অনলাইনে সাদাকাহ ফাঁদ : সচেতনতা কাম্য!
মুনশি আব্দুর রহমান

মুনশি আব্দুর রহমান

الحمد لله معز الإسلام بنصره، ومذل الشرك بقهره، ومصرف الأمور بأمره، ومديم النعم بشكره، والصلاة والسلام على من أعلى الله منار الإسلام بسيفه
সব প্রশংসা আল্লাহ তাআলার, যিনি ইসলামকে বিজয়ের মাধ্যমে মর্যাদা দিয়েছেন, শিরককে চূর্ণ করেছেন নিজের কুদরতি কষাঘাতে, এবং যিনি সমস্ত বিষয়ের নিয়ন্ত্রণকারী, নেয়ামতের ধারাবাহিকতা যাঁর শোকরের সঙ্গে জড়িত।
আর দরুদ ও সালাম বর্ষিত হোক সেই নবীর প্রতি, যাঁর তরবারির ছায়ায় ইসলাম মাথা তুলে দাঁড়িয়েছে।
গল্পের শুরু
ভাবুন তো, একজন সদা উচ্ছ্বসিত মুসলিম তরুণ। সে চায় দুনিয়াতে ইসলামের বিজয়, উম্মাহর মুক্তি। তার হাতে স্মার্টফোন, চোখে স্বপ্ন। সোশ্যাল মিডিয়ার পর্দায় সে দেখে ইসলামি কনটেন্ট, জিহাদের আহ্বান, কষ্টে থাকা মুজাহিদ ভাইদের জন্য দান করার আহ্বান। সে দান করতে চায়—কিন্তু জানে না, এই ভালোবাসার আগ্রহই তার জন্য ফাঁদ হয়ে উঠতে পারে।
অনলাইনে জিহাদ: এক নতুন যুদ্ধক্ষেত্র
জিহাদি সংগঠনগুলো শুধু মাঠে নয়, এখন অনলাইনেও তাদের কর্মকাণ্ড বিস্তার করছে। ইন্টারনেট, সোশ্যাল মিডিয়া—সবই এখন দাওয়াহ ও জিহাদের হাতিয়ার। তারা প্রযুক্তিকে ব্যবহার করছে শরীয়তসম্মত কৌশলে। ফলে, তাগুতি গোয়েন্দাদের কাছে এটি হয়ে দাঁড়িয়েছে বিশাল এক চ্যালেঞ্জ।
এই চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় তারা বিভিন্ন উপায় বের করছে—যার মধ্যে অন্যতম হলো "সাদাকাহ ফাঁদ"।
"ডিপ থ্রোট" কৌশল: ধীরে ধীরে বিশ্বাস অর্জনের ফাঁদ
গোয়েন্দারা প্রথমে তৈরি করে ভুয়া প্রোফাইল। তারপর ইসলামী আলোচনা, পোস্ট, কমেন্টের মাধ্যমে মুজাহিদ সমর্থকদের সঙ্গে সম্পর্ক গড়ে তোলে। ধীরে ধীরে তাদের বিশ্বাস অর্জন করে, তথ্য সংগ্রহ করে।
এই পদ্ধতিকে বলা হয় "ডিপ থ্রোট কৌশল"। নামটা অদ্ভুত শোনালেও, এর কাজ খুবই ভয়ংকর। তারা ধীরে ধীরে আপনাকে এমন অবস্থায় নিয়ে যায়, যেখানে আপনিই নিজেকে প্রকাশ করে ফেলেন। তারপর? নবী ইউসুফ (আলাইহিস সালাম)-এর পাঠশালার মতো জায়গায় নিয়ে যাওয়া হয়—অর্থাৎ কারাগারে!
"সাদাকাহ ফাঁদ": এক অভিনব প্রতারণা
জিহাদিদের জন্য অর্থ খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এই অর্থ আসে সাধারণ মুসলিমদের যাকাত, দান ও সাদাকাহ থেকে। গোয়েন্দারা ঠিক এখানেই ফাঁদ পেতে বসে।
এই ফাঁদের তিনটি ধাপ:
১. ভুয়া দাতব্য সংস্থা তৈরি: দেখতে একেবারে খাঁটি ইসলামি কাজ মনে হয়। কিন্তু ভেতরে বিষ!
২. দানকারীর তথ্য সংগ্রহ: আপনি দান করলেন, কিন্তু সেই সাথে দিয়ে দিলেন নিজের নাম, ঠিকানা ও চিন্তার ধরন।
৩. লেনদেন পর্যবেক্ষণ: কোন মাধ্যমে টাকা পাঠালেন, সেটা খুঁজে নিয়ে আপনাকে চিহ্নিত করা সহজ হয়ে যায়।
বাংলাদেশেও এই কৌশল!
বাংলাদেশের গোয়েন্দা সংস্থাগুলোও এই ধরণের শয়তানি কাজে পিছিয়ে নেই। তারা ফেসবুক, টেলিগ্রামসহ বিভিন্ন মাধ্যমে দাতাদের টার্গেট করে। বিশেষত তরুণদের দ্বীনি আবেগকে কাজে লাগিয়ে এই ফাঁদগুলো আরও শক্তিশালী করা হয়।
এখন পর্যন্ত অনেক ভাই ধরা পড়েছেন শুধুমাত্র সোশ্যাল মিডিয়ার এই "সাদাকাহ ফাঁদে" পা দিয়ে।
প্রতিরোধ হিসাবে কী করা উচিত?
প্রথমত, এমন লোকজনকে কোন দানই করা উচিত নয় যাদের সম্পর্কে নিশ্চিত নন। সংগঠনটি কে চালায়? কী উদ্দেশ্যে? এসব যাচাই না করে এক টাকাও দেওয়া উচিত নয়।
দ্বিতীয়ত, সম্ভাব্য দানের অর্থ নিজের কাছে জমিয়ে রাখুন। একমাত্র বিশ্বস্ত ও প্রমাণিত উৎস পেলেই সেটি পৌঁছে দিন।
শেষ কথাটি গুরুত্বপূর্ণ:
জিহাদ সমর্থকদের ধ্বংস করতে এখন শুধুমাত্র অস্ত্র নয়, চালাকি ও প্রযুক্তিকেও ব্যবহার করা হচ্ছে। তাই আমাদেরও হতে হবে সচেতন, বিচক্ষণ ও ধৈর্যশীল।
আল্লাহ আমাদের বুঝার ও সতর্ক থাকার তাওফীক দিন। তাগুতদের চক্রান্ত থেকে রক্ষা করুন। আমীন
*****
Comment