নবুওয়াত-রিসালাতের মাকসাদে আসলী এবং ফুরুয়ী (শাখাগত) কাজঃ
نحمده و نصلي على رسوله الكريم و صحبه و آله أجمعين.
মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামীন যুগে যুগে যত নবী রাসুল পাঠিয়েছেন তার মূল লক্ষ্য ছিলঃ
১/ জমীন থেকে তাগূত (জীন ও মানব শয়তান)এবং তাগূতের ফেতনা; কুফুর এবং শিরকের মূলোৎপোটন করে ইবাদাত এবং আনুগত্যের অধিকারকে কেবলমাত্র রব্বুল আলামীনের জন্য নিশ্চিত করা।
২/ নিজ বান্দাদেরকে ইবলিসে লাঈন এবং নফসে আম্মারার দাসত্ব থেকে মুক্ত করে তাদের খালিক ও মালিক, রাজ্জাক ও রবের দাসত্ব করানো।
এমহৎ উদ্দেশ্য বাস্তবায়নের জন্য আল্লাহ্ রব্বুল আলামীন প্রত্যেক যুগে প্রত্যেক কওমের মধ্যে তাদেরই থেকে নবী কিংবা হাদী প্রেরণ করেছেন। আল্লাহ্ তায়ালা বলেনঃ
وَلَقَدْ بَعَثْنَا فِي كُلِّ أُمَّةٍ رَسُولًا أَنِ اُعْبُدُوا اللَّهَ وَاجْتَنِبُوا الطَّاغُوتَ فَمِنْهُمْ مَنْ هَدَى اللَّهُ وَمِنْهُمْ مَنْ حَقَّتْ عَلَيْهِ الضَّلَالَةُ فَسِيرُوا فِي الْأَرْضِ فَانْظُرُوا كَيْفَ كَانَ عَاقِبَةُ الْمُكَذِّبِينَ.
অর্থঃ আমি প্রত্যেক উম্মতের মধ্যেই রাসূল প্রেরণ করেছি এই মর্মে যে, তোমরা আল্লাহর এবাদত কর এবং তাগুতকে বর্জন কর। অতঃপর তাদের মধ্যে কিছু সংখ্যককে আল্লাহ হেদায়েত করেছেন এবং কিছু সংখ্যকের জন্যে বিপথগামিতা অবধারিত হয়ে গেল। সুতরাং তোমরা পৃথিবীতে ভ্রমণ কর এবং দেখ মিথ্যারোপকারীদের কিরূপ পরিণতি হয়েছে।( সূরা আন নাহল (النّحل), আয়াত: ৩৬)
আল্লাহ্ তায়ালা মুহাম্মদে আরাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে আদেশ করে বলেন:
إِنَّا أَنْزَلْنَا إِلَيْكَ الْكِتَابَ بِالْحَقِّ فَاعْبُدِ اللَّهَ مُخْلِصًا لَهُ الدِّينَ.
অর্থঃ আমি আপনার প্রতি এ কিতাব যথার্থরূপে নাযিল করেছি। অতএব, আপনি নিষ্ঠার সাথে আল্লাহর এবাদত করুন।(সূরা আয্*-যুমার (الزّمر), আয়াত: ২)
قُلْ إِنِّي أُمِرْتُ أَنْ أَعْبُدَ اللَّهَ مُخْلِصًا لَهُ الدِّينَ.
অর্থঃ বলুন, আমি নিষ্ঠার সাথে আল্লাহর এবাদত করতে আদিষ্ট হয়েছি।(সূরা আয্*-যুমার (الزّمر), আয়াত:১১)
সুতরাং রাসূল প্রেরণের মূল উদ্দেশ্য হলোঃ
ক) তাগূতের ইবাদত এবং আনুগত্য থেকে জমীনকে পবিত্র করা।
খ) জমীনের বুকে ইবাদত এবং আনুগত্যের অধিকারকে এক আল্লাহর জন্য একনিষ্ঠ করা।
প্রেরিত নবী, রাসুল এবং হাদীগণ তাঁদের উপর অর্পিত দায়িত্ব পালনের জন্য পথ ও পন্থার ভিন্নতার সাথে মৌলিকভাবে যে কাজগুলো করেছেন তাহলো যথাক্রমে দাওয়াত, সবর, জিহাদ।
আর কওমের যাঁরা তাঁদেরকে মেনে নিয়েছেন এবং তাঁদের আনুগত্য শিকার করে নিয়েছেন, সে সকল অনূসারীদের মধ্যে নবী এবং হাদীগণের কাজ ছিল তা'লীম, তারবিয়াত এবং তাযকিয়্যাহ, যদি দুই শব্দে ব্যাক্ত করা হয় তবে তা হলো: ক) তাওয়াসী বিল-হক; হকের তালীম এবং উপদেশ, এবং খ) তাওয়াসী বিছ্-সবর, ধৈর্য্যের তালীম এবং উপদেশ।
মুহাম্মাদে আরাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যেহেতু নবুওয়াত ও রিসালাতের ধারাবাহিকতার সর্বশেষ কড়ি এবং সকল জাতি-গোষ্ঠি, ভাষা-বর্ণ নির্বিশেষে গোটা বিশ্ব জাহানের জীন-ইনসানের জন্য প্রেরিত রাসূল, তাই রাসূলে আরাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নবুওয়াত-রিসালাতের মাকসাদও সর্বব্যাপি। এবং তা বাস্তবায়নের পথ ও পন্থাও পরিপূর্ণতার সাথে সুনির্দিষ্ট।
মুহাম্মাদে আরাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে রাসূল করে প্রেরণের উদ্দেশ্যে হলো বিশ্বব্যাপী তাগূতী ফেতনাকে স্বঃমূলে নির্মূল করতঃ সমস্ত বাতিল ধর্ম-মতের উপর দ্বীনে হক্ব্কে বিজয়ী এবং সুপ্রতিষ্ঠিত করে, সর্বত্র এবং সর্বব্যাপি ইবাদাত এবং আনুগত্যের একচ্ছত্র অধিকারকে একনিষ্ঠতার সাথে কেবলমাত্র রব্বুল আলামীনের জন্য সুনিশ্চিত করা। আল্লাহ্ তায়ালা বলেনঃ
هُوَ الَّذِي أَرْسَلَ رَسُولَهُ بِالْهُدَى وَدِينِ الْحَقِّ لِيُظْهِرَهُ عَلَى الدِّينِ كُلِّهِ وَلَوْ كَرِهَ الْمُشْرِكُونَ.
সূরা আত-তাওবাহ্* (التوبة), আয়াত: ৩৩
অর্থঃ তিনিই প্রেরণ করেছেন আপন রসূলকে হেদায়েত ও সত্য দ্বীন সহকারে, যেন এ দ্বীনকে অপরাপর দ্বীনের উপর জয়যুক্ত করেন, যদিও মুশরিকরা তা অপ্রীতিকর মনে করে।
هُوَ الَّذِي أَرْسَلَ رَسُولَهُ بِالْهُدَى وَدِينِ الْحَقِّ لِيُظْهِرَهُ عَلَى الدِّينِ كُلِّهِ وَكَفَى بِاللَّهِ شَهِيدًا.
সূরা আল ফাত্*হ (الفتح), আয়াত:২৮
অর্থঃ তিনিই তাঁর রাসূলকে হেদায়েত ও সত্যসহ প্রেরণ করেছেন, যাতে একে অন্য সমস্ত ধর্মের উপর জয়যুক্ত করেন। সত্য প্রতিষ্ঠাতারূপে আল্লাহ যথেষ্ট।
هُوَ الَّذِي أَرْسَلَ رَسُولَهُ بِالْهُدَى وَدِينِ الْحَقِّ لِيُظْهِرَهُ عَلَى الدِّينِ كُلِّهِ وَلَوْ كَرِهَ الْمُشْرِكُونَ.
সূরা আস-সাফ (الصّفّ), আয়াত:৯
অর্থঃ তিনি তাঁর রাসূলকে পথ নির্দেশ ও সত্য দ্বীন দিয়ে প্রেরণ করেছেন, যাতে একে সবধর্মের উপর প্রবল করে দেন যদিও মুশরিকরা তা অপছন্দ করে।
আয়াত তিনটিতে উল্লেখিত (هدى) "হুদা" এবং (دين الحق) "দ্বীনুল-হক্ব" শব্দের ব্যাখ্যায় ইবনে কাসীর রহ: বলেনঃ
فَالْهُدَى هُوَ مَا جَاءَ بِهِ مِنْ الْإِخْبَارَات الصَّادِقَة وَالْإِيمَان الصَّحِيح وَالْعِلْم النَّافِع وَدِين الْحَقّ هُوَ الْأَعْمَال الصَّالِحَة الصَّحِيحَة النَّافِعَة فِي الدُّنْيَا وَالْآخِرَة " لِيُظْهِرَهُ عَلَى الدِّين كُلّه " أَيْ عَلَى سَائِر الْأَدْيَان كَمَا ثَبَتَ فِي الصَّحِيح عَنْ رَسُول اللَّه صَلَّى اللَّه تَعَالَى عَلَيْهِ وَآلِهِ وَسَلَّمَ أَنَّهُ قَالَ " إِنَّ اللَّه زَوَى لِي الْأَرْض مَشَارِقهَا وَمَغَارِبهَا وَسَيَبْلُغُ مُلْك أُمَّتِي مَا زَوَى لِي مِنْهَا "
অর্থাৎঃ "হুদা" হলো আল্লাহ্ তায়ালার পক্ষ থেকে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যে সত্য সংবাদবার্তা এবং বিশুদ্ধ ঈমান এবং কল্যাণময় ইলম নিয়ে এসেছেন তা, আর দ্বীনুল-হক্ব হলো ঐ সকল বিশুদ্ধ আ'মালে সালেহা যা দুনিয়া এবং আখেরাত; উভয় কালে উপকারী। আল্লাহ্ তায়ালা রাসূল প্রেরণ করেছেন যাতে তিনি বিশুদ্ধ ইলম ও ঈমান এবং আ'মালে সালেহা সম্বলিত এই দ্বীনে হক্বকে বাকি সকল আদয়ানের উপর বিজয়ী এবং প্রবল করেন। যেমনটি সহীহ হাদীসে বর্ণিত হয়েছে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: নিশ্চয়ই আল্লাহ তায়ালা পৃথিবীর পুর্ব-পশ্চিম আমার জন্য সংকচিত করে আনেন, আর নিশ্চয়ই আমার উম্মতের রাজত্ব পৃথিবীর ঐ পর্যন্ত পৌঁছে যাবে যে পর্যন্ত আমার জন্য সংকচিত করে আনা হয়েছিল।" (তাফসীরে ইবনে কাসীর)
খোলাসা করে বলতে গেলে যা দাঁড়ায় তা হলো নবুওয়াত ও রিসালাতের সর্বশেষ কড়ি রাসূলে আরাবী মুহাম্মদ বিন আব্দুল্লাহ বিন আব্দুল মুত্তালিব হাশেমী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের প্রেরণের মূল লক্ষ্য বা মাকসাদে আসলী হচ্ছেঃ
ক) বিশ্বব্যাপী দ্বীনে হক্বকে সকল বাতিল আদয়ানের উপর বিজয়ী এবং প্রবল করা।
খ) তাগূতের ইবাদত এবং আনুগত্য থেকে সমস্ত জমীনকে পবিত্র করা।
গ) জমীনের বুকে ইবাদত এবং আনুগত্যের অধিকারকে এক আল্লাহর জন্য একনিষ্ঠ করা।
নবুওয়াত ও রিসালাতের এ মহান মাকসাদকে প্রতিফলিত করার জন্য রব্বুল-আলামীন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে পর্যায়ক্রমে যে ফরজ দায়িত্বগুলো দিয়েছেন তা হলোঃ
১/ "انذار المجرمين" ইনজারুল মুজরিমীন, অপরাধীদের সতর্কীকরণ, এবং تبشير المؤمنين, বিশ্বাসীদের সুসংবাদ দান।
২/ "الاصداع بالأمر" মুশরিকদের মুখোমুখি হয়ে প্রকাশ্যে দাওয়াত ও ইবলাগ এবং ইনফাজ করা।
৩/ দাওয়াত বিল-হিকমাহ ওয়াল-মাওইজিল হাসানাহ, ও মুজাদালাহ বিত্-ত্বরীক্বিল-আহ্সান।
৪/ পুর্ণাঙ্গ রিসালাতের তাবলীগ, দাওয়াত, ইস্তিক্বামাত, সবর।
আহ্দে রিসালাতের প্রথম অধ্যায়ে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আল্লাহ্ তায়ালার ফরমান মোতাবেক দাওয়াত, ইস্তিক্বামাত, সবর এবং মুজাদালাহর পন্থায় নবুওয়াতের মাকসাদ পানে দূর্বার গতিতে এগিয়ে যান।
নবুওয়াতের সুদ্বীর্ঘ তেরটি বৎসর দাওয়াত ও সবরের কঠিন মেহনতের ফলে কিছু সংখ্যক সৌভাগ্যবান মানব হৃদয়ের জমীন ওহীর বারিতে শিক্ত হয়ে কুফুর-শিরক থেকে পবিত্র হন, এবং তাঁরাই নবুওয়াত ও রিসালাতের মিশনে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের জানে-সার সঙ্গী হিসেবে নির্বাচিত হন। কিন্তু এত জানতোড় দ্বীর্ঘ মেহনতের পরও আল্লাহ্ তায়ালার জমীনের কোন অংশ এমনকি স্বয়ং বায়তুল্লাহর পবিত্র মাটিটুকুও শিরক মুক্ত হলো না, তাই মাহান আল্লাহ্ রাব্বুল আলামীন নবুওয়াত ও রিসালাতের চুড়ান্ত লক্ষ্যে পৌঁছাতে রাসূলে আরাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে এবং তাঁর জানেসার সাহাবীদেরকে (রা) নিচের বিবরণ অনুযায়ী পদক্ষেপ গ্রহণ করার আদেশ করলেনঃ
১/ নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামসহ মক্কার সাহাবায়ে কেরামকে হিজরতের,
২/ মদীনার সাহাবায়ে কেরামকে নুসরাতের,
৩/ এবং সর্বসম্মিলিতভাব জিহাদ ও কিতালের। হিজরতের মাধ্যমে শুরু হলো আহ্দে রিসালাতের দ্বীতীয় অধ্যায়। মাত্র দশ বছরের রিসালাতের এ অধ্যায়ে হিজরত-নুসরত, এবং জিহাদ-কিতালের মেহনতের ময়দানে গাজী এবং শহীদদের ঘাম ও রক্তে সিক্ত হয়ে জাযিরাতুল আরবের পবিত্র জমীন মুক্ত হয় তাগুত এবং তার ফেতনা থেকে এবং তার বুকে প্রতিষ্ঠিত হয় আল্লাহ্ তায়ালার ইবাদত ও আনুগত্যের একনিষ্ঠ অধিকার, এবং বিজিত হয় বিশুদ্ধ ঈমান ও ইলম এবং আ'মালে সালেহার সম্বলিত দ্বীন, দ্বীনে হক্ব।
সেই সাথে মানবরচিত জাহেলী সমাজের নীপীড়িত, বঞ্চিত এবং বৈসম্যের শিকার, ধীকৃত বনী আদম ফিরে পায় তার ন্যায্য অধিকার, নিঃচিহ্ন হয়ে যায় জুলুম-অবিচার, হাহাকার এবং অন্যায় ও অনাচার।
জমীনের উপর স্থাপিত হয় ফাসাদের জায়গায় সলাহ, অশান্তি আর নিরাপত্তাহীনতার জায়গায় শান্তি ও নিরাপত্তা, জুলুম, অবিচারের জায়গায় ন্যায় এবং সুবিচার। মানব সভ্যতার জন্য জমীন হয়ে উঠে রহমত ও বরকতে পুর্ণ, সুখ, শান্তি, এবং আনন্দ সমৃদ্ধ এক অনাবিল ঠিকানা। জমীনের বুকে প্রতিষ্ঠিত হয় বাতিলের অনূসারী বৃহত্ দলের উপর হক্বের উপর প্রতিষ্ঠিত ক্ষুদ্রকায় দলের অলৌকিক বিজয় ধারার অনুপম নমূনা। দ্বীনে হক্বের এমন অলৌকিক ধারাবাহিক বিজয়ে এবং তার ইনসাফপুর্ণ জীবনধারায় মোহিত হয়ে শুরু হয় ইসলামের সুশীতল ছায়াতলে আশ্রয় নেবার আদম সন্তানদের বাঁধ ভাঙা ঢল।
রাসূলে আরাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের বরকতময় জীবনে যখন জিহাদ-কিতালের বিধানের দ্বারা নবুওয়াত ও রিসালতের মাকসাদে আসলী " বিশ্বব্যাপী দ্বীনে হক্বের বিজয়" অর্জনের মানহাজ ও কর্মপন্থা নির্দিষ্ট হয় এবং পরিপূর্ণ সুন্নাহ স্থাপিত হয়, তখন রব্বুল-আলামীন তাঁর রাসূলে রহমতুল-লিল-আলামীন সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে আপন সান্নিধ্যে তুলে নেন।
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের রফীকে আ'লার সান্নিধ্য গমনের মাধ্যমে বরকতময় নবী যুগের পরিসমাপ্তি ঘটেছে ঠিক, কিন্তু নবুওয়াত ও রিসালাতের সমাপ্তি ঘটেনি এবং সমাপ্তি ঘটেনি তাঁর দ্বীনের এবং তাঁর মাকসাদ ও মিশনের। তাই বিশ্বময় দ্বীন বিজয়ের অগ্র যাত্রা অব্যাহত রাখার নবুওয়াতী মিশন; ই'দাদ, জিহাদ, এবং কিতালের এ গুরু দায়িত্ব এসে বর্তায় উম্মতে মুহাম্মাদীর জিম্মায়।
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের এন্তেকালের পর শুরু হয় নবুওয়াতের আদলে খিলাফাহর স্বর্ণ যুগের।
কিতাবুল্লাহ্ এবং সুন্নাতে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের শিক্ষা থেকে সাহাবায়ে কেরাম রাঃ তাঁদের জীবনের একমাত্র মাকসাদ খুঁজে পেয়েছিলেন আল্লাহর জমীনকে কুফর ও শিরক থেকে মুক্ত করে মানুষকে মানুষের গোলামী থেকে বের করে এই জমীনের বুকে আল্লাহ্ তায়ালার দাসত্ব প্রতিষ্ঠা এবং তাঁর কালেমাকে সুমন্নত করতে জিহাদ-কিতালের পথে নিজেদের জান, মাল, সন্তান নিজের প্রিয় থেকে প্রিয় বস্তুকে উৎসর্গ করে দেয়া। তাই রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের জীবদ্দশায় তাঁরা যে পরিমাণ আগ্রহ উদ্দীপনার সাথে জিহাদের পথে জান-মাল সব কিছু অকাতরে বিলিয়ে দিতে যেমন অগ্রগামী ছিলেন তাঁর এন্তেকালের পরও তেমনি অগ্রগামী ছিলেন, দ্বীন বিজয়ের অগ্রযাত্রা অব্যাহত রাখার ব্যপারে সাহাবায়ে কেরামের মধ্যে সামান্যতমও ভাটা পড়েনি। বিশ্বব্যাপী দ্বীনে হকের বিজয় নিশ্চিত করতে এবং তার দাওয়াতকে প্রসারিত করতে জিহাদ ফি সাবিলিল্লাহকে নিজেদের জীবনের মূল লক্ষ্য বানিয়েছিলেন। তাদের জীবনের একমাত্র না'রা ছিল "হয়তো শরীয়ত, নয়তো শাহাদাত"। ঈমান ও তাকওয়া, ইলম ও ইরফান, সাজায়া'ত ও সাখাওয়াত এবং ঈছারের মধ্যে প্রত্যেকজন সাহাবী ছিলেন উম্মাহর জন্য একেকটি নক্ষত্র। সাহাবায়ে কেরামের বীরত্বপূর্ণ অসীম লড়াইয়ের মুখে তৎকালীন তথাকথিত বিশ্ব পরাশক্তি রূম ও পারস্যের মসনদ মুখ থুবড়ে পড়ে এবং খিলাফত আলা মিনহাজিন-নবুওয়াহর মাত্র ত্রিশ বছরে অর্ধপৃথিবীরও অধিক ভুখন্ডে দ্বীনে হকের বিজয়ী পতাকা পতপত করতে থাকে।
খিলাফত আলা মিনহাজিন্-নবুওয়াহর সোনালী যুগের পরবর্তী সময়ে দুটি ধারায় খিলাফত পরিচালিত হয়, একটি হল খিলাফতে বনী উমাইয়াহ, দ্বীতীয়টি হলো খিলাফতে বনূ আব্বাসীয়াহ, খিলাফতের এ দুটি ধারা প্রায় সহস্রাধিক বছর পর্যন্ত প্রতিষ্ঠিত থাকে। এ দুটি ধারার খিলাফতকালে বিভিন্ন কারণে শাসকশ্রেণীর মাঝে শরীয়াহর অনূশাসন মেনে চলার ক্ষেত্রে কিছুটা বিচ্যুতি ঘটলেও দ্বীন ও উম্মাহর নিরাপত্তা সাধনের জন্য এবং দ্বীনের হকের বিজয় ও প্রচার প্রসারের জন্য জিহাদ ফি সাবিলিল্লাহর ব্যপারে খুব একটা শৈথিল্যভাব ছিল না। আর যাদের মধ্যে এব্যাপারে কোন রকম শৈথিল্য প্রলক্ষিত হয়েছে তো আল্লাহ্ তাদেরকে ছাড় দেননি তাদের ব্যাপারে আল্লাহ তায়ালার এই অমোঘ বাণীই প্রতিফলিত হয়েছে:
إِلَّا تَنْفِرُوا يُعَذِّبْكُمْ عَذَابًا أَلِيمًا وَيَسْتَبْدِلْ قَوْمًا غَيْرَكُمْ وَلَا تَضُرُّوهُ شَيْئًا وَاللَّهُ عَلَى كُلِّ شَيْءٍ قَدِيرٌ
সূরা আত-তাওবাহ্* (التوبة), আয়াত: ৩৯
অর্থঃ তোমরা যদি যুদ্ধে বের না হও, তবে আল্লাহ তোমাদের মর্মন্তুদ আযাব দেবেন এবং অপর জাতিকে তোমাদের স্থলাভিষিক্ত করবেন। তোমরা তাঁর কোন ক্ষতি করতে পারবে না, আর আল্লাহ সর্ববিষয়ে শক্তিমান।
আল্লাহ্ তায়ালা বলেনঃ
يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آَمَنُوا مَنْ يَرْتَدَّ مِنْكُمْ عَنْ دِينِهِ فَسَوْفَ يَأْتِي اللَّهُ بِقَوْمٍ يُحِبُّهُمْ وَيُحِبُّونَهُ أَذِلَّةٍ عَلَى الْمُؤْمِنِينَ أَعِزَّةٍ عَلَى الْكَافِرِينَ يُجَاهِدُونَ فِي سَبِيلِ اللَّهِ وَلَا يَخَافُونَ لَوْمَةَ لَائِمٍ ذَلِكَ فَضْلُ اللَّهِ يُؤْتِيهِ مَنْ يَشَاءُ وَاللَّهُ وَاسِعٌ عَلِيمٌ
সূরা আল মায়িদাহ (المآئدة), আয়াত: ৫৪
অর্থঃ হে মুমিনগণ, তোমাদের মধ্যে যে স্বীয় ধর্ম থেকে ফিরে যাবে, অচিরে আল্লাহ এমন সম্প্রদায় সৃষ্টি করবেন, যাদেরকে তিনি ভালবাসবেন এবং তারা তাঁকে ভালবাসবে। তারা মুসলমানদের প্রতি বিনয়-নম্র হবে এবং কাফেরদের প্রতি কঠোর হবে। তারা আল্লাহর পথে জেহাদ করবে এবং কোন তিরস্কারকারীর তিরস্কারে ভীত হবে না। এটি আল্লাহর অনুগ্রহ-তিনি যাকে ইচ্ছা দান করেন। আল্লাহ প্রাচুর্য দানকারী, মহাজ্ঞানী।
এটি হলো আল্লাহ তাআলার চিরাচরিত নিয়ম। যখনি এই উম্মাহর কোন অংশ জিহাদ ফী সাবীলিল্লাহ্ থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে তখনি তাদের উপর তাদের শত্রুদেরকে চড়াও করে দিয়েছেন এবং তাদেরকে শাস্তি দিয়েছেন এবং তাদেরকে সরিয়ে দিয়ে তাদের জায়গায় এমন কাউকে নিয়ে এসেছেন যাদের ব্যপারে তিনি বলেনঃ
"অচিরেই আল্লাহ এমন সম্প্রদায় সৃষ্টি করবেন, যাদেরকে তিনি ভালবাসবেন এবং তারা তাঁকে ভালবাসবে। তারা মুসলমানদের প্রতি বিনয়-নম্র হবে এবং কাফেরদের প্রতি কঠোর হবে। তারা আল্লাহর পথে জেহাদ করবে এবং কোন তিরস্কারকারীর তিরস্কারে ভীত হবে না।"
সার কথা:
নবুওয়াত ও রিসালাতের মূল মাকসাদ হলো;
১/ اظهار ألحق على الدين كله
বিশ্বব্যাপী সকল বাতিল দ্বীনের উপর দ্বীনে হক্বকে বিজয় এবং প্রবল করা।
২/ لا تكون الفتنة و يكون الدين كله لله
ফিতনাকে পুরোপুরি নির্মূল করা এবং আল্লাহ্ তায়ালার জন্য পরিপূর্ণ আনুগত্যের অধিকার প্রতিষ্ঠিত করা।
৩/ اجتناب الطاغوت و العبادة لله
তাগূত বর্জন করে ইবাদত কেবলমাত্র আল্লাহ্ তায়ালার জন্য খালেছ করা।
এই মাকসাদ হাসিলের জন্য আল্লাহ্ তায়ালা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এবং তাঁর উম্মতের উপর যা ফরজ করেছেন:
১/ দাওয়াত,
২/ ইস্তিক্বামাত,
৩/ সবর
৪/ হিজরত
৫/ নুসরাত
৬/ ই'দাদ
৭/ জিহাদ এবং ক্বিতাল।
আলোচ্য বিষয়ের পরবর্তী পর্বসমূহঃ
* দাওয়াত, ও সবরের হুকুম কি জিহাদ কিতালের হুকুম দ্বারা রহিত হয়ে গেছে?
* তা'লীম, তাযকিয়াহ এবং তিলাওয়াতে আয়াতের গুরুত্ব ও প্রয়োজনীয়তা।
* তা'লীম, তাযকিয়াহ এবং তিলাওয়াতে আয়াতের অবস্থান।
* তা'লীম, তাযকিয়াহ এবং তিলাওয়াতে আয়াতের লক্ষ্য উদ্দেশ্য।
*কোনটি আলেমদের কাজ আর কোনটি শাসকদের কাজ?
চলবে ইনশাআল্লাহ........
نحمده و نصلي على رسوله الكريم و صحبه و آله أجمعين.
মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামীন যুগে যুগে যত নবী রাসুল পাঠিয়েছেন তার মূল লক্ষ্য ছিলঃ
১/ জমীন থেকে তাগূত (জীন ও মানব শয়তান)এবং তাগূতের ফেতনা; কুফুর এবং শিরকের মূলোৎপোটন করে ইবাদাত এবং আনুগত্যের অধিকারকে কেবলমাত্র রব্বুল আলামীনের জন্য নিশ্চিত করা।
২/ নিজ বান্দাদেরকে ইবলিসে লাঈন এবং নফসে আম্মারার দাসত্ব থেকে মুক্ত করে তাদের খালিক ও মালিক, রাজ্জাক ও রবের দাসত্ব করানো।
এমহৎ উদ্দেশ্য বাস্তবায়নের জন্য আল্লাহ্ রব্বুল আলামীন প্রত্যেক যুগে প্রত্যেক কওমের মধ্যে তাদেরই থেকে নবী কিংবা হাদী প্রেরণ করেছেন। আল্লাহ্ তায়ালা বলেনঃ
وَلَقَدْ بَعَثْنَا فِي كُلِّ أُمَّةٍ رَسُولًا أَنِ اُعْبُدُوا اللَّهَ وَاجْتَنِبُوا الطَّاغُوتَ فَمِنْهُمْ مَنْ هَدَى اللَّهُ وَمِنْهُمْ مَنْ حَقَّتْ عَلَيْهِ الضَّلَالَةُ فَسِيرُوا فِي الْأَرْضِ فَانْظُرُوا كَيْفَ كَانَ عَاقِبَةُ الْمُكَذِّبِينَ.
অর্থঃ আমি প্রত্যেক উম্মতের মধ্যেই রাসূল প্রেরণ করেছি এই মর্মে যে, তোমরা আল্লাহর এবাদত কর এবং তাগুতকে বর্জন কর। অতঃপর তাদের মধ্যে কিছু সংখ্যককে আল্লাহ হেদায়েত করেছেন এবং কিছু সংখ্যকের জন্যে বিপথগামিতা অবধারিত হয়ে গেল। সুতরাং তোমরা পৃথিবীতে ভ্রমণ কর এবং দেখ মিথ্যারোপকারীদের কিরূপ পরিণতি হয়েছে।( সূরা আন নাহল (النّحل), আয়াত: ৩৬)
আল্লাহ্ তায়ালা মুহাম্মদে আরাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে আদেশ করে বলেন:
إِنَّا أَنْزَلْنَا إِلَيْكَ الْكِتَابَ بِالْحَقِّ فَاعْبُدِ اللَّهَ مُخْلِصًا لَهُ الدِّينَ.
অর্থঃ আমি আপনার প্রতি এ কিতাব যথার্থরূপে নাযিল করেছি। অতএব, আপনি নিষ্ঠার সাথে আল্লাহর এবাদত করুন।(সূরা আয্*-যুমার (الزّمر), আয়াত: ২)
قُلْ إِنِّي أُمِرْتُ أَنْ أَعْبُدَ اللَّهَ مُخْلِصًا لَهُ الدِّينَ.
অর্থঃ বলুন, আমি নিষ্ঠার সাথে আল্লাহর এবাদত করতে আদিষ্ট হয়েছি।(সূরা আয্*-যুমার (الزّمر), আয়াত:১১)
সুতরাং রাসূল প্রেরণের মূল উদ্দেশ্য হলোঃ
ক) তাগূতের ইবাদত এবং আনুগত্য থেকে জমীনকে পবিত্র করা।
খ) জমীনের বুকে ইবাদত এবং আনুগত্যের অধিকারকে এক আল্লাহর জন্য একনিষ্ঠ করা।
প্রেরিত নবী, রাসুল এবং হাদীগণ তাঁদের উপর অর্পিত দায়িত্ব পালনের জন্য পথ ও পন্থার ভিন্নতার সাথে মৌলিকভাবে যে কাজগুলো করেছেন তাহলো যথাক্রমে দাওয়াত, সবর, জিহাদ।
আর কওমের যাঁরা তাঁদেরকে মেনে নিয়েছেন এবং তাঁদের আনুগত্য শিকার করে নিয়েছেন, সে সকল অনূসারীদের মধ্যে নবী এবং হাদীগণের কাজ ছিল তা'লীম, তারবিয়াত এবং তাযকিয়্যাহ, যদি দুই শব্দে ব্যাক্ত করা হয় তবে তা হলো: ক) তাওয়াসী বিল-হক; হকের তালীম এবং উপদেশ, এবং খ) তাওয়াসী বিছ্-সবর, ধৈর্য্যের তালীম এবং উপদেশ।
মুহাম্মাদে আরাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যেহেতু নবুওয়াত ও রিসালাতের ধারাবাহিকতার সর্বশেষ কড়ি এবং সকল জাতি-গোষ্ঠি, ভাষা-বর্ণ নির্বিশেষে গোটা বিশ্ব জাহানের জীন-ইনসানের জন্য প্রেরিত রাসূল, তাই রাসূলে আরাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নবুওয়াত-রিসালাতের মাকসাদও সর্বব্যাপি। এবং তা বাস্তবায়নের পথ ও পন্থাও পরিপূর্ণতার সাথে সুনির্দিষ্ট।
মুহাম্মাদে আরাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে রাসূল করে প্রেরণের উদ্দেশ্যে হলো বিশ্বব্যাপী তাগূতী ফেতনাকে স্বঃমূলে নির্মূল করতঃ সমস্ত বাতিল ধর্ম-মতের উপর দ্বীনে হক্ব্কে বিজয়ী এবং সুপ্রতিষ্ঠিত করে, সর্বত্র এবং সর্বব্যাপি ইবাদাত এবং আনুগত্যের একচ্ছত্র অধিকারকে একনিষ্ঠতার সাথে কেবলমাত্র রব্বুল আলামীনের জন্য সুনিশ্চিত করা। আল্লাহ্ তায়ালা বলেনঃ
هُوَ الَّذِي أَرْسَلَ رَسُولَهُ بِالْهُدَى وَدِينِ الْحَقِّ لِيُظْهِرَهُ عَلَى الدِّينِ كُلِّهِ وَلَوْ كَرِهَ الْمُشْرِكُونَ.
সূরা আত-তাওবাহ্* (التوبة), আয়াত: ৩৩
অর্থঃ তিনিই প্রেরণ করেছেন আপন রসূলকে হেদায়েত ও সত্য দ্বীন সহকারে, যেন এ দ্বীনকে অপরাপর দ্বীনের উপর জয়যুক্ত করেন, যদিও মুশরিকরা তা অপ্রীতিকর মনে করে।
هُوَ الَّذِي أَرْسَلَ رَسُولَهُ بِالْهُدَى وَدِينِ الْحَقِّ لِيُظْهِرَهُ عَلَى الدِّينِ كُلِّهِ وَكَفَى بِاللَّهِ شَهِيدًا.
সূরা আল ফাত্*হ (الفتح), আয়াত:২৮
অর্থঃ তিনিই তাঁর রাসূলকে হেদায়েত ও সত্যসহ প্রেরণ করেছেন, যাতে একে অন্য সমস্ত ধর্মের উপর জয়যুক্ত করেন। সত্য প্রতিষ্ঠাতারূপে আল্লাহ যথেষ্ট।
هُوَ الَّذِي أَرْسَلَ رَسُولَهُ بِالْهُدَى وَدِينِ الْحَقِّ لِيُظْهِرَهُ عَلَى الدِّينِ كُلِّهِ وَلَوْ كَرِهَ الْمُشْرِكُونَ.
সূরা আস-সাফ (الصّفّ), আয়াত:৯
অর্থঃ তিনি তাঁর রাসূলকে পথ নির্দেশ ও সত্য দ্বীন দিয়ে প্রেরণ করেছেন, যাতে একে সবধর্মের উপর প্রবল করে দেন যদিও মুশরিকরা তা অপছন্দ করে।
আয়াত তিনটিতে উল্লেখিত (هدى) "হুদা" এবং (دين الحق) "দ্বীনুল-হক্ব" শব্দের ব্যাখ্যায় ইবনে কাসীর রহ: বলেনঃ
فَالْهُدَى هُوَ مَا جَاءَ بِهِ مِنْ الْإِخْبَارَات الصَّادِقَة وَالْإِيمَان الصَّحِيح وَالْعِلْم النَّافِع وَدِين الْحَقّ هُوَ الْأَعْمَال الصَّالِحَة الصَّحِيحَة النَّافِعَة فِي الدُّنْيَا وَالْآخِرَة " لِيُظْهِرَهُ عَلَى الدِّين كُلّه " أَيْ عَلَى سَائِر الْأَدْيَان كَمَا ثَبَتَ فِي الصَّحِيح عَنْ رَسُول اللَّه صَلَّى اللَّه تَعَالَى عَلَيْهِ وَآلِهِ وَسَلَّمَ أَنَّهُ قَالَ " إِنَّ اللَّه زَوَى لِي الْأَرْض مَشَارِقهَا وَمَغَارِبهَا وَسَيَبْلُغُ مُلْك أُمَّتِي مَا زَوَى لِي مِنْهَا "
অর্থাৎঃ "হুদা" হলো আল্লাহ্ তায়ালার পক্ষ থেকে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যে সত্য সংবাদবার্তা এবং বিশুদ্ধ ঈমান এবং কল্যাণময় ইলম নিয়ে এসেছেন তা, আর দ্বীনুল-হক্ব হলো ঐ সকল বিশুদ্ধ আ'মালে সালেহা যা দুনিয়া এবং আখেরাত; উভয় কালে উপকারী। আল্লাহ্ তায়ালা রাসূল প্রেরণ করেছেন যাতে তিনি বিশুদ্ধ ইলম ও ঈমান এবং আ'মালে সালেহা সম্বলিত এই দ্বীনে হক্বকে বাকি সকল আদয়ানের উপর বিজয়ী এবং প্রবল করেন। যেমনটি সহীহ হাদীসে বর্ণিত হয়েছে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: নিশ্চয়ই আল্লাহ তায়ালা পৃথিবীর পুর্ব-পশ্চিম আমার জন্য সংকচিত করে আনেন, আর নিশ্চয়ই আমার উম্মতের রাজত্ব পৃথিবীর ঐ পর্যন্ত পৌঁছে যাবে যে পর্যন্ত আমার জন্য সংকচিত করে আনা হয়েছিল।" (তাফসীরে ইবনে কাসীর)
খোলাসা করে বলতে গেলে যা দাঁড়ায় তা হলো নবুওয়াত ও রিসালাতের সর্বশেষ কড়ি রাসূলে আরাবী মুহাম্মদ বিন আব্দুল্লাহ বিন আব্দুল মুত্তালিব হাশেমী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের প্রেরণের মূল লক্ষ্য বা মাকসাদে আসলী হচ্ছেঃ
ক) বিশ্বব্যাপী দ্বীনে হক্বকে সকল বাতিল আদয়ানের উপর বিজয়ী এবং প্রবল করা।
খ) তাগূতের ইবাদত এবং আনুগত্য থেকে সমস্ত জমীনকে পবিত্র করা।
গ) জমীনের বুকে ইবাদত এবং আনুগত্যের অধিকারকে এক আল্লাহর জন্য একনিষ্ঠ করা।
নবুওয়াত ও রিসালাতের এ মহান মাকসাদকে প্রতিফলিত করার জন্য রব্বুল-আলামীন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে পর্যায়ক্রমে যে ফরজ দায়িত্বগুলো দিয়েছেন তা হলোঃ
১/ "انذار المجرمين" ইনজারুল মুজরিমীন, অপরাধীদের সতর্কীকরণ, এবং تبشير المؤمنين, বিশ্বাসীদের সুসংবাদ দান।
২/ "الاصداع بالأمر" মুশরিকদের মুখোমুখি হয়ে প্রকাশ্যে দাওয়াত ও ইবলাগ এবং ইনফাজ করা।
৩/ দাওয়াত বিল-হিকমাহ ওয়াল-মাওইজিল হাসানাহ, ও মুজাদালাহ বিত্-ত্বরীক্বিল-আহ্সান।
৪/ পুর্ণাঙ্গ রিসালাতের তাবলীগ, দাওয়াত, ইস্তিক্বামাত, সবর।
আহ্দে রিসালাতের প্রথম অধ্যায়ে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আল্লাহ্ তায়ালার ফরমান মোতাবেক দাওয়াত, ইস্তিক্বামাত, সবর এবং মুজাদালাহর পন্থায় নবুওয়াতের মাকসাদ পানে দূর্বার গতিতে এগিয়ে যান।
নবুওয়াতের সুদ্বীর্ঘ তেরটি বৎসর দাওয়াত ও সবরের কঠিন মেহনতের ফলে কিছু সংখ্যক সৌভাগ্যবান মানব হৃদয়ের জমীন ওহীর বারিতে শিক্ত হয়ে কুফুর-শিরক থেকে পবিত্র হন, এবং তাঁরাই নবুওয়াত ও রিসালাতের মিশনে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের জানে-সার সঙ্গী হিসেবে নির্বাচিত হন। কিন্তু এত জানতোড় দ্বীর্ঘ মেহনতের পরও আল্লাহ্ তায়ালার জমীনের কোন অংশ এমনকি স্বয়ং বায়তুল্লাহর পবিত্র মাটিটুকুও শিরক মুক্ত হলো না, তাই মাহান আল্লাহ্ রাব্বুল আলামীন নবুওয়াত ও রিসালাতের চুড়ান্ত লক্ষ্যে পৌঁছাতে রাসূলে আরাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে এবং তাঁর জানেসার সাহাবীদেরকে (রা) নিচের বিবরণ অনুযায়ী পদক্ষেপ গ্রহণ করার আদেশ করলেনঃ
১/ নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামসহ মক্কার সাহাবায়ে কেরামকে হিজরতের,
২/ মদীনার সাহাবায়ে কেরামকে নুসরাতের,
৩/ এবং সর্বসম্মিলিতভাব জিহাদ ও কিতালের। হিজরতের মাধ্যমে শুরু হলো আহ্দে রিসালাতের দ্বীতীয় অধ্যায়। মাত্র দশ বছরের রিসালাতের এ অধ্যায়ে হিজরত-নুসরত, এবং জিহাদ-কিতালের মেহনতের ময়দানে গাজী এবং শহীদদের ঘাম ও রক্তে সিক্ত হয়ে জাযিরাতুল আরবের পবিত্র জমীন মুক্ত হয় তাগুত এবং তার ফেতনা থেকে এবং তার বুকে প্রতিষ্ঠিত হয় আল্লাহ্ তায়ালার ইবাদত ও আনুগত্যের একনিষ্ঠ অধিকার, এবং বিজিত হয় বিশুদ্ধ ঈমান ও ইলম এবং আ'মালে সালেহার সম্বলিত দ্বীন, দ্বীনে হক্ব।
সেই সাথে মানবরচিত জাহেলী সমাজের নীপীড়িত, বঞ্চিত এবং বৈসম্যের শিকার, ধীকৃত বনী আদম ফিরে পায় তার ন্যায্য অধিকার, নিঃচিহ্ন হয়ে যায় জুলুম-অবিচার, হাহাকার এবং অন্যায় ও অনাচার।
জমীনের উপর স্থাপিত হয় ফাসাদের জায়গায় সলাহ, অশান্তি আর নিরাপত্তাহীনতার জায়গায় শান্তি ও নিরাপত্তা, জুলুম, অবিচারের জায়গায় ন্যায় এবং সুবিচার। মানব সভ্যতার জন্য জমীন হয়ে উঠে রহমত ও বরকতে পুর্ণ, সুখ, শান্তি, এবং আনন্দ সমৃদ্ধ এক অনাবিল ঠিকানা। জমীনের বুকে প্রতিষ্ঠিত হয় বাতিলের অনূসারী বৃহত্ দলের উপর হক্বের উপর প্রতিষ্ঠিত ক্ষুদ্রকায় দলের অলৌকিক বিজয় ধারার অনুপম নমূনা। দ্বীনে হক্বের এমন অলৌকিক ধারাবাহিক বিজয়ে এবং তার ইনসাফপুর্ণ জীবনধারায় মোহিত হয়ে শুরু হয় ইসলামের সুশীতল ছায়াতলে আশ্রয় নেবার আদম সন্তানদের বাঁধ ভাঙা ঢল।
রাসূলে আরাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের বরকতময় জীবনে যখন জিহাদ-কিতালের বিধানের দ্বারা নবুওয়াত ও রিসালতের মাকসাদে আসলী " বিশ্বব্যাপী দ্বীনে হক্বের বিজয়" অর্জনের মানহাজ ও কর্মপন্থা নির্দিষ্ট হয় এবং পরিপূর্ণ সুন্নাহ স্থাপিত হয়, তখন রব্বুল-আলামীন তাঁর রাসূলে রহমতুল-লিল-আলামীন সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে আপন সান্নিধ্যে তুলে নেন।
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের রফীকে আ'লার সান্নিধ্য গমনের মাধ্যমে বরকতময় নবী যুগের পরিসমাপ্তি ঘটেছে ঠিক, কিন্তু নবুওয়াত ও রিসালাতের সমাপ্তি ঘটেনি এবং সমাপ্তি ঘটেনি তাঁর দ্বীনের এবং তাঁর মাকসাদ ও মিশনের। তাই বিশ্বময় দ্বীন বিজয়ের অগ্র যাত্রা অব্যাহত রাখার নবুওয়াতী মিশন; ই'দাদ, জিহাদ, এবং কিতালের এ গুরু দায়িত্ব এসে বর্তায় উম্মতে মুহাম্মাদীর জিম্মায়।
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের এন্তেকালের পর শুরু হয় নবুওয়াতের আদলে খিলাফাহর স্বর্ণ যুগের।
কিতাবুল্লাহ্ এবং সুন্নাতে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের শিক্ষা থেকে সাহাবায়ে কেরাম রাঃ তাঁদের জীবনের একমাত্র মাকসাদ খুঁজে পেয়েছিলেন আল্লাহর জমীনকে কুফর ও শিরক থেকে মুক্ত করে মানুষকে মানুষের গোলামী থেকে বের করে এই জমীনের বুকে আল্লাহ্ তায়ালার দাসত্ব প্রতিষ্ঠা এবং তাঁর কালেমাকে সুমন্নত করতে জিহাদ-কিতালের পথে নিজেদের জান, মাল, সন্তান নিজের প্রিয় থেকে প্রিয় বস্তুকে উৎসর্গ করে দেয়া। তাই রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের জীবদ্দশায় তাঁরা যে পরিমাণ আগ্রহ উদ্দীপনার সাথে জিহাদের পথে জান-মাল সব কিছু অকাতরে বিলিয়ে দিতে যেমন অগ্রগামী ছিলেন তাঁর এন্তেকালের পরও তেমনি অগ্রগামী ছিলেন, দ্বীন বিজয়ের অগ্রযাত্রা অব্যাহত রাখার ব্যপারে সাহাবায়ে কেরামের মধ্যে সামান্যতমও ভাটা পড়েনি। বিশ্বব্যাপী দ্বীনে হকের বিজয় নিশ্চিত করতে এবং তার দাওয়াতকে প্রসারিত করতে জিহাদ ফি সাবিলিল্লাহকে নিজেদের জীবনের মূল লক্ষ্য বানিয়েছিলেন। তাদের জীবনের একমাত্র না'রা ছিল "হয়তো শরীয়ত, নয়তো শাহাদাত"। ঈমান ও তাকওয়া, ইলম ও ইরফান, সাজায়া'ত ও সাখাওয়াত এবং ঈছারের মধ্যে প্রত্যেকজন সাহাবী ছিলেন উম্মাহর জন্য একেকটি নক্ষত্র। সাহাবায়ে কেরামের বীরত্বপূর্ণ অসীম লড়াইয়ের মুখে তৎকালীন তথাকথিত বিশ্ব পরাশক্তি রূম ও পারস্যের মসনদ মুখ থুবড়ে পড়ে এবং খিলাফত আলা মিনহাজিন-নবুওয়াহর মাত্র ত্রিশ বছরে অর্ধপৃথিবীরও অধিক ভুখন্ডে দ্বীনে হকের বিজয়ী পতাকা পতপত করতে থাকে।
খিলাফত আলা মিনহাজিন্-নবুওয়াহর সোনালী যুগের পরবর্তী সময়ে দুটি ধারায় খিলাফত পরিচালিত হয়, একটি হল খিলাফতে বনী উমাইয়াহ, দ্বীতীয়টি হলো খিলাফতে বনূ আব্বাসীয়াহ, খিলাফতের এ দুটি ধারা প্রায় সহস্রাধিক বছর পর্যন্ত প্রতিষ্ঠিত থাকে। এ দুটি ধারার খিলাফতকালে বিভিন্ন কারণে শাসকশ্রেণীর মাঝে শরীয়াহর অনূশাসন মেনে চলার ক্ষেত্রে কিছুটা বিচ্যুতি ঘটলেও দ্বীন ও উম্মাহর নিরাপত্তা সাধনের জন্য এবং দ্বীনের হকের বিজয় ও প্রচার প্রসারের জন্য জিহাদ ফি সাবিলিল্লাহর ব্যপারে খুব একটা শৈথিল্যভাব ছিল না। আর যাদের মধ্যে এব্যাপারে কোন রকম শৈথিল্য প্রলক্ষিত হয়েছে তো আল্লাহ্ তাদেরকে ছাড় দেননি তাদের ব্যাপারে আল্লাহ তায়ালার এই অমোঘ বাণীই প্রতিফলিত হয়েছে:
إِلَّا تَنْفِرُوا يُعَذِّبْكُمْ عَذَابًا أَلِيمًا وَيَسْتَبْدِلْ قَوْمًا غَيْرَكُمْ وَلَا تَضُرُّوهُ شَيْئًا وَاللَّهُ عَلَى كُلِّ شَيْءٍ قَدِيرٌ
সূরা আত-তাওবাহ্* (التوبة), আয়াত: ৩৯
অর্থঃ তোমরা যদি যুদ্ধে বের না হও, তবে আল্লাহ তোমাদের মর্মন্তুদ আযাব দেবেন এবং অপর জাতিকে তোমাদের স্থলাভিষিক্ত করবেন। তোমরা তাঁর কোন ক্ষতি করতে পারবে না, আর আল্লাহ সর্ববিষয়ে শক্তিমান।
আল্লাহ্ তায়ালা বলেনঃ
يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آَمَنُوا مَنْ يَرْتَدَّ مِنْكُمْ عَنْ دِينِهِ فَسَوْفَ يَأْتِي اللَّهُ بِقَوْمٍ يُحِبُّهُمْ وَيُحِبُّونَهُ أَذِلَّةٍ عَلَى الْمُؤْمِنِينَ أَعِزَّةٍ عَلَى الْكَافِرِينَ يُجَاهِدُونَ فِي سَبِيلِ اللَّهِ وَلَا يَخَافُونَ لَوْمَةَ لَائِمٍ ذَلِكَ فَضْلُ اللَّهِ يُؤْتِيهِ مَنْ يَشَاءُ وَاللَّهُ وَاسِعٌ عَلِيمٌ
সূরা আল মায়িদাহ (المآئدة), আয়াত: ৫৪
অর্থঃ হে মুমিনগণ, তোমাদের মধ্যে যে স্বীয় ধর্ম থেকে ফিরে যাবে, অচিরে আল্লাহ এমন সম্প্রদায় সৃষ্টি করবেন, যাদেরকে তিনি ভালবাসবেন এবং তারা তাঁকে ভালবাসবে। তারা মুসলমানদের প্রতি বিনয়-নম্র হবে এবং কাফেরদের প্রতি কঠোর হবে। তারা আল্লাহর পথে জেহাদ করবে এবং কোন তিরস্কারকারীর তিরস্কারে ভীত হবে না। এটি আল্লাহর অনুগ্রহ-তিনি যাকে ইচ্ছা দান করেন। আল্লাহ প্রাচুর্য দানকারী, মহাজ্ঞানী।
এটি হলো আল্লাহ তাআলার চিরাচরিত নিয়ম। যখনি এই উম্মাহর কোন অংশ জিহাদ ফী সাবীলিল্লাহ্ থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে তখনি তাদের উপর তাদের শত্রুদেরকে চড়াও করে দিয়েছেন এবং তাদেরকে শাস্তি দিয়েছেন এবং তাদেরকে সরিয়ে দিয়ে তাদের জায়গায় এমন কাউকে নিয়ে এসেছেন যাদের ব্যপারে তিনি বলেনঃ
"অচিরেই আল্লাহ এমন সম্প্রদায় সৃষ্টি করবেন, যাদেরকে তিনি ভালবাসবেন এবং তারা তাঁকে ভালবাসবে। তারা মুসলমানদের প্রতি বিনয়-নম্র হবে এবং কাফেরদের প্রতি কঠোর হবে। তারা আল্লাহর পথে জেহাদ করবে এবং কোন তিরস্কারকারীর তিরস্কারে ভীত হবে না।"
সার কথা:
নবুওয়াত ও রিসালাতের মূল মাকসাদ হলো;
১/ اظهار ألحق على الدين كله
বিশ্বব্যাপী সকল বাতিল দ্বীনের উপর দ্বীনে হক্বকে বিজয় এবং প্রবল করা।
২/ لا تكون الفتنة و يكون الدين كله لله
ফিতনাকে পুরোপুরি নির্মূল করা এবং আল্লাহ্ তায়ালার জন্য পরিপূর্ণ আনুগত্যের অধিকার প্রতিষ্ঠিত করা।
৩/ اجتناب الطاغوت و العبادة لله
তাগূত বর্জন করে ইবাদত কেবলমাত্র আল্লাহ্ তায়ালার জন্য খালেছ করা।
এই মাকসাদ হাসিলের জন্য আল্লাহ্ তায়ালা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এবং তাঁর উম্মতের উপর যা ফরজ করেছেন:
১/ দাওয়াত,
২/ ইস্তিক্বামাত,
৩/ সবর
৪/ হিজরত
৫/ নুসরাত
৬/ ই'দাদ
৭/ জিহাদ এবং ক্বিতাল।
আলোচ্য বিষয়ের পরবর্তী পর্বসমূহঃ
* দাওয়াত, ও সবরের হুকুম কি জিহাদ কিতালের হুকুম দ্বারা রহিত হয়ে গেছে?
* তা'লীম, তাযকিয়াহ এবং তিলাওয়াতে আয়াতের গুরুত্ব ও প্রয়োজনীয়তা।
* তা'লীম, তাযকিয়াহ এবং তিলাওয়াতে আয়াতের অবস্থান।
* তা'লীম, তাযকিয়াহ এবং তিলাওয়াতে আয়াতের লক্ষ্য উদ্দেশ্য।
*কোনটি আলেমদের কাজ আর কোনটি শাসকদের কাজ?
চলবে ইনশাআল্লাহ........
Comment