Announcement

Collapse
No announcement yet.

পাঠচক্র- ৩২ || “ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে একবিংশ শতাব্দীর গণতন্ত্র (সূরা আসরের আলোকে) ” ।। মাওলানা আসেম উমর হাফিজাহুল্লাহ || ৩০তম পর্ব

Collapse
This is a sticky topic.
X
X
 
  • Filter
  • Time
  • Show
Clear All
new posts

  • পাঠচক্র- ৩২ || “ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে একবিংশ শতাব্দীর গণতন্ত্র (সূরা আসরের আলোকে) ” ।। মাওলানা আসেম উমর হাফিজাহুল্লাহ || ৩০তম পর্ব

    আন নাসর মিডিয়া পরিবেশিত

    ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে
    একবিংশ শতাব্দীর গণতন্ত্র’’

    (সূরা আসরের আলোকে)

    ।।মাওলানা আসেম উমর হাফিজাহুল্লাহ ||
    এর থেকে৩০তম পর্ব


    মানবতাকে বিপর্যয় থেকে মুক্তি দেওয়া কার দায়িত্ব?


    মানবতাকে এ বিশাল ট্র্যাজেডি ও বিপর্যয় থেকে সেই মুক্তি দিতে পারে, যে ঐ দাওয়াতের পতাকাবাহী, যে দাওয়াত রাহমাতুল্লিল আলামীন নিয়ে এসেছেন। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের পর যাঁরা এ দাওয়াতের আমানতদার।

    সূরায়ে আসরের এ আয়াত إِنَّ ٱلْإِنسَـانَ لَفِى خُسْرٍ ঈমানদারদেরকে দীপ্ত স্বরে স্মরণ করিয়ে দিচ্ছে, হে ঐ জাতি! যাদেরকে এক মহান ব্রত দিয়ে দুনিয়াতে প্রেরণ করা হয়েছে। যাদেরকে কর্তৃত্ব ও নেতৃত্বের আসনে অধিষ্ঠিত করা হয়েছে। যাদেরকে দুনিয়ার অসত্যের অন্ধকার জীবনব্যবস্থা থেকে বের করে মুহাম্মাদ এর আনীত আলোকিত ব্যবস্থার মধ্যে অন্তর্ভুক্ত করানোর দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। যাদের এজন্যই শ্রেষ্ঠ উম্মাহ বানানো হয়েছে যে, তারা মানবজাতিকে শিরক, মূর্তিপূজা এবং বিভিন্ন উপাসকদের ইবাদত থেকে বের করে শরীকবিহীন এক আল্লাহর ইবাদতে প্রবেশ করাবে। তাদেরকে দুনিয়া ও আখিরাতের ক্ষতিগ্রস্থতা থেকে ‘ফাওযে মুবিন’ তথা স্পষ্ট ও প্রকাশ্য সফলতার রাস্তায় নিয়ে আসবে। যদিও তাদের মুক্তির জন্য তোমাদের প্রাণ বিসর্জন দিতে হয়, নিজেদের জিন্দেগীকে যুদ্ধের ভয়াবহ ময়দানে নিক্ষেপ করতে হয়, রৌদ্রের খরতাপে চমকিত তলোয়ারের ছায়াতলে থাকতে হয়, নিজেদের স্ত্রীদেরকে ‘বিধবা’ আর সন্তানের কপালে ‘ইয়াতিম’ নামের অপ্রিয় স্পট বসানো হয়, তারপরও তোমরা তাদের জন্য কিতাল করবে। মানবজাতির হিদায়াত, কামিয়াবী ও সফলতার জন্য তোমাদের অন্তরগুলোতে এমন জযবা ও ছটফটানি থাকবে যে, তোমরা এর জন্য জান কুরবান করতেও কোনো কুণ্ঠাবোধ করবে না। আর তখনই হতে পারো তুমি শ্রেষ্ঠ উম্মাহর অন্তর্ভুক্ত। যখন নিজের সত্তা, স্থিরতা এবং অস্তিত্ব অন্যদের কল্যাণ ও সফলতার জন্য কুরবানকারী হয়ে যাবে, তখন তুমি হবে خير الناس للناس তথা মানুষের মাঝে শ্রেষ্ঠ সে ব্যক্তি যে মানুষের উপকার করে, এর বাস্তব প্রতিচ্ছবি। এমনকি তুমি তাদেরকে শিকল পরিয়ে পর্যন্ত নিয়ে আসবে, আর তা-ই তার জন্য চির সফলতার সোপান হয়ে দাঁড়াবে।

    আয়াতের এ অংশ উপমহাদেশের দাঈদের আহবান করছে যে, হে মূর্তির আবাসস্থলে তাওহীদের চিরন্তন শিখাকে প্রজ্বলিতকারীগণ! এ আধুনিক যুগেও তোমাদের সাথে এমন একজাতি বসবাস করছে, যারা আজও পাথরের পূজায় মত্ত। স্বহস্তে তৈরি করার পর বাজারে বিক্রিত পাথরের মূর্তিকে ক্রয় করে নিজেদের মা’বূদ হিসেবে গ্রহণ করছে। তাদেরকে মূর্তি পূজার অন্ধকার থেকে বের করে তাওহীদের আলোকোজ্জ্বল পথে নিয়ে আসার দায়িত্ব কাদের? তাদেরকে জাহান্নাম থেকে মুক্তি এবং হিদায়াতের পথে নিয়ে আসার জন্য তোমাদেরকেই ফিকির করতে হবেদাওয়াতের পথে প্রতিবন্ধক আইম্মাতুল কুফরকে হটানো তোমাদেরই দায়িত্ব; যাতে অন্য লোকদের জন্য হিদায়াতের রাস্তা খুলে যায়, এবং তাদের (আইম্মাতুল কুফর) বিরুদ্ধে তোমাদের জিহাদ তাদের জন্য রহমতের কারণ হয়।

    আপনারা কি দেখেন না যে, মুষ্টিমেয় ব্রাহ্মণরা কোটি কোটি আল্লাহর বান্দাকে আল্লাহর ইবাদত থেকে ফিরিয়ে মূর্তির উপাসনায় লিপ্ত রেখেছে?

    ঈমানদারদেরকে জাগ্রত করার জন্য এবং তাদের ফরয ও অবশ্যপালনীয় কর্তব্যকে স্মরণ করিয়ে দেওয়ার জন্য কি এ আয়াত যথেষ্ট নয়? উম্মাহর চিন্তাবিদশ্রেণী সাম্প্রতিককালে মনুষ্যত্বের করুণ অবস্থা সম্পর্কে অবগত নন কি?

    প্রথম দিকে এ অবস্থা ইউরোপে সীমাবদ্ধ ছিল। আর বর্তমানে তো খোদাদ্রোহিতার এ অভিশপ্ত প্লাবন নিজেদের ঘরের কোনায় কোনায় পৌঁছে গিয়েছে। এখনো কি আমরা গাফলতির অঘোর ঘুমে দুঃস্বপ্ন দেখতে থাকব? আরাম-আয়েশের অনুসন্ধানে, স্বীয় সত্তাকে বাঁচানোর জন্য ইসলামের চিরশান্তির গণ্ডি থেকে ফিরে গিয়ে কুফর ও শিরকে পরিপূর্ণ নোংরা মতবাদকে গ্রহণ করে নেব?

    পবিত্র কুরআনের ছোট সূরার ছোট আয়াতকে একটু অন্তরের কান লাগিয়ে শুনুন! মানবতার ব্যথায় ব্যথিতদেরকে আমলের এ দাওয়াত দিচ্ছে-


    ﴿ وَالْعَصْرِ - إِنَّ الْإِنْسَانَ لَفِي خُسْرٍ

    সময়ের শপথ! এ আধুনিক যুগেও মানুষের ধ্বংসের ধারাবাহিকতা অব্যাহত রয়েছে।... ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে দাঁড়িয়ে আছে; বরং ক্রমান্বয়ে একটির পর অপর একটি দল ধ্বংসে পতিত হচ্ছে। তোমাদের তো তাদেরকে ধ্বংসের হাত থেকে রক্ষা করার জন্যই পাঠানো হয়েছিল।

    হে মাসজিদ আবাদকারীগণ! শুনে রাখুন!(إِنَّ الْإِنْسَانَ لَفِي خُسْرٍ) তথা এ আধুনিক যুগেও মানুষের ধ্বংসের ধারাবাহিকতা অব্যাহত রয়েছে।

    হে মিম্বার ও মিহরাবের উত্তরাধিকারীগণ! চার দেয়ালের বাহিরে নজর বুলিয়ে দেখুন! (إِنَّ ٱلْإِنسَـٰنَ لَفِى خُسْرٍ) তথা এ আধুনিক যুগেও মানুষের ধ্বংসের ধারাবাহিকতা অব্যাহত রয়েছে। আপনাদেরকে তো নবীদের আ. উত্তরাধিকারী হিসেবে পাঠানো হয়েছিল। ঐ দ্বীনের পতাকাবাহী বানানো হয়েছিল, যেটি মানবজাতির জন্য একমাত্র মনোনীত জীবনব্যবস্থা। ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে উপনীত এ লোকদের সঠিক পথে ফিরিয়ে আনার দায়িত্ব আপনাদের কাঁধে অর্পিত হয়েছে।

    মহান আল্লাহ তা‘আলা ইরশাদ করেছেন-

    كُنتُمْ خَيْرَ أُمَّةٍ أُخْرِجَتْ لِلنَّاسِ تَأْمُرُونَ بِالْمَعْرُوفِ وَتَنْهَوْنَ عَنِ الْمُنكَرِ وَتُؤْمِنُونَ بِاللَّهِ ﴿آل‌عمران: ١١٠﴾

    “তোমরাই হলে সর্বোত্তম উম্মত, মানবজাতির কল্যানের জন্যেই তোমাদের উদ্ভব ঘটানো হয়েছে। তোমরা সৎকাজের নির্দেশ দান করবে ও অন্যায় কাজে বাধা দেবে এবং আল্লাহর প্রতি ঈমান আনবে।” (সূরা আলে-ইমরান: ১১০)

    ইমাম বুখারী রহ. এ আয়াতের ব্যাখ্যায় বলেন-

    عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ { كُنْتُمْ خَيْرَ أُمَّةٍ أُخْرِجَتْ لِلنَّاسِ } قَالَ خَيْرَ النَّاسِ لِلنَّاسِ تَأْتُونَ بِهِمْ فِي السَّلَاسِلِ فِي أَعْنَاقِهِمْ حَتَّى يَدْخُلُوا فِي الْإِسْلَامِ.

    হযরত আবূ হুরাইরাহ রাযি. বর্ণনা করেন, (তোমরাই হলে সর্বোত্তম উম্মত। মানবজাতির কল্যাণের জন্যই তোমাদের উদ্ভব ঘটানো হয়েছে।) এর ব্যাখ্যায় রাসূল বলেন, “তোমরা মানুষের মধ্যে সর্বোত্তম। তোমরা তাদের গর্দানে শিকল পরিয়ে নিয়ে আস, (তাদেরকে তোমাদের মাঝে বন্দী অবস্থায় রেখে দাও) যতক্ষণ না তারা ইসলামে প্রবেশ করে।”(সহীহ বুখারী, হাদীস নং-৪২৮১,শামেলা)

    আল্লামা আলূসী রহ. এ আয়াতের ব্যাখ্যায় লিখেছেন-

    عن ابن عبّاس في الآية: أن المعني تأمرونهم أن يشهدوا أن لا اله الا الله ويقرّوا بما أنزل الله تعالي وتقاتلونهم عليهم ولا اله الا الله هو أعظم المعروف وتنهونهم عن المنكر والمنكر هو التكذيب وهو أنكر المنكر

    হযরত ইবনে আব্বাস রাযি. এ আয়াতের তাফসীর করতে গিয়ে বলেন, ‘তোমরা মানুষদের এ আদেশ দাও যে, তারা যেন লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’র সাক্ষ্য প্রদান করে এবং যা কিছু আল্লাহ তা‘আলা তাঁর হাবীব এর উপর অবতীর্ণ করেছেন, তার স্বীকৃতি প্রদান করে। তোমরা এর জন্যই তাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধে লিপ্ত হও। আর সবচেয়ে বড় মারূফ তথা মঙ্গলজনক ও কল্যাণকর বস্তু হলো: লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ। তোমরা তাদেরকে মুনকার তথা অসৎ ও অকল্যাণকর বস্তু থেকে বারণ করো। আর সবচেয়ে বড় মুনকার হলো আল্লাহকে অস্বীকার করা।’


    অর্থাৎ তোমরা সৎকাজের আদেশ ও অসৎকাজে বাধা প্রদানের ভিত্তি ও সূত্রের উপরই কুফফারদের বিরুদ্ধে লড়াই কর। এখানে আমর বিল মা’রূফের সবচেয়ে উঁচুস্তর অর্থাৎ ইসলামের দিকে দাওয়াত এবং যে শরীয়ত মুহাম্মাদ এর উপর নাযিল করা হয়েছে, তার স্বীকৃতি আদায় করানো। নাহি আনিল মুনকার অর্থাৎ নিকৃষ্ট মানের মুনকার কুফর থেকে তোমরা বাধা দাও। ইমাম আবূল লাইস সমরকন্দী রহ. এমনই তাফসীর করেছেন।

    অতঃপর তোমরা তাদের উপর বিজয় লাভ কর এবং তাদেরকে যুদ্ধবন্দী করে নিয়ে আস। আর এ বন্দিত্বই তাদের জন্য রহমত হয়ে যায় এবং তোমাদের সাথে থেকে খুব কাছ থেকে ইসলামের সৌন্দর্য্য অবলোকন করে। ফলস্বরূপ, তারা স্বেচ্ছাপ্রণোদিত হয়ে ইসলাম গ্রহণ করে নেয়। দুনিয়া ও আখিরাত উভয় জাহানের কামিয়াবী তাদের অর্জিত হয়।

    সুতরাং আমর বিল মা’রূফ ও নাহি আনিল মুনকারের সর্বোচ্চ চূড়া অর্থাৎ জিহাদ ফী সাবীলিল্লাহ’র কারণেই এ উম্মাহ শ্রেষ্ঠত্বের আসনে অধিষ্ঠিত হয়েছে। এটিই মানবজাতির সৌভাগ্য ও সফলতার প্রতীক। প্রাণীজগৎ, জীবজগৎ ও উদ্ভিদজগৎ এমনকি পুরো মহাবিশ্ব সুশৃঙ্খলভাবে টিকে থাকার একমাত্র মাধ্যম। এটা (الأرض) তথা মহাবিশ্বকে ফাসাদ থেকে পবিত্র করে তার মূল প্রকৃতিতে প্রতিষ্ঠিত রাখার উপায়।

    মহাগ্রন্থ আল-কুরআন কথাটি এভাবে বলেছে-

    وَلَوْلَا دَفْعُ اللَّهِ النَّاسَ بَعْضَهُم بِبَعْضٍ لَّفَسَدَتِ الْأَرْضُ وَلَٰكِنَّ اللَّهَ ذُو فَضْلٍ عَلَى الْعَالَمِينَ ﴿البقرة: ٢٥١﴾

    “আল্লাহ যদি একজনকে অপরজনের দ্বারা প্রতিহত না করতেন, তাহলে গোটা দুনিয়া বিধ্বস্ত হয়ে যেতো। কিন্তু বিশ্ববাসীর প্রতি আল্লাহ একান্তই দয়ালু, করুণাময়।” (সূরা বাকারাহ: ২৫১)

    অতএব, আল্লাহ তা‘আলা পুরো বিশ্বের উপর এভাবে দয়া ও করুণা প্রদর্শন করেছেন যে, বিশ্বের জন্য রহমতস্বরূপ প্রেরিত রাসূল কে কিতাল ও জিহাদের বিধান দিয়েছেন; যাতে সেসব পরাশক্তিকে প্রতিহত করা যায়; যে শক্তিগুলো রহমতের এ জীবনব্যবস্থাকে বাস্তবায়নে প্রতিবন্ধক হয়ে দাঁড়ায়। যেন তাদেরকে ধূলিসাৎ করে পরিপূর্ণরূপে আল্লাহর নেযাম ও জীবনব্যবস্থা বাস্তবায়ন করা যায়।

    আল্লাহ তা‘আলা ইরশাদ করেছেন-

    وَقَاتِلُوهُمْ حَتَّىٰ لَا تَكُونَ فِتْنَةٌ وَيَكُونَ الدِّينُ كُلُّهُ لِلَّهِ فَإِنِ انتَهَوْا فَإِنَّ اللَّهَ بِمَا يَعْمَلُونَ بَصِيرٌ ﴿الأنفال: ٣٩﴾

    “আর তাদের সাথে যুদ্ধ করতে থাক যতক্ষণ না ভ্রান্তি শেষ হয়ে যায়; এবং আল্লাহর সমস্ত হুকুম প্রতিষ্ঠিত হয়ে যায়। তারপর যদি তারা বিরত হয়ে যায়, তবে আল্লাহ তাদের কার্যকলাপ লক্ষ্য করেন।” (সূরা আনফাল: ৩৯)

    কেননা, আল্লাহ তা‘আলা কর্তৃক নাযিলকৃত শরীয়ত পবিত্র এবং অনৈসলামী সকল ব্যবস্থা অপবিত্র। অতএব, পবিত্র ও অপবিত্র এক জায়গায় একত্রিত হতে পারে না। এজন্য ইসলাম ব্যতীত অন্য সব ব্যবস্থা উৎখাতের নির্দেশ প্রদান করা হয়েছে।





    আরও পড়ুন
Working...
X