কোরআন ও সুন্নাহ বিবর্জিত জড়বাদী বিশ্ব আমাদেরকে কোনদিকে দাওয়াত দিচ্ছে?
বর্তমান জামানার ফিতনা বড়ই অভিনব এবং সর্বগ্রাসী। দিনদিন যেন চারদিকে ফিতনা বেড়েই চলেছে। বর্তমান জামানার ফিতনার শাখা-প্রশাখা যে কত বিস্তৃত তা সামান্য কিছু কথা বা লেখনীর মাধ্যমে তুলে ধরা সম্ভব নয়। তবে বোঝার সুবিধার্থে সংক্ষিপ্তভাবে আমরা ফিতনার ধরণ ও দিক নিয়ে আলোচনা করতে পারি। আশা করি এ থেকে আমরা উপকৃত হতে পারবো ইনশা আল্লাহ্।
বর্তমান জামানার ফিতনাসমূহের মধ্যে জড়বাদী বিশ্ব ব্যবস্থার ফিতনা একটি ভয়াবহ ফিতনা। প্রথমে আমাদের বুঝতে হবে জড়বাদী বিশ্ব ব্যবস্থা কি? জড়বাদী বিশ্ব ব্যবস্থা হচ্ছে এমন এক শেকড়-বিহীন বিশ্ব ব্যবস্থা যেখানে না মানা হয় কোরআন আর না মানা হয় সুন্নাহ। বস্তুত জড়বাদী বিশ্ব ব্যবস্থা হচ্ছে এমন এক বিশ্ব ব্যবস্থা যেখানে এক আল্লাহর পরিবর্তে বহু উপাস্যকে ইলাহ হিসেবে গণ্য করা হয়, যারা না নিজেদের উপকার কিংবা ক্ষতি করতে পারে, না অন্যের। জড়বাদী বিশ্ব ব্যবস্থার মূল কথা হচ্ছে কারো মনে চাইলে সে ধর্ম-কর্ম করবে আর মনে না চাইলে ধর্ম-কর্ম করবে না। মনে চাইলে সে স্রষ্টাকে মানবে আর মনে না চাইলে মানবে না। মূলত জড়বাদী বিশ্ব এমন এক স্রষ্টা-বিহীন নাস্তিক্যবাদী বিশ্ব ব্যবস্থা গড়ে তুলতে চায়, যেখানে মানুষের মনে যা চায় তাই করতে পারে। আল্লাহ্ আমাদের এই ফিতনা থেকে হেফাজত করুন। জড়বাদী বিশ্ব ব্যবস্থা হচ্ছে এমন এক বিশ্ব ব্যবস্থা যেখানে নাস্তিক্যবাদীরা মনে করে যে এই মহাবিশ্ব আপনা-আপনিই বিশেষ কোন প্রাকৃতিক পরিবর্তন ও নিয়মের মধ্য দিয়ে স্রষ্টা-বিহীন সৃষ্টি হয়েছে এবং অবিরাম চলছে। সুবহানআল্লাহ্! কত বড় কথা? তাদের কাছে কি কোনো প্রমাণ রয়েছে যার ভিত্তিতে এমন কথা বলে।
আরো স্পষ্ট করে বললে বলতে হয় যে জড়বাদী বিশ্ব ব্যবস্থা হচ্ছে সেই বিশ্ব ব্যবস্থা যেখানে এক আল্লাহর পরিবর্তে বহু উপাস্যের ইবাদত করা হয়। জড়বাদী বিশ্ব ব্যবস্থা হচ্ছে সেই বিশ্ব ব্যবস্থা যেখানে এক আল্লাহর পরিবর্তে অসার মূর্তির ইবাদত করা হয়। জড়বাদী বিশ্ব ব্যবস্থা হচ্ছে সেই বিশ্ব ব্যবস্থা যেখানে বলা হয় ধর্ম যার যার উৎসব সবার। জড়বাদী বিশ্ব ব্যবস্থা হচ্ছে সেই বিশ্ব ব্যবস্থা যেখানে রাষ্ট্র ধর্ম ইসলামকে সংবিধান থেকে বাদ দেওয়ার কথা বলা হয়। জড়বাদী বিশ্ব ব্যবস্থা হচ্ছে সেই বিশ্ব ব্যবস্থা যেখানে রাষ্ট্রের মোড়লরা মন্দিরে যায় আবার বছরে বছরে ওমরাহও পালন করে। মোট কথা জড়বাদী বিশ্বের অভিভাবক হচ্ছে বিতাড়িত ইবলিশ শয়তান। আর এটিই হচ্ছে দাজ্জালী বিশ্ব ব্যবস্থা।
ভোগবাদ, পুঁজিবাদ, সমস্ত দুনিয়াবি অশ্লীল-বেহায়াপনা এবং শিরক ও কুফরের উপর ভিত্তি করেই এই শেকড়-বিহীন শয়তানী বিশ্ব ব্যবস্থা গড়ে উঠেছে। আল্লাহ্ আমাদেরকে এই শয়তানী বিশ্ব ব্যবস্থার ফিতনা থেকে হেফাজত করুন। অশ্লীল বেহায়া নারীরা এই শয়তানী বিশ্ব ব্যবস্থার শক্তিশালী হাতিয়ার। শয়তানী বিশ্ব ব্যবস্থার ধারক-বাহকেরা অশ্লীল বেহায়া নারীদের মাধ্যমে মানুষদেরকে শয়তানের দিকে দাওয়াত দেয়। সবধরনের অশ্লীল গান-বাজনা, নাটক, সিনেমা, অশ্লীল বিনোদন, মদ, জুয়া, সুদ, ঘুষ, দাজ্জালী মিডিয়া ইত্যাদি হচ্ছে জড়বাদী ও ভোগবাদী বিশ্ব ব্যবস্থার উপকরণ।
জড়বাদী ও ভোগবাদী বিশ্ব ব্যবস্থার মোড়লদের বৈশ্বিক বিভিন্ন সমস্যা নিয়ে খুবই উদ্বিগ্ন হতে দেখা যায়। কিন্তু তারা কখনো এ থেকে সমাধানের পথ ও পদ্ধতি খুঁজে পায় না। এর প্রকৃত কারণ হচ্ছে তারা কোরআন ও সুন্নাহর আলো থেকে বঞ্চিত। যেখানে সবকিছু সমাধানের পথ ও পদ্ধতি রয়েছে সেই বিষয়ের জ্ঞান না থাকার কারণে তারা সমস্যার প্রকৃত কারণ ও সমাধানের পথ ও পদ্ধতি কখনোই খুঁজে পায় না। জড়বাদী বিশ্ব ব্যবস্থার দাজ্জালী মিডিয়াগুলো যখন কোন বিপর্যয়ের সংবাদ প্রচার করে তখন তারা এই বলে প্রচার করে যে প্রাকৃতিক দুর্যোগের ফলে সৃষ্ট বন্যা, জলোচ্ছ্বাস কিংবা ভূমিকম্পের ফলে ব্যাপক প্রাণহানি ও ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। কিন্তু তারা কখনো একথা বলে না যে মানুষের নাফরমানির কারণে আল্লাহর পক্ষ থেকে প্রেরিত আযাবে ব্যাপক প্রাণহানি ও ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে।
মহান আল্লাহ্ তা’আলা পবিত্র কালামে মাজিদে ইরশাদ করেন,
ظَهَرَ الْفَسَا دُ فِى الْبَرِّ وَا لْبَحْرِ بِمَا كَسَبَتْ اَيْدِى النَّا سِ لِيُذِيْقَهُمْ بَعْضَ الَّذِيْ عَمِلُوْا لَعَلَّهُمْ يَرْجِعُوْنَ
"মানুষের কৃতকর্মের কারণে জলে স্থলে বিপর্যয় দেখা দিয়েছে যাতে তিনি তাদেরকে তাদের কোন কোন কাজের শাস্তি আস্বাদন করান, যাতে তারা (অসৎ পথ হতে) ফিরে আসে।" (সূরা আর রুমঃ আয়াত ৪১)
একথা ধ্রুব সত্য যে জলে ও স্থলে যে বিপর্যয় দেখা দেয় তা মানুষের দুই হাতের কামাই। মানুষই এজন্য সম্পূর্ণ দায়ী। আর এ কারণে আল্লাহ্ তা’আলা মানুষকে তাদের মন্দ কৃতকর্মের দরুন দুনিয়াতেই কো্নো কোনো কাজের শাস্তি আস্বাদন করান, যাতে করে মানুষ মন্দ কর্ম পরিহার করে আল্লাহ্ তা’আলার দিকে ফিরে আসে। যদিও আল্লাহ্ তা’আলা দুনিয়াতে এসব গোনাহের পুরোপুরি প্রতিফল দেন না এবং প্রত্যেক গোনাহর কারণেই বিপদ আসে না। বরং অনেক গোনাহ, তো ক্ষমা করে দেয়া হয়।
দাজ্জালী মিডিয়াগুলো কখনো কোরআনের নুর দেখতে পায় না। একারণে তারা কখনোই কোরআনের দৃষ্টান্ত মানুষের কাছে প্রচার করে না। তারা কখনো মানুষকে এ কথা বলে না যে সকল মন্দ কর্ম পরিহার করে এক আল্লাহর দিকে ফিরে আসুন। যার কাছে গেলে সমস্যার সমাধান পাওয়া যাবে দাজ্জালী মিডিয়াগুলো মানুষকে কখনোই সেই দিকে আহ্বান করে না। বরং তারা মানুষকে জড়বাদী বিশ্বের দিকে দাওয়াত দেয় সমস্যা সমাধানের জন্য। অথচ কসমিক কালেও সেখানে সমস্যার সমাধান নেই। সমস্যা সমাধানের মালিক এক মাত্র আল্লাহ্ তা’আলাই। করোনা মহামারী থেকে পরিত্রাণ পেতে বারবার হাত-মুখ ধোয়া, সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা কিংবা মাস্ক ব্যবহারের কথা হলুদ মিডিয়াগুলো ও দালাল শাসকেরা ফলাউ করে প্রচার করে। কিন্তু করোনা মহামারী থেকে পরিত্রাণ পেতে তারা কখনো করোনা মহামারীর মালিক আল্লাহ তা’আলার দিকে দাওয়াত দেয় না। তারা কখনো বলে না যে মহামারী থেকে পরিত্রাণ পেতে চাইলে এই মহামারীর মালিক আল্লাহ্ তা’আলার দিকে প্রত্যাবর্তন করুন। বরং তারা আল্লাহর নূরকে নিভিয়ে দেওয়ার জন্য জোর প্রচেষ্টা চালায়। ইসলামকে মিটিয়ে দেওয়ার এহেন কোনো ঘৃণ্য ষড়যন্ত্র নেই যা তারা করে না। তাদের মধ্যে অনেকেই জেনে বুঝে ইসলামের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রে লিপ্ত আছে। একথা ধ্রুব সত্য যে ষড়যন্ত্রকারীরা যতই ষড়যন্ত্র করুক না কেন তারা দ্বীন ইসলামের কোনোই ক্ষতি করতে পারবে না। বরং যারা দ্বীন ইসলামের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রে লিপ্ত আছে তারাই ইহকাল ও পরকালে ক্ষতির সম্মুখীন হবে।
পরিশেষে আল্লাহর কাছে দোয়া করছি, তিনি যেন আমাদেরকে দাজ্জালী বিশ্ব ব্যবস্থার সব ধরণের ফিতনা থেকে হেফাজত করেন। আমিন ইয়া রব্বাল আলামিন।
Comment