Announcement

Collapse
No announcement yet.

অবশেষে 'নেহরু'কে কি ওস্তাদ মানতে হবে? (পর্ব - ২)

Collapse
This is a sticky topic.
X
X
 
  • Filter
  • Time
  • Show
Clear All
new posts

  • অবশেষে 'নেহরু'কে কি ওস্তাদ মানতে হবে? (পর্ব - ২)

    একটি রাষ্ট্রের সার্বভৌমত্বের অন্যতম প্রধান ভিত্তি হলো তার সুস্পষ্ট এবং শক্তিশালী নিরাপত্তা নীতি। এই নীতির মূল উদ্দেশ্য দেশের সীমান্ত রক্ষা, অভ্যন্তরীণ স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করা এবং বৈদেশিক শক্তির যেকোনো ধরনের আগ্রাসনমূলক কার্যকলাপ থেকে জাতিকে সুরক্ষিত রাখা। কিন্তু বাংলাদেশের নিরাপত্তা নীতির ইতিহাস পর্যালোচনা করলে দেখা যায়, এটি বিভিন্ন সময়ে অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক উচ্চাভিলাষ এবং ভূ-রাজনৈতিক খেলার এক জটিল ক্ষেত্রে পরিণত হয়েছে। স্বাধীনতার পর থেকেই বাংলাদেশ সেনাবাহিনী এবং দেশের নিরাপত্তা ব্যবস্থা বিভিন্ন ষড়যন্ত্র ও কুটচালের শিকার হয়েছে, যা একটি শক্তিশালী ও স্বাধীন নিরাপত্তা কাঠামো গঠনের পথে বড় বাধা সৃষ্টি করেছে।

    স্বাধীনতার পর শেখ মুজিবুর রহমানের সরকার সেনাবাহিনীকে শক্তিশালী করার পরিবর্তে 'জাতীয় রক্ষীবাহিনী' নামে একটি সমান্তরাল বাহিনী গঠন করে, যা সেনাবাহিনীর মধ্যে ব্যাপক অসন্তোষের জন্ম দেয়। অনেক বিশ্লেষক মনে করেন, এই পদক্ষেপটি ছিল সেনাবাহিনীকে রাজনৈতিকভাবে দুর্বল করে রাখার একটি প্রচেষ্টা, যা দেশের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থাকে শুরুতেই একটি নাজুক অবস্থানে ফেলে দেয়। সেনাবাহিনীর মনোবল এবং কাঠামোতে এর দীর্ঘমেয়াদী নেতিবাচক প্রভাব পড়েছিল। ১৯৭৫ সালের ১৫ই আগস্টের মর্মান্তিক ঘটনার পর সেনাবাহিনী ক্ষমতার কেন্দ্রে আসলেও, তারা নিজেদের প্রাতিষ্ঠানিক শক্তি বৃদ্ধির চেয়ে রাজনৈতিক ক্ষমতার লড়াইয়ে বেশি জড়িয়ে পড়ে। ফলে, সেনাবাহিনী না পেরেছে পুরোদস্তুর রাজনীতিবিদ হতে, না পেরেছে একটি পেশাদার সামরিক বাহিনী হিসেবে নিজেদের পুনর্গঠন করতে। এই সময়কালে, সেনাবাহিনীকে প্রায়শই রাজনৈতিক হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করা হয়েছে, যা তাদের মূল দায়িত্ব, অর্থাৎ দেশ রক্ষা থেকে বিচ্যুত করে। ফলস্বরূপ, বাংলাদেশের ইতিহাসে সেনাবাহিনী একটি পার্শ্ব চরিত্র হিসেবেই থেকে গেছে, যাদের প্রধান কাজ হয়ে দাঁড়িয়েছিল স্বাধীনতা ও বিজয় দিবসের কুচকাওয়াজে অংশ নেওয়া।

    ২০০৭ সালে সেনাসমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের মাধ্যমে সেনাবাহিনী সাময়িকভাবে আলোচনার কেন্দ্রে আসে। কিন্তু ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসার পর এবং বিশেষ করে বিডিআর বিদ্রোহের (বর্তমান বিজিবি) মতো ঘটনার পর সেনাবাহিনী আবার তার আগের অবস্থানে ফিরে যায়। পরবর্তীকালে সেনাবাহিনীকে রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে দমন করতে, বিশেষ করে ইসলামপন্থী দলগুলোকে নিয়ন্ত্রণে আনার জন্য ব্যবহার করা হয়েছে, যা একটি দেশের নিরাপত্তা বাহিনীর জন্য অত্যন্ত অবমাননাকর এবং তাদের পেশাদারিত্বের পরিপন্থী।

    একটি দেশের নিরাপত্তা নীতির প্রধান লক্ষ্য হওয়া উচিত তার সীমান্তকে সুরক্ষিত রাখা। ভৌগোলিকভাবে বাংলাদেশ তিন দিক থেকে ভারত দ্বারা বেষ্টিত, তাই স্বাভাবিকভাবেই দেশের নিরাপত্তা নীতির একটি বড় অংশ ভারতকেন্দ্রিক হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু ভারত কখনোই চায়নি বাংলাদেশের সেনাবাহিনী একটি শক্তিশালী বাহিনী হিসেবে গড়ে উঠুক। তারা এমন একটি পরিবেশ বজায় রেখেছে যাতে বাংলাদেশ তার নিরাপত্তা ব্যবস্থাকে ভারতের সমকক্ষ হিসেবে ভাবতে না পারে এবং সর্বদা এক ধরনের অদৃশ্য চাপের মধ্যে থাকে।

    অন্যদিকে, বাংলাদেশের সামরিক সরঞ্জামের একটি উল্লেখযোগ্য অংশ আসে চীন থেকে। এর ফলে, দেশের নিরাপত্তা নীতির উপর চীনের একটি কৌশলগত প্রভাব তৈরি হয়েছে। বাংলাদেশ একদিকে যেমন ভারতের উপর ভৌগোলিকভাবে নির্ভরশীল, তেমনই সামরিক সরঞ্জামের জন্য চীনের উপর নির্ভরশীল। এই দ্বিমুখী নির্ভরতা বাংলাদেশের নিরাপত্তা নীতিকে একটি জটিল ভূ-রাজনৈতিক খেলার মাঠে পরিণত করেছে, যেখানে দেশের প্রকৃত স্বার্থ অনেক সময়ই উপেক্ষিত থেকেছে। এই পরিস্থিতিতে একটি স্বাধীন ও সার্বভৌম নিরাপত্তা নীতি প্রণয়ন এবং বাস্তবায়ন করা বাংলাদেশের জন্য একটি বড় চ্যালেঞ্জ।

    চীনের বিশাল বিনিয়োগ, বিশেষ করে অবকাঠামো প্রকল্প এবং সামরিক সরঞ্জাম ক্রয়ে অর্থায়ন, স্বাভাবিকভাবেই দেশটিকে একটি প্রভাবশালী অবস্থানে নিয়ে এসেছে। 'বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভ' (bri)-এর মতো প্রকল্পের মাধ্যমে চীন কৌশলগত অংশীদারিত্ব তৈরি করেছে, যা ভবিষ্যতে বাংলাদেশের নীতি নির্ধারণে চীনা প্রভাব বিস্তারের সুযোগ তৈরি করতে পারে। এটি একটি বহুল আলোচিত বিষয় এবং এর ভূ-রাজনৈতিক বাস্তবতা অনস্বীকার্য।

    চীনের ভূ-রাজনৈতিক ভূমিকা ও প্রভাব সম্পর্কে আমরা মোটামুটি একটি স্পষ্ট ধারণা তৈরি করতে পেরেছি। কিন্তু আমার প্রশ্ন হলো—ভারতের আমাদের নিরাপত্তা নীতির ওপর এতটা প্রভাব কেন? এটা কীভাবে সম্ভব? কেনই বা এমনটা হওয়া উচিত? আমরা তো আমাদের সামরিক সরঞ্জাম বা প্রতিরক্ষা প্রযুক্তি ভারতের কাছ থেকে সংগ্রহ করি না। তাহলে ভারতের সঙ্গে আমাদের প্রতিরক্ষা নীতির এমন অদৃশ্য ছায়া-সম্পর্ক কেন তৈরি হচ্ছে?

    যদিও এই দুটি দেশের ভূ-রাজনৈতিক স্বার্থ বাংলাদেশের উপর প্রভাব ফেলে, তবে দেশটির মূল সংকট নিহিত রয়েছে আরও গভীরে— স্বাধীনতার পর থেকে উৎপাদন খাতের পদ্ধতিগত অবহেলা এবং অর্থনৈতিক আত্মনির্ভরশীলতার অভাব। স্বাধীনতার পর থেকে বিভিন্ন সরকার কৃষি ও শিল্প খাতে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জনের পরিবর্তে আমদানি-নির্ভর নীতি গ্রহণ করেছে। এর ফলে, পেঁয়াজের মতো সাধারণ ভোগ্যপণ্য থেকে শুরু করে শিল্পের কাঁচামাল পর্যন্ত বহু কিছুর জন্য বাংলাদেশকে ভারতীয় বাজারের দিকে তাকিয়ে থাকতে হয়। এই অর্থনৈতিক নির্ভরশীলতা ভারতকে একটি শক্তিশালী দর কষাকষির সুযোগ করে দেয়, যা কেবল বাণিজ্য নীতিতেই সীমাবদ্ধ থাকে না, বরং নিরাপত্তা ও পররাষ্ট্রনীতির ক্ষেত্রেও প্রভাব ফেলে। যখন একটি দেশ তার খাদ্য ও শিল্প নিরাপত্তার জন্য অন্য দেশের উপর নির্ভরশীল থাকে, তখন তার সার্বভৌম সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষমতা স্বাভাবিকভাবেই সংকুচিত হয়ে আসে।

    শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পরবর্তী বাস্তবতা এই সংকটকে আরও প্রকটভাবে সামনে নিয়ে এসেছে। একটি রাজনৈতিক পরিবর্তন বা অস্থিরতার সময় রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলো যখন দুর্বল থাকে, তখন অর্থনৈতিক সংকট আরও ঘনীভূত হয়। নতুন বা অন্তর্বর্তীকালীন সরকার যখন আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি ও অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা আনার চেষ্টা করে, তখন তাদের দর কষাকষির ক্ষমতা সবচেয়ে কম থাকে। এই সময়ে বিদেশী শক্তিগুলো, তা ভারত, চীন বা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র যেই হোক না কেন, নিজেদের স্বার্থ আদায়ে সবচেয়ে বেশি সক্রিয় হয়ে ওঠে।

    যেমনটা আমরা দেখছি, ভারত-কেন্দ্রিক বাণিজ্য নীতি থেকে সরে আসার প্রচেষ্টা বা পশ্চিমা বিশ্বের সাথে নতুন সম্পর্ক স্থাপনের চেষ্টা করতে গিয়ে বাংলাদেশ তার অর্থনৈতিক দুর্বলতার মুখোমুখি হয়েছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র যখন জিএসপি সুবিধা পর্যালোচনা করে বা নতুন শুল্ক আরোপের কথা বলে, তখন বাংলাদেশের অর্থনীতিতে যে আলোড়ন সৃষ্টি হয়, তা এই কাঠামোগত দুর্বলতারই প্রমাণ। এর মূল কারণ দুটি: প্রথমত, গার্মেন্টস শিল্পের বাইরে রপ্তানি খাতকে বহুমুখী করতে না পারা এবং দ্বিতীয়ত, একক বা সীমিত সংখ্যক বাজারের উপর অতিমাত্রায় নির্ভরশীলতা। আমেরিকা বা ইউরোপীয় ইউনিয়নের মতো ক্রেতারা যখন শ্রম অধিকার, গণতন্ত্র বা পরিবেশগত মানদণ্ড নিয়ে শর্ত আরোপ করে, তখন বাংলাদেশকে তা মেনে নিতে হয়, কারণ বিকল্প কোনো শক্তিশালী বাজার বা অভ্যন্তরীণ অর্থনৈতিক ভিত্তি তার নেই। এটিই অর্থনৈতিক পরাধীনতার একটি সুস্পষ্ট চিত্র, যা ধীরে ধীরে রাজনৈতিক ও নিরাপত্তা সংক্রান্ত বিষয়েও সার্বভৌমত্ব ক্ষয় করে।

    فَاَعۡرِضۡ عَنۡهُمۡ وَ انۡتَظِرۡ اِنَّهُمۡ مُّنۡتَظِرُوۡنَ

  • #2
    আসলে আল্লাহ্‌ তাআলা আমাদের খাস সাহায্য না করলে, আমরা মাঝ সমুদ্রে কোন উপায়হীন অসহায়ের মত।
    তবে আল্লাহ্‌ তাআলা উনার সাহায্যপ্রাপ্তির উপায় আমাদের জানিয়ে রেখেছেন, কিন্তু আমার জাতি তা অনুসরন করছে না।
    বছর ফুরিয়ে যাবে এতো রিসোর্স আছে https://gazwah.net সাইটে

    Comment

    Working...
    X