Announcement

Collapse
No announcement yet.

পাঠচক্র- ৩৬ || “আরব বিশ্বে ইসরাইলের আগ্রাসী নীল নকশা” ।। মাহমুদ শীছ খাত্তাব || শেষ পর্ব

Collapse
This is a sticky topic.
X
X
 
  • Filter
  • Time
  • Show
Clear All
new posts

  • পাঠচক্র- ৩৬ || “আরব বিশ্বে ইসরাইলের আগ্রাসী নীল নকশা” ।। মাহমুদ শীছ খাত্তাব || শেষ পর্ব

    আরব বিশ্বে ইসরাইলের আগ্রাসী নীল নকশা
    ।।মাহমুদ শীছ খাত্তাব ||
    এর থেকেশেষ পর্ব
    ===================

    আধ্যাত্মিক কম্যান্ড কমিটিতে অধিকতর ফলদায়ক করার জন্য বেশ কিছু সংখ্যক আধ্যাত্মিক নেতাকে স্বেচ্ছাকৃতভাবে সক্রিয় সেবাদান করতে হবে।

    উপরিউক্ত দু'টি কমিটি বাদে---

    (ক) সৎ ও অনুগত ব্যক্তিদের দিয়ে একটি 'অর্থ সংক্রান্ত কমিটি' থাকবে। যাদের কাজ হবে প্রয়োজনীয় তহবিল সংগ্রহ করা। অস্ত্র-শস্ত্র, গোলা-বারুদ ও অন্যান্য প্রয়োজনীয় সাজসরঞ্জাম ক্রয় করা। আর্থিক উৎসগুলি নিয়ন্ত্রণ করা, সেনাবাহিনীর সদস্যদের বেতন দেওয়া, তাদের পরিবারের ভরণ-পোষণ করা এবং শহীদ পরিবারগুলোর দেখাশুনা করা।

    খ) প্রত্যেক আরব ও মুসলিম দেশে একটি করে 'আঞ্চলিক কম্যাণ্ড কমিটি থাকবে। যাতে উচ্চপদস্থ সামরিক অফিসার ও নন কমিশন্‌ড স্বেচ্ছাসেবিগণ থাকবেন।

    এই কমিটির কাজ থাকবে বিভিন্ন কমিটির কাজের সমন্বয় সাধন করা, যাতে এটা সব সময় নিশ্চিত জানতে পারা যায় যে, সৈন্যরা যথাযথভাবে অস্ত্র সজ্জিত আছে এবং প্রয়োজন দেখা দিলেই সাথে সাথে তাদেরকে যুদ্ধের ময়দানে পাঠানোর ব্যবস্থা করা যাবে। এছাড়া এ কমিটি অর্থসংক্রান্ত কমিটি ও আধ্যাত্মিক কমিটিকেও তাদের কার্যে সহায়তা দান করবে।

    (গ) জেনারেল কম্যান্ড কাউন্সিলের কেন্দ্র থাকবে যুদ্ধ ক্ষেত্রে এবং তার কাজ হবে আরব ও মুসলিম যোদ্ধাদেরকে যুদ্ধের ময়দানে পরিচালনা করা।

    এই কমিটিতে থাকবেন উচ্চপদস্থ সামরিক অফিসারগণ। যারা তাদের সাধুতা, বাস্তব, অভিজ্ঞতা, উচ্চতর সামরিক প্রশিক্ষণ, সাহস, দৃঢ়চিত্ততা ও প্রথম পদক্ষেপ গ্রহণের শক্তির জন্য প্রসিদ্ধ।

    একজন ভাল নেতার জন্য উপরিউক্ত গুণগুলো খুবই পরিচিত। কিন্তু আমি এখানে সাধুতাকেই সবার উপরে জোর দিতে চাই।

    নিম্নে একটি উদ্ধৃতির সার সংক্ষেপ উল্লেখ করা হচ্ছে। যা নেওয়া হয়েছে আল-হারসাম (El-Harthamy . ২৪৩ হি.) প্রণীত A summary of war policies (১৫ পৃ.) নামক গ্রন্থ থেকে। সেখানে বলা হয়েছে যে, “একজন সৈনিক অবশ্যই নিজেকে আল্লাহভীতির অস্ত্রে সজ্জিত করবে। সে কখনোই আল্লাহর নিকট বিনীতভাবে ক্ষমা প্রার্থনা করা থেকে বিরত হবে না। সে তাঁর উপরেই সম্পূর্ণরূপে বিশ্বাস স্থাপন করবে এবং প্রার্থনা করবে তিনি যেন তার জন্য বিজয় ও নিরাপত্তা মঞ্জুর করেন। তাকে নিজের দুর্বলতা ও অসমর্থতা সম্পর্কে সদাসজাগ থাকার সাথে সাথে স্বর্গীয় হিদায়েত ব্যতিরেকে সে যে কিছুই করতে পারে না, সে কথাও মনে রাখতে হবে। তাকে সর্বদা আল্লাহর অনুগ্রহ ও সাহায্য কামনা করতে হবে। একজন নেতা যখন বিজয়ী হবেন, তখন তাকে অবশ্যই যাবতীয় পাপ, ঈর্ষা ও প্রতিহিংসা পরায়ণতা থেকে বিরত থাকতে হবে। তাকে সুবিচারক হতে হবে। জনগণের মঙ্গলের প্রতি মনোযোগী হ'তে হবে এবং সর্বদা সকল কাজে আল্লাহর উপর তাওয়াক্‌কুল করতে হবে।

    হারসামী উপরে যে সব গুণের কথা বলেছেন এ সব গুণের কথা আমাদের সকল প্রাচীন আরব ও মুসলিম লেখকগণ বলেছেন। কিছু লোক আছেন যারা আরব ও মুসলিম মনীষীদের মতামতে সন্তুষ্ট হতে চান না। এ ব্যাপারে তারা বরং বিদেশী লেখকদের মতামতের দিকেই বেশী মনোযোগ দিতে চান।

    এইসব লোকের জন্য আমি জেনারেল মন্টগোমারীর (Monitomery) একটি মত উদ্ধৃত করতে চাই তার The Road to command নামক বই থেকে, যা ১৯৬৫ সালে প্রকাশিত হয়েছে এবং যাতে সামরিক কম্যান্ডের উপর এ যাবৎকালের সর্বশেষ গবেষণাকর্ম উপস্থাপন করা হয়েছে। মন্টগোমারী লিখেছেন :

    ধর্ম এবং সামরিক কম্যান্ডের মধ্যে কোন সম্পর্ক আছে কি? একজন নেতার জন্য অবশ্যই থাকতে হ'বে আদর্শসমূহ, যার প্রতিনিধি যত্নবান হবেন এবং থাকতে হবে ধর্মীয় গুণাবলী যা তিনি ধারণ করবেন।

    তিনি আরও বলেন :

    একজন নেতার ব্যক্তিগত জীবন কি বৃত্তির (Career) উপর কোন প্রভাব বিস্তার করে? কিংবা তাকে সাফল্য অর্জনে সহায়তা করে? আমার মতে নেতা হওয়ার জন্য প্রধান বিষয় হলো তার বাধ্যতা, তার দৃষ্টান্তমূলক চরিত্র এবং বিশেষ করে ধর্মীয় গুণাবলীর প্রতি আসক্তি। আমি বুঝতেই পারি না, একজন ব্যক্তি কিভাবে নেতা হ'তে পারেন, যদি তার ব্যক্তিগত জীবন সন্দেহের ঊর্ধ্বে না হয়। আমি বিশ্বাস করি যে, একজন নেতার সফলতার জন্য নৈতিক ও ধর্মীয় গুণাবলী সহ ন্যায়পরায়ণতাই সর্বপেক্ষা গুরুত্বপূর্ণ বিষয়।

    একজন নেতার জন্য যা সত্য সৈনিকদেও জন্য তাই-ই সত্য।

    আরব বিজয়ের পরবর্তীকালের অধিকাংশ আরব ও মুসলিম নেতাগণ — যারা বিরাট বিরাট বিজয় লাভ করেছেন, সকলেই ছিলেন অত্যন্ত ধর্মভীরু। এখানে কয়েকজনের নাম উল্লেখ করাই যথেষ্ট মনে করছি। যেমন গাযী সালাহউদ্দীন আইয়ূবী, যিনি ১৯৮৭ খৃস্টাব্দে জেরুজালেমে ক্রুসেডারদেরকে পরাজিত করেছিলেন। আল-মুফাখহার কাতাষ, যিনি ৬৫৮ হিজরীতে তাতার- গণকে ‘আইনে জালুত' (Ainjalout) নামক স্থানে পরাজিত করেন। সুলতান মুহাম্মদ, যিনি ১৪৫৩ খৃস্টাব্দে কনস্ট্যান্টিনোপল অধিকার করেন। এই নেতাগণ সকলেই অত্যন্ত ধার্মিক ছিলেন।

    ইয্ বিন আবদুস সালাম এবং শেখ আবুল হাসান আশ্-শাহীলী নামক দুইজন ইমাম তাতারদের বিরুদ্ধে জয়লাভে কাতাযকে সাহায্য করেন। তাঁদের অবিরত ধর্মীয় প্রচারণার ফলে কাতায় বুঝতে সক্ষম হন যে, পরিশেষে একমাত্র জিহাদেই ঈমানদারগণকে চূড়ান্ত বিজয় অথবা গৌরবমণ্ডিত শাহাদতের পথে পরিচালিত করতে পারে।

    আমরা এখন সব চাইতে প্রয়োজন অনুভব করছি ইবনে তায়মিয়া (রহ.), ইয্ বিন আবদুস সালাম (রহ.), আবুল হাসান আশ্-শাহীলী (রহ.) প্রমুখ নেতার মত ব্যক্তিত্ব যাঁরা কোনকিছুর হিসেব না করে নিজেদের যথাসর্বস্ব একটি বিশেষ উদ্দেশ্যে কুরবানী দিতে পারেন।

    আমি সৈনিকদের জন্য একটি সামরিক সংগঠনের আলোচনার মধ্যেই আমার বক্তব্য কেন্দ্রীভূত রাখতে চেষ্টা করছি। যাতে তারা আধুনিক সমর- কৌশল প্রয়োগের মাধ্যমে ইসরাঈলের মত একটি আধুনিক সেনাবাহিনীর মুকাবিলা করতে পারে।

    আমি ফিদাঈন (গেরিলা) সংগঠন কিংবা নিয়মিত সেনাবাহিনীগুলো সম্বন্ধে আলোচনা করতে চাই না। কেননা তাদের সংগঠন বর্তমানে পুরোপুরি সন্তোষজনক।

    বাস্তব অভিজ্ঞতা অর্জন এবং বিভিন্ন অভিযানে কৃতকার্যতালাভের কারণে ফিদাঈনের বর্তমান সংগঠন ভবিষ্যতে জিহাদ সংগঠনের জন্য উদাহরণ হিসেবে কাজ করবে। ইসরাঈলের অধিকৃত আরব ভূখণ্ডে এবং বিদেশে ফিদাঈনদের তৎপরতা উল্লেখযোগ্য ফল বহন করে এনেছে।

    ফিদাইন গেরিলারা আরব নৈতিকতাকে উজ্জীবিত করেছে। তারা প্যালেস্টাইনীদেরকে সংগঠিত হতে সহায়তা করেছে এবং তাদেরকে একটি সক্রিয় ও আকর্ষণীয় শক্তিতে পরিণত করেছে, যা য়াহূ দী ষড়যন্ত্রকে নিরাশ করতে নিশ্চিত ফলদায়ক প্রমাণিত হয়েছে।

    বিদেশে ফিদাঈনরা আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের উদ্বেগ আকৃষ্ট করতে সক্ষম হয়েছে। রক্তের প্রথম অভিজ্ঞতার (Baptism of Blood) মধ্য দিয়ে মিছিল করে তারা বুঝিয়ে দিয়েছে এ কথা যে, হাতভূমি পুনরুদ্ধার করতে যতদিন সময় লাগুক না কেন এবং যতকিছুই তাদের খোয়াতে হোক না কেন, তারা কখনোই তাদের ন্যায্য দাবী পরিত্যাগ করবে না।

    ফিদাঈনরা প্যালেস্টাইন ইস্যুর প্রতি বিশ্বের মনোযোগ আকর্ষণে সমর্থ হয় এবং তাদের তৎপরতা আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে ভীত করে তোলে। রক্ত ঝরানোর আগ পর্যন্ত প্যালেস্টাইন প্রশ্ন একটা ইস্যুমাত্র ছিল- যা উল্লেখযোগ্য কোন ফলোদয় ছাড়াই কয়েকবারমাত্র জাতিসংঘ ও নিরাপত্তা পরিষদের আলোচ্যসূচীতে স্থান পেয়েছিল।

    ফিদাইন তৎপরতরার ফলে অধিকৃত এলাকাসমূহে য়াহূ দীদের জীবন ও সম্পদ নিরাপত্তাহীন হয়ে পড়েছে। অধিবাসীদের মধ্যে সর্বদা হ্রাস বিরাজ করছে। ইসরাঈল তার পর্যটনখাতে প্রাপ্ত অর্থ থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। উদ্বাস্তুদের আগমন স্রোত বন্ধ হয়েছে। অধিকন্তু এর ফলে ইসরাঈলী সশস্ত্র বাহিনী পোষণের খরচ দ্বিগুণ হয়েছে।


    ফিদাঈনদের সাফল্যের মাত্র কতকগুলো দৃষ্টান্ত এখানে তুলে ধরা হলো। তারা যথার্থই জাতির গভীতরতম শ্রদ্ধা ও সর্বোচ্চ প্রশংসা পাওয়ার যোগ্যতা রাখে।

    ফিদাঈনগণ পবিত্র যোদ্ধা। তাদের অগ্রণী অভিজ্ঞতা বাস্তবক্ষেত্রে ফল- দায়ক প্রমাণিত হয়েছে। যদিও সারা বিশ্বে আরব ও মুসলিম জনসাধারণের তুলনায় তাদের সংখ্যা অতীব নগণ্য। মুজাহিদদের সহযোগিতায় যদি এদের সংখ্যা দ্বিগুণ করা যেত, তাহ'লে অবস্থাটা কি দাঁড়াতো ? ইসরাঈলীদের পায়ের তলা থেকে মাটি সরে যেতো। তারা সেই কথা পূণর্ব্যক্ত করতো, যা তাদের পূর্বপুরুষেরা করেছিল যে, এই এলাকার লোকেরা আসলে দৈত্য।'

    বিশ্বাসীরা তখন আল্লাহর জয়গানে আনন্দ মুখর হয়ে উঠতো। আল্লাহ্ সত্যই বলেছেন :

    আমি কি তোমাদের এমন একটি ব্যবসায়ের সন্ধান দেব না, যা তোমা- দেরকে মর্মান্তিক আযাব থেকে রক্ষা করবে? তোমরা আল্লাহ্ ও রসূলের উপর বিশ্বাস স্থাপন করো এবং জান ও মাল দিয়ে আল্লাহর রাস্তায় জিহাদ করো। ইহাই তোমাদের জন্য উত্তম যদি তোমরা জানো। তিনি তোমাদের গুনাহসমূহকে ক্ষমা করবেন এবং তোমাদেরকে প্রবেশ করাবেন এমন এক জান্নাতে—যার নিম্নদেশ দিয়ে নহরসমূহ প্রবাহিত হচ্ছে। 'আদন নামক জান্নাতে, পবিত্র গৃহসমূহ দান করবেন। এবং এটাই (তোমাদের জন্য) বিরাট সফলতা। এছাড়া আরও রয়েছে যা তোমরা চাও—আল্লাহর পক্ষ থেকে সাহায্য এবং নিকট বিজয়। (হে নবী!) বিশ্বাসীদেরকে সুসংবাদ দিন।[1]


    জয়ের রাজপথ কেবল একটাই- আল্লাহ্ ও তাঁর রসূলের উপর গভীর বিশ্বাস এবং জান ও মালের বিনিময়ে আল্লাহর রাস্তায় জিহাদ।

    আল্লাহ্ বড় মহান। তাঁর জন্যই সকল কৃতজ্ঞতা। আল্লাহর অনুগ্রহ বর্ষিত হোক আমার নেতা, আল্লাহর নবী ও মুজাহিদীনের ইমাম মুহাম্মাদুর রসূলূল্লাহ (স.)-এর উপরে এবং তাঁর পরিবারবর্গ ও সাহাবা-ই-কিরামের উপরে ।













    [1]. সূরায়েসাফঃ১০-১৩




    আরও প ড়ুন​
Working...
X