সোশ্যাল মিডিয়া ও ইন্টারনেটের অনিয়ন্ত্রিত ব্যবহার এবং আমাদের করণীয় | সোশ্যাল মিডিয়া ও ইন্টারনেট যেন আমাদের ক্ষতির কারণ না হয়
বর্তমান যামানায় ফিতনা ফাঁসাদের যে সমস্ত নতুন নতুন দিগন্ত উন্মোচিত হচ্ছে তা অতীতে এরকম ছিল না। দিন যতই সামনের দিকে অগ্রসর হচ্ছে ফিতনা ফাঁসাদ যেন ততই অন্ধকার রাত্রির ন্যায় ছেয়ে যাচ্ছে। আর বর্তমানে সোশ্যাল মিডিয়াগুলো যেন ফিতনা ফাঁসাদের এক অন্ধকার রাজ্যে পরিণত হয়েছে, যা অল্প কথায় বর্ণনা করে শেষ করা যাবে না। এখন এই সোশ্যাল মিডিয়াগুলোর বদৌলতে এমন কোন হীন কর্ম নেই যা সংগঠিত হচ্ছে না। অশ্লীল বেহায়াপনা, গান বাজনা, নাটক সিনেমা, হারাম বিনোদন ও প্রায় সব ধরনের ফিতনা ফাঁসাদের এক অন্ধকার রাজ্যে পরিণত হয়েছে সোশ্যাল মিডিয়া ও ইন্টারনেট দুনিয়া। ইন্টারনেটে যে নীল ছবি পাওয়া যায় তার কালো থাবা থেকে ছোট বড় কেউই বাদ যাচ্ছে না। আল্লাহ্ আমাদের এই ভয়াবহ ফিতনা থেকে হেফাজত করুন। সোশ্যাল মিডিয়া ও ইন্টারনেট বিভিন্ন ধরনের অপরাধ ও মারামারি-হানাহানির জন্য বহুলাংশে দায়ী। মানুষ যেভাবে জেনে অথবা না জেনে বুঝে অথবা না বুঝে সোশ্যাল মিডিয়াগুলোতে নিজেদের মনের আক্রোশ ও হিংসা-বিদ্বেষ ছড়াচ্ছে তাতে দিন দিন মানব অপরাধ বাড়তেই থাকবে। আল্লাহ্ আমাদের এই ধরনের ফিতনা থেকে হেফাজত করুন। বর্তমানে তো মুসলিম সমাজে সোশ্যাল মিডিয়া ও ইন্টারনেটের ফিতনা চর্তুদিকে ছড়িয়ে পড়েছে। মুসলিম যুবক-যুবতী, শিশু এমনকি বয়বৃদ্ধরাও সোশ্যাল মিডিয়া ও ইন্টারনেটের ফিতনায় হাবুডুবু খাচ্ছে। মুসলিমদের বড় একটা অংশ সোশ্যাল মিডিয়া ও ইন্টারনেটের ফিতনার কুপ্রভাপকে উপেক্ষা করেই সোশ্যাল মিডিয়া ও ইন্টারনেটে অবাধে বিচরণ করছে। কোনটি ভালো আর কোনটি মন্দ তা যাচাই বাছাই না করেই মুসলিম যুবক-যুবতীরা সোশ্যাল মিডিয়া ও ইন্টারনেটে যা ইচ্ছা তাই ছড়িয়ে দিচ্ছে। সুবহানাল্লাহ কত মারাত্নক ব্যাপার! ইসলাম কোনটিকে অনুমোদন দিচ্ছে আর কোনটিকে অনুমোদন দিচ্ছে না তা যাচাই বাছাই না করেই সোশ্যাল মিডিয়া ও ইন্টারনেটে এমন সব বিষয় ছড়িয়ে দিচ্ছে যা সামগ্রীকভাবে মুসলিম সমাজকে মারাত্নক ক্ষতির দিকে ঠেলে দিচ্ছে। সোশ্যাল মিডিয়া ও ইন্টারনেটের এই অনিয়ন্ত্রিত ব্যবহারই আমাদেরকে চরম অধঃপতনের দিকে নিয়ে যাচ্ছে, আর এজন্য আমরা মুসলিমরা নিজেরাই দায়ী। আল্লাহ্ আমাদের এই মারত্নক গর্হিত কাজ থেকে রক্ষা করুন। মুসলিমদের মধ্যে এমনও অনেকে আছেন যারা কিছু সস্তা খ্যাতি, বিনোদন আর অর্থ উপার্জনের মাধ্যম হিসেবে সোশ্যাল মিডিয়া ও ইন্টারনেটের অনিয়ন্ত্রিত ব্যবহার করছে, যা মুসলিম সমাজের জন্য মারাত্নক ক্ষতির কারণ। আমরা এ ধরনের কাজ থেকে আল্লাহ্ তা’আলার কাছে পানাহ চাই।
এক্ষেত্রে আমাদের করণীয়
যেহেতু সোশ্যাল মিডিয়া ও ইন্টারনেট এখন ব্যাপক সহজলভ্য এবং মানুষের দৈনন্দিন জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশে পরিণত হয়েছে তাই চাইলেও আমরা এটাকে বন্ধ করে দিতে পারবো না। আর তাছাড়া সোশ্যাল মিডিয়া ও ইন্টারনেটের যেমন খারাপ দিক রয়েছে, তেমনি কিছু ভালো দিকও রয়েছে, তবে ভালোর চেয়ে খারাপ দিকটাই বেশি। যাই হোক, আমাদেরকে সবসময় সোশ্যাল মিডিয়া ও ইন্টারনেটের ভালো ও উপকারী দিকগুলোর দিকেই নজর দিতে হবে। শরিয়তের দৃষ্টিতে যা খারাপ বা মন্দ তা সোশ্যাল মিডিয়া ও ইন্টারনেটে ছড়িয়ে দেওয়া থেকে আমাদের বিরত থাকা উচিত। যেমন অশ্লীল ছবি, নাটক, সিনেমা, গান-বাজনা ইত্যাদি কোনভাবেই সোশ্যাল মিডিয়া ও ইন্টারনেটে ছড়িয়ে দেওয়া যাবে না। ব্যক্তিগত আক্রোশ ও হিংসার বশবর্তী হয়ে কোন মুসলিম ভাইকে অবজ্ঞা করা, অপমান করা, তুচ্ছ তাচ্ছিল্য করা কিংবা তার ক্ষতি হয় এমন কিছু সোশ্যাল মিডিয়া ও ইন্টারনেটে ছড়িয়ে দেওয়া থেকে বিরত থাকা অত্যন্ত জরুরী। তবে ইসলামের দৃষ্টিতে যা মন্দ নয় এবং এমন বিষয় যা দ্বীন ইসলামের জন্য ক্ষতিকর নয়, বরং উপকারী এমন বিষয় সোশ্যাল মিডিয়া ও ইন্টারনেটে প্রচার প্রসার করা যেতে পারে। আমাদেরকে সবসময় ইসলামের মানদন্ডকে সামনে রেখেই সোশ্যাল মিডিয়া ও ইন্টারনেটের নিয়ন্ত্রিত ব্যবহারে অভ্যস্ত হওয়া উচিত। তবেই আমরা সোশ্যাল মিডিয়া ও ইন্টারনেটের সুফল আশা করতে পারি ইনশা আল্লাহ্।