঁটি গম ছেড়ে তারা ময়দা খায়, যেটা পাকস্থলীর উপযুক্ত খাদ্য নয়; বরং উল্টো পাকস্থলীকে খেয়ে ফেলে।
মোটকথা, যে যত বেশি এ সংস্কৃতি ও সভ্যতায় ডুব দিয়েছে, সে ততই আল্লাহর নেয়ামত থেকে বঞ্চিত হয়েছে।
দৃষ্টান্তস্বরূপ উল্লিখিত আয়াতগুলোতে ইয়াহুদীদেরকে যেসব খাদ্য থেকে নিষেধ করা হয়েছে, সবগুলোই উৎকৃষ্ট, উন্নত, সুস্বাদু এবং স্বাস্থ্যের জন্য খুবই উপকারী ছিল।
সব ধরনের প্যানোরামা পাখি, একটু চিন্তা করুন। তিতির পাখি, ব্যাটর, কবুতর, কাজিন, মোরগ, ময়ূর, হরিণ, নীলাভ গাভি ইত্যাদি। এগুলো থেকে নিষেধ করে তাদেরকে উট, উটপাখি এবং গৃহপালিত হাঁস খাওয়ার অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। আপনারা চিকিৎসা বিজ্ঞানের বইগুলোতে স্বতন্ত্রভাবে খাদ্য থেকে সৃষ্ট অভ্যাসগুলোর ব্যাপারে জেনে নিতে পারেন।
গাভি এবং বকরির গোশত তাদের জন্য হারাম করা হয়েছে। আর যে গোশত ও চর্বিকে তাদের জন্য বৈধ করা হয়েছে, তা প্রাণীজগতে উৎকৃষ্ট কোনো খাদ্য হিসেবে গণ্য করা হয় না। যেমন, নাভির সাথে সম্পৃক্ত চর্বি গলায় গিয়ে আটকে থাকে। এজন্য এর চর্বিগুলোকে পুষ্টিকর ও স্বাস্থ্যসম্মত মনে করা হয় না।