ইসলাম কি সম্প্রীতির ধর্ম?
প্রথমে আপনাকে একটি সত্য বুঝে নিতে হবে যে এই দুনিয়া, এই মহাবিশ্ব এবং সব কিছুর মালিক এবং সৃষ্টিকর্তা এক আল্লাহ তাআলা। এখানে কারও কোনো অংশ নেই। সব কিছু তার মালিকানা। সব কিছু তারই অধীন। সব কিছুতে তারই রাজত্ব। কোনো এক বালু কণাতেও নাক গলানোর অধিকার এবং ক্ষমতা কারও নেই।
আল্লাহ তাআলা পরীক্ষার উদ্দেশ্যে সাময়িক সময়ের জন্য আমাদের এ দুনিয়াতে পাঠিয়েছেন। এরপর আমরা চলে যাবো আখেরাতের জগতে, যার শুরু আছে শেষ নেই। সে জগতে আল্লাহর বন্ধুরা পাবে চিরস্থায়ী সুখের ঠিকানা জান্নাত, আর আল্লাহর দুশমনেরা নিক্ষিপ্ত হবে চিরস্থায়ী শাস্তির ঠিকানা জাহান্নামে।
আপনাকে মনে রাখতে হবে যে, সব কিছু যেমন আল্লাহ তাআলার, তেমনি তিনি সর্ব প্রকার ভাল গুণে গুণান্বিত। মাখলুকের ভাল গুণগুলো আল্লাহ তাআলার ভাল গুণের বহিঃপ্রকাশ মাত্র।
আপনি যদি দানশীলতার কথা ধরেন, তাহলে আল্লাহ তাআলার চেয়ে অধিক দানশীল কেউ নেই।
আপনি যদি দয়ার কথা ধরেন, তাহলে আল্লাহর চেয়ে অধিক দয়ালু কেউ নেই।
আপনি যদি ক্ষমার কথা ধরেন, তাহলে আল্লাহর চেয়ে অধিক ক্ষমাশীল কেউ নেই। আশি বৎসর কুফর করার পরও যদি কেউ আল্লাহর কাছে মাফ চায়, আল্লাহ তাকে মাফ করে দেবেন। শুধু তাই নয়, বন্ধুও বানাবেন, চিরস্থায়ী জান্নাতও দান করবেন।
আপনি যদি মুহাব্বাত-ভালবাসার কথা ধরেন, তাহলে আল্লাহর চেয়ে অধিক মুহাব্বাতকারী আর কেউ নেই। কঠিন মুহূর্তে আপনার অতি আপনজনও আপনাকে ত্যাগ করবে, কিন্তু আল্লাহ তাআলা আপনাকে এমনই ভালবাসেন যে, সর্ব হালতে তিনি আপনাকে দেখে রাখেন। আপনাকে সাপ-বিচ্ছু সব ধরনের অনিষ্ট থেকে রক্ষার জন্য তিনি সব সময় আপনার পেছনে ফেরেশতা নিয়োগ দিয়ে রেখেছেন। নইলে একটা পোকার কামড়েও যেকোনো সময় আপনার মৃত্যু ঘটতে পারতো।
এমনকি আপনি যদি সুন্দরের কথা ধরেন, তাহলে আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের চেয়ে অধিক সুন্দর কেউ নেই। জান্নাতের হুর গিলমানের নেয়ামত পাওয়ার পর বান্দা যখন আল্লাহ তাআলাকে এক নজর দেখবে, সব নেয়ামতের কথা ভুলে গিয়ে অপলক দৃষ্টিতে আল্লাহ তাআলার দিকেই তাকিয়ে থাকবে। যতক্ষণ আল্লাহ তাআলা নিজে সরে না যাবেন, বান্দা দৃষ্টি ফিরাবে না।
তো এই হলেন আল্লাহ তাআলা। তিনি সব কিছুর মালিক। তিনি সর্বময় গুণে গুণান্বিত। তিনি ব্যতীত সব কিছুই তার সৃ্ষ্টি। সব কিছু তার পায়ের নিচে। সকলের টুটি তার হাতে। সকলের জান তার কব্জায়। তিনি কারও প্রতি মুহতাজ নন, সকলে তার মুহতাজ।
তিনি অদ্বিতীয়। তার সমকক্ষ কেউ নেই। তার প্রতিদ্বন্ধি কেউ নেই।
অতএব, ইবাদাত-আনুগত্য সব কিছুর একমাত্র প্রাপ্য আল্লাহ তাআলা।
আপনি কোন্ গুণের কারণে গাইরুল্লাহর আনুগত্য করবেন, যে গুণটি আল্লাহর মাঝে নেই?!
কোন্ গুণের কারণে আপনি আল্লাহকে ছেড়ে অন্যের সামনে মাথা নত করবেন, যে গুণটি আল্লাহর মাঝে নেই?!
আপনি কোন্ গুণের কারণে আল্লাহকে ছেড়ে অন্যকে ভালবাসবেন, যে গুণটি আল্লাহর মাঝে নেই?!
সমস্ত ভালবাসা, ইবাদাত-আনুগত্য সব একমাত্র আল্লাহর জন্য। তিনি ব্যতীত ইবাদাতের উপযুক্ত কেউ নেই। তিনি ব্যতীত আনুগত্যের অধিকারী কেউ নেই। তিনি ব্যতীত ভালবাসার প্রাপ্য কেউ নেই।
আল্লাহর রাজ্যে একমাত্র আল্লাহ ছাড়া আর কারও কোনো অধিকার নেই। আল্লাহর এই রাজত্বে যারা অন্যকে অংশীদার বসায়, আল্লাহর এই ইবাদাত-আনুগত্যে যারা গাইরুল্লাহকে শরীক করে: তারা খোদাদ্রোহী, আল্লাহর রাজ্যে আল্লাহর দুশমন।
যেখানে দুনিয়ার সামান্য থেকে সামান্য কোনো মাখলুকও আপন রাজ্যে কারও অংশীদারি বরদাশত করে না, সেখানে কেন আল্লাহ তাআলা বরদাশত করবেন?
এজন্যই তো আল্লাহ তাআলা ফিরআউনকে ডুবিয়ে মেরেছেন, নমরুদকে মশা দিয়ে হালাক করেছেন, আদ জাতিকে তুফানে ধ্বংস করেছেন। সকল নাফরমান জাতি-গোষ্ঠীকে কঠিন থেকে কঠিন আযাবে ধ্বংস করেছেন। আর আখেরাতে এসব নাফরমানের জন্য যে ভয়ানক শাস্তি রেখেছেন, তার তো কোনো কল্পনাই করা যায় না।
মোটকথা, সৃষ্টি আল্লাহর। ইবাদাত-আনুগত্য সব হবে আল্লাহর জন্য। যারা আল্লাহকে মেনে চলবে, আল্লাহর আনুগত্য করবে, তারা আল্লাহর বন্ধু। দুনিয়া আখেরাত সব তাদের জন্য।
পক্ষান্তরে যারা আল্লাহকে ছেড়ে ভিন্ন কিছুর আনুগত্য করবে, ভিন্ন কিছুকে মুহাব্বাত করবে, ভিন্ন কিছুর ইবাদাত করবে- তারা আল্লাহর দুশমন। আল্লাহর রাজ্যে বিদ্রোহী। তাদের কোনো অধিকার নেই। আল্লাহ তাআলা আমাদের হাতে অস্ত্র তুলে দিয়ে এসব খোদাদ্রোহীর বিরুদ্ধে জিহাদের নির্দেশ দিয়েছেন। এদের ধরা-মারার আদেশ দিয়েছেন। এদের ধন-সম্পদ আমাদের গনিমত করেছেন। এদেরকে আমাদের গোলাম বাঁদি বানিয়েছেন। যদি আমরা এ কাজ থেকে পিছপা হই, তাহলে আমাদেরকে দুনিয়া-আখেরাতে ভয়ানক শাস্তির সম্মুখীন করবেন বলে ফরমান জারি করেছেন।
তাহলে কি ইসলাম সাম্প্রদায়িক ধর্ম নয়?
মুহতারাম ভাই, তাহলে ইসলাম সম্প্রীতির ধর্ম, না সাম্প্রদায়িক ধর্ম?
ইসলাম সম্পূর্ণরূপে সাম্প্রদায়িক ধর্ম। ইসলাম নিজেকে ছাড়া অন্য কাউকে বরদাশত করে না। ইসলামের সামনে কেউ মাথা উঁচু করে থাকবে, ইসলাম তা সমর্থন করে না।
আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন,
هُوَ الَّذِي أَرْسَلَ رَسُولَهُ بِالْهُدَى وَدِينِ الْحَقِّ لِيُظْهِرَهُ عَلَى الدِّينِ كُلِّهِ وَلَوْ كَرِهَ الْمُشْرِكُونَ. –الصف 9
তিনিই তাঁর রাসূলকে হিদায়াত ও সত্য দ্বীন দিয়ে প্রেরণ করেছেন, যেন তিনি সকল দ্বীনের উপর তা
বিজয়ী করেন, যদিও মুশরিকরা তা অপছন্দ করে। -সফ: ৯
আর কেনোই বা করবে? আল্লাহর রাজ্যে আল্লাহকে না মেনে মাথা উঁচু করে থাকার অধিকার কার আছে? তুমি একটা হীন মাখলুক। আল্লাহর সাথে কুফরি করে তুমি মাথা উঁচু করে থাকবে, আর আল্লাহ তা বরদশাত করবে? কিছুতেই না। তিনিই তাঁর রাসূলকে হিদায়াত ও সত্য দ্বীন দিয়ে প্রেরণ করেছেন, যেন তিনি সকল দ্বীনের উপর তা
বিজয়ী করেন, যদিও মুশরিকরা তা অপছন্দ করে। -সফ: ৯
এই দুনিয়া শুধু ঈমানদারদের জন্য, আর সকল আল্লাহদ্রোহী ঈমানদারকে গোলাম বাঁদি হওয়ার জন্য। এদের ধরে, এদের মেরে, এদের রক্তে হাত রঞ্জিত করে প্রশান্তি লাভের জন্য।
আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন,
وَاقْتُلُوهُمْ حَيْثُ ثَقِفْتُمُوهُمْ وَأَخْرِجُوهُمْ مِنْ حَيْثُ أَخْرَجُوكُمْ. –البقرة 191
তোমরা যেখানেই তাদের পাবে হত্যা করবে। যেসব স্থান হতে তারা তোমাদের বহিষ্কার করে দিয়েছে, তোমারাও তাদের সেসব স্থান হতে বের করে দাও। -বাকারা ১৯১
তোমরা যেখানেই তাদের পাবে হত্যা করবে। যেসব স্থান হতে তারা তোমাদের বহিষ্কার করে দিয়েছে, তোমারাও তাদের সেসব স্থান হতে বের করে দাও। -বাকারা ১৯১
অন্য আয়াতে ইরশাদ করেন-
فَإِذَا انْسَلَخَ الْأَشْهُرُ الْحُرُمُ فَاقْتُلُوا الْمُشْرِكِينَ حَيْثُ وَجَدْتُمُوهُمْ وَخُذُوهُمْ وَاحْصُرُوهُمْ وَاقْعُدُوا لَهُمْ كُلَّ مَرْصَدٍ فَإِنْ تَابُوا وَأَقَامُوا الصَّلَاةَ وَآتَوُا الزَّكَاةَ فَخَلُّوا سَبِيلَهُمْ إِنَّ اللَّهَ غَفُورٌ رَحِيمٌ. –التوبة 5
অতঃপর যখন নিষিদ্ধ মাসগুলো অতিবাহিত হয়ে যাবে, তখন তোমরা মুশরিকদেরকে যেখানেই পাও হত্যা কর এবং তাদেরকে পাকড়াও কর, তাদেরকে অবরোধ কর এবং তাদের জন্য প্রতিটি ঘাঁটিতে (ওঁৎপেতে) বসে থাক। তবে তারা যদি তাওবা করে মুসলমান হয়ে যায় এবং সালাত কায়েম করে, যাকাত দেয়- তাহলে তাদের পথ ছেড়ে দাও। নিশ্চয় আল্লাহ বড় ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু। -তাওবা: ৫
অতঃপর যখন নিষিদ্ধ মাসগুলো অতিবাহিত হয়ে যাবে, তখন তোমরা মুশরিকদেরকে যেখানেই পাও হত্যা কর এবং তাদেরকে পাকড়াও কর, তাদেরকে অবরোধ কর এবং তাদের জন্য প্রতিটি ঘাঁটিতে (ওঁৎপেতে) বসে থাক। তবে তারা যদি তাওবা করে মুসলমান হয়ে যায় এবং সালাত কায়েম করে, যাকাত দেয়- তাহলে তাদের পথ ছেড়ে দাও। নিশ্চয় আল্লাহ বড় ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু। -তাওবা: ৫
আরও ইরশাদ করেন,
قَاتِلُوهُمْ يُعَذِّبْهُمُ اللَّهُ بِأَيْدِيكُمْ وَيُخْزِهِمْ وَيَنْصُرْكُمْ عَلَيْهِمْ وَيَشْفِ صُدُورَ قَوْمٍ مُؤْمِنِينَ. -التوبة: 14
তোমরা তাদের বিরুদ্ধে লড়াই কর; আল্লাহ তোমাদের হাতে তাদের আযাব দেবেন, তাদেরকে অপদস্থ করবেন, তোমাদেরকে তাদের বিরুদ্ধে সাহায্য করবেন এবং মুমিন কওমের অন্তর জুড়িয়ে দেবেন। -তাওবা: ১৪
তোমরা তাদের বিরুদ্ধে লড়াই কর; আল্লাহ তোমাদের হাতে তাদের আযাব দেবেন, তাদেরকে অপদস্থ করবেন, তোমাদেরকে তাদের বিরুদ্ধে সাহায্য করবেন এবং মুমিন কওমের অন্তর জুড়িয়ে দেবেন। -তাওবা: ১৪
মুহতারাম ভাই, এই দুনিয়া ক্ষণস্থায়ী। আজ আছে কাল থাকবে না। সবাইকে আল্লাহর সামনে দাঁড়াতে হবে। হিসাব দিতে হবে: আল্লাহকে রব মেনেছিলাম তো রুবুবিয়াতের হক কতটুকু আদায় করেছি? আল্লাহকে ইলাহ মেনেছিলাম তো ইলাহিয়াতের হক কতটুকু আদায় করেছি? আল্লাহর জন্য জান-জীবন কতটুকু দিতে পেরেছি? আল্লাহর নির্দেশগুলো কতটুকু মেনে এসেছি?
আজ আমাদের চোখের সামনে আল্লাহর কালামের অবমাননা হচ্ছে। আল্লাহর দুশমনরা যমিনে দর্পভরে ঘুরে বেড়াচ্ছে। যুগের পর যুগ ধরে মুসলিম ভাইরা শুধু আল্লাহর উপর ঈমান রাখার কারণে নির্যাতিত হয়ে আসছে। আমাদের কি কিছুই করার নেই?
বলা হচ্ছে ইসলাম সম্প্রীতির ধর্ম!!
আল্লাহদ্রোহীদের সাথে কিসের সম্প্রীতি?! আপনি কি আল্লাহর চেয়ে বেশি সম্প্রীতি বুঝেন? তাহলে কেন তিনি ফিরআউনকে ডুবিয়ে মারলেন? কেন আদ, সামুদ, কওমে নুহ, কওমে লুতসহ শত জাতি গোষ্ঠীকে ভয়ানক আযাবে ধ্বংস করলেন? কেন এদের জন্য আখেরাতের মর্মন্তুদ চিরস্থায়ী শাস্তি প্রস্তুত রাখলেন?
যদি আপনি আল্লাহকে বিশ্বাস করে থাকেন, যদি আল্লাহর আনুগত্য কবুল করে থাকেন, তাহলে আল্লাহর দুশমনদের সাথে কখনও সম্প্রীতি হতে পারে না। যদি আপনি সম্প্রীতিবাদি হয়ে থাকেন, তাহলে আপনার ঈমানের খবর নিন।
আল্লাহ তাআলার পরিষ্কার ঘোষণা,
وَلَوْ كَانُوا يُؤْمِنُونَ بِاللَّهِ وَالنَّبِيِّ وَمَا أُنْزِلَ إِلَيْهِ مَا اتَّخَذُوهُمْ أَوْلِيَاءَ. -المائدة: 81
তারা যদি সত্যিই আল্লাহ, (তার) নবী এবং তার উপর যা কিছু নাযিল করা হয়েছে তাতে যথাযথ ঈমান রাখতো, তাহলে কাফেরদের বন্ধুরূপে গ্রহণ করতে পারতো না। -মায়িদা ৮১
***
তারা যদি সত্যিই আল্লাহ, (তার) নবী এবং তার উপর যা কিছু নাযিল করা হয়েছে তাতে যথাযথ ঈমান রাখতো, তাহলে কাফেরদের বন্ধুরূপে গ্রহণ করতে পারতো না। -মায়িদা ৮১
***
Comment