(১)
বর্তমান বিশ্বের নিয়ন্ত্রক কাঠামো বিশ্লেষণ করতে গেলে আমরা এক জটিল, বহুমাত্রিক ও গভীরভাবে প্রভাবশালী এক ব্যবস্থা দেখতে পাই—যেটি হল কর্পোরেট পুঁজিবাদ। এটি কেবল একটি অর্থনৈতিক ব্যবস্থা নয়, বরং এটি একটি পূর্ণাঙ্গ আদর্শিক ও সাংস্কৃতিক গঠন যা আধুনিক রাষ্ট্র, বৈশ্বিক রাজনীতি, প্রযুক্তি, শিক্ষা, গণমাধ্যম এবং এমনকি মানুষের জীবনযাত্রার ধরনকে পর্যন্ত নিয়ন্ত্রণ করে। এর শিকড় গেঁথে আছে ঔপনিবেশিক ইতিহাসে, এবং এর ডালপালা ছড়িয়ে পড়েছে বিশ্বায়নের নামে পরিচালিত এক বহুজাতিক ‘নিয়ন্ত্রণ নেটওয়ার্কে’। এ নেটওয়ার্কের মূল চালিকাশক্তি হচ্ছে বৃহৎ কর্পোরেশনগুলো—যারা রাষ্ট্রের উপরে প্রভাব বিস্তার করতে সক্ষম, জনগণের উপর আধিপত্য কায়েমে পারদর্শী এবং মানবজীবনের প্রায় প্রতিটি খুঁটিনাটি দিককে পণ্যে পরিণত করার মাধ্যমে অর্থ উপার্জনের এক নির্লজ্জ যন্ত্রে পরিণত হয়েছে।
“Corporate capitalism” বা কর্পোরেট পুঁজিবাদ বলতে বোঝায় এমন এক পুঁজিবাদী অর্থনৈতিক কাঠামো, যেখানে উৎপাদন ও বিতরণব্যবস্থা প্রধানত বৃহৎ কর্পোরেশনসমূহের নিয়ন্ত্রণে থাকে। এই কর্পোরেশনগুলো ব্যক্তিগত মালিকানার হলেও তাদের প্রভাব রাষ্ট্রীয় ও বৈশ্বিক পরিসরে ছড়ানো থাকে। রিচার্ড রবার্টস তাঁর The Modern Firm বইয়ে বলেন, “In corporate capitalism, the firm ceases to be a mere economic actor and becomes a political and cultural force.” অন্যদিকে, নোয়াম চমস্কি কর্পোরেটদের রাষ্ট্রের সাথে গভীর আঁতাতকে ‘state-corporate complex’ হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন, যা কার্যত গণতন্ত্রকে একটি প্রহসনে রূপান্তর করেছে।
এই কর্পোরেট ব্যবস্থার জন্ম হয় ১৮শ ও ১৯শ শতাব্দীর ব্রিটিশ ও ইউরোপীয় উপনিবেশবাদী প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে। ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি (East India Company), হাডসন বে কোম্পানি (Hudson's Bay Company), ডাচ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি (VOC) প্রভৃতি প্রতিষ্ঠানগুলো ছিল আধুনিক কর্পোরেট সিস্টেমের পূর্বসূরি। এগুলো একাধারে বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান, একাধারে সামরিক ও শাসনযন্ত্র। রোনাল্ড ফিনলে তাঁর The Corporation That Changed the World: How the East India Company Shaped the Modern Multinational গ্রন্থে দেখিয়েছেন, ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানিই প্রথম ‘আধুনিক কর্পোরেট স্টেট’ এর অনুশীলন চালায়, যেখানে লাভের জন্য শাসন, হত্যা, লুট এবং দখলকে নিয়মতান্ত্রিক করা হয়।
আজকের দিনে সেই কাঠামো আরও উন্নত ও পরিশীলিত। Fortune 500-এর শীর্ষস্থানীয় কোম্পানিগুলোর মোট বার্ষিক আয়ের পরিমাণ বহু দেশের জাতীয় বাজেটের চেয়েও বেশি। উদাহরণস্বরূপ, ২০২৪ সালের হিসেব অনুযায়ী, Walmart, Amazon, এবং Apple-এর রাজস্ব এমন যে তারা চাইলে আফ্রিকা মহাদেশের বহু দেশের ঋণ এককভাবে শোধ করতে পারত। কর্পোরেটরা কেবল অর্থনীতিকেই নয়, রাজনীতি, নীতি-নির্ধারণ, মিডিয়া ও জনমতকেও নিয়ন্ত্রণ করে। লরি ওয়ালাস তাঁর বই Capitalism and Its Discontents এ বলেন, “Corporations today are not merely economic actors; they have become architects of the human condition.”
এই কর্পোরেট কাঠামোতে ব্যক্তি পরিণত হয় ‘ভোক্তা’তে, শিক্ষা হয়ে যায় ‘কর্মী উৎপাদন কারখানা’, রাষ্ট্র হয়ে ওঠে কর্পোরেট সুবিধাবাহী একটি নিরাপত্তা ব্যবস্থা, এবং ধর্ম ও সংস্কৃতিও বাণিজ্যিক ব্র্যান্ডে রূপ নেয়। কাজেই এই কর্পোরেট ব্যবস্থা মূলত একটি নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা—যার মূল লক্ষ্য মানবসমাজকে এক মুনাফাকেন্দ্রিক চক্রে আবদ্ধ রাখা, যাতে ব্যক্তিগত পরিচয়, পারিবারিক বন্ধন, ধর্মীয় কর্তব্য এবং সামষ্টিক রাজনৈতিক সচেতনতা সবকিছুই ক্ষয়িষ্ণু হয়।
সুতরাং, কর্পোরেট পুঁজিবাদকে কেবল একটি অর্থনৈতিক পদ্ধতি হিসেবে দেখা ভুল হবে। এটি আধুনিক সভ্যতার অদৃশ্য কিন্তু সর্বগ্রাসী একটি নিয়ন্ত্রণব্যবস্থা, যার দ্বারা ব্যক্তি, পরিবার, সমাজ এবং এমনকি ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান পর্যন্ত প্রভাবিত হয়। এই ব্যবস্থাকে বুঝতে না পারলে বর্তমান দুনিয়ার বাস্তব রাজনীতি, সামাজিক ন্যায়বিচার, এবং উম্মাহর ভবিষ্যৎ কোনোভাবেই গভীরভাবে উপলব্ধি করা সম্ভব নয়।
(২)
আজকের দুনিয়ায় মুসলিম উম্মাহ যে গভীর সামষ্টিক দুর্দশা ও বিভ্রান্তির মধ্যে নিমজ্জিত, তার পেছনে বহুস্তরবিশিষ্ট কারণ বিদ্যমান। রাজনৈতিক নিপীড়ন, অর্থনৈতিক বৈষম্য, সাংস্কৃতিক আগ্রাসন ও বুদ্ধিবৃত্তিক আত্মবিস্মৃতি—সবকিছু মিলিয়ে গঠিত হয়েছে এমন এক বাস্তবতা, যেখানে উম্মাহর বড় একটি অংশ কেবল পেছনে পড়েই নয়, বরং আদর্শহীনতায় ভুগছে। এই সমষ্টিগত বিচ্যুতি এবং বিভ্রান্তির সবচেয়ে চতুর ও গভীর রূপটি হলো কর্পোরেট কালচারের মাধ্যমে গড়ে ওঠা নিয়ন্ত্রিত জীবনব্যবস্থা—যা মুসলমানদের চিন্তা, মূল্যবোধ, আশা-আকাঙ্ক্ষা এবং জীবনের উদ্দেশ্যকে আমূল রূপান্তর করে ফেলেছে।
কর্পোরেট কালচার বলতে বোঝায় একটি এমন সাংস্কৃতিক কাঠামো, যা মূলত বৃহৎ কর্পোরেশনগুলো দ্বারা তৈরি ও প্রচারিত, এবং যার লক্ষ্য হলো ব্যক্তি ও সমাজকে একটি নির্দিষ্ট ভোক্তা-চিন্তাধারায় আবদ্ধ রাখা। এটি কেবল পণ্যের বিজ্ঞাপন নয়—এটি জীবনবোধ, সময় ব্যবস্থাপনা, সম্পর্ক, স্বপ্ন, শিক্ষা, বিনোদন এমনকি ধর্মীয় চর্চাকেও ঢেলে সাজায় এক বিশেষ ঘরানায়, যা মূলত উদার পুঁজিবাদী দৃষ্টিভঙ্গির প্রতিফলন।
এ সংস্কৃতির অন্যতম বৈশিষ্ট্য হলো আত্ম-উপলব্ধির জায়গায় পণ্যের প্রতি আকর্ষণ; পরিবার ও উম্মাহর দায়িত্বের বদলে ব্যক্তিগত সাফল্য; তাকওয়া ও ইখলাসের বদলে 'প্রোডাক্টিভিটি' ও 'পার্সোনাল ব্র্যান্ড' গঠনের মোহ। মুসলিম তরুণদের এক বড় অংশ আজ এমন এক সংস্কৃতিতে ডুবে আছে, যেখানে “success” মানে কর্পোরেট চাকরি, “growth” মানে ক্যারিয়ার ডেভেলপমেন্ট, আর “identity” মানে লিঙ্কডইন প্রোফাইল। এই মনস্তত্ত্ব চুপিসারে মুসলিম পরিচয়কে খণ্ডিত করছে, এবং ব্যক্তিকে উম্মাহর বৃহত্তর দায়িত্ব থেকে সরিয়ে দিচ্ছে।
নোয়াম চমস্কি, তাঁর Manufacturing Consent গ্রন্থে দেখিয়েছেন কীভাবে কর্পোরেট মিডিয়া ও সংস্কৃতি জনগণের মতামত তৈরি করে, এমনকি তাদের বিদ্রোহের ভাষাও নিয়ন্ত্রণ করে। মুসলিম দুনিয়ায় এই পদ্ধতি আরও ভয়াবহ রূপে কার্যকর, কারণ এখানে ইসলামি জীবনব্যবস্থা সম্পর্কে অজ্ঞতা ও দমননীতির ফলে মুসলিমরা খুব সহজেই কর্পোরেট সংস্কৃতির বিকল্পহীনতা মেনে নিচ্ছে।
ইউসুফ আল-কারদাওয়ী রাহিমাহুল্লাহ তাঁর Islamic Awakening Between Rejection and Extremism গ্রন্থে সতর্ক করে বলেন, “Muslims are not just suffering from outside attacks, but also from an internal cultural defeatism.” এই পরাজয়ই কর্পোরেট কালচারের মূলে—যেখানে ইসলামকে relegated করা হয় ‘personally practiced but publicly silent’ পর্যায়ে, আর ইসলামি রাষ্ট্র ও উম্মাহর ধারণা রূপ নেয় “non-realistic idealism”-এ।
শাহ ওয়ালিউল্লাহ দেহলভী রাহিমাহুল্লাহ তাঁর হুজ্জাতুল্লাহিল বালিগাহ গ্রন্থে বারবার সতর্ক করেছেন যে, সমাজের নৈতিক কাঠামো যখন ভেঙে পড়ে এবং মানুষ যখন জীবনব্যবস্থার ভিত্তিতে সত্যকে বেছে নেয় না বরং সুবিধাকে ভিত্তি বানায়, তখন জাহেলিয়াত ফিরে আসে। আধুনিক কর্পোরেট কালচার তারই এক ঘুষি মারা সংস্করণ—যেখানে মুসলিম নামধারীরা জাহেলিয়াতি মানসিকতার মধ্যে দিনযাপন করছে, কিন্তু আধুনিকতার মোড়কে নিজেদের অগ্রসর মনে করছে।
আরো গভীরভাবে দেখলে বোঝা যায়, কর্পোরেট সংস্কৃতি ইসলামি সমাজের কেন্দ্রীয় স্তম্ভ—যেমন পারিবারিক কাঠামো, উম্মাহ-ভিত্তিক পরিচয়, তাকওয়ার চর্চা এবং জবাবদিহিতার নীতি—সবকিছুকে বিনষ্ট করছে। বাবা হয়ে ওঠে “প্রোভাইডার”, মা “ডে কেয়ার সার্ভিস”, সন্তান “ইনভেস্টমেন্ট”—এই ভাষাই বলে দেয় আমরা কতটা কর্পোরেট চিন্তায় ঢুকে গেছি।
এই প্রেক্ষাপটে মুসলিম উম্মাহর দুর্দশা শুধু গুলি ও বোমার মাধ্যমে হয় না; বরং নরম, প্যাকেটজাত, উচ্চ-বেতন ও ক্যারিয়ার-গ্ল্যামারে মোড়ানো এক সাংস্কৃতিক আগ্রাসনের মাধ্যমেও হয়—যেটি আত্মাকে নিঃশেষ করে দেয়, অথচ মুখে রাখে “modern Muslim identity” নামের এক ছদ্মবেশ।
অতএব, কর্পোরেট কালচার কেবল অর্থনৈতিক বা সাংস্কৃতিক একটি ট্রেন্ড নয়—এটি একটি বিশ্বদর্শন (worldview), যা মুসলিমদের আত্মপরিচয়, ঐক্য, আখিরাতমুখী দৃষ্টিভঙ্গি, এবং সর্বোপরি আল্লাহর খেলাফতের দায়িত্বকে নিশ্চুপ ও অকার্যকর করে তোলে।
(৩)
এই লেখার প্রধান উদ্দেশ্য হলো কর্পোরেট কালচার নামক আধুনিক সাংস্কৃতিক উপনিবেশবাদের প্রভাবে মুসলিম উম্মাহর চিন্তাগত, আত্মিক ও সাংগঠনিক বিচ্যুতির একটি গভীর বিশ্লেষণ উপস্থাপন করা। এখানে লক্ষ্য কেবল কর্পোরেট অর্থনীতির সমালোচনা নয়; বরং এর অন্তর্নিহিত আদর্শ, মানব-ধারণা (conception of man), সময়ের ব্যয়বিধান, আত্মপরিচয় নির্মাণ এবং উম্মাহবোধ নির্মূলের প্রক্রিয়াকে চিহ্নিত করা।
বিশেষত, এই লেখার মাধ্যমে নিম্নোক্ত বিষয়গুলো পরিষ্কার করা হচ্ছে—
==> মুসলিম উম্মাহর দুর্দশার প্রকৃত রূপ রাজনৈতিক বা অর্থনৈতিক সংকটের বাইরেও রয়েছে: এটি একটি সাংস্কৃতিক এবং চিন্তাগত পরাজয়ের ফলাফল।
==> কর্পোরেট কালচার কোনো নিরপেক্ষ ‘লাইফস্টাইল’ নয়; এটি একটি আদর্শিক নিয়ন্ত্রণব্যবস্থা—যা মুসলমানদের দুনিয়ামুখী, আত্মকেন্দ্রিক, বর্ণহীন করে তোলে।
==> ইসলামি খেলাফতি ও উম্মাহভিত্তিক দৃষ্টিভঙ্গি এই কর্পোরেট সংস্কৃতির মৌলিক বিরোধিতা করে এবং এই দ্বন্দ্বের উপস্থাপন ছাড়া ইসলামি পুনর্জাগরণের সম্ভাবনা অসম্পূর্ণ থাকে।
এই লেখায় বিশ্লেষণ করা হচ্ছে কর্পোরেট কালচারকে একটি আদর্শিক ও উপনিবেশিক প্রকল্প হিসেবে—যেটি আধুনিক পুঁজিবাদ, উদারনৈতিক মানবচিন্তা এবং জাতিরাষ্ট্রের অভ্যন্তর থেকে পরিচালিত হয় এবং মুসলিম সমাজের উপর একটি ‘সাংস্কৃতিক শাসন’ কায়েম করে।
এই বিশ্লেষণ তিনটি স্তরে পরিচালিত:
১. মহত্ত্ববোধের পতন (Collapse of transcendence): কর্পোরেট কালচার মানুষের ‘আখিরাত-কেন্দ্রিকতা’কে বদলে দিয়ে তাকে একধরনের instant utility-driven individualism এ রূপান্তর করে। ফলে মানুষের জীবনের মূল উদ্দেশ্য আর ‘ইবাদাত’ থাকে না, বরং হয় ‘সাফল্য’, ‘স্বস্তি’ ও ‘স্মার্টনেস’।
২. পরিচয়হীনতা ও আত্ম-বিচ্ছিন্নতা (Crisis of identity): কর্পোরেট কালচার ব্যক্তিকে ভোক্তায় রূপান্তর করে এবং মুসলিমদের ঐতিহাসিক পরিচয়—যেমন উম্মাহ, খেলাফত, তাকওয়া, জিহাদ, জবাবদিহিতা ইত্যাদিকে অদৃশ্য করে দেয়। সে নিজেকে দেখে 'পেশাজীবী', 'স্টার্ট-আপার', 'উন্নয়নের প্রতিনিধি' হিসেবে; উম্মাহর একজন সৈনিক বা খলীফা হিসেবে নয়।
৩. ইসলামি কাঠামোর সাথে দার্শনিক সংঘর্ষ (Ideological incompatibility): ইসলাম একটি সামষ্টিক, ঈমান-ভিত্তিক, তাওহিদ-নির্ভর জীবনব্যবস্থা—যার লক্ষ্য হল আল্লাহর বিধান অনুসারে সমাজ ও রাষ্ট্র পরিচালনা। কর্পোরেট কালচার এই ব্যবস্থার একেবারে বিপরীত: এটি ব্যক্তিকেন্দ্রিক, চাহিদানির্ভর এবং মুনাফাকেন্দ্রিক। এই দুটি ব্যবস্থার সহাবস্থান নয়, বরং সংঘর্ষ অনিবার্য।
এই লেখায় উপস্থাপিত বিশ্লেষণ কেবল তথ্য উপস্থাপনের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়; বরং এটি একটি তাওহিদকেন্দ্রিক দৃষ্টিভঙ্গির ভিত্তিতে চিন্তাজগতকে পুনর্গঠনের একটি প্রয়াস। এর লক্ষ্য হলো—কর্পোরেট কালচারের গভীর আদর্শিক রূপকে চিহ্নিত করা এবং পাঠককে এমন এক চিন্তার জগতে প্রবেশ করানো, যেখানে ইসলাম কেবল ব্যক্তিগত ইবাদতের নয়, বরং সামগ্রিক জীবনব্যবস্থার ভিত্তি ও বিকল্প হিসেবে প্রতিভাত হয়।
বর্তমান বিশ্বের নিয়ন্ত্রক কাঠামো বিশ্লেষণ করতে গেলে আমরা এক জটিল, বহুমাত্রিক ও গভীরভাবে প্রভাবশালী এক ব্যবস্থা দেখতে পাই—যেটি হল কর্পোরেট পুঁজিবাদ। এটি কেবল একটি অর্থনৈতিক ব্যবস্থা নয়, বরং এটি একটি পূর্ণাঙ্গ আদর্শিক ও সাংস্কৃতিক গঠন যা আধুনিক রাষ্ট্র, বৈশ্বিক রাজনীতি, প্রযুক্তি, শিক্ষা, গণমাধ্যম এবং এমনকি মানুষের জীবনযাত্রার ধরনকে পর্যন্ত নিয়ন্ত্রণ করে। এর শিকড় গেঁথে আছে ঔপনিবেশিক ইতিহাসে, এবং এর ডালপালা ছড়িয়ে পড়েছে বিশ্বায়নের নামে পরিচালিত এক বহুজাতিক ‘নিয়ন্ত্রণ নেটওয়ার্কে’। এ নেটওয়ার্কের মূল চালিকাশক্তি হচ্ছে বৃহৎ কর্পোরেশনগুলো—যারা রাষ্ট্রের উপরে প্রভাব বিস্তার করতে সক্ষম, জনগণের উপর আধিপত্য কায়েমে পারদর্শী এবং মানবজীবনের প্রায় প্রতিটি খুঁটিনাটি দিককে পণ্যে পরিণত করার মাধ্যমে অর্থ উপার্জনের এক নির্লজ্জ যন্ত্রে পরিণত হয়েছে।
“Corporate capitalism” বা কর্পোরেট পুঁজিবাদ বলতে বোঝায় এমন এক পুঁজিবাদী অর্থনৈতিক কাঠামো, যেখানে উৎপাদন ও বিতরণব্যবস্থা প্রধানত বৃহৎ কর্পোরেশনসমূহের নিয়ন্ত্রণে থাকে। এই কর্পোরেশনগুলো ব্যক্তিগত মালিকানার হলেও তাদের প্রভাব রাষ্ট্রীয় ও বৈশ্বিক পরিসরে ছড়ানো থাকে। রিচার্ড রবার্টস তাঁর The Modern Firm বইয়ে বলেন, “In corporate capitalism, the firm ceases to be a mere economic actor and becomes a political and cultural force.” অন্যদিকে, নোয়াম চমস্কি কর্পোরেটদের রাষ্ট্রের সাথে গভীর আঁতাতকে ‘state-corporate complex’ হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন, যা কার্যত গণতন্ত্রকে একটি প্রহসনে রূপান্তর করেছে।
এই কর্পোরেট ব্যবস্থার জন্ম হয় ১৮শ ও ১৯শ শতাব্দীর ব্রিটিশ ও ইউরোপীয় উপনিবেশবাদী প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে। ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি (East India Company), হাডসন বে কোম্পানি (Hudson's Bay Company), ডাচ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি (VOC) প্রভৃতি প্রতিষ্ঠানগুলো ছিল আধুনিক কর্পোরেট সিস্টেমের পূর্বসূরি। এগুলো একাধারে বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান, একাধারে সামরিক ও শাসনযন্ত্র। রোনাল্ড ফিনলে তাঁর The Corporation That Changed the World: How the East India Company Shaped the Modern Multinational গ্রন্থে দেখিয়েছেন, ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানিই প্রথম ‘আধুনিক কর্পোরেট স্টেট’ এর অনুশীলন চালায়, যেখানে লাভের জন্য শাসন, হত্যা, লুট এবং দখলকে নিয়মতান্ত্রিক করা হয়।
আজকের দিনে সেই কাঠামো আরও উন্নত ও পরিশীলিত। Fortune 500-এর শীর্ষস্থানীয় কোম্পানিগুলোর মোট বার্ষিক আয়ের পরিমাণ বহু দেশের জাতীয় বাজেটের চেয়েও বেশি। উদাহরণস্বরূপ, ২০২৪ সালের হিসেব অনুযায়ী, Walmart, Amazon, এবং Apple-এর রাজস্ব এমন যে তারা চাইলে আফ্রিকা মহাদেশের বহু দেশের ঋণ এককভাবে শোধ করতে পারত। কর্পোরেটরা কেবল অর্থনীতিকেই নয়, রাজনীতি, নীতি-নির্ধারণ, মিডিয়া ও জনমতকেও নিয়ন্ত্রণ করে। লরি ওয়ালাস তাঁর বই Capitalism and Its Discontents এ বলেন, “Corporations today are not merely economic actors; they have become architects of the human condition.”
এই কর্পোরেট কাঠামোতে ব্যক্তি পরিণত হয় ‘ভোক্তা’তে, শিক্ষা হয়ে যায় ‘কর্মী উৎপাদন কারখানা’, রাষ্ট্র হয়ে ওঠে কর্পোরেট সুবিধাবাহী একটি নিরাপত্তা ব্যবস্থা, এবং ধর্ম ও সংস্কৃতিও বাণিজ্যিক ব্র্যান্ডে রূপ নেয়। কাজেই এই কর্পোরেট ব্যবস্থা মূলত একটি নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা—যার মূল লক্ষ্য মানবসমাজকে এক মুনাফাকেন্দ্রিক চক্রে আবদ্ধ রাখা, যাতে ব্যক্তিগত পরিচয়, পারিবারিক বন্ধন, ধর্মীয় কর্তব্য এবং সামষ্টিক রাজনৈতিক সচেতনতা সবকিছুই ক্ষয়িষ্ণু হয়।
সুতরাং, কর্পোরেট পুঁজিবাদকে কেবল একটি অর্থনৈতিক পদ্ধতি হিসেবে দেখা ভুল হবে। এটি আধুনিক সভ্যতার অদৃশ্য কিন্তু সর্বগ্রাসী একটি নিয়ন্ত্রণব্যবস্থা, যার দ্বারা ব্যক্তি, পরিবার, সমাজ এবং এমনকি ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান পর্যন্ত প্রভাবিত হয়। এই ব্যবস্থাকে বুঝতে না পারলে বর্তমান দুনিয়ার বাস্তব রাজনীতি, সামাজিক ন্যায়বিচার, এবং উম্মাহর ভবিষ্যৎ কোনোভাবেই গভীরভাবে উপলব্ধি করা সম্ভব নয়।
(২)
আজকের দুনিয়ায় মুসলিম উম্মাহ যে গভীর সামষ্টিক দুর্দশা ও বিভ্রান্তির মধ্যে নিমজ্জিত, তার পেছনে বহুস্তরবিশিষ্ট কারণ বিদ্যমান। রাজনৈতিক নিপীড়ন, অর্থনৈতিক বৈষম্য, সাংস্কৃতিক আগ্রাসন ও বুদ্ধিবৃত্তিক আত্মবিস্মৃতি—সবকিছু মিলিয়ে গঠিত হয়েছে এমন এক বাস্তবতা, যেখানে উম্মাহর বড় একটি অংশ কেবল পেছনে পড়েই নয়, বরং আদর্শহীনতায় ভুগছে। এই সমষ্টিগত বিচ্যুতি এবং বিভ্রান্তির সবচেয়ে চতুর ও গভীর রূপটি হলো কর্পোরেট কালচারের মাধ্যমে গড়ে ওঠা নিয়ন্ত্রিত জীবনব্যবস্থা—যা মুসলমানদের চিন্তা, মূল্যবোধ, আশা-আকাঙ্ক্ষা এবং জীবনের উদ্দেশ্যকে আমূল রূপান্তর করে ফেলেছে।
কর্পোরেট কালচার বলতে বোঝায় একটি এমন সাংস্কৃতিক কাঠামো, যা মূলত বৃহৎ কর্পোরেশনগুলো দ্বারা তৈরি ও প্রচারিত, এবং যার লক্ষ্য হলো ব্যক্তি ও সমাজকে একটি নির্দিষ্ট ভোক্তা-চিন্তাধারায় আবদ্ধ রাখা। এটি কেবল পণ্যের বিজ্ঞাপন নয়—এটি জীবনবোধ, সময় ব্যবস্থাপনা, সম্পর্ক, স্বপ্ন, শিক্ষা, বিনোদন এমনকি ধর্মীয় চর্চাকেও ঢেলে সাজায় এক বিশেষ ঘরানায়, যা মূলত উদার পুঁজিবাদী দৃষ্টিভঙ্গির প্রতিফলন।
এ সংস্কৃতির অন্যতম বৈশিষ্ট্য হলো আত্ম-উপলব্ধির জায়গায় পণ্যের প্রতি আকর্ষণ; পরিবার ও উম্মাহর দায়িত্বের বদলে ব্যক্তিগত সাফল্য; তাকওয়া ও ইখলাসের বদলে 'প্রোডাক্টিভিটি' ও 'পার্সোনাল ব্র্যান্ড' গঠনের মোহ। মুসলিম তরুণদের এক বড় অংশ আজ এমন এক সংস্কৃতিতে ডুবে আছে, যেখানে “success” মানে কর্পোরেট চাকরি, “growth” মানে ক্যারিয়ার ডেভেলপমেন্ট, আর “identity” মানে লিঙ্কডইন প্রোফাইল। এই মনস্তত্ত্ব চুপিসারে মুসলিম পরিচয়কে খণ্ডিত করছে, এবং ব্যক্তিকে উম্মাহর বৃহত্তর দায়িত্ব থেকে সরিয়ে দিচ্ছে।
নোয়াম চমস্কি, তাঁর Manufacturing Consent গ্রন্থে দেখিয়েছেন কীভাবে কর্পোরেট মিডিয়া ও সংস্কৃতি জনগণের মতামত তৈরি করে, এমনকি তাদের বিদ্রোহের ভাষাও নিয়ন্ত্রণ করে। মুসলিম দুনিয়ায় এই পদ্ধতি আরও ভয়াবহ রূপে কার্যকর, কারণ এখানে ইসলামি জীবনব্যবস্থা সম্পর্কে অজ্ঞতা ও দমননীতির ফলে মুসলিমরা খুব সহজেই কর্পোরেট সংস্কৃতির বিকল্পহীনতা মেনে নিচ্ছে।
ইউসুফ আল-কারদাওয়ী রাহিমাহুল্লাহ তাঁর Islamic Awakening Between Rejection and Extremism গ্রন্থে সতর্ক করে বলেন, “Muslims are not just suffering from outside attacks, but also from an internal cultural defeatism.” এই পরাজয়ই কর্পোরেট কালচারের মূলে—যেখানে ইসলামকে relegated করা হয় ‘personally practiced but publicly silent’ পর্যায়ে, আর ইসলামি রাষ্ট্র ও উম্মাহর ধারণা রূপ নেয় “non-realistic idealism”-এ।
শাহ ওয়ালিউল্লাহ দেহলভী রাহিমাহুল্লাহ তাঁর হুজ্জাতুল্লাহিল বালিগাহ গ্রন্থে বারবার সতর্ক করেছেন যে, সমাজের নৈতিক কাঠামো যখন ভেঙে পড়ে এবং মানুষ যখন জীবনব্যবস্থার ভিত্তিতে সত্যকে বেছে নেয় না বরং সুবিধাকে ভিত্তি বানায়, তখন জাহেলিয়াত ফিরে আসে। আধুনিক কর্পোরেট কালচার তারই এক ঘুষি মারা সংস্করণ—যেখানে মুসলিম নামধারীরা জাহেলিয়াতি মানসিকতার মধ্যে দিনযাপন করছে, কিন্তু আধুনিকতার মোড়কে নিজেদের অগ্রসর মনে করছে।
আরো গভীরভাবে দেখলে বোঝা যায়, কর্পোরেট সংস্কৃতি ইসলামি সমাজের কেন্দ্রীয় স্তম্ভ—যেমন পারিবারিক কাঠামো, উম্মাহ-ভিত্তিক পরিচয়, তাকওয়ার চর্চা এবং জবাবদিহিতার নীতি—সবকিছুকে বিনষ্ট করছে। বাবা হয়ে ওঠে “প্রোভাইডার”, মা “ডে কেয়ার সার্ভিস”, সন্তান “ইনভেস্টমেন্ট”—এই ভাষাই বলে দেয় আমরা কতটা কর্পোরেট চিন্তায় ঢুকে গেছি।
এই প্রেক্ষাপটে মুসলিম উম্মাহর দুর্দশা শুধু গুলি ও বোমার মাধ্যমে হয় না; বরং নরম, প্যাকেটজাত, উচ্চ-বেতন ও ক্যারিয়ার-গ্ল্যামারে মোড়ানো এক সাংস্কৃতিক আগ্রাসনের মাধ্যমেও হয়—যেটি আত্মাকে নিঃশেষ করে দেয়, অথচ মুখে রাখে “modern Muslim identity” নামের এক ছদ্মবেশ।
অতএব, কর্পোরেট কালচার কেবল অর্থনৈতিক বা সাংস্কৃতিক একটি ট্রেন্ড নয়—এটি একটি বিশ্বদর্শন (worldview), যা মুসলিমদের আত্মপরিচয়, ঐক্য, আখিরাতমুখী দৃষ্টিভঙ্গি, এবং সর্বোপরি আল্লাহর খেলাফতের দায়িত্বকে নিশ্চুপ ও অকার্যকর করে তোলে।
(৩)
এই লেখার প্রধান উদ্দেশ্য হলো কর্পোরেট কালচার নামক আধুনিক সাংস্কৃতিক উপনিবেশবাদের প্রভাবে মুসলিম উম্মাহর চিন্তাগত, আত্মিক ও সাংগঠনিক বিচ্যুতির একটি গভীর বিশ্লেষণ উপস্থাপন করা। এখানে লক্ষ্য কেবল কর্পোরেট অর্থনীতির সমালোচনা নয়; বরং এর অন্তর্নিহিত আদর্শ, মানব-ধারণা (conception of man), সময়ের ব্যয়বিধান, আত্মপরিচয় নির্মাণ এবং উম্মাহবোধ নির্মূলের প্রক্রিয়াকে চিহ্নিত করা।
বিশেষত, এই লেখার মাধ্যমে নিম্নোক্ত বিষয়গুলো পরিষ্কার করা হচ্ছে—
==> মুসলিম উম্মাহর দুর্দশার প্রকৃত রূপ রাজনৈতিক বা অর্থনৈতিক সংকটের বাইরেও রয়েছে: এটি একটি সাংস্কৃতিক এবং চিন্তাগত পরাজয়ের ফলাফল।
==> কর্পোরেট কালচার কোনো নিরপেক্ষ ‘লাইফস্টাইল’ নয়; এটি একটি আদর্শিক নিয়ন্ত্রণব্যবস্থা—যা মুসলমানদের দুনিয়ামুখী, আত্মকেন্দ্রিক, বর্ণহীন করে তোলে।
==> ইসলামি খেলাফতি ও উম্মাহভিত্তিক দৃষ্টিভঙ্গি এই কর্পোরেট সংস্কৃতির মৌলিক বিরোধিতা করে এবং এই দ্বন্দ্বের উপস্থাপন ছাড়া ইসলামি পুনর্জাগরণের সম্ভাবনা অসম্পূর্ণ থাকে।
এই লেখায় বিশ্লেষণ করা হচ্ছে কর্পোরেট কালচারকে একটি আদর্শিক ও উপনিবেশিক প্রকল্প হিসেবে—যেটি আধুনিক পুঁজিবাদ, উদারনৈতিক মানবচিন্তা এবং জাতিরাষ্ট্রের অভ্যন্তর থেকে পরিচালিত হয় এবং মুসলিম সমাজের উপর একটি ‘সাংস্কৃতিক শাসন’ কায়েম করে।
এই বিশ্লেষণ তিনটি স্তরে পরিচালিত:
১. মহত্ত্ববোধের পতন (Collapse of transcendence): কর্পোরেট কালচার মানুষের ‘আখিরাত-কেন্দ্রিকতা’কে বদলে দিয়ে তাকে একধরনের instant utility-driven individualism এ রূপান্তর করে। ফলে মানুষের জীবনের মূল উদ্দেশ্য আর ‘ইবাদাত’ থাকে না, বরং হয় ‘সাফল্য’, ‘স্বস্তি’ ও ‘স্মার্টনেস’।
২. পরিচয়হীনতা ও আত্ম-বিচ্ছিন্নতা (Crisis of identity): কর্পোরেট কালচার ব্যক্তিকে ভোক্তায় রূপান্তর করে এবং মুসলিমদের ঐতিহাসিক পরিচয়—যেমন উম্মাহ, খেলাফত, তাকওয়া, জিহাদ, জবাবদিহিতা ইত্যাদিকে অদৃশ্য করে দেয়। সে নিজেকে দেখে 'পেশাজীবী', 'স্টার্ট-আপার', 'উন্নয়নের প্রতিনিধি' হিসেবে; উম্মাহর একজন সৈনিক বা খলীফা হিসেবে নয়।
৩. ইসলামি কাঠামোর সাথে দার্শনিক সংঘর্ষ (Ideological incompatibility): ইসলাম একটি সামষ্টিক, ঈমান-ভিত্তিক, তাওহিদ-নির্ভর জীবনব্যবস্থা—যার লক্ষ্য হল আল্লাহর বিধান অনুসারে সমাজ ও রাষ্ট্র পরিচালনা। কর্পোরেট কালচার এই ব্যবস্থার একেবারে বিপরীত: এটি ব্যক্তিকেন্দ্রিক, চাহিদানির্ভর এবং মুনাফাকেন্দ্রিক। এই দুটি ব্যবস্থার সহাবস্থান নয়, বরং সংঘর্ষ অনিবার্য।
এই লেখায় উপস্থাপিত বিশ্লেষণ কেবল তথ্য উপস্থাপনের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়; বরং এটি একটি তাওহিদকেন্দ্রিক দৃষ্টিভঙ্গির ভিত্তিতে চিন্তাজগতকে পুনর্গঠনের একটি প্রয়াস। এর লক্ষ্য হলো—কর্পোরেট কালচারের গভীর আদর্শিক রূপকে চিহ্নিত করা এবং পাঠককে এমন এক চিন্তার জগতে প্রবেশ করানো, যেখানে ইসলাম কেবল ব্যক্তিগত ইবাদতের নয়, বরং সামগ্রিক জীবনব্যবস্থার ভিত্তি ও বিকল্প হিসেবে প্রতিভাত হয়।
Comment