Announcement

Collapse
No announcement yet.

নতুন আঙ্গিকে সাইবার সিকিউরিটি এক্ট - আড়ালে ইসলাম দমন প্রকল্প

Collapse
X
 
  • Filter
  • Time
  • Show
Clear All
new posts

  • নতুন আঙ্গিকে সাইবার সিকিউরিটি এক্ট - আড়ালে ইসলাম দমন প্রকল্প


    বাংলাদেশ সরকার সম্প্রতি একটি আইনের খসড়া প্রস্তাব করেছে যেখানে টেলিযোগাযোগ ব্যবস্থার মাধ্যমে ধর্মীয়/সাম্প্রদায়িক বিদ্বেষ ছড়ালে সর্বোচ্চ পাঁচ বছর কারাদণ্ড বা অনধিক নিরানব্বই কোটি টাকা জরিমানার কথা আছে। সংবাদসূত্রগুলো এটিকে “Bangladesh Telecommunication (Amendment) Ordinance, 2025”-এর খসড়া হিসেবে প্রকাশ করেছে।

    এখানে সমস্যাগুলো কী কী আসুন একটু সংক্ষেপে দেখি। “সাম্প্রদায়িক বিদ্বেষ” একটি Context-dependent বিষয়। কোনো বক্তব্য কবে, কোথায়, কোন উদ্দেশ্যে, কাদের বিরুদ্ধে, কতটা আক্রমনাত্মকভাবে ও কতটা বাস্তব ক্ষতির সম্ভাবনা নিয়ে বলা হয়েছে এগুলো বিবেচনা ছাড়া কোনো বক্তব্যকে ফৌজদারি অপরাধ বানালে সেটি ভিউপয়েন্ট-ডিসক্রিমিনেশন হয়ে যায়, অর্থাৎ যে মতটা রাষ্ট্রের অপছন্দ সেটাকেই অপরাধ সাব্যস্ত করার অবারিত সুযোগ তৈরি হয়।

    বিদ্যমান রাষ্ট্রকাঠামো যেহেতু সেক্যুলার সেহেতু ইসলামি আইনের প্রসঙ্গ এখানে অবান্তর। তাই আমি এটাকে বর্তমান সেক্যুলার বিশ্বের দৃষ্টিকোণ ও নীতি থেকেই সমালোচনা করছি।

    আন্তর্জাতিক মানবাধিকার কাঠামোয় Rabat Plan of Action নামে একটা ফর্মুলা আছে। এই ফর্মুলা ছয়টি মানদণ্ডে থ্রেশোল্ড-টেস্ট দেয়:
    ১. প্রেক্ষিত,
    ২. বক্তার অবস্থান/প্রভাব,
    ৩. উদ্দেশ্য (intent),
    ৪. বক্তব্যের বিষয়বস্তু-ভাষা,
    ৫. প্রসার-মাত্রা এবং
    ৬. তাৎক্ষণিক ক্ষতির সম্ভাবনা/সম্ভাব্যতা।
    এই ছয় মানদণ্ডে বিশ্লেষণ ছাড়া কারো কোনো বক্তব্যকে “বিদ্বেষ” সংজ্ঞা দেওয়া মোটেই গ্রহণযোগ্য নয়।

    আরও এক ধাপ কড়া মানদণ্ড রয়েছে Brandenburg test-এ। কোনো বক্তব্যকে সাম্প্রদায়িক সহিংসতা বা আইনভঙ্গের দায়ে দোষী সাব্যস্ত করতে হলে তৎক্ষণাত সহিংসতা ঘটানোর বাস্তব আশংকা থাকতে হয়। এমন উত্তেজনা ও বাস্তবতা না থাকলে সেটাকে শাস্তিযোগ্য অপরাধ বলা যায় না।

    আইনের এতসব ব্যাখ্যার প্রয়োজনীয়তা এসেছেই মূলত সরকার যেন আইনকে নিজের ইচ্ছেমতো অপব্যবহার করতে না পারে। এই থ্রেশেল্ডগুলো থাকলে সরকারের “অপছন্দের কথা” দমনের সুযোগ কমে, এবং সত্যিই যদি উসকানির মতো কিছু থাকে তা ধরা পড়ে।

    বাংলাদেশে "সাম্প্রদায়িক বিদ্বেষ" এর শাস্তি নির্ধারণে অন্তত এই দুটো রেফারেন্সকে স্ট্যান্ডার্ড হিসেবে গ্রহণ না করলে খসড়া আইনের ব্যাখ্যা অনিবার্যভাবে রাষ্ট্রের স্বেচ্ছাচারীতায় পরিণত হয়ে পড়বে।
    ...

    এবার আসি ৯৯ কোটি টাকা জরিমানার প্রশ্নে।

    এখানে ন্যায্যতার প্রশ্নে অবশ্যই রাষ্ট্রের মানুষের অর্থনৈতিক বাস্তবতা টানা প্রয়োজন।

    গ্রামে একটা প্রবাদ আছে, যে- পেটে থাকলে পিঠে সয়। যে রাষ্ট্র জনগণের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পারে না, উলটো জনগণকে নিরাপত্তাহীন করে তোলে, যে রাষ্ট্র জনগণকে আর্থিক নিরাপত্তা দেয় না, উলটো তার পকেট কাটতে সিদ্ধহস্ত, সেই রাষ্ট্র এসে যখন ৯৯ কোটি টাকা জরিমানার আইন শোনায় তখন জনগণের উচিৎ সেই ক্ষুধার্ত নারীর মতো আচরণ করা, যার স্বামী তার ক্ষুধা নিবারণ না করে পাড়ার মোড়ে বসে তাস খেলে, কিন্তু স্ত্রী কথা না শুনলে মারতে আসে। সেই নারী যেমন ডাল ঘুটনি নিয়ে স্বামীর উপর আক্রমণ করে বসে, জনগণের উচিৎ এসব পণ্ডিতদের তেমন একটু শিক্ষা দেওয়া।

    UBS-এর Global Wealth Databook ও সংশ্লিষ্ট তথ্যসূত্র বলছে, বাংলাদেশের প্রতি প্রাপ্তবয়স্ক মানুষের মাথাপিছু গড় নিট সম্পদ হলো প্রায় US $3,842 বা ৪–৫ লক্ষ টাকা। একই সময়ে সম্পদবৈষম্যের চিত্র হলো দেশের ৫০% মানুষ মিলে দেশের মোট সম্পদের মাত্র প্রায় ৫% ধারণ করে।
    অর্থনৈতিক অবস্থার এই পরিসংখ্যানের সঙ্গে “অনধিক ৯৯ কোটি টাকা জরিমানা” প্রস্তাবনা যে বা যারা করেছেন তাদেরকে দেশীয় পাগলা গারদে রাখা উচিৎ না আন্তর্জাতিক পাগলা গারদে সে সিদ্ধান্ত আমি দরিদ্র জনগোষ্ঠীর বিবেচনার হাতে ন্যস্ত করতে চাই।


    ৯২% মুসলমানদের বিশেষ সংকট:

    পৃথিবীর কোনো সেক্যুলার রাষ্ট্রের সাথে কোনো ধর্মের সাধারণত সংঘাত হয় না, একমাত্র ইসলাম ও মুসলমান ছাড়া। কারণ, অন্যান্য ধর্মগুলো কেবলই কিছু আচারসর্বস্ব স্পিরিচুয়ালিটি বৈ কিছু নয়, বিপরীতে ইসলাম একটা পূর্ণাঙ্গ জীবনব্যবস্থা। ইসলাম রাষ্ট্রকে চ্যালেঞ্জ করে এবং ইসলামী রাষ্ট্রব্যবস্থা দ্বারা প্রতিস্থাপন করতে চায়। একারণে সেক্যুলার রাষ্ট্র মানেই হলো ইসলাম ও মুসলমানদের শত্রু এবং বিপরীতে অন্যান্য সব ধর্মের বন্ধু। তাই ইসলাম ও মুসলমানদের দমন করার জন্য রাষ্ট্র এমন বিভিন্ন কভারের অধীনে দমনমূলক আইন প্রণয়ন করতে চেষ্টা করে। রাষ্ট্র অন্যান্য ধর্ম থেকে মুসলমান বানালে ক্ষিপ্ত হয়, কারণ এতে তার শত্রু বাড়ে, কিন্তু মুসলমান থেকে খ্রিস্টান/অন্যধর্মী বা নাস্তিক বানালে রাষ্ট্র তাদের সহযোগিতা করে, কারণ এতে সেক্যুলার রাষ্ট্রের শত্রুর সংখ্যা কমে।

    কুরআন অন্যান্য ধর্মাবলম্বীদের পবিত্র বিষয়কে গালি দিতে নিষেধ করে। কারণ তার প্রতিক্রিয়ায় তারা অজ্ঞতায় আল্লাহকে গালি দিতে পারে; উদ্দেশ্য হলো ফিতনা-রোধ ও সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি রক্ষা। আবার একই কুরআন বলে, “বলো, সত্য তোমার রবের পক্ষ থেকে, তুমি সংশয়বাদী হইও না”। অর্থাৎ ইসলামের বিপরীতে অন্য সব ধর্ম মিথ্যা ও বাতিল। সেসব ধর্মের অসারতা এবং তাদের কাছে ইসলামের শ্রেষ্ঠত্ব তুলে ধরা মুসলমানদের উপর একটি ধর্মীয় দায়িত্ব।

    আমাদের সকল নবি-রাসূলগন এই মহান কাজ করেছেন। এখন এই সেক্যুলার রাষ্ট্র কি মুসলমানদের এই কাজে বাধা দিতে চায়?
    ...

    সুন্নাহ'য় “জালিম শাসকের সামনে সত্য কথা”কে শ্রেষ্ঠ জিহাদ বলা হয়েছে। অর্থাৎ ইসলাম দুইটি ভারসাম্য একসাথে ধরে: সহিংসতা-উসকানি নিষিদ্ধ, কিন্তু ন্যায়ের কথা বলা অপরাধ তো নয়ই বরং আবশ্যক।

    ন্যায় তথা আদল প্রতিষ্ঠার জন্য শাস্তির আইন করতে হলে সেখানে উদ্দেশ্য, ক্ষতির সত্যিকার সম্ভাবনা, ব্যক্তির ক্ষতি করার সক্ষমতা ইত্যাদি অনেক কিছুই পর্যালোচনা করতে হবে, মন চাইলেই যত্রতত্র আইন প্রয়োগ করা যাবে না।

    এই দর্শন Rabat-এর ছয় মানদণ্ডের সঙ্গে নীতিগতভাবে সামঞ্জস্যপূর্ণ—কারণ এখানেও উসকানি-ঘটিত বাস্তব ক্ষতিই কেন্দ্রবিন্দু, কেবল বক্তব্য নয়।
    খসড়া আইনের সবচেয়ে বড় ভয়টি এখানেই। সংজ্ঞা অস্পষ্ট রেখে রাষ্ট্র নিজেই যদি “বিদ্বেষ” নির্ধারণ করে, তবে সমালোচনাই হবে টার্গেট এবং আইনকে ব্যবহার করা হবে রাষ্ট্রের অপছন্দের শ্রেণীকে দমন করার জন্য এবং অবধারিতভাবে তারা হলো মুসলমান জনগোষ্ঠী। এরপর এই আইন প্রয়োগ হবে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে। যে কোনো রাজনৈতিক, ধর্মীয় বা বুদ্ধিবৃত্তিক আপত্তিকে “সাম্প্রদায়িক” বলে দমন করার আইনি শর্টকাট তৈরি হয়ে যাবে। যেখানে থ্রেশোল্ড-টেস্ট সুস্পষ্ট নয়, সেখানে আইন দ্রুতই শাসকের মর্জি হয়ে ওঠে, সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি রক্ষার উপায় হয়ে ওঠে না।

    জনগণকে দমন করার জন্য পর্যাপ্ত আইন ইতিমধ্যেই রাষ্ট্রের হাতে ছিলো। হাসিনা বিরোধী রাজনৈতিক দলের নেতাদের ফাসির রশিতে আইন দিয়েই ঝুলিয়েছিল। এখন কি রাষ্ট্র হাসিনার চেয়ে আরও বড় ফ্যাসিস্ট তৈরির উদ্যোগ নিচ্ছে?​


    ~~ফেসবুক থেকে সংগৃহীত~~
    বছর ফুরিয়ে যাবে এতো রিসোর্স আছে https://gazwah.net সাইটে

  • #2
    ঠিক বলেছেন। দেশের ৬০% জনগণ যেখানে সংসারের খরচ সামলাতে দিশেহারা হয়ে যায়। যেখানে ১৫% পথশিশু বা গৃহহীন মানুষজন ১ বেলা খাবার যোগার করতে মানুষের কাছে হাত পাততে হয়। সেখানে মানুষের গড় আয় ৪-৫ লক্ষ টাকা বলতে সেইসব সার্টিফিকেট নামধারী শিক্ষিত, মূর্খ, বিবেকহীন লোকদের লজ্জা তো দূরের কথা, মিডিয়ায় বড় বড় কথা বলার আগে একবারও ভাবে না।
    যে দেশে দুর্নীতিগ্রস্থ সরকারি, বেসরকারি বা আমলাদের টাকা খরচ করার জায়গা থাকে না, যে দেশে সরকার জনগণকে নিরবভাবে মারার পরিকল্পনা করে, যে দেশে রাস্তার পথের ওই শিশুটা সারাদিন না খেয়ে রাতে মায়ের কাছে কান্নাকাটি করে আর ওই মা নিরবে কাঁদে। তারা কিভাবে বুঝবে সেই মায়ের কষ্ট, তারা কিভাবে বুঝবে সেই বেকার ছেলের কষ্ট, তারা কিভাবে বুঝবে সেই বৃদ্ধের কষ্ট ; যখন তাকে না চাইতেও ভিক্ষা করতে হয়৷
    তারা তো জনগণের টাকার এসি গাড়িতে চড়ে, বিশাল বড় বাড়িতে থাকে। তাদের মন পাথরের ন্যায় শক্ত হয়ে গিয়েছে।
    মহান আল্লাহ আমাদের বুঝার তৌফিক দান করুন। আমিন।
    হয় শরিয়াহ, নয় শাহাদাহ

    Comment

    Working...
    X