Announcement

Collapse
No announcement yet.

শিক্ষা ব্যবস্থা (১ম পর্ব): আধুনিক শিক্ষার ব্যর্থতা এবং সীমাবদ্ধতা

Collapse
X
 
  • Filter
  • Time
  • Show
Clear All
new posts

  • শিক্ষা ব্যবস্থা (১ম পর্ব): আধুনিক শিক্ষার ব্যর্থতা এবং সীমাবদ্ধতা

    আমরা আধুনিক শিক্ষার ব্যর্থতা নিয়ে আলোচনা শুরু করার আগে, প্রথমে এটি বুঝে নিতে হবে যে, শিক্ষার মূল উদ্দেশ্য কী ছিল। অর্থাৎ, স্কুল প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল কোন উদ্দেশ্যে? যদি আমরা এই প্রশ্নের উত্তর পরিষ্কারভাবে না জানি, তবে বলা সম্ভব নয় যে শিক্ষা সফল হয়েছে নাকি ব্যর্থ। অন্য কথায়, যদি স্কুলের উদ্দেশ্যই আমাদের স্পষ্ট না থাকে, তবে আমরা কিভাবে বিচার করব যে, শিক্ষা সফল হয়েছে, নাকি ব্যর্থ?

    এই প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে গেলে ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপটও গুরুত্বপূর্ণ। কারণ, এক সময় যেটা স্কুলের সফলতা হিসেবে ধরা হতো, তা এখন হয়তো ব্যর্থতা হিসেবে দেখা হয়, আবার যেটা এক সময় ব্যর্থতা ছিল, তা পরে সফলতা হিসেবে গণ্য হতে পারে। সুতরাং, শিক্ষা ব্যবস্থার সফলতা ও ব্যর্থতা বুঝতে হলে আমাদের সময় এবং স্থানভেদে পরিবর্তিত প্রত্যাশাগুলো বিবেচনায় নিতে হবে, যদিও এসব প্রত্যাশা বেশ কিছু ক্ষেত্রে একে অপরকে প্রতিফলিত করে আসছে।

    এতে আরও একটি বিষয় স্পষ্ট থাকা প্রয়োজন যে, এক সময় শিক্ষা ছিল ধর্মীয় বা নৈতিক শিক্ষা দেওয়ার জন্য, আর আজকাল এটি মূলত প্রযুক্তিগত এবং বৈজ্ঞানিক জ্ঞানের প্রসারের দিকে অগ্রসর হয়েছে। তবে, এই পরিবর্তনের পরেও কিছু পুরানো সমস্যা, যেমন শিক্ষার মানের বৈষম্য, সমাজে সুযোগের অসমতা এবং সমালোচনার অভাব, এখনো বিদ্যমান।

    ভাষা ও সংস্কৃতির বাহ্যিক পার্থক্য সত্ত্বেও, যা আমরা আধুনিক শিক্ষা বলে ডাকি, তা অধিকাংশ ক্ষেত্রে তার বিশ্বব্যাপী একই। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে বিশ্বের যেকোনো স্থানের একটি স্কুলে গেলেই দেখা যাবে একই ধরনের একটি স্থাপনা—একটি বাক্সাকৃতির কংক্রিটের বিল্ডিং, যা কারখানা (অথবা কারাগার বা হাসপাতালের) মতো দেখতে, যা ছোট ছোট বাক্সে বিভক্ত, যেগুলিকে বলা হয় শ্রেণিকক্ষ। প্রতিটি শ্রেণিকক্ষে কয়েকটি ডেস্ক এবং চেয়ার রাখা থাকে, যা সামনের দিকে একটি বড় শিক্ষক ডেক্সের দিকে মুখ করা থাকে, আর তার পেছনে একটি ব্ল্যাকবোর্ড থাকে এবং তার উপরে থাকে একটি ঘড়ি। এই বস্তুগুলোর অবস্থান সামান্য পরিবর্তিত হতে পারে, কিন্তু সেগুলি সবখানেই থাকবে, টোকিও থেকে ইস্তাম্বুল, নিউইয়র্ক থেকে লন্ডন, করাচি থেকে রিও ডি জেনেইরো পর্যন্ত। প্রায়ই একটি জাতীয় পতাকা অথবা অন্য কোনো জাতীয় চিহ্ন, যেমন বর্তমান রাষ্ট্রপতির ছবি, উপস্থিত থাকে এবং কখনো কখনো এটি এক ধরনের আচার-অনুষ্ঠান হিসেবে সম্মান জানানো হয়, আবার অনেক সময় প্রতিদিনের শুরুতে জাতীয় সংগীত বাজানো বা গাওয়া হয়।

    শিক্ষার্থীরা এই বাক্সগুলোর মধ্যে কঠোর সময়সূচি অনুসারে চলে, যা প্রায়ই ঘণ্টা বা সাউন্ড এলার্ম দিয়ে ঘোষণা করা হয়, এবং স্কুলের দিনটি প্রায় ৫০ মিনিট করে কয়েকটি পর্বে বিভক্ত থাকে, যা সকাল ৮টা থেকে শুরু হয়ে ৩টা নাগাদ শেষ হয়, মধ্যাহ্নভোজের বিরতি সহ। স্কুল সপ্তাহে পাঁচ দিন খোলা থাকে এবং বছরে ১০ মাস চালু থাকে, সাধারণত ১২ বছর ধরে। শিক্ষার্থীদের বিভিন্নভাবে শ্রেণিবদ্ধ এবং গ্রেড করা হয়, অধিকাংশ ক্ষেত্রে বয়সভিত্তিক শ্রেণী অনুসারে এবং একাডেমিক গ্রেড অনুসারে। গ্র্যাজুয়েশনের সময়, শিক্ষার্থীরা তাদের অভিজ্ঞতা এবং পারফরমেন্সের একটি সার্টিফিকেট (পেপার) পায়।

    ১৯ শতকের দিকে ইউরোপে শুরু হয়ে, কিন্তু দ্রুত বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে পড়া একটি নতুন সামাজিক বাস্তবতা—শিল্পায়ন এবং জাতীয়তাবাদ—মানুষকে তার প্রকৃত মানবিক পরিচয় থেকে বিচ্যুত করে একটি যান্ত্রিক ও রাষ্ট্রকেন্দ্রিক পরিচয়ের দিকে ঠেলে দেয়। এই বাস্তবতার সঙ্গে মানুষকে মানিয়ে নিতে বাধ্য করা হয়, আর এই মানিয়ে নেওয়ার সবচেয়ে কার্যকর হাতিয়ার হয়ে ওঠে ‘স্কুল’ নামক প্রতিষ্ঠানটি।

    কারখানার যান্ত্রিক পরিবেশের সঙ্গে খাপ খাওয়ানোর জন্য তরুণদের শেখানো শুরু হয় নির্ধারিত সময়মতো আসা-যাওয়া, ঘন্টার পর ঘণ্টা ধরে একনাগাড়ে বসে থাকা, এবং প্রশ্ন না করে আদেশ পালন করা। তাদের শেখানো হয় একরূপ পোশাক পরা, যাতে সৃজনশীলতা নয়, বরং একরকমতা ও নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা পায়। সময়ানুবর্তিতা এখানে আর নৈতিক গুণ নয়—এটা একটি প্রয়োজনীয় ‘কারখানা অভ্যাস’। এবং এই পুরো প্রক্রিয়াই সাজানো হয় এমনভাবে যেন মানুষ ক্রমে মেশিন হয়ে ওঠে—চিন্তাশীল, প্রশ্নকারী নাগরিক নয়।

    শুধু উৎপাদন-ভিত্তিক সমাজে উপযোগী নাগরিক তৈরি করাই নয়, স্কুল ব্যবস্থার আরও একটি সূক্ষ্ম কিন্তু গভীর উদ্দেশ্য ছিল: জাতীয়তাবাদের ভিত্তি গড়ে তোলা। শিশুদের শেখানো হয়, তারা একটি 'জাতির অংশ'—এবং সেই জাতিকে ভালোবাসা, তার পতাকা ও প্রতীককে শ্রদ্ধা করা, এবং প্রয়োজনে তার জন্য প্রাণ দেওয়া, এটাই গর্বের বিষয়। অথচ, এই শিক্ষাব্যবস্থা কখনও প্রশ্ন তোলে না: ‘জাতি’ কী? কে নির্ধারণ করে এর সীমা, এর শত্রু, বা এর সত্য?

    এমনকি যুদ্ধ—যা মূলত রাজনৈতিক স্বার্থরক্ষার হাতিয়ার—তাকেও ‘গর্বের বিষয়’ হিসেবে উপস্থাপন করা হয়, আর খেলা হয় তার নিরীহ সংস্করণ। ‘আমরা’ বনাম ‘তারা’—এই বিভাজন শেখানো হয় খুব কম বয়সেই, খেলার মাঠ থেকে শ্রেণিকক্ষে। এবং স্কুল এ কাজটি করে এমন দক্ষতায় যে, এখন আমরা বেশিরভাগই চিন্তাই করতে পারি না এই কাঠামোর বাইরে—যেন জীবন মানেই শ্রেণিকক্ষ, শ্রেণীবিন্যাস, পরীক্ষায় পাশ বা ফেল, এবং শৃঙ্খলিত ‘ভালো নাগরিক’ হওয়া।

    ইউরোপের শিল্প ও সামরিক শক্তি হিসেবে বিস্ময়কর উত্থানের সাথে সাথে, শিক্ষা তখন ওই সফলতার চাবিকাঠি হিসেবে দেখা হতে শুরু করে।
    শিক্ষা আর শুধু ‘জ্ঞান অর্জনের উপায়’ নয়—এটি হয়ে ওঠে একটি জাতির ‘উন্নত’ হওয়ার পাথেয়, তার আধিপত্য কায়েমের কৌশল। ফলত, ইউরোপীয় শিক্ষা মডেলটি দ্রুতই বিশ্বজুড়ে আদর্শ হিসেবে বিবেচিত হতে থাকে—বিশেষত সেই সব দেশে, যারা শিল্প ও প্রতীকী শক্তি অর্জনের স্বপ্ন দেখছিল। আমেরিকা ও জাপান ছিল এই ‘নতুন যুগের পাঠশালা’ গ্রহণকারী প্রথম রাষ্ট্রগুলোর অন্যতম, যদিও রাশিয়া, অটোমান সাম্রাজ্য এবং পরবর্তীতে অনেক উপনিবেশেও এই মডেলের উপস্থিতি লক্ষ্য করা যায়।

    ব্রিটেন ও ফ্রান্স, তাদের উপনিবেশগুলোতে এই শিক্ষা ব্যবস্থা জোর করে চাপিয়ে দেয়। শিক্ষার এই ‘রপ্তানি’ ছিল আসলে একটি সাংস্কৃতিক উপনিবেশবাদ, যেখানে ভাষা, ইতিহাস, ও চিন্তার কাঠামো পর্যন্ত নিয়ন্ত্রণে রাখা হতো। ২০ শতকের শুরুতে, এই মডেল এতটাই প্রভাব বিস্তার করে যে, একটি বৈশ্বিক "আধুনিক" শিক্ষা ব্যবস্থা গড়ে ওঠে—যা এখনো টিকে আছে, প্রায় অবিকল।

    তবে এই কাঠামো কেবল কারখানার মানকরণ ও জাতীয়তার আনুগত্য তৈরির কাজেই থেমে থাকেনি। এর মধ্য দিয়ে শিশুদের শেখানো হতো ‘একাডেমিক’ বিষয়—বিশেষ করে ভাষা ও গণিত। এগুলোর পেছনের যুক্তি অবশ্য নিরীহ ছিল না: এই দক্ষতা সরাসরি কাজে লাগবে উৎপাদনব্যবস্থা ও প্রশাসনিক কাঠামো পরিচালনায়। একইসাথে, ইতিহাস ও নাগরিকশাস্ত্র শেখানো হতো এমনভাবে যেন প্রতিটি শিশু তার দেশকে অনন্য, শ্রেষ্ঠ, এবং ‘অন্যদের চেয়ে উন্নততর’ বলে বিশ্বাস করে।

    এখানেই শিক্ষার রাজনৈতিকতা প্রকট হয়ে ওঠে। একদিকে এটি জাতীয় অহংবোধ গড়ে তোলে, অন্যদিকে অন্য জাতির প্রতি অবচেতনে অবজ্ঞা ও প্রতিযোগিতা জন্ম দেয়। শিক্ষাকে ব্যবহার করা হয় এক ধরনের কৌশলী ‘মন-নিয়ন্ত্রণ’ হিসেবে—যেখানে প্রশ্ন নয়, উত্তর মুখস্থ করাই বুদ্ধিমত্তার মাপকাঠি হয়ে ওঠে।

    বিজ্ঞান ও মানবিক বিষয়াবলীও ধীরে ধীরে স্কুলের পাঠ্যক্রমে যুক্ত হয়, তবে শুরুতে তা ছিল ধনিক শ্রেণির ‘বিচার-বুদ্ধিসম্পন্ন শ্রেষ্ঠ সন্তানদের’ জন্য নির্ধারিত। এ ছিল জ্ঞানচর্চার নামে শ্রেণিচর্চার পুনরুৎপাদন। যারা এই ‘উচ্চমানের’ বিদ্যালয়ে যেতে পারত, তারা কেবল আরও জ্ঞান অর্জন করত না—তারা সমাজে নেতৃত্ব দেওয়ার লাইসেন্সও অর্জন করত। সাধারণ জনগণের জন্য এসব ছিল বহু বছর পরের গল্প।

    ২০ শতকের মাঝামাঝি থেকে এসব বিষয় অপেক্ষাকৃত বেশি সংখ্যক স্কুলে পড়ানো শুরু হয়, কিন্তু কাঠামো ছিল একই: একঘেয়ে পাঠক্রম, পরীক্ষাভিত্তিক মেধা যাচাই, এবং শাসনকে প্রশ্নহীনভাবে মান্য করার অনুশীলন।

    নতুন শিক্ষাব্যবস্থার লাভ এবং সাফল্যগুলো কিন্তু সবার মধ্যে সমানভাবে ভাগ হয়নি।
    বিশেষ করে শিল্প অর্থনীতির সুবিধাগুলো—যা এই শিক্ষাব্যবস্থার অন্যতম যুক্তি হিসেবে উপস্থাপন করা হতো—তা মূলত আমেরিকা, ইউরোপ এবং জাপানের মতো শক্তিধর দেশগুলো নিজেদের মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখে। তারা এই প্রতিযোগিতামূলক সুবিধাগুলো হিংস্রভাবে রক্ষা করে, নানা ধরনের অর্থনৈতিক ও সামরিক নীতির মাধ্যমে। অন্যদিকে, বিশ্বমানচিত্রের বিশাল একটি অংশ—বিশেষ করে উপনিবেশ ও উন্নয়নশীল দেশগুলো—তাদের সম্পদের জোগানদাতা এবং তাদের উৎপাদিত শিল্পপণ্যের নির্ভরশীল ভোক্তায় পরিণত হয়।

    এই পরিণতি কেবল অর্থনৈতিক নয়, এটি ছিল একটি সাংস্কৃতিক ট্র্যাজেডিও। শিক্ষা ব্যবস্থাকে ব্যবহার করা হয়েছিল "শিল্পভিত্তিক জাতি" গড়ার স্বপ্ন দেখিয়ে, অথচ অধিকাংশ দেশ সেই কাঙ্ক্ষিত শিল্প অর্থনীতির কাছাকাছিও পৌঁছাতে পারেনি। তারা পণ্য তৈরি করতে শেখেনি—তারা শুধু নিয়ম মানতে শিখেছে।

    এটি নিঃসন্দেহে আধুনিক শিক্ষার একটি সাংগঠনিক ব্যর্থতা। তবে প্রশ্ন হচ্ছে—এটি কি শুধুই ব্যর্থতা, না কি এটি পূর্ব পরিকল্পিত একটি কাঠামোর ফল, যেখানে বৈষম্যই ছিল কাঙ্ক্ষিত ফলাফল? এই প্রশ্নের উত্তর নির্ভর করে আপনি কোন সময় এবং কোন ভূখণ্ড থেকে এই ব্যবস্থাটিকে দেখছেন তার উপর।

    শিল্পায়নের ব্যর্থতা যেখানে তুলনামূলকভাবে আড়ালে থেকে গেছে, সেখানে জাতীয়তাবাদের অনুভূতি গড়ে তোলার ক্ষেত্রে আধুনিক শিক্ষার সাফল্য অনেক বেশি স্পষ্ট এবং ব্যাপক। পতাকার প্রতি আনুগত্য, রাষ্ট্রনির্মাণের গর্ব, ও “অন্যদের থেকে আমরা আলাদা” এই মনোভাব—এসবই পাঠ্যপুস্তক, জাতীয় সংগীত, এবং ইতিহাসের নির্বাচিত ব্যাখ্যার মাধ্যমে শিশুদের মনে গেঁথে দেওয়া হয়েছে। এর ফলাফল একদিকে যেমন জাতীয় ঐক্যের কল্পনা তৈরি করেছে, অন্যদিকে তেমনি আন্তর্জাতিক সহযোগিতার বদলে প্রতিযোগিতা এবং বৈরিতাও জন্ম দিয়েছে।

    সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো, এই গোটা প্রক্রিয়াটি পরিচালিত হচ্ছিল এমন সব গোষ্ঠীর দ্বারা, যাদের ওই নতুন বাস্তবতার (শিল্প, বাজার, এবং রাষ্ট্রব্যবস্থা) সঙ্গে সরাসরি রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক স্বার্থ জড়িত ছিল। তাদের প্রয়োজন ছিল এমন নাগরিক—যারা প্রশ্ন করবে না, বরং পালন করবে; যারা স্বপ্ন দেখবে, কিন্তু নির্ধারিত সীমার ভেতরেই।

    ২০শতকের শেষ দিকে এসে স্পষ্ট হয়ে যায় যে, পুরনো ধাঁচের এই শিক্ষাব্যবস্থা আর আগের মতো কাজ করছে না। আমেরিকা, ইউরোপ আর জাপান—যারা একসময় এই ব্যবস্থার সবচেয়ে বড় সুবিধাভোগী ছিল, তারাই জড়িয়ে পড়ে ভয়াবহ যুদ্ধের মধ্যে, যেগুলো বিশ্বজুদ্ধ নামে পরিচিত। এসব যুদ্ধ ছিল মূলত উপনিবেশ নিয়ে দ্বন্দ্ব, যা গোটা বিশ্বে ছড়িয়ে পড়ে। এদিকে তৃতীয় বিশ্বভুক্ত দেশগুলো বুঝতে থাকে যে, তারা নিয়ম মেনে খেললেও আসলে খুব একটা লাভবান হচ্ছে না।

    এই সময়, বৈশ্বিক অর্থনীতি ধীরে ধীরে রাষ্ট্রের হাত থেকে সরে গিয়ে চলে যায় বড় বড় আন্তর্জাতিক কোম্পানির দখলে। ফলে এখন সব দেশকেই একটা একক বৈশ্বিক নিয়মের মধ্যে চলতে হয়, এমনকি যেসব দেশ আগে নিজস্ব পরিকল্পনায় চলতো, তারাও বাদ যায়নি। পাশাপাশি, পরিচয় গঠনের ক্ষেত্রে মিডিয়া গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিতে শুরু করে, যদিও সেটা বেশ খণ্ডিত ও ছড়ানো ছিটানো।

    যেহেতু বিশ্ব ব্যবস্থাই বদলে যাচ্ছিল, এবং বিশ্বযুদ্ধের পর শিল্পোন্নত দেশগুলো নিজেদের মধ্যেই প্রতিযোগিতায় নেমে পড়ে, তারা একে অপরের শিক্ষাব্যবস্থা অনুকরণ করতে থাকে। ১৯৮০-এর দশকে, আমেরিকান নীতিনির্ধারকরা ভাবতে থাকেন, জাপানের অর্থনৈতিক উন্নতির পেছনে ওদের উন্নত শিক্ষাব্যবস্থা কাজ করেছে, যেখানে কর্পোরেট ব্যবস্থার প্রতি শ্রদ্ধাবোধ তৈরি হয়। কিন্তু এ ধারণা খুব বেশিদিন টেকে না—এক দশকের মধ্যেই জাপানের অর্থনীতি ভেঙে পড়ে, আর সেখানে হতাশা, সামাজিক অবনতি আর আত্মহত্যার হার বেড়ে যায়।

    এদিকে, ধনী দেশগুলো একের পর এক শিক্ষাব্যবস্থায় সংস্কার চালাতে থাকে, আর দরিদ্র দেশগুলো শুধু অপেক্ষা করতে থাকে, কখন তাদের সাবেক উপনিবেশিক প্রভুরা নতুন কোনো পদ্ধতি চালু করবে। ফলে শিক্ষা হয়ে ওঠে একধরনের ট্রেন্ড বা ফ্যাশন—একটা সমস্যা দেখা দিলেই স্কুলে সংস্কারের চেষ্টা, যাতে অন্তত ব্যয়বহুল এই ব্যবস্থার জন্য একটা যুক্তি দাঁড় করানো যায়।

    এই সময় থেকেই শিক্ষাব্যবস্থার ব্যর্থতা আরও স্পষ্ট হয়ে উঠতে শুরু করে। একশ বছরের বেশি সময় ধরে উন্নতির দাবি শোনা গেলেও, আজকের দিনে বাস্তবে ফলাফল তেমন কিছু চোখে পড়ে না। যেসব দেশকে "উন্নত গণতন্ত্র" বলা হয়, সেখানে রাজনীতি আর সংস্কৃতি অনেকটা হাস্যকর পর্যায়ে পৌঁছে গেছে। খুনী, গ্যাংস্টার, ফ্যাসিস্ট, মিথ্যাবাদী—সবাই নির্বিঘ্নে জনপ্রতিনিধি হয়ে যাচ্ছে। সাধারণ মানুষ অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির প্রতিশ্রুতি ছাড়া আর কিছুই দেখতে পাচ্ছে না—তারা যেন এক অন্ধ ভোগবাদী দুনিয়ায় আটকে পড়েছে। পরিবেশ ধ্বংস হচ্ছে, প্রজাতি বিলুপ্ত হচ্ছে, মানুষ নিজের বাসস্থান ধ্বংস করছে, আর একই সঙ্গে তুচ্ছ বিষয় নিয়ে যুদ্ধ করছে।

    এমন অবস্থায় সব দোষ শিক্ষাব্যবস্থার ঘাড়ে চাপানো হয়তো ঠিক না, আবার স্কুলকে এসব সমস্যার সমাধানকারী হিসেবেও দেখা উচিত নয়। কিন্তু যেসব সংস্কার হয়, সেগুলো আজও পুরনো চিন্তা—জাতীয় গর্ব আর অর্থনৈতিক উন্নতির ঘূর্ণিতে আটকে আছে। পরিবেশ বা বিশ্ব নাগরিকত্বের মতো যে ক'টা উদ্যোগ দেখা যায়, সেগুলোকেও একধরনের পুরনো নিয়মের অনুসরণই বলা চলে।

    যখন কোনো সমস্যা দেখা দেয়, তখন মানুষ সমাধানের জন্য স্কুলের দিকেই তাকায়। আবার, যদি আগে থেকেই স্কুলকে দায়ী করা হয়, তাহলে সমাধানও সেখানেই খোঁজা হয়। ধনী দেশগুলোর টেকনোক্র্যাটরা তখন স্কুলে কোটি কোটি টাকা ঢালেন, আর সেখানে ডিজনির চরিত্রে সাজানো ক্লাসরুম দেখা যায়—যা দেখতে যতই মজার হোক, ভেতরে আসলে সেই একঘেয়ে, প্রাণহীন ব্যবস্থারই বহিঃপ্রকাশ।

    অন্যদিকে, দরিদ্র দেশগুলো এসব কিছুই পায় না। না আছে টাকা, না আছে সুযোগ—তারা পড়ে থাকে একধরনের ঔপনিবেশিক শিক্ষার দুর্বল অনুকরণে। জাতিসংঘ বা এনজিওগুলো এটিকে সমালোচনা করলেও, এটি যেন এক আয়না—যেখানে আধুনিক রাষ্ট্রব্যবস্থা ও শিল্পসমাজের অবক্ষয়ের প্রতিচ্ছবি ধরা পড়ে।

    আজকের শিক্ষাব্যবস্থা অনেকের জন্য হতাশার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। অনেকে বলেন, স্কুলকে আরও সুন্দর, মানানসই ও আনন্দদায়ক জায়গা করে তুলতে হবে। এটা নিঃসন্দেহে গুরুত্বপূর্ণ, কারণ স্কুল কেবল শেখার জায়গা নয়—এটা সামাজিকীকরণেরও স্থান। কিন্তু অনেক সময়, এই সামাজিকীকরণ হয় না মানুষের আসল প্রয়োজন অনুযায়ী—বরং সেটি চলে যায় সমাজ ও অভিভাবকের মানসিক কাঠামোর বাইরে।

    তবে, সফলতা আর ব্যর্থতার নিরিখে সবকিছু বিচার করাটাও সবসময় ফলপ্রসূ নয়। উন্নত দেশগুলোতে যখন স্কুল ব্যর্থ হচ্ছে বলে বলা হয়, তখন তা অনেক সময়ই রাজনৈতিক বা ব্যবসায়িক স্বার্থে বলা হয়। এসব "ব্যর্থতা" দেখিয়ে কিছু মানুষ সরকার থেকে আরও অর্থ আদায় করে, যাতে নিজেদের স্বার্থ হাসিল করা যায়।

    কিছু মানুষ মনে করেন, স্কুলগুলো পুরোপুরি সফল না হলেও এগুলো সামাজিক স্থিতিশীলতা বজায় রাখে। কিন্তু এমন ভাবনা আসলে ধনী দেশগুলোর বিলাসিতা। দরিদ্র দেশগুলোর পক্ষে এটি কল্পনাও করা সম্ভব নয়।

    তাই, শিক্ষা নিয়ে আলোচনা করতে গেলে সেটিকে শুধুই সফল বা ব্যর্থ বলেই দেখলে চলবে না। আমাদের গভীরভাবে দেখতে হবে—এই ব্যবস্থার সঙ্গে সমাজ, রাজনীতি এবং অর্থনীতির কী সম্পর্ক আছে, আর এগুলো কিভাবে একে প্রভাবিত করে।

    সবশেষে, যখন সারা বিশ্বে মানুষ শিক্ষাব্যবস্থাকে নিয়ে হতাশা প্রকাশ করছে, তখন এটি একটা বড় ইঙ্গিত যে, বিষয়টি নিয়ে এখনই গম্ভীরভাবে ভাবতে হবে। এই আলোচনা কেবল রাজনীতিক বা কর্পোরেটদের হাতে ছেড়ে দেওয়া যাবে না। এমন জায়গাগুলোতে, যেখানে হারানোর কিছু নেই, সেখান থেকেই শুরু হওয়া উচিত সবচেয়ে কঠোর আলোচনা।

    আমরা স্কুলগুলোকে ভেঙে ফেলবো, না কি সেগুলোকে শপিং মলের মতো সাজাবো—তার আগে আমাদের দরকার সঠিক মূল্যায়ন। দরকার বিকল্প ভাবনার—স্কুলছুট প্রকল্প, পেশাভিত্তিক শিক্ষা, গৃহশিক্ষা, কিংবা একেবারেই নতুন মডেল। আর এই সবের আগে, আমাদের শিক্ষার সীমাবদ্ধতাকে মেনে নিতে হবে। যতদিন আমরা স্কুলকে সামাজিক মর্যাদা বা সম্পদ অর্জনের মাধ্যম ভাববো, ততদিন এই খেলা জারি থাকবে—যেখানে কেউ জিতবে, কেউ হারবে। আর এই খেলাই মূলত আধুনিক শিক্ষাব্যবস্থার সবচেয়ে বড় ব্যর্থতা।

    فَاَعۡرِضۡ عَنۡهُمۡ وَ انۡتَظِرۡ اِنَّهُمۡ مُّنۡتَظِرُوۡنَ

  • #2
    তাদের প্রয়োজন ছিল এমন নাগরিক—যারা প্রশ্ন করবে না, বরং পালন করবে; যারা স্বপ্ন দেখবে, কিন্তু নির্ধারিত সীমার ভেতরেই।
    ধনী দেশগুলোর টেকনোক্র্যাটরা তখন স্কুলে কোটি কোটি টাকা ঢালেন, আর সেখানে ডিজনির চরিত্রে সাজানো ক্লাসরুম দেখা যায়—যা দেখতে যতই মজার হোক, ভেতরে আসলে সেই একঘেয়ে, প্রাণহীন ব্যবস্থারই বহিঃপ্রকাশ।
    মাশাআল্লাহ সুন্দর বিশ্লেষণ, আল্লাহ তাআলা আপনার মেধাকে সত্যের উপর রাখুন, এবং সত্যের জন্য কবুল করুন।

    প্রিয় ভাই! এখানে 'ডিজনির চরিত্রের' কথা বলেছেন,ডিজনি টা আসলে কে ছিল? আর ডিজনির চরিত্রই বা কি?

    আরেকটি বিষয়ে জানার ছিল, তা হলো, বর্তমানে আমাদের স্কুল কলেজে যে বিষয়গুলো পড়ানো হয়, যেমন; পদার্থ বিজ্ঞান রসায়ন ইত্যাদি আধুনিক জিহাদের ক্ষেত্রে এগুলো কতটুকু সাহায্যকারী? মানে আমরা আমাদের একাডেমিক শিক্ষা থেকে জিহাদের ক্ষেত্রে কিভাবে সহায়তা নিতে পারবো! এ বিষয়ে সুযোগ থাকলে কিছু জানাবেন।
    আল্লাহ তাআলা আপনার জন্য সহজ করে দিন।
    আমীন! ইয়া রব্বান-নাবিয়্যীন!
    ওয়া ঈবাদিকাল-মুখলিসীন!




    Comment


    • #3
      abdul-Gafur ভাই,

      আসসালামু আলাইকুম ওয়া রহমাতুল্লাহ

      ডিজনি মূলত বাচ্চাদের কার্টুন জগতের প্রধান উৎস, যেমন—মিকি মাউস, মিনি মাউস ইত্যাদি জনপ্রিয় চরিত্র।
      আপনি যদি বাংলাদেশের দামী-বিলাসবহুল স্কুলগুলোতে যান, দেখবেন—সেখানে ক্লাসরুমগুলো সাজানো হয়েছে এইসব ডিজনির কার্টুন চরিত্র দিয়ে।
      আমি মূলত এই বাস্তবতাটিই বোঝাতে চেয়েছি।

      ভাই, আপনার আরেকটি প্রশ্নের উত্তর একটু সময় নিয়ে দিতে হবে।
      ইনশাল্লাহ অতি সত্ত্বর তা দেওয়ার চেষ্টা করবো।।​
      فَاَعۡرِضۡ عَنۡهُمۡ وَ انۡتَظِرۡ اِنَّهُمۡ مُّنۡتَظِرُوۡنَ

      Comment


      • #4
        ওয়া আলাইকুমুসসালাম ওয়া রহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহ
        Ibnul Irfan ভাই!


        ভাই, আপনার আরেকটি প্রশ্নের উত্তর একটু সময় নিয়ে দিতে হবে। ইনশাল্লাহ অতি সত্ত্বর তা দেওয়ার চেষ্টা করবো।।​
        ইনশাআল্লাহ ভাই,
        আল্লাহ তাআলা আপনাকে তাওফিক দিন
        আমীন!

        জাযাকাল্লাহু খাইরান!

        Comment


        • #5
          Originally posted by abdul-Gafur View Post

          বর্তমানে আমাদের স্কুল কলেজে যে বিষয়গুলো পড়ানো হয়, যেমন; পদার্থ বিজ্ঞান রসায়ন ইত্যাদি আধুনিক জিহাদের ক্ষেত্রে এগুলো কতটুকু সাহায্যকারী? [/B]মানে আমরা আমাদের একাডেমিক শিক্ষা থেকে জিহাদের ক্ষেত্রে কিভাবে সহায়তা নিতে পারবো! এ বিষয়ে সুযোগ থাকলে কিছু জানাবেন।
          একাডেমিক শিক্ষা থেকেই জিহাদের সর্বোচ্চ সহায়তা সম্ভব। সংক্ষেপে নিচে কিছু উদাহরণ পেশ করছি-

          ১। প্রজেক্ট আবাবীল

          ড মুহাম্মদ যুয়ারি রহিমাহুল্লাহ। তিউনিশিয়ান এরোনটিক্যাল ইঞ্জিনিয়ার। অসম্ভব মেধাবী এই যুবক নিজের যোগ্যতাকে পুরোটাই জিহাদের কাজে ব্যয় করেছেন।২০১৪ সালে উনার বানানো ড্রোন আবাবীল-১ সর্বপ্রথম ইসরায়েলের বিরুদ্ধে ব্যাবহৃত হয়। পাশাপশি সাবমেরিন বানানোর কাজ ও শেষ পর্যায়ে ছিল।স্বল্প রিসোর্স দিয়ে নিজের প্রতিষ্ঠিত ফ্লাইং এসোসিয়েশন থেকে ৩২০ টি ড্রোন বানান যেগুলোর ওজন ছিলো মাত্র ৪ কেজি!

          মুসলিমরা এই মহান মুজাহিদকে না চিনলেও মোসাদ ঠিকই চিনেছিলো। তাই ২০১৬ সালে ৮ জন হত্যাকারী দ্বারা ২০ টি বুলেটে উনার দেহ ঝাঁঝরা করে দেওয়া হয়।

          ২। উমর !

          অদম্য প্রতিভাবান এই যুবক প্রোগ্রামিং ও হ্যাকিং এর দ্বারা ইসরাইলের আয়রন ডোম গুলো অকার্যকর করে দিয়েছিলো। যার ফলে যে আয়রন ডোম প্রতিরক্ষা করার কথাছিলো,সেটাই ইসরায়েলের মরণদূত হয়ে দাড়ায়।

          ৩। ডাক্তার সারবুলন্দ যুবায়ের খান রহিমাহুল্লাহ

          ডক্টর সাহেব রহিমাহুল্লাহ চিকিৎসার ময়দানে ইমারত ইসলামিয়ার আমলে, ইমারতের প্রথম কালে এবং পুনরায় খোরাসানের গোত্রীয় এলাকায় জিহাদের সময়টাতেও বিরাট অবদান রেখেছেন। তিনি দল মত নির্বিশেষে সকল মুজাহিদ এমনকি ওই অঞ্চলে বসবাসরত সকল মুসলিমের চিকিৎসক ছিলেন। তীব্র বোমা বর্ষণ হোক কিংবা গরমের কাঠফাটা রোদ, দিন হোক কিংবা রাত দুপুর, নিরাপত্তার অবস্থা হোক কিংবা ড্রোন মিসাইলের বোমাবর্ষণ, বসতিতে পাকিস্তানি বর্বর সেনাবাহিনীর আর্টিলারির বোমাবর্ষণ হোক কিংবা অন্যায় কারফিউ— ডক্টর সাহেব রহিমাহুল্লাহ সদা প্রস্তুত এবং প্রতি মুহূর্তে মুজাহিদীনের নুসরতের জন্য তৈরি থাকতেন। তার ঘরের দরজা সর্বদা সকল অসুস্থ ব্যক্তির জন্য খোলা থাকতো। তিনি পূর্ণ আত্মবিশ্বাসের সাথে অন্ত্র, হাড় এবং শরীরের গভীর ক্ষতগুলিতে কয়েক ঘণ্টাব্যাপী অপারেশন করতেন।
          বোমাবর্ষণ এবং ড্রোন হামলা সত্ত্বেও যেখানেই রোগী দেখার জন্য কিংবা অপারেশনের জন্য ডাক্তার সাহেবকে ডাকা হতো, তিনি পৌঁছে যেতেন। ডজন ডজন ড্রোন মাথার উপর ঘোরাফেরা করতো কিন্তু তিনি নিশ্চিন্তে অপারেশনে ব্যস্ত থাকতেন। আল্লাহ তাআলা তার হাতে শেফা ও বরকত রেখেছিলেন। দেখা গেল, কেউ গভীর ক্ষত নিয়ে এলো, অন্ত্র কাটা, শরীরের এমন কোনো অংশ নেই যেখানে গুলি লাগেনি; কিন্তু তবুও আল্লাহর রহমতে ডাক্তার সাহেব রহিমাহুল্লাহর চিকিৎসায় খুব দ্রুতই এমন ব্যক্তিরা সুস্থ হয়ে উঠতেন। এমনকি গোত্রীয় অঞ্চলের বড় সরকারি হসপিটালের ডাক্তারও যদি কোনো রোগীর চিকিৎসার ব্যাপারে হতাশ হয়ে যেতেন, তাকে বলতেন, "লোয়াড়ার’ পাহাড়ে একজন পাঞ্জাবি ডাক্তারের ঘর রয়েছে। সেখানে চলে যান। ইনশাআল্লাহ সুস্থ হয়ে উঠবেন। কখনও সরকারি হসপিটালে কোনো আহত ব্যক্তির হাত বা পা কাটার প্রয়োজন দেখা দিলেও ওই ব্যক্তি ডাক্তার সাহেব রহিমাহুল্লাহর কাছে গেলে অঙ্গ কাটা ছাড়াই সুস্থ হয়ে উঠতেন। ডাক্তার সাহেব রহিমাহুল্লাহর হাসপাতাল হতো কখনও পাহাড়ের গুহায় আবার কখনও মাটির গর্ভে। কাঠের সাধারণ তক্তা দিয়ে অপারেশন টেবিল তৈরি করা হতো এবং ডাক্তার সাহেবের বসার জন্য কখনও ‘ওয়াটার ক্যান’ রাখা হতো, আলোর জন্য ছোটো ছোটো বাতি জ্বালানো হতো, চিকিৎসার সাধারণ সরঞ্জামাদি এবং আধুনিক মেশিনারি না থাকা সত্ত্বেও আল্লাহ তার মোবারক হাতে অনেক ঝুঁকিপূর্ণ আহত ব্যক্তিকে শেফা দান করেছিলেন। বিষয়টি সত্যিই বিস্ময়কর।
          ডাক্তার সাহেব রহিমাহুল্লাহ চিকিৎসার নতুন নতুন সূত্র তৈরি করতেন এবং কঠিন সময়ে সবচেয়ে কম সরঞ্জাম ব্যবহার করে যথাসম্ভব সংক্ষিপ্ততম সময়ে বড় বড় কাজ করার মূলনীতি তৈরি করতেন। তিনি বলতেন, এসব কিছু শুধু আল্লাহর রাস্তায় হিজরত করার এবং দুনিয়া ত্যাগ করার সুফল।
          ২০১৪ সালে পাক আর্মি অন্যায়ভাবে ওয়াজিরিস্তানে বর্বর হামলা চালায়। সে সময় তার কাছে দৈনিক কয়েকজন করে আহতকে নিয়ে আসা হতো, যাদের মাঝে শিশু নারী সহ মুজাহিদীন এবং জনসাধারণ সব শ্রেণির লোক থাকতেন। মার্কিন ড্রোন মিসাইল হামলার আহতরাও থাকতেন, আবার পাকিস্তানি জেট বিমানের নৃশংস বোমা হামলার আহতরাও থাকতেন, পাশবিক চরিত্রের পাকিস্তানি আর্টিলারি বাহিনীর কারণে ক্ষতিগ্রস্ত লোকেরাও থাকতেন, আবার যুদ্ধের কারণে দুর্ভিক্ষে দুর্বল অসুস্থ ব্যক্তিরাও তার কাছে আসতেন।

          নাপাক আর্মিও উনার ২ সন্তান, ফুপা মেজর আদিল সহ শহীদ করে দেয়।​

          বন্দুক চালানেওয়ালা তো অনেক আছে,কিন্তু নির্দিষ্ট ফিল্ডে দক্ষ মুজাহিদের সংখ্যা দুঃখ জনক ভাবে অনেক কম। তাই প্রত্যেক ভাই এর উচিত কোন না কোন বিষয়ে পারদর্শিতা অর্জন করা। এখন অনলাইনের যুগে সেটা অনেক সহজ,সেটা যদি কোন একটা ল্যাংগুয়েজ শিখে হয় তবুও।

          ইঞ্জিনিয়ারিং ও মেডিক্যাল সেক্টর থেকে জিহাদি ফিল্ডে আশাতীত উন্নয়ন এর সুযোগ রয়েছে,যদি সেরকম দক্ষ মুজাহিদ ও দক্ষ আমির থাকেন যিনি বিষয়গুলোর প্রয়োজনীয়তা বুঝবেন ও ম্যানেজমেন্ট করতে পারবেন ।

          Comment


          • #6
            ইয়াকুব ইবনে ওমর ভাই,
            আসসালামু আলাইকুম ওয়া রহমাতুল্লাহ,

            মাশাল্লাহ ভাই, চমৎকারভাবে উপস্থাপন করছেন। কিন্তু, এই বিষয়ে শায়খদের সরাসরি অবস্থান কি?
            فَاَعۡرِضۡ عَنۡهُمۡ وَ انۡتَظِرۡ اِنَّهُمۡ مُّنۡتَظِرُوۡنَ

            Comment


            • #7
              আসসালামু আলাইকুম ওয়া আলাইকুম

              ​​​​​​বিগত ২৯/১১/২০১৮ তারিখে এই ফোরামে আবু বকর সিদ্দিক নামে এই ভাই 'জাগতিক জ্ঞান-বিজ্ঞানের চর্চাও যেভাবে নেক আমল হয় মাওলানা মুহাম্মাদ আব্দুল মালেক' এই শিরোনামে একটি সংগৃহীত লেখা শেয়ার করেন। ভাইয়ের পোস্টের লিংক:

              Last edited by Munshi Abdur Rahman; 7 hours ago.
              فَاَعۡرِضۡ عَنۡهُمۡ وَ انۡتَظِرۡ اِنَّهُمۡ مُّنۡتَظِرُوۡنَ

              Comment


              • #8
                ওয়ালাইকুম ওয়াসসালাম Ibnul Irfan ভাই।
                আপনার প্রশ্ন টা আরেকটু খুলে বললে বুঝতে সুবিধা হত আমার জন্য !

                Comment


                • #9
                  ইয়াকুব ইবনে ওমর ভাই,
                  আসসালামু আলাইকুম ওয়া রহমাতুল্লাহ

                  আপনার প্রশ্ন টা আরেকটু খুলে বললে বুঝতে সুবিধা হত আমার জন্য !
                  আমি বলতে চাচ্ছিলাম এই বিষয়ে আমাদের শায়খদের মতামত compile করে দিলে ভালো হত এবং আমাদের অনেক উপকার হতো। ভাই এই শায়খদের কথা লেখা বা বয়ান যদি আপনার জানা থাকে তাহলে তা জানাতে পারেন।

                  মাআসসালাম।।
                  فَاَعۡرِضۡ عَنۡهُمۡ وَ انۡتَظِرۡ اِنَّهُمۡ مُّنۡتَظِرُوۡنَ

                  Comment


                  • #10
                    আম ভাবে আমাদের শায়খ দের থেকে যেসব নাসীহাহ/বয়ান আসে তা আম ধরনেরই। সেখানে এরকম স্পেসিফিক বিষয়গুলোর উল্লেখ আমার নজরে পড়েনি। খুসুসি নাসীহায় এরকম নির্দেশনা থাকার প্রবল সম্ভাবনা আছে !
                    তবে যেসব ভাইরাই অতীতে এরকম যোগ্যতা নিয়ে জিহাদের খেদমত করতে চেয়েছেন তাদের প্রত্যেককেই সাদরে গ্রহণ করা হয়েছে।

                    Comment

                    Working...
                    X