Announcement

Collapse
No announcement yet.

পাঠচক্র- ৪৪ || ইসলাম ও গণতন্ত্র ।। মাওলানা আসেম ওমর রহিমাহুল্লাহ।। চতুর্থ পর্ব

Collapse
This is a sticky topic.
X
X
 
  • Filter
  • Time
  • Show
Clear All
new posts

  • পাঠচক্র- ৪৪ || ইসলাম ও গণতন্ত্র ।। মাওলানা আসেম ওমর রহিমাহুল্লাহ।। চতুর্থ পর্ব

    আবাবিল প্রকাশন মিডিয়া পরিবেশিত
    ইসলাম ও গণতন্ত্র
    ।।মাওলানা আসেম ওমররহিমাহুল্লাহ।।
    এর থেকে– চতুর্থ পর্ব


    দ্বিতীয় অধ্যায়

    গণতন্ত্রের আলোচনা


    গণতন্ত্র সম্পর্কে ভারসাম্যপূর্ণ বিতর্কের প্রয়োজনীয়তা

    গণতন্ত্রের ইসলামী ও অনৈসলামী হওয়ার বিতর্ক নতুন কোনো বিষয় নয়। গণতন্ত্রের জন্মলগ্ন থেকেই ওলামায়ে কেরাম এ সম্পর্কে লেখালেখি আরম্ভ করেছেন। তবে আমাদের যুগে এসে এই বিতর্কের পালে ব্যাপকভাবে হাওয়া লেগেছে। গণতন্ত্র সম্পর্কে চিন্তা ও মতামতে পারস্পারিক দ্বন্দ্বাত্বক মতের অধিকারী দল আমাদের সম্মুখে এসেছে। এক দল শরীয়তের আলোকে গণতন্ত্রকে কুফরি বলেন এবং গণতন্ত্রের কাজে অংশগ্রহণ করাকে সঠিক মনে করেন না । আর অন্য দলের একটি অংশ এতে শাখাগত সংযোজন করে এটাকে ইসলামীকরণ করতে প্রাণান্তকর চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে৷ আরেকটি অংশের বক্তব্য হল, ইসলামই দুনিয়াকে গণতন্ত্রের শিক্ষা দিয়েছে। পশ্চিমারা ইসলাম থেকেই গণতন্ত্রের শিক্ষা গ্রহণ করেছে। সারকথা হল, দ্বিতীয় দলের দর্শন হল, এই যুগে ইসলামী বিপ্লব এবং মুহাম্মাদি শরীয়ত বাস্তবায়নের কার্যক্রম ও তৎপরতা গণতন্ত্রের মাধ্যমে করাই সঠিক পন্থা।

    যে কোনো শিক্ষার্থীর জন্য এই ইখতিলাফ ও মতানৈক্যে একক সিদ্ধান্তে উপনীত হওয়া কিংবা কোনটা হক কোনটা বাতিল, কার চিন্তাধারা ইসলামী আর কার চিন্তাধারা অনৈসলামী- এর ফয়সালা করা কঠিন হয়ে যায়। এই জটিলতা আরও বেড়ে যায় যখন দেখা যায় গণতন্ত্রের কুফরির প্রবক্তার মধ্যে শীর্ষ আলেমগণও রয়েছেন। যাদের ইলমী ইসতিদাদই নয় বরং তাদের তাকওয়া ও সততা- সাধুতারও কসম করা যায়। কিন্তু এটাও বাস্তবতা যে অপর পক্ষে যারা এটাকে ইসলামী সাব্যস্ত করেন এবং এতে অংশগ্রহণ করাকে জরুরি মনে করেন, এদের মধ্যেও এমন সব ব্যক্তিত্ব রয়েছেন, যাদের অনুসারী প্রথম দলের চেয়ে কোনো অংশে কম নয়। এদের মধ্যেও এমন আহলে ইলম রয়েছেন, যাদের ইলমী মাকাম ও সততা-সাধুতা সবাই স্বীকার করেন।

    যে কোনো বিতর্কে যার নিকট দলিল-প্রমাণ বেশি থাকবে অথবা শরীয়তের আলোকে যে দলের কথা হক ও সত্য প্রমাণিত হবে- এটা একটা ঐতিহাসিক বাস্তবতা যে- মানুষ সিদ্ধান্ত নেয়ার ক্ষেত্রে এসব দলিল-প্রমাণের চেয়েও যে বিষয়টাকে অধিক গুরুত্ব দেয় তা হল “জাতির বড়রা" কাদের সাথে রয়েছেন। এমনকি নবীগণের মত মহান ও পবিত্র ব্যক্তিত্বগণকেও এ ধরনের জটিলতার সম্মুখীন হতে হয়েছে। অথচ দলিল-প্রমাণের আলোকে দেখা হলে তো নবীগণের হক ও সত্যবাদি হওয়ার ক্ষেত্রে কারও সন্দেহ হতে পারে না । নবীদের উপর তো সরাসরি ওহী নাযিল হয়ে থাকে।

    সুতরাং এতে কোনো সন্দেহ নেই যে, মানুষের, সম্মুখে যখন কোনো দাওয়াত পেশ করা হয়, গ্রহণ করা বা না করার ক্ষেত্রে তারা বড়দের দিকে দেখে। বড়রা যদি সেই দাওয়াত গ্রহণ করেন, সমাজের সাধারণ মানুষও তা গ্রহণ করে। আর সমাজের বড়রা যদি সেই দাওয়াত প্রত্যাখ্যান করেন, তখন দাওয়াতদাতারা প্রথমেই হোঁচট খায়, জটিলতার সম্মুখীন হয়। এমতাবস্থায় দাঈরা বারবার যে প্রশ্ন ও আপত্তির সম্মুখীন হয়ে থাকেন তা হল, আপনি বেশি বোঝেন নাকি বড়রা বেশি বোঝেন। আপনার কথা যদি হকই হত তবে আমাদের বড়রা কেনো গ্রহণ করছেন না?

    কিন্তু 'জাতি'র বড়রা কি সব সময় হকের উপর থাকেন? যুবকরা কি সব সময় ভ্রান্তির শিকার হয়ে থাকে? তাদের কাজ ও কর্মপদ্ধতি কি কখনোই সঠিক হয় না? এটা কি ইসলামী শরীয়তের মানদণ্ড যে- বড় ও ছোটদের মধ্যে মতানৈক্য দেখা দিলে বড়দের কথাই গ্রহণযোগ্য এবং আমলযোগ্য হবে? আর হককে কেবল এজন্যই প্রত্যাখ্যান করা হবে যে সমাজের বড়রা ও বিখ্যাতজনেরা তা গ্রহণ করেননি? হক প্রত্যাখ্যানকারীরা কি এ ধরনের আপত্তি পূর্ব থেকেই করে আসছে না? সর্বশেষ নবী মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের দুশমনরাও এমন আপত্তি করত ।

    وَقَالُوا لَوْلَا نُزِّلَ هَٰذَا الْقُرْآنُ عَلَىٰ رَجُلٍ مِّنَ الْقَرْيَتَيْنِ عَظِيمٍ

    আর তারা বলল, “এ কুরআন কেন দুই জনপদের (মক্কা ও তায়েফ) মধ্যকার কোন মহান ব্যক্তির উপর নাযিল করা হল না'? [সূরা যুখরুফ : ৩১]

    আল্লাহ তায়ালা তিরস্কারের ঢঙে উত্তর দেন-

    أَهُمْ يَقْسِمُونَ رَحْمَتَ رَبِّكَ

    আপনার রবের রহমতের বন্টন কি এরা (কাফের) করে? [সূরা যুখরুফ : ৩২]

    ফয়সালা কি কাফেররা করবে, যে আল্লাহর রহমত কাকে দান করা হবে? আল্লাহর রহমতের উপযুক্ত কে? তারা যাকে বড় মনে করে সে বড়, নাকি আল্লাহ যাদেরকে বড় মনে করেন এবং বড় করতে চান, সে বড়? তাদের কাছে বড়'র মানদণ্ড হল দুনিয়া। দুনিয়ার সুখ্যাতি, চাকচিক্য, বিশাল বিশাল উপাধি এবং টিভি, পত্রপত্রিকা ও কনফারেন্সে যাদের মুখ বেশি দেখা যায়, আল্লাহ তায়ালা এদের মধ্যে দুনিয়া বণ্টন করে দিয়েছেন। আল্লাহর রহমত তাদের ধরাছোয়ার বাইরে। আল্লাহ যাকে পছন্দ করেন তাকেই কেবল তাঁর রহমত দান করেন।

    এমনিভাবে নবীদের দাওয়াতের ইতিহাস খুললে দেখা যাবে বাস্তবে এই আপত্তির কোনো ওজন নেই। কারণ পৃথিবীতে যুগে যুগে যত নবী এসেছেন এবং দাওয়াতের কাজ শুরু করেছেন, সর্বপ্রথম তাদের সমাজের 'বড়'রাই তাঁর বাধা দিয়েছে। প্রতিবন্ধক হয়েছে। তাদের দৃষ্টিতে নবীগণ কম বয়েসেরই হতেন। নবীগণের বিরোধিতার ক্ষেত্রে সময়ের বিখ্যাত নির্ভরযোগ্য ব্যক্তিগণই সামনের সারিতে থাকত। অর্থ, মেধা, খ্যাতি এবং জনবলের দিক থেকে সমাজে নবীদের বিরোধীদের মর্যাদা অনেক বেশি হত। আর যারা নবীদের দাওয়াত সর্বপ্রথম গ্রহণ করতেন, তাদের সম্পর্কে এসব বড়দের ভাষ্য হল-

    وَمَا نَرَاكَ اتَّبَعَكَ إِلَّا الَّذِينَ هُمْ أَرَاذِلُنَا

    তোমাকে কেবল তারাই অনুসরণ করে, (মর্যাদায়) যারা আমাদের চেয়ে ছোট। [সূরা হুদ : ২৭]

    অনেক সময় এই বড়রা ঈমানদারদেরকে বেওকুফও বলত-

    قَالُوا أَنُؤْمِنُ كَمَا آمَنَ السُّفَهَاءُ ۗ

    মোনাফেকরা বলত, আমরা কি এসব বেওকুফদের মত ঈমান আনব। [সূরা বাকারা : ১৩]

    হযরত ইবরাহীম আলাইহিস সালাম যখন মূর্তি ভাঙ্গেন তখন তার বয়স )ইবনে কাসিরের বর্ণনা অনুযায়ী) ষোল বছর ছিল। আর চলমান জীবনব্যবস্থার কুফরি হওয়ার বিষয়টি আল্লাহ তায়ালা তাকে আরও আগে স্পষ্ট করে দিয়েছিলেন।

    এবার চিন্তা করুন, একদিকে “যুবক' (বড়রা যাদেরকে আবেগীও বলেন), আর অন্যদিকে জাতির মেধাবী, বিচক্ষণ ও অভিজ্ঞ প্রবীণ ব্যক্তিগণ। কিন্তু কার বুকের পাটা রয়েছে যে, খলিলুল্লাহকে আবেগী তরুণ বলে তার কাজকে ভুল বলবে আর জাতির প্রবীণদের কাজকে সঠিক বলবে?

    ইমাম ইবনে কাসির রহমাতুল্লাহি আলাইহি তার তাফসীরে আবদুল্লাহ বিন আব্বাস রাযিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমার এই হাদীস বর্ণনা করেছেন-

    “আল্লাহ তায়ালা প্রত্যেক নবীকে যুবক বয়সে প্রেরণ করেছেন। আর আল্লাহ তায়ালা যেই আলেমকে ইলমে ভূষিত করেন, যৌবনকালেই ভূষিত করেন." [তাফসীরে ইবনে কাসির]

    হযরত নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের পবিত্র জীবনী অধ্যায়ন করলে আমরা দেখতে পাই যে, তিনি তাঁর সাহাবায়ে কেরামকে এ বিষয়টি খুব ভালোভাবে বুঝিয়ে ছিলেন যে, হক ও বাতিলের মাপকাঠি ছোট বড় নয়, হকের মাপকাঠি হল শরীয়তে মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)।

    এজন্য আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাতের নিকট সাহাবা রাযিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম আজমাঈন মিয়ারে হক, হকের মাপকাঠি। অথচ তাদের অনেকে বয়সে ছোট ছিলেন, অনেকে বড় ছিলেন। এর কারণ সেই হক যা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এসব মহান ব্যক্তিত্তগণকে শিখিয়েছিলেন।

    হযরত সাহাবায়ে কেরামের জীবনী খুলে দেখুন। আল্লাহ কম বয়সী অনেক সাহাবীকেই ইলমের দৌলত দান করেছিলেন। ইখতিলাফি মাসআলাগুলোতে বড় বড় সাহাবীরা তাদের দিকে রুজু করতেন। তাদের মতকে গ্রহণ করতেন।

    হানাফী মাসলাকে অসংখ্য মাসআলা এমন রয়েছে, যাতে উস্তাদের (ইমাম আবু হানিফা রহমাতুল্লাহি আলাইহি) মতের বিপরীতে শিষ্যের (ইমাম আবু ইউসুফ ও মুহাম্মাদ রহমাতুল্লাহি আলাইহি) মত অনুযায়ী আমল করা হয়। অন্যান্য মাসলাক ও মাযহাবেও একই চিত্র দেখতে পাবেন। এমনকি আহলে হাদীসদের বেলায়ও এমন চিত্র দেখতে পাবেন।

    সুতরাং এটি কি পরিমাণ অন্যায় যে আজ আমরা হক বিষয়কে জানা সত্ত্বেও শুধু এজন্য তা প্রত্যাখ্যান করছি যে, “আমাদের বড়রা” এই হকের সাথে নেই। তবে কি আল্লাহর রহমতের বণ্টনের দায়িত্ব মানুষ নিজ হাতে তুলে নিয়েছে? কিয়ামতের দিন কি এরা আল্লাহর সামনে কোনো হুজ্জত কায়েম করতে পারবে? প্রমাণ উপস্থাপন করতে পারবে? বড়দের অনুসরণ করার যুক্তি ও দলিল কি তাদের কোনো কাজে আসবে সেদিন?

    এজন্য সুধী পাঠকবর্গের নিকট আমার বিনীত আবেদন, আপনারা এই বিতর্ক পাঠ করার পূর্বে দয়া করে কিছুক্ষণের জন্য নিজেদের মাথায় বড়দেরকে আনবেন না, যারা বর্তমানে গণতন্ত্রের পক্ষে ও বিপক্ষে অবস্থান নিয়েছেন। বরং উভয় পক্ষের দলিল প্রমাণ নিরপেক্ষভাবে অধ্যায়ন করুন। যাতে হক কবুল করার ক্ষেত্রে হঠকারিতা ও পক্ষপাতিত্ব প্রতিবন্ধক না হয়। যেমন আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেন-

    وَلَا يَجْرِمَنَّكُمْ شَنَآنُ قَوْمٍ عَلَىٰ أَلَّا تَعْدِلُوا ۚ اعْدِلُوا هُوَ أَقْرَبُ لِلتَّقْوَىٰ ۖ

    কোন কওমের প্রতি শক্রতা যেন তোমাদেরকে কোনভাবে প্ররোচিত না করে যে, তোমরা ইনসাফ করবে না। তোমরা ইনসাফ কর, তা তাকওয়ার নিকটতর। [সূরা মায়েদা : ৮]

    আর হযরত আলী রাযিয়ালাহু তায়ালা আনহু বলেন-

    اعْرِفْ ‌الرِّجَالَ ‌بِالْحَقِّ ‌وَلَا ‌تَعْرِفْ ‌الْحَقَّ ‌بِالرِّجَالِ

    তোমরা ব্যক্তির মাধ্যমে হক চিনো না বরং হকের মাধ্যমে ব্যক্তিকে চেনো। [মুখতাসারুত তুহফা আল ইসনা আশারিয়্যাহ]

    সেই সাথে এখানে এ বিষয়টিও স্পষ্ট থাকা চাই যে, আদবের সাথে বুদ্ধিবৃত্তিক উপস্থাপনায় সুস্পষ্ট দলিল প্রমাণ উপস্থাপন করে আকাবির আহলে ইলমের কারো কোনো ইজতিহাদী ভুল চিহ্নিত করা হলে এর দ্বারা কোনোভাবেই তার মর্যাদাহানী হয় না। আর এর দ্বারা তার ইলমী মাকামকে ছোট করে দেখাও উদ্দেশ্য হয় না। বস্তত এমনটি কাম্য হওয়া কাঙ্ক্ষিতও নয়। ইসলামের ইতিহাসে বড় বড় ইমামগণ এবং ইলমের স্তম্ভও অনেক সময় দুর্বল মত পেশ করেছেন অথবা তাদের থেকে ইজতিহাদী ভুল হয়ে গিয়েছে। এমন ক্ষেত্রে আমাদের আসলাফের পদ্ধতি এটাই ছিল যে, তারা তাদের ইলমী মাকাম এবং তাদের শান ও মর্যাদা পরিপূর্ণরূপে স্বীকার করে তাদের ভুলের উত্তম ব্যাখ্যা বর্ণনা করেছেন এবং ভুলকে ভুল হিসেবে চিহ্নিত করেছেন।

    একক কোনো মাসআলায় কোনো আলেমকে ভুল করতে দেখে তার ইলমী মাকাম এবং দ্বীন খেদমত তুড়ি মেরে উড়ে দেয়া এবং ভদ্রতার মাথা খেয়ে তার ব্যক্তিত্বকে কালিমা লেপন করতে ব্যস্ত হয়ে পড়া অথবা এর বিপরীতে নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এবং তাঁর সাহাবায়ে কেরামের পর ব্যক্তি বিশেষকে হক ও বাতিলের মানদণ্ড বানানো এবং তার ভ্রান্তি স্পষ্ট হওয়ার পরও তার প্রতিটি ভুল ইজতিহাদের অনুসরণ করা- প্রান্তিকতা মানসিকতার ফল। প্রান্তিকতা থেকে বেঁচে আসলাফের ভারসাম্যপূর্ণ পথকে আঁকড়ে থাকার মাঝেই মুক্তি। এটাই আমাদের নাজাতের কিশতি।

    আল্লামা ইবনে কাইয়্যিম রহিমাহুল্লাহ জলিলুল কদর ব্যক্তিত্বের ভুল থেকে আমলের সঠিক পদ্ধতি বুঝাতে গিয়ে বলেন-

    قد تكون منه هفوة أو زلة هو فيها معذور بل مأجور لاجتهاده. فلا يجوز أن يتبع فيها. ولايجوز أن تهدر مكانته وامامته ومنزلته في قلوب المسلمين

    জলিলুল কদর কোনো ব্যক্তিত্বের ভুলের শিকার হওয়া অথবা কোনো ক্ষেত্রে তার পদস্খলন ঘটা অসম্ভব কিছু নয়। কিন্তু (এই ভুল ও পদস্খলন যেহেতু কোনো ওজরের কারণে হয়েছে, এজন্য) তাকে মাজুর মনে করা হবে। বরং এমনও হতে পারে যে ইজতিহাদী গলতি ও ভুল হওয়ার ভিত্তিতে ইজতিহাদের একটি প্রতিদানও তিনি পাবেন। তবে হ্যাঁ, তার এই ভুলের উপর তার অনুসরণ করা জায়েয হবে না। আবার এ কারণে তার মাকাম ও মর্যাদাকে কালিমা লেপনের চেষ্টা করা এবং মানুষের অন্তরে বিদ্যমান ভক্তি-শ্রদ্ধাকে শেষ করে দেয়াও জায়েয হবে না।[1]

    এই বিষয়ের অধ্যায়নের পূর্বে সুধী পাঠকবর্গের নিকট আরও একটি দরখাস্ত রয়েছে। বইটি এখানেই বন্ধ করুন এবং অযু করে দুই রাকাত সালাতুল হাজাত পড়ুন (নফল নামায পড়ার সময় থাকলে, অন্যথায় শুধু অযু করুন।) এবং রাবেব কারীমের সামনে সিজদায় পড়ে যান। অন্তরের সমস্ত জানালা হকের জন্য খুলে দিন এবং নিজের অসহায়ত্বের কথা স্বীকার করে আল্লাহর নিকট কেঁদে কেঁদে প্রার্থনা করুন।

    হে আল্লাহ! আমি কিছুই বুঝতে পারছি না। উভয় দিকে বড় বড় ব্যক্তিত্বগণ রয়েছেন। এ অবস্থায় আমি কি করব? এ অবস্থায় আমার কি করা উচিত?

    হে আল্লাহ! আমার অন্তরে হক ঢেলে দিন এবং তা মজবুতভাবে বসিয়ে দিন। এর জন্য আমাকে গোটা দুনিয়ার সাথে লড়তে হলেও।

    হে ইবরাহীম আলাইহিস সালামের রব! আপনি যাকে মূর্তির নগরীতে সৃষ্টি করেও মূর্তি ভাঙ্গার হিম্মত ও সাহস দান করেছিলেন, অথচ তার মোকাবেলায় তার পিতা, চাচা এবং বংশের বড় বড় ব্যক্তিত্ব ও নেতাদের অবস্থান ছিল। আর তিনি ছিলেন তাঁর বড়দের দৃষ্টিতে কম বয়সি আবেগী শিশু।

    হে মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের রব! আমরা স্বীকার করছি আমাদের অন্তরে আমাদের ধর্মীয় ব্যক্তিত্বদের শ্রদ্ধা ও ভালোবাসা বিদ্যমান রয়েছে। কিন্ত আপনি আপনার হাবীব প্রিয়তম নবীর ভালোবাসা সব ভালোবাসার উপর বিজয়ী করে দিন। আর যেটা হক, যেটা সত্য- আমাদেরকে তা কবুল করার তাওফীক দান করুন। বাতিলের প্রতি ঘৃণা, বিদ্বেষ, শক্রতা ও দ্রোহ আমাদের অন্তরে সৃষ্টি করে দিন এবং এগুলোর অনুসরণ করা থেকে আমাদেরকে হেফাজত করুন।

    আপনি তো সেই সত্ত্বা, যিনি হযরত সালমান ফারসী রাযিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুকে হকের অনুসন্ধিৎসা দান করেছিলেন। তিনি বিভিন্ন জায়গায় হক সন্ধান করতে করতে ক্লান্ত হতে থাকেন। হে আল্লাহ! আপনি তো সেই সত্ত্বা, যিনি ছাড়া আর কোনো মা'বুদ ও ইলাহ নেই। হে আল্লাহ! শ্রদ্ধা-ভালোবাসা, এতাআত-আনুগত্য এবং ভয় ও আশা কেবল আপনার জন্য নির্দিষ্ট। এতে কেউই আপনার শরিক নেই। হে আল্লাহ! আমরাও বিভিন্ন দল, গ্রুপ, ফেরকা ও ব্যক্তিত্বের পিছনে পিছনে দৌড়াতে দৌড়াতে ক্লান্ত হয়ে পড়েছি। আল্লাহ! আপনি আমাদেরকে মদদ করুন। বিশেষভাবে আপনার পক্ষ থেকে আমাদেরকে রাহনুমায়ী করুন, যেমন মদদ করেছিলেন আসহাবে কাহাফকে। হে আল্লাহ! আপনি তো সেই সত্ত্বা, যিনি খালেক, আমাদেরকে সৃষ্টি করেছেন। আবার আইন ও নিয়ম-নীতিও তৈরি করেছেন আপনিই। দয়া করে আপনি এই উম্মতের প্রতি রহম করুন, করম করুন। হকের জন্য আমাদের সবার অন্তরকে উন্মুক্ত করে দিন। এই হক আমাদের নফসের জন্য যত তিক্তই হোক না কেনো। আমীন।



    [1] العمل الاسلامي بين دواعي الاجتماع ودعاة النزاع. مركز الدراسات والبحوث الاسلامية في باكستان. مع تقديم الشيخ أسامة بن لادن رحمه الله. ص64




    আরও পড়ুন​

  • #2
    হে আল্লাহ! আমরা বিভিন্ন দল, গ্রুপ, ফেরকা ও ব্যক্তিত্বের পিছনে পিছনে দৌড়াতে দৌড়াতে ক্লান্ত হয়ে পড়েছি। আল্লাহ! আপনি আমাদেরকে মদদ করুন। বিশেষভাবে আপনার পক্ষ থেকে আমাদেরকে রাহনুমায়ী করুন, যেমন মদদ করেছিলেন আসহাবে কাহাফকে।

    হে আল্লাহ! আপনি তো সেই সত্ত্বা, যিনি খালেক, আমাদেরকে সৃষ্টি করেছেন। আবার আইন ও নিয়ম-নীতিও তৈরি করেছেন আপনিই। দয়া করে আপনি এই উম্মতের প্রতি রহম করুন, করম করুন। হকের জন্য আমাদের সবার অন্তরকে উন্মুক্ত করে দিন। এই হক আমাদের নফসের জন্য যত তিক্তই হোক না কেনো। আমীন।
    বছর ফুরিয়ে যাবে এতো রিসোর্স আছে https://gazwah.net সাইটে

    Comment

    Working...
    X