আল্লাহ্র নামে, যিনি পরম করুণাময়, অশেষ দয়ালু
সমস্ত প্রশংসা আল্লাহ্র জন্য, যিনি সকল সৃষ্টি জগতের প্রতিপালক।
আমরা প্রায়ই শুনি যে ডলারের মান দিন দিন কমে যাচ্ছে, এবং সোনার দাম বাড়তে বাড়তে এক পর্যায়ে প্রতি আউন্স সোনার দাম ১২০০ ডলারের কাছাকাছি পৌঁছে গেছে। এই লেখাটি লেখার পেছনে যে কারণটি আমাকে উদ্বুদ্ধ করেছে, তা হলো—আমাদের অনেকের মধ্যেই একটি ধারণা জন্ম নিচ্ছে যে ডলারের এই দুর্বলতা হয়তো আমেরিকান অর্থনীতির পতনের পূর্বাভাস, বা অন্তত এর দুর্বলতা প্রকাশ করছে, বিশেষ করে যখন বিনিয়োগকারীরা সোনার মতো মূল্যবান ধাতুর দিকে ঝুঁকে পড়ছে নিরাপদ আশ্রয়ের খোঁজে।
আমি একমত যে আমেরিকার অর্থনীতি কিছু বড় এবং গুরুতর সমস্যার মুখোমুখি, কিন্তু ডলারের দুর্বলতা এবং এর বিনিময় হার কমে যাওয়াটাই সরাসরি সেই সমস্যাগুলোর প্রমাণ নয়। আর মনে রাখতে হবে—মুদ্রার দুর্বলতা আর তার ধ্বংস এক জিনিস নয়।
বাস্তবতা হলো, ডলারের বিনিময় মূল্যের এই পতন আসলে আমেরিকান অর্থনীতির উপকারেই আসছে, ক্ষতি নয়! এখন অনেকে ভাবতে পারেন, “এটা আবার কিভাবে সম্ভব?”
চলুন বলি।
বিষয়টা পরিষ্কার হয়ে যাবে, যদি আমরা খেয়াল করি—ইউরোপ আর এশিয়ার রপ্তানিনির্ভর শিল্পোন্নত দেশগুলো ডলারের এই দুর্বলতা নিয়ে বেশ উদ্বিগ্ন। এমনকি কিছু দেশ তো ইচ্ছাকৃতভাবে নিজেদের মুদ্রার মান কমিয়েছে যাতে ডলারের সাথে প্রতিযোগিতায় টিকে থাকতে পারে। কারণ, ডলারের মূল্য কমে যাওয়াটা আমেরিকার রপ্তানিকে সাহায্য করে, অথচ এটাই ওই শিল্পোন্নত দেশগুলোর জন্য ক্ষতিকর। "রপ্তানি বাঁচাও!!"
এই বিষয়টা বুঝতে হলে আমাদের কেবল একটা সহজ হিসেব কষতে হবে—কোনো দেশের মুদ্রার দাম যদি ডলারের তুলনায় বাড়ে, তাহলে তাদের পণ্য অন্য দেশে তুলনামূলকভাবে বেশি দামে বিক্রি হয়, আর আমেরিকার পণ্য হয়ে ওঠে সস্তা ও প্রতিযোগিতামূলক।
উদাহরণ দিই: ধরুন, ইউরোপের একটি ওষুধের দাম ৫০ ইউরো, আর আমেরিকা একই ধরনের একটি বিকল্প ওষুধ তৈরি করে। ডলারের পতনের আগে যদি ১ ইউরো = ১.২৫ ডলার হয়, তাহলে ইউরোপীয় ওষুধের দাম দাঁড়ায় ৬২.৫০ ডলার—যা আমেরিকান ওষুধের সমান। কিন্তু যদি ইউরোর বিপরীতে ডলার দুর্বল হয়ে পড়ে এবং বিনিময় হার হয় ১ ইউরো = ১.৫০ ডলার, তাহলে ইউরোপীয় ওষুধের দাম হয় ৭৫ ডলার। তখন আমেরিকান ওষুধের দাম দাঁড়ায় আগের মতোই ৬২.৫০ ডলার—মানে সেটা তুলনামূলকভাবে সস্তা।
ফলে যেসব দেশ ডলারে লেনদেন করে বা তাদের মুদ্রা ডলারের সাথে সংযুক্ত, তারা স্বাভাবিকভাবেই আমেরিকান ওষুধটিই কিনবে। এই চিত্র সব ধরনের পণ্যের ক্ষেত্রেই খাটে—চাকচিক্যপূর্ণ বিমানের যন্ত্রাংশ থেকে শুরু করে খাদ্যপণ্য পর্যন্ত।
এটাই সেই রহস্য যেটা চীনের পণ্যের বিশাল বাজার তৈরি করেছে। চীনের মুদ্রা ডলারের সাথে সংযুক্ত নয় এবং তার মান তুলনামূলকভাবে কম। ফলে চীনের রপ্তানি পণ্য বিশ্ববাজারে সস্তা পড়ে। এজন্যই আমেরিকা আর ইউরোপ চীনের ওপর চাপ দেয় যাতে তারা তাদের মুদ্রার মান বাড়ায়।
এই লেখার মূল উদ্দেশ্য শুধু এই অর্থনৈতিক প্রক্রিয়াটি ব্যাখ্যা করা নয়, বরং এটা পরিষ্কার করা যে, যখন আমেরিকার অর্থমন্ত্রী গাইথনার "শক্তিশালী ডলার"-এর কথা বলেন, তখন সেটা মূলত রপ্তানিতে প্রতিযোগিতামূলক ডলারকে বোঝায়, শুধু মানে শক্তিশালী নয়। এতে আবারও প্রমাণ হয়—আমেরিকা এক আত্মকেন্দ্রিক, স্বার্থপর জাতি, যারা মুখে বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার খোলাখুলি প্রতিযোগিতার কথা বললেও বাস্তবে নিজের স্বার্থ রক্ষা করতেই বেশি মনোযোগী।
আমরা এটা ভালো করেই বুঝে নিই যে, আমেরিকা তাদের অর্থনীতি রক্ষার জন্য চূড়ান্ত ও বাস্তবধর্মী পদক্ষেপ নিচ্ছে। এবং বলা যায়, তারা কিছুটা সফলও হয়েছে। এমনকি আফগানিস্তান ও ইরাক থেকে সরে আসার সিদ্ধান্তটিও এই অর্থনৈতিক কৌশলের অংশ। কেউ কেউ এটাকে পরাজয় ভাবলেও, আমি বলি—এটা তাৎক্ষণিক এক পশ্চাদপসরণ, কোনো স্থায়ী পরাজয় নয়। বরং এটা এক কৌশলী চাল, যাতে আমেরিকার অর্থনীতি ও বৈশ্বিক অবস্থান রক্ষা পায়। এতে ডেমোক্র্যাটদের বুদ্ধিমত্তা প্রমাণ হয়, যা রিপাবলিকানদের বড় প্রয়োজন ছিল।
আল্লাহই ভালো জানেন, তবে যদি তারা এভাবে কৌশলগত, সামরিক ও অর্থনৈতিকভাবে এগোতে থাকে, তাহলে এই যুদ্ধ আমাদের জন্য দীর্ঘস্থায়ী হতে চলেছে। সুতরাং, আমাদেরও প্রস্তুত থাকতে হবে দীর্ঘমেয়াদি যুদ্ধের জন্য। আল্লাহর দ্বীন বিজয়ী হবেই।
সকল প্রশংসা বিশ্বজগতের প্রতিপালক আল্লাহর জন্য।
আপনার ভাই
নোট: এই লেখাটি Bin Laden's Bookshelf এর একটি চিঠি থেকে নেওয়া হয়েছে। এই লেখার শুরুতে বা শেষে কোন শায়খের নাম উল্লেখ নেই। তাই আমরা বলতে পারছি না যে এই চিঠি কে কার কাছে পাঠিয়েছেন নাকি এটা সরাসরি শায়খ উসামা (রহিমাহুল্লাহ)'র নোট। কিন্তু লেখার ধাচ থেকে বুঝা যাচ্ছে এটি চিঠি আকারে লেখা হয়েছে। Bin Laden's Bookshelf এ এই লেখাটি "The Weakness of Dollar" শিরোনামে পাবেন।
সমস্ত প্রশংসা আল্লাহ্র জন্য, যিনি সকল সৃষ্টি জগতের প্রতিপালক।
আমরা প্রায়ই শুনি যে ডলারের মান দিন দিন কমে যাচ্ছে, এবং সোনার দাম বাড়তে বাড়তে এক পর্যায়ে প্রতি আউন্স সোনার দাম ১২০০ ডলারের কাছাকাছি পৌঁছে গেছে। এই লেখাটি লেখার পেছনে যে কারণটি আমাকে উদ্বুদ্ধ করেছে, তা হলো—আমাদের অনেকের মধ্যেই একটি ধারণা জন্ম নিচ্ছে যে ডলারের এই দুর্বলতা হয়তো আমেরিকান অর্থনীতির পতনের পূর্বাভাস, বা অন্তত এর দুর্বলতা প্রকাশ করছে, বিশেষ করে যখন বিনিয়োগকারীরা সোনার মতো মূল্যবান ধাতুর দিকে ঝুঁকে পড়ছে নিরাপদ আশ্রয়ের খোঁজে।
আমি একমত যে আমেরিকার অর্থনীতি কিছু বড় এবং গুরুতর সমস্যার মুখোমুখি, কিন্তু ডলারের দুর্বলতা এবং এর বিনিময় হার কমে যাওয়াটাই সরাসরি সেই সমস্যাগুলোর প্রমাণ নয়। আর মনে রাখতে হবে—মুদ্রার দুর্বলতা আর তার ধ্বংস এক জিনিস নয়।
বাস্তবতা হলো, ডলারের বিনিময় মূল্যের এই পতন আসলে আমেরিকান অর্থনীতির উপকারেই আসছে, ক্ষতি নয়! এখন অনেকে ভাবতে পারেন, “এটা আবার কিভাবে সম্ভব?”
চলুন বলি।
বিষয়টা পরিষ্কার হয়ে যাবে, যদি আমরা খেয়াল করি—ইউরোপ আর এশিয়ার রপ্তানিনির্ভর শিল্পোন্নত দেশগুলো ডলারের এই দুর্বলতা নিয়ে বেশ উদ্বিগ্ন। এমনকি কিছু দেশ তো ইচ্ছাকৃতভাবে নিজেদের মুদ্রার মান কমিয়েছে যাতে ডলারের সাথে প্রতিযোগিতায় টিকে থাকতে পারে। কারণ, ডলারের মূল্য কমে যাওয়াটা আমেরিকার রপ্তানিকে সাহায্য করে, অথচ এটাই ওই শিল্পোন্নত দেশগুলোর জন্য ক্ষতিকর। "রপ্তানি বাঁচাও!!"
এই বিষয়টা বুঝতে হলে আমাদের কেবল একটা সহজ হিসেব কষতে হবে—কোনো দেশের মুদ্রার দাম যদি ডলারের তুলনায় বাড়ে, তাহলে তাদের পণ্য অন্য দেশে তুলনামূলকভাবে বেশি দামে বিক্রি হয়, আর আমেরিকার পণ্য হয়ে ওঠে সস্তা ও প্রতিযোগিতামূলক।
উদাহরণ দিই: ধরুন, ইউরোপের একটি ওষুধের দাম ৫০ ইউরো, আর আমেরিকা একই ধরনের একটি বিকল্প ওষুধ তৈরি করে। ডলারের পতনের আগে যদি ১ ইউরো = ১.২৫ ডলার হয়, তাহলে ইউরোপীয় ওষুধের দাম দাঁড়ায় ৬২.৫০ ডলার—যা আমেরিকান ওষুধের সমান। কিন্তু যদি ইউরোর বিপরীতে ডলার দুর্বল হয়ে পড়ে এবং বিনিময় হার হয় ১ ইউরো = ১.৫০ ডলার, তাহলে ইউরোপীয় ওষুধের দাম হয় ৭৫ ডলার। তখন আমেরিকান ওষুধের দাম দাঁড়ায় আগের মতোই ৬২.৫০ ডলার—মানে সেটা তুলনামূলকভাবে সস্তা।
ফলে যেসব দেশ ডলারে লেনদেন করে বা তাদের মুদ্রা ডলারের সাথে সংযুক্ত, তারা স্বাভাবিকভাবেই আমেরিকান ওষুধটিই কিনবে। এই চিত্র সব ধরনের পণ্যের ক্ষেত্রেই খাটে—চাকচিক্যপূর্ণ বিমানের যন্ত্রাংশ থেকে শুরু করে খাদ্যপণ্য পর্যন্ত।
এটাই সেই রহস্য যেটা চীনের পণ্যের বিশাল বাজার তৈরি করেছে। চীনের মুদ্রা ডলারের সাথে সংযুক্ত নয় এবং তার মান তুলনামূলকভাবে কম। ফলে চীনের রপ্তানি পণ্য বিশ্ববাজারে সস্তা পড়ে। এজন্যই আমেরিকা আর ইউরোপ চীনের ওপর চাপ দেয় যাতে তারা তাদের মুদ্রার মান বাড়ায়।
এই লেখার মূল উদ্দেশ্য শুধু এই অর্থনৈতিক প্রক্রিয়াটি ব্যাখ্যা করা নয়, বরং এটা পরিষ্কার করা যে, যখন আমেরিকার অর্থমন্ত্রী গাইথনার "শক্তিশালী ডলার"-এর কথা বলেন, তখন সেটা মূলত রপ্তানিতে প্রতিযোগিতামূলক ডলারকে বোঝায়, শুধু মানে শক্তিশালী নয়। এতে আবারও প্রমাণ হয়—আমেরিকা এক আত্মকেন্দ্রিক, স্বার্থপর জাতি, যারা মুখে বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার খোলাখুলি প্রতিযোগিতার কথা বললেও বাস্তবে নিজের স্বার্থ রক্ষা করতেই বেশি মনোযোগী।
আমরা এটা ভালো করেই বুঝে নিই যে, আমেরিকা তাদের অর্থনীতি রক্ষার জন্য চূড়ান্ত ও বাস্তবধর্মী পদক্ষেপ নিচ্ছে। এবং বলা যায়, তারা কিছুটা সফলও হয়েছে। এমনকি আফগানিস্তান ও ইরাক থেকে সরে আসার সিদ্ধান্তটিও এই অর্থনৈতিক কৌশলের অংশ। কেউ কেউ এটাকে পরাজয় ভাবলেও, আমি বলি—এটা তাৎক্ষণিক এক পশ্চাদপসরণ, কোনো স্থায়ী পরাজয় নয়। বরং এটা এক কৌশলী চাল, যাতে আমেরিকার অর্থনীতি ও বৈশ্বিক অবস্থান রক্ষা পায়। এতে ডেমোক্র্যাটদের বুদ্ধিমত্তা প্রমাণ হয়, যা রিপাবলিকানদের বড় প্রয়োজন ছিল।
আল্লাহই ভালো জানেন, তবে যদি তারা এভাবে কৌশলগত, সামরিক ও অর্থনৈতিকভাবে এগোতে থাকে, তাহলে এই যুদ্ধ আমাদের জন্য দীর্ঘস্থায়ী হতে চলেছে। সুতরাং, আমাদেরও প্রস্তুত থাকতে হবে দীর্ঘমেয়াদি যুদ্ধের জন্য। আল্লাহর দ্বীন বিজয়ী হবেই।
সকল প্রশংসা বিশ্বজগতের প্রতিপালক আল্লাহর জন্য।
আপনার ভাই
নোট: এই লেখাটি Bin Laden's Bookshelf এর একটি চিঠি থেকে নেওয়া হয়েছে। এই লেখার শুরুতে বা শেষে কোন শায়খের নাম উল্লেখ নেই। তাই আমরা বলতে পারছি না যে এই চিঠি কে কার কাছে পাঠিয়েছেন নাকি এটা সরাসরি শায়খ উসামা (রহিমাহুল্লাহ)'র নোট। কিন্তু লেখার ধাচ থেকে বুঝা যাচ্ছে এটি চিঠি আকারে লেখা হয়েছে। Bin Laden's Bookshelf এ এই লেখাটি "The Weakness of Dollar" শিরোনামে পাবেন।
Comment