Business Deal of a Mad Man
শাইখ রাহিমাহুল্লাহ অত্যন্ত গভীর অন্তর্দৃষ্টি ও কৌশলগত বুদ্ধিমত্তার মাধ্যমে আমেরিকার সামরিক ও অর্থনৈতিক কাঠামোর প্রকৃত শক্তি ও দুর্বলতাকে সনাক্ত করেছিলেন। তিনি বুঝতে পেরেছিলেন, আমেরিকার বাহ্যিক শক্তিমত্তা যতটা প্রদর্শনমূলক, তার ভেতরের কাঠামো ততটাই দুর্বল এবং ভঙ্গুর। এই বাস্তবতা অনুধাবন করে তিনি আমেরিকাকে সরাসরি সামরিক সংঘর্ষের ময়দানে টেনে আনতে সচেষ্ট হন। তার বিচক্ষণ নেতৃত্বে আফগানিস্তানে যে প্রতিরোধ যুদ্ধের সূচনা হয়, তা দ্রুতই আমেরিকার সামরিক বাহিনীর সক্ষমতা, মনোবল, এবং অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতাকে বহুমাত্রিকভাবে প্রশ্নবিদ্ধ করে তোলে।
ধীরে ধীরে আমেরিকা একটি দীর্ঘস্থায়ী ক্ষয়ের পথে ধাবিত হতে থাকে—সামরিক খাতে বিপুল ব্যয়, দীর্ঘ মেয়াদী যুদ্ধের ক্লান্তি, এবং বিশ্বজুড়ে রাজনৈতিক ও নৈতিক বৈধতা হারানোর প্রক্রিয়া শুরু হয়। অথচ আমেরিকা যুদ্ধের শুরুতে এতটাই আত্মম্ভরিতা ও দম্ভের সাথে এতে লিপ্ত হয়েছিল যে, কৌশলগতভাবে পরাজয় নিশ্চিত হওয়া সত্ত্বেও তারা মানসিক বা রাজনৈতিকভাবে সেই সংঘর্ষ থেকে পিছু হটতে সক্ষম হয়নি।
যখন আমেরিকা আফগান যুদ্ধের কারণে বহুমাত্রিক সংকটে—সামরিক, অর্থনৈতিক ও কূটনৈতিকভাবে ক্ষয়প্রাপ্ত এক রাষ্ট্রে পরিণত হচ্ছিল—ঠিক সে সময় প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করে ডোনাল্ড ট্রাম্প। শুরু থেকেই তাকে ঘিরে রাজনৈতিক অঙ্গনে প্রবল সংশয় ও তির্যক মন্তব্য ভেসে আসে। কেউ তাকে বলেন ‘অরাজনৈতিক ব্যবসায়ী’, কেউ বলেন ‘ক্ষ্যাপাটে জাতীয়তাবাদী’। মূলত ট্রাম্প ছিল এক গভীরভাবে পুঁজিবাদী মানসিকতার প্রতিভূ, যার কৌশল ছিল রাজনীতি নয়, লেনদেনের ভিত্তিতে সমস্যার সমাধান।
তবে যদি আমরা আবেগের পরিবর্তে বুদ্ধিবৃত্তিক দৃষ্টিকোণ থেকে তার শাসনামল পর্যালোচনা করি, তাহলে একটি তাৎপর্যপূর্ণ ব্যাপার স্পষ্ট হয়: ডোনাল্ড ট্রাম্প হচ্ছে একমাত্র মার্কিন প্রেসিডেন্ট যে, যদিও শাইখ রাহিমাহুল্লাহ রাহিমাহুল্লাহর চিন্তা বা কৌশলের গভীরতা অনুধাবন করতে ব্যর্থ হয়, তবুও এমন কিছু কার্যক্রম গ্রহণ করেন যা পরোক্ষভাবে শাইখের বিজয়কে বিলম্বিত করে দেয়।
ডোনাল্ড ট্রাম্পের শাসনামলে আমেরিকা এক নতুন রাজনৈতিক ধারা অবলম্বন করে, যার কেন্দ্রবিন্দু ছিল ‘আমেরিকা ফার্স্ট’ নীতি। এর অধীনে সে আফগানিস্তানসহ বিভিন্ন দেশে চলমান সামরিক অভিযানের যৌক্তিকতা প্রশ্নবিদ্ধ করে এবং আফগানিস্তান থেকে সেনা প্রত্যাহারের পরিকল্পনা গ্রহণ করে। সে যুদ্ধকে একপ্রকার ‘অর্থহীন বোঝা’ হিসেবে চিহ্নিত করেন—এমন একটি বোঝা, যা আমেরিকার অর্থনীতি ও বৈশ্বিক অবস্থানকে ক্রমেই দুর্বল করে তুলছে।
এখানে বিষয়টি গুরুত্বপূর্ণ যে, আমি মুজাহিদদের বিজয়কে কোনোভাবেই খাটো করছি না—বরং এই বিজয় এক দীর্ঘস্থায়ী সংগ্রামের ফল এবং শাইখ রাহিমাহুল্লাহ রাহিমাহুল্লাহর দূরদৃষ্টি ও ত্যাগের স্বীকৃত প্রতিফলন। তবে এই বাস্তবতাও অস্বীকার করা যায় না যে, যখন আমেরিকা সামরিকভাবে পরাজয়ের মুখোমুখি হয়ে যুদ্ধক্ষেত্র থেকে সরে আসে, তখন তারা এক প্রকার অর্থনৈতিক পুনর্গঠনের বিরল সুযোগ লাভ করে।
এই সরে আসার ফলে আমেরিকা সাময়িকভাবে যুদ্ধের ব্যয় ও আন্তর্জাতিক অপমানের চাপ থেকে খানিকটা রেহাই পায় এবং একই সঙ্গে বিভিন্ন ময়দান থেকে ধীরে ধীরে পিছিয়ে এসে নিজেদের আর্থিক কাঠামোকে চাঙ্গা করার পরিবেশ সৃষ্টি করে। যুদ্ধ থেকে সরার মাধ্যমে আমেরিকা সামরিকভাবে অপদস্থ হলেও, তারা তাদের অর্থনৈতিক পুনর্গঠনের কৌশলগত এক বিরতি লাভ করে—যা অনেকটা আহত সৈনিকের পিছু হটে নতুন করে শৃঙ্খলাবদ্ধ হওয়ার মতো। এই বিরতি তাদের জন্য একটি পুনঃসংগঠনের সময়সীমা এনে দেয়, যা তাদের পরবর্তী হুমকিগুলোর মোকাবেলায় প্রস্তুত হতে সহায়ক হতে পারে।
(চলবে)