Announcement

Collapse
No announcement yet.

পাঠচক্র- ৪৪ || ইসলাম ও গণতন্ত্র ।। মাওলানা আসেম ওমর রহিমাহুল্লাহ।। অষ্টাদশ পর্ব

Collapse
This is a sticky topic.
X
X
 
  • Filter
  • Time
  • Show
Clear All
new posts

  • পাঠচক্র- ৪৪ || ইসলাম ও গণতন্ত্র ।। মাওলানা আসেম ওমর রহিমাহুল্লাহ।। অষ্টাদশ পর্ব

    আবাবিল প্রকাশন মিডিয়া পরিবেশিত
    ইসলাম ও গণতন্ত্র
    ।।মাওলানা আসেম ওমররহিমাহুল্লাহ।।
    এর থেকে– অষ্টাদশ পর্ব


    কুরআনের আইন ছাড়া অন্য আইনে ফয়সালাকারী

    আদালতকে ইসলামী প্রমাণ করা



    সুতরাং এ আলোচনাটি বোঝার পর আমরা মুসলমান ভাইদের নিকট আবেদন করব, আপনারা প্রচলিত বিচার ব্যবস্থা- যা শরীয়তের আইন ভিন্ন অন্য আইনে বিচার করে আসছে- এর সম্পর্কে এ কথা বলবেন না যে, ‘আদালতগুলো তো ৭৩ এর আইনে ফয়সালা করে। আর ৭৩ এর আইন ইসলামীসুতরাং এই আদালতগুলো ইসলামী আইন দ্বারাই ফয়সালা করেএটা আল্লাহর পবিত্র সত্ত্বার বিরুদ্ধে এত বড় অপবাদ যে, আসমান ভেঙ্গে পড়বে এবং পাহাড় চূর্ণবিচূর্ণ হয়ে যাবে।

    ইমাম আবু বকর জাসসাস হানাফী রহমাতুল্লাহি আলাইহি ‘আহকামুল কুরআন’-এ এই পয়েন্টটি বর্ণনা করেছেন, যা বর্তমানের মানুষের চোখ খোলার জন্য যথেষ্ট

    যারা অইসলামী আইনকে ইসলামী প্রমাণ করার জন্য উঠেপড়ে লেগেছেন এবং অইসলামী আইনে ফয়সালাকারী আদালত সম্পর্কে বলে যে, এই আদালত ইসলামী আইনে ফয়সালা করে, তিনি বলেন-

    فَإِنْ كَانَ الْمُرَادُ جَحْدَ حُكْمِ اللَّهِ، أَوِ الْحُكْمَ بِغَيْرِهِ مَعَ الإِخْبَارِ بِأَنَّهُ حُكْمُ اللَّهِ، فَهَذَا كُفْرٌ يُخْرِجُ مِنَ الْمِلَّةِ، وَفَاعِلُهُ مُرْتَدٌّ....

    আর যদি (এই আয়াতে কুফরি ছাড়া) উদ্দেশ্য আল্লাহর আইন দ্বারা ফয়সালা করার অস্বীকৃতি অথবা কুরআন ব্যতীত অন্য আইন ছাড়া ফয়সালা করে এ কথা বলা যে, আল্লাহর আইন দ্বারা ফয়সালা করা হয়েছে, এটা (উভয় সুরত) এমন কুফরি, যা মিল্লাতে ইসলাম থেকে খারেজ করে দেয়যারা এমন করে তারা মুরতাদ[1]

    হাকীমুল উম্মত হযরত মাওলানা আশরাফ আলী থানভী রহমাতুল্লাহি আলাইহি বলেন-

    আর (মনে রেখো) যে ব্যক্তি আল্লাহর নাযিলকৃত আইন অনুযায়ী বিচার না করে শরীয়তপরিপন্থি আইনকে ইচ্ছাকৃতভাবে শরয়ী আইন বলে এবং সে অনুযায়ী বিচার করে, এমন ব্যক্তি পরিপূর্ণরূপে কাফের[তাফসীরে বয়ানুল কুরআন, সূরা মায়েদা : ৪8]

    মুফতী মুহাম্মাদ শফী রহমাতুল্লাহি আলাইহি এই আয়াতের তাফসীরে বলেছেন-

    আর মনে রেখো, যে ব্যক্তি আল্লাহর নাযিলকৃত আইন অনুযায়ী বিচার না করে শরীয়ত পরিপন্থি আইনকে ইচ্ছাকৃতভাবে শরয়ী আইন বলে এবং সে অনুযায়ী বিচার করে, এমন ব্যক্তি পরিপূর্ণরূপে কাফের[তাফসীরে মারেফুল কুরআন : ৩, সূরা মায়েদা]

    সুতরাং যারা এসব আদালতকে ইসলামী প্রমাণ করেন, তাদের ভয় করা উচিত ।



    وَمَن لَّمْ يَحْكُم بِمَا أَنزَلَ اللَّهُ এবং ফুকাহায়ে উম্মত



    কুরআন ভিন্ন অন্য আইনে ফয়সালা করার বিষয়টি ফুকাহায়ে উম্মত অতি সহজে বুঝিয়ে দিয়েছেনপাঠকবর্গের সুবিধার্থে সেগুলোও এখানে উল্লেখ করছি।


    কুফরে আকবার


    ১. কুফরে আকবারের সংজ্ঞা তো পূর্বে চলে গিয়েছে, যা. ইমাম সদরুদ্দিন ইবনে আবিল ইজ হানাফী রহমাতুল্লাহি আলাইহি বর্ণনা করেছেন৷ ইহা ব্যতীত কোনো ব্যক্তি যদি এই দর্শন ও বিশ্বাস লালন করে যে, শরীয়তের আইন অনুযায়ী এই যুগে চোরের হাত কাটা, যেনাকারীকে প্রস্তারাঘাত করা কিংবা বেত্রাঘাত করা, কুরআন- সুন্নাহর ভিত্তিতে বৈশ্বিক সম্পর্ক বজায় রাখা, কিতাল ফি সাবিলিল্লাহ করা.... উপযোগী নয়, এগুলো প্রয়োগযোগ্য নয় । অথবা এগুলো বাস্তবায়ন করাকে লজ্জা, অপমান এবং (বৈশ্বিক ভ্রাতৃত্ব) মানহনিকর মনে করে । অথবা 'হুদুদুল্লাহতে সংযোজন করাকে বৈধ মনে করে, অথবা সংযোজন করে নেয়, অথবা এমন বিশ্বাস লালন করে যে, মানব রচিত আধুনিক জীবনব্যবস্থা অধিক উপযোগী... এসব দর্শন, বিশ্বাস ও চিন্তাধারা কুফরে আকবার, যা মিল্লাত থেকে খারেজ করে দেয় । কারণ সে নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কর্তৃক আনীত শরীয়তকে মন্দ এবং গায়রুল্লাহ (মানব রচিত) শরীয়তকে (জীবন বিধান) উত্তম মনে করেছে ।

    ২. কুফরে আকবারের একটা সুরত এটাও যে, কোনো ব্যক্তি আল্লাহর আইনকেও উত্তম মনে করেকিন্তু গণতান্ত্রিক আইনকে এর চেয়েও অধিক উপযোগী মনে করে।

    . অথবা গণতান্ত্রিক জীবনব্যবস্থাকে শরীয়ত প্রবর্তনের বরাবর মনে করেদ্বিতীয় ও তৃতীয় প্রকারের হুকুম একই রকম । অর্থাৎ উভয় শ্রেণীর মানুষ কুফরে আকবার অর্থাৎ এমন কুফরিতে লিপ্ত, যা মিল্লাত থেকে খারেজ করে দেয় । কারণ আল্লাহর আইনের মোকাবেলায় অন্য আইনকে উত্তম মনে করা কিংবা তার সমান মনে করা বস্তুত আল্লাহ প্রদত্ত আইনকে প্রত্যাখ্যান করা ।

    . অথবা মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের শরীয়ত প্রবর্তন করার ক্ষেত্রে দীর্ঘ সময় ধরে টালবাহানা করা, বিরোধিতা করা অথবা অস্বীকার করা

    পবিত্র কুরআনে আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেন-

    ثُمَّ أَعْرَضَ عَنْهَا ۚ إِنَّا مِنَ الْمُجْرِمِينَ مُنتَقِمُونَ

    এই দ্বীন থেকে মুখ ফিরিয়ে নেয়। নিশ্চয় আমি অপরাধীদের কাছ থেকে প্রতিশোধ গ্রহণকারী । [সূরা সিজদা : ২২]

    এই প্রকারও কুফরে আকবারের অন্তর্ভুক্তশরীয়ত প্রবর্তন অস্বীকার, বিরোধিতা অথবা দীর্ঘ দিন টালবাহানা করা- ফুকাহায়ে কেরাম এসব গুলোর একই হুকুম বর্ণনা করেছেন। এটা ফিকাহর গ্রন্থাবলীর বিখ্যাত মাসআলা, যে কোনো মাসলাকের কিতাব ও ফতওয়াগ্রন্থে দেখে নিতে পারেনবিশেষত হযরত হাকীমুল উম্মত মাওলানা আশরাফ আলী থানভী রহমাতুল্লাহি আলাইহির এমদাদুল ফতাওয়ার সপ্তম খণ্ডে এবং মাওলানা তাকী উসমানী দামাত বারাকাতুহুমের মুসলিম শরীফের ব্যাখ্যাগ্রন্থে (تكملة فتح الملهم) এর ‘কিতাবুল ইমারাতে’ও দেখতে পারেন।

    বিখ্যাত হানাফী ফকীহ আল্লামা ইবনে নুজাইম রহিমাহুল্লাহ ‘বাহরুর রায়েক' গ্রন্থে বলেন-

    يَكْفُرُإِذَ سَحِرَ....بِأَمْرٍمِنْ أَوَا مِرِهَ...أوْ جَعَلَ لَهُ شَريْكًا

    আর সে যদি আল্লাহর কোনো একটা বিধানেরও উপহাস করে, অথবা আল্লাহর সাথে শরিক বা সমকক্ষ সাব্যস্ত করে, তবে কাফের হয়ে যাবে[2]

    মনে রাখা দরকার যে, আইন প্রণয়নে কাউকে আল্লাহর শরিক বা সমকক্ষ বানানো কুফরে আকবার, যা মিল্লাত থেকে খারেজ করে দেয়আর এখানে শুধু সমকক্ষই সাব্যস্ত করা হয়নি, বরং নাউযুবিল্লাহ (আইন প্রণয়নের) এই অধিকার পরিপূর্ণরূপে গায়রুল্লাহকে (সংসদ) দিয়ে দেয়া হয়েছে

    وكذَا يَكْفُرُ الْجَمِيعُ لِإسْتِخْفَا فِهِمْ بِالشَّرْعِ

    এমনিভাবে তারাও কাফের, যারা শরীয়তকে তুচ্ছ জ্ঞান করবে[3]

    وَلَوْ صَغَّ الْفَقِيهَ أَوْ الْعَلَوِيَّ قَا صدًا الاِ سْتِخْفَافَ بِالدِّينِ كَفَرَ

    আর শরীয়তকে অবেজ্ঞয় মনে করার কারণে ফকীহকে তুচ্ছ জ্ঞান করে, এটাও কুফরি [4]

    ভেবে দেখুন, গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় একজন আলেমের সম্মান কি আর একজন জজের মর্যাদা কি? শরীয়ত প্রবর্তনের দাবিদারদের সাথে কেমন আচরণ করা হয়? সময় সুযোগ হলে ইসলামী ধারার সাথে সম্পৃক্ত আদালতের কার্যক্রমের বিবরণ পড়ে দেখেন আদালত এবং সংসদের মাঝে এ সব ইসলামী ধারাগুলোকে কিভাবে ঝুলে রাখা হয়আদালত সংসদের দিকে ছুড়ে মারে, আর সংসদ ইসলামী নজরিয়াতি কাউন্সিলের দিকে এগুলো ইসলামের সাথে উপহাস নয়?




    কুফরে আকবারের ব্যাপক এবং সবচেয়ে ঘৃণ্য সুরত...


    কুফরে আকবারের সবচেয়ে ব্যপক, কিন্তু ভয়ঙ্কর সুরত হল, আল্লাহর শরীয়তের মোকাবেলায় আরেকটি শরীয়ত প্রণয়নযা ফ্রান্সিসি, ইংরেজী, আমেরিকান এবং অন্যান্য শরীয়তের সাথে সম্পৃক্ত ব্যবস্থার অধীনস্থ এই অধীনস্ততাকে জীবনব্যবস্থা হিসেবে প্রবর্তন করা হয়েছে এবং ফয়সালার উৎস (Auhtority) সাব্যস্ত করা হয়েছেএর উপর ফয়সালা করার অঙ্গীকার নেয়া হয়এর রক্ষা ও আনুগত্যের উপর শপথ নেয়া হয় এবং এরই উপর কাজ করা আবশ্যক করে দেয়া হয়েছেআর যারা এর বিরোধিতা করবে, বিদ্রোহ করবে, তাদেরকে হত্যা করা হালাল (আইন সম্মত)কেউ যদি চায় যে, সে আল্লাহর শরীয়তকে জীবনব্যবস্থা হিসেবে বাস্তবায়ন করবে অথবা নিজে সে অনুযায়ী জীবন যাপন করবে, রাষ্ট্রশক্তির মাধ্যমে তাকে পিষ্ঠ করা হয়।

    উল্লেখিত সুরত এমনি কুফরে আকবারের সব চেয়ে ঘৃণ্য সুরত হতে পারতকিন্তু ইবলিশ আরও পরিশ্রম করেছে এবং তার কর্মিদের আশা দিয়েছেতাদের এই অপকর্মকে তাদের সামনে সৌন্দর্যমন্ডিত করে উপস্থাপন করেছেবিধায় এই কুফরি আরও উন্নতি লাভ করেছে এবং এমন এক-সুরত লাভ করেছে, একজন কালেমাওয়ালা ব্যক্তি যার কল্পনাই করতে পারে না।



    আল্লাহর বিরুদ্ধে অপবাদ ও মিথ্যা আরোপের দুঃসাহস


    সেই নাপাক, নিন্দিত ও ঘৃণ্য সুরত হল, ইবলিসি এই জীবনব্যবস্থাকে ইসলামী ঘোষণা করা হয়েছে। যা স্পষ্ট লা শারিক আল্লাহর পবিত্র সত্তার বিরুদ্ধে জঘন্য অপবাদ ও মিথ্যাচার । কারণ এমন একটা বিষয়কে এই শয়তানরা আল্লাহর সাথে সম্বন্ধযুক্ত করেছে যা আল্লাহ তায়ালা তাঁর প্রিয়তম নবীর উপর নাযিল করেননি আর তাদের নিকট এর কোনো দলিল-প্রমাণও নেই কিন্ত প্রবৃত্তি ও জগতপূজারী, যিন্দেগীর গোলাম এবং আল্লাহর সাক্ষাত বিরাগী এসব নরাধমরা তাদের প্রভুদের নির্দেশে এই কুফরিকে ইসলামী বলতে অনঢ়যারা এই তাগুতি আইনকে অস্বীকার করে, এদের নিকট তারা বিদ্রোহী । তাদেরকে হত্যা করা এবং তাদের ধন-সম্পদ লুট করা এদের নিকট বৈধ । তাদের পর্দানশীন নারীদেরকে তুলে ক্যাম্পে নিয়ে যাওয়া ‘এদের শরীয়ত' বৈধতা দিয়েছে ।

    আফসসোস, হায় আফসোস...! কিসের গর্বে তোমরা আল্লাহর সম্মুখে এভাবে বুকচেতিয়ে দাঁড়াও? কোন সাহসে তোমরা আল্লাহকে ধোঁকা দিতে চাও? কিসের উপর ভিত্তি করে তোমরা আরস কুরসির মালিকের বিরুদ্ধে মিথ্যাচার করার দুঃসাহস কর?

    দুনিয়ার তুচ্ছ পদের লোভ আর সামান্য সুখের আশায় মৃত দুনিয়ার পুতিগন্ধময় লাশ নিস্পেষনে তোমরাও তাদের দলে ভিড়েছ, যারা এ মৃত দুনিয়ার বিনিময়ে নিজেদের পরকালকে বিক্রি করে দিয়েছে?

    ياللعجب ياللعجب!... وَمَنْ أَظْلَمُ مِمَّنِ افْتَرَىٰ عَلَى اللَّهِ كَذِبًا

    তার চেয়ে বড় জালেম আর কে, যে আল্লাহর বিরুদ্ধে মিথ্যাচার করে

    এই অধ্যায়ের আলোচনা যেহেতু যথেষ্ট পরিমাণ দীর্ঘ ছিল, তাই সুধী পাঠকবর্গের সুবিধার জন্য পুরো আলোচনার সারকথা পয়েন্ট আকারে উল্লেখ করা হলএই অধ্যায়ে কৃত আলোচনা থেকে এ বিষয়টি স্পষ্ট হয়ে গিয়েছে যে, আল্লাহর শরীয়ত ব্যতীত অন্য কোনো আইনে ফয়সালা করার দু'টি বড় সুরত হয়ে থাকে



    : প্রথম সুরত :

    যা মহাপাপ হওয়া সত্ত্বেও দ্বীন থেকে খারেজ করার কারণ হয় না




    ১. সামগ্রিকভাবে শরয়ী নিযাম ও শরয়ী আইন প্রবর্তিত রয়েছে এবং এমন একজন কাযিও রয়েছেন, যিনি শরয়ী আইনকে ওয়াজিবুল আমল মনে করেনএই আইন ত্যাগ করার কারণে নিজেকে গুনাহগারও মনে করেনদুইয়েকটা ঘটনায় প্রবৃত্তি, স্বজনপ্রীতি অথবা ঘুষগ্রহণের কারণে শরীয়ত থেকে পাশ কেটে ফয়সালা করল এটা যদিও মারাত্মক অপরাধ, কিন্তু একজন মানুষ এতটুকুর কারণেই দ্বীন থেকে খারেজ হয়ে যায় না । এমন ব্যক্তি ফাসেক এবং জালেম সাব্যস্ত হয়বেশির চেয়ে বেশি কুফরে আসগারে লিপ্ত মনে করা হয়


    ২. পুরো বিচার ব্যবস্থা ও সরকার ব্যবস্থাটাই এমন যেখানে শরয়ী আহকাম সামগ্রিকভাবে প্রায় অকেজোএর স্থলে মানুষের তৈরিকৃত আইন প্রবর্তিত রয়েছে এবং এতে জড়িত কাযি বা বিচারপতি মানবপ্রণীত আইন অনুযায়ীই ফয়সালা করে থাকেকিন্তু এসব বিচারকরা নিজেদেরকে মারাত্মক পাপে লিপ্ত আছে বলে মনে করে। তারা এই ব্যবস্থার প্রতিও সন্তুষ্ট নয়। এরা শুধু এ নিয়তে এ প্রতিষ্ঠানের সাথে জড়িত রয়েছে যে, ক্ষমতাসীনরা যেহেতু এ ছাড়া অন্য কোনো আইন প্রবর্তন করতে দিবে নাতাই জনগণের বৈধ অধিকার তাদেরকে দেয়ার জন্য বাধ্য হয়ে এ কাজ করছেশরয়ী আইন প্রবর্তনের সুযোগ পেলে মুহূর্তের জন্যও বিরত থাকবে না। শরয়ী আইন প্রবর্তনের পক্ষে কাজ করবে এবং সে অনুযায়ীই বিচারকার্য পরিচালনা করবে

    এমন ব্যক্তিরা কুফরে আসগারে লিপ্ত রয়েছে । এটাও গুনাহের অত্যন্ত ভয়ঙ্কর একটা সুরত তবে এটা দ্বীন থেকে খারেজ হওয়ার কারণ হবে না । বরং এতে লিপ্ত ব্যক্তি ফাসেক এবং জালেম বিবেচিত হবেএদের সাক্ষ্য গৃহীত হবে না৷ এই চাকরি করাও হারাম, এর বেতন ভাতাও হারাম



    দ্বিতীয় সুরত :

    যা দ্বীন থেকে খারেজ করে দেয়ার কারণ এবং কুফরে আকবার



    ১. শরয়ী নিযামের একজন কাযি বা বিচারক অন্যান্য সমস্ত কার্যক্ষেত্রে শরয়ী আহকাম ও বিধিবিধান অনুযায়ী ফয়সালা করেনকিন্তু এক বা একাধিক শরয়ী হুকুম উপযুক্ত শরয়ী ওজর ও কারণ ছাড়া দীর্ঘ দিন পর্যন্ত অকেজো করে রেখেছে এবং তার স্থলে গায়রুল্লাহর তৈরিকৃত (মানব রচিত) আইন দ্বারা ফয়সালা করেছে এটা কুফরে আকবারের অন্তর্ভূক্ত

    ২. শরয়ী নিযামের একজন কাযি বা বিচারক অন্যান্য সমস্ত কার্যক্ষেত্রে শরয়ী আহকাম ও বিধিবিধান অনুযায়ী ফয়সালা করেনকিন্তু শরীয়তের এক বা একাধিক অকাট্য হুকুমকে তুচ্ছ জ্ঞান করা অথবা এই যুগের জন্য অচল মনে করে অথবা গায়রুল্লাহর (মানব রচিত) আইনকে এর চেয়ে উত্তম মনে করে শরয়ী হুকুমকে উপেক্ষা করে ফয়সালা করেছেন । এটা কুফরে আকবারের অন্তর্ভূক্ত ।

    ৩. পুরো বিচার ব্যবস্থা ও সরকার ব্যবস্থাই এমন, যেখানে আল্লাহর শরীয়ত দলিলের মর্যাদাই রাখে না এবং শরয়ী আহকাম ও বিধিবিধান সামগ্রিকভাবে অকেজোএর স্থলে মানব রচিত আইন প্রবর্তিত রয়েছে কাযি বা বিচারক এই মানব রচিত আইন অনুযায়ীই ফয়সালা করে । আর এর জন্য নিজেদেরকে গুনাহগারও মনে করে না। এর পিছনে উপযুক্ত শরয়ী কোনো ওজর ও কারণও নেই। তো এরাও কুফরে আকবারে লিপ্ত রয়েছে। অর্থাৎ এমন কুফরি যা দ্বীন থেকে খারেজ করে দেয় । এটাই এ অধ্যায়ের আলোচনার সার কথা

    এ আলোচনা থেকে এ কথাও স্পষ্ট হয়েছে যে, পাকিস্তানের প্রচলিত বিচার ব্যবস্থা তার আইন ও মূলনীতির দিক থেকে একটি নিরেট শরীয়ত পরিপন্থি এবং কুফরি ব্যবস্থা (তাহলেবাংলাদেশেরঅবস্থাকি? একটুভাবুন)। কারণ ৭৫ বছর ধরে এতে মানব রচিত আইন আল্লাহ তায়ালার শরীয়তের উপর প্রাধান্য বিস্তার করে আছে। আল্লাহর আইনের চেয়ে মানব রচিত এই আইনের মর্যাদাই বেশি । সেই সাথে এর দ্বারা দেশের রাজনৈতিক ব্যবস্থা কুফরি হওয়া স্পষ্ট হয়ে যায়কারণ শরীয়ত পরিপন্থি আইন প্রথমে সংসদে তৈরি হয়। এরপর গিয়ে আদালত তা প্রবর্তন করেসেই সাথে এর দ্বারা সামগ্রিক রাষ্ট্রীয় অবকাঠামোর বাতিল হওয়াও প্রমাণিত হয় । রাষ্ট্র এই তাগুতি আদালতকে তাদের একটি মৌলিক স্তম্ভ মনে করে । এদের কাজকে মুবাহ ও আইনসিদ্ধ বরং পবিত্র জ্ঞান করে। এর প্রতি সম্মান প্রদর্শন আইনত আবশ্যক হয়। এই দুষিত রাষ্ট্রীয় অবকাঠামোকে ইসলামী বলা কিভাবে সম্ভব হতে পারে?

    থাকল জজ, উকিল এবং অন্যান্যদের হুকুমের বিষয় । এ বিষয়ের সারকথা তো উপরেই আলোচনা করা হয়েছে। কিন্তু এই সারকথার আলোকে নির্দিষ্ট ব্যক্তির (অমুকের ছেলে অমুক) উপর ফতওয়া দেয়া কয়েকটি বাক্যে সংক্ষিপ্তভাবে সম্ভব নয় আর এখানে তা আমাদের উদ্দেশ্যও নয় । এটা বরং মুফতী সাহেবদের কাজ তারা উপরে উল্লেখিত সুরতগুলো সামনে রেখে এই ব্যবস্থায় জড়িত ব্যক্তিদের অবস্থা তদন্ত করার পর এর উপর শরয়ী হুকুম আরোপ করবেএই আলোচনায় ব্যক্তিবিশেষের হুকুম বর্ণনা করা আমাদের মূল উদ্দেশ্য নয়। বরং এই ব্যবস্থার কুফরি হওয়া প্রমাণিত করাই আমাদের উদ্দেশ্য ৷ বাকি থাকল এই ব্যবস্থার সাথে জড়িত ব্যক্তিদের বিষয় । আমরা তদেরকে আন্তরিকভাবে এই আহ্বান করব যে, তারা এই ভয়ঙ্কর অপরাধকে ঘৃণ্য মনে করবেনএর থেকে তাওবা করবেন এবং নিজেকে এই ঘৃণ্য পেশা হতে আলাদা করবেন। আর যদি এই কুফরি বিচার ব্যবস্থার অংশ হয়ে থাকার উপর অনঢ় থাকেন, তবে অন্ততপক্ষে এতে জড়িত থাকার বিষয়টিকে গুনাহের কাজ মনে করুন । এর প্রতি ঘৃণা প্রকাশ করুন হতে পারে আপনার এই কাজ কিছুটা হলেও আপনার অপরাধকে হাল্কা করবে... তবে জেনে রেখেন, যদি জড়িত থাকেন, তবে তা হবে এক ভয়ঙ্কর অপরাধ

    সেই সাথে এই আলোচনা সাধারণ মুসলমানদেরকেও আহ্বান করছে যে, আপনারা আল্লাহর শরীয়তকে উপেক্ষা করে ফয়সালার করার অপরাধকে ঘৃণ্য -ও মন্দকাজ মনে করুনএই জাহেলী বিচার ব্যবস্থা থেকে নিজেদেরকে দূরে রাখুন ৷ নিজেদের সমস্যাগুলো ওলামায়ে কেরামের মাধ্যমে শরীয়ত অনুযায়ী করুন




    [1] احكام القران للجصاص: الجزء6. باب الحكم بين أهل الكتاب, في تفسير المائدة 44
    [2] البحر الرائق شرح كنزالدقائق : الجزء 5. باب أحكام المرتدين. زين الدين ابن نجيم الحنفي (96.98 ه)
    [3] প্রাগুক্ত
    [4] প্রাগুক্ত



    ​আরও পড়ুন
    সপ্তদশ পর্ব
Working...
X