একজন সাংবাদিক এক ইসলামী চিন্তাবিদকে জিজ্ঞাসা করেছিল, “আপনি কি মনে করেন ইসলাম কখনো পশ্চিমা সমাজের প্রতি সহনশীল হতে পারে?”
তিনি উত্তর দিলেন, “আমরা পশ্চিমা পোশাক পরি, তাদের মত খাবার খাই, তাদের (দেওয়া ব্যবস্থায়) স্কুলে পড়ি, গাড়ি চালাই, দোকানে চাকরি করি, টেলিভিশন দেখি...”—এভাবে তিনি মুসলমানদের দৈনন্দিন জীবনে পশ্চিমা নিয়ম-কানুন ও অভ্যাস মেনে চলার নানা দিক তুলে ধরেন।
তারপর প্রশ্ন করেন, “আর কী চাও আমাদের থেকে?”
সাংবাদিক কোনো জবাব দিতে না পারায় তিনি বলেন,
পশ্চিমারা আমাদের কাছে কী চায়—এই প্রশ্নটি আজকাল অনেক মুসলমানের মনে ঘোরাফেরা করে। তারা কি আমাদেরকে পুরোপুরি নিশ্চিহ্ন করে দিতে চায়? আমাদের শহরগুলো বোমা মেরে উড়িয়ে দিতে চায়? সব মুসলিমকে হত্যা করে ফেলার পরিকল্পনা তাদের আছে? বাহ্যিকভাবে অনেক সময় তাদের আগ্রাসী আচরণ দেখে মনে হতে পারে, হ্যাঁ—তাদের উদ্দেশ্য হয়তো তাই। কিন্তু যদি সত্যিই আমাদের ধ্বংস বা হত্যা করাই একমাত্র উদ্দেশ্য হতো, তাহলে আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা'আলা কুরআনে এমন একটি সূক্ষ্ম হুঁশিয়ারি দিতেন না, যেখানে বলা হয়েছে—
وَدُّوا لَوْ تَكْفُرُونَ كَمَا كَفَرُوا فَتَكُونُونَ سَوَاءً
“তারা কামনা করে, যেন তোমরা কুফরি করো যেমন তারা কুফরি করেছে, যাতে তোমরা ওদের মত হয়ে যাও।”
(সূরা আন-নিসা, ৪:৮৯)
এখানে লক্ষ্যণীয় বিষয় হলো, তারা চায় না শুধু আমাদের হত্যা করতে, বরং চায় যেন আমরা নিজেরাই ঈমান ত্যাগ করি। আমাদের হৃদয় থেকে দ্বীন উঠে যাক, আমাদের চিন্তা-পদ্ধতি, জীবনদর্শন ও মূল্যবোধ তাদের মত হয়ে যাক। অর্থাৎ, শারীরিক ধ্বংস নয়, তারা চায় আমাদের ইমানের ধ্বংস ও আমাদের শারীয়াহ ব্যবস্থার ধ্বংস।
আরেকটি আয়াতে আল্লাহ সুবহানাল্লাহু ওয়া তা'য়ালা বলেন—
وَلَنْ تَرْضَىٰ عَنكَ الْيَهُودُ وَلَا النَّصَارَىٰ حَتَّىٰ تَتَّبِعَ مِلَّتَهُمْ
ইহুদি ও খ্রিষ্টানরা কখনোই তোমার প্রতি সন্তুষ্ট হবে না, যতক্ষণ না তুমি তাদের ধর্ম অনুসরণ করো।
(সূরা আল-বাকারা, ২:১২০)
এ আয়াত আরও পরিষ্কার করে দেয় যে, পশ্চিমা সভ্যতার প্রতিনিধিরা (হোক তা রাজনীতি, শিক্ষা, সংস্কৃতি বা অর্থনীতির রূপে) কখনোই আমাদের প্রতি সন্তুষ্ট হবে না, যতক্ষণ পর্যন্ত আমরা তাদের মত না হয়ে যাই।
সুতরাং, বাস্তবতা হলো—তাদের লক্ষ্য শুধুই বোমা মেরে ধ্বংস করা নয়, বরং ধীরে ধীরে আমাদের আত্মপরিচয় মুছে ফেলা, আমাদের ঈমানী স্পৃহা নিঃশেষ করে ফেলা, এমনকি আমাদের সন্তানদেরও এমন এক সংস্কৃতির মধ্যে বড় করা যেখানে “মুসলিম” পরিচয়টাই অপ্রাসঙ্গিক হয়ে যায়। এই প্রক্রিয়া অনেক বেশি পরিশীলিত, নরম এবং ধূর্ত—এবং এ কারণেই এটি আরও বিপজ্জনক।
আমরা কি এভাবেই গা ভাসিয়ে দিয়ে বসে থাকব, চুপচাপ দেখব কীভাবে আমাদের ঈমান ধীরে ধীরে গলে যাচ্ছে, কীভাবে আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্ম নিজেদের অজান্তেই নিজেদের শত্রুর সংস্কৃতি ও ভাবনায় গড়ে উঠছে?
সমস্যাটা শুধু বাহ্যিক হামলা বা সাংস্কৃতিক আগ্রাসন না। আসল সংকটটা অসচেতনতা, তার চেয়েও ভয়ানক হলো অকর্মণ্যতা—একটা স্বেচ্ছায় আত্মসমর্পণের মানসিকতা। মনে রাখতে হবে, ঈমান কেবল নাম রাখলেই থাকে না, এটা রক্ষা করতে হয়, চর্চা করতে হয়, সামনে দাঁড়িয়ে সুরক্ষা করতে হয়।
কুরআন আমাদের কী নির্দেশ দেয়?
আল্লাহ সুবহানাল্লাহু ওয়া তা'য়ালা বলেন:
يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا قُوا أَنفُسَكُمْ وَأَهْلِيكُمْ نَارًا وَقُودُهَا النَّاسُ وَالْحِجَارَةُ
"হে মুমিনগণ! তোমরা নিজেদের এবং নিজেদের পরিবারবর্গকে সেই আগুন থেকে রক্ষা করো যার ইন্ধন হবে মানুষ ও পাথর।"
(সূরা আত-তাহরীম, ৬৬:৬)
এ আয়াত আমাদের উপর দ্বৈত দায়িত্ব আরোপ করে—নিজেকে রক্ষা করা, এবং পরিবার তথা পরবর্তী প্রজন্মকে রক্ষা করা। অথচ আমরা হয়তো নিজেরাই জানি না, কীভাবে আমাদের সন্তানদের চিন্তাজগৎ পশ্চিমা ভাবনায় গড়ে উঠছে, কীভাবে ‘নিউট্রাল’ বা ‘সাধারণ’ বলে প্রচারিত অনেক কিছু আসলে ঈমানের পরিপন্থী।
এই চূড়ান্ত সংকটময় পরিস্থিতিতে আমাদের করণীয় কী হওয়া উচিত—এই প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে হলে আমাদের তাকাতে হবে তাদের দিকে, যাঁরা নিজেদের জীবন, সম্পদ, পরিবার সবকিছু এই উম্মাহর জন্য উৎসর্গ করেছেন। যারা শুধু তাত্ত্বিক আলোচনা করেননি, বরং জীবনের প্রতিটি অংশ আল্লাহর দ্বীন প্রতিষ্ঠার সংগ্রামে ব্যয় করেছেন। এই দিক থেকে হাকিমুল উম্মাহ শায়খ আয়মান আল-জাওয়াহিরি একজন গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিত্ব, যিনি শুধু একজন চিন্তাবিদ নন, বরং বাস্তব ময়দানের এক নিবেদিত সৈনিক। তাঁর মতামত আমাদের জন্য অতি মূল্যবান, বিশেষ করে যখন উম্মাহর করণীয় নির্ধারণের প্রশ্ন আসে।
হাকিমুল উম্মাহ শায়খ আয়মান আল জাওয়াহিরি'র মতে, এই সময়ের দাওয়াতি কাজের মূল মাকসাদ (উদ্দেশ্য) হলো:
এই চিন্তা শুধু একশ্রেণির মানুষের জন্য প্রযোজ্য নয়, বরং তা আমাদের সামগ্রিক দাওয়াতি কর্মকাণ্ড, সংগঠন গঠন, শিক্ষাব্যবস্থা, সাংস্কৃতিক প্রচেষ্টা এবং আত্মরক্ষার কৌশল—সবকিছুর জন্যই দিকনির্দেশক হতে পারে। তবে তার পূর্বশর্ত একটাই—আমরা যদি তা শুধু শুনে না রাখি, বরং সত্যিকার অর্থে বুঝে নেই, হৃদয়ে ধারণ করি, এবং তার আলোকে আমাদের পথচলাকে নতুনভাবে গড়ে তুলি।
এই চিন্তাভাবনাগুলোকে অনেক সময় ভুল করে "একটি বিশেষ দলের এজেন্ডা" মনে করা হয়। কিন্তু আসলে তা নয়। বরং এটা হলো একটি সুদূরপ্রসারী তাওহীদী আন্দোলনের ভিত্তি—যার মূল কথা হলো, মানুষ শুধু আল্লাহর দাস হবে, অন্য কারো নয়। এর মধ্য দিয়ে এক নতুন বুদ্ধিবৃত্তিক এবং মানসিক বিপ্লবের সূচনা হয়—যেখানে জাতীয়তা, সংস্কৃতি, রাষ্ট্র কিংবা আধুনিকতার নামে চাপিয়ে দেওয়া মাপকাঠিগুলোর পরিবর্তে মানুষের পরিচয় হয় 'মুসলিম'—এক আল্লাহর বান্দা হিসেবে।
শায়খ এর বক্তব্যগুলো আমাদের শেখায়—কীভাবে কেবল বাহ্যিক শত্রু নয়, বরং আমাদের ভেতরের চিন্তাগত পরাজয়, আত্মঘৃণা, এবং দীনহীন সংস্কৃতির প্রভাব থেকেও মুক্ত হতে হয়। তিনি আমাদের আহ্বান করেন একটি বিকল্প চেতনার দিকে, যেখানে বিজয় মানে শুধু অস্ত্রের জয় নয়, বরং আত্মমর্যাদা, বিশ্বাস, চিন্তা এবং লক্ষ্য—সবকিছুতেই ইসলামের ছাপ থাকা।
আজকে আমাদের সবচেয়ে বড় দরকার—এই চিন্তাধারাকে কেন্দ্র করে নতুন এক প্রজন্ম গড়ে তোলা। যারা শুধু শত্রুর বিরুদ্ধে স্লোগান দিবে না, বরং নিজেদের ভেতরে এমন এক ঈমানি সাহস ও বোধ গড়ে তুলবে, যা থেকে দাওয়াতের ঢেউ উঠবে, বিকল্প শিক্ষার ভিত্তি তৈরি হবে, সাংস্কৃতিক স্বাধীনতা অর্জিত হবে, এবং প্রতিরোধ একটি সুসংগঠিত পরিকল্পনায় রূপ নেবে।
এই চেতনার অভাবেই আমরা আজ নানা বিভ্রান্তিতে ভুগছি—কেউ কেবল আত্মরক্ষা নিয়ে ব্যস্ত, কেউ সংস্কৃতি রক্ষায়, কেউ আবার বাহ্যিক জিহাদে—কিন্তু ভেতরের চেতনাগত বিপ্লব ছাড়া এই খণ্ডিত চেষ্টাগুলো কখনো উম্মাহর মুক্তির পথ হতে পারে না।
সুতরাং, শায়খ এর চিন্তাকে যদি আমরা সত্যিকার অর্থে গ্রহণ করি, তাহলে তা একটি "পরিকল্পিত উম্মাহ নির্মাণের কর্মপদ্ধতি"তে রূপ নিতে পারে। আর যদি আমরা তা এড়িয়ে যাই, তাহলে আমাদের পথ চলা হবে দিকহীন, বিভ্রান্তিকর, আর কেবল আত্মরক্ষামূলক প্রতিক্রিয়ায় সীমাবদ্ধ।
তিনি উত্তর দিলেন, “আমরা পশ্চিমা পোশাক পরি, তাদের মত খাবার খাই, তাদের (দেওয়া ব্যবস্থায়) স্কুলে পড়ি, গাড়ি চালাই, দোকানে চাকরি করি, টেলিভিশন দেখি...”—এভাবে তিনি মুসলমানদের দৈনন্দিন জীবনে পশ্চিমা নিয়ম-কানুন ও অভ্যাস মেনে চলার নানা দিক তুলে ধরেন।
তারপর প্রশ্ন করেন, “আর কী চাও আমাদের থেকে?”
সাংবাদিক কোনো জবাব দিতে না পারায় তিনি বলেন,
“সহনশীলতা যদি প্রসঙ্গ হয়, তাহলে প্রশ্নটা আসলে তোমাদের প্রতি হওয়া উচিত।”
وَدُّوا لَوْ تَكْفُرُونَ كَمَا كَفَرُوا فَتَكُونُونَ سَوَاءً
“তারা কামনা করে, যেন তোমরা কুফরি করো যেমন তারা কুফরি করেছে, যাতে তোমরা ওদের মত হয়ে যাও।”
(সূরা আন-নিসা, ৪:৮৯)
আরেকটি আয়াতে আল্লাহ সুবহানাল্লাহু ওয়া তা'য়ালা বলেন—
وَلَنْ تَرْضَىٰ عَنكَ الْيَهُودُ وَلَا النَّصَارَىٰ حَتَّىٰ تَتَّبِعَ مِلَّتَهُمْ
ইহুদি ও খ্রিষ্টানরা কখনোই তোমার প্রতি সন্তুষ্ট হবে না, যতক্ষণ না তুমি তাদের ধর্ম অনুসরণ করো।
(সূরা আল-বাকারা, ২:১২০)
সুতরাং, বাস্তবতা হলো—তাদের লক্ষ্য শুধুই বোমা মেরে ধ্বংস করা নয়, বরং ধীরে ধীরে আমাদের আত্মপরিচয় মুছে ফেলা, আমাদের ঈমানী স্পৃহা নিঃশেষ করে ফেলা, এমনকি আমাদের সন্তানদেরও এমন এক সংস্কৃতির মধ্যে বড় করা যেখানে “মুসলিম” পরিচয়টাই অপ্রাসঙ্গিক হয়ে যায়। এই প্রক্রিয়া অনেক বেশি পরিশীলিত, নরম এবং ধূর্ত—এবং এ কারণেই এটি আরও বিপজ্জনক।
তাহলে আমাদের করণীয় কী?
আমরা কি এভাবেই গা ভাসিয়ে দিয়ে বসে থাকব, চুপচাপ দেখব কীভাবে আমাদের ঈমান ধীরে ধীরে গলে যাচ্ছে, কীভাবে আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্ম নিজেদের অজান্তেই নিজেদের শত্রুর সংস্কৃতি ও ভাবনায় গড়ে উঠছে?
সমস্যাটা শুধু বাহ্যিক হামলা বা সাংস্কৃতিক আগ্রাসন না। আসল সংকটটা অসচেতনতা, তার চেয়েও ভয়ানক হলো অকর্মণ্যতা—একটা স্বেচ্ছায় আত্মসমর্পণের মানসিকতা। মনে রাখতে হবে, ঈমান কেবল নাম রাখলেই থাকে না, এটা রক্ষা করতে হয়, চর্চা করতে হয়, সামনে দাঁড়িয়ে সুরক্ষা করতে হয়।
কুরআন আমাদের কী নির্দেশ দেয়?
আল্লাহ সুবহানাল্লাহু ওয়া তা'য়ালা বলেন:
يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا قُوا أَنفُسَكُمْ وَأَهْلِيكُمْ نَارًا وَقُودُهَا النَّاسُ وَالْحِجَارَةُ
"হে মুমিনগণ! তোমরা নিজেদের এবং নিজেদের পরিবারবর্গকে সেই আগুন থেকে রক্ষা করো যার ইন্ধন হবে মানুষ ও পাথর।"
(সূরা আত-তাহরীম, ৬৬:৬)
এই চূড়ান্ত সংকটময় পরিস্থিতিতে আমাদের করণীয় কী হওয়া উচিত—এই প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে হলে আমাদের তাকাতে হবে তাদের দিকে, যাঁরা নিজেদের জীবন, সম্পদ, পরিবার সবকিছু এই উম্মাহর জন্য উৎসর্গ করেছেন। যারা শুধু তাত্ত্বিক আলোচনা করেননি, বরং জীবনের প্রতিটি অংশ আল্লাহর দ্বীন প্রতিষ্ঠার সংগ্রামে ব্যয় করেছেন। এই দিক থেকে হাকিমুল উম্মাহ শায়খ আয়মান আল-জাওয়াহিরি একজন গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিত্ব, যিনি শুধু একজন চিন্তাবিদ নন, বরং বাস্তব ময়দানের এক নিবেদিত সৈনিক। তাঁর মতামত আমাদের জন্য অতি মূল্যবান, বিশেষ করে যখন উম্মাহর করণীয় নির্ধারণের প্রশ্ন আসে।
হাকিমুল উম্মাহ শায়খ আয়মান আল জাওয়াহিরি'র মতে, এই সময়ের দাওয়াতি কাজের মূল মাকসাদ (উদ্দেশ্য) হলো:
-- তাওহীদের সঠিক ব্যাখ্যা উম্মাহর সামনে স্পষ্ট করে তুলে ধরা, যাতে ঈমান ও শিরকের মাঝে কোন আপোষ না থাকে।
-- ইসলামভিত্তিক ভ্রাতৃত্ব ও মুসলিম ঐক্যের প্রতি গুরুত্ব আরোপ করা—যা জাতি, বর্ণ, ভূখণ্ড ও দলীয় বিভেদের ঊর্ধ্বে উঠে একটি শক্তিশালী উম্মাহর ধারণাকে সামনে আনে।
-- তিনি ক্রুসেডারদের হুমকি সম্পর্কে উম্মাহকে সচেতন করে তুলতে চেয়েছেন—যাতে মুসলমানরা শত্রুর আসল চেহারা চিনে ফেলে এবং কেবল প্রতিরোধে নয়, আগাম প্রস্তুতিতেও নিজেদের গড়ে তোলে।
-- তিনি সমাজে এমন এক বুদ্ধিবৃত্তিক ও বিশ্বাসভিত্তিক মেরুকরণের ওপর জোর দিয়েছেন, যার কেন্দ্রবিন্দু হবে একমাত্র আল্লাহর দাসত্ব—না কোন জাতীয়তা, না ভাষা, না ভৌগোলিক পরিচয়।
-- ইসলামভিত্তিক ভ্রাতৃত্ব ও মুসলিম ঐক্যের প্রতি গুরুত্ব আরোপ করা—যা জাতি, বর্ণ, ভূখণ্ড ও দলীয় বিভেদের ঊর্ধ্বে উঠে একটি শক্তিশালী উম্মাহর ধারণাকে সামনে আনে।
-- তিনি ক্রুসেডারদের হুমকি সম্পর্কে উম্মাহকে সচেতন করে তুলতে চেয়েছেন—যাতে মুসলমানরা শত্রুর আসল চেহারা চিনে ফেলে এবং কেবল প্রতিরোধে নয়, আগাম প্রস্তুতিতেও নিজেদের গড়ে তোলে।
-- তিনি সমাজে এমন এক বুদ্ধিবৃত্তিক ও বিশ্বাসভিত্তিক মেরুকরণের ওপর জোর দিয়েছেন, যার কেন্দ্রবিন্দু হবে একমাত্র আল্লাহর দাসত্ব—না কোন জাতীয়তা, না ভাষা, না ভৌগোলিক পরিচয়।
এই চিন্তাভাবনাগুলোকে অনেক সময় ভুল করে "একটি বিশেষ দলের এজেন্ডা" মনে করা হয়। কিন্তু আসলে তা নয়। বরং এটা হলো একটি সুদূরপ্রসারী তাওহীদী আন্দোলনের ভিত্তি—যার মূল কথা হলো, মানুষ শুধু আল্লাহর দাস হবে, অন্য কারো নয়। এর মধ্য দিয়ে এক নতুন বুদ্ধিবৃত্তিক এবং মানসিক বিপ্লবের সূচনা হয়—যেখানে জাতীয়তা, সংস্কৃতি, রাষ্ট্র কিংবা আধুনিকতার নামে চাপিয়ে দেওয়া মাপকাঠিগুলোর পরিবর্তে মানুষের পরিচয় হয় 'মুসলিম'—এক আল্লাহর বান্দা হিসেবে।
শায়খ এর বক্তব্যগুলো আমাদের শেখায়—কীভাবে কেবল বাহ্যিক শত্রু নয়, বরং আমাদের ভেতরের চিন্তাগত পরাজয়, আত্মঘৃণা, এবং দীনহীন সংস্কৃতির প্রভাব থেকেও মুক্ত হতে হয়। তিনি আমাদের আহ্বান করেন একটি বিকল্প চেতনার দিকে, যেখানে বিজয় মানে শুধু অস্ত্রের জয় নয়, বরং আত্মমর্যাদা, বিশ্বাস, চিন্তা এবং লক্ষ্য—সবকিছুতেই ইসলামের ছাপ থাকা।
আজকে আমাদের সবচেয়ে বড় দরকার—এই চিন্তাধারাকে কেন্দ্র করে নতুন এক প্রজন্ম গড়ে তোলা। যারা শুধু শত্রুর বিরুদ্ধে স্লোগান দিবে না, বরং নিজেদের ভেতরে এমন এক ঈমানি সাহস ও বোধ গড়ে তুলবে, যা থেকে দাওয়াতের ঢেউ উঠবে, বিকল্প শিক্ষার ভিত্তি তৈরি হবে, সাংস্কৃতিক স্বাধীনতা অর্জিত হবে, এবং প্রতিরোধ একটি সুসংগঠিত পরিকল্পনায় রূপ নেবে।
এই চেতনার অভাবেই আমরা আজ নানা বিভ্রান্তিতে ভুগছি—কেউ কেবল আত্মরক্ষা নিয়ে ব্যস্ত, কেউ সংস্কৃতি রক্ষায়, কেউ আবার বাহ্যিক জিহাদে—কিন্তু ভেতরের চেতনাগত বিপ্লব ছাড়া এই খণ্ডিত চেষ্টাগুলো কখনো উম্মাহর মুক্তির পথ হতে পারে না।
সুতরাং, শায়খ এর চিন্তাকে যদি আমরা সত্যিকার অর্থে গ্রহণ করি, তাহলে তা একটি "পরিকল্পিত উম্মাহ নির্মাণের কর্মপদ্ধতি"তে রূপ নিতে পারে। আর যদি আমরা তা এড়িয়ে যাই, তাহলে আমাদের পথ চলা হবে দিকহীন, বিভ্রান্তিকর, আর কেবল আত্মরক্ষামূলক প্রতিক্রিয়ায় সীমাবদ্ধ।
Comment