Announcement

Collapse
No announcement yet.

পাঠচক্র- ৩৬ || “আরব বিশ্বে ইসরাইলের আগ্রাসী নীল নকশা” ।। মাহমুদ শীছ খাত্তাব || দ্বাদশ পর্ব

Collapse
This is a sticky topic.
X
X
 
  • Filter
  • Time
  • Show
Clear All
new posts

  • পাঠচক্র- ৩৬ || “আরব বিশ্বে ইসরাইলের আগ্রাসী নীল নকশা” ।। মাহমুদ শীছ খাত্তাব || দ্বাদশ পর্ব

    আরব বিশ্বে ইসরাইলের আগ্রাসী নীল নকশা
    ।।মাহমুদ শীছ খাত্তাব ||
    এর থেকেদ্বাদশ পর্ব
    ===================


    (খ) বিদেশী রাষ্ট্রসমূহের সহানুভূতি আকর্ষণ : আরবদের মধ্যে কেউ কেউ এ কথা বিশ্বাস করে যে, ইসরাঈল যদি শান্তিতে বিশ্বাসী না হয়, তা'হলে জাতিসংঘ তাকে বাধ্য করার ক্ষমতা রাখে এবং শাস্তি প্রস্তাব গ্রহণে তার উপরে চাপ সৃষ্টি করতে পারে।

    জাতিসংঘের সদস্য রাষ্ট্রসমূহের মধ্যে ইসরাঈল একমাত্র দেশ যার অন্তর্ভুক্ত নির্ভর করছে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদে গৃহীত কয়েকটি প্রস্তাব প্রতিপালনের উপর। নিম্নের বিবৃতিটি জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদে ১৯৪১ সালের ১১ই মে তারিখে গৃহীত প্রস্তাব নং ৩৭৩/৩ থেকে নেওয়া হয়েছে। সেখানে বলা হয়েছে, “জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদ নিম্নোক্ত কারণগুলোর ভিত্তিতে ইসরাঈলকে জাতিসংঘের সদস্য রাষ্ট্র হিসেবে গ্রহণে সম্মত হলো : (১) কোন রকম দ্বিধা ছাড়াই ইসরাঈল জাতিসংঘ সনদ মেনে চলবে এবং সদস্য হবার পরদিন থেকেই সে উক্ত সনদ অনুযায়ী কাজ করতে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হ'তে চেয়েছে। (২) বিশেষ করে সে ১৯৬৭ সালের ২৯ শে নভেম্বর ও ১৯৪৮ সালের ১১ই জানুয়ারীতে গৃহীত প্রস্তাবের প্রতি সম্মান প্রদর্শন করবে—এই মর্মে উপরিউক্ত প্রস্তাবসমূহ বাস্তবায়িত করার জন্য জাতিসংঘের নিয়োজিত বিশেষ রাজনৈতিক কমিটির সম্মুখে ইসরাঈলী প্রতিনিধি পূর্ণ বিবরণ ও ব্যাখ্যাসহ ইতিমধ্যেই নোটিশ প্রদান করেছে।[1]

    প্যালেস্টাইনের ব্যাপারে জাতিসংঘ সনদ মেনে চলার উপরিউক্ত চুক্তিতে সম্মত হওয়া ইসরাঈলের একটা কূটকৌশল বৈ কিছু নয়। জাতিসংঘে প্রবেশলাভে যাতে তার বাধা দূর হয়। ইসরাঈল রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার পর এটাই ছিল তার রাজনৈতিক ধাপ্‌পাবাজির প্রথম উদাহরণ। প্রকৃত রাজনৈতিক উদ্দেশ্যকে ধামাচাপা দেওয়ার জন্য এইভাবে সে অস্পষ্ট, দ্ব্যর্থবোধক ও স্ববিরোধী ভূমিকা গ্রহণ করে চলেছে।

    জাতিসংঘে সদস্যপদ লাভ এবং উপরিউক্ত শর্তসমূহ পালনে ওয়াদাবদ্ধ হওয়ার মাত্র দু'মাস পরেই ইসরাঈলী পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে জাতিসংঘের পুণর্মিলন কমিটির অন্তর্গত বিশেষ কমিটির নিকট ১৯৪৯ সালের ২৮শে জুলাই পেশকৃত এক সরকারী স্মারকলিপিতে বলা হয় যে, 'ঘড়ির কাঁটা পিছনে ফিরে যায় নাএটা যেমন অসম্ভব কোন আরব উদ্বাস্তুর পক্ষে তাদের ফেলে যাওয়া পুরাতন আবাসভূমিতে ফিরে আসা তেমনি অসম্ভব।[2]

    সদস্যপদ লাভের সাতমাস পরে ১৯৪৯ সালের ৫ই ডিসেম্বর ইসরাঈলী নেসেটে বেন গুরিয়ান ঘোষণা করেন যে, জাতিসংঘ কর্তৃক ১৯৪১ সালের ২৯ শে নভেম্বর গৃহীত বিভক্তিকরণ প্রস্তাবকে ইসরাঈল বাতিল, অবাস্তব ও বেআইনী মনে করে।

    এইভাবে ইসরাঈল জাতিসংঘের প্রস্তাবসমূহ বার বার অগ্রাহ্য করেছে এবং তা পালন করতে অস্বীকার করেছে। এমনকি সেই বক্তৃতা মঞ্চে দাঁড়িয়ে সে সরাসরি এই সমস্ত প্রত্যাখ্যান করেছে যেখানে দাঁড়িয়ে সে একদা, ঐ প্রস্তাবসমূহ মেনে চলার প্রতিশ্রুতি ঘোষণা করেছিল। সে প্রস্তাবে প্যালেস্টাইনকে দু'টি পৃথক রাষ্ট্রে বিভক্ত করা এবং ফিলিস্তিন উদ্বাস্তুদেরকে তাদের স্বদেশভূমিতে ফিরে আসার অধিকার অনুমোদন করা হয়েছে।

    অথচ এরপরেও জাতিসংঘ প্রতিটি বৈঠকে উপরিউক্ত প্রস্তাবসমূহ বাস্তু- বায়নের পুনঃ পুনঃ নিশ্চয়তা ব্যক্ত করে আসছে। সম্ভবত পবিত্র ভূমিতে (জেরুজালেম) আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষক দলের প্রধানের দেওয়া রিপোর্ট সহ জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদ ও সাধারণ পরিষদের রেকর্ডসমূহ পর্যালোচনা করলে একথা চুড়ান্তভাবে প্রমাণিত হয় যে, সে কখনোই যুদ্ধবিরতি চুক্তির সম্মান প্রদর্শন করেনি এবং সে সর্বদা এগুলোকে এমনভাবে ব্যাখ্যা দিয়েছে যাতে তার স্বার্থ রক্ষা পায় ও তার উদ্দেশ্য সাধনে সহায়ক হয়।[3]

    ইসরাঈল সেই সমস্ত এলাকায় আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষক দলের প্রবেশ প্রত্যাখ্যান করেছে, যে সব এলাকা থেকে সে তার আক্রমণ তৎপরতা চালিয়ে থাকে।[4] তারা তাদেরকে নির্জন এলাকাসমূহে স্বাধীনভাবে চলাফেরা করতে বাধা দিয়েছে।[5] এবং বাধা দিয়েছে অধিকৃত আরব ভূমিতে যেতে।[6] ইসরাঈল আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষক দলের পেছনে গুপ্তচর লাগিয়েছে, তাদের ফাইলসমূহ সেন্সর করেছে, এমনকি তারযোগ প্রেরিত তাদের গোপন সংবাদাদির পিছনেও চরম বেআইনীভাবে আড়ি পেতেছে।[7] এসব দ্বারা এ কথাই প্রমাণিত হয় যে, ইসরাঈল ঐ সমস্ত জনশূন্য (No man's land) এলাকা ও সীমান্তের ভূমি থেকে হাজার হাজার আরব অধিবাসী বিতাড়িত করে অন্যায়ভাবে তাদের ধন-সম্পদ কুক্ষিগত করেছে এবং বিরাট এলাকা দখল করে নিয়েছে।[8] ইসরাঈল এ সব জায়গায় তার আইনগত অধিকার দাবী করছে এবং সিরিয়া-ইসরাইল যুদ্ধ বিরতি কমিশনের বৈঠকসমূহ বয়কট করেছে। কেননা উক্ত কমিশন ঐ সমস্ত এলাকায় ইসরাঈলী অধিকার অনুমোদন করতে অস্বীকার করেছে।[9] অধিকন্তু ইসরাঈল যুদ্ধ বিরতি চুক্তির ধারাসমূহ লঙ্ঘন করে উক্ত জনশূন্য এলাকাসমূহে কৃষি বসতির নাম করে সৈন্যদের জন্য দুর্গসমূহ গড়ে তুলছে এবং এইসব দূর্গ আরবদের বিরুদ্ধে হামলায় কাজে ব্যবহার করছে।

    আরব সীমান্ত এলাকাসমূহে ইসরাঈলীদের অবিরত হামলা, যুদ্ধ বিরতি চুক্তি ও ইসরাঈলের কৃত আন্তর্জাতিক অংগীকারের প্রকাশ্য লঙ্ঘন, ইসরাঈলী আগ্রাসন, বিভিন্ন সময়ে পর্যবেক্ষণ কমিশন, জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদ ও সাধারণ পরিষদ কর্তৃক নিন্দিত হয়েছে। কিন্তু কোন লাভ হয়নি।

    ‘৬৭-এর জুন যুদ্ধের পরে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদ ও নিরাপত্তা পরিষদ বহু প্রস্তাব পাস করেছে। তন্মধ্যে সর্বাপেক্ষা গুরুত্বপূর্ণ প্রস্তাব ছিল যে, ইসরাঈল অধিকৃত সকল আরব ভূমি থেকে সরে আসবে, পবিত্র নগরী জেরুজালেমকে যুদ্ধপূর্ব অবস্থায় ফিরিয়ে আনবে এবং ১৯৬৮ সালের মে মাসে জেরুজালেম নগরীতে সামরিক কুচকাওয়াজ করা থেকে বিরত থাকবে। কিন্তু ইসরাঈল এসব প্রস্তাবের কোনটাই মানেনি। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সর্বদা ইসরাঈলকে নিরাপত্তা পরিষদ ও সাধারণ পরিষদে সমর্থন দিয়ে এসেছে, তার স্বার্থ রক্ষা করেছে এবং তার নীতিকে অনুসরণ করেছে।

    ইসরাঈলের স্বার্থের প্রতি মার্কিন সমর্থনের নযীর অসংখ্য। তার মধ্যে একটি উদাহরণ নিম্নে দেওয়া গেলঃ

    ২৮শে এপ্রিল তারিখে নেওয়া নিরাপত্তা পরিষদের সর্বসম্মত প্রস্তাব লংঘন করে জেরুজালেমের আরব অংশের উপর দিয়ে সামরিক কুচকাওয়াজ চালানোর জন্য ইসরাঈলের বিরুদ্ধে কঠোর নিন্দা প্রস্তাব গ্রহণের ব্যাপারে জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদ ১৯৬৮ সালে ২রা মে তারিখের এক বৈঠকে কৃতসংকল্প হয়। কিন্তু আমেরিকা তাতে ভেটো দিয়ে নস্যাৎ করে দেয়।

    ইসরাঈল মধ্যপ্রাচ্যে পুরাতন ও নতুন উপনিবেশবাদীদের প্রধান অবলম্বন। যা উপনিবেশিক শক্তিগুলোকে শান্তি ও যুদ্ধের সময়ে তাদের লক্ষ্য হাসিল করতে সহায়তা করে থাকে। আর এ কারণেই উপনিবেশবাদী শক্তিগুলো ইসরাঈলের সম্প্রসারণবাদ ও তার নিরাপত্তা বজায় রাখার ব্যাপারে সাহায্য করে থাকে এবং অবিরত রাজনেতিক সমর্থন ও সামরিক সাজ- সরঞ্জাম ও গোলাবারুদ দিয়ে তাকে রক্ষা করে চলেছে।

    মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পাশাপাশি নিঃসন্দেহে সেখানে অন্যান্য উপনিবেশিক শক্তির আর একটি ব্লক রয়েছে- যারা আমেরিকার পথেই কাজ করছে এবং তাদের উদ্দেশ্য হাসিলের অনুকলে প্রচেষ্টা চালাচ্ছে।

    সুতরাং উপরের আলোচনার সার সংক্ষেপ এভাবে টানা যেতে পারে-


    প্রথমত, আন্তর্জাতিক সংস্থাসমূহ অধিকৃত আরবভূমি থেকে ইসরাঈলকে সৈন্য প্রত্যাহার করতে এবং ফিলিস্তিনী উদ্বাস্তুদেরকে স্বদেশে প্রত্যাবর্তনের সুযোগ দিতে ইসরাঈলকে বাধ্য করতে সক্ষম নয় ।

    আরবদের পক্ষে সকল শান্তিপূর্ণ সমাধান প্রচেষ্টা পরিপূর্ণরূপে ব্যর্থতায় পর্যবসিত হয়েছেএক্ষেত্রে আরব সামরিক শক্তিই কেবল পারে ইসরাঈলী আগ্রাসনবাদী সম্প্রসারণ পরিকল্পনার চির সমাধি ঘটাতে এবং পারে পবিত্র ভূমিতে আরব অধিকার পুনঃপ্রতিষ্ঠা করতে।

    দ্বিতীয়ত, এ কথা সুনিশ্চিত যে, আন্তর্জাতিক সংস্থাসমূহের উপর নির্ভরশীলতা আরবদের কোন উপকারে আসবে না। কেননা ইসরাঈল তার পুরাতন ও নতুন উপনিবেশিক শক্তিসমূহ ও তাদের দোসরদের মদদ পাচ্ছে। অতএব আরবদেরকে পুরোপুরি তাদের নিজস্ব সামরিক শক্তির উপরই নির্ভর করতে হবে।

    তৃতীয়ত, শক্তিশালী বা শক্তি দ্বারা মদদপুষ্ট রাষ্ট্র গুলোকেই মাত্র অন্যান্য রাষ্ট্র সহানুভূতি দেখিয়ে থাকে। দুর্বলের প্রতি কেউই সহানুভূতি দেখায় না।

    স্বার্থই আন্তর্জাতিক সম্পর্কের মূল পরিচালক। এখানে কোনরূপ আবেগের স্থান নেই।


    (গ) অবশেষে একটি শান্তি চুক্তি সম্পাদনে আরবদেরকে বাধ্য করা : ইসরাঈল এ কথা ভালভাবে উপলব্ধি করে যে, ১৯৪৮ সালে তার জন্মলাভের পর থেকে এতদঞ্চলে যে অস্বাভাবিক পরিস্থিতির উদ্ভব হয়েছে তার সমাপ্তির জন্য তার পক্ষে সর্বাপেক্ষা উপকারী হবে শক্তির জোরে আরবদেরকে অবশেষে একটি শান্তি চুক্তিতে উপনীত করা। ইসরাঈল তার চারিদিকে দুশমন প্রতিবেশীর মাঝে চিরকালের জন্য টিকে থাকতে পারে না। সব প্রতিবেশী তাকে বয়কট করেছে রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিকভাবে এবং তার অস্তিত্বের প্রতি সর্বদা হুমকি হয়ে রয়েছে। অবিরত যুদ্ধের ফলে অপরিমেয় আর্থিক ও লোক ক্ষয়ের কারণে ইসরাঈলে বর্তমানে যে বিপর্যয়কর পরিস্থিতি বিরাজ করছে, তাকে সে চিরকাল এড়িয়ে চলতে পারে না।

    ইসরাঈল জানে যে, যুদ্ধ যতকাল ধরে চলুক না কেন, এবং তার জন্য যত রকমের ত্যাগ ও ক্ষতি স্বীকারের প্রয়োজন হোক না কেন, চুড়ান্ত বিজয় অবশেষে আরবদেরই হবে।

    প্রাজ্ঞ য়াহূদী নেতাগণ উক্ত বিষয়ে অত্যন্ত সজাগ এবং সে জন্যেই তারা য়াহূ দী জনগণকে বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে রেখেছে যাতে এক জায়গায় জড়ো হওয়ার ফলে ভবিষ্যতে সম্পূর্ণ ধ্বংস হওয়ার মত পরিস্থিতি এড়ানো যায়। আরবরা হয়তো কিছুদিনের জন্য ঘুমিয়ে আছে কিন্তু চিরকালের জন্য তারা ঘুমিয়ে থাকবে না। যদি আরবরা কাজের সঠিক দিক-নির্দেশ পায় এবং তা অনুসরণ করে তাহলে শীঘ্র হোক আর দেরীতে হোক, তারা ইসরাঈলীদেরকে ধ্বংস করবেই।

    ইসরাঈলী নেতারা বিশ্বাস করে নিয়েছিল যে, ১৯৪৮ সালে ইসরাঈলের জন্মের ফলে সৃষ্ট বাস্তবতার নিকট আরবরা মাথানত করবে এবং তার অস্তিত্বকে মেনে নেবে। কিন্তু পরবর্তী ঘটনাসমূহ তার উল্টা প্রমাণ বহন করে। ইসরাঈলের বিরুদ্ধে আরবদের ও মুসলমানদের জাতক্রোধ ( Holy grudge ) দিন দিন গভীর ও ভয়ংকর হচ্ছে। আরব নেতারা জানেন যে, ইসরাঈলকে স্বীকৃতি দেওয়া বা তার সংগে কোনরূপ শান্তিচুক্তি করা একেবারেই অসম্ভব। কেননা এর ফলে আরবদের মধ্যে ও মুসলিম জাহানে তাদের মর্যাদা ভূলুন্ঠিত হবে, এমনকি জীবনটাও হারাতে হবে (যেমনভাবে মিসরের সা'দতকে হারাতে হয়েছে--- অনুবাদক)সুতরাং এ কথা নিশ্চিত যে, আরবরা কখনোই স্বেচ্ছায় ইসরাঈলকে স্বীকার করে নেবে না।

    আরবদেরকে শান্তি চুক্তিতে এবং ইসরাঈলের অস্তিত্বকে স্বীকার করে নিতে বাধ্য করার জন্য ইসরাঈল হিংসার আশ্রয় নিয়েছিল। এজন্য সে ১৯৪৮ থেকে ১৯৫৬ সালের মধ্যে আরব দেশসমূহের উপর কয়েকবার হামলা চালায়। কিন্তু এসব আক্রমণ আরবদের পূর্ব সিদ্ধান্তের দৃড়তা বৃদ্ধিতে বরং সহায়ক হয়েছে।

    তারপর ১৯৫৬ সালে বৃটেন ও ফ্রান্সের সহয়তায় ইসরাঈল সুয়েজ খালের উপর কর্তৃত্ব কায়েম করলো এই অজুহাত দেখিয়ে যে, এর দ্বারা ইসরাঈল ও আরবদের মধ্যে শক্তির ভারসাম্য সৃষ্টি হবে। ইসরাঈল তখন দাবী করেছিল যে, আরবদের হামলার অগ্রগতি রোধ করার জন্য সে আগেভাগেই একটা প্রতিরোধ যুদ্ধ গড়ে তুলেছিল মাত্র।

    ইসরাঈলের সুয়েজ অভিযানের ফলে সে তার উদ্দেশ্যসমূহ হাসিলে ব্যর্থ হলো। অপর পক্ষে এর ফলে আরবদের মধ্যে তীব্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হলো এবং এটি একটি কাঁটার মতো বিদ্ধ হলো যা ইসরাঈলের বিরুদ্ধে ভবিষ্যতে এক দীর্ঘস্থায়ী যুদ্ধের প্রস্তুতি নেওয়ার কাজ বহুগুণ এগিয়ে নিল।

    ১৯৫৬ থেকে ১৯৬৭ সালের মধ্যে ইসরাঈল আরবদের বিরুদ্ধে ক্রমাগত আক্রমণ চালিয়েছে। অতঃপর ৬৭ সালে যখন সে আরবদেরকে পরাজিত করলো তখন ভেবেছিল যে, আরবরা এবার তার দেওয়া শর্ত মত শান্তিচুক্তি সম্পাদনে বাধা হবে যাতে সে আরবদের একটি বিরাট এলাকা দখলে রাখতে পারে। যাতে তার বিরুদ্ধে আরব অর্থনৈতিক অবরোধ ভেংগে দেওয়া হয় এবং সুয়েজ খালকে সে নিজস্ব ব্যবসায়িক স্বার্থে ব্যবহার করতে পারে।

    আরবরা উক্ত ব্যাপারে ইসরাঈলকে নিরাশ করেছে। বরং তাদের ন্যায্য অধিকার রক্ষার জন্য ইসরাঈলের বিরুদ্ধে এই দীর্ঘস্থায়ী উদ্দেশ্যে তারা সাহ- সিকতাপূর্ণ প্রস্তুতি শুরু করেছে, জয় না হওয়া পর্যন্ত যে যুদ্ধের শেষ নেই।

    সামরিক শক্তি রাজনৈতিক শক্তির একটি অংশবিশেষ। যখন দেশের কোন প্রয়োজনীয় উদ্দেশ্য সাধনে রাজনৈতিক প্রচেষ্টা ব্যর্থ হয়, তখন দেশের একমাত্র অবলম্বন হয় সামরিক শক্তি। ইসরাঈল এই নীতিই অনুসরণ করে থাকে। সে আরবদের উপরে তার দেওয়া শর্ত সাপেক্ষ জোর করে শান্তিচুক্তি চাপিয়ে দিতে চায়ইসরাঈল কি তাহ'লে যথার্থ অর্থেই শান্তি চায় ?

    আমি নিঃসন্দেহ যে, ইসরাঈল শান্তিতে বিশ্বাসী নয়, যতক্ষণ না সে শান্তি তার পুরো স্বার্থ বাস্তবায়নে সক্ষম হবে। সে কোন স্থায়ী শাস্তির বদলে বরং সামগ্রিক যুদ্ধ বিরতি কামনা করে। যাতে এই অবসরে সে পুন- রায় আগ্রাসন ও সম্প্রসারণবাদী থাবা বিস্তারের প্রস্তুতি গ্রহণ করতে পারে।

    তার প্রধান উদ্দেশ্য হলো বিশ্বের সমস্ত য়াহূ দীকে একটি বৃহত্তর ইসরাঈলে সমবেত করা--যা নীলনদ থেকে ইউফ্রেটিস (ফোরাত) পর্যন্ত বিস্তৃত হবে। এর বাইরে তাদের যত কথা, সবই প্রতারণামায়।

    ১৯৫০ সালের ৭ই এপ্রিলের এক বক্তৃতায় মেনাহিম বেগিন ঘোষণা করেন যে, একটি শান্তি চুক্তি নিষ্পত্তি হওয়া সত্ত্বেও ইসরাঈলী জনগণ বা ইসরাঈলের জন্য এমনকি আরবদের জন্যও কোনরূপ শান্তি আসতে পারে না, যতক্ষণ না আমরা আমাদের স্বদেশ ভূমিকে পুরোপুরি স্বাধীন করতে পারবো।[10]


    (ঘ) অপরাপর দেশগুলোর মধ্যে ইসরাঈলের রাজনৈতিক মর্যাদা সমুন্নত করা: পৃথিবীর অন্যান্য দেশের মধ্যে নিজের দেশের মর্যাদা নির্ণীত হওয়ার প্রধান বিষয় হলো শক্তি। শক্তিমানেরা সর্বদা উচ্চস্থান দখল করে থাকে, তখন দুর্বলেরা স্বভাবতই পিছনে পড়ে যায় ।

    জাতীয়তাবাদী চীনের বর্তমান অবস্থান দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পূর্বেকার অবস্থান থেকে সম্পূর্ণ ভিন্ন—যখন জাপানীরা এর একটি বিরাট অংশ দখল করে নিয়ে ছিল। সাম্রাজ্য হারানোর পর বৃটেনের বর্তমান অবস্থান পূর্বেকার অবস্থান থেকে সম্পূর্ণ ভিন্ন—যখন বলা হতো যে, বৃটিশ সাম্রাজ্যে সূর্য অস্ত যায় না, বৃটেনের ক্ষেত্রে আজ যা সত্য, ফ্রান্স, ইটালী ও জার্মানীর ক্ষেত্রেও তাই-ই সত্য ।

    যুদ্ধের পূর্বে জার্মানীর অবস্থা ছিল বিরাট। কোন রাষ্ট্রের ভাগ্য তখন হিটলারের টেলিফোনেই নির্ধারিত হতো। উদাহরণ স্বরূপ অস্ট্রিয়া দখলের সময়কার কথা ধরা যেতে পারে।

    দ্বিতীয় মহাযুদ্ধের পূর্বে জার্মানী সকল রাজনীতিকদের নিকট ছিল গর্বের বস্তু। কিন্তু যখন যুদ্ধে হেরে গেল, তখন সে তার সমস্ত রাজনৈতিক বিশিষ্টতা হারিয়ে একটা সাধারণ কলোনীতে পরিণত হলো।

    দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পূর্বেকার রাশিয়াও জার্মানীর বিরুদ্ধে জয়লাভ করার পরবর্তীকালের রাশিয়া কখনোই এক নয়। বর্তমানে সে বিশ্বের দু'টি বৃহত্তম শক্তির অন্যতম। সোভিয়েট ইউনিয়নের ক্ষেত্রে যা সত্য, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ক্ষেত্রেও তাই-ই সত্য। এমনিভাবে একটি বিপুলায়তন রাষ্ট্রের অবস্থা একটি ক্ষুদ্রায়তন রাষ্ট্রের অবস্থা থেকে ভিন্নতর।

    সে কারণেই ইসরাঈল আরব বিশ্বে তার সম্প্রসারণবাদকে বিশ্বের ও ঔপনিবেশিক শক্তিসমূহের মধ্যে তার মর্যাদা বৃদ্ধির জন্য গুরুত্বপূর্ণ বিষয় বলে মনে করে।



    [1]. জাতিসংঘসাধারণপরিষদেরগৃহীতপ্রস্তাবনং৩০৩ (), ১১ইমে, ১৯৪৯
    [2]. The general assembly of the United nations Document, No, 1367 annex No. 4, Chapter 3. Section (H), lst. Paragraph.
    [3]. Von-Horn-general Karj : A military peace mission, London 1966, p. 79
    [4]. Burns, p. 55.
    [5]. Hutchinson, The violent armistice: A military observer’s look on the Arab-Israeli struggle.
    [6]. Burns, p. 55.
    [7]. General yon Horn described Israeli espionage operations in his book : Military mission for peace in the eighth and Nineth chapter of the book.
    [8]. নিম্নোক্তদলিলবইসমূহেএরপ্রমাণপাওয়াযাবেঃ
    () General assembly document NO. 1873, paper 55, para 514.
    () Security council document No. 3596, appendix 8.
    () ,, ,, No. 2067, para 44.
    () ,, ,, ,, No. 3759, part 3 of appendix,
    22-23.
    () ,, ,, ,, No. 2659, para l of second
    part of appendix,
    () ,, ,, ,, No. 25, 1950.
    () ,, ,, ,, No. 2157.
    () General Benikey’s report to the security council of 9th Nov `52.
    () General Hutchinson: The vislent armistice, p. 20-28.
    [9]. Jerusalem post newspaper, issue of 29th Dec, 1967. Statement made by Ebba Iban.
    [10]. Israel an Economic and Military danger, Beirut. P. 31.




    আরও পড়ুন​
    একাদশ পর্ব ----------------------------------------------------------------------------------------- ত্রয়োদশ পর্ব
    Last edited by tahsin muhammad; 1 day ago.

  • #2
    ইতিহাস সাক্ষী, যখনই আল্লাহর দ্বীন বিজয়ী হয়েছে এবং কুফর ও ফাসাদের দুর্গ নির্মূল হয়েছে, তখন তা জিহাদ ও কিতালের ময়দানে নামার দ্বারাই হয়েছে।
    শুধু দাওয়াত ও তাবলীগের মাধ্যমেও এই উদ্দেশ্য অর্জিত হয়নি। জিহাদ ও কিতালকে বাইরে রেখে, কোন শান্তিপূর্ণ পথেও তা অর্জন করা যায়নি।
    যখন বাতিলের বিরুদ্ধে হকের তরবারি পরিচালিত হয়েছে, তখনই বড় বড় তাগুতের পতন হয়েছে।


    একটি সংবাদ… একটি বার্তা:
    উস্তাদ উসামা মাহমুদ হাফিযাহুল্লাহ




    Comment


    • #3
      আমি নিঃসন্দেহ যে, ইসরাঈল শান্তিতে বিশ্বাসী নয়, যতক্ষণ না সে শান্তি তার পুরো স্বার্থ বাস্তবায়নে সক্ষম হবে। সে কোন স্থায়ী শাস্তির বদলে বরং সামগ্রিক যুদ্ধ বিরতি কামনা করে। যাতে এই অবসরে সে পুন- রায় আগ্রাসন ও সম্প্রসারণবাদী থাবা বিস্তারের প্রস্তুতি গ্রহণ করতে পারে।
      তার প্রধান উদ্দেশ্য হলো বিশ্বের সমস্ত য়াহূ দীকে একটি বৃহত্তর ইসরাঈলে সমবেত করা--যা নীলনদ থেকে ইউফ্রেটিস (ফোরাত) পর্যন্ত বিস্তৃত হবে। এর বাইরে তাদের যত কথা, সবই প্রতারণামায়।
      এটাই হচ্ছে চূড়ান্ত বাস্তবতা।
      আর জাতিসংঘের কোনো রুলস মান্য করতে ইসরাইল কখনো বাধ্য ছিলো না। বরং সে এটাকে গোণায়ও ধরে না। যেহেতু জাতিসংঘ জন্মলগ্ন থেকেই জায়নবাদীদের সম্পূর্ণ কতৃত্বাধীন। তাই ইসরাইলের স্বার্থের বাইরে যেয়ে এরা কখনোই কিছু করার সামর্থ্য রাখে না। বা কিছু করবে এই আশা করাই বোকামি।
      نحن الذين بايعوا محمدا ﷺ على الجهاد ما بقينا أبدا

      Comment

      Working...
      X