Announcement

Collapse
No announcement yet.

আমি তৃতীয় শ্রেণীর নাগরিক

Collapse
X
 
  • Filter
  • Time
  • Show
Clear All
new posts

  • আমি তৃতীয় শ্রেণীর নাগরিক

    সাধারণত, রাষ্ট্রবিজ্ঞানের তাত্ত্বিক কাঠামোতে নাগরিকদের শ্রেণিবিভাগ করা হলে দুটি প্রধান স্তরের ধারণা পাওয়া যায়: প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির নাগরিক। এই বিভাজন মূলত অধিকার, সুযোগ এবং ক্ষমতার বণ্টনের ওপর ভিত্তি করে গড়ে ওঠে। তবে বাংলাদেশের সামাজিক ও রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট বিশ্লেষণ করলে এই দ্বিস্তরীয় বিভাজন যথেষ্ট বলে মনে হয় না। এখানকার বাস্তবতায় নাগরিকদের তিনটি স্বতন্ত্র শ্রেণিতে বিভক্ত করা যেতে পারে, যা প্রচলিত ধারণার চেয়েও জটিল এবং গভীর। এই তিনটি শ্রেণি হলো: রাজনৈতিক নাগরিক, সাধারণ নাগরিক এবং ইসলামপন্থী নাগরিক।
    বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাসে শাসনব্যবস্থার যত পরিবর্তনই সাধিত হোক না কেন, তা যত বৈপ্লবিক বা যুগান্তকারী হিসেবেই উপস্থাপিত হোক না কেন, খুব বেশি গভীরভাবে বিশ্লেষণ না করলে দেখা যায় যে, এই সকল পরিবর্তন মূলত একটি সংকীর্ণ বৃত্তের মধ্যেই আবর্তিত হয়। এই বৃত্তটি হলো ‘রাজনৈতিক নাগরিক’ শ্রেণি, যারা রাষ্ট্রের ক্ষমতার কেন্দ্রবিন্দুতে অবস্থান করে। ক্ষমতার পালাবদল, হোক তা গণতান্ত্রিক নির্বাচন, আন্দোলন বা অন্য কোনো উপায়ে, আদতে একদলীয় শাসনের পরিবর্তে অন্য দলের শাসন প্রতিষ্ঠা করে, এক নেতার বাগাড়ম্বরের স্থান নেয় অন্য কোনো নেতার বাগ্মিতা, অথবা একদল চাঁদাবাজের স্থান দখল করে নতুন কোনো চাঁদাবাজ গোষ্ঠী। রাষ্ট্রযন্ত্র, সম্পদ এবং সুযোগের নিয়ন্ত্রণ এক সুবিধাভোগী গোষ্ঠীর হাত থেকে কেবল অন্য এক সুবিধাভোগী গোষ্ঠীর হাতে স্থানান্তরিত হয়।

    অবশ্য, এই ক্ষমতার পালাবদলের কিছু ছিটেফোঁটা সুবিধা যে সাধারণ নাগরিকের কাছে পৌঁছায় না, তা নয়। কখনও কখনও নতুন সরকার জনতুষ্টির জন্য নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম, যেমন সবজির মূল্য কিছুটা নিয়ন্ত্রণ করে, কিংবা গণপরিবহণের ভাড়া কমায় অথবা সরকারি চাকরিতে নামমাত্র বেতন বৃদ্ধি করে। কিন্তু এই সুবিধাগুলো এতটাই নগণ্য এবং সাময়িক যে তা সাধারণ নাগরিকের জীবনযাত্রার মৌলিক কোনো উন্নতি ঘটাতে পারে না। এগুলো অনেকটা ঝড়ের পর ঝরে পড়া কিছু ফল কুড়িয়ে পাওয়ার মতো, যা সাময়িক স্বস্তি দিলেও বন্যায় ভেসে যাওয়া ফসলের বিশাল ক্ষতির তুলনায় কিছুই নয়। এই সামান্য প্রাপ্তি সাধারণ নাগরিককে পরিবর্তনের একটি বিভ্রম দেয়, কিন্তু প্রকৃত অর্থে তারা সেই শোষণমূলক কাঠামোর নিচেই পিষ্ট হতে থাকে।

    আর এর পরে আসে বাংলাদেশের ইসলামিস্ট চিন্তাধারা বা ভাবধারার লোকেরা যারা বাংলাদেশের তৃতীয় শ্রেণীর নাগরিকের বেশি আর কিছু না যেখানে সাধারণ নাগরিকের কাছে তেমন কোন লাভ বোঝায় না সেখানে এই শ্রেণীর কাছে লাভ পৌঁছানোর তো প্রশ্নই আসে না বরং ক্ষতিটা খুব দ্রুত পৌঁছে যায়

    সাম্প্রতিক একটি মামলার রায় দেখছিলাম, যেখানে সুস্পষ্ট সাক্ষ্য-প্রমাণের অনুপস্থিতিতে কেবল অনুমানের ওপর ভিত্তি করে সিদ্ধান্ত দেওয়া হয়েছে এবং স্বয়ং বিচারক তা প্রকারান্তরে স্বীকারও করেছেন, এই ঘটনাটি দেখে প্রথমে মনে হতে পারে, এটি পূর্ববর্তী শাসনামলের ধারাবাহিকতায় মুসলিমদের ওপর চালানো নিপীড়নেরই একটি প্রতিচ্ছবি। কিন্তু পরক্ষণেই একটি সত্য আমাদের সামনে উপস্থিত হয়: ক্ষমতার পালাবদল হলেও, আদর্শিক সংগ্রামের মূল ক্ষেত্রটিতে কোনো মৌলিক পরিবর্তন আসেনি। যারা ইসলামের পক্ষে কথা বলেন, তাদের ভাগ্যের কোনো অর্থবহ উন্নতি ঘটেনি।

    যে ভয়, যে অনিশ্চয়তা নিয়ে মুসলিমদের পূর্ববর্তী সরকারের আমলে বেঁচে থাকতে হতো, সেই ভয়ের কি আজ কোনো অবসান ঘটেছে? হয়তো কিছু আলেম-ওলামা আজ প্রকাশ্যে কথা বলার সুযোগ পাচ্ছেন, কিন্তু এই সুযোগ কতদিনের জন্য? এটি কি একটি স্থায়ী পরিবর্তন, নাকি কেবলই ক্ষমতার পালাবদলের একটি সাময়িক পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া?

    প্রশ্নটি যৌক্তিক এবং এই উত্তরও তাৎক্ষণিক প্রয়োজন। যখন বর্তমান সরকার তার অবস্থান শক্ত করবে, যখন সামরিক বাহিনী তাদের ব্যারাকে ফিরে যাবে এবং যখন রাজনৈতিক ছাড় দেওয়ার প্রয়োজনীয়তা ফুরিয়ে যাবে, তখন কি আজকের এই আপাত স্বাধীনতা কেড়ে নেওয়া হবে না? তখন কি রাষ্ট্রযন্ত্র তার পুরনো চেহারায় ফিরে এসে আদর্শিক প্রতিপক্ষদের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়বে না?

    এই তথাকথিত বিপ্লব বা পরিবর্তনের ফলে আমরা, যারা একটি আদর্শিক সমাজ বিনির্মাণের স্বপ্ন দেখি, তারা নিজেদের ঘরে প্রকৃতপক্ষে কিছুই তুলতে পারিনি। বরং, এই পরিবর্তনের ডামাডোলে আমরা যেটুকু সময় ও শক্তি দাওয়াতের কাজে, আন্দোলনে, মিছিলে বা আলোচনায় ব্যয় করেছি, তার প্রতিটি মুহূর্তের জন্য কঠিন প্রতিশোধ অপেক্ষা করছে বলে আশঙ্কা হয়। তখন আজকের এই সকল কর্মকাণ্ডকে ‘বিশৃঙ্খলা’ বা ‘রাষ্ট্রদ্রোহ’ হিসেবে চিহ্নিত করে তার নির্মম প্রতিদান নেওয়া হবে—এই ভয় অমূলক নয়।
    Last edited by Munshi Abdur Rahman; 20 hours ago.
    فَاَعۡرِضۡ عَنۡهُمۡ وَ انۡتَظِرۡ اِنَّهُمۡ مُّنۡتَظِرُوۡنَ
Working...
X