নবী করীম ﷺ এর সিরাত থেকে শুরু করে ইসলামের প্রতিটি যুগ আমাদের এই কথাই শিক্ষা দেয় যে, ইসলাম কেবল মজলুমদের সান্ত্বনার ভাষা নয়, বরং জালিমদের শেকড় উপড়ে ফেলার, ন্যায়ের ভিত্তিতে সমাজ পুনর্গঠনের এবং আল্লাহর হুকুম বাস্তবায়নের এক বিপ্লবী ম্যানিফেস্টো। কিন্তু আজ আমরা এমন এক যুগে উপনীত হয়েছি, যেখানে কিছু আদর্শচ্যুত রাজনৈতিক প্রবক্তা, ইসলামকে তার মৌলিক চরিত্র থেকে বিচ্ছিন্ন করে কেবল একটি আবেগনির্ভর narrative হিসেবে ব্যবহার করতে চায়—এবং সেটিও মূলত ইসলামবিরোধী রাষ্ট্রব্যবস্থার পুনর্গঠনের হাতিয়ার হিসেবে।
এই প্রবণতার পেছনে যে বুদ্ধিবৃত্তিক ছাঁচ কাজ করছে, সেটি আদতে একটি মার্ক্সীয় বুনিয়াদে গড়ে উঠা নতুন ধরনের ideological pragmatism (আদর্শিক কৌশলবাদ)। মার্ক্সের চিন্তায় ধর্মকে জনতার আফিম বলা হয়েছিল, একটি আত্মপ্রতারণামূলক বিশ্বাস, যা মানুষকে বাস্তব শত্রুর বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানোর সাহস না দিয়ে পরকালীন প্রতিশ্রুতির ঘোরে আবদ্ধ রাখে। তাই ধর্মকে শ্রেণি-সংগ্রামের অন্তরায় হিসেবে চিহ্নিত করে মার্ক্সীয় রাজনীতিতে এর কোনো স্থানের অনুমোদন ছিল না। কিন্তু সময়ের প্রয়োজনে, এবং বাস্তব রাজনীতির সম্ভাব্যতা অনুধাবনে, আজ সেই ধারার কিছু নব্য প্রবক্তা নিজেদের চিন্তা ও কৌশলে একটি মৌলিক ছেদ ঘটিয়েছে। তারা এখন এমন এক অবস্থান গ্রহণ করছে, যেখানে ধর্ম—বিশেষত ইসলাম—কে তারা একটি powerful emotional catalyst (প্রবল আবেগীয় প্ররোচনা) হিসেবে গ্রহণ করছে। তাদের বিশ্বাস, oppressed identity বা victimhood consciousness তৈরি করে যদি রাষ্ট্রক্ষমতায় প্রভাব ফেলা সম্ভব হয়, তবে মার্ক্সের ধর্মবিরোধী অবস্থানও এখন আর অপরিহার্য নয়।
এই আত্মবিরোধিতাই আজকের রাজনৈতিক সংকটের কেন্দ্রবিন্দু। বাংলাদেশে বর্তমানে একটি দল স্পষ্টভাবে ঘোষণা করেছে যে তারা ইসলামী বয়ানকে পুনর্গঠন করতে চায়, যাতে তারা বাম ও আওয়ামী লীগ-নির্ভর narrative ভেঙে নতুন প্রভাব বিস্তার করতে পারে। তারা ধর্মকে প্রতিস্থাপন করতে চায় না, তারা বরং ধর্মকে instrumentalize (অপকৌশল হিসেবে ব্যবহার) করতে চায়। ইসলাম তাদের কাছে একটি functional political tool—একটি narrative packaging system, যার মাধ্যমে বৃহত্তর জনগোষ্ঠীর আবেগকে mobilize করা যায়, কিন্তু যার ভিতরে কোনো আধ্যাত্মিক বা আদর্শিক আনুগত্য নেই। এটি হলো ideological maneuvering এর এক উৎকট উদাহরণ, যেখানে আদর্শ নয়, কৌশলই প্রধান নিয়ামক হিসেবে কাজ করছে।
কিন্তু যেটি আরও বেশি উদ্বেগজনক তা হলো, কিছু ইসলামপন্থী এই প্রবণতাকে একটি “চতুর কৌশল” হিসেবে দেখছেন এবং মনে করছেন যে, এই বাম-নির্মিত ইসলামী narrative কে তারা নিজেদের স্বার্থে ব্যবহার করে একটি বৃহত্তর ইসলামী শাসনব্যবস্থার দিকে এগোতে পারবেন।
অথচ ইতিহাস ও তত্ত্ব উভয়ই আমাদের শিক্ষা দেয় যে, ideological compromise কখনো স্থায়ী বিজয়ের পথ তৈরি করে না। আপনি যদি শত্রুর তৈরি ন্যারেটিভ ব্যবহার করেন, তবে আপনি নিজেই সেই শত্রুর cognitive framework (চিন্তাগত কাঠামো)'এর ভেতর প্রবেশ করে তার শর্ত মেনে খেলছেন। আপনি খেলছেন এমন এক মাঠে, যার boundary, rules এবং referee সবকিছু শত্রুর হাতে।
সরাসরি বললে, আপনি একটি সিঁড়ি বেয়ে ক্ষমতার উচ্চতায় উঠতে চাইছেন, অথচ সেই সিঁড়িটি আপনার প্রতিপক্ষের মালিকানাধীন। আপনি ভাবছেন, এই সিঁড়ির ওপরে উঠে আপনি আপনার কাঙ্ক্ষিত ইসলামী হুকুমত প্রতিষ্ঠা করবেন। কিন্তু আপনি কি বুঝতে পারছেন না—সেই সিঁড়ি যেকোনো মুহূর্তে টেনে ফেলে দিতে পারে সেই শক্তি, যার নিয়ন্ত্রণেই ছিল পুরো খেলাটি? যে ন্যারেটিভ তৈরি করতে পারে, সে ন্যারেটিভ ধ্বংস করতেও সক্ষম। এই শ্রেণির লোকেরা শুধুই kingmaker নয়, তারা kingslayer হওয়ার সক্ষমতাও রাখে।
ইসলাম কখনোই নিছক “mass mobilization tool” হতে পারে না। ইসলামকে আবেগ, নিপীড়ন বা victimhood এর ভাষায় সীমাবদ্ধ করে ফেলা মানে, তার বিজয়ী চেতনা ও ঐশী কর্তৃত্বকে অস্বীকার করা। এটি একটি চরম আদর্শচ্যুতি, যা ইসলামকে একধরনের “theology of oppression”- (জুলুমের তত্ত্ব) পরিণত করে, অথচ ইসলাম এসেছে "theology of justice" (ন্যায়ের তত্ত্ব) প্রতিষ্ঠার জন্য।
তাই যারা ইসলামী রাজনীতিকে একটি ‘shortcut’ বা কার্যকর কৌশল হিসেবে বাস্তবায়ন করতে চান—তারা হয়তো এক ধরনের আত্মপ্রতারণায় নিমগ্ন। আর যারা এই ধরণের কৌশলগত পন্থাকে নিষ্কলুষ বুদ্ধিমত্তা বা বাস্তববাদী বিচক্ষণতা বলে মনে করছেন, তারা হয়তো উপলব্ধি না করেই ইসলামী আন্দোলনের বৈপ্লবিক চরিত্রকে ধীরে ধীরে একটি ধর্মীয়-আবরণযুক্ত রাজনীতির আওতায় নিয়ে আসছেন।
এই বাস্তবতায়, ইসলামপন্থীদের জন্য সবচেয়ে জরুরি বিষয় হলো—uncompromising ideological clarity অর্থাৎ নির্ভেজাল আদর্শিক স্পষ্টতা এবং তাওহিদভিত্তিক রাজনৈতিক আক্বীদার প্রতি পূর্ণ অঙ্গীকারে দৃঢ় থাকা। কারণ, Islam cannot be salvaged through strategies designed to contain it. Islam must be lived, preached, and established as it is—not as it is tolerated by secular frameworks.
এই প্রবণতার পেছনে যে বুদ্ধিবৃত্তিক ছাঁচ কাজ করছে, সেটি আদতে একটি মার্ক্সীয় বুনিয়াদে গড়ে উঠা নতুন ধরনের ideological pragmatism (আদর্শিক কৌশলবাদ)। মার্ক্সের চিন্তায় ধর্মকে জনতার আফিম বলা হয়েছিল, একটি আত্মপ্রতারণামূলক বিশ্বাস, যা মানুষকে বাস্তব শত্রুর বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানোর সাহস না দিয়ে পরকালীন প্রতিশ্রুতির ঘোরে আবদ্ধ রাখে। তাই ধর্মকে শ্রেণি-সংগ্রামের অন্তরায় হিসেবে চিহ্নিত করে মার্ক্সীয় রাজনীতিতে এর কোনো স্থানের অনুমোদন ছিল না। কিন্তু সময়ের প্রয়োজনে, এবং বাস্তব রাজনীতির সম্ভাব্যতা অনুধাবনে, আজ সেই ধারার কিছু নব্য প্রবক্তা নিজেদের চিন্তা ও কৌশলে একটি মৌলিক ছেদ ঘটিয়েছে। তারা এখন এমন এক অবস্থান গ্রহণ করছে, যেখানে ধর্ম—বিশেষত ইসলাম—কে তারা একটি powerful emotional catalyst (প্রবল আবেগীয় প্ররোচনা) হিসেবে গ্রহণ করছে। তাদের বিশ্বাস, oppressed identity বা victimhood consciousness তৈরি করে যদি রাষ্ট্রক্ষমতায় প্রভাব ফেলা সম্ভব হয়, তবে মার্ক্সের ধর্মবিরোধী অবস্থানও এখন আর অপরিহার্য নয়।
এই আত্মবিরোধিতাই আজকের রাজনৈতিক সংকটের কেন্দ্রবিন্দু। বাংলাদেশে বর্তমানে একটি দল স্পষ্টভাবে ঘোষণা করেছে যে তারা ইসলামী বয়ানকে পুনর্গঠন করতে চায়, যাতে তারা বাম ও আওয়ামী লীগ-নির্ভর narrative ভেঙে নতুন প্রভাব বিস্তার করতে পারে। তারা ধর্মকে প্রতিস্থাপন করতে চায় না, তারা বরং ধর্মকে instrumentalize (অপকৌশল হিসেবে ব্যবহার) করতে চায়। ইসলাম তাদের কাছে একটি functional political tool—একটি narrative packaging system, যার মাধ্যমে বৃহত্তর জনগোষ্ঠীর আবেগকে mobilize করা যায়, কিন্তু যার ভিতরে কোনো আধ্যাত্মিক বা আদর্শিক আনুগত্য নেই। এটি হলো ideological maneuvering এর এক উৎকট উদাহরণ, যেখানে আদর্শ নয়, কৌশলই প্রধান নিয়ামক হিসেবে কাজ করছে।
কিন্তু যেটি আরও বেশি উদ্বেগজনক তা হলো, কিছু ইসলামপন্থী এই প্রবণতাকে একটি “চতুর কৌশল” হিসেবে দেখছেন এবং মনে করছেন যে, এই বাম-নির্মিত ইসলামী narrative কে তারা নিজেদের স্বার্থে ব্যবহার করে একটি বৃহত্তর ইসলামী শাসনব্যবস্থার দিকে এগোতে পারবেন।
অথচ ইতিহাস ও তত্ত্ব উভয়ই আমাদের শিক্ষা দেয় যে, ideological compromise কখনো স্থায়ী বিজয়ের পথ তৈরি করে না। আপনি যদি শত্রুর তৈরি ন্যারেটিভ ব্যবহার করেন, তবে আপনি নিজেই সেই শত্রুর cognitive framework (চিন্তাগত কাঠামো)'এর ভেতর প্রবেশ করে তার শর্ত মেনে খেলছেন। আপনি খেলছেন এমন এক মাঠে, যার boundary, rules এবং referee সবকিছু শত্রুর হাতে।
সরাসরি বললে, আপনি একটি সিঁড়ি বেয়ে ক্ষমতার উচ্চতায় উঠতে চাইছেন, অথচ সেই সিঁড়িটি আপনার প্রতিপক্ষের মালিকানাধীন। আপনি ভাবছেন, এই সিঁড়ির ওপরে উঠে আপনি আপনার কাঙ্ক্ষিত ইসলামী হুকুমত প্রতিষ্ঠা করবেন। কিন্তু আপনি কি বুঝতে পারছেন না—সেই সিঁড়ি যেকোনো মুহূর্তে টেনে ফেলে দিতে পারে সেই শক্তি, যার নিয়ন্ত্রণেই ছিল পুরো খেলাটি? যে ন্যারেটিভ তৈরি করতে পারে, সে ন্যারেটিভ ধ্বংস করতেও সক্ষম। এই শ্রেণির লোকেরা শুধুই kingmaker নয়, তারা kingslayer হওয়ার সক্ষমতাও রাখে।
ইসলাম কখনোই নিছক “mass mobilization tool” হতে পারে না। ইসলামকে আবেগ, নিপীড়ন বা victimhood এর ভাষায় সীমাবদ্ধ করে ফেলা মানে, তার বিজয়ী চেতনা ও ঐশী কর্তৃত্বকে অস্বীকার করা। এটি একটি চরম আদর্শচ্যুতি, যা ইসলামকে একধরনের “theology of oppression”- (জুলুমের তত্ত্ব) পরিণত করে, অথচ ইসলাম এসেছে "theology of justice" (ন্যায়ের তত্ত্ব) প্রতিষ্ঠার জন্য।
তাই যারা ইসলামী রাজনীতিকে একটি ‘shortcut’ বা কার্যকর কৌশল হিসেবে বাস্তবায়ন করতে চান—তারা হয়তো এক ধরনের আত্মপ্রতারণায় নিমগ্ন। আর যারা এই ধরণের কৌশলগত পন্থাকে নিষ্কলুষ বুদ্ধিমত্তা বা বাস্তববাদী বিচক্ষণতা বলে মনে করছেন, তারা হয়তো উপলব্ধি না করেই ইসলামী আন্দোলনের বৈপ্লবিক চরিত্রকে ধীরে ধীরে একটি ধর্মীয়-আবরণযুক্ত রাজনীতির আওতায় নিয়ে আসছেন।
এই বাস্তবতায়, ইসলামপন্থীদের জন্য সবচেয়ে জরুরি বিষয় হলো—uncompromising ideological clarity অর্থাৎ নির্ভেজাল আদর্শিক স্পষ্টতা এবং তাওহিদভিত্তিক রাজনৈতিক আক্বীদার প্রতি পূর্ণ অঙ্গীকারে দৃঢ় থাকা। কারণ, Islam cannot be salvaged through strategies designed to contain it. Islam must be lived, preached, and established as it is—not as it is tolerated by secular frameworks.
Comment