সম্প্রীতি সমাবেশে সন্তোষ শর্মা
মুনশি আব্দুর রহমান
মুনশি আব্দুর রহমান

সম্প্রতি বিধর্মীদের জন্য অনুষ্ঠিত একটি সম্প্রীতি সমাবেশে একটি ইসলামী গণতান্ত্রিক দলের পক্ষ থেকে ভারতের একজন আলোচিত গুপ্তচর সন্তোষ শর্মাকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। এই ব্যক্তি সম্পর্কে যেসব তথ্য প্রকাশ্যে এসেছে, তা গভীর উদ্বেগ ও ক্ষোভের জন্ম দেয়। একাধিক নির্যাতিত আলিম তাঁর রিমান্ডে থাকার অভিজ্ঞতার কথা বলে অভিযোগ করেছেন যে, সন্তোষ শর্মা কর্তৃক তাঁরা নিপীড়নের শিকার হয়েছেন। এই প্রেক্ষিতে এমন একজন বিতর্কিত ব্যক্তিকে জামাতের মঞ্চে আহ্বান করা নিঃসন্দেহে মুসলিম জনতার হৃদয়ে আঘাত হেনেছে। [১]
এই সিদ্ধান্তকে অনেকেই ওই ইসলামী গণতান্ত্রিক দলের এক মারাত্মক ভুল ও দায়িত্বহীন আচরণ হিসেবে দেখছেন। বিশেষ করে যখন সমর্থকরাই প্রশ্ন তুলছেন—এই আমন্ত্রণের যৌক্তিকতা কী? হ্যাঁ, কেউ কেউ বলবেন এটা ছিল ভিন্ন ধর্মীয়দের জন্য সম্প্রীতির অনুষ্ঠান কিংবা সন্তোষ পূজা কমিটির দায়িত্বে থাকায় উক্ত আয়োজনে তাকে দাওয়াত দিতে হয়েছে। কিন্তু এসব যৌক্তিকতা পাশ কাটিয়ে একবার ভেবে দেখা দরকার, ৫ই আগস্টের মতো একটি গভীর রাজনৈতিক তাৎপর্যপূর্ণ ঘটনার প্রেক্ষিতে সন্তোষ শর্মা আজ জনগণের চোখে কী প্রতিনিধিত্ব করেন?
এই প্রশ্নের উত্তর দিতে গেলে একটি অস্বস্তিকর বাস্তবতার মুখোমুখি হতে হয়। সন্তোষ শর্মা শুধু একজন হিন্দু নেতা বা সাংবাদিক নন, বরং এমন এক প্রতীক, যিনি নির্যাতনের স্মৃতি বহন করেন। যারা তার অত্যাচারে ক্ষতবিক্ষত হয়েছেন, তাঁদের কাছে এই ব্যক্তি শুধুই এক বেদনাদায়ক অধ্যায়ের নাম। তাহলে উক্ত ইসলামী গণতান্ত্রিক দলের নেতারা কী এই বাস্তবতা সম্পর্কে সম্পূর্ণ অজ্ঞ ছিলেন? নাকি তারা জানার পরও জনমানুষের অনুভূতিকে তুচ্ছ মনে করেছেন?
একটি রাজনৈতিক বা আদর্শিক আন্দোলন তখনই তার গন্তব্যে পৌঁছায়, যখন তার নেতৃত্ব জাতির আবেগ ও অনুভূতির প্রতি সংবেদনশীল থাকে। অথচ এখানে দেখা যাচ্ছে, যারা আন্দোলনের সামনের সারিতে শহীদ হওয়ার শপথ নিচ্ছেন, যারা নিপীড়নের বিরুদ্ধে জীবন বাজি রাখছেন, তাদের নেতৃত্ব দিচ্ছেন এমন কিছু ব্যক্তি যারা সেই ত্যাগকে যথাযথ মর্যাদা দিতে ব্যর্থ হচ্ছেন। আন্দোলন মঞ্চ সুশিলপনা আর হাসিমুখে তামাশা দেখানোর জায়গা নয়, এটি একটি পবিত্র দায়িত্বের স্থান।
ওই ইসলামী গণতান্ত্রিক দলের উচিত হবে এই ভুলের দায়িত্ব নেওয়া এবং ভবিষ্যতে জনতার বিশ্বাস রক্ষায় আরও সচেতন ভূমিকা পালন করা। আন্দোলনের নেতৃত্ব শুধু ভাষণে বা অনুষ্ঠানে নয়, প্রতিটি সিদ্ধান্তেও প্রতিফলিত হওয়া উচিত জনতার হৃদয়ের স্পন্দন। জনতার রক্তের মূল্য যেন কেবল মঞ্চের আলো-ঝলমলে প্রদর্শনীতে হারিয়ে না যায়।
সংশ্লিষ্ট লিংক-
[১] https://dailyamardesh.com/amar-desh-.../amdafavwpzy37
Comment