Announcement

Collapse
No announcement yet.

শাহবাগীরা জুলাইয়ের শত্রু || মুনশি আব্দুর রহমান

Collapse
This is a sticky topic.
X
X
 
  • Filter
  • Time
  • Show
Clear All
new posts

  • শাহবাগীরা জুলাইয়ের শত্রু || মুনশি আব্দুর রহমান

    শাহবাগীরা জুলাইয়ের শত্রু
    মুনশি আব্দুর রহমান

    গতরাতে, যখন কুয়েটের ভিসি অপসারণের ক্যাম্পাসগুলো উত্তাল হয়ে উঠেছে, তখনই আবার এক ঘটনা ঘটে যায় রাতের অন্ধকারে। দুইজনকে দেখা যায়, দেয়ালে আঁকা জুলাইয়ের সেই প্রতিরোধী গ্রাফিতিগুলো মুছে দিতে ব্যস্ত। কিন্তু এবার তাদের থামিয়ে দেয় মিছিলকারীরা। ধরা পড়ে যাওয়া সেই দুইজন ছাত্র ইউনিয়নের সদস্য বলে জানা গেছে। এরা আগেও একাধিকবার জুলাই স্মৃতি মুছে দেওয়ার অপচেষ্টা করেছে।

    প্রশ্ন উঠছে—এদের এজেন্ডা আসলে কী? কেন বারবার জুলাইয়ের গ্রাফিতিগুলোর ওপর আঘাত হানা হচ্ছে?

    এই প্রশ্নের উত্তর হয়তো ইতিহাসই বলে দিচ্ছে। বিগত ১৭ বছর ধরে এরা এক প্রকার নির্লজ্জভাবে ইসলাম-বিরোধী এজেন্ডা বাস্তবায়নে নিজেদের নিয়োজিত রেখেছে। তারা বরাবরই আওয়ামী লীগের ইসলাম-বিরোধী এবং জনবিরোধী নীতিমালাকে সমর্থন জানিয়ে এসেছে। তাদের কার্যক্রমে একের পর এক প্রতিফলিত হয়েছে ভারতের আধিপত্যবাদী রাজনীতির ছায়া। এমনকি বাংলাদেশের সংস্কৃতি, রাজনীতি, ধর্মীয় অনুভূতি—সব কিছুতেই তারা ঠেলে দিতে চেয়েছে একপেশে, সেক্যুলার কট্টর মতবাদ।

    এই মুহূর্তে ছাত্র-জনতার সামনে সবচেয়ে বড় দায়িত্ব হলো এই শাহবাগীদের দেশ ও ইসলাম বিরোধী ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানো। শাহবাগীদের মুখোশ উন্মোচন করা এবং তাদের ইসলাম ও দেশ বিরোধী প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ অপচেষ্টার বিরুদ্ধে সামাজিক প্রতিরোধ গড়ে তোলা। এদের বিরুদ্ধে এখনই সময় বলিষ্ঠ অবস্থান নেওয়ার। এই যুদ্ধে নিরব থাকা মানেই পরাজয়কে আমন্ত্রণ জানানো, ইতিহাসের কলমকে থামিয়ে দেওয়া। কেননা শাহবাগীরা কখনো বাংলাদেশের মুসলিম জাতিসত্তাকে মেনে নিতে পারে না। বরং তারা ভারত বিরোধী যে কোন বিষয়কে মুছে দিতে তৎপর থাকে।


    লিংক- https://www.facebook.com/share/v/1BTMXzmykK/
    Last edited by Munshi Abdur Rahman; 2 weeks ago.
    “ধৈর্যশীল, সতর্ক ব্যক্তিরাই লড়াইয়ের জন্য উপযুক্ত।”
    -শাইখ উসামা বিন লাদেন রহিমাহুল্লাহ

  • #2
    সম্মানিত Munshi Abdur Rahman ভাই,
    আসসালামু আলাইকুম ওয়া রহমাতুল্লাহ,


    এই মুহূর্তে ছাত্র-জনতার সামনে সবচেয়ে বড় দায়িত্ব হলো এই শাহবাগীদের দেশ ও ইসলাম বিরোধী ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানো। শাহবাগীদের মুখোশ উন্মোচন করা এবং তাদের ইসলাম ও দেশ বিরোধী প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ অপচেষ্টার বিরুদ্ধে সামাজিক প্রতিরোধ গড়ে তোলা। এদের বিরুদ্ধে এখনই সময় বলিষ্ঠ অবস্থান নেওয়ার।


    জুলাই বিপ্লব ইসলামি কোনো বিপ্লব নয়—এ কথা এখন বলা নয়, বোঝা দরকার। এরা কখনোই জিহাদি শায়খদের আকীদা, মানহাজ কিংবা ফিকরের প্রতি আনুগত্য প্রকাশ করেনি—করার প্রশ্নই ওঠে না। তারা সরাসরি ধর্মনিরপেক্ষতার জাহিলি পতাকা উড়িয়ে বলেছে: “আল্লাহর নয়, মানুষের তৈরি শাসনই মুক্তির পথ।” যারা দ্বীনকে বন্দী করতে চায় সংসদ আর সংবিধানের গহ্বরে, তাদের কাছে শাহবাগীদের মুখোশ খুলবে—এমন বিশ্বাস অলীক কল্পনা নয় কি?

    শাহবাগ আর জুলাই বিপ্লব—দুই নাম, এক দর্শন। পার্থক্য কেবল শ্লোগানে, লক্ষ্য কিন্তু অভিন্ন: ইসলামী রাষ্ট্র ধারণাকে মাটিচাপা দিয়ে ধর্মকে নিছক ব্যক্তিগত এক চুক্তিতে নামিয়ে আনা। একজন বলে ‘ধর্মহীনতা চাই’, আরেকজন বলে ‘ধর্ম থাক, কিন্তু ঘরে থাক।’ আপনি কাকে দিয়ে কার মুখোশ উন্মোচনের আশা করছেন?

    এটা হতাশা নয়, বরং নির্মম বাস্তবতা। আমরা যারা দ্বীনের পক্ষে কথা বলি, ইসলামী রাষ্ট্রের স্বপ্ন দেখি, তারা কোথায় ছিলাম যখন ইতিহাসের বাঁক বদলে যাচ্ছিল? জুলাই বিপ্লবের দিনগুলোতে আমরা ছিলাম নিঃশব্দ, বিচ্ছিন্ন, দুর্বল। জনতার মাঝে আমাদের কোনো ভাষা ছিল না, নেতৃত্ব ছিল না, কাঠামো ছিল না। এখন সেই শূন্যতার ভার চাপাচ্ছেন তাদের ওপর, যারা আদতেই আমাদের ময়দানের লোক নয়?

    এখন আমরা এমন জায়গায় এসে দাঁড়িয়েছি, যেখানে শত্রুর কোনো কদম শব্দেও মনে হয়—“আহা, বুঝি এবার আমাদের কথা বলবে!” এটা আত্মমর্যাদার সংকট। পরাজিত চেতনা এতটাই গ্রাস করেছে যে, কারো মুখে ইসলাম শব্দটুকু শুনলেই ভেবে নিই, তারা বুঝি আমাদের পক্ষে। অথচ তারা নিজেরাই ইসলামের রাজনৈতিক রূপ, উম্মাহর আকীদা ও শারিয়াহর শাসনব্যবস্থাকে প্রত্যাখ্যান করেছে।

    আমরা যেই যুদ্ধের সূচনা করিনি, সেই যুদ্ধের ফলাফল নিয়ে আফসোস করার অধিকার কীভাবে রাখি? প্রথম সারিতে দাঁড়াইনি, নেতৃত্বে ছিলাম না, জনতার হৃদয়ে জায়গা বানাতে পারিনি—তবু আমরা দোষ খুঁজি তাদের মাঝে, যারা কখনোই আমাদের ঘরের লোক ছিল না।

    আমার কথাগুলো হয়তো আপনার কাছে কিছুটা কঠিন কিংবা কষ্টদায়ক মনে হতে পারে। যদি তাতে আপনাকে আহত করে থাকি, আমি আন্তরিকভাবে ক্ষমা প্রার্থনা করছি।

    তবে ভাই, আমার কথা একেবারে উড়িয়ে দেওয়ার মতো নয়—এইটুকু স্বীকার করবেন বলে আশা করি। কারণ, আমরা কেউই সত্যের দাবিদার এককভাবে নই, কিন্তু আলোচনা, সমালোচনা আর আত্মসমালোচনার ভেতর দিয়েই তো সঠিক পথটি স্পষ্ট হয়। আমি কেবল নিজের হৃদয়ের কথাটুকু বলেছি, যেন অন্ধ আবেগ নয়, বরং যুক্তি ও বাস্তবতার আলোকে আমরা নিজেদের অবস্থান নতুন করে পর্যালোচনা করতে পারি।

    ভুল যদি হয়, সংশোধন করার দরজা খোলা রাখতে চাই; কিন্তু কিছু যদি সত্য হয়, তা যেন মাটির নিচে চাপা না পড়ে—এই চেষ্টাটুকুই ছিল।
    فَاَعۡرِضۡ عَنۡهُمۡ وَ انۡتَظِرۡ اِنَّهُمۡ مُّنۡتَظِرُوۡنَ

    Comment


    • #3
      ওয়া আলাইকুমুস সালাম ওয়া রহমাতুল্লাহ
      প্রিয় Ibnul Irfan ভাই, আপনার মন্তব্য মনোযোগ দিয়ে পড়েছি। আপনার আন্তরিকতার প্রতি আমার সম্মান আছে। তবে কিছু বিষয়ের সংশোধন ও পরিস্কার ব্যাখ্যা প্রয়োজন বলে মনে করছি।

      প্রথমত, আপনার মন্তব্য থেকে মনে হচ্ছে, আপনি হয়তো আমার পোস্টের বক্তব্য ঠিকমতো অনুধাবন করতে পারেননি। আপনার মন্তব্যের অনেকটা অংশ এমন কিছু অনুমান ও ব্যাখ্যার উপর দাঁড়িয়ে, যা আমার মূল পোস্টের উদ্দেশ্যের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়।

      পোস্টে কোথাও এনসিপি বা কোনো নির্দিষ্ট সেক্যুলার রাজনৈতিক দলকে সম্বোধন করে আহ্বান জানানো হয়নি। বরং পোস্টটি সাধারণ ছাত্র জনতার প্রতি ছিল—তাদের সেই অংশের প্রতি, যারা অন্তরে ইসলামকে ভালোবাসে, যারা শাহবাগী ইসলামবিদ্বেষীদের আসল রূপ চিনতে প্রস্তুত।

      জুলাইয়ের ছাত্র জনতার মধ্যে নানা রকম মানুষ ছিল—জিহাদ সমর্থক লোকজনও ছিল, শরীয়াহপন্থী অনলাইন এ্যাক্টিভিষ্টদের অনুসারীরাও ছিলেন, জুলাইয়ের শহীদ আবু সাঈদ ভাইও ছিলেন, অনেক সাধারণ মুসলিমও ছিলেন। সুতরাং এই আন্দোলনের অংশগ্রহণকারী শুধু সেক্যুলাররা একা নয়, ছাত্র জনতা মানেই সেক্যুলাররা নয়। আমরা ইসলামপন্থী এবং সাধারণ মুসলিম অংশের সেই ছাত্র জনতার কাছে আহ্বান করেছি শাহবাগী ও ইসলামফোবিকদের মুখোশ উন্মোচনের জন্য। এটা একটি সঠিক ও ন্যায্য আহ্বান ছিল।

      আপনি পোস্টের বক্তব্য এমনভাবে ব্যাখ্যা করেছেন যেন আমরা জুলাইয়ের সেক্যুলার নেতৃত্বের কাছে ইসলামী বিপ্লবের আশা করেছি। এ ধরনের বোঝাপড়া মূল লেখার প্রকৃত রূপরেখাকে বিকৃত করে। এটি দুর্বল পাঠপদ্ধতি ও বক্তব্যের সারমর্ম যথাযথভাবে অনুধাবন করতে না পারার ফলাফল।

      আর, "জুলাই বিপ্লব আর শাহবাগ একই দর্শনের দুটি নাম"—আপনার এই দাবিও সঠিক নয়। শাহবাগ আন্দোলন ছিল খাঁটি ইসলামবিদ্বেষী একটি কর্মসূচি। এটা কেবলমাত্র ইসলামবিদ্বেষীরা পরিচালনা করেছিল। শাহবাগের পটভূমিতে শাপলা চত্বরে রক্তপাত ঘটেছে, ভারতের হস্তক্ষেপ বেড়েছে, ইসলামপন্থীদের নিপীড়ন আরও তীব্র হয়েছে।

      অন্যদিকে, জুলাই বিপ্লব ছিল হাসিনার পতনের উদ্দেশ্যে একটি গণ-আন্দোলন, যেখানে ইসলামপন্থী ও সাধারণ সেক্যুলাররা উভয়েই অংশগ্রহণ করেছে। এর ফলশ্রুতিতে কিছু সময়ের জন্য হলেও রাষ্ট্রীয় দমন–পীড়ন দুর্বল হয়েছিল এবং ইসলামপন্থীদের জন্য কিছুটা "ব্রিথিং স্পেস" তৈরি হয়েছিল।

      এটা স্পষ্ট যে—এই বিপ্লব পুরোপুরি আমাদের হাতের মুঠোয় আসেনি। এটা দিয়ে সরাসরি ইসলামী রাষ্ট্রও কায়েম হয়নি। সশস্ত্র বিপ্লব ছাড়া সিস্টেম পরিবর্তন হয় না—এটা সকলেই জানে। হ্যাঁ, আপনি যদি বলতেন-জুলাই আন্দোলনের পরে বিএনপি/এনসিপির মত যে দলগুলো আন্দোলনের ফসল কুক্ষিগত করেছে তারাও সেক্যুলার, শাহাবাগীরাও সেক্যুলার তাহলে আপনার বক্তব্য কিছুটা যথার্থ হত। কিন্তু তারপরেও একটা গুরুতেওপূর্ণ বিষয় হল- আবু লাহাবও কাফির, আবু তালিবও কাফির- কিন্তু দুজন সমান নয়। মক্কাও ইসলামী রাষ্ট্র ছিল না, হাবশাও ইসলামী রাষ্ট্র ছিল না। কিন্তু মক্কায় দমন-পীড়ন নির্যাতন ব্যাপক হওয়ায় তুলনামুলক নিরাপদ হাবাশায় সাহাবায়ে কেরাম রাদিয়াল্লাহু আনহুম হিজরত করেছেন।

      এই আন্দোলনকে পূর্ণাঙ্গ বিপ্লব কিংবা ইসলামী বিপ্লব মনে করা যাবে না, এর সমস্ত ফসল ও ফলাফল শরীয়াহকামীদের হাতে আসেনি এটাও মাথায় রাখতে হবে, পাশাপাশি এই আন্দোলনের কিছু ইতিবাচক দিকগুলোও বুঝা জরুরী। কারণ এই আন্দোলনের ফলেই, যদিও শেষ পর্যন্ত সেক্যুলাররা ফসল ঘরে তুলেছে, তবুও ইসলামপন্থীরা কিছু সময়ের জন্য গুম-খুন ভিত্তিক নিপীড়ন থেকে হাঁফ ছাড়ার সুযোগ পেয়েছে। নিজেদেরকে গুছিয়ে নিয়ে আরো শক্তিশালী করার সুযোগ পেয়েছে। তাওহীদ ও শরীয়াহর দাওয়াত আরো বেশি করে সমাজে পৌঁছে দেয়ার সুযোগ পেয়েছে। রাষ্ট্রীয়ভাবে যাকে তাকে গুম খুন করে ফেলার সংস্কৃতি সাময়িকভাবে হলেও দুর্বল হয়েছে। এগুলোর জন্য আমরা ইউনুসকে কৃতিত্ব দিচ্ছি না, কারণ এখন যেই সরকারই আসুক, আগের মত পূর্ণমাত্রায় গুম-খুনের সংস্কৃতিতে এত দ্রুত ফিরতে পারবে না, কারণ এসবের বিরুদ্ধে গণমানুষের মাঝে কিছুটা সচেতনতা তৈরি হয়েছে, এসব প্রতিরোধের উদ্দেশ্যে মানুষ জুলাইয়ে রক্ত দিয়েছে।

      আজকে সফট সেক্যুলারিজম, আমেরিকার প্রভাব, ইউনুস টাইপের লিবারেলদের উত্থান—এসব বাস্তবতা দেখা যাচ্ছে। জুলাই আন্দোলন যেহেতু পূর্ণাঙ্গ ও সশস্ত্র বিপ্লব ছিল না, সিস্টেম যেহেতু অপরিবর্তিত আছে তাই এই ধরনের সমস্যাগুলো যে তৈরি হবে সেটা মুজাহিদ বিশ্লেষকরাও আগেই অনুধাবন করেছেন। আলহামদু লিল্লাহ, এই সমস্যাগুলোর ব্যাপারে মুজাহিদ ভাইয়েরা গাফেল নন, তারা সেক্যুলারদের প্রতি বিন্দুমাত্রও মুগ্ধ নন। আমাদের দায়িত্ব হলো- জনতাকে সচেতন করা যে, এসব আমাদের গন্তব্য নয়। বরং এই সিস্টেমের অবসান ঘটানো আমাদের জিম্মাদারী। আমাদের লক্ষ্য ইসলামী শরীয়াহভিত্তিক শাসন কায়েম করা।

      এই দাওয়াতই তো আমাদের শাইখরা ও দায়ীরা দিয়ে যাচ্ছেন। জিহাদী দায়ীগণ ভারতের গোলামি কিছুটা কমার পর থেকে নিরবচ্ছিন্নভাবে মার্কিন প্রভুত্বের বিরুদ্ধে কথা বলে যাচ্ছেন।

      কোনো বক্তব্য বা ঘটনাকে সঠিকভাবে পড়া ও বিশ্লেষণ করা খুবই গুরুত্বপূর্ণ—এমনকি ভাইয়েরা যদি সুপরিচিত ও আন্তরিক হন তবুও।

      আমি আলোচনা ও পর্যালোচনাকে স্বাগত জানাই। কিন্তু সংশোধন তখনই সম্ভব, যখন বক্তব্যের যথার্থতা সঠিকভাবে অনুধাবন করা হয়। আমি আশা করি আপনি আমার কথাগুলো উদার মনে গ্রহণ করবেন। আল্লাহ আমাদের সবাইকে সত্য বোঝার এবং সেই অনুযায়ী আমল করার তাওফীক দান করুন।​
      “ধৈর্যশীল, সতর্ক ব্যক্তিরাই লড়াইয়ের জন্য উপযুক্ত।”
      -শাইখ উসামা বিন লাদেন রহিমাহুল্লাহ

      Comment


      • #4
        সম্মাণিত Munshi Abdur Rahman ভাই,

        আসসালামু আলাইকুম ওয়া রহমাতুল্লাহ,

        ভুল স্বীকার করে নেওয়ার মতো আনন্দ সম্ভবত আর কোনো কিছুর সঙ্গে তুলনীয় নয়। এতে যেমন এক ধরনের মানসিক মুক্তি আসে, তেমনি নিজের সীমাবদ্ধতাকে মেনে নেওয়ার সাহসও প্রকাশ পায়। আপনি হয়তো ঠিকই বলেছেন — আমি হয়তো আপনার বক্তব্য সম্পূর্ণভাবে হৃদয়ঙ্গম করতে পারিনি। তবে আপনার কথার গভীরতা থেকেই আমার মনে কিছু নতুন প্রশ্নের জন্ম হয়েছে, যেগুলো ব্যাখ্যার প্রেক্ষিতে আরও খোলাসা চায়।

        "পোস্টে কোথাও এনসিপি বা কোনো নির্দিষ্ট সেক্যুলার রাজনৈতিক দলকে সম্বোধন করে আহ্বান জানানো হয়নি। বরং পোস্টটি ছিল সাধারণ ছাত্র জনতার প্রতি—তাদের সেই অংশের প্রতি, যারা অন্তরে ইসলামকে ভালোবাসে, যারা শাহবাগী ইসলামবিদ্বেষীদের আসল রূপ চিনতে প্রস্তুত।"
        আপনি ঠিকই বলেছেন, ভাই। আমি হয়তো আপনার এই বক্তব্য সম্পূর্ণভাবে উপলব্ধি করতে পারিনি। তবে এরপরের অংশটিই আমাদের সামনে একটি গুরুত্বপূর্ণ নতুন প্রশ্ন উত্থাপন করছে—যেখানে আপনি বলেছেন...

        "জুলাইয়ের ছাত্র জনতার মধ্যে নানা রকম মানুষ ছিল—জিহাদ সমর্থক লোকজনও ছিল, শরীয়াহপন্থী অনলাইন এ্যাক্টিভিষ্টদের অনুসারীরাও ছিলেন, জুলাইয়ের শহীদ আবু সাঈদ ভাইও ছিলেন, অনেক সাধারণ মুসলিমও ছিলেন। সুতরাং এই আন্দোলনের অংশগ্রহণকারী শুধু সেক্যুলাররা একা নয়, ছাত্র জনতা মানেই সেক্যুলাররা নয়। আমরা ইসলামপন্থী এবং সাধারণ মুসলিম অংশের সেই ছাত্র জনতার কাছে আহ্বান করেছি শাহবাগী ও ইসলামফোবিকদের মুখোশ উন্মোচনের জন্য। এটা একটি সঠিক ও ন্যায্য আহ্বান ছিল।"
        আমার প্রশ্ন হলো, ভাই—
        আপনার কথা নিঃসন্দেহে সত্য। তবে বাস্তবতা হলো, আমরা কি বিগত মাসগুলোতে এই ন্যারেটিভ সত্যিকার অর্থে নির্মাণ করতে পেরেছি?
        জুলাই বিপ্লবের সাথে সম্পৃক্ত কোনো ব্যক্তি কি আজ পর্যন্ত 'বিপ্লবের শেয়ারহোল্ডার' হিসেবে ইসলামের পক্ষে একটি কথা বা অন্তত একটি সুপারিশও সাহসের সাথে তুলতে পেরেছেন?


        "আপনি পোস্টের বক্তব্য এমনভাবে ব্যাখ্যা করেছেন যেন আমরা জুলাইয়ের সেক্যুলার নেতৃত্বের কাছে ইসলামী বিপ্লবের আশা করেছি।"
        হয়তো আমার লেখায় কিছু দুর্বলতা ছিল, তবে আমি আসলে সেটাই বোঝাতে চাইনি।
        প্রকৃতপক্ষে, মুজাহিদিনরা বা জিহাদি জামাতগুলো কেনই-বা জুলাইয়ের সেক্যুলার নেতৃত্বের কাছে একটি ইসলামী বিপ্লবের আশা করবে? এটি তো একেবারেই বাস্তবতা-বর্জিত কল্পনা হতো।
        তবে এটাও অনস্বীকার্য সত্য যে, বিপ্লবের পর সাধারণ মুসলিম জনতা জিহাদি জামাতগুলোর প্রতি ঝুঁকেনি; বরং তারা অধিকাংশই গণতান্ত্রিক ধারার ইসলামী দলগুলোর দিকে আকৃষ্ট হয়েছে।

        "জুলাই বিপ্লব আর শাহবাগ একই দর্শনের দুটি নাম।"
        এখানে আমি মোটেও জুলাই বিপ্লবের সৈনিকদের কথা বলিনি বরং বলিছি নেতৃত্ব স্থানীয়দের কথা। তাদের আদর্শ আর চিন্তা তো একই।

        "কারণ এই আন্দোলনের ফলেই, যদিও শেষ পর্যন্ত সেক্যুলাররা ফসল ঘরে তুলেছে, তবুও ইসলামপন্থীরা কিছু সময়ের জন্য গুম-খুন ভিত্তিক নিপীড়ন থেকে হাঁফ ছাড়ার সুযোগ পেয়েছে। নিজেদেরকে গুছিয়ে নিয়ে আরো শক্তিশালী করার সুযোগ পেয়েছে। তাওহীদ ও শরীয়াহর দাওয়াত আরো বেশি করে সমাজে পৌঁছে দেয়ার সুযোগ পেয়েছে। রাষ্ট্রীয়ভাবে যাকে তাকে গুম খুন করে ফেলার সংস্কৃতি সাময়িকভাবে হলেও দুর্বল হয়েছে।"
        তা অবশ্যই ভাই। কিন্তু এই অবস্থা আমরা কতদিন৷ ধরে রাখতে পারবো? আপনি জানেন কি? - অলরেডি CTTC থেকে একজন অফিসারকে বরখাস্ত/বলদি করেছে শুধু মাত্র শায়খ হারুন ইজহার ভাইয়ের সাথে অফিসে ডেকে কথা বলার কারণে।

        "সশস্ত্র বিপ্লব ছাড়া সিস্টেম পরিবর্তন হয় না"
        আপনার এই কথাটি শতভাগ সঠিক। এই বিষয়ে কোনো দ্বিমতের অবকাশ নেই, বিশেষ করে যদি আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর সুন্নাহ সম্পর্কে কারো সামান্যতম জ্ঞানও থাকে।

        সম্মানিত ভাই, একটি বিষয় অনুধাবন করা জরুরি—
        জুলাই বিপ্লবের সময়, এবং তারও পূর্ব থেকে, সাধারণ জনগণের মধ্যে হাসিনার প্রতি প্রবল ক্ষোভ জমে উঠেছিল। জুলাই বিপ্লবের নেতৃত্বস্থানীয়রা মূলত সেই ক্ষিপ্ত জনগণকে কেবল দিশা দেখিয়েছে। এর ফলেই এই ক্ষোভ একটি স্রোতের মতো প্রবাহিত হয়ে গণ-অভ্যুত্থান বা বিপ্লবে রূপ নিয়েছে।

        এটি একটি স্বাভাবিক বাস্তবতা—
        যখন কোনো বিপ্লব বা অভ্যুত্থানের বিরুদ্ধে প্রশাসন অথবা সেনাবাহিনী শক্তি প্রয়োগ করে তাকে থামাতে চায়, তখনই পরিস্থিতি সশস্ত্র বিপ্লবে রূপ নেয়।

        সুতরাং, আমাদের যদি যথেষ্ট পরিমাণ দাওয়াতি কাজের মাধ্যমে জনগণকে সচেতন করে, সংগঠিত করে মবিলাইজ করা সম্ভব হয়, তাহলে যখনই কোনো অভ্যুত্থান বা বিপ্লবের সূচনা হবে এবং তা বাধাগ্রস্ত হবে, তখন আমরা সেই স্রোতের ভেতর ঢুকে সঠিক দিকনির্দেশনা দিতে পারবো।

        মানুষের মধ্যে জনসচেতনতা তৈরি করা, বিপ্লবের জন্য তাদের মানসিক প্রস্তুতি তৈরি করা—
        এটাই হচ্ছে আল-কায়েদার ইমারত ও আমাদের শায়েখদের (রহ.) মূল মন্ত্র। এটাই ছিল তাঁদের দাওয়াতি কাজের কৌশল, যার মাধ্যমে তাঁরা চেয়েছিলেন যে আমরা প্রতিটি সম্ভাব্য অভ্যুত্থান বা গণআন্দোলনকে সশস্ত্র ইসলামী বিপ্লবের সম্ভাবনায় রূপান্তরিত করতে পারি।

        জাযাকাল্লাহু খাইর, ভাই।
        আমার লেখার, কথার ও চিন্তার ভুলগুলো ধরিয়ে দেওয়ার জন্য আমি আপনাদের প্রতি কৃতজ্ঞ। আপনাদের প্রতিটি সমালোচনা আমার জন্য অত্যন্ত মূল্যবান, কারণ এটি সংশোধনের পথ খুলে দেয়।
        আমি নির্দ্বিধায় যেকোনো ভুল স্বীকার করতে এবং নিজেকে সংশোধন করতে প্রস্তুত আছি।


        আল্লাহ তাআলা আপনাদের জন্য কল্যাণ ও হিফাজতের ব্যবস্থা করুন এবং আমাদের সবাইকে হক্বের পথে অটুট রাখুন। আমীন।
        فَاَعۡرِضۡ عَنۡهُمۡ وَ انۡتَظِرۡ اِنَّهُمۡ مُّنۡتَظِرُوۡنَ

        Comment


        • #5
          ওয়া আলাইকুমুস সালাম ওয়া রহমাতুল্লাহ
          তবে এটাও অনস্বীকার্য সত্য যে, বিপ্লবের পর সাধারণ মুসলিম জনতা জিহাদি জামাতগুলোর প্রতি ঝুঁকেনি; বরং তারা অধিকাংশই গণতান্ত্রিক ধারার ইসলামী দলগুলোর দিকে আকৃষ্ট হয়েছে।
          জাযাকাল্লাহ Ibnul Irfan ভাই...আপনি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি বাস্তবতার দিকে ইঙ্গিত করেছেন...এই পয়েন্টে আমাদের দুর্বলতা আছে, এতে কোনো সন্দেহ নেই। এই দুর্বলতা স্বীকার করে কাটিয়ে ওঠা জরুরী, যেন ভবিষ্যতের আন্দোলন সংগ্রামের ফলাফল হিসেবে জনগণ শরীয়াহর দিকে ঝুঁকে, গণতন্ত্রের দিকে নয়...। আলোচনা-পর্যালোচনার জন্য আল্লাহ তায়ালা আপনাকে উত্তম প্রতিদান দান করুন।
          “ধৈর্যশীল, সতর্ক ব্যক্তিরাই লড়াইয়ের জন্য উপযুক্ত।”
          -শাইখ উসামা বিন লাদেন রহিমাহুল্লাহ

          Comment


          • #6
            بارك الله في علمك وفكرك
            فَاَعۡرِضۡ عَنۡهُمۡ وَ انۡتَظِرۡ اِنَّهُمۡ مُّنۡتَظِرُوۡنَ

            Comment


            • #7
              মাশাল্লাহ ভাইয়েরা খুবই উত্তম পর্যালোচনা ছিলো আপনাদের।
              আলহামদুলিল্লাহ আমি আপনাদের এই পর্যালোচনা থেকে যা সবক পেলাম তা হলো :
              • কোনো ভাইয়ের কথার সাথে আমার কথা যদি এক না হয় তাহলে উত্তম ভাবে নমনীয়তা বজায় রেখে যেকোনো ভাইয়ের সাথে আলোচনা করবো।
              • আমার ভাইয়ের ভুল হলে স্পষ্ট ভাবে ভাইকে বোঝাব।
              • আর আমার ভুল হলে তা স্পষ্ট ভাবে শিকার (স্বীকার) করে নিব।
              Last edited by Munshi Abdur Rahman; 2 weeks ago.
              [ গুরাবা হয়ে লড়তে চাই, গুরাবা হয়েই শাহাদাহ চাই ]

              Comment


              • #8
                মুহতারাম Ibnul Irfan ভাই​​! আপনার কমেন্ট দেখার পর আমিও কিছু কথা বলা জরুরী মনে করছি। আশা করি আদ- দ্বীন আন নাসিহাহ হিসেবে নিবেন ইনশা আল্লাহ।

                মুহতারাম ভাই! প্রথমত আমি পরিষ্কার করতে চাই যে, আমি যা বুঝলাম, এই লেখাটির পিছনে দাওয়াতি দৃষ্টিভঙ্গি কাজ করেছে। এরপর আসুন, আপনার আপত্তিগুলোর পয়েন্টভিত্তিক কিছু কথা বলি-

                এক. জুলাই বিপ্লব ইসলামি নয়:
                // জুলাই বিপ্লব ইসলামি কোনো বিপ্লব নয়—এ কথা এখন বলা নয়, বোঝা দরকার। এরা কখনোই জিহাদি শায়খদের আকীদা, মানহাজ কিংবা ফিকরের প্রতি আনুগত্য প্রকাশ করেনি—করার প্রশ্নই ওঠে না। তারা সরাসরি ধর্মনিরপেক্ষতার জাহিলি পতাকা উড়িয়ে বলেছে: “আল্লাহর নয়, মানুষের তৈরি শাসনই মুক্তির পথ।” যারা দ্বীনকে বন্দী করতে চায় সংসদ আর সংবিধানের গহ্বরে, তাদের কাছে শাহবাগীদের মুখোশ খুলবে—এমন বিশ্বাস অলীক কল্পনা নয় কি? //

                প্রথম আপত্তির জবাব:

                হ্যাঁ, আমরা স্বীকার করি—জুলাই গণ অভ্যুত্থান নিখাদ ইসলামি বিপ্লব ছিল না। তবে এতে ব্যাপকভাবে ইসলামপন্থীদেরও অংশগ্রহণ ছিল। আপামর মুসলিম জনগণের অংশগ্রহণ ছিল। আবার এটাও মাথায় রাখতে হবে, জাহিলি সমাজেও কিছু পরিবর্তন আসে, যা পরোক্ষভাবে ইসলামের জন্য পথ প্রশস্ত করে। যদি সরাসরি ইসলামী মানহাজের ছাপ না-ও থাকে, তবু যখন কোনো শক্তি অন্যায় বা জুলুমের বিরুদ্ধে দাঁড়ায়, সেখানে মুসলিমরা বিচক্ষণতার সাথে অংশ নিতে পারে অথবা পরিস্থিতিকে নিজেদের দিকে টেনে আনতে পারে। তাই 'সম্পূর্ণ ইসলামি নয়' বলেই একে সম্পূর্ণ অস্বীকার করা বাস্তবতাকে অগ্রাহ্য করার নামান্তর।



                দুই. ধর্মকে ব্যক্তিগত পরিসরে সীমাবদ্ধ করার ষড়যন্ত্র:
                // শাহবাগ আর জুলাই বিপ্লব—দুই নাম, এক দর্শন। পার্থক্য কেবল শ্লোগানে, লক্ষ্য কিন্তু অভিন্ন: ইসলামী রাষ্ট্র ধারণাকে মাটিচাপা দিয়ে ধর্মকে নিছক ব্যক্তিগত এক চুক্তিতে নামিয়ে আনা। একজন বলে ‘ধর্মহীনতা চাই’, আরেকজন বলে ‘ধর্ম থাক, কিন্তু ঘরে থাক।’ আপনি কাকে দিয়ে কার মুখোশ উন্মোচনের আশা করছেন?//

                দ্বিতীয় আপত্তির জবাব:

                মুনশি আব্দুর রহমান ভাইয়ের লেখার এই অংশেই জবাব এসে গেছে- 'আপনার মন্তব্য থেকে মনে হচ্ছে, আপনি হয়তো আমার পোস্টের বক্তব্য ঠিকমতো অনুধাবন করতে পারেননি। আপনার মন্তব্যের অনেকটা অংশ এমন কিছু অনুমান ও ব্যাখ্যার উপর দাঁড়িয়ে, যা আমার মূল পোস্টের উদ্দেশ্যের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়।

                পোস্টে কোথাও এনসিপি বা কোনো নির্দিষ্ট সেক্যুলার রাজনৈতিক দলকে সম্বোধন করে আহ্বান জানানো হয়নি। বরং পোস্টটি সাধারণ ছাত্র জনতার প্রতি ছিল—তাদের সেই অংশের প্রতি, যারা অন্তরে ইসলামকে ভালোবাসে, যারা শাহবাগী ইসলামবিদ্বেষীদের আসল রূপ চিনতে প্রস্তুত।

                জুলাইয়ের ছাত্র জনতার মধ্যে নানা রকম মানুষ ছিল—জিহাদ সমর্থক লোকজনও ছিল, শরীয়াহপন্থী অনলাইন এ্যাক্টিভিষ্টদের অনুসারীরাও ছিলেন, জুলাইয়ের শহীদ আবু সাঈদ ভাইও ছিলেন, অনেক সাধারণ মুসলিমও। সুতরাং এই আন্দোলনের অংশগ্রহণকারী শুধু সেক্যুলাররা একা নয়, ছাত্র জনতা মানেই সেক্যুলাররা নয়। আমরা ইসলামপন্থী এবং সাধারণ মুসলিম অংশের সেই ছাত্র জনতার কাছে আহ্বান করেছি শাহবাগী ও ইসলামফোবিকদের মুখোশ উন্মোচনের জন্য। এটা একটি সঠিক ও ন্যায্য আহ্বান ছিল।

                আপনি পোস্টের বক্তব্য এমনভাবে ব্যাখ্যা করেছেন যেন আমরা জুলাইয়ের সেক্যুলার নেতৃত্বের কাছে ইসলামী বিপ্লবের আশা করেছি। এ ধরনের বোঝাপড়া মূল লেখার প্রকৃত রূপরেখাকে বিকৃত করে। এটি দুর্বল পাঠপদ্ধতি ও বক্তব্যের সারমর্ম যথাযথভাবে অনুধাবন করতে না পারার ফলাফল।'

                এর সাথে আমি আরেকটু যুক্ত করে বলতে চাই-শাহবাগ আন্দোলন আর জুলাই বিপ্লবের দৃষ্টিভঙ্গি এক নয়। শাহবাগ সরাসরি ইসলামের বিরুদ্ধে বিষোদ্গার করেছে এবং ধর্মহীনতার দৃষ্টিভঙ্গি ছড়িয়েছে। অন্যদিকে জুলাই অভ্যুত্থানে অন্তত সরাসরি ইসলামবিরোধিতা দৃশ্যমান ছিল না। বরং জুলুম এবং অত্যাচারের বিরুদ্ধে অবস্থান লক্ষ্য করা গেছে। একে শাহবাগের সমতুল্য বলা বাস্তবতা ও পর্যবেক্ষণ উভয়ের প্রতি অবিচার।

                আবার এটিও মনে রাখতে হবে যে, বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলন বা এনসিপি ই জুলাই অভ্যুত্থানের একমাত্র স্টেক হোল্ডার নয়। যেহেতু বাংলাদেশের আপামর তাওহিদি জনতাকে এই বিপ্লবের মূল জ্বালানি শক্তি ছিল, তাই তাদের চেতনাও এই অভ্যুত্থানের দৃষ্টিভঙ্গি হতে সমস্যা নেই। যদিও আন্দোলনের ফলাফল হাইজ্যাক হয়ে যাচ্ছে।



                তিন. ভুল আশাবাদিতা:
                // যারা দ্বীনকে বন্দী করতে চায় সংসদ আর সংবিধানের গহ্বরে, তাদের কাছে শাহবাগীদের মুখোশ খুলবে—এমন বিশ্বাস অলীক কল্পনা নয় কি?//

                তৃতীয় আপত্তির জবাব:

                এই আপত্তিরও মূল ভিত্তি হল- এটা মনে করা যে, পোস্টদাতা ভাই শাহবাগীদের মুখোশ উন্মোচনের ক্ষেত্রে এনসিপি কিংবা এ জাতীয় সেক্যুলার নেতৃবৃন্দের উপর আস্থা রেখেছেন, অথচ এই বুঝ সঠিক নয়। যেওনটা উপরে বিস্তারিত ব্যাখ্যা করা হয়েছে। পোস্টদাতা ভাই আহ্বান জানিয়েছেন ইসলামপ্রিয় সাধারণ ছাত্রজনতাকে।


                চার. নিজেদের দুর্বলতার স্বীকারোক্তি:
                // এটা হতাশা নয়, বরং নির্মম বাস্তবতা। আমরা যারা দ্বীনের পক্ষে কথা বলি, ইসলামী রাষ্ট্রের স্বপ্ন দেখি, তারা কোথায় ছিলাম যখন ইতিহাসের বাঁক বদলে যাচ্ছিল? জুলাই বিপ্লবের দিনগুলোতে আমরা ছিলাম নিঃশব্দ, বিচ্ছিন্ন, দুর্বল। জনতার মাঝে আমাদের কোনো ভাষা ছিল না, নেতৃত্ব ছিল না, কাঠামো ছিল না। এখন সেই শূন্যতার ভার চাপাচ্ছেন তাদের ওপর, যারা আদতেই আমাদের ময়দানের লোক নয়? //

                চতুর্থ আপত্তির জবাব:

                এই আপত্তিরও মূল ভিত্তি হল- এটা মনে করা যে, মুনশি আব্দুর রহমান ভাই সেক্যুলার নেতৃবৃন্দের কাছে আবেদন-নিবেদন পেশ করেছেন, অথচ এই বুঝ সঠিক নয়।

                এ ছাড়াও এটাও বলা প্রয়োজনবোধ করছি যে, ইতিহাসের বাঁক বদলের সময় আমরা নিরব, বিচ্ছিন্ন বা দুর্বল ছিলাম না। বরং গত ১৫ বছর ধরে আমাদের অব্যাহত দাওয়াতের ফলে অনেক মানুষের মাঝে বিপ্লবের চেতনা জাগ্রত হয়েছে আলহামদুলিল্লাহ। ফলে আমরাও যে আন্দোলনের অন্যতম স্টেক হোল্ডার, সচেতন কেউ অস্বীকার করার কথা নয়। তবে আন্দোলনের ফসল এবং সুফল সবটুকু কুক্ষিগত করে নিয়ে গেছে সেক্যুলার গোষ্ঠী, এটা অবশ্যই আমাদের দুর্বলতার প্রমাণ। এর অর্থ হল- আমরা এখনো এমন পর্যায়ে পৌঁছতে পারিনি যে পর্যায়ে গেলে একটা গণ-আন্দোলনকে পূর্ণাঙ্গ ইসলামী বিপ্লবে রূপ দেয়া যায়। আর হ্যাঁ নিজেদের দুর্বলতা স্বীকার করাই পরিণতির দিকে এগিয়ে যাওয়ার প্রথম ধাপ। সুতরাং বিদ্যমান দুর্বলতা স্বীকার করেই এই দুর্বলতা কাটিয়ে ওঠাকে আমাদের ভবিষ্যৎ মিশন বানাতে হবে।


                তবে এটা মনে রাখা দরকার—দুর্বলতা থাকা মানে এই নয় যে, আমরা কুফর বা জাহিলিয়াতের হাতে সব ছেড়ে দেব। দুর্বল থেকেও সুযোগের সদ্ব্যবহার করতে হয়। ইতিহাসে অনেক সময় দেখা গেছে, দুর্বল মুসলিমরা শত্রুর ভেতরকার বিবাদ ও পরিবর্তনকে কাজে লাগিয়ে নিজেদের পথ তৈরি করেছে। এই আন্দোলনকে কাজে লাগিয়ে ইসলামপন্থীরা কিছুটা হলেও রাষ্ট্রীয় দমন-পীড়ন হ্রাস করতে পেরেছে আলহামদুলিল্লাহ।


                পাঁচ. আত্মমর্যাদার সংকট:
                // এখন আমরা এমন জায়গায় এসে দাঁড়িয়েছি, যেখানে শত্রুর কোনো কদম শব্দেও মনে হয়—“আহা, বুঝি এবার আমাদের কথা বলবে!” এটা আত্মমর্যাদার সংকট। পরাজিত চেতনা এতটাই গ্রাস করেছে যে, কারো মুখে ইসলাম শব্দটুকু শুনলেই ভেবে নিই, তারা বুঝি আমাদের পক্ষে। অথচ তারা নিজেরাই ইসলামের রাজনৈতিক রূপ, উম্মাহর আকীদা ও শারিয়াহর শাসনব্যবস্থাকে প্রত্যাখ্যান করেছে।//

                পঞ্চম আপত্তির জবাব:

                আত্মমর্যাদা অবশ্যই মুসলিমের সবচেয়ে বড় সম্পদ। তবে সাধারণ মুসলমানদেরকে শাহবাগের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে কাজে লাগানো মোটেও আত্মমর্যাদা পরিপন্থী কিছু নয়, বরং হিকমাহ ও রাজনৈতিক প্রজ্ঞার পরিচয়। এখানেও আপত্তির মূল ভিত্তি হল, ধারণা করা হয়েছে মুনশি আব্দুর রহমান ভাই বুঝি সেক্যুলার শক্তির কাছে কাকুতি-মিনতি করেছেন, অথচ বাস্তবতা মোটেই এমন নয়। তিনি সম্বোধন করেছেন-ইসলামপ্রিয় সাধারণ ছাত্রজনতাকে।



                ছয়. যুদ্ধ না করে ফলাফলের জন্য আফসোস:
                // আমরা যেই যুদ্ধের সূচনা করিনি, সেই যুদ্ধের ফলাফল নিয়ে আফসোস করার অধিকার কীভাবে রাখি? প্রথম সারিতে দাঁড়াইনি, নেতৃত্বে ছিলাম না, জনতার হৃদয়ে জায়গা বানাতে পারিনি—তবু আমরা দোষ খুঁজি তাদের মাঝে, যারা কখনোই আমাদের ঘরের লোক ছিল না।//

                ষষ্ঠ আপত্তির জবাব:

                এই যুদ্ধ এককভাবে শুধু ইসলামপন্থীরা করেনি সেটা ঠিক, কিন্তু এ আন্দোলনের শহীদ আবু সাঈদ ইসলামপন্থীই ছিল। সুতরাং এ যুদ্ধে ইসলামপন্থীদের কোনো অবদান নেই- এমন ধারণা করা আত্মঘাতী। আপনার লেখায় বারবার এ ভুল ধারণাটি সামনে এসেছে। বরং ইসলামপন্থীদের উচিত- নিজেদের অবদান তুলে ধরে সমাজে নিজেদের অবস্থানকে শক্তিশালী করা, আন্দোলনের ফসল সেক্যুলাররা নিয়ে গেছে - এটা জনগণকে বুঝিয়ে তাদেরকে পূর্ণাঙ্গ ইসলামী বিপ্লবের জন্য প্রস্তুত করা, ইসলামপন্থীদের অবদানকে সমাজে প্রতিষ্ঠিত করে ইসলামপন্থীদের উপর রাষ্ট্রীয় দমন-পীড়ন কমিয়ে আনা।

                পাশাপাশি আরেকটা কথাও মনে রাখতে হবে যে, একিউ যুদ্ধফ্রন্টে স্রেফ বাংলাদেশকে বিবেচনায় রাখে না। বরং পুরো উপমহাদেশ একটি ফ্রন্ট। ফলে আলাদাভাবে বাংলাদেশে যুদ্ধ লাগানো হবে না, এটাই যুক্তিযুক্ত। তাছাড়া একিউ এই আন্দোলনে স্বনামে অংশগ্রহণ করলে আন্দোলন যে শুরুতেই দেশী-বিদেশী কাফের-মুশরিকদের সহায়তায় বানচাল হয়ে যেত, তা তো যে কোন সচেতন মানুষ মাত্রই স্বীকার করবেন। এ জন্য স্বাভাবিকভভাবেই এই আন্দোলনের সূচনা এবং নেতৃত্ব এককভাবে এবং খালেসভাবে ইসলামপন্থীদের হাতে যাওয়ার সুযোগ ছিলনা।

                আবার দেখুন, যুদ্ধে সরাসরি অংশগ্রহণ না করলেও যদি কেউ ন্যায় ও সত্যের পক্ষকে সহায়তা করে, তা নিয়ে আফসোসের কিছু নেই। মুসলিম উম্মাহ বরাবরই সুযোগের সদ্ব্যবহার করেছে, কখনো সরাসরি যুদ্ধ করে, কখনো কৌশল অবলম্বন করে। ফলে, যুদ্ধে প্রথম সারিতে না থেকেও কৌশলগত সিদ্ধান্ত নেওয়া আমাদের অধিকার এবং তা বাস্তবতার দাবি।
                Last edited by Munshi Abdur Rahman; 2 weeks ago.

                Comment


                • #9
                  আবু আব্দুল্লাহ ভাই,

                  আসসালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহ,

                  আল্লাহ সুবহানাতায়ালা আপনার জ্ঞান এবং ফিকিরে বারাকাহ দান করুন। আপনি যে কথাগুলো বলেছেন তার প্রত্যেকটি বিবেচনা নেওয়ার মতোই। Munshi Abdur Rahman ভাইও তার কমেন্টে প্রায় একই রকম কথা বলেছেন। আমি পূর্বে উল্লেখ করেছি যে ভাইয়ের কিছু কথা আমার জ্ঞানের স্বল্পতার কারণে বুঝতে কষ্ট হয়েছে।

                  আমি আমার কিছু কথা থেকে ফিরে এসেছি যা আমার উপরোক্ত কমেন্টের মধ্যেই আছে। কিন্তু, আমি পুনরায় সেখানে কিছু প্রশ্ন তুলে ধরেছি যার যার উত্তর বা সমালোচনার জন্য আমি পরিপূর্ণ ভাবে প্রস্তুত।

                  একিউ যুদ্ধফ্রন্টে স্রেফ বাংলাদেশকে বিবেচনায় রাখে না। বরং পুরো উপমহাদেশ একটি ফ্রন্ট। ফলে আলাদাভাবে বাংলাদেশে যুদ্ধ লাগানো হবে না, এটাই যুক্তিযুক্ত। তাছাড়া একিউ এই আন্দোলনে স্বনামে অংশগ্রহণ করলে আন্দোলন যে শুরুতেই দেশী-বিদেশী কাফের-মুশরিকদের সহায়তায় বানচাল হয়ে যেত, তা তো যে কোন সচেতন মানুষ মাত্রই স্বীকার করবেন।
                  ​​​​​এই জায়গায় আমি আপনার সাথে দুটি বিষয়ে দ্বিমত করছি ভাই আমাকে এখানে কোন বিপ্লব বা অভ্যুত্থান করতে হলে একিউ'র নাম কেন ব্যবহার করতে হবে? বরং এটাও শায়দের মতামত ও মতাদর্শকে ব্যবহার করাটাই যথেষ্ট ভাবে যেকোন বিপ্লব বা আন্দোলনকে নিজেদের হাতে রাখার জন্য।

                  এ জন্য স্বাভাবিকভভাবেই এই আন্দোলনের সূচনা এবং নেতৃত্ব এককভাবে এবং খালেসভাবে ইসলামপন্থীদের হাতে যাওয়ার সুযোগ ছিলনা।
                  ভাই আপনি কি আপনার এই লাইনটির প্রতি লক্ষ্য করেছেন? একটি আন্দোলন বা বিপ্লবের তিনটি জিনিসের মধ্যে কোনটিকে না সূচনাতে, না নেতৃত্বে আর না খুলুশিয়াতে। তাহলে আমারদের অবস্থান কি? তাহলে কিভাবেই বা কৌশলগত সিদ্ধান্ত নেওয়া আমাদের অধিকার এবং তা বাস্তবতার দাবি?
                  فَاَعۡرِضۡ عَنۡهُمۡ وَ انۡتَظِرۡ اِنَّهُمۡ مُّنۡتَظِرُوۡنَ

                  Comment

                  Working...
                  X