Announcement

Collapse
No announcement yet.

বাইনারি অপশন: নতুন মোড়কে পুরাতন মাল

Collapse
This is a sticky topic.
X
X
 
  • Filter
  • Time
  • Show
Clear All
new posts

  • বাইনারি অপশন: নতুন মোড়কে পুরাতন মাল

    ধরুন, একজন মাজলুম—একজন নির্যাতিত মানুষ—তাকে ফাঁসির মঞ্চে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। তার অপরাধ? সত্য বলার দুঃসাহস, অন্যায়ের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানো, অথবা কেবলমাত্র সেই পরিচয়ে জন্ম নেওয়া, যেটা জালেমের চোখে অপরাধ।

    ফাঁসি তো অবধারিত—তবে হঠাৎ করে সেই জালেম, যিনি তাকে ফাঁসির আদেশ দিয়েছেন, তার অন্তরে কিছুটা ‘দয়া’ জাগল। মানবিকতা নয়, বরং হয়তো কসাইয়ের ছুরির ধার ঠিক করার মতোই একটা শীতল বদান্যতা।

    সে বলল,
    “তোমার মৃত্যু আমি স্থগিত করবো না, তবে তুমি বেছে নিতে পারো—কীভাবে মরতে চাও।”

    তার সামনে তিনটি অপশন রাখা হলো:

    প্রথম অপশন:
    ছোট একটি দড়ি। এর ফলে ঘাড় মটকাবে না, কিন্তু ধীরে ধীরে দড়ির টানে শ্বাসরুদ্ধ হয়ে তাকে মরতে হবে। কয়েক মিনিট ধরে যন্ত্রণায় কাতরাতে হবে।

    দ্বিতীয় অপশন:
    লম্বা একটি রশি। এমনভাবে ঝাঁকি খাবে শরীর, যে তীব্র ঘর্ষণে মাথা শরীর থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যাবে। মৃত্যু তাৎক্ষণিক হবে, তবে দৃশ্য ভয়ংকর।

    তৃতীয় অপশন:
    একটি পরিমিত রশি—মাপমতো, ওজনমতো। যাতে ঝুলবার সঙ্গে সঙ্গে ঘাড় মটকে যায়, মৃত্যু হয় সঙ্গে সঙ্গে। শ্বাসরুদ্ধের কষ্ট নেই, মাথাও শরীরের সঙ্গে থাকবে। যেন মৃত্যুর একটি “স্বস্তিদায়ক” সংস্করণ।

    এখন প্রশ্ন উঠছে:
    এই মাজলুম কোন অপশনটি নেবে?

    কিছুদিন ধরে লক্ষ্য করা যাচ্ছে, বাংলাদেশের রাজনৈতিক ও সামাজিক পরিসরে একটি নতুন ন্যারেটিভ গড়ে তোলার চেষ্টা চলছে। বলা হচ্ছে—মুসলমানদের একমাত্র শত্রু হিন্দু সম্প্রদায়। অতীতে তারা আমাদের শোষণ করেছে, আমাদের ধর্ম ও সংস্কৃতিকে আঘাত করেছে, এবং এখনো তাদের রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক বলয়ের মাধ্যমে আমাদের নিয়ন্ত্রণে রাখতে চায়।

    এই দাবিটি একেবারে ভিত্তিহীন নয়। উপমহাদেশে মুসলিম নিপীড়নের ইতিহাস, ব্রাহ্মণ্যবাদী জাত্যাভিমান, এবং হিন্দুত্ববাদী রাজনীতির মাধ্যমে মুসলিমদের প্রান্তিক করে তোলার বহু প্রমাণ ইতিহাসে পাওয়া যায়।

    কিন্তু সমস্যা হলো—এই কথাটি এখানেই থেমে যাচ্ছে। এই বয়ানটি খুব কৌশলে আমাদের সামনে একটি বাইনারি পছন্দ হাজির করছে:

    হয় আপনি হিন্দুদের দ্বারা নির্যাতিত হবেন, না হয় আমরা সবাই সেক্যুলার হয়ে হিন্দু-মুসলিম সম্প্রীতির পথে হাঁটব।

    অর্থাৎ, হয় আপনি নিজের ইসলামী পরিচয় ও স্বাতন্ত্র্য টিকিয়ে রেখে নির্যাতিত হবেন,
    না হয় আপনি সেই পরিচয় ত্যাগ করে একটি ‘নিরপেক্ষ’ (পড়ুন: ইসলামহীন) রাষ্ট্রব্যবস্থার ভেতর গলে যাবেন।

    কিছুদিন পূর্বে একজন ইউটিউব ইনফ্লুয়েন্সারের একটি ভিডিও দেখি।
    সেখানে তিনি উপমহাদেশের খ্যাতনামা ব্রিটিশবিরোধী বিপ্লবী—ক্ষুদিরাম বসু, প্রীতিলতা ওয়াদ্দেদার, সূর্যসেন প্রমুখকে সরাসরি “হিন্দু জমিদারদের লাঠিয়াল” বলে আখ্যায়িত করেন। তাঁর দাবি ছিল—এই বিপ্লবীদের প্রকৃত উদ্দেশ্য ছিল না ব্রিটিশ সাম্রাজ্যবাদকে উৎখাত করা; বরং তাঁরা লড়েছিলেন হিন্দু জমিদার শ্রেণির রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক স্বার্থ রক্ষার জন্য।

    এই বক্তব্য শুনে প্রথমে হয়তো উগ্রতা বা ইতিহাসবিকৃতি মনে হতে পারে, কিন্তু গভীরভাবে দেখলে এটিকে পুরোপুরি উড়িয়ে দেওয়া যায় না। উপমহাদেশের তথাকথিত ‘স্বাধীনতা সংগ্রাম’ বহু ক্ষেত্রেই ছিল শ্রেণিস্বার্থে পরিচালিত; যেখানে আসল সংগ্রাম ছিল ব্রিটিশদের পরিবর্তে কে শাসন করবে—তাঁরা, না আমরা।

    ঐতিহাসিকভাবে বহু প্রমাণ রয়েছে—বিপ্লব ও আন্দোলনের ব্যানারে আসলে জমিদার, ব্যাবসায়ী, শিক্ষিত উচ্চবর্ণ হিন্দু শ্রেণিই নতুন ‘দেশীয় শাসক’ হিসেবে নিজেদের প্রতিষ্ঠিত করতে চেয়েছে। তারা সাম্রাজ্যবাদ বিরোধিতার নাম করে নিজেদের বর্ণবাদী জাত্যাভিমানকে প্রতিষ্ঠা করেছে, বিশেষত মুসলিম জনসাধারণের ওপর।

    কিন্তু ওই ইউটিউব ইনফ্লুয়েন্সার শুধু এটুকু বলেই থেমে যাননি।
    তিনি ইনিয়ে-বিনিয়ে এক ভ্রান্ত বাইনারি তুলে ধরেন—একটি মিথ্যা দ্বৈততা, যা আজকের তথাকথিত “প্রগতিশীল” রাজনৈতিক চিন্তার ছদ্মবেশী চেহারা প্রকাশ করে।

    তার বক্তব্যের সারাংশ মোটামুটি এরকম:

    প্রথমত, সে আপনাকে শত্রু ঠিক করে দিচ্ছে—তার নিজের মত অনুযায়ী। সে বলছে, “হিন্দুরা আমাদের একমাত্র শত্রু, এবং তাদের বিরোধিতা করাই হলো ইসলামী কর্তব্য।” এইরকম শত্রু নির্ধারণের মাধ্যমে সে আসলে একটি জটিল সত্যকে সরলীকরণ করছে—যাতে করে আপনি বাস্তবতার নানা স্তর ভুলে গিয়ে কেবল একটিমাত্র শত্রুতে দৃষ্টি কেন্দ্রীভূত করেন। অথচ ইসলামী দৃষ্টিকোণ থেকে শত্রু নির্ধারণ এমন কোনো একমাত্রিক বিষয় নয়; বরং তা নির্ভর করে অযোগ্য নেতৃত্ব, জুলুমের কাঠামো, তাগুত ব্যবস্থার প্রকৃতি এবং উম্মাহর স্বার্থের উপর।

    দ্বিতীয়ত, সে আপনার অন্তরে এক ধরনের মনস্তাত্ত্বিক চাপ বা ঐতিহাসিক অনুশোচনা তৈরি করছে। আপনি যেন মনে করতে বাধ্য হন যে—“যদি আমি আজ হিন্দুদের বিরোধিতা না করি, তাহলে আমার পূর্বপুরুষ যারা আল্লাহর দীন প্রতিষ্ঠার জন্য জীবন উৎসর্গ করেছেন, আলেম-ওলামা যারা ত্যাগ-তিতিক্ষা করে ইসলামের খিদমত করেছেন—তাদের সঙ্গে আমি বেইমানি করছি।” এইভাবে সে আপনাকে ‘ঐতিহাসিক গিল্ট’-এর ভিতর বন্দি করে ফেলতে চায়।

    তবে সবচেয়ে বিপজ্জনক অংশটি আসে তখন, যখন আপনার অন্তরে এই অনুশোচনার আগুন জ্বলতে শুরু করে। তখনই সে আপনার সামনে একটি নির্দিষ্ট ‘সমাধান’ হাজির করে—এবং সেটি হলো:
    “এই হিন্দু উগ্রবাদীদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের একমাত্র বাস্তব ও ফলপ্রসূ পথ হচ্ছে—সেকুলার ব্যবস্থাকে আঁকড়ে ধরা।”

    একদিকে আপনাকে "শত্রু" দেখিয়ে উত্তেজিত করা হচ্ছে, অন্যদিকে সেই উত্তেজনাকে ব্যবহার করে আপনাকে এমন এক ‘ব্যবস্থা’তে প্রবেশ করানো হচ্ছে—যার মধ্যে খোদ হিন্দুত্ববাদ এবং ইসলামবিদ্বেষী শক্তির মূল উৎস নিহিত। আপনি তখন বুঝতেও পারবেন না, কখন আপনি একজন উম্মাহ-চিন্তাধারী মানুষ থেকে একজন নির্বাচনমুখী, পার্লামেন্ট-নির্ভর, ভোট-ভিত্তিক "মডারেট ইসলামিস্ট" হয়ে উঠলেন।

    অর্থাৎ বর্তমান সময়ে যে নতুন রাজনৈতিক ন্যারেটিভ তৈরি হচ্ছে, তা মূলত একটি ভয়ের ভিত্তির উপর দাঁড়িয়ে আছে—Fear-mongering of Islamophobia।

    এটি একটি নতুন ফাঁদ, এক ধরনের মরীচিকা। যেসব অঞ্চলে সরাসরি কাফের-মুশরিকদের সামরিক আগ্রাসন নেই, সেখানে সূক্ষ্ম ও মনস্তাত্ত্বিক ফাঁদ তৈরি করা হয়। এর মূল লক্ষ্য হলো ইসলামী শরীয়ত, সিয়াসাত ও হুকুমাত বাস্তবায়নের আগে মুসলিম সমাজকে এমনভাবে ক্লান্ত, বিভ্রান্ত ও হতাশ করে ফেলা, যাতে তারা আগ্রাসন না থাকা অবস্থায়ই নিজেরাই সংগ্রাম থেকে সরে দাঁড়ায়।

    মুসলমানেরা এই বাইনারি অপশনের ফাঁদে বারবার পড়ে যায়—‘সতর্কতার’ নামে নিষ্ক্রিয়তা বেছে নেয়, আর ‘নিরাপত্তার’ অজুহাতে একে অপরের প্রতি অবিশ্বাস ধারণ করতে শুরু করে। এতে উম্মাহর ঐক্য ভেঙে যায়, সংগ্রামের আগ্রহ ক্ষয় হয় এবং একটি বিষণ্ন ও বিচ্ছিন্ন পরিস্থিতি তৈরি হয়।

    এই বিষয়ে কোনো দ্বিমত নেই যে আমাদের অন্যতম প্রধান শত্রু হিন্দু বা মুশরিক শক্তিগুলো—বিশেষ করে এই উপমহাদেশে, যেখানে মুসলিমদের বিরুদ্ধে দীর্ঘদিন ধরে এক সুপরিকল্পিত শত্রুতামূলক অবস্থান তারা বজায় রেখেছে।

    তবে আমাদের আন্দোলন শুধুমাত্র “হিন্দু হটাও” আন্দোলন নয়। এই সংগ্রামের মুল লক্ষ্য আরও গভীর, আরও বিস্তৃত।

    আমাদের আন্দোলন মূলত “কুফরি মতবাদ ও তন্ত্র-মন্ত্র হটাও” আন্দোলন।
    অর্থাৎ, আল্লাহর জমিনে আল্লাহর বিধান বাস্তবায়নের পথে যে সকল মতবাদ বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে—হোক তা হিন্দুত্ববাদ, সেকুলারিজম, গণতন্ত্রবাদ, জাতীয়তাবাদ বা অন্য কোনো বাতিল ‘ইজম’—আমাদের সংগ্রাম সেসব কুফরি ব্যবস্থার মূলভিত্তিক বিরুদ্ধেই।

    কারণ, কেবল একটি সম্প্রদায়ের আগ্রাসন ঠেকালেই ইসলামী সমাজ প্রতিষ্ঠা হবে না—যতক্ষণ না তাগুতী কাঠামো, কুফরি আইন ও মানব রচিত শাসনব্যবস্থাগুলোকে সরিয়ে আল্লাহর দেওয়া পূর্ণাঙ্গ শরিয়াহ ও খিলাফতের ন্যায্য ও রহমতপূর্ণ শাসন প্রতিষ্ঠিত হয়।

    এই নব্য মুসলিম-দরদীরাও আসলে সেই জালিম ফাঁসিকাঠের কারিগরের মতোই। পার্থক্য শুধু একটাই—তার হাতে ছিল দড়ি, আর এদের হাতে আছে কথার ফাঁদ, বুদ্ধির ফাঁদ, “বাস্তবতার” ফাঁদ।

    তারা আমাদের সামনে তিনটি অপশন রেখে দেয়—
    ১. স্বেচ্ছায় তোমার ঈমানকে ত্যাগ করো,
    ২. ভয়ে, চাপে, দুনিয়াবি লাভের লোভে ঈমান বিসর্জন দাও,
    ৩. আর যদি তাও না পারো, তবে চাপ সৃষ্টি করে, আইন বানিয়ে, সামাজিকভাবে একঘরে করে, নিরাপত্তার নামে ভয় দেখিয়ে, শেষ পর্যন্ত জোর করে তোমার ঈমানকে কেড়ে নেওয়া হবে।

    পুনরায় প্রশ্ন একটাই—
    "আমরা কোন অপশন বেছে নেব?"
    فَاَعۡرِضۡ عَنۡهُمۡ وَ انۡتَظِرۡ اِنَّهُمۡ مُّنۡتَظِرُوۡنَ

  • #2
    একটি সম্প্রদায়ের আগ্রাসন ঠেকালেই ইসলামী সমাজ প্রতিষ্ঠা হবে না—যতক্ষণ না তাগুতী কাঠামো, কুফরি আইন ও মানব রচিত শাসনব্যবস্থাগুলোকে সরিয়ে, আল্লাহর দেওয়া পূর্ণাঙ্গ শরিয়াহ ও খিলাফতের ন্যায্য ও রহমতপূর্ণ শাসন প্রতিষ্ঠিত হয়।
    জাজাকুমুল্লাহ, প্রিয় আখি।


    Comment


    • #3
      আমাদের আন্দোলন মূলত “কুফরি মতবাদ ও তন্ত্র-মন্ত্র হটাও” আন্দোলন।
      অর্থাৎ, আল্লাহর জমিনে আল্লাহর বিধান বাস্তবায়নের পথে যে সকল মতবাদ বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে—হোক তা হিন্দুত্ববাদ, সেকুলারিজম, গণতন্ত্রবাদ, জাতীয়তাবাদ বা অন্য কোনো বাতিল ‘ইজম’—আমাদের সংগ্রাম সেসব কুফরি ব্যবস্থার মূলভিত্তিক বিরুদ্ধেই।

      হে আল্লাহ! তুমি আমাদের ঈমানের হেফাজত কর
      “কুফরি মতবাদ ও তন্ত্র-মন্ত্র হটাও”
      ও রাসূলের আদর্শ বাস্তবায়নের মাধ্যমে ঈমান নামক সম্পদ হেফাজতের তাওফিক দাও। আমীন।

      Comment

      Working...
      X