Announcement

Collapse
No announcement yet.

৭১ কি তাহলে আমাদের জাহিলিয়াতের ইতিহাস?

Collapse
This is a sticky topic.
X
X
 
  • Filter
  • Time
  • Show
Clear All
new posts

  • ৭১ কি তাহলে আমাদের জাহিলিয়াতের ইতিহাস?

    ৭১ কি তাহলে আমাদের জাহিলিয়াতের ইতিহাস?

    কথাটা কিভাবে বলবো অনেক দিন ধরেই ভাবছিলাম। অনেকে বিষয়টাকে কিভাবে নিবে সেজন্যই দ্বিধা। এরপরও বলাই সমীচিন মনে হচ্ছে। আমরা যদি আমাদের ভুল বুঝতে পারি তাহলে সেটাই হবে সার্থকতা। ভুলকে ভুল বুঝতে পারা, ভুলকে ভুল বলে স্বীকার করা ভালো লক্ষণ। এতে ভুল এড়ানো যায়, ভুল থেকে শিক্ষা নেয়া যায়, ভুলের উপর অনুতপ্ত হয়ে ফিরে আসা যায়। কোনো জাতি যদি তার ভুল বুঝতেই না পারে তাহলে উত্তরণের পথ পাবে কি করে?

    একাত্তর নিয়ে এদেশে অনেক রাজনীতি হয়েছে, অনেক ব্যবসা হয়েছে এবং এখনও হচ্ছে। এদেশের ভিত্তিপ্রস্তর এখনও একাত্তরের গৌরবের (!!) উপরই রাখা হচ্ছে।

    আপনি যদি মুসলমান হোন, আপনাকে সব কিছু বিবেক, বাস্তবতা এবং শরীয়াহর আয়নায় বিচার করতে হবে। গতানুগতিক কোনো বয়ানের তালে তালে চলা আপনার জন্য নিষিদ্ধ। সমাজকে আপনি শরীয়াহর আলোকে প্রশ্ন করবেন: এই বয়ান, এই আদর্শ, এই মিথ, এই গৌরব- শরীয়াহর আলোকে তা কি সঠিক? আপনি যদি মুসলিম হোন আপনাকে অবশ্যই এ প্রশ্নে যেতে হবে। অন্ধভাবে কোনোকিছু বিশ্বাস করা, মেনে নেয়া, ধারণ করা, কোনো কিছুকে নিয়ে গর্ব করা এবং শরীয়াহর প্রশ্ন এড়িয়ে যাওয়ার নামই জাহিলিয়াত। একটা জাতির জীবনে জাহিলিয়াত থাকতে পারে। তবে জাহিলিয়াতকে জাহিলিয়াত বলে চিনতে পারার নাম সার্থকতা, নইলে আমরা ব্যর্থ।

    একটা রাষ্ট্র –যে রাষ্ট্রটির জন্ম ইসলামের নামে এবং উলামায়ে কেরামসহ জাতির সাধারণরা পর্যন্ত যাকে ইসলামী রাষ্ট্র মনে করতো- রাষ্ট্রটি দুটি জাতি নিয়ে গঠিত: বাঙালী আর পাকিস্তানী। আমরা ধরে নিলাম পাকিস্তানীরা জুলুম করছে, হক নষ্ট করছে, বৈষম্য করছে। তো প্রশ্ন: এই জুলুম ও বৈষম্যের প্রতিকারে রাষ্ট্রটিকে ভেঙে দুই খণ্ড করে ফেলা কি শরীয়ত সমর্থন করে? নাকি হাজারো বিসর্জন দিতে হলেও এক থাকতে বলে? অধিকার আদায়ের নামে মুসলিমদের দ্বিখণ্ডিত করা কি ইসলাম, না জাহিলিয়াত?

    বিষয়টা শরীয়তে এমনই স্পষ্ট যে, এ প্রশ্নের উত্তর দিতে যাওয়াও এক বাচালতা।

    রাগ দেখিয়ে, গরম দেখিয়ে আলাদা হয়ে যাওয়া কোনো বুদ্ধিমানের কাজ নয়, ইসলামের শিক্ষাও নয়। এর পরিণতিও ভালো হয় না।
    আপনি গরম দেখিয়ে আত্মীয়দের থেকে আলাদা একঘরে হয়ে গেলে আপনার কল্যাণ হবে, নাকি সহ্য করে সবাইকে নিয়ে মিলে থাকলে কল্যাণ হবে?

    গরম দেখিয়ে সমাজের লোকজনের সাথে দুশমনি সৃষ্টি করলে কল্যাণ হবে, নাকি সহ্য করে সবার সাথে মিলে থাকলে কল্যাণ হবে?
    আপনার অফিস, আপনার ঘর, আপনার সমাজ, আপনার মহল্লা, আপনার সংঘ- কোথাও অধিকার ক্ষু্ন্ন হওয়ার প্রসঙ্গ তুলে মুখ কালা করার মাঝে কল্যাণ নেই। হেকমতের সাথে ঝগড়া এড়িয়ে মিলে থাকার মাঝেই কল্যাণ। আর যদি বিষয়টা রাষ্ট্রের প্রশ্ন হয় এবং মুসলিমদের বহুল কাঙ্খিত একটা রাষ্ট্রের প্রশ্ন হয়, তাহলে তো বিষয়টা বড়ই নাজুক।

    পাকিস্তানিরা জালেম, শোষক, আমরা তাদের সাথে নাই- এই চিন্তা কি ভাই ইসলাম? এই রাগ কি ইসলামের রাগ? নাকি জাহিলিয়াতের রাগ? আপনি আপনার বাপের সাথে নন, আপনার ভাইয়ের সাথে নন, আপনার সমাজের সাথে নন, আপনি অভিমানি, আপনি আলাদা- এই যে চিন্তা, এই চিন্তা কি আদৌ কল্যাণের চিন্তা? আদৌ ইসলামের চিন্তা? না জাহিলিয়াতের রাগ, জাহিলিয়াতের অভিমান, জাহিলি আপোষহীনতা?

    শয়তান এভাবেই জাহিলি রাগ, জাহিলি অভিমান, জাহিলি আপোষহীনতা মানুষের মনে জাগিয়ে দেয়। এভাবে ভাগবিভক্তি সৃষ্টি করে, ভাঙন ধরায়, সংসার নষ্ট করে। সে মনে করছে সে হকের প্রশ্নে অটুট, আপোষহীন; কিন্তু আসলে সে শয়তানের প্ররোচনায় পতিত, জাহিলিয়াতে পতিত। সে বুঝতে পারছে না। ভাই, আলাদা হয়ে যাওয়া সহজ, মিলে থাকা সহজ না। শো কোপে নাঙল, এক কোপে চেলি। আপনারা নিজেরাই সাক্ষি- এ ধরনের লোকের কোনো বন্ধু থাকে না। এরা কারও সাথে বেশি দিন মিলে থাকতে পারে না। ঘুরেফিরে দেখবেন: তার দৃষ্টিতে সে রাইট, বাকি সব রং।

    আপনি একাত্তরকে প্রশ্ন করেন: আমরা যে আলাদা হয়ে গেলাম, এটাই কি ছিল অধিকার আদায়ের একমাত্র সমাধান? এটাই কি ছিল বিবেকের ফায়সালা? এটাই কি ছিল শরীয়তের শিক্ষা? নাকি এটা জাহিলি রাগ? জাহিলি অভিমান?

    এই জাহিলি আপোষহীনতা আমাদের ধ্বংস করেছে। এর কারণে আমরা কখনই আর এক হতে পারি না, মিলে থাকতে পারি না। বাপে-পুতে মিলতে পারি না। ভাইয়ে ভাইয়ে মিলে থাকতে পারি না। এ কারণে ধর্মের ইস্যুতেও আমরা এক হতে পারি না; যত মুখ তত দল। কেউ কাউকে মানতে রাজি না, কেউ কারও অধীনে চলতে রাজি না। এই বৈশিষ্ট্য আমাদের ধ্বংস করেছে। এই ‘জাহিলি আপোষহীনতা’ আমাদের শেষ করেছে।

    প্রিয় ভাই, স্পষ্ট করে বুঝুন কোনটা ইসলাম আর কোনটা জাহিলিয়াত। সহনশীলতা শিখুন। এক হয়ে থাকতে শিখুন। নিজেকে বিসর্জন দিতে শিখুন। অন্যের অধীন হয়ে চলতে শিখুন। এই অন্যকে মেনে চলা, অন্যের অধীন হয়ে চলার গুণটা আমাদের নাই। অন্যকে নেতা মানা, অন্যের আনুগত্য করার গুণটা আমাদের নাই। ছোট ছোট ইস্যুক পুঁজি করে আমরা আলাদা হয়ে যাই। অথচ আল্লাহ তাআলা আমাদের এক থাকতে বলেছেন। এক আমীরের অধীনে গোটা বিশ্বের সকল মুসলিম এক হয়ে থাকতে আদেশ দিয়েছেন। এই যদি হয় আপনার ধৈর্য আর সহনশীলতা তাহলে আপনি কিভাবে একজনের অধীনে থাকবেন? আপনি তো বিভেদ সৃষ্টি করবেন। আর নাম দিবেন: আপনি আপোষহীন। এই আপোষহীনতাই শয়তান চায়! এটি ইসলাম নয়, এটি জাহিলিয়াত।

    প্রিয় ভাই, শুনতে খারাপ লাগলেও বলতে চাই: একাত্তর আমাদের জাহিলিয়াত। এই জাহিলিয়াতের শাস্তি আমরা এখনও বয়ে বেড়াচ্ছি। আমাদের যদি বোধোদয় হয়, জাহিলিয়াতকে জাহিলিয়াত বলে স্বীকার করতে পারি- তাহলেই আমাদের পরিত্রাণ সম্ভব। নতুবা এই একাত্তরকে পুঁজি করে যে চেতনা ব্যবসা চলছে তা কোনোদিন বন্ধ হবে না। আমরা যদি আমাদের জাহিলিয়াতকে চিনতে না পারি তাহলে এর শাস্তি আমরা পেতেই থাকবো।

    তাছাড়া যারা স্বাধীনতার নামে বিদ্রোহের ঘোষণা দিয়েছিল- তারা কি শরীয়তের নির্দেশ ফলো করে দিয়েছিল? তারা কি কুরআন সুন্নাহ খুঁজে দেখেছিল? তারা কি উলামাদের ফতোয়া নিয়েছিল? শরীয়াহকে এড়িয়ে যাওয়াই তো বরং স্বয়ং এক মস্ত জাহিলিয়াত। এ কারণে দেখতে পাবেন: আলেম উলামারা সাধারণভাবে পাকিস্তান থেকে আলাদা হওয়ার বিপক্ষে ছিল। এমনকি দেশের জন-মানুষও এই রকম চায়নি। তারা অধিকার চেয়েছে কিন্তু আলাদা হতে চায়নি। যারা স্বাধীনতার সংগ্রামের ডাক দিয়েছে তারাই মূলত এই মুসলিম জাতিকে বিভক্ত করেছে। অনেকে আবেগে এই ডাকে যোগ দিয়েছে। প্রকৃত অর্থে সত্য তিতা হলেও সত্য: তারা শরীয়াহর নির্দেশ জেনে এ কাজটি করেনি।

    অতএব, কল্যাণ হবে যদি আমরা আমাদের জাহিলিয়াতকে জাহিলিয়াত মেনে নিই। হাঁ, আমাদের মাঝে প্রতিবাদী যে এক বৈশিষ্ট্য ছিল, সেটি আমরা ধরে রাখবো। সেটিকে আমরা কাজে লাগাবো। তবে বিবেককে সামনে রেখে। শরীয়াহকে সামনে রেখে। নতুবা প্রতিবাদ হয়ে যাবে জাহিলিয়াত।


  • #2
    প্রিয় ইলম ও জিহাদ ভাই, ৭১ যদি জাহিলিয়াত হয়, তাহলে এই জাহিলিয়াতে যারা হতাহত হয়েছেন, তাদের বিধান কি? শরীয়াহর আলোকে সুস্পষ্ট করবেন আশা করি। আল্লাহ আপনার ইলমী খেদমতকে কবুল করুন। আমীন
    ‘যার গুনাহ অনেক বেশি তার সর্বোত্তম চিকিৎসা হল জিহাদ’-শাইখুল ইসলাম ইবনে তাইমিয়া রহ.

    Comment


    • #3
      অতএব, কল্যাণ হবে যদি আমরা আমাদের জাহিলিয়াতকে জাহিলিয়াত মেনে নিই। হাঁ, আমাদের মাঝে প্রতিবাদী যে এক বৈশিষ্ট্য ছিল, সেটি আমরা ধরে রাখবো। সেটিকে আমরা কাজে লাগাবো। তবে বিবেককে সামনে রেখে। শরীয়াহকে সামনে রেখে। নতুবা প্রতিবাদ হয়ে যাবে জাহিলিয়াত।
      চমৎকার লিখেছেন প্রিয় ভাই! আল্লাহ তা’আলা আপনার ইলম ও আমলে বারাকাহ দান করুন, আমীন।

      Comment

      Working...
      X