শায়খ খালিদ শেখ মুহাম্মদ (اللَّهُمَّ فُكَّهُ بِعِزَّةٍ) —যিনি ৯/১১ হামলার পরিকল্পনাকারী হিসেবে আন্তর্জাতিক মিডিয়ায় পরিচিত, তাঁর বন্দিত্বের ইতিহাস মূলত আইনের নামে অত্যাচারের এক ভয়াবহ চিত্রপট। ২০০৩ সালে পাকিস্তানে মার্কিন গোয়েন্দা বাহিনীর হাতে গ্রেফতারের পর থেকে একটানা কয়েক বছর ধরে তাঁকে গোপন স্থানে আটকে রাখা হয়, যেখানে তাঁর ওপর চলে সীমাহীন নির্যাতন। তথাকথিত "enhanced interrogation techniques"–এর নামে তার ওপর চালানো হয় waterboarding, ঘুম থেকে বঞ্চিত করা, শারীরিক ও মানসিক অত্যাচার। এসবের মাধ্যমে তার কাছ থেকে নেওয়া হয় কথিত জবানবন্দি।
কিন্তু এখানেই শুরু হয় যুক্তরাষ্ট্রের আইনি সংকট। এই জবানবন্দি যখন আদালতে উপস্থাপন করার সময় আসে, তখনই তাদের সামনে দাঁড়ায় এক মৌলিক প্রশ্ন: যদি জুড়ি বোঝে যে এই স্বীকারোক্তি নির্যাতনের মাধ্যমে আদায় করা হয়েছে, তবে তার প্রমাণমূল্য থাকবে কোথায়? যুক্তরাষ্ট্র, নিজের আইনি ভাবমূর্তি রক্ষায়, তখন বাধ্য হয় ২০০৬ সালের Military Commissions Act পাস করতে। এই আইন ছিল মূলত একটি আইনি বর্ম—যার পেছনে লুকিয়ে ছিল নির্যাতনের বৈধতা দেওয়ার অপচেষ্টা। এই আইনের মাধ্যমেই খালিদ শেখ মুহাম্মদের মতো মুজাহিদদের বিচারের নামে একতরফা শাস্তির ব্যবস্থা করা হয়। জুরি যেন সত্য জানতেই না পারে, সেই ব্যবস্থাই করা হয় আইন বানিয়ে।
তবে এখানে লক্ষণীয় বিষয় হচ্ছে—যুক্তরাষ্ট্র তার শত্রুকে শাস্তি দেওয়ার পূর্বে একটি আইন বানিয়েছে, যাতে অন্তত বাইরের দুনিয়ায় তারা বলতে পারে যে, তারা আইনের ভেতরে থেকেই বিচার করছে। আইন বানানো তাদের কাছে রাজনৈতিক শুদ্ধাচারের একটি প্রথাগত আবরণ। যুক্তরাষ্ট্র যতই নির্যাতন করুক, তারা অন্তত এটুকু বোঝে যে কোনো রাষ্ট্রীয় কার্যক্রমকে বৈধতা দিতে হলে একটা আইনি কাঠামো থাকা প্রয়োজন।
কিন্তু আমরা যদি বাংলাদেশের দিকে তাকাই, চিত্রটা ভয়ংকর রকমের নগ্ন। এখানে শাসকগোষ্ঠী নিজেই গুমের অভিযোগ তদন্ত করার জন্য কমিশন গঠন করে। একই সময়ে সেই কমিশন নিজেই বলছে, শত শত মানুষ গুম হয়েছে, নিখোঁজ হয়েছে, এবং তাদের থেকে নির্যাতনের মাধ্যমে জবানবন্দি নেওয়া হয়েছে। অথচ এসব গুম ও জবানবন্দি নিয়ে না কোনো আইন তৈরি হয়েছে, না কোনো আদালত স্বাধীনভাবে তদন্ত করেছে, না কোনো আন্তর্জাতিক ন্যায্যতা বজায় রাখা হয়েছে।
এসব জবানবন্দিকে সাক্ষ্য হিসেবে মানা কি আদৌ ন্যায়ের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ? যেখানে সংবিধান স্বীকার করে যে কোনো জবানবন্দি হতে হবে স্বেচ্ছায় ও আদালতের সামনে, সেখানে গুম করে নেওয়া স্বীকারোক্তির মূল্য কী থাকতে পারে?
এই জায়গায় এসে তুলনা অস্বস্তিকরভাবে স্পষ্ট হয়। যুক্তরাষ্ট্র, যতই দখলদার ও নিপীড়ক হোক না কেন, আইনের একটা ছায়া বজায় রাখে। বাংলাদেশে, শাসকগোষ্ঠী নিজের আইনও মানে না। তাহলে প্রশ্ন জাগে—কে বেশি কর্তৃত্ববাদী? যারা শাস্তি দেওয়ার আগে আইন বানায়, না কি যারা শাস্তি দিয়ে পরে আইনকে উপহাস করে?
একদিকে যুক্তরাষ্ট্রে আইনের অপব্যবহার, অন্যদিকে বাংলাদেশে আইনের অনুপস্থিতি। দুটি রাষ্ট্রই নির্যাতন করে, গুম করে, জবানবন্দি আদায় করে। তবে পার্থক্য হলো, একটি রাষ্ট্র এর জন্য নিজেরাই আইন বানিয়ে নিজেকে 'বিচারক' সাজায়; আরেকটি রাষ্ট্র গুমকে এতটাই স্বাভাবিক করে তোলে যে, আইন বানানোর প্রয়োজনও বোধ করে না।
নোট: ২০০৬ সালে মার্কিন কংগ্রেসে পাস হওয়া Military Commissions Act (MCA) ছিল এক বিপজ্জনক মাইলফলক—এটি সন্ত্রাসবিরোধী যুদ্ধের নামে রাষ্ট্রীয় নির্যাতনকে আইনি বৈধতা দেয়। মূলত ৯/১১ হামলার পর আটক মুজাহিদদের বিরুদ্ধে প্রমাণ উপস্থাপন, স্বীকারোক্তি আদায় এবং বিচার পরিচালনার জন্য এই আইনের জন্ম হয়। কিন্তু বাস্তবে এটি পরিণত হয় মানবাধিকারের একটি বড় ধরনের গণহত্যা-তে। সবচেয়ে প্রকট উদাহরণ: শায়খ খালিদ শেখ মুহাম্মদ (اللَّهُمَّ فُكَّهُ بِعِزَّةٍ)
এই আইনের ফলে যে সকল মানবাধিকারগুলো শায়খ খালিদ শেখ মুহাম্মদ (اللَّهُمَّ فُكَّهُ بِعِزَّةٍ) হারিয়েছেন:
১. বিচারপ্রাপ্তির অধিকার খর্ব হয়: সাধারণ বেসামরিক আদালতে বিচার পাওয়ার অধিকার কেড়ে নিয়ে তাকে সামরিক ট্রাইব্যুনালে হাজির করা হয়—যেখানে বিচারক ও জুরিরা ছিলেন সেনা কর্তৃপক্ষের নিয়ন্ত্রণে। ফলে, নিরপেক্ষতার প্রশ্নই ওঠে না।
২. নির্যাতন থেকে মুক্ত থাকার অধিকার লঙ্ঘিত হয়: Waterboarding, sleep deprivation, sensory deprivation—এমন “enhanced interrogation” পদ্ধতিগুলো আন্তর্জাতিক আইনে পরিষ্কারভাবে নিষিদ্ধ। তবুও এভাবে তার কাছ থেকে জবানবন্দি আদায় করা হয়।
৩. habeas corpus বাতিল করা হয়: MCA অনুযায়ী, তাকে "unlawful enemy combatant" ঘোষণা করে আদালতে নিজের বন্দিত্ব চ্যালেঞ্জ করার অধিকারও বাতিল করা হয়। এর ফলে, তিনি নিজেকে নির্দোষ প্রমাণ করার মৌলিক সুযোগ হারান।
৪. স্বপ্রতিষ্ঠিত সাক্ষ্যের বিরুদ্ধে সুরক্ষা ভেঙে ফেলা হয়: নির্যাতনের মাধ্যমে আদায়কৃত স্বীকারোক্তিকে বৈধ প্রমাণ হিসেবে গণ্য করা হয়—যা ন্যায়বিচার ব্যবস্থার সম্পূর্ণ পরিপন্থী।
৫. আইনজীবীর পূর্ণ সহায়তা থেকে বঞ্চিত হন: তার আইনজীবীর সঙ্গে সাক্ষাৎ সীমিত করা হয়, এবং সরকার অনেক প্রমাণ গোপন রাখে “জাতীয় নিরাপত্তা”-র অজুহাতে।
৬. প্রমাণ ও সাক্ষীর মুখোমুখি হওয়ার সুযোগ হারান: সরকারি সাক্ষীদের পরিচয় জানতে বা তাদের জেরা করতে দেওয়া হয়নি। ফলে তিনি নিজেকে প্রতিরক্ষার উপযুক্ত সুযোগ পাননি।
৭. অভিযোগ জানার অধিকার খর্ব করা হয়: তাকে গ্রেপ্তার করা হয় ২০০৩ সালে, কিন্তু আনুষ্ঠানিক অভিযোগ আসে বহু বছর পরে।
৮. দ্রুত বিচার পাওয়ার অধিকার লঙ্ঘিত হয়: ২০২৫ সালেও তার বিচার চলছে না—দুই দশক ধরে বিচারের অপেক্ষা একটি অমানবিক দীর্ঘসূত্রতার নিদর্শন।
৯. মানবিক আচরণ পাওয়ার অধিকারও হারান: ধর্মীয় অবমাননা, দীর্ঘ একাকী কারাবাস, এবং অবমাননাকর আচরণ তার মর্যাদা ও মানবিক অধিকার পদদলিত করে।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ন্যায়বিচারের মুখোশে অন্তত একটা চেষ্টা দেখা যায়—তারা নির্যাতনের পরে একটি আইন বানিয়ে বলতে চায়, “আমরা নিয়ম মেনে বিচার করছি।” এটা নিছকই আইনি অভিনয় হলেও, এটুকু স্বীকার করে নেওয়া যায় যে, তারা রাষ্ট্রীয় শক্তিকে কিছুটা হলেও নৈতিকতার জবাবদিহির আওতায় রাখতে চেয়েছে।
কিন্তু বাংলাদেশে?
এখানে রাষ্ট্র নিজেই গুম কমিশন গঠন করে স্বীকার করে নিয়েছে যে তারা গুম করেছে, নির্যাতন করেছে, অথচ এরপরও সেই নির্যাতন থেকেই নেওয়া জবানবন্দিকেই আদালতে প্রমাণ হিসেবে ব্যবহার করে ফাঁসি দেয়। এখানে আইনের ন্যূনতম মুখোশটুকুও রাখা হয় না। স্বীকারোক্তির একমাত্র উৎস: গুম, নির্যাতন, ভয়ভীতি।
কিন্তু এখানেই শুরু হয় যুক্তরাষ্ট্রের আইনি সংকট। এই জবানবন্দি যখন আদালতে উপস্থাপন করার সময় আসে, তখনই তাদের সামনে দাঁড়ায় এক মৌলিক প্রশ্ন: যদি জুড়ি বোঝে যে এই স্বীকারোক্তি নির্যাতনের মাধ্যমে আদায় করা হয়েছে, তবে তার প্রমাণমূল্য থাকবে কোথায়? যুক্তরাষ্ট্র, নিজের আইনি ভাবমূর্তি রক্ষায়, তখন বাধ্য হয় ২০০৬ সালের Military Commissions Act পাস করতে। এই আইন ছিল মূলত একটি আইনি বর্ম—যার পেছনে লুকিয়ে ছিল নির্যাতনের বৈধতা দেওয়ার অপচেষ্টা। এই আইনের মাধ্যমেই খালিদ শেখ মুহাম্মদের মতো মুজাহিদদের বিচারের নামে একতরফা শাস্তির ব্যবস্থা করা হয়। জুরি যেন সত্য জানতেই না পারে, সেই ব্যবস্থাই করা হয় আইন বানিয়ে।
তবে এখানে লক্ষণীয় বিষয় হচ্ছে—যুক্তরাষ্ট্র তার শত্রুকে শাস্তি দেওয়ার পূর্বে একটি আইন বানিয়েছে, যাতে অন্তত বাইরের দুনিয়ায় তারা বলতে পারে যে, তারা আইনের ভেতরে থেকেই বিচার করছে। আইন বানানো তাদের কাছে রাজনৈতিক শুদ্ধাচারের একটি প্রথাগত আবরণ। যুক্তরাষ্ট্র যতই নির্যাতন করুক, তারা অন্তত এটুকু বোঝে যে কোনো রাষ্ট্রীয় কার্যক্রমকে বৈধতা দিতে হলে একটা আইনি কাঠামো থাকা প্রয়োজন।
কিন্তু আমরা যদি বাংলাদেশের দিকে তাকাই, চিত্রটা ভয়ংকর রকমের নগ্ন। এখানে শাসকগোষ্ঠী নিজেই গুমের অভিযোগ তদন্ত করার জন্য কমিশন গঠন করে। একই সময়ে সেই কমিশন নিজেই বলছে, শত শত মানুষ গুম হয়েছে, নিখোঁজ হয়েছে, এবং তাদের থেকে নির্যাতনের মাধ্যমে জবানবন্দি নেওয়া হয়েছে। অথচ এসব গুম ও জবানবন্দি নিয়ে না কোনো আইন তৈরি হয়েছে, না কোনো আদালত স্বাধীনভাবে তদন্ত করেছে, না কোনো আন্তর্জাতিক ন্যায্যতা বজায় রাখা হয়েছে।
বাংলাদেশে যারা শাতিমে রাসূল (সালাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)এর হত্যা মামলায় ফাঁসির আসামি হিসেবে বন্দি আছেন, তাদের বিরুদ্ধে অডিও, ভিডিও, সাক্ষী, ফরেনসিক প্রমাণ কিছুই নেই। একমাত্র যেটা আছে, তা হলো: জবানবন্দি। কিন্তু সেই জবানবন্দি কীভাবে নেওয়া হয়েছে?—তাদের গুম করে, নির্যাতন করে, ভয় দেখিয়ে।
এসব জবানবন্দিকে সাক্ষ্য হিসেবে মানা কি আদৌ ন্যায়ের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ? যেখানে সংবিধান স্বীকার করে যে কোনো জবানবন্দি হতে হবে স্বেচ্ছায় ও আদালতের সামনে, সেখানে গুম করে নেওয়া স্বীকারোক্তির মূল্য কী থাকতে পারে?
এই জায়গায় এসে তুলনা অস্বস্তিকরভাবে স্পষ্ট হয়। যুক্তরাষ্ট্র, যতই দখলদার ও নিপীড়ক হোক না কেন, আইনের একটা ছায়া বজায় রাখে। বাংলাদেশে, শাসকগোষ্ঠী নিজের আইনও মানে না। তাহলে প্রশ্ন জাগে—কে বেশি কর্তৃত্ববাদী? যারা শাস্তি দেওয়ার আগে আইন বানায়, না কি যারা শাস্তি দিয়ে পরে আইনকে উপহাস করে?
একদিকে যুক্তরাষ্ট্রে আইনের অপব্যবহার, অন্যদিকে বাংলাদেশে আইনের অনুপস্থিতি। দুটি রাষ্ট্রই নির্যাতন করে, গুম করে, জবানবন্দি আদায় করে। তবে পার্থক্য হলো, একটি রাষ্ট্র এর জন্য নিজেরাই আইন বানিয়ে নিজেকে 'বিচারক' সাজায়; আরেকটি রাষ্ট্র গুমকে এতটাই স্বাভাবিক করে তোলে যে, আইন বানানোর প্রয়োজনও বোধ করে না।
নোট: ২০০৬ সালে মার্কিন কংগ্রেসে পাস হওয়া Military Commissions Act (MCA) ছিল এক বিপজ্জনক মাইলফলক—এটি সন্ত্রাসবিরোধী যুদ্ধের নামে রাষ্ট্রীয় নির্যাতনকে আইনি বৈধতা দেয়। মূলত ৯/১১ হামলার পর আটক মুজাহিদদের বিরুদ্ধে প্রমাণ উপস্থাপন, স্বীকারোক্তি আদায় এবং বিচার পরিচালনার জন্য এই আইনের জন্ম হয়। কিন্তু বাস্তবে এটি পরিণত হয় মানবাধিকারের একটি বড় ধরনের গণহত্যা-তে। সবচেয়ে প্রকট উদাহরণ: শায়খ খালিদ শেখ মুহাম্মদ (اللَّهُمَّ فُكَّهُ بِعِزَّةٍ)
এই আইনের ফলে যে সকল মানবাধিকারগুলো শায়খ খালিদ শেখ মুহাম্মদ (اللَّهُمَّ فُكَّهُ بِعِزَّةٍ) হারিয়েছেন:
১. বিচারপ্রাপ্তির অধিকার খর্ব হয়: সাধারণ বেসামরিক আদালতে বিচার পাওয়ার অধিকার কেড়ে নিয়ে তাকে সামরিক ট্রাইব্যুনালে হাজির করা হয়—যেখানে বিচারক ও জুরিরা ছিলেন সেনা কর্তৃপক্ষের নিয়ন্ত্রণে। ফলে, নিরপেক্ষতার প্রশ্নই ওঠে না।
২. নির্যাতন থেকে মুক্ত থাকার অধিকার লঙ্ঘিত হয়: Waterboarding, sleep deprivation, sensory deprivation—এমন “enhanced interrogation” পদ্ধতিগুলো আন্তর্জাতিক আইনে পরিষ্কারভাবে নিষিদ্ধ। তবুও এভাবে তার কাছ থেকে জবানবন্দি আদায় করা হয়।
৩. habeas corpus বাতিল করা হয়: MCA অনুযায়ী, তাকে "unlawful enemy combatant" ঘোষণা করে আদালতে নিজের বন্দিত্ব চ্যালেঞ্জ করার অধিকারও বাতিল করা হয়। এর ফলে, তিনি নিজেকে নির্দোষ প্রমাণ করার মৌলিক সুযোগ হারান।
৪. স্বপ্রতিষ্ঠিত সাক্ষ্যের বিরুদ্ধে সুরক্ষা ভেঙে ফেলা হয়: নির্যাতনের মাধ্যমে আদায়কৃত স্বীকারোক্তিকে বৈধ প্রমাণ হিসেবে গণ্য করা হয়—যা ন্যায়বিচার ব্যবস্থার সম্পূর্ণ পরিপন্থী।
৫. আইনজীবীর পূর্ণ সহায়তা থেকে বঞ্চিত হন: তার আইনজীবীর সঙ্গে সাক্ষাৎ সীমিত করা হয়, এবং সরকার অনেক প্রমাণ গোপন রাখে “জাতীয় নিরাপত্তা”-র অজুহাতে।
৬. প্রমাণ ও সাক্ষীর মুখোমুখি হওয়ার সুযোগ হারান: সরকারি সাক্ষীদের পরিচয় জানতে বা তাদের জেরা করতে দেওয়া হয়নি। ফলে তিনি নিজেকে প্রতিরক্ষার উপযুক্ত সুযোগ পাননি।
৭. অভিযোগ জানার অধিকার খর্ব করা হয়: তাকে গ্রেপ্তার করা হয় ২০০৩ সালে, কিন্তু আনুষ্ঠানিক অভিযোগ আসে বহু বছর পরে।
৮. দ্রুত বিচার পাওয়ার অধিকার লঙ্ঘিত হয়: ২০২৫ সালেও তার বিচার চলছে না—দুই দশক ধরে বিচারের অপেক্ষা একটি অমানবিক দীর্ঘসূত্রতার নিদর্শন।
৯. মানবিক আচরণ পাওয়ার অধিকারও হারান: ধর্মীয় অবমাননা, দীর্ঘ একাকী কারাবাস, এবং অবমাননাকর আচরণ তার মর্যাদা ও মানবিক অধিকার পদদলিত করে।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ন্যায়বিচারের মুখোশে অন্তত একটা চেষ্টা দেখা যায়—তারা নির্যাতনের পরে একটি আইন বানিয়ে বলতে চায়, “আমরা নিয়ম মেনে বিচার করছি।” এটা নিছকই আইনি অভিনয় হলেও, এটুকু স্বীকার করে নেওয়া যায় যে, তারা রাষ্ট্রীয় শক্তিকে কিছুটা হলেও নৈতিকতার জবাবদিহির আওতায় রাখতে চেয়েছে।
কিন্তু বাংলাদেশে?
এখানে রাষ্ট্র নিজেই গুম কমিশন গঠন করে স্বীকার করে নিয়েছে যে তারা গুম করেছে, নির্যাতন করেছে, অথচ এরপরও সেই নির্যাতন থেকেই নেওয়া জবানবন্দিকেই আদালতে প্রমাণ হিসেবে ব্যবহার করে ফাঁসি দেয়। এখানে আইনের ন্যূনতম মুখোশটুকুও রাখা হয় না। স্বীকারোক্তির একমাত্র উৎস: গুম, নির্যাতন, ভয়ভীতি।
Comment