“আরব বিশ্বে ইসরাইলের আগ্রাসী নীল নকশা
।।মাহমুদ শীছ খাত্তাব ||
এর থেকে – চতুর্দশ পর্ব
===================
।।মাহমুদ শীছ খাত্তাব ||
এর থেকে – চতুর্দশ পর্ব
===================
ইসরাঈলের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করার দায়িত্ব এখন সমগ্র মুসলিম জাহানের উপর আপতিত হয়েছে। এর কারণসমূহ হলো ইসরাঈলের আগ্রাসী সম্প্রসারণবাদ, ফিলিস্তিনী আরব মুসলিমদেরকে তাদের স্বদেশ থেকে বিতাড়ন, য়াহূদীদের দ্বারা তাদের উপর চরম অবিচার ও নিগ্রহ, আল-আকসা মসজিদে অগ্নিসংযোগ, কতকগুলো মসজিদের ধ্বংস সাধন, কতকগুলোকে দখল ও সেগুলোর পবিত্রতা হনন প্রভৃতি। এক্ষণে অস্ত্র বহনে সক্ষম এমন প্রত্যেক আরব মুসলিমের জন্য অপরিহার্য হলো ইসরাঈলের বিরুদ্ধে যুদ্ধে যোগদান করা। অন্যদিকে যারা অর্থ দিয়ে সাহায্য করতে পারেন, তাদেরকেও উদারভাবে ও মুক্ত হস্তে এগিয়ে আসতে হবে। বর্তমান অবস্থায় কোন আরব বা কোন মুসলিমের পক্ষ উপরিউক্ত দায়িত্ব ও কর্তব্য পালন থেকে বিরত থাকার কোন অবকাশ নেই।
বিশ্বে ১০০ মিলিয়নের উপরে আরব এবং ৬০০ মিলিয়নের উপরে মুসলিম বাস করে থাকেন। সাধারণ নিয়ম অনুযায়ী এটাই স্থিরীকৃত হয় যে, প্রত্যেক জাতির এক-দশমাংশ অস্ত্র বহনে সক্ষম থাকে। অতএব উক্ত হিসেব অনুযায়ী আরবরা প্রায় ১০ মিলিয়ন ও অন্যান্য মুসলিমগণ প্রায় ৬০ মিলিয়ন যোদ্ধার যোগান দিতে সক্ষম। ইসরাঈলের বর্তমান (১৯৭০ সালে জনশক্তি আড়াই মিলিয়নের ঊর্ধ্বে নয়। এক্ষেত্রে আরবরা ও মুসলিমগণ যদি জিহাদে অবতীর্ণ হন তাহ'লে ইসরাঈলের অবস্থা কি হতে পারে? এছাড়াও আরবদের ও মুসলমানদের বস্তুগত ও নৈতিক শক্তি ইসরাঈলীদের চাইতে বিস্ময়করভাবে অনেক বেশী।
ইসরাঈলীদের শক্তি সুসংগঠিত। সে কারণ ইসরাঈলীরা তাদের সীমাবদ্ধ যোগ্যতা সত্ত্বেও আরবদের বিপুল শক্তিকে অতিক্রম করে যেতে সক্ষম হচ্ছে। অতএব আরবদের এখন প্রয়োজন কেবল সুষ্ঠু সংগঠনের।
ইসরাঈলের জন্মলগ্ন থেকে আরবরা এবং মুসলমানরা তার প্রতি শুভেচ্ছা দেখিয়ে এসেছে। কিন্তু যখন আল-আকসা মসজিদে অগ্নিসংযোগ করা হলো তখনই আরবরা ভীষণ ক্রোধে ফেটে পড়লো এবং জেরুজালেম ও প্যালেস্টাইনের প্রতি সহিষ্ণু মনোভাবে পোষণকারী গভর্নরদের প্রতি ভীতি প্রদর্শন শুরু করলো।
১৯৬৯-এর ২২ থেকে ২৬শে সেপ্টেম্বর রাবাতে অনুষ্ঠিত ইসলামী শীর্ষ সম্মেলন একটি ঐতিহাসিক ঘটনা ছিল। এই সম্মেলন জেরুজালেম ও প্যালেস্টাইনের ব্যাপারে আরব ও মুসলিম সমাজের গভীর অনুভূতির প্রতিফলন ছিল। ২৬টি আরব ও মুসলিমদেশের রাষ্ট্রপ্রধান ও সরকার প্রধানগণ এই সম্মেলনের প্রতিনিধিত্ব করেন।
অধিকাংশ মুসলিম দেশের উপস্থিতিতে অনুষ্ঠিত এই সম্মেলনের ফল- শ্রুতি হিসেবে সাগর-উপসাগর থেকে মহাসাগর ব্যাপী সর্বত্র মুসলমানদের মধ্যে একটি ব্যাপক আশাবাদের সূচনা হয় যে, এই সম্মেলনের বাস্তবসম্মত সিদ্ধান্তাবলী শুধুমাত্র নিষ্ফল উত্তেজনা সৃষ্টির পরিবর্তে সমস্ত আরব ও মুসলিম জনসাধারণকে পবিত্র জিহাদের পক্ষে পরিচালিত করবে। কিন্তু সম্মেলন অনুষ্ঠানের ফলে উদ্ভূত উচ্চাশা দপ করে নিভে গেল কয়েকটি মিটিং হওয়ার পর। এর কতকগুলি কারণের মধ্যে সর্বাপেক্ষা বড় কারণ ছিল, কোন- রূপ পূর্ব প্রস্তুতি না থাকা --- যা সম্মেলনের মধ্যকার প্রতিটি মিটিংয়েই প্রবলভাবে বিরাজ করছিল। সম্মেলন অনুষ্ঠানের পূর্বে অবশ্যই সতর্ক পরিকল্পনা গ্রহণ করা উচিত ছিল, যাতে করে নির্দিষ্ট বিষয়বস্তুগুলোর উপরে বিস্তারিত অবতারণা করা সম্ভব হয়।
সম্মেলনে গৃহীত গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্তসমূহ হলো- আল-আকসা মসজিদে অগ্রিসংযোগের নিন্দা জ্ঞাপন ও ফিলিস্তিনী জনগণের ন্যায্য অধিকারের প্রতি সমর্থন দান। ইসরাঈলকে অধিকৃত আরব এলাকা থেকে তার সৈন্য প্রত্যাহারে বাধ্য করার লক্ষ্যে সম্মেলন ঐ সকল দেশের প্রতি আন্তরিক আবেদন জানায়, যাদের উপরে বিশ্বশান্তি নির্ভর করছে, যাতে তারা এ ব্যাপারে ব্যক্তি- গত ও সমষ্টিগতভাবে তাদের প্রচেষ্টা জোরদার করেন।[1]
এটা স্পষ্ট যে, সম্মেলনে গৃহীত সিদ্ধান্তসমূহ ছিল বেকার। আশা করা হয়েছিল যে, সম্মেলন জিহাদকালীন জরুরী অবস্থা ঘোষণা করবে এবং প্রত্যেক মুসলিম দেশকে আর্থিক ও নৈতিকভাবে দায়িত্বসমূহ ভাগ করে দেবে এবং এটাও সিদ্ধান্ত নেবে যে, কি পদ্ধতিতে এবং কবে নাগাদ জিহাদ শুরু হবে।
নিশ্চিত ফললাভের জন্য আরব ও ইসলামী বিশ্বের আবেগকে স্বচ্ছ করার অনুকূলে যে গতি সঞ্চার হয়েছিল তা ছিল একেবারেই পরিষ্কার। যদি আরবরা সেই গতির অনুসরণ করতে পারতো, তাহ'লে তারা নিশ্চিতভাবে ইসরাঈলী আগ্রাসন রুখতে পারতো শুধু নয়। বরং জেরুজালেমের পবিত্র ভূমিতে আরব ও মুসলিম অধিকার পুনঃ প্রতিষ্ঠায় সক্ষম হতো। যদি আরবরা এখনও এই গতির অনুসরণে ব্যর্থ হয় তাহ'লে ইসরাঈল রাষ্ট্র 'অবশ্যই একদিন না একদিন নীল থেকে ইউফ্রেটিস পর্যন্ত বিস্তার লাভ করবে।
বিশ্ব য়াহূদী আন্দোলন তাদের সম্প্রসারণবাদী লক্ষ্যসমূহ বাস্তবায়নের একটি সুপর্যালোচিত পরিকল্পনা পেশ করেছে। এই পরিকল্পনাটি গভীরভাবে অধ্যয়ন করলে এ কথা প্রমাণিত হয় যে, ইসরাঈল তার চুড়ান্ত সামরিক, রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও সামাজিক লক্ষ্যসমূহ অর্জনের পথে খুব ধীর ও দৃড় গতিতে অগ্রসর হচ্ছে।
১৮৯৭ সালে সুইজারল্যান্ডের 'ব্যাসল' নগরীতে অনুষ্ঠিত প্রথম য়াহূদী সম্মেলেনে "বিশ্ব য়াহূদী সংবিধান' (World Zionism Cnostitution) রচিত হয় এবং উহাকে বাস্তবে রূপদানের জন্য প্রয়োজনীয় বিভিন্ন রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক সংগঠন ও প্রতিষ্ঠানসমূহ নিয়োজিত করা হয়। ফল স্বরূপ বিশ্ব য়াহূ দী আন্দোলনের অর্থনৈতিক ও নৈতিক সমর্থনে য়াহূ দী উদ্বাস্তুদের আগমণ নিয়মবন্ধ করা হয় এবং পূর্ব পরিকল্পনা অনুযায়ী তাদেরকে দিয়ে ১৯০৭ সাল থেকে প্যালেস্টাইনী আরব এলাকাসমূহে কলোনী স্থাপনের সূত্রপাত করা হয়।
১৯১৭ সালে 'বেলফোর চুক্তি হয়। এটি ছিল ইসরাঈলের সর্বাপেক্ষা বড় রাজনৈতিক বিজয়। কেননা এই চুক্তিবদ্ধেই ইসরাঈল তৎকালীন সেরা উপ- নিবেশিক শক্তি গ্রেট বৃটেনের বহু আকাঙ্ক্ষিত রাজনৈতিক সমর্থন লাভ করে।
১৯২৭ সালে প্যালেস্টাইনে য়াহূদী উদ্বাস্তুদের সংখ্যা বৃদ্ধি পায় এবং তদনুযায়ী য়াহূ দী কলোনীর সংখ্যাও বেড়ে যায়। বিশ্ব য়াহূ দী আন্দোলন প্যালে- ইস্টাইনের বিরাট এলাকায় জেঁকে বসে। তা চাই ক্রয়ের মাধ্যমে হোক, চাই বৃটিশ কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে অন্যায়ভাবে জবর দখলের মাধ্যমে হোক।
১৯৩৭ সালে প্রথম বিপুল পরিমাণের অস্ত্র-শস্ত্র ও গোলাবারুদ নিয়ে পবিত্র ভূমিতে নিয়মিত য়াহূদী সেনাবাহিনী গঠনের সুত্রপাত হয়। এছাড়াও সেখানে ছিল বেশ কিছু সংখ্যাক য়াহূ দী সন্ত্রাসবাদী সংগঠন।
১৯৪৭ সালে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র প্যালেস্টাইনের একাংশে আইনগতভাবে য়াহূদী স্বদেশ ভূমি (Jewish National Home) প্রতিষ্ঠার অধিকার অনুমোদন করত পার্টিশন ডিক্রি (Partition decree) ঘোষণা করে।
১৯৫৭ সালে ইসরাঈল পূর্ণ নৌ-স্বাধীনতা নিয়ে আকাবা উপসাগর দিয়ে এশিয়া ও আফ্রিকায় ব্যবসায় পরিচালনা করে এবং ইসরাঈলী বন্দর ইলিয়টকে কাজে লাগায় ।
১৯৬৭ সালে ইসরাঈল জর্ডানের পশ্চিম তীর, গাযা, সুয়েজ খালের কিনারা পর্যন্ত সিনাই এলাকা এবং সিরিয়ার (গোলান) মালভূমি দখল করে। যা ইসরাঈলের উত্তরাংশ জুড়ে আছে এবং যা মিসর, সিরিয়া ও লেবাননের স্বার্থে অতীব গুরুত্বপূর্ণ।
লক্ষণীয় যে, ইসরাঈল প্রতি দশ বৎসর অন্তর পূর্ব পরিকল্পনা অনুযায়ী তার এক-একটি প্রধান লক্ষ্য হাসিল করে নিচ্ছে।
অধিকাংশ ঐতিহাসিক এ কথা স্বীকার করেন যে, য়াহূদীদের সমস্ত প্রটো- কল যা পরিকল্পনার খসড়াসমূহ তাদের বিজ্ঞ ও বিচক্ষণ ব্যক্তিগণ ১৮৯৭ সালে সুইজারল্যান্ডে অনুষ্ঠিত প্রথম য়াহূদী সম্মেলনে রচনা করেন। এই সম্মেলন ১৮১৭–১৯৯৭ সাল পর্যন্ত আগামী একশত বৎসরের মধ্যে বিশ্ব য়াহূ দী সম্প্রসারণবাদ ও য়াহূ দী পুনর্বাসন পরিকল্পনার পূর্ণ বাস্তবায়নের সময় নির্ধারণ করে। আরব ও মুসলমানগণ কি য়াহূ দীদের উক্ত লক্ষ্য হাসিলের অনুমতি দেবেন ?
ইসরাঈলের উপর আরব ও মুসলমানদের চূড়ান্ত বিজয়লাভের জন্য এবং সেই কঠিন বিপদের পরিসমাপ্তি ঘটানোর জন্য, যা তাদের রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক ভবিষ্যতকে সংকটাপন্ন করে রেখেছে, প্রয়োজন কেবল একটি বস্তুর। সেটি হ'লো আমাদের সমস্ত নৈতিক ও মানসিক যোগ্যতাকে সুসংবদ্ধ করা, যাতে তা ঐ একটি যথাযোগ্য শক্তি হিসেবে গণ্য হয় এবং মধ্যপ্রাচ্যে শান্তি আনয়নে সক্ষম হয়। নিশ্চয় তা ইসরাঈলী সম্প্রসারণ ও য়াহূদী পুনর্বাসন পরিকল্পনায় নৈরাশ্য ডেকে আনবে।
সমস্ত রাজনৈতিক প্রচেষ্টা ব্যর্থ হবে, যতদিন আরব ও মুসলিমগণ দুর্বল থাকবে। কিন্তু যখনই তারা শক্তিশালী হবে, তাদের সকল প্রচেষ্টা সফল হবে।
১৯৬৭ সালের পর থেকে ইসরাইলকে নিন্দা করে ও অধিকৃত আরব এলাকা থেকে তার সৈন্য প্রত্যাহার করে নেওয়ার দাবী জানিয়ে জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদ ও সাধারণ পরিষদে বহু প্রস্তাব গৃহীত হয়েছে। কিন্তু ইসরাঈল সকল প্রস্তাবকেই পুরাপুরিভাবে এড়িয়ে গেছে। একটি সুষ্ঠু সমাধানে পৌছানোর জন্য জাতিসংঘ এবং চারটি বৃহৎ শক্তি রাজনৈতিকভাবে বহু প্রচেষ্টা চালিয়েছে। কিন্তু সেই সকল প্রচেষ্টা পুরোপুরিভাবেই ব্যর্থ হয়েছে।
এখন সামরিক সমাধান ব্যতীত আরবদের নিকট অন্য কোন পথ খোলা নেই, যা কেবলমাত্র শক্তির উপরেই নির্ভর করে। কিন্তু এটা কিভাবে সম্পন্ন হবে ?
১৩ হিজরী সনে হযরত খালিদ বিন ওয়ালিদ (রা.) সিরিয়া, লেবানন, প্যালেস্টাইন ও জর্ডান বিজয়ের উদ্দেশ্যে সৈন্য পরিচালনা করেন। তিনি রোমানদের বিরুদ্ধে সেই যুদ্ধ কৌশল অবলম্বন করেছিলেন, যেমন কৌশল তারা তাদের শত্রু পক্ষের বিরুদ্ধে ব্যবহার করতো।
রোমান কৌশলের ভিত্তি ছিল এই যে, তারা সৈন্যদলকে সম্মুখ ভাগ, মধ্যভাগ ও বিশেষ ভাগ, মোট তিনভাগে ভাগ করতো এবং দুই পাশে দু'টি বিশেষ পার্শ্ব সেনা ইউনিট রাখতো, ভিন্ন ভিন্ন সেনাপতির অধীনে প্রতিটি ব্যাটেলিয়ানে ১,০০০ হাজার করে যোদ্ধা থাকতো। এই ব্যাটেলিয়নকে (ল্যাটিন ভাষায়) ‘কারদাস' (Kardous) বলা হতো।[2]
খালিদ (রা.) ইতোপূর্বে আরবদের গৃহীত সকল কৌশল বাদ দিয়ে সম্পূর্ণ নতুন কৌশলে তাঁর সেনাদলকে ৩৬টি কারদাসে ভাগ করলেন এবং রোমানদের বিরুদ্ধে ইয়ারমুকের ময়দানে সিদ্ধান্তকারী বিজয় লাভ করলেন।[3]
খালিদ বিন ওয়ালিদ (রা.) যদি উক্ত যুদ্ধে আরবদের এতকালের অনুসৃত পুরাতন কৌশল অবলম্বন করতেন, তাহ'লে তিনি কখনোই জয়লাভ করতে পারতেন না।
ইসরাঈল সামগ্রিক যুদ্ধ পদ্ধতিতে ( Collective war system ) বিশ্বাস করে। এই যুদ্ধ পদ্ধতিতে সে তার সমস্ত বস্তুগত ও নৈতিক যোগ্যতাকে কাজে লাগায় এবং যুদ্ধের পিছনে নিয়োজিত করে।
১৯৬৭-এর জুন যুদ্ধে ইসরাঈল তার পূরা জনশক্তির ১১ শতাংশকে যুদ্ধে নিয়োজিত করে। অথচ আরবরা করেছিল মাত্র ৩,০০০ হাজার ব্যক্তিকে।
ইসরাঈল তার অন্যান্য বস্তুগত যোগ্যতাকেও যুদ্ধের সময় কাজে লাগায় । এমনকি হকারদের ব্যবহৃত ঠেলাগাড়ীও যুদ্ধের ময়দানে বিশেষ প্রয়োজনে ব্যবহার করা হয়। সে তুলনায় আরবরা তাদের বস্তুগত যোগ্যতাসমূহের কতটুকু যুদ্ধে লাগাতে পেরেছে? ইসরাঈল তার পূরা নৈতিক শক্তিকে যুদ্ধে লাগাতে সক্ষম ছিল, সে তুলনায় আরবরা কতটুকু তাদের নৈতিক সামর্থ্যকে কাজে লাগাতে সক্ষম হয়েছে ?
আরব ও মুসলিমদেরকে সামগ্রিক যুদ্ধের পথ বেছে নিতে হবে। যে পদ্ধতির অনুসরণ করতো আরবরা ১৪০০ শত বৎসর পূর্বে। যেমন পাক কালামে বলা হয়েছেঃ
তোমরা অভিযানে বেরিয়ে পড়ো হালকা অথবা ভারী রণ সম্ভার নিয়ে এবং জিহাদে ঝাঁপিয়ে পড়ো আল্লাহর রাস্তায় তোমাদের জান ও মাল নিয়ে। এটাই তোমাদের জন্য শ্রেয় যদি তোমরা বুঝো।[4]
আমাদের সেই সব পূর্ব পুরুষ বীর যোদ্ধাদের উত্তরসূরী সন্তানেরা কি বিংশ শতাব্দীতে এসে পুনরায় সামগ্রিক যুদ্ধ কৌশল প্রয়োগে সক্ষম নয় ?
চুড়ান্ত বিজয়লাভের জন্য কোন নিয়মিত সেনাবাহিনী কোনদিন একক- ভাবে দায়িত্ব নিতে পারে না। বরং সমগ্র জাতি এর জন্য দায়িত্বশীল। সেনাবাহিনী মুখপাত্র (Sarehead) হিসেবে যুদ্ধ করে মাত্র। কোন আরব বা মুসলিম সাধারণ নাগরিক নিজেকে এ ব্যাপারে কোনরূপ দায়িত্বমুক্ত বলে দাবী করতে পারে না এবং নিজেকে একজন সাধারণ দর্শক হিসেবে ভাবতে পারে না।
প্রতিটি আরব ও মুসলিম জনশক্তিকে এখন ঠিক ঠিক প্ল্যান মুতাবিক যুদ্ধের পিছনে নিয়োজিত করতে হবে, যাতে প্রত্যেক সৈনিক বুঝতে পারে যে, তার কাজ কি এবং কি ভাবে সে কাজ সর্বোত্তম পন্থায় সম্পাদন করা যাবে।
অস্ত্র বহনে সক্ষম প্রত্যেক ব্যক্তিকে ভালভাবে অস্ত্রচালনার প্রশিক্ষণ দিতে হবে এবং শিখতে হবে কি ভাবে যুদ্ধের সময়ে অন্য সৈন্যদের সংগে সহযোগিতা করতে হয়। যুদ্ধের জন্য প্রয়োজনীয় বিভিন্ন অস্ত্রশস্ত্র দ্বারা তাদেরকে সুসজ্জিত করতে হবে। শুধু তাই নয়, তাদেরকে একটি দায়িত্বশীল কম্যাণ্ডের অধীনে একটি ইউনিটে সুসংগঠিত করতে হবে।
[1]. See the details of the statement, issued by the Congress in the Al-Ahram Newspaper of 26.9.69.
[2]. ১,০০০সৈন্যেরপ্রতিটি ‘কারদাস’ ১০টিডিভিশনেবিভক্তথাকতো।বিস্তারিতদেখুন Leaders of the conquest of Iraq and the Island, P. 167.
[3]. তাবারী, ৫৬৩-২, ইবনুলআছীর, ১৫৮-২।
[4]. সূরায়েতাওবাঃ৪১।
আরও পড়ুন
ত্রয়োদশ পর্ব ------------------------------------------------------------------------------------------ পঞ্চদশ পর্ব
Comment