“আরব বিশ্বে ইসরাইলের আগ্রাসী নীল নকশা
।।মাহমুদ শীছ খাত্তাব ||
এর থেকে– একাদশ পর্ব
।।মাহমুদ শীছ খাত্তাব ||
এর থেকে– একাদশ পর্ব
৪. রাজনৈতিক কারণ
ইসরাঈলের সম্প্রসারণবাদী আগ্রাসী পরিকল্পনার পিছনে যে রাজনৈতিক কারণ রয়েছে তার সংগে বিশ্ব য়াহূ দী আন্দোলন একটি বিশেষ গুরুত্ব সংযোগ করেছে। আন্দোলন একথা উপলদ্ধি করে যে, জুন যুদ্ধের পূর্ববর্তী ও পরবর্তী রাজনৈতিক যোগসূত্রসমূহ একটি চুড়ান্ত সামরিক বিজয়ের পথ দেখাবে।
*৬৭-এর জুন যুদ্ধে কি কি বিষয় ইসরাঈলকে আরবদের উপর জয়লাভে সহায়তা করেছে এ ধরনের এক প্রশ্নের উত্তরে জনৈক দায়িত্বশীল ইসরায়ীলি নেতা পশ্চিম জার্মান টেলিভিশনকে বলেন যে, নিম্নোক্ত পাঁচটি বিষয় আরবদের উপর আমাদের বিজয়কে ত্বরান্বিত করেছে। ১. রাজনৈতিক, ২. গণতথ্য ৩. বৈজ্ঞানিক, ৪. অর্থনৈতিক ও ৫. সামরিক।[1]
উক্ত দায়িত্বশীল নেতা উপরিউল্লিখিত সকল বিষয়ের মধ্যে রাজনৈতিক বিষয়কেই অগ্রাধিকার দিয়েছেন, এর সর্বাধিক গুরুত্বের কারণে এবং সিদ্ধান্তকারী ফলশ্রুতির কারণে- যা চুড়ান্ত বিজয়ের জন্য পথ দেখাতে পারে।
আরব দেশসমূহের সংগে ইসরাঈলও জাতিসংঘের একটি সদস্যদেশ। জাতিসংঘের চুক্তিনামায় কয়েকটি নিবন্ধ সংযোজিত রয়েছে, যেখানে একটি সদস্য রাষ্ট্র কর্তৃক অপর সদস্য রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে আগ্রাসী তৎপরতা চালানো কিংবা পরস্পরের ভূমি অন্যায় ভাবে দখলে রাখার বিরুদ্ধে স্পষ্ট নিষেধাজ্ঞা রয়েছে।
ইসরাঈল ১৯৬৭ সালের যুদ্ধে একই সংগে সংযুক্ত আরব প্রজাতন্ত্র, সিরিয়া ও জর্ডান সহ মোট তিনটি রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে আগ্রাসী তৎপরতা চালায়। এই আগ্রাসনের বিরুদ্ধে জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদ ও সাধারণ পরিষদ কয়েকবার প্রস্তাব গ্রহণ করে। যাতে উদ্বাস্তুদের ফিরিয়ে নেওয়া ও যুদ্ধের সময় অধিকৃত ভূমি থেকে ইসরাঈলী প্রত্যাহার এবং জেরুজালেমকে কুক্ষিগত ও ইসরাঈলী অধিকারে নেওয়ারে বিরুদ্ধে তীব্র নিন্দা করা হয়। ইসরাঈল প্রকাশ্যে জাতিসংঘের প্রস্তাবসমূহ মেনে নিতে অস্বীকার করে।
কেউ বিস্মিত হতে পারে যে, ইসরাঈল কিভাবে জাতিসংঘ প্রস্তাব অগ্রাহ্য করে? কিন্তু আসলে এসব তার আগ্রাসনের প্রতি বিশেষ দেশসমূহের প্রকাশ্যে ও গোপনে সমর্থন ও উৎসাহের ফলশ্রুতি নয় কি ?
মনে করুন যদি আরবরা ইসরাঈলের কোন একটি অংশ দখল করতো তা হলে আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলো কি চুপ করে থাকতো? বিশেষ করে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র কি এই দখলের প্রতিবাদে কিছুই না করে পারতো?
ইসরাঈলের রাজনৈতিক তৎপরতার উদ্দেশ্যগুলো কি কি ?
(ক) শান্তির বাহানাঃ ইসরাঈল, যা প্রতিষ্ঠালাভ করেছে হিংসা, সন্ত্রাসবাদ ও রক্তস্নানের মধ্য দিয়ে এবং যা অস্তিত্বলাভ করেছে য়াহূ দী আন্দোলনের ভিত্তিতে সে আরব দেশসমূহে তার আগ্রাসী ও সম্প্রসারণবাদী উদ্দেশ্য চরিতার্থ করার জন্য 'ভায়োলেন্স' বা হিংসাকেই একমাত্র পথ হিসেবে গভীরভাবে বিশ্বাস করে।
ইসরাঈল শান্তি প্রস্তাব পেশ করার কোন একটি সুযোগকেই ছেড়ে দেয় না। এটা কেবল প্রোপাগাণ্ডা বৈ কিছুই নয়। এর দ্বারা সে বিশ্ব জনমতকে এ কথা বুঝাতে চায় যে, সে আরবদের সংগে শান্তি চায়।
আরবদের মধ্যে যারা বহির্দেশ ভ্রমণ করেছেন, তাঁরা প্রায়ই প্রশ্নের সম্মুখীন হন যে, 'আপনারা কেন য়াহূদীদেরকে শান্তিতে বাস করতে দিচ্ছেন না ?
এইভাবে ইসরাঈলী প্রোপাগাণ্ডা বহির্বিশ্বে জনমতকে ধোকা দিয়ে প্রকৃত অবস্থার বিপরীতে আগ্রাসনবাদী জালিমকে মজলুম এবং মজলুমকে জালিম হিসেবে পেশ করতে সক্ষম হয়েছে।
আরবভূমিতে বহাল তবিয়তে অবস্থান করে ইসরাঈল শান্তির বুলি আওড়াচ্ছে। সে নিজের অস্তিত্বকে সমস্ত তর্কের ঊর্ধ্বে নিষ্পন্ন বিষয় (Fait accompli) বলে মনে করে। সে এ বিষয়ে কোনরূপ আলোচনায় জড়াতে চায় না। বরং সে মনে করে যে, পরিশেষে আরবরা ইসরাঈলের আইনগত ও সাংবিধানিক অস্তিত্ব স্বীকার করে নেবে।
ইসরাঈলীরা প্যালেস্টাইনী আরব উদ্বাস্তুদেরকে জাতিসংঘের প্রস্তা- বাবলী অনুযায়ী দেশে ফিরিয়ে আনতে অস্বীকার করেছে। ১৯৪৮ সালের ডিসেম্বরে জাতিসংঘে উক্ত মর্মে প্রথম প্রস্তাব গৃহীত হয়।
য়াহূদী নেতারা এ ব্যাপারে বহুবার ঘোষণা দিয়েছেন। কিছুসংখ্যক ফিলিস্তিনীকে স্বদেশে ফিরিয়ে আনার ব্যাপারে ১৯৫৭ সালে বেন গুরিয়ানকে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, 'ঘড়ির কাঁটা কেউ পিছনের দিকে ফিরাতে পারে না। ইসরাঈল একজন আরব উদ্বাস্তুকেও গ্রহণ করবে না।' এ ব্যাপারে সবচেয়ে সুন্দর এবং বাস্তবসম্মত সম্ভাব্য সমাধান হলো, তাদেরকে সিরিয়া ও ইরাকের কোন অনাবাদী এলাকায় পূণর্বাসন করা—যা প্রাকৃতিকভাবেই সমৃদ্ধ ।[2]
জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের সম্মুখে গোল্ডামেয়ার ১৯৬০ সালের নভেম্বরে ঘোষণা করেন, ইসরাঈল অত্যন্ত স্পষ্টভাবে দ্ব্যর্থহীন ভাষায় বলে দিয়েছে যে, সে তার দেশে কোন উদ্বাস্তুকে ফিরে আসার অনুমতি দেবে না।[3]
বেন গুরিয়ানের উত্তরাধিকারী লেডি ইস্কল, যাকে মনে করা হতো যে, তিনি আরবদের সংগে শান্তি চান, তিনি মধ্যপন্থী এবং যুদ্ধকে ঘৃণা করেন- তিনি ঘোষণা করেন, উদ্বাস্তু সমস্যার একমাত্র সামাধান হলো তাদেরকে আরব দেশসমূহে পুনর্বাসন করা।[4] এতে যেমন তাদের মৌলিক স্বার্থ রক্ষা পাবে, আমাদেরও তেমনি স্বার্থরক্ষা হবে। তিনি আরও বলেন, আধুনিক যুগের ইতিহাসে কোন বড় ধরনের উদ্ধান্ত সমস্যার সমাধান তাদেরকে তাদের আপন দেশে প্রত্যাবর্তনের মাধ্যমে হয়নি।[5]
ইসরাঈল আরবদের সংগে তার সীমানা সম্পর্কিত যে কোনরূপ সং- শোধনীকেও অস্বীকার করেছে। যদিও উক্ত মর্মে জাতিসংঘে প্রস্তাব গৃহীত হয়।
তিনি যে কোন দায়িত্বশীল আরব নেতার সংগে যে কোন স্থানে, যে কোন সময়ে আলোচনায় বসতে প্রস্তুত। লেডি ইস্কলের এ কথার উদ্ধৃতি পেশ করে ফ্রান্সের নামজাদা সংবাদ পত্র 'লা মণ্ডের' সংবাদদাতা বলেন, ইস্কল তাহলে অবশ্যই একথা পুরো নিশ্চয়তার সংগে বলেছেন যে, তিনি ইসরাঈলী ভূখণ্ডের একইঞ্চি জমি ছাড়তে প্রস্তুত নন এবং তিনি একজন উদ্ধাস্তুকেও কখনো ইসরাঈলে ফিরতে দেবেন না।[6]
ইসরাঈল জেরুজালেম প্রশ্নে আলোচনায় বসতে অস্বীকার করে বরং তা দখলের উপরে জোর দেয়। ইসরাঈল ১৯৬৭ সালের জুন মাসে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের গৃহীত প্রস্তাব মেনে নিতে অস্বীকার করে। বরং উল্টো সুয়েজ খালে জাহাজ চলাচলের পূর্ণ অধিকার দাবী করে বসে। সে এমনকি আরব অর্থনৈতিক বয়কট প্রত্যাহারেরও দাবী জানায় এবং '৬৭-এর যুদ্ধ- পূর্বকালের নিজ দেশের সীমানা বাড়াতে চায় ।
ইসরাঈল কি তাহ'লে সেই শান্তি চায় যা তার নিষ্পন্ন বিষয়ের ( Fait accompli) ভিত্তিতে ও তার নিজস্ব হুকুমে রচিত শর্ত অনুযায়ী সশস্ত্র বাহিনী দ্বারা চাপিয়ে দেওয়া হয়ে থাকে।[7] নাকি অন্য কথায় বললে এই দাঁড়ায় যে, সে স্থায়ী শান্তির জন্য আলোচনায় বসতে প্রস্তুত কিন্তু এজন্য কোনরূপ ত্যাগ স্বীকারে ইচ্ছুক নয় ।[8]
উক্ত প্রবণতা বর্তমানে (১৯৭০ সাল) ইসরাঈলে খুব নিশ্চিতভাবে দেখা যাচ্ছে, যখন লেভি ইস্কল ঘোষণা করেন যে, ইসরাঈল কখনোই জেরুজালেম ও গোলান মালভূমি ছেড়ে দেবে না এবং জর্ডান নদী সব সময় ইসরাঈলের নিরাপদ উত্তর সীমানা হিসেবে থাকবে।[9]
লেভি ইস্কল বলেন যে, আমরা আমাদের বিজয়কে বিক্রয় করতে চাই না। এমনকি শান্তির জন্যও নয়। যে শান্তি আমাদেরকে পুনরায় যুদ্ধ বিরতি সীমানায় অথবা ‘৬৭-এর ৪ঠা জুনের সীমানায় ফিরিয়ে নিয়ে যাবে সে শান্তি আমাদের নিকট গ্রহণযোগ্য নয়।[10]
আমরা বিস্মিত হই যে, শান্তির অর্থ সম্পর্কে ইসরাঈলের এই ধারণা কিভাবে প্রকৃত শান্তির সংগে যোগসূত্র গড়তে পারে? ইসরাঈলে প্রকৃত মনোভাব এবং তার নেতাদের দেওয়া ঘোষণাসমূহের মাঝে আমরা কিভাবে মেলাতে পারি ? যেখানে তারা দাবী করছেন যে, তাঁরা কোনরূপ পূর্বশর্ত ছাড়াই আরবদের সংগে আলোচনায় বসতে প্রস্তুত!
ইসরাঈলের শান্তি প্রস্তাব সম্পূর্ণ মিথ্যা এবং ধোকাপূর্ণ। কেননা তারা প্রধান সমস্যাগুলো বিবেচনায় আনতে চায় না যা শান্তি প্রতিষ্ঠার প্রধান বাধা এবং যেগুলো অব্যাহত থাকলে কোন প্রকার শান্তিচুক্তিই সম্পন্ন হ'তে পারে না। এ বিষয়ে একটি প্রধান প্রশ্ন হলো ইসরাঈলের অস্তিত্ব এবং এর ফলে উদ্ভুত জটিলতা ও সমস্যাবলী। ১৯৫৬ সালের ১লা নভেম্বরে শান্তির এক আবেদন জানিয়ে আবা ইবান বলেন, আমাদের উদ্দেশ্য পুনরায় যুদ্ধাবস্থায় ফিরে যাওয়া নয়, বরং আমরা চাই শান্তির দিকে এগিয়ে যেতে। আমাদের ভবিষ্যত অবশ্যই হবে শান্তিময় ভবিষ্যত--যার ভিত্তি হবে একতা, মৈত্রী এবং যুদ্ধ ও সামরিক ভীতিমুক্ত নিশ্চিত অবস্থার উপর।[11]
আবা ইবান এই ঘোষণা দিচ্ছেন যখন, তখন ইসরাঈলী বাহিনী মিসর সীমানার অভ্যন্তরে প্রবেশ করছিল এবং ১৯৫৬ সালে মিসরের উপরে ইসরাঈলী আক্রমণের প্রস্তুতি পর্বে ইসরাঈল তখন গাযা ও সিনাই সেক্টরে সর্বাত্মক হামলা শুরু করে দিয়েছিল।
শান্তির এই আবেদন বিশ্ববাসীর মনোযোগকে ইসরাঈলী আগ্রাসন থেকে অন্যদিকে ফিরিয়ে রাখার জন্য নিঃসন্দেহে নেতাদের একটি ধোকা ও সত্য বিকৃতিকরণের অপচেষ্টা বৈ কিছুই নয়।[12]
১৯৫৬ সালে মিসরের উপরের ত্রয়ী হামলা চালানোর প্রাক্কালে ইসরা- ঈল যে ভাবে শান্তির আশাবাদ ব্যক্ত করেছিল, ঠিক তেমনি ১৯৬৭ সালে আরবদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ শুরুর প্রাক্কালে করেছিল। যেমন ১৯৬৭ সালের ৩০শে মে (যুদ্ধ শুরুর মাত্র পাঁচ দিন পূর্বে) তেল-আবিরের সাংবাদিক সম্মেলনে আবা ইবান ঘোষণা করেছিলেন যে, ইসরাঈল কখনো যুদ্ধ শুরু করবে না, যতক্ষণ না জাতিসংঘ, নিরাপত্তা পরিষদ এবং বৃহৎ শক্তিবর্গ সম্মিলিত- ভাবে শান্তি প্রচেষ্টায় ক্লান্ত না হয়।
বিশ্বের সংবাদ মাধ্যমগুলো যখন উপরিউক্ত শাস্তির ঘোষণা পরিবেশন করছিল, ওদিকে ইসরাঈল তখন তার সেনাবাহিনীতে ব্যাপক লোক ভর্তি শুরু করেছে এবং ঘরে ও বাইরে অবস্থানরত অস্ত্রবহনের ক্ষমতা সম্পন্ন সকল ইসরাঈলীকে যুদ্ধে যোগ দেওয়ার নির্দেশ জারি করেছে। ইসরাঈল তার আগ্রাসী পরিকল্পনা চরিতার্থ করার জন্য আরবদের বিরুদ্ধে ব্যাপক যুদ্ধের সিদ্ধান্ত নেয়।
১৯৬৭-এর যুদ্ধের পরে ইসরাঈল পুনরায় শান্তির ভান করে, কিন্তু জাতি- সংঘ প্রস্তাব মেনে নিতে অস্বীকার করে। যেখানে তাকে অধিকৃত আরব ভূমি থেকে সৈন্য প্রত্যাহার করে নিতে বলা হয়েছে। উপরন্ত সে জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদ এবং ডঃ ইয়ারিং-এর শান্তি প্রচেষ্টায় বাধা সৃষ্টি করতে থাকে।
প্যালেস্টাইন সমস্যা পর্যালোচনার জন্য আহুত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, রাশিয়া, ইংল্যাণ্ড ও ফ্রান্সের মধ্যকার বৈঠকসমূহ অনুষ্ঠানেও সে বিরোধিতা করে এই মিথ্যা অজুহাতে যে, সে আরবদের সংগে এ ব্যাপারে সরাসরি আলোচনায় বসতে চায়।
ইসরাঈলের দায়িত্বশীল নেতাদের মাধ্যমেই শান্তি প্রস্তাবসমূহ পেশ করা হয় এবং য়াহূদী তথ্য মাধ্যমসমূহ ইসরাঈলী আগ্রাসী নীলনকশাগুলো ডেকে রাখার ব্যাপারে স্রেফ একটা ধূম্রজাল সৃষ্টি করে মাত্র। এটাও লক্ষ্য করার বিষয় যে, ইসরাঈলের আগ্রাসী হামলা ও তার শান্তি প্রস্তাব পেশ করার সময়কালের মধ্যে একটি ঘনিষ্ট সংযোগ থাকে।
শান্তি আলোচনার সুযোগে ইসরাঈল নতুন আগ্রাসনের প্রস্তুতি নেয় ওদিকে শান্তির জন্য কঠিন আশাবাদ ব্যক্ত করে। অতঃপর সে তার আগ্রাসী সামরিক তৎপরতাকে এই বলে চালিয়ে দিতে চায় যে, এর পিছনে তার উদ্দেশ্য ছিল শান্তি প্রতিষ্ঠা করা। ইসরাঈল প্রায়ই আগ্রাসন ও সন্ত্রাস এবং শান্তির আবেদন ও তার প্রশংসা ও সমর্থন সবকিছুকে একাকার করে ফেলে।
ইসরাঈল শান্তির নামে ধোকা দেওয়ার এক নতুন কৌশল আবিষ্কার করেছে। সে দাবী করে যে, সে সর্বদা সে কার্যধারাকেই সম্মুখে নিয়ে চলেছে যা মধ্যপ্রাচ্যে শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য সর্বশেষ প্রবল চেষ্টার দিকে এগিয়ে নিয়ে যাবে। [13] যাকে তারা মনে করে যে, তখনই হবে সত্যিকারের একটি মজবুত ও প্রতিরোধকারী শক্তি অর্জন ।[14] ইসরাঈলের অবিরত দাবী হলো অস্ত্র চাই, অস্ত্র, যা শান্তি প্রতিষ্ঠা করবে ও তাকে রক্ষা করবে।[15] " অস্ত্র দ্বারা সুসজ্জিত এবং শক্তিশালী সেনাবাহিনী সমৃদ্ধ শক্তিধর, ইসরাঈল ব্যতীত শান্তি কখনোই প্রভাব বিস্তার করতে পারবে না।[16] এ কারণেই ইসরাঈলের জীবনে সবচাইতে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো আরবদের উপর সামরিক প্রাধান্য বজায় রাখার সার্বিক প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখা।[17] বিগত ১০ বৎসর যাবত যে আপেক্ষিক শান্তি মধ্যপ্রাচ্যে বিরাজ করছে, তা কেবলমাত্র ইসরাঈলের সামরিক প্রাধান্যেরই বাস্তব ফলশ্রুতি।[18] এটা এ জন্য বলা হয়েছে যে, ইসরাইল শান্তির সময়ে যে যুদ্ধ করেছে তা ছিল (তাদের ভাষায়) শান্তি রক্ষা ও স্থিতিশীলতা আনয়ন করার জন্য ।[19]
আরবদের বিরুদ্ধে যুদ্ধকে সঠিক প্রমাণ করবার জন্য ইসরাঈল দাবী করে যে, এইসব ঘটনা এই এলাকায় শাস্তি অক্ষুন্ন রাখার জন্য অপরিহার্য ছিল।[20] ইসরাঈল শান্তি প্রত্যাশার ভান করে কিন্তু আসলে সে কখনোই শান্তি চায় না। এতদসত্ত্বেও সে তার রাজনৈতিক মাধ্যমগুলোর সহযোগিতায় বহু বিদেশী রাষ্ট্রকে ও সেইসংগে একটি বৃহৎ জনসংখ্যাকে একথা বুঝতে সক্ষম হয়েছে যে, সে শান্তিতে বিশ্বাসী এবং শান্তি কামনা করে।
এখন এটা আরব কূটনীতির উপর বাধাতামূলক দায়িত্ব হলো, ইসরাঈলী নেতাদের বিভিন্ন ঘোষণার মাধ্যমে তাদের আগ্রাসী পরিকল্পনার মুখোশ উম্মোচন করে দেওয়া।
[1], The Decisive days 149,
[2]. The Jewish Bulletin of information. Vol, 13, No. 14, 8th of June, 1957.
[3]. Do. Vol, 16, No. 20, 28th Nov. 1960.
[4]. Kissinger’s memoirs, 1965.
[5]. Do,
[6]. Le Mondo – Paris, 12th March 1960
[7]. Bursn – Between the Arabs and Israelis. London 1965. P. 51.
[8]. Harary itar, Making the wolf vegetarian – The New look magazine vol . 6, Number 2, Feb. 196… ( মূলবইতেএরূপলেখাআছে)। - অনুবাদক
[9]. Al-Ahram, Cairo, Issue 11.2.1969.
[10]. Al-Akbar-el Youmiah, a Cairo paper, Issue of 21.2.1969.
[11]. Ebba Iban : The voice of Israel. Now York 1957. P. 292.
[12]. Ibrahim el-Abd: Violence and peace, Beirut 1967. P. 67-71.
[13]. ইসরাঈলেরপ্রাক্তনপ্রধানমন্ত্রীলেভিইস্কলকর্তৃক১৯৬৪সালেবিদেশীসংবাদদাতাক্লাবেদেওয়াভাষণথেকেযা New look magazine-এপ্রকাশিতহয়। Tel-Aviv. Vol. 7No. 6, p. 8.
[14]. The New look magazine, Tel-Aviv, July 1964, p, 58.
[15]. The Jewish information bulletin, New York, Vol . 10, No, 8 April 2, 1954
[16]. New York Herald Tribune, 20th December, 1965.
[17]. The eastern Israeli society : Middle East record, Vol. 1. London 1960. P. 175.
[18]. ১৯৬৬সালের২৪শেমেতারিখেইসরাইলীব্রডকাস্টিংস্টেশনথেকেপ্রচারিতলেভিইসকলেরঘোষণা।
[19]. Burn – p. 63
[20]. জর্ডানেরপানিসিরিয়ায়ব্যবহারেরজন্যনির্মিতব্যপ্রজেক্টের ( Work site ) উপরইসরাঈলীহামলাউপলক্ষেজেরুজালেমপোস্ট-এপ্রকাশিতআবাইবানেরঘোষণা।
আরও পড়ুন
১০তম পর্ব -------------------------------------------------------------------------------------------- দ্বাদশ পর্ব
Comment