শাইখ আবু মহাম্মাদ আল মাকদিসি(হাঃ) এর এক বিশেষ সাক্ষাৎকার (আলরুইয়া চ্যানেলের সাথে)
প্রশ্নকর্তাঃ ভদ্র মহিলা ও মহোদয় গণ। আপনাদেরকে স্বাগত জানাচ্ছি এই বিশেষ সাক্ষাতকারে, আমাদের সাথে উপস্থিত আছেন সালাফি জিহাদি আন্দোলনের একজন তাত্ত্বিক শাইখ আবু মুহাম্মাদ আল-মাকদিসি।
শাইখ মুহাম্মাদ, আপনাকে স্বাগতম!
আমি প্রথম প্রশ্নটি করছি চলমান পরিস্থিতি নিয়ে, শহীদ(!) পাইলট “মুয়ায কাসাবেহ” এর সম্পর্কে, আপনি কি এই বিষয়ে মধ্যস্ততার পদক্ষেপ নিয়েছিলেন?
শাইখ আল মাকদিসিঃ সকল প্রশংসা আল্লাহ্* রাব্বুল আলামিনের যিনি সমগ্র সৃষ্টি জগতের পালন কর্তা। দুরুদ ও সালাম বর্ষিত হোক আমাদের নবি মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়াসাল্লাম), তাঁর বংশধর এবং তাঁর সাহাবিগণের ওপর।
হ্যাঁ। যখনই দাওলা সংগঠনটির হাতে জরডানিয়ান পাইলটের বন্দী হওয়ার খবরটি আমার কাছে এসেছে, তখন থেকেই আমি তাদের সাথে যোগাযোগের চেষ্টা চালিয়েছি, যাতে এর থেকে একটি শরয়ী সুবিধা অর্জন করা যায়; আমি তাদের মধ্য থেকে বিচক্ষণদের বোঝানোর চেষ্টা করি, আদৌ তাদের মধ্যে যদি বিচক্ষণ কেউ থেকে থাকে, যাতে করে জরডানের পাইলটের বিনিময়ে বন্দি সাজিদা রিশাওয়ীকে হস্তান্তর করতে তারা সম্মত হয়। এবং হ্যাঁ। আমি সেজন্যেই তাদের সাথে যোগাযোগ করেছিলাম।
প্রশ্নকর্তাঃ আপনি দাঈশ (আই এস আই এস) এর সাথে এজন্যেই যোগাযোগ করেছিলেন... দাঈশ এই ব্যপারে কী ধরনের প্রতিক্রিয়া জানিয়েছিল? আদৌ কি তাদের কোন প্রতিক্রিয়া ছিল?
শাইখ আল মাকদিসিঃ তাদের সাথে যোগাযোগের পূর্বে আমি ইয়েমেন এবং সিরিয়া, ইসলামিক মাগরিব (মরোক্কো), এবং পুরো পৃথিবীর পূর্ব এবং পশ্চিমে যত মুজাহিদিন রয়েছেন তাদের মধ্য থেকে বিশেষ কিছু ভাইদের সাথে যোগাযোগের উদ্যোগ নেই। এবং আমি যোগাযোগের চেষ্টা করি কুয়েত ও বাহরাইনের বিশেষ কিছু ভাইদের সাথেও। এবং আমি তাদের কাছ থেকে এই বিষয়ে সহযোগিতা কামনা করি, এবং তারা আমাকে সাহায্য করেন। আল্লাহ্* তাদেরকে উত্তম প্রতিদান দিন এবং আমি তাদেরকে ধন্যবাদ জানাচ্ছি। তারা আমাকে সহোযগিতা করেন চিঠিগুলোর ব্যপারে, যাতে ‘দাওলা’ সংগঠনটির বিচক্ষণ ব্যক্তিদেরকে স্মরণ করিয়ে দেয়া যায় যে পাইলটের বিনিময়ে সাজিদাকে মুক্ত করার এটি একটি সুবর্ণ সুযোগ। ... তারা আমাকে এই বিষয়ে সহায়তা করেন এবং বিভিন্ন ব্যক্তির নাম প্রদান করেও সাহায্য করেন।
তারা আমাকে বিভিন্ন সক্রিয় ব্যক্তির নাম এবং ঠিকানা দিয়ে সাহায্য করেন যা আমার জন্যে বেশ উপকারী বলে প্রমাণিত হয়, এবং আমি ঐগুলোর অনুসরণে তাদের সাথে যোগাযোগ করা শুরু করি। আমি তানজিমুদ্দাওলার প্রভাবশালী ব্যক্তিদের সাথে যোগাযোগ স্থাপন করি। আমি যোগাযোগ করি আবু মুহাম্মাদ আল আদনানির সাথে, বার্তা বিনিময় করি আল বাগদাদির সাথে, শাইখ তুর্কি বানালি এবং অন্যান্য শারিয়া বিশেষজ্ঞদের সাথে... এবং আমি তাদেরকে রাজি করানোর মাধ্যমে এই শর’য়ী সুবিধাটি অর্জন করতে জোর প্রচেষ্টা চালাই।
প্রশ্ন কর্তাঃ দাঈশ এই ব্যপারটিতে কতটুকু গুরুত্ব আরোপ করেছিল? এই সকল প্রচেষ্টা এবং যোগাযোগের ব্যাপারে তাদের প্রতিক্রিয়া কেমন ছিল? তারা কি আপনাকে কোন সাড়া দিয়েছিল? আপনার এবং তাদের মাঝে দৃষ্টান্তমূলক কোন মত বিনিময় হয়েছিল কি?
শাইখ আল মাকদিসিঃ অত্যন্ত পরিতাপের বিষয়, আমি ভেবেছিলাম তারা তাদের বোনের মুক্তি এবং এই ধরনের শর’য়ী সুবিধা আর্জনের জন্যে উদগ্রিব হয়ে থাকবে, কিন্তু দুঃখের বিষয় এই ব্যপারে তাদের কোন প্রতিক্রিয়া তো ছিলই না বরং তাদের অবস্থান ছিল এর বিপরীত। তাদের মধ্যে কেউ কেউ আমার পাঠানো অডিও বার্তাগুলোকে আমলে নেয়নি। আর কেউ কেউ এই বিষয়টিকে গুরুত্বই দেয় নি... এর ব্যপ্তি এমনই ছিল যে, তাদের একজন, যে আমার সাথে যোগাযোগ রক্ষা করছিল সে আমাকে মিথ্যা বলেছিল... তারা পাইলট মুয়ায কে হত্যা করে ফেলেছিল, এবং সে আমাকে মিথ্যা বলেছিল এবং দৃঢ় প্রতিজ্ঞ হয়ে বলেছিল “আমরা আন্তরিক, এবং আমরা চাই ... এবং আমরা আপনার সাথে সত্যনিষ্ঠ ... এবং আপনি দেখবেন আমরা সত্যবাদি।” আর এর পরই এটা পরিষ্কার হয়ে গিয়েছে যে সে একজন মিথ্যাবাদী। এবং আল্লাহ্* বলেনঃ
“হে ঈমানদারগণ, আল্লাহ্*কে ভয় কর এবং সত্যবাদীদের সাথে থাক।”
এই আয়াতটি জিহাদ এবং মুজাহিদিনদের উল্লেখ করেই নাযিল হয়েছিল। আর জিহাদের সাথে সম্পৃক্ত কোন ব্যক্তির জন্যে এটা কখনই সমীচীন নয় যে সে মিথ্যাবাদী হবে।
প্রশ্নকর্তাঃ সেই ‘শহীদ’ পাইলটকে পুড়িয়ে হত্যা করা হয়েছে, এই কাজটির বিষয়ে আপনার মতামত কী? এবং এই কদর্য পদ্ধতিটি অবলম্বনের পেছনে কী কারণ রয়েছে এবং এই দলটির লক্ষ্য কী?
শাইখ আল মাকদিসিঃ তারা অনেক কুপ্রথার প্রচলন ঘটিয়েছে।
প্রথম যে প্রথাটি তারা চালু করেছে এবং যাকে তারা নবি করিম (সাঃ) এর সুন্নাহ হিসেবে দাবি করছে, সেটি হল জবাই করে হত্যা যা তারা সাধারণ মানুষের সামনে বাস্তবায়ন করে।
তারা তাদের প্রতিপক্ষকে জবাই করে হত্যা করে, তারা জবাই করেছে দলনেতাদের এবং সিরিয়ার মুজাহিদিনদের- যতক্ষণ পর্যন্ত না মানুষ ভেবে নিয়েছে যে জবাই করে হত্যা ছিল রাসুলুল্লাহ (সাঃ) এর সুন্নাহ। এবং তারা এর সপক্ষের দলিল হিসেবে নবি করিম (সাঃ) এর এই হাদিসটিকে ব্যবহার করেঃ “হে কুরাইশ! আমি তোমাদের কাছে এসেছি জবাই সাথে নিয়ে।”
যখন তারা (কুরাইশ) রাসুলুল্লাহ (সাঃ) কে উপহাস করেছিল তখন তিনি এই শব্দগুলো ব্যবহার করেছিলেন। কিন্তু তারা (দাওলা) রাসুলুল্লাহ (সাঃ) এর আচরণকে সম্পূর্নরূপে উপেক্ষা করল যা তিনি মক্কা বিজয়ের বছরে তাঁর অধিনস্ত কুরাইশদের প্রতি করেছিলেন। তারা ভুলে গেছে তিনি(সাঃ) তাদের প্রতি কী আচরণ করেছিলেন... তিনি কি তাদের শত সহস্র লোকদের বলেননি- “যাও, তোমরা স্বাধীন” এবং এই কারণেই তারা শত্রু থেকে দীনের অনুসারীতে পরিণত হয়।
তারা এই উদাহরণটিকে বিবেচনা করে না... তারা সেই কথাগুলো গ্রহণ করে যা রাসুলুল্লাহ (সাঃ) বলেছিলেন যখন তাকে উপহাস করা হয়েছিল... এবং তারা জবাইকে একটি প্রথায় পরিণত করেছে... তারা দীন এবং জিহাদের আন্দোলনকে রক্তের রঙে রঞ্জিত করেছে।
তারা এবং তাদের সকলেই, মনে করে যে জবাই এবং হত্যা ছাড়া জিহাদকে টিকিয়ে রাখা সম্ভব নয়। কিন্তু রাসুলুল্লাহ (সাঃ) মুতা’আর যুদ্ধে খালিদ বিন ওয়ালিদের (রা) সৈন্য বহরের জীবন রক্ষা ও নিরাপত্তার লক্ষ্যে যুদ্ধের ময়দান থেকে ফিরে আসার বিষয়ে বলেছেনঃ আল্লাহ্* তাকে বিজয় দান করেছেন।” এবং তিনি (সাঃ) এটিকে বিজয় হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন। এবং সর্বশক্তিমান আল্লাহ্* হুদায়বিয়ার সন্ধি কে “একটি বিজয়” বলে উল্লেখ করেছেন।
“নিশ্চয় আমি আপনার জন্যে এমন একটা বিজয় দান করেছি, যা সুস্পষ্ট।“
অথচ জবাই আর হত্যা ছাড়াও বিজয় এবং অধিগ্রহণ যে সম্ভব তা তারা বুঝতে পারে না। তারা উপলব্ধি করে না যে বৃহত্তর স্বার্থ অর্জনে এই পদ্ধতিগুলো বিজয় এবং এইগুলোও শরয়ী সুবিধা আর এইগুলোও জিহাদেরই অংশ।
এবং এই কারণেই যখন তারা প্রথম জবাই করে হত্যার প্রচলন করে তখন তারা তাদের বিরোধী দলের অসংখ্য ব্যক্তিকে জবাই করল এবং তা টেলিভিশনের পর্দায় প্রচার করতে শুরু করল যতক্ষণ পর্যন্ত না সাধারণ মানুষ আতংকিত হয়ে প্রশ্ন করল, “এটাই কি ইসলাম?”
আর আমাদের বাধ্য করা হল ইসলামের আদর্শ রক্ষা করতে এবং পরিষ্কার করে বুঝিয়ে দিতে যে এগুলো দীনের অংশ নয়।
তারা মুজাহিদিনদের জবাই করেছে এবং জবাই করেছে অসংখ্য মানুষ... ফুলের মত যুবকদের...
তারা যাদেরকে হত্যা করেছিল সেই মানুষগুলো কারা এবং কেন তাদেরকে হত্যা করা হল এর প্রকৃত কারণ জনগণের কাছে স্পষ্ট রূপে প্রকাশ করা হয় নি।
জনগণ শুধু দেখতে পায় জবাই করে নৃশংস ভাবে হত্যা এবং তারা (দাওলা) বলে “এরা তো মুরতাদীন”।
মানুষের সামনে কোন বিচার কার্য সম্পাদিত হয় না এমনকি তারা কাউকে অপরাধী সাব্যস্ত হতেও দেখে না, তারা শুধু জবাই করে হত্যাকান্ডই অবলোকন করে।
আর তারা এই কুপ্রথা প্রতিষ্ঠা করে এবং ঠিক এরপরই আমাদেরকে বিস্মিত করে আগুনে পুড়িয়ে শাস্তি দেয়ার প্রথাটি চালু করে... এবং এখন থেকে পুড়িয়ে হত্যা করে মানুষ তাদেরকে অনুসরণ করা শুরু করবে অথচ রাসুলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেনঃ
“আগুনের স্রষ্টা ছাড়া আর কেউ আগুন দ্বারা শাস্তি দেবে না।“
তারা দলিল হিসেবে শাইখুল ইসলাম ইবনে তাইমিয়্যা (রঃ) এর একটি বক্তব্যের কিয়দাংশ তুলে ধরে এবং সেই অংশের পূর্বের এবং পরের কথাগুলো ছুড়ে ফেলে দেয়। তারা শাইখুল ইসলাম ইবনে তাইমিয়া (রঃ) এর বক্তব্যকে রাসুলুল্লাহ (সাঃ) এর হাদিসের ওপর প্রাধান্য দেয়।
এটাই কি সালাফিয়্যা? তারা নিজেদের বলে সালাফি জিহাদি... সালাফি জিহাদিরা এই ধরনের আচরণ থেকে মুক্ত... আগুনে পুড়ানো... রাসুলুল্লাহ (সাঃ) এই কাজ নিষেধ করেছেন এবং তিনি বলেছেনঃ “আগুনের স্রষ্টা ছাড়া আর কেউ আগুন দ্বারা শাস্তি দেবে না।“ ... এবং তারা কী অর্জন করছে? ... তাদের এই কাজ তাদের কী উপকারে আসছে?
তারা কি ভেবেছিল যে এই পাইলটকে পুড়িয়ে হত্যা করলেই বম্বিং থেমে যাবে এবং যুদ্ধ বন্ধ হয়ে যাবে?
আমি নিশ্চিত যে জরডানে আমাদের সাথে অবস্থানরত তাদের বিচক্ষণ অনুসারীরা এখন খুব ভালোভাবে জানতে পারবে যে তাদের নির্বোধের ন্যায় এহেন কার্যকলাপ কতটা ক্ষতি করেছে।
আর যখন, সাজিদা আর আল-কারবুলির মৃত্যু দন্ড দেয়া হল বলে জানলাম, আমি বলতে চাই, এর সম্পূর্ণ দায় দায়িত্ব তানজিমুদ্দাওলার ওপরই বর্তায়। কারণ তারা সাজিদার নাম ভাঙ্গিয়ে এবং তাকে মুক্ত করার দাবি জানিয়ে বিভিন্ন চুক্তি করতে চাইছিল অথচ তারা এই ব্যপারে একদমই আন্তরিক ছিল না।
তারা আমার কাছে মিথ্যা বলেছিল এবং মিথ্যা প্রতিজ্ঞা করেছিল অথচ ইতিমধ্যে এটা পরিষ্কার হয়ে যায় যে তারা আগেই পাইলটকে হত্যা করে ফেলেছিল।
তোমরা কেন মিথ্যা বল যখন আল্লাহ্* বলেনঃ “হে ঈমানদারগণ, আল্লাহকে ভয় কর এবং সত্যবাদীদের সাথে থাকো।”
তোমরা কেন আমার সাথে যোগাযোগের সময় সততা রক্ষা করলে না?
প্রশ্নকর্তাঃ ভদ্র মহিলা ও মহোদয় গণ। আপনাদেরকে স্বাগত জানাচ্ছি এই বিশেষ সাক্ষাতকারে, আমাদের সাথে উপস্থিত আছেন সালাফি জিহাদি আন্দোলনের একজন তাত্ত্বিক শাইখ আবু মুহাম্মাদ আল-মাকদিসি।
শাইখ মুহাম্মাদ, আপনাকে স্বাগতম!
আমি প্রথম প্রশ্নটি করছি চলমান পরিস্থিতি নিয়ে, শহীদ(!) পাইলট “মুয়ায কাসাবেহ” এর সম্পর্কে, আপনি কি এই বিষয়ে মধ্যস্ততার পদক্ষেপ নিয়েছিলেন?
শাইখ আল মাকদিসিঃ সকল প্রশংসা আল্লাহ্* রাব্বুল আলামিনের যিনি সমগ্র সৃষ্টি জগতের পালন কর্তা। দুরুদ ও সালাম বর্ষিত হোক আমাদের নবি মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়াসাল্লাম), তাঁর বংশধর এবং তাঁর সাহাবিগণের ওপর।
হ্যাঁ। যখনই দাওলা সংগঠনটির হাতে জরডানিয়ান পাইলটের বন্দী হওয়ার খবরটি আমার কাছে এসেছে, তখন থেকেই আমি তাদের সাথে যোগাযোগের চেষ্টা চালিয়েছি, যাতে এর থেকে একটি শরয়ী সুবিধা অর্জন করা যায়; আমি তাদের মধ্য থেকে বিচক্ষণদের বোঝানোর চেষ্টা করি, আদৌ তাদের মধ্যে যদি বিচক্ষণ কেউ থেকে থাকে, যাতে করে জরডানের পাইলটের বিনিময়ে বন্দি সাজিদা রিশাওয়ীকে হস্তান্তর করতে তারা সম্মত হয়। এবং হ্যাঁ। আমি সেজন্যেই তাদের সাথে যোগাযোগ করেছিলাম।
প্রশ্নকর্তাঃ আপনি দাঈশ (আই এস আই এস) এর সাথে এজন্যেই যোগাযোগ করেছিলেন... দাঈশ এই ব্যপারে কী ধরনের প্রতিক্রিয়া জানিয়েছিল? আদৌ কি তাদের কোন প্রতিক্রিয়া ছিল?
শাইখ আল মাকদিসিঃ তাদের সাথে যোগাযোগের পূর্বে আমি ইয়েমেন এবং সিরিয়া, ইসলামিক মাগরিব (মরোক্কো), এবং পুরো পৃথিবীর পূর্ব এবং পশ্চিমে যত মুজাহিদিন রয়েছেন তাদের মধ্য থেকে বিশেষ কিছু ভাইদের সাথে যোগাযোগের উদ্যোগ নেই। এবং আমি যোগাযোগের চেষ্টা করি কুয়েত ও বাহরাইনের বিশেষ কিছু ভাইদের সাথেও। এবং আমি তাদের কাছ থেকে এই বিষয়ে সহযোগিতা কামনা করি, এবং তারা আমাকে সাহায্য করেন। আল্লাহ্* তাদেরকে উত্তম প্রতিদান দিন এবং আমি তাদেরকে ধন্যবাদ জানাচ্ছি। তারা আমাকে সহোযগিতা করেন চিঠিগুলোর ব্যপারে, যাতে ‘দাওলা’ সংগঠনটির বিচক্ষণ ব্যক্তিদেরকে স্মরণ করিয়ে দেয়া যায় যে পাইলটের বিনিময়ে সাজিদাকে মুক্ত করার এটি একটি সুবর্ণ সুযোগ। ... তারা আমাকে এই বিষয়ে সহায়তা করেন এবং বিভিন্ন ব্যক্তির নাম প্রদান করেও সাহায্য করেন।
তারা আমাকে বিভিন্ন সক্রিয় ব্যক্তির নাম এবং ঠিকানা দিয়ে সাহায্য করেন যা আমার জন্যে বেশ উপকারী বলে প্রমাণিত হয়, এবং আমি ঐগুলোর অনুসরণে তাদের সাথে যোগাযোগ করা শুরু করি। আমি তানজিমুদ্দাওলার প্রভাবশালী ব্যক্তিদের সাথে যোগাযোগ স্থাপন করি। আমি যোগাযোগ করি আবু মুহাম্মাদ আল আদনানির সাথে, বার্তা বিনিময় করি আল বাগদাদির সাথে, শাইখ তুর্কি বানালি এবং অন্যান্য শারিয়া বিশেষজ্ঞদের সাথে... এবং আমি তাদেরকে রাজি করানোর মাধ্যমে এই শর’য়ী সুবিধাটি অর্জন করতে জোর প্রচেষ্টা চালাই।
প্রশ্ন কর্তাঃ দাঈশ এই ব্যপারটিতে কতটুকু গুরুত্ব আরোপ করেছিল? এই সকল প্রচেষ্টা এবং যোগাযোগের ব্যাপারে তাদের প্রতিক্রিয়া কেমন ছিল? তারা কি আপনাকে কোন সাড়া দিয়েছিল? আপনার এবং তাদের মাঝে দৃষ্টান্তমূলক কোন মত বিনিময় হয়েছিল কি?
শাইখ আল মাকদিসিঃ অত্যন্ত পরিতাপের বিষয়, আমি ভেবেছিলাম তারা তাদের বোনের মুক্তি এবং এই ধরনের শর’য়ী সুবিধা আর্জনের জন্যে উদগ্রিব হয়ে থাকবে, কিন্তু দুঃখের বিষয় এই ব্যপারে তাদের কোন প্রতিক্রিয়া তো ছিলই না বরং তাদের অবস্থান ছিল এর বিপরীত। তাদের মধ্যে কেউ কেউ আমার পাঠানো অডিও বার্তাগুলোকে আমলে নেয়নি। আর কেউ কেউ এই বিষয়টিকে গুরুত্বই দেয় নি... এর ব্যপ্তি এমনই ছিল যে, তাদের একজন, যে আমার সাথে যোগাযোগ রক্ষা করছিল সে আমাকে মিথ্যা বলেছিল... তারা পাইলট মুয়ায কে হত্যা করে ফেলেছিল, এবং সে আমাকে মিথ্যা বলেছিল এবং দৃঢ় প্রতিজ্ঞ হয়ে বলেছিল “আমরা আন্তরিক, এবং আমরা চাই ... এবং আমরা আপনার সাথে সত্যনিষ্ঠ ... এবং আপনি দেখবেন আমরা সত্যবাদি।” আর এর পরই এটা পরিষ্কার হয়ে গিয়েছে যে সে একজন মিথ্যাবাদী। এবং আল্লাহ্* বলেনঃ
“হে ঈমানদারগণ, আল্লাহ্*কে ভয় কর এবং সত্যবাদীদের সাথে থাক।”
এই আয়াতটি জিহাদ এবং মুজাহিদিনদের উল্লেখ করেই নাযিল হয়েছিল। আর জিহাদের সাথে সম্পৃক্ত কোন ব্যক্তির জন্যে এটা কখনই সমীচীন নয় যে সে মিথ্যাবাদী হবে।
প্রশ্নকর্তাঃ সেই ‘শহীদ’ পাইলটকে পুড়িয়ে হত্যা করা হয়েছে, এই কাজটির বিষয়ে আপনার মতামত কী? এবং এই কদর্য পদ্ধতিটি অবলম্বনের পেছনে কী কারণ রয়েছে এবং এই দলটির লক্ষ্য কী?
শাইখ আল মাকদিসিঃ তারা অনেক কুপ্রথার প্রচলন ঘটিয়েছে।
প্রথম যে প্রথাটি তারা চালু করেছে এবং যাকে তারা নবি করিম (সাঃ) এর সুন্নাহ হিসেবে দাবি করছে, সেটি হল জবাই করে হত্যা যা তারা সাধারণ মানুষের সামনে বাস্তবায়ন করে।
তারা তাদের প্রতিপক্ষকে জবাই করে হত্যা করে, তারা জবাই করেছে দলনেতাদের এবং সিরিয়ার মুজাহিদিনদের- যতক্ষণ পর্যন্ত না মানুষ ভেবে নিয়েছে যে জবাই করে হত্যা ছিল রাসুলুল্লাহ (সাঃ) এর সুন্নাহ। এবং তারা এর সপক্ষের দলিল হিসেবে নবি করিম (সাঃ) এর এই হাদিসটিকে ব্যবহার করেঃ “হে কুরাইশ! আমি তোমাদের কাছে এসেছি জবাই সাথে নিয়ে।”
যখন তারা (কুরাইশ) রাসুলুল্লাহ (সাঃ) কে উপহাস করেছিল তখন তিনি এই শব্দগুলো ব্যবহার করেছিলেন। কিন্তু তারা (দাওলা) রাসুলুল্লাহ (সাঃ) এর আচরণকে সম্পূর্নরূপে উপেক্ষা করল যা তিনি মক্কা বিজয়ের বছরে তাঁর অধিনস্ত কুরাইশদের প্রতি করেছিলেন। তারা ভুলে গেছে তিনি(সাঃ) তাদের প্রতি কী আচরণ করেছিলেন... তিনি কি তাদের শত সহস্র লোকদের বলেননি- “যাও, তোমরা স্বাধীন” এবং এই কারণেই তারা শত্রু থেকে দীনের অনুসারীতে পরিণত হয়।
তারা এই উদাহরণটিকে বিবেচনা করে না... তারা সেই কথাগুলো গ্রহণ করে যা রাসুলুল্লাহ (সাঃ) বলেছিলেন যখন তাকে উপহাস করা হয়েছিল... এবং তারা জবাইকে একটি প্রথায় পরিণত করেছে... তারা দীন এবং জিহাদের আন্দোলনকে রক্তের রঙে রঞ্জিত করেছে।
তারা এবং তাদের সকলেই, মনে করে যে জবাই এবং হত্যা ছাড়া জিহাদকে টিকিয়ে রাখা সম্ভব নয়। কিন্তু রাসুলুল্লাহ (সাঃ) মুতা’আর যুদ্ধে খালিদ বিন ওয়ালিদের (রা) সৈন্য বহরের জীবন রক্ষা ও নিরাপত্তার লক্ষ্যে যুদ্ধের ময়দান থেকে ফিরে আসার বিষয়ে বলেছেনঃ আল্লাহ্* তাকে বিজয় দান করেছেন।” এবং তিনি (সাঃ) এটিকে বিজয় হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন। এবং সর্বশক্তিমান আল্লাহ্* হুদায়বিয়ার সন্ধি কে “একটি বিজয়” বলে উল্লেখ করেছেন।
“নিশ্চয় আমি আপনার জন্যে এমন একটা বিজয় দান করেছি, যা সুস্পষ্ট।“
অথচ জবাই আর হত্যা ছাড়াও বিজয় এবং অধিগ্রহণ যে সম্ভব তা তারা বুঝতে পারে না। তারা উপলব্ধি করে না যে বৃহত্তর স্বার্থ অর্জনে এই পদ্ধতিগুলো বিজয় এবং এইগুলোও শরয়ী সুবিধা আর এইগুলোও জিহাদেরই অংশ।
এবং এই কারণেই যখন তারা প্রথম জবাই করে হত্যার প্রচলন করে তখন তারা তাদের বিরোধী দলের অসংখ্য ব্যক্তিকে জবাই করল এবং তা টেলিভিশনের পর্দায় প্রচার করতে শুরু করল যতক্ষণ পর্যন্ত না সাধারণ মানুষ আতংকিত হয়ে প্রশ্ন করল, “এটাই কি ইসলাম?”
আর আমাদের বাধ্য করা হল ইসলামের আদর্শ রক্ষা করতে এবং পরিষ্কার করে বুঝিয়ে দিতে যে এগুলো দীনের অংশ নয়।
তারা মুজাহিদিনদের জবাই করেছে এবং জবাই করেছে অসংখ্য মানুষ... ফুলের মত যুবকদের...
তারা যাদেরকে হত্যা করেছিল সেই মানুষগুলো কারা এবং কেন তাদেরকে হত্যা করা হল এর প্রকৃত কারণ জনগণের কাছে স্পষ্ট রূপে প্রকাশ করা হয় নি।
জনগণ শুধু দেখতে পায় জবাই করে নৃশংস ভাবে হত্যা এবং তারা (দাওলা) বলে “এরা তো মুরতাদীন”।
মানুষের সামনে কোন বিচার কার্য সম্পাদিত হয় না এমনকি তারা কাউকে অপরাধী সাব্যস্ত হতেও দেখে না, তারা শুধু জবাই করে হত্যাকান্ডই অবলোকন করে।
আর তারা এই কুপ্রথা প্রতিষ্ঠা করে এবং ঠিক এরপরই আমাদেরকে বিস্মিত করে আগুনে পুড়িয়ে শাস্তি দেয়ার প্রথাটি চালু করে... এবং এখন থেকে পুড়িয়ে হত্যা করে মানুষ তাদেরকে অনুসরণ করা শুরু করবে অথচ রাসুলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেনঃ
“আগুনের স্রষ্টা ছাড়া আর কেউ আগুন দ্বারা শাস্তি দেবে না।“
তারা দলিল হিসেবে শাইখুল ইসলাম ইবনে তাইমিয়্যা (রঃ) এর একটি বক্তব্যের কিয়দাংশ তুলে ধরে এবং সেই অংশের পূর্বের এবং পরের কথাগুলো ছুড়ে ফেলে দেয়। তারা শাইখুল ইসলাম ইবনে তাইমিয়া (রঃ) এর বক্তব্যকে রাসুলুল্লাহ (সাঃ) এর হাদিসের ওপর প্রাধান্য দেয়।
এটাই কি সালাফিয়্যা? তারা নিজেদের বলে সালাফি জিহাদি... সালাফি জিহাদিরা এই ধরনের আচরণ থেকে মুক্ত... আগুনে পুড়ানো... রাসুলুল্লাহ (সাঃ) এই কাজ নিষেধ করেছেন এবং তিনি বলেছেনঃ “আগুনের স্রষ্টা ছাড়া আর কেউ আগুন দ্বারা শাস্তি দেবে না।“ ... এবং তারা কী অর্জন করছে? ... তাদের এই কাজ তাদের কী উপকারে আসছে?
তারা কি ভেবেছিল যে এই পাইলটকে পুড়িয়ে হত্যা করলেই বম্বিং থেমে যাবে এবং যুদ্ধ বন্ধ হয়ে যাবে?
আমি নিশ্চিত যে জরডানে আমাদের সাথে অবস্থানরত তাদের বিচক্ষণ অনুসারীরা এখন খুব ভালোভাবে জানতে পারবে যে তাদের নির্বোধের ন্যায় এহেন কার্যকলাপ কতটা ক্ষতি করেছে।
আর যখন, সাজিদা আর আল-কারবুলির মৃত্যু দন্ড দেয়া হল বলে জানলাম, আমি বলতে চাই, এর সম্পূর্ণ দায় দায়িত্ব তানজিমুদ্দাওলার ওপরই বর্তায়। কারণ তারা সাজিদার নাম ভাঙ্গিয়ে এবং তাকে মুক্ত করার দাবি জানিয়ে বিভিন্ন চুক্তি করতে চাইছিল অথচ তারা এই ব্যপারে একদমই আন্তরিক ছিল না।
তারা আমার কাছে মিথ্যা বলেছিল এবং মিথ্যা প্রতিজ্ঞা করেছিল অথচ ইতিমধ্যে এটা পরিষ্কার হয়ে যায় যে তারা আগেই পাইলটকে হত্যা করে ফেলেছিল।
তোমরা কেন মিথ্যা বল যখন আল্লাহ্* বলেনঃ “হে ঈমানদারগণ, আল্লাহকে ভয় কর এবং সত্যবাদীদের সাথে থাকো।”
তোমরা কেন আমার সাথে যোগাযোগের সময় সততা রক্ষা করলে না?
Comment