Announcement

Collapse
No announcement yet.

পাঠচক্র- ৩২ || “ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে একবিংশ শতাব্দীর গণতন্ত্র (সূরা আসরের আলোকে) ” ।। মাওলানা আসেম উমর হাফিজাহুল্লাহ || শেষ পর্ব

Collapse
This is a sticky topic.
X
X
 
  • Filter
  • Time
  • Show
Clear All
new posts

  • পাঠচক্র- ৩২ || “ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে একবিংশ শতাব্দীর গণতন্ত্র (সূরা আসরের আলোকে) ” ।। মাওলানা আসেম উমর হাফিজাহুল্লাহ || শেষ পর্ব

    আন নাসর মিডিয়া পরিবেশিত

    ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে
    একবিংশ শতাব্দীর গণতন্ত্র’’

    (সূরা আসরের আলোকে)

    ।।মাওলানা আসেম উমর হাফিজাহুল্লাহ ||
    এর থেকেশেষ পর্ব



    বিশেষ জ্ঞাতব্য:


    জিহাদের মাধ্যমে ইসলাম প্রথমত এটা চায় যে, কাফেররা যেন কালিমা পড়ে পরিপূর্ণ ইসলামে প্রবেশ করে এবং মুহাম্মাদ কর্তৃক আনীত জীবনব্যবস্থাকে দ্বীন হিসেবে গ্রহণ করে নেয়। কিন্তু যদি তারা এ কালিমা পড়তে রাজি না হয়; তবে যেন জিযিয়া বা ট্যাক্স দেওয়ার অঙ্গীকার করে। তাহলে তাকে কালিমা পড়ার উপর বাধ্য করা হবে না; বরং তার থেকে ট্যাক্স গ্রহণ করা হবে (যদি সে কালো তালিকাভুক্ত না হয় অর্থাৎ যাদের থেকে ট্যাক্স নেওয়া জায়েয, শুধুমাত্র তারাই এর আওতাভুক্ত)। জিযিয়া দেওয়ার উদ্দেশ্য হলো, এরা তাদের পুরাতন ধর্মে বহাল থাকবে; কিন্তু তার রাষ্ট্রে মুহাম্মাদ এর শরীয়ত বাস্তবায়িত থাকবে এবং এরা জিযিয়া দিতে থাকবে। আর এর প্রতিদানস্বরূপ ইসলামী রাষ্ট্র তাদের জান-মালের সংরক্ষণ করবে। কিন্তু তারা যদি জিযিয়া দিতেও প্রস্তুত না হয়, তখন তাদের সাথে যুদ্ধ করা হবে। যতক্ষণ না তারা পূর্বোক্ত দু’টির কোনো একটি বেছে নেয়।

    এখানে চিন্তার বিষয় হলো, আল্লাহ তা‘আলা কাফেরদেরকে তাদের কুফরের উপর বহাল থাকার অনুমতি প্রদান করেছেন। (যদিও মূলত, এটি কুফরের উপর বহাল থাকার অনুমতি নয়; বরং আল্লাহ তা‘আলা ভালো করেই জানেন যে, ইসলামী জীবনব্যবস্থাকে নিকট থেকে প্রত্যক্ষ করার পর এরা মুসলিম হয়ে যাবে। আসলে তাদেরকে ইসলামের দিকে নিয়ে আসার জন্য এটি একটি দূরদর্শী পরিকল্পনা।) যেহেতু তারা জিযিয়া দিয়ে নিজেদের রাষ্ট্রে শরীয়ত প্রতিষ্ঠা করার জন্য প্রস্তুত হয়, এটাই প্রমাণ করে যে, তারা তাদের দেশগুলোতে শরীয়ত বাস্তবায়নের মোটেই বিরোধিতা করছে না।

    এ আলোচনা দ্বারা বুঝা গেল যে, ইসলাম চায় কাফেরদের উপরও মুহাম্মাদ এর শরীয়ত আইন হিসেবে নেতৃত্ব ও সর্দারি করবে। কেননা, ইসলাম বিজয়ী ও সর্বোচ্চে থাকার জন্যই এসেছে। ইসলামকে বিজয়ী করার মাধ্যমেই মুনকার তথা অসত্যকে প্রত্যেক স্তর থেকে বাধা দেওয়া যাবেব্যক্তিগতভাবে আলোচনা ও ওয়াজ-নসীহতের মাধ্যমে এবং যে তা না মানবে, তাকে শরীয়তের ক্ষমতা বলে বাধা প্রদান করা হবে। ঐসব ছিদ্রগুলো বন্ধ করে দেওয়া হবে, যেখান থেকে গর্হিত কার্যাদি প্রকাশ পায়। অতঃপর, সমাজ সংস্কার ও পরিশোধনের জন্য ওয়াজ-নসীহত, দাওয়াত ও তাবলীগ এবং দারস-তাদরীসের আশ্রয় নেওয়া হবে। তখন মানুষ তার আসল স্বভাবের দিকে ফিরতে শুরু করবে এবং তার স্বভাব ফাসাদ থেকে পবিত্র হয়ে আল্লাহর রঙে রঙিন হতে শুরু করবে।

    এ কারণেই মহান আল্লাহ তা‘আলা গর্হিত কর্মসমূহের মূলোৎপাটনে শক্তি প্রয়োগের অনুমতি প্রদান করেছেন। নাপাকি ও নোংরামিতে পূর্ণ পৃথিবীকে পবিত্র ও পরিষ্কার করার জন্য জিহাদকে ফরয করেছেন; যাতে এর মাধ্যমে কুফরের কর্তৃত্ব নস্যাৎ করে ইসলামের কর্তৃত্ব সুপ্রতিষ্ঠিত করা হয়। কেননা, মানবসমাজকে অসৎ ও মন্দ কাজ থেকে রক্ষা করার জন্য জরুরি হলো, ঐসব মাধ্যমকে উৎখাত করা; যা এসব মন্দ কাজগুলো প্রসারিত হওয়ার জন্য দায়ী। ঐ ব্যবস্থা ও অবস্থার পরিবর্তন ঘটানো, যেটা স্বয়ং এ মন্দ কাজগুলোর উৎসগিরি। যার প্রতি প্রান্তে অশ্লীলতা ও মন্দের দিকে এমনভাবে আহবান করা হয় যে, একজন ভালো ও সৎ লোককেও সেদিকে প্রবল আকর্ষণে টেনে নিয়ে যায়। এ বাস্তবতা উপলব্ধি করা কোনো বুদ্ধিমানের জন্য মোটেও কঠিন নয় যে, যদি কোনো পরিবেশে কোনো গর্হিত কাজ ব্যাপকতা লাভ করে যেমন, আমাদের এ যুগে সুদ ব্যাপকভাবে চলমান মন্দ কাজ। যেটা রাষ্ট্রযন্ত্র কর্তৃক মুসলমানদের জন্য বাধ্যতামূলক করা হয়েছে, তারা যে কোনোভাবে সুদ আদায় করে ছাড়বে। সুতরাং এমন পরিবেশে কোনো ব্যক্তি অনিচ্ছা সত্ত্বেও নিজেকে কীভাবে এর ভয়াল থাবা থেকে বাঁচাতে পারে? অনুরূপভাবে গানবাদ্য ও মিউজিকের একই অবস্থা।

    সমাজে বিদ্যমান প্রতিষ্ঠিত এ পরিবেশ পুরো সমাজব্যবস্থাকে তাড়াতাড়ি হোক অথবা দেরীতে স্বীয় রঙে রঙিন করে ফেলবে। যদি সব জায়গায় মৌখিক দাওয়াত ও তাবলীগের মাধ্যমে সংশোধন করা সম্ভব হতো; তাহলে আল্লাহ তা‘আলা তার মনোনীত আম্বিয়া আ. -গণকে পাপাচারে পূর্ণ পরিবেশ থেকে হিজরত ও জিহাদের নির্দেশ প্রদান করতেন না

    আল্লাহ তা‘আলা কর্তৃক প্রেরিত শরীয়ত বাস্তবায়নের গুরুত্ব এ আয়াত থেকে বুঝা যায়, যেখানে আল্লাহ তা‘আলা স্বীয় হাবীব কে দ্বীন দিয়ে পাঠানোর উদ্দেশ্য সম্পর্কে বলেছেন-

    هُوَ الَّذِي أَرْسَلَ رَسُولَهُ بِالْهُدَىٰ وَدِينِ الْحَقِّ لِيُظْهِرَهُ عَلَى الدِّينِ كُلِّهِ وَلَوْ كَرِهَ الْمُشْرِكُونَ ﴿التوبة: ٣٣﴾

    “তিনিই প্রেরণ করেছেন আপন রসূলকে হেদায়েত ও সত্য দ্বীন সহকারে, যেন এ দ্বীনকে অপরাপর দ্বীনের উপর জয়যুক্ত করেন, যদিও মুশরিকরা তা অপ্রীতিকর মনে করে।” (সূরা তাওবা: ৩৩)

    পূর্বেই উল্লেখ করা হয়েছে যে, ইসলাম আসলী কাফের তথা পূর্ব থেকে অবিশ্বাসী লোককে ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করতে বাধ্য করে না; কিন্তু তার উপর শরীয়তের বিধান মানা আবশ্যক করে। ‘মালাউল কওম’ তথা ঐ সকল প্রভাব বিস্তারকারী শ্রেণীর গর্দান উড়িয়ে দেওয়ার নির্দেশ প্রদান করে, যারা মানবসমাজে সীমালঙ্ঘন ও অত্যাচার, অশ্লীলতা ও বেলেল্লাপনা, বদদ্বীনি ও অনৈতিকতার পরিবেশ টিকিয়ে রাখতে চায়।

    শরীয়ত বাস্তবায়ন করার জন্য এ যুদ্ধের নির্দেশ তো ঐ সকল কাফেরদের বেলায়, যারা এখনো ইসলামও গ্রহণ করেনি। সুতরাং ঐ সকল শাসকদের ব্যাপারে শরীয়তের বিধান কী হতে পারে আপনি চিন্তা করুন, যারা নিজেদেরকে মুসলমান হিসেবে পেশ করে, মুখে কালিমা পাঠ করে; কিন্তু মহান আল্লাহর নাযিলকৃত শরীয়তের প্রকাশ্য শত্রু। তা বাস্তবায়নের প্রচেষ্টাকে শক্তি প্রয়োগ করে প্রতিহত করে; বরং তা তালাশকারীদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করে। এতটুকুতেই ক্ষান্ত নয়, এ যুদ্ধকে বরং বৈধ মনে করে, সেটাকে তারা জিহাদ মনে করে। মুসলমানদের বিরুদ্ধে হত্যাযজ্ঞ চালানো, তাদের ভিটেমাটিকে ধ্বংস করার জন্য কাফেরদের সহায়তা করা, তাদেরকে নিজেদের ভূমি, সৈন্যবাহিনী ও নিজেদের সামরিক বন্দরসমূহ প্রদান করা, তাদের পার্লামেন্টের নিয়মানুযায়ী বৈধ সাব্যস্ত করা হয়েছে।

    যাদের রাষ্ট্রব্যবস্থা কুফরের সূতিকাগার। যেখানে আল্লাহর সাথে একটি কুফর করা হয় না; বরং অসংখ্য অগণিত কুফর করা হয়। যাদের আদালতের মূল চালিকাশক্তি সেই কুরআন নয়, যাকে দিয়ে মুহাম্মাদ কে পাঠানো হয়েছে; বরং, সেটি যাকে গণতন্ত্রের মূর্তিগুলো গ্রহণ করে নেয়। যাদের সমাজব্যবস্থা ও অর্থনৈতিক ব্যবস্থার রূহ ও স্তম্ভ অভিশপ্ত সুদের উপর প্রতিষ্ঠিত, যাকে তাদের সংসদীয় কমিটি হালাল তথা বৈধ সাব্যস্ত করেছে। আর এ পার্লামেন্টই মুহাম্মাদ এর আনীত শরীয়ত বাস্তবায়নের পথে বড় প্রতিবন্ধক।

    আধুনিক এ যুগ কামনা করে যে, মানবসমাজকে যেন কুফর ও শিরকের অন্ধকার থেকে বের করে ইসলামের আলোয় জোত্যির্ময় করে দেওয়া হয়। অজ্ঞতা ও অরাজকতার ব্যবস্থাপনার মূলোৎপাটন ঘটিয়ে মহান আল্লাহর নাযিলকৃত ব্যবস্থা বাস্তবায়ন করা হয়। বিশ্বের কর্তৃত্ব শয়তানের গোষ্ঠী থেকে ছিনিয়ে নিয়ে আল্লাহর কিতাবধারীদের হাতে সোপর্দ করা হয়এ অত্যাচারী সুদি ব্যবস্থা এবং দ্বীন ও দেশের এসব বিশ্বাসঘাতক থেকে কেবল মুসলমান নয়; বরং কাফেরদেরকেও যেন বড় ধরনের বিপর্যয় থেকে মুক্তি দিয়ে চিরশান্তির নীড়ে নিয়ে যাওয়া হয়এটা প্রত্যেক মুসলমানের কাছে কুরআনের কামনা, সময়ের দাবি এবং এ দ্বীনের চাহিদা।

    আল্লাহর মহত্ব ও বড়ত্ব অন্তরে লালন করে, সৎকর্ম দিয়ে নিজের ভূমিকা ঢেলে সাজিয়ে, কুরআনের প্রত্যেক আয়াতের পরিপূর্ণ দাওয়াত নিয়ে জেগে ওঠা; অতঃপর, এরই প্রচার-প্রসার করা ও অটল থাকার জন্য বিশ্ব পুনরায় আপনার জন্য অপেক্ষমানমানবতা আজ এমন কোনো নাবিকের পথপানে চেয়ে আছে।


    سبق پھر پڑھ صداقت کا، امانت کا، دیانت کا

    لیا جائے گا تجھ سے کام دنیا کی امامت کا

    “সত্যবাদিতা, আমনতদারিতা ও নেতৃত্বের অনুশীলন কর পুনরায়

    নেওয়া হবে তোমার থেকে বিশ্ব নেতৃত্বের মহান কাজ।

    পৃথিবীর সকল ব্যবস্থা ব্যর্থ হয়েছে। সকল রাষ্ট্রব্যবস্থা ও জীবনব্যবস্থার উপর আচ্ছাদিত প্রতারণার আবরণ ছিটকে পড়েছে। এগুলো কৃত্রিম ষড়যন্ত্র এবং ধূর্ততা ও প্রতারণা ব্যতীত কিছু নয়।

    অতএব, তাওহীদি উম্মাহর পক্ষেই সম্ভব, বাতিল ও অসত্যের ভয়াল থাবায় বিপর্যস্ত মনুষ্যত্বের নিমজ্জমান এ নৌকাকে উদ্ধার করা। জুলুম ও নৈরাজ্যের এ সুদি ব্যবস্থার আগ্রাসনে বিপর্যস্ত ও অশান্ত এ দুনিয়ায় নিরাপত্তা ও ন্যায়পরায়ণতাদানকারী ব্যবস্থায়ই শান্তি ফিরিয়ে আনতে পারে। কেননা, তোমরা ছাড়া অন্য কেউ সে ব্যবস্থার পতাকাবাহী নয়, যা মহান আল্লাহ কর্তৃক অবতারিত। যে ব্যবস্থা রহমতে পূর্ণ, পদাধিকারের কারণে সৃষ্ট বিভেদ, ভাষাগত ও জাতিগত বৈষম্য থেকে পবিত্র। যেটা মানুষকে বাহ্যিক চাকচিক্যের উপর বিচার করে না; বরং, তাকওয়াই হলো যেখানে শ্রেষ্ঠত্বের মাপকাঠি।

    এটা বাস্তব যে, মনুষ্যত্বকে বিশ্বের হিংস্র জানোয়াররা গোগ্রাসে নিয়ে নিয়েছে। তারা কোনোভাবেই তা হাতছাড়া করতে চাইবে না। তাদের চোয়ালগুলোতে মানবতার রক্ত লেপ্টে আছে। আর এজন্যই প্রত্যেক ঐ মুসলিমের সাথে তারা যুদ্ধ ঘোষণা করে রেখেছে, যে তাদের এ হিংস্রতার বিরুদ্ধে হুংকার ছুঁড়েছে। যাঁরা তাদের বিধানকে চ্যালেঞ্জ করেছে। যাঁরা আল্লাহর নাযিলকৃত বিধান বাস্তবায়নের দাওয়াত দেয়, যে বিধান মনুষ্যত্বকে দুনিয়া ও আখিরাতের ক্ষতিগ্রস্ততা থেকে মুক্তি দেবে।

    আন্তর্জাতিক ব্যাংকার, বৈশ্বিক সুদখোর এবং মানবজাতিকে শয়তানের দাসে পরিণতকারীরা কিভাবে এটা সহ্য করবে যে, কেউ এসে মানবজাতিকে তাদের কবল থেকে উদ্ধার করবে? এজন্যই তো পৃথিবীব্যাপী সন্ত্রাসের(জিহাদের) বিরুদ্ধে যুদ্ধের ডামাডোল পিটানো হয়েছে। এই শয়তানী মিশন বাস্তবায়ন করার জন্যই বিভিন্ন নতুন নতুন সামরিক জোট, কিছু প্রকাশ্যে কিছু গোপনে গঠন করা হয়েছে। শেষ অবধি তারা পরাজয়ের সম্মুখীন এ যুদ্ধে জয়ের স্বপ্ন দেখছে।

    অতএব, এ পথে কিছু কষ্ট তো হবেই। কিছু বিপদ তো আসবেই। কিন্তু যদি সম্মুখপানে বড় মাকসাদ থাকে যে, মানুষকে মানুষ বানানো, তাকে তার রব পর্যন্ত পৌঁছে দেওয়া, তাকে পরাশক্তিগুলোর বন্দেগি থেকে মহান আল্লাহর বন্দেগির দিকে নিয়ে যাওয়া, আল্লাহর সত্তার উপর পূর্ণ ঈমান আনানো, সৎকর্ম দ্বারা স্বীয় উদ্দেশ্যের ব্যাপারে মজবুত করা এবং ‘পরস্পরকে হক্ব ও সবরের উপদেশ দান’ এর মানহায।

    এখানে যদি জান যায়, তারপরও সে বিজয়ী। যদি মুসীবতের স্বীকার হতে হয়- জেল, অন্ধকার কুঠরি, ফাঁসির দড়ি; তাহলে যুগের শপথ! সেই তো خير الناس للناس এর বাস্তব প্রতিচ্ছবি, মানুষের মাঝে সর্বশ্রেষ্ঠ, সবচেয়ে সম্মানিত ও সম্ভ্রান্ত, সবচেয়ে নিষ্ঠাবান ও ওয়াফাদার, যে শুধুমাত্র নিজের সহোদর, সগোত্র ও দেশের জন্য যুদ্ধ করে না; বরং এজন্য যুদ্ধ করে- যে স্লোগানে অনুপ্রাণিত হয়ে যুদ্ধ করেছিলেন রাসূল এর সাহাবায়ে কেরাম

    لنخرج العباد من عبادة العباد إلي عبادة رب العباد

    অর্থাৎ ‘আমরা যুদ্ধ করি, মানুষকে মানুষের দাসত্ব থেকে বের করে মানুষকে মানুষের প্রতিপালকের দাসত্বে নিয়ে যাওয়ার জন্য।’

    আজ সাহাবায়ে কেরামের রাযি. উত্তরাধিকারীগণ এই মহান মিশনের কারণেই পৃথিবীব্যাপী তাগুতদের চক্ষুশূলে পরিণত হয়েছে। এর জন্যই কষ্ট-ক্লেশ স্বীকার করছে, হিজরত করছে এবং দিগ্বিদিক ছোটাছুটি করছে। শুধুমাত্র এ চিন্তায় যে, যেন এ উম্মাহ পরিপূর্ণ কিতাবুল্লাহ’র অনুসরণ করে পরিপূর্ণ সফলতা লাভ করে। এরা কুফফারদের সাথে যুদ্ধ জিহাদ করে, তাদেরকে জাহান্নামে পতিত হওয়া থেকে রক্ষা করছে; অথচ আইম্মাতুল কুফর তথা কুফফারদের লিডাররা তাঁদের হত্যা করছে। তাঁদের উপর বৃষ্টির মতো বোমা ফেলছে। তাঁদের সাথে বিশ্বযুদ্ধ শুরু করেছে। কিন্তু তাঁরা কত সম্মানিত, কত দরদি, কত সহমর্মী, মানুষের জন্য কত উপকারী বন্ধু যে, তাঁরা শুধু এ ফিকির করছে- কীভাবে মানুষ ক্ষতিগ্রস্থতা থেকে রক্ষা পাবে। তাঁরা চায় কুফফাররা ইসলামে প্রবেশ করে চির ক্ষতিগ্রস্থতা থেকে মুক্তি পাক। এঁরা তাদেরকে ইসলামের দিকে আহবান করে এবং কুফর থেকে বাধা প্রদান করে। তাঁরা নিজেদের জানবাজি রেখে কুফফারদেরকে চিরস্থায়ী জাহান্নামের শাস্তি থেকে পরিত্রাণ দিয়ে চিরস্থায়ী জান্নাতের নেয়ামতসমূহের দিকে নিয়ে আসে।

    এমন পাগলদের ব্যাপারেই ঘোষণা করা হয়েছে-

    كُنتُمْ خَيْرَ أُمَّةٍ أُخْرِجَتْ لِلنَّاسِ تَأْمُرُونَ بِالْمَعْرُوفِ وَتَنْهَوْنَ عَنِ الْمُنكَرِ وَتُؤْمِنُونَ بِاللَّهِ ﴿آل‌عمران: ١١٠﴾

    “তোমরাই হলে সর্বোত্তম উম্মত। মানবজাতির কল্যাণের জন্যেই তোমাদের উদ্ভব ঘটানো হয়েছে। তোমরা আল্লাহর উপর ঈমান আনবে।”(সূরা আলে-ইমরান: ১১০)

    আমর বিল মারূফ ও নাহি আনিল মুনকারের সর্বোচ্চ চূড়া অর্থাৎ যদি কিতালও করতে হয়; তাহলে তাঁরা কিতালও করে। হযরত ইবনে আব্বাস রাযি. বলেন, “তোমরা এর উপর কিতালও করবে।”

    এগুলোই সফল ব্যক্তিদের পরিচিতি। এরাই আল্লাহর সৃষ্টির উপর দয়াপরবশ, যাঁরা কাফেরদেরকে হিদায়াতের দিকে নিয়ে আসার জন্য নিজেদের জানের নযরানা পেশ করে। এঁরা আল্লাহর মাখলুককে ফাসাদ ও বিপর্যয় থেকে রক্ষা করে আসল প্রকৃতি ও স্বভাবের উপর ফিরিয়ে আনার জন্য নিজেদের সত্তাকে বিলীন করে দেয়। মরু থেকে মরু, জনপদ থেকে জনপদ, পাহাড় ও উপত্যকা, জল-স্থল ও অন্তরীক্ষ সব জায়গা তাঁদের রক্তে রঞ্জিত হয়েছে। এ পাগলরাই ধন-সম্পদ ও জানের বাজি লাগিয়ে অত্যাচার ও সীমালঙ্ঘনের এ ব্যবস্থাকে চ্যালেঞ্জ ছুঁড়েছে।


    কেননা, যখনই মুসলমানদের থেকে এ জযবা হারিয়ে গেছে, তখনই বিশ্বে শরীয়তের কর্তৃত্ব সরে এসেছে। অতঃপর, উসমানী খিলাফাহকে ভেঙে দেওয়া হয়েছে। তখন থেকে মুসলিম বিশ্বে অন্ধকারের কালো মেঘ এমনভাবে ঘনীভূত হয়েছে যে, কোনো আলোকিত ভোরই বলতে পারবে, কে আপন এবং কে পর? কে দোস্ত কে দুশমন? কে হত্যাকারী, কে ইনসাফগার? কে ডাকাত আর কে পথপ্রদর্শক?

    কিন্তু সকল প্রশংসা মহান আল্লাহর যখন চৌদ্দশত হিজরীর (বিংশ শতাব্দী) সূর্য অস্তমিত হয়েছে এবং পনেরোশত শতাব্দীর সূর্য উদিত হয়েছে, তখন মহান আল্লাহ খোরাসানের পবিত্র ভূমি থেকে আফগান জাতিকে নিজেদের দ্বীনের প্রতিরক্ষার জন্য, তা মজবুত করার জন্য এবং আল্লাহর জমিনে তাঁর কিতাবের বিধান বাস্তবায়ন করার জন্য মনোনীত করেছেন। আর সম্ভ্রান্ত জাতির ঈর্ষান্বিত পবিত্র ভূমিকে ইসলামী আন্দোলনগুলোর জন্য এক শক্ত ঘাঁটি বানিয়েছেন।

    উসমানী খিলাফত ধ্বংসের পর এটাই প্রথম দৃশ্য ছিল যে, মুসলমানরা দলবদ্ধভাবে কোনো এক জায়গায় জিহাদের জন্য একত্রিত হয়েছেন এবং দেখতে দেখতে ত্যাগ ও কুরবানির এমন আলোকোজ্জ্বল ইতিহাস রচনা করেছেন, যেটা ইতিহাসের গতিপথ পাল্টে দিয়েছে। আফগান জাতি যেভাবে সোভিয়েত ইউনিয়নের বিরুদ্ধে কুরবানি পেশ করেছে, তা ইসলামের ইতিহাসে এমন এক সুবর্ণ সুযোগ যে, দক্ষ কলমবাজদের উপর তা ঋণস্বরূপ; যা বিশ্বের সামনে তুলে ধরা তাদের উপর আবশ্যক। বহু কাহিনী- কান্দাহার ও হেলমান্দের কাহিনী, প্রতিভাবান যুবক, সাদা দাড়িওয়ালা বুযুর্গ এবং অল্প বয়স্ক মুজাহিদদের বীরত্বের কাহিনী, সম্ভ্রান্ত মা, আত্মমর্যাদাশীল বোন, ছেলেদের এমন কুরবানি; যা বর্তমানে পশতুদের সামাজিক রীতিতে পরিণত হয়েছে।

    এ বাস্তবতাকে কোনো দ্বীনদার ব্যক্তি অস্বীকার করতে পারবে না যে, আফগান ভূমিতে পতিত শহীদের রক্ত দেশ ও জাতীয়তাবাদের আদর্শে বিভক্ত মুসলমানদের অন্তরে মুহাম্মাদ এর উম্মাহর অংশ হওয়ার অনুভূতি জাগরিত করে দিয়েছে। এটা ঐ জাতির ত্যাগের সুফল; যারা শত বিভক্ত, হয়রান এবং মনস্তাত্ত্বিক দিক থেকে পরাজিত উম্মাহকে সমস্যা সমাধানের পথ স্পষ্ট করে দিয়েছেন। সমাজতন্ত্র ও গণতন্ত্রের মরীচিকায় সঠিক পথ তালাশকারী জাতিকে সঠিক সিরাতে মুস্তাকিমের পথের দিশা দিয়েছেন। উম্মাতে মুসলিমাকে জিহাদের দিকে আহবান করেছেন। তাদেরকে দুর্বলতা সত্ত্বেও শক্তিশালী শত্রুর মোকাবেলা করার সাহস যুগিয়েছেন। মহান আল্লাহর সেই সুন্নাহকে বুঝিয়েছেন যে, আল্লাহ তা‘আলা দুর্বলদের মাধ্যমে পরাশক্তিগুলোকে পরাজয়ের স্বাদ আস্বাদন করানআল্লাহর কুরআনকে মাসজিদ-মাদরাসার সাথে সাথে অফিস-আদালত এবং সমাজে বাস্তবায়ন করেছেন। অতঃপর অন্য আরেক বিশ্ব প্রভুর দাবিদার আমেরিকাকে তাদের মূলকেন্দ্রে ৯/১১ এর বরকতময় অপারেশনের মাধ্যমে লাঞ্ছিত করেছেন এবং এরপর তার ইজ্জত ও সকল প্রতিপত্তিকে আফগানিস্তানের পাহাড়-পর্বত, মরুভূমি ও উপত্যকাগুলোতে দাফন করার সুব্যবস্থা করলেন।

    আল্লাহর কালিমাকে সর্বোচ্চে তুলে ধরার জন্য হক্ব পথে চলে নিজেদের জিন্দেগীকে ঢেলে সাজানো ব্যক্তিদের ইতিহাস তো এমন আলোকোজ্জ্বলই হবে যে, তাদের শ্বাস প্রশ্বাসের কারণেই এ অন্ধকারাচ্ছন্ন দুনিয়াতে আলো অবশিষ্ট থাকবে। এরা প্রত্যেক যুগেই নিজের কলিজার তাজা রক্ত দিয়ে এমন সময়ে চেরাগ জ্বালিয়েছে, যে সময় তুফানের সামনে দাঁড়ানোর সাহস করতে পারে নাএক চেরাগ থেকে অন্য চেরাগ জ্বলতে থাকে। আসমান সাক্ষী যে, শত ঝড়-তুফান এবং অন্ধকারের কালো মেঘ থাকা সত্ত্বেও এ চেরাগগুলোর আলো প্রত্যেক যুগে অন্ধকারের মাঝেও দেদীপ্যমান ছিল এবং পথভোলা লোকদের পথের সন্ধান দিত। এমন খোদাপ্রেমিকদের পদচিহ্ন অনুসরণ করে কাফেলা প্রত্যাশিত গন্তব্যে পৌঁছে যেত। আল-হামদুলিল্লাহ এখনো কাফেলা গন্তব্য পানে এগিয়ে চলছে।

    এরা বাস্তব প্রতিচ্ছবি রহমাতুল্লিল আলামীন এর এই ফরমানের-


    عَنْ عِمْرَانَ بْنِ حُصَيْنٍ أَنَّ النَّبِيَّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ لَا تَزَالُ طَائِفَةٌ مِنْ أُمَّتِي يُقَاتِلُونَ عَلَى الْحَقِّ ظَاهِرِينَ عَلَى مَنْ نَاوَأَهُمْ حَتَّى يُقَاتِلَ آخِرُهُمْ الْمَسِيحَ الدَّجَّالَ.

    ইমরান ইবনে হুসাইন রাযি. থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, “আমার উম্মতের মধ্যে একটি দল সর্বদা অন্যায়ের বিরুদ্ধে ন্যায়কে প্রতিষ্ঠা করার জন্য তাদের দুশমনের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে তাদের উপর জয়ী হবে। অবশেষে তাদের শেষ দলটি কুখ্যাত প্রতারক দাজ্জালের সাথে যুদ্ধ করবে।”(সুনানে আবু দাউদ, হাদীস নং-২৪৭৬, ই.ফা.)

    অন্য রেওয়ায়েতে এই শব্দগুলো এসেছে, لَا يُبَالُونَ مَنْ خَالَفَهُمْ “তাঁরা তাঁদের বিরোধীদের পরোয়া করবে না।”(মুসনাদে আহমাদ, খণ্ড-২৮, হাদীস নং- ১৬৮৮১, শামেলা)

    আসুন! এদের সাথে যোগ দিয়ে মানবতাকে চরম ক্ষতি থেকে রক্ষা করুন! মুসলমানদের দুনিয়া ও আখিরাতের সফলতা অর্জনের উসিলা হোন। আল্লাহর জমিনে আল্লাহর বিধান বাস্তবায়নের জন্য, এ খোদাপ্রেমিকদের সঙ্গ দিন। যে কোনোভাবেই হোক, জান দিয়ে অথবা মাল দিয়ে অথবা ভাষা দিয়ে এমনি দু‘আর মাধ্যমে হলেও এ আল্লাহওয়ালাদের সঙ্গ দিন।

    কেননা, অতিক্রান্ত প্রত্যেক নিঃশ্বাসের সাথে সময়ও হাত থেকে ছিটকে বেরিয়ে যাচ্ছে। সঞ্চিত বস্তু হাত থেকে বেরিয়ে যাচ্ছে। অতিক্রান্ত প্রত্যেক মুহূর্ত হয়তো কল্যাণের পথে অথবা অকল্যাণের পথে। অতঃপর, সেই দিন নিকট থেকে নিকটে চলে আসছে, যেই দিন কল্যাণ ও অকল্যাণের রেজাল্ট প্রকাশ করা হবে। ঘোষণা করা হবে, কার ব্যবসা লাভজনক, কার সঞ্চয় কল্যাণ বয়ে এনেছে, আর কারটা তাকে ক্ষতির নিম্নস্তরে নিক্ষেপ করেছে?

    আল্লাহ তা‘আলা সকল মুসলমানকে ক্ষতি থেকে রক্ষা করে সফলকাম ব্যক্তিদের মাঝে অন্তর্ভুক্ত করুন এবং উম্মাহকে ইজ্জত ও মহত্ব দান করুন।(আল্লাহুম্মা আমীন)

    وصلي الله تعالي علي خير خلقه محمد وعلي آله وأصحابه أجمعين.





    আরও পড়ুন
Working...
X