Announcement

Collapse
No announcement yet.

মেইনস্ট্রিম ট্র‍্যাপ বা মূলধারার ফাঁদ

Collapse
X
 
  • Filter
  • Time
  • Show
Clear All
new posts

  • মেইনস্ট্রিম ট্র‍্যাপ বা মূলধারার ফাঁদ


    বর্তমান বিশ্বব্যবস্থা ক্ষমতাকে এক ধরনের ভয়ঙ্কর এককেন্দ্রীক মেরুকরণ করে ফেলেছে। কয়েকটি সুপার পাওয়ার রাষ্ট্র রাষ্ট্র আন্তর্জাতিক রাজনীতির নামে একপ্রকার নব্য ঔপনিবেশিক কাঠামো গড়ে তুলেছে, যেখানে ছোট এবং উন্নয়নশীল দেশগুলোকে বাধ্য করা হয় তাদের ব্যবস্থার সঙ্গে মানিয়ে নিতে। স্বাধীন মত বা আদর্শ নিয়ে টিকে থাকা বা নিজের মতো করে উন্নয়ন করা যেন একটি ‘অপরাধে’ পরিণত হয়েছে।

    এই আন্তর্জাতিক ক্ষমতাধররা কেবল রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে নয়, বরং বিভিন্ন দেশের স্থানীয় রাজনীতির কাঠামো এবং রাজনৈতিক দলগুলোকেও নিয়ন্ত্রণ করে। যেন রাজনৈতিক দলের পরিবর্তন হলেও সেসব রাষ্ট্রের নীতি সবসময় তাদের পক্ষেই থাকে।

    তারা সমাজকে প্রভাবিত করার জন্য তৈরি করেছে বিশাল এক মেকানিজম— গণমাধ্যম, সামাজিক সংগঠন, এনজিও, আন্তর্জাতিক ফোরাম, এমনকি সংস্কৃতি-ভিত্তিক প্রতিষ্ঠান। এসব ব্যবস্থার মাধ্যমে তারা এক ধরনের ‘মূলধারা’ তৈরি করে। এসব মিডিয়া ও প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে বিভিন্ন সুযোগ সুবিধা ও প্রচারণা কেবল কেবল তারাই পায়, যারা এসব শক্তির স্বার্থ অক্ষুণ্ণ রেখে রাজনীতি করতে সম্মত হয়। জনগণের সামনে ক্যামোফ্লেজ তৈরি করার জন্য প্রকাশ্যে কিছু বিরোধী বক্তব্য দেওয়ার সুযোগ দিলেও কার্যত ক্ষেত্রে তারা তাদের ততটুকু বিরোধিতাকেই অনুমোদন দেয় যতটুকু বিরোধিতা করলে স্বার্থ ক্ষুন্ন না হয়।

    যে কোনো রাজনৈতিক দল, সংগঠন বা রাষ্ট্র যদি এই স্বার্থকেন্দ্রিক কাঠামোকে ধ্বংস করতে চায় বা এই কাঠামোর বাইরে গিয়ে নিজস্ব আদর্শকে সমুচ্চ রাখার বা কায়েম করার চেষ্টা করে, তবে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবহৃত হয় নানা ধরণের ট্যাগ — “সন্ত্রাসী”, “উগ্রবাদী”, “উন্নয়নবিরোধী”, “আধুনিকতার শত্রু” ইত্যাদি।

    এর ফলে, আদর্শবাদী লোকদের সামনে আসে একটি কঠিন দ্বিধা। হয় তারা মূলধারার বাইরে থেকে সংগ্রাম চালিয়ে যাবে — যেটা হয়তো কঠিন, কিন্তু আদর্শিকভাবে বিশুদ্ধ; অথবা তারা ধীরে ধীরে মূলধারায় প্রবেশ করার জন্য কিছু কিছু ‘কৌশলগত’ নমনীয়তা দেখাবে — যা শেষ পর্যন্ত তাদের আদর্শকে বিকিয়ে দেয়ার পথে নিয়ে যায়। একসময় দেখা যায়, সেই দল বা সংগঠন আর আগের মতো শক্ত আদর্শিক অবস্থানে নেই; বরং তারা হয়ে উঠেছে ‘কায়েমি স্বার্থবাদী ব্যবস্থার সহযোগী শক্তি’।

    ইসলামী রাজনীতির প্রেক্ষাপটে এটা কোনো নতুন বিষয় নয়। পরকালে অবিশ্বাসী সেক্যুলার বা কাফিরদের আল্টিমেট আদর্শ বলতে কিছুই নাই, তাদের স্বার্থ কেবল দুনিয়া। তাই দুনিয়া প্রাপ্তির নিশ্চয়তা পেলে প্রয়োজনে তারা যেকোনো নীতিতে আপোষ করতে পারে। তাদের চরিত্র বিশ্লেষণ করে কুরআন বলছে:
    وَدُّوا۟ لَوْ تُدْهِنُ فَيُدْهِنُونَ​
    তারা চায় যে তুমি আপোষ করো। তুমি আপোষ করলে তারাও আপোষ করবে।
    - সূরা কলাম, আয়াত ৯


    অতএব তাদের দিক থেকে আপোষের প্রস্তাব তেমন গুরুত্বপূর্ণ কিছু না। বিশেষত পাওয়ার পলিটিক্সে তারা যখন নিয়ন্ত্রকের জায়গায় থাকে তখন তো বরং এর দ্বারা তারা নিজেদের রাজনৈতিক ইমেজ আরও উন্নত করতে পারে নিজেদের উদার দেখিয়ে।

    নবি মুহাম্মাদ সা.-কেও মূলধারার ফাঁদে ফেলার চক্রান্ত করা হয়েছিলো। তাকেও নানারকম লোভনীয় প্রস্তাব দেওয়া হয়েছিলো কায়েমী ব্যবস্থার সাথে আপোষ করতে, মানিয়ে নিতে, অন্তত কিছুটা প্রশংসা করতে, কমপক্ষে নিন্দা বন্ধ করতে। এমনকি তাদের সেই চক্রান্ত কখনো এমন সুক্ষ্মও হয়েছিলো যে তিনি হয়তো তাদের প্রস্তাব বিবেচনায় নেওয়ার কথা হয়তো মনের গভীরে ভেবে বসেছিলেন। আল্লাহ তাকে নিজ দয়ায় সেই ফাঁদ থেকে রক্ষা করেছেন এবং আয়াত নাজিল করে তাকে সতর্ক করে বলেছেন:

    وَلَوْلَآ أَن ثَبَّتْنَٰكَ لَقَدْ كِدتَّ تَرْكَنُ إِلَيْهِمْ شَيْـًٔا قَلِيلًا
    আর আমি যদি তোমাকে অবিচল না রাখতাম, তবে অবশ্যই তুমি তাদের দিকে কিছুটা ঝুঁকে পড়তে।
    - সূরা বানি ইসরাঈল, আয়াত ৭৪।

    মূলধারার ফাঁদে ফেলার জন্য প্রথমে একটি দল বা রাষ্ট্রকে কিছু সুযোগ দিয়ে আকৃষ্ট করা হয়, তারপর আদর্শের উপর চাপ সৃষ্টি করে ধীরে ধীরে মৌলিক পরিবর্তন আনা হয়। এভাবে ধীরে ধীরে তাকে নিজের আদর্শ থেকে বিচ্যুতি ঘটাতে বাধ্য করা হয়। এক পর্যায়ে আর বাধ্য করার প্রয়োজন হয় না; কারণ তারা নিজেরাই ইতিমধ্যে নিজেদের আদর্শ পরিবর্তন করে ফেলেছে।

    এটি কেবল একটি রাজনৈতিক সংকট নয়, এটি একটি নৈতিক সংকটও।

    ইসলামি রাজনীতির প্রেক্ষাপটে আমরা দেখতে পাই অনেক ইসলামী দল ধীরে ধীরে মূলধারার স্বীকৃতির আশায় নিজেদের আদর্শে ‘কৌশলগত নমনীয়তা’ আনে। শুরুতে এটি কৌশল মনে হলেও, ধীরে ধীরে এটি নীতিগত পরাজয়ে পরিণত হয়।

    উদাহরণস্বরূপ, কিছু ইসলামপন্থী দল আন্তর্জাতিক স্বীকৃতির আশায় 'শরিয়াহ' শব্দ পরিহার করতে শুরু করে; আল্লাহর আইন ইসলামি শাসন নয় বরং ‘নৈতিক শাসন’ 'কল্যান রাষ্ট্র' বা ‘সামাজিক ন্যায়’ শব্দ ব্যবহার করে। এই প্রক্রিয়ায় এক সময়ে তাদের মূল দর্শন হারিয়ে যায়, এবং তারা আর জনগণের কাছে স্বকীয়, শাসত ও আপোষহীন ইসলামি আদর্শের প্রতিনিধি থাকে না— বরং হয়ে যায় সেক্যুলার ধারার একটি ইসলামি সংস্করণ।

    তাই আদর্শিক সংগঠনগুলোর উচিত এই ফাঁদ সম্পর্কে সচেতন থাকা এবং বুঝে নেওয়া যে, ‘মূলধারায়’ প্রবেশের মানে সবসময় ‘সফলতা’ নয়, অনেক সময় তা হয় ‘আত্মবিক্রয়’। কঠিন হলেও, আদর্শিকভাবে আপসহীন থাকা এবং বিকল্পধারা নির্মাণই হতে পারে একটি প্রকৃত মুক্তির পথ।

    ওয়াল্লাহু আ'লামু বিস সাওয়াব।​

    --- সংগৃহীত ---
    বছর ফুরিয়ে যাবে এতো রিসোর্স আছে https://gazwah.net সাইটে

  • #2
    ‘মূলধারায়’ প্রবেশের মানে সবসময় ‘সফলতা’ নয়, অনেক সময় তা হয় ‘আত্মবিক্রয়’।
    মাশাল্লাহ ভাই, সুন্দর বলেছেন।

    বারাকাল্লাহু ফিল ইলমী ওয়া জিসমী।।
    فَاَعۡرِضۡ عَنۡهُمۡ وَ انۡتَظِرۡ اِنَّهُمۡ مُّنۡتَظِرُوۡنَ

    Comment

    Working...
    X