জায়োনিস্ট ও ক্রুসেড রাষ্ট্রগুলোর পাসপোর্টের মান কেন এত উর্ধমুখী! কখনো কি ভেবে দেখেছেন?
জায়োনিস্ট ও ক্রুসেড রাষ্ট্রগুলোর পাসপোর্টের মান কেন এত উর্ধমুখী! কখনো কি ভেবে দেখেছেন? আমাদের এ বিষয়ে গভীরভাবে চিন্তা-ভাবনা করার এখন সময় এসেছে। আমরা যদি সমসাময়িক বিভিন্ন সমস্যা নিয়ে আলোচনা-পর্যালোচনা না করি তবে আমরা সমসাময়িক সমস্যাগুলো থেকে কখনোই বের হয়ে আসতে পারবো না এবং সমাধানের পথও খুঁজে পাবো না। তাই আজকে এ বিষয়ে কিছু আলোচনা করার প্রয়োজন বোধ করছি। আশা করি এ থেকে আমরা উপকৃত হতে পারবো ইনশা আল্লাহ্।
উপনিবেশিক শাসন বিলুপ্তির পর দখলদার সাম্রাজ্যবাদী রাষ্ট্রগুলো তাদের কলোনিগুলো থেকে চলে যেতে বাধ্য হয়। তারা বুঝতে পারে যে এইভাবে কলোনিগুলোতে অবাধে ব্যবসা-বাণিজ্য পরিচালনা করা অনেক ঝুঁকিপূর্ণ। তাই তারা তাদের ব্যবসা-বাণিজ্য গুঁটিয়ে নিজ নিজ দেশে চলে যেতে বাধ্য হয়। কিন্তু চলে যাওয়ার সময় তারা তাদের কলোনিগুলোকে বিভিন্ন ছোট ছোট রাষ্ট্রে বিভক্ত করে দিয়ে যায় এবং এই রাষ্ট্রগুলোতে তারা তাদের পছন্দসই মুসলিম নামধারী গোলাম শাসকদের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর করে তাদের হাতে রংবেরঙের বিভিন্ন পতাকা ও গণতন্ত্র-নামক কুফরি ও শিরকি শাসন ব্যবস্থা ধরিয়ে দিয়ে যায়। সেই সাথে রেখে যায় তাদের নাপাক সংস্কৃতি ও শিক্ষা ব্যবস্থা। নিজ নিজ দেশে ফিরে যাওয়ার পরও তারা চুপ করে বসে থাকেনি। বরং তারা নিজ দেশে থেকে নতুন নতুন ষড়যন্ত্রের জাল বুনতে থাকে। কিভাবে তারা মুসলিম দেশগুলোর উপর অর্থনৈতিক শোষণ জারি রাখতে পারে সেই পরিকল্পনা করতে থাকে। মুসলিমদেরকে পঙ্গু জাতিতে পরিণত করতে তারা বেছে নেয় সামরিক ও বুদ্ধিবৃত্তিক আগ্রাসনের পথ।
তারা খুব স্পষ্টভাবে বুঝতে পারে যে একশ্রেণীর মুসলিম নামধারী মীরজাফর ব্যতীত তারা মুসলিম দেশগুলোতে তাদের সামরিক ও বুদ্ধিবৃত্তিক আগ্রাসন এবং অর্থনৈতিক শোষণের পথ জারি রাখতে পারবে না। এজন্য তারা মুসলিম উপনিবেশগুলোতে রেখে যাওয়া তাদের গোলাম শাসকদের বিভিন্নভাবে সাহায্য সহযোগিতা করতে থাকে। মূলত তারা নিজ স্বার্থের জন্যই মুসলিম উপনিবেশগুলোতে রেখে যাওয়া তাদের গোলাম শাসকদের সাহায্য সহযোগিতা করা সংগত মনে করতো। পরবর্তীতে তারা তাদের রেখে যাওয়া গোলাম শাসকদের উপর ভর করেই মুসলিম রাষ্ট্রগুলোতে একচেটিয়া প্রভাব বিস্তার করে। তারা এই সুযোগেই মুসলিম রাষ্ট্রগুলোতে অবাধে ব্যবসা-বাণিজ্যের প্রসার ঘটায়। মুসলিম নামধারী দালাল শাসকেরাও তাদেরকে সাদরে অভ্যর্থনা জানায়। পাশাপাশি গোপনে তারা নিউ ওয়ার্ল্ড অর্ডার বাস্তবায়নের মিশন নিয়ে সামনে পুরো-দমে এগিয়ে যায়।
উপনিবেশিক শাসনের বিলুপ্তির পর মুসলিম রাষ্ট্রগুলোতে তাদের ব্যবসা-বাণিজ্যের একচেটিয়া বাজার সৃষ্টি হওয়ার কারণে মুসলিম রাষ্ট্রগুলোতে তাদের ব্যাপক ভ্রমণের প্রয়োজনীয়তা অনুভূত হয়। মুসলিম দেশগুলোতে তাদের অবাধ ব্যবসা-বাণিজ্য এবং ভ্রমণের স্বার্থেই তারা তাদের পাসপোর্টের মান উন্নতি করতে থাকে। তারা খুব ভালো করেই উপলব্ধি করতে পারে যে এমন এক বিশ্ব ব্যবস্থা গড়ে তুলতে হবে যেখানে আড়ালে থেকে এবং অনেকটা নিরাপদে থেকে মুসলিমদেরকে শোষণ করা যায়। এরই অংশ হিসেবে তারা মুসলিমদের শোষণ ও কোণঠাসা করে রাখার জন্য গড়ে তোলে তাদের বিশাল সামরিক বাহিনী। পরবর্তীতে তাদের দেশের কথিত নিরাপত্তার অজুহাতে মুসলিম ভূখণ্ডগুলোতে মুসলিম নামধারী গাদ্দার শাসকদের সহায়তায় বিশাল বাহিনী প্রেরণ করে। আসলে এটা ছিল তাদের অজুহাত মাত্র। মূলত ইসলাম ও মুজাহিদদের উত্থানকে রুখে দেওয়া এবং মুসলিমদের সম্পদগুলোকে অবাধে চুরি করার উদ্দেশ্যেই তারা তাদের বিশাল সামরিক বহর প্রেরণ করে।
অপরদিকে তাদের দেশের নিচ্ছিদ্র নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সীমান্তগুলোতে নির্মাণ করতে থাকে কংক্রিটের দেয়াল ও কাঁটাতারের বেড়া, যাতে করে তারা খুব সহজেই মুসলিমদের অনুপ্রবেশসহ তৃতীয় বিশ্বের দরিদ্র দেশগুলোর মানব-ঢল রুখতে পারে। ইসলামের উত্থানকে রুখে দেওয়ার জন্য এবং মুসলিমদেরকে গোলামের জাতিতে পরিণত করতে তারা খুব পরিকল্পিতভাবে কুফরি জাতিসংঘের সহায়তায় মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ রাষ্ট্রগুলোর পাসপোর্টের মান নিম্নমুখী করতে থাকে। তারা এমন এক সূচক তৈরি করে যেখানে তাদের মিত্র উন্নত রাষ্ট্রগুলোর পাসপোর্টের মান উর্ধমুখী রাখা হয় এবং খুব পরিকল্পিতভাবেই মুসলিম রাষ্ট্র-গুলোসহ তৃতীয় বিশ্বের দরিদ্র রাষ্ট্রগুলোর পাসপোর্টের মান নিম্নমুখী রাখা। একই ভাবে মুদ্রার মান নির্ধারণের ক্ষেত্রে অনুরূপ নীতি অবলম্বন করে। যদিও মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ রাষ্ট্রগুলোর সম্পদ ও জনবল কোনটিই অভাব ছিল না। আর এটা তারা করেছে মুসলিম রাষ্ট্র-গুলোসহ তৃতীয় বিশ্বের দরিদ্র রাষ্ট্রগুলোকে অবাধে শোষণের জন্য। তাদের মনের জঘন্য আক্রোশ যে মুসলিমরা যেন কোনভাবেই মাথা উঁচু করে দাড়াতে না পারে।
মুসলিমরা যাতে জায়োনিস্ট ও ক্রুসেড রাষ্ট্রগুলোতে অবাধে প্রবেশ এবং ব্যবসা-বাণিজ্য করতে না পারে সেই জন্য তারা বিভিন্ন কড়াকড়ি আরোপ করতে থাকে। জায়োনিস্ট ও ক্রুসেড রাষ্ট্রগুলোর পাসপোর্টের মান উন্নত হওয়ায় তারা খুব সহজেই মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ রাষ্ট্রগুলোতে ভ্রমণ করতে পারতো। ফলশ্রুতিতে দিনদিন তাদের ব্যবসা-বাণিজ্যের ব্যাপক প্রসার ঘটতে থাকে। আর বর্তমানে তো পশ্চিমা সাদা চামড়ার আমেরিকান ও ইউরোপিয়ানরা কোনো প্রকার ভিসা ছাড়াই পৃথিবীর যেকোনো দেশে অবাধে ভ্রমণ করতে পারে। অপর দিকে তারা মুসলিমদের ভ্রমণের উপর আরোপ করেছে বিভিন্ন কড়াকড়ি। মুসলিমদের যখন জায়োনিস্ট ও ক্রুসেড রাষ্ট্রগুলোতে ভ্রমণের প্রয়োজন হত, তখন তাদেরকে বিভিন্ন অজুহাতে ভিসা দেওয়া হতো না, কিংবা ভিসা দেওয়া হলেও বিভিন্ন আইনি বাধ্যবাধকতা ছিল। আর সেই লোকটি যদি দাঁড়ি টুপি-ওয়ালা হতো তবে তো তার জন্য ভিসা ছিল সুদূরপরাহত বিষয়। মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ রাষ্ট্রগুলোর পাসপোর্টের মান খারাপ হওয়ায় ভিসা তো দূরের কথা অনেকে তো জায়োনিস্ট ও ক্রুসেড রাষ্ট্রগুলোর অ্যাম্বাসির সামনেই দাড়াতে পারতো না। আর বর্তমানে তো পাসপোর্টের মান খারাপ হওয়ায় ভিসা সমস্যা আরও প্রকট আকার ধারণ করেছে। গরিব মুসলিম দেশগুলোর কেউ যদি ব্যবসায়িক কাজে পশ্চিমা দেশগুলোতে ভ্রমণ করতে চায় তবে পাসপোর্ট ও ভিসা জটিলতার কারণে তার ভ্রমণ করা সম্ভব হয় না কিংবা ভিসা প্রক্রিয়া আটকে যায়।
কিন্তু ঠিকই পশ্চিমাদের পাসপোর্টের মান উন্নত হওয়ার কারণে কোন প্রকার ভিসা জটিলতা ছাড়াই মুসলিম দেশ-গুলোসহ পৃথিবীর যেকোনো দেশে অবাধে ভ্রমণ করতে পারে। সাদা চামড়ার পশ্চিমারা ঘরে বসেই তাদের ভ্রমণের যাবতীয় কাজ সম্পূর্ণ করে ফেলতে পারে কোনো প্রকার জটিলতা ছাড়াই। আর হ্যাঁ এটাই হচ্ছে পশ্চিমাদের নোংরা নীতি। তারা নিজেদের স্বার্থেই এমনটি করতে পছন্দ করে। নিউ ওয়ার্ল্ড অর্ডার বাস্তবায়নের স্বার্থেই তারা পাসপোর্টের মান এমনভাবে নির্ধারণ করেছে যাতে করে মুসলিমদের উত্থানকে রুখে দেওয়া যায়। একদিকে উচ্চ-মানসম্পন্ন জায়োনিস্ট ও ক্রুসেড রাষ্ট্রগুলোর পাসপোর্ট এবং অন্যদিকে নিম্ন-মানসম্পন্ন মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ রাষ্ট্র-গুলোসহ তৃতীয় বিশ্বের দরিদ্র রাষ্ট্রগুলোর পাসপোর্ট। তারা যে কতটা ইসলাম বিদ্বেষী, তাদের দেশে মুসলিমদের উপর ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা থেকেই তা আঁচ করা যায়। কিন্তু তা সত্যেও সাদা চামড়ার পশ্চিমারা কিন্তু দিব্যি মুসলিমদের দেশে অবাধে ভ্রমণ করতে পারে। আর এটা সম্ভব হয়েছে মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশগুলোতে তাদের নির্বাচিত মুসলিম নামধারী দালাল শাসকদের কারণে। এই দালাল শাসক গোষ্ঠী ও তাদের অনুগত বাহিনী, যাদের কারণে মুসলিমদের আজ এই অবস্থা। তারা একদিকে ইসলামের শত্রুদের কঠোর নিরাপত্তা দিচ্ছে, অপরদিকে কথিত সন্ত্রাসবাদ দমনের অজুহাতে তাদের নিজ দেশের মুসলিম জনগোষ্ঠীর উপর ভয়াবহ জুলুম নির্যাতন চালাচ্ছে।
তাই আমাদেরকে এ কথা ভালোভাবে মনে রাখা উচিত যে বাহিরের শত্রুদের চেয়ে ঘরের ভেতরের শত্রুরা বেশি জঘন্য। এরাই হচ্ছে তারা যারা মুসলিমদের ভূমিগুলোকে ইসলামের শত্রুদের জন্য উন্মুক্ত করে দিয়েছে খুবই সস্তা মূল্যে। আল্লাহ্ তা’আলা যেন আমাদেরকে আগ্রাসী শত্রুদের সমস্ত ষড়যন্ত্র থেকে হেফাজত করেন আমিন।
Comment