Announcement

Collapse
No announcement yet.

তালেবান কি বদলে গেছে? (তালেবান মুজাহিদিন সম্পর্কে আইএসের ছড়ানো সংশয় ও অপবাদের জবাব) || কা&#

Collapse
This is a sticky topic.
X
X
 
  • Filter
  • Time
  • Show
Clear All
new posts

  • তালেবান কি বদলে গেছে? (তালেবান মুজাহিদিন সম্পর্কে আইএসের ছড়ানো সংশয় ও অপবাদের জবাব) || কা&#


    مؤسسة الفردوس
    আল ফিরদাউস
    Al Firdaws

    تـُــقدم
    পরিবেশিত
    Presents

    في اللغة البنغالية
    বাংলা ভাষায়
    In the Bengali Language

    بعنوان:
    শিরোনাম:
    Titled:

    بين طالبان اليوم وطالبان الأمس
    ما الذي تغير؟

    তালেবান কি বদলে গেছে?
    (তালেবান মুজাহিদিন সম্পর্কে আইএসের ছড়ানো সংশয় ও অপবাদের জবাব)

    Taliban changed?


    لكريم النكادي
    কারিম আন-নাক্কাদী
    By karim an-naqqadi






    للقرائة المباشرة والتحميل
    সরাসরি পড়ুন ও ডাউনলোড করুন
    For Direct Reading and Downloading









    روابط بي دي اب
    PDF (763 KB)
    পিডিএফ ডাউনলোড করুন [৭৬৩ কিলোবাইট]











    روابط ورد
    Word (554 KB)
    ওয়ার্ড [৫৫৪ কিলোবাইট]











    روابط الغلاف- ١
    book Banner [2.1 MB]
    বুক ব্যানার ডাউনলোড করুন [২.১ মেগাবাইট]








    روابط الغلاف- ٢
    Banner [1.2 MB]
    ব্যানার ডাউনলোড করুন [১.২ মেগাবাইট]






    https://files.fm/f/45nm37x48


    মূল প্রবন্ধের লিঙ্ক - https://bit.ly/3yuT95R , আস সুমুদ ম্যাগাজিনের ১১-১৫ পৃষ্ঠা


    ************
    مع تحيّات إخوانكم
    في مؤسسة الفردوس للإنتاج الإعلامي
    আপনাদের দোয়ায় মুজাহিদ ভাইদের স্মরণ রাখবেন!
    আল ফিরদাউস মিডিয়া ফাউন্ডেশন
    In your dua remember your brothers of
    Al Firdaws Media Foundation


    নিয়মিত খবর পড়তে ভিজিট করুনঃ https://alfirdaws.org

  • #2
    আল্লাহ তা'য়ালা খাওয়ারিজদের সকল ফিতনা থেকে আমাদের সকল ভাই-বোনকে হেফাজত করুন, আল্লাহুম্মা আমিন ইয়া রব্বাল আলামিন।

    Comment


    • #3




      তালেবান কি বদলে গেছে?

      (তালেবান মুজাহিদিন সম্পর্কে আইএসের ছড়ানো সংশয় অপবাদের জবাব)


      মূল: কারিম আন-নাক্কাদী
      অনুবাদ: মুহাম্মাদ ইমতিয়াজ










      সূচীপত্র
      প্রথম অভিযোগ: মুসলিম রাষ্ট্রের শাসককে কাফের না বলে মুসলিম বলে আখ্যায়িত করা এবং তাদের রাষ্ট্রগুলোকে ইসলমী রাষ্ট্র আখ্যা দেয়া, যেমন সৌদি আরব ও ইরান, যাকে বর্তমানের তালেবানের তরফ থেকে ‘ইসলামি প্রজাতন্ত্র ইরান’ এই নামে ভূষিত করা হয়েছে। 6
      দ্বিতীয় অভিযোগ: চীন, রাশিয়া, কাতার ও ইরানসহ বিভিন্ন রাষ্ট্রের সাথে কুটনৈতিক সম্পর্ক গড়ে তোলা। 9
      তৃতীয় অভিযোগ: ইমারাতে ইসলামিয়া আফগানিস্তানের এ ঘোষণা যে, তারা আফগানিস্তানের ভুমিকে আমেরিকা ও তার মিত্রদের হুমকির জন্য ব্যবহার করতে দিবে না। 13
      চতুর্থ অভিযোগ: শিয়া আকিদা সম্পন্ন কিছু উপদলকে ইমারাতে ইসলামিয়া তাদের দলে শামিল করেছে। 16
      পঞ্চম অভিযোগ: ইমারাতে ইসলামিয়া আফগানিস্তান তাদের (আইএস এর) দৃষ্টিতে তাওহীদপন্থীদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে এবং আন্তর্জাতিক অঙ্গনে সেই যুদ্ধের ঘোষণা দেয়। 18








      গত ২৯শে ফেব্রুয়ারি ২০২০ ইং. সালে ইমারতে ইসলামিয়া আফগানিস্তান (তালেবান) ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মাঝে ‘দোহা চুক্তি’র মাধ্যমে আফগানিস্তানে দীর্ঘ দুই দশক ধরে চলা আমেরিকান দখলদারিত্বের অবসান ঘটেছে। তবে এই চুক্তির পর কিছু কিছু মানুষ এই আশঙ্কা প্রকাশ করেছে যে, বর্তমান তালেবানের আদর্শ ও নীতির মাঝে পরিবর্তন হয়েছে। বিশেষ করে তালেবানের কিছু সহযোগী ও সমর্থকরাও এমনটি মনে করছে। অথচ তারা বিষয়টি ভালোভাবে লক্ষ্য করেননি। এমনকি কেউ কেউ তো এমন আপত্তিও উত্থাপন করেছে যে, তালেবান তার মূল আদর্শ ও নীতি থেকে সরে এসেছে। মূলত এসব অভিযোগের অধিকাংশই উঠে এসেছে ‘আইএস’ সংগঠন থেকে। তবে বাস্তবতা হচ্ছে, এসব অভিযোগ কেবল নতুন করে দোহা চুক্তির পর উঠেনি, বরং তানযীম আল-কায়েদা ‘আইএস’ এর সাথে সম্পর্ক ছিন্নের ঘোষণা দেওয়ার পরপর-ই কিছু লোক এসব অভিযোগ উত্থাপন করতে শুরু করে। সেই সময় থেকেই ‘আইএস’ এর অনুসারীরা ‘ইমারতে ইসলামিয়া আফগানিস্তান’ (তালেবান) এর বিরুদ্ধে এধরণের অপপ্রচার চালিয়ে যাচ্ছে। তারা দাবি করছে বর্তমানের তালেবান আর আগের তালেবান এক নয়। তাদের ধারণা মতে আগের তালেবান আল্লাহর আদেশ পালনে অবিচল মুসলিম ও মুজাহিদ ছিলো। কিন্তু বর্তমান তালেবান কাফেরদের ভাড়াটে গোলাম ও মুরতাদ (নাউযুবিল্লাহ)। তাদের ধারণা মতে, বর্তমান তালেবানের মাঝে এমন কিছু নতুন বিষয় প্রকাশ পেয়েছে, যা পূর্বের তালেবানের মধ্যে ছিল না। অথচ (তালেবানের বিষয়ে) ‘আইএস’এর সর্বশেষ প্রকাশিত সাংগঠনিক ভিডিও বার্তায় তালেবানের প্রশংসা করা হয়েছে।
      ‘আইএস’এর অফিসিয়াল মুখপাত্র প্রয়াত আবু মুহাম্মাদ আদনানী ৭ই আগস্ট ২০১১ ইং. সালে প্রকাশিত إن الدولة الإسلامية باقية (ইসলামী রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠিত থাকুক!) এই শিরোনামে একটি রেকর্ড বার্তায়[1] বলেন:
      “আমাদের এই বার্তা ঐ দলের প্রতি যারা আল্লাহর আদেশ পালনার্থে জিহাদ করে যাচ্ছে এবং আল্লাহর পথে কোন নিন্দুকের নিন্দাকে ভয় করে না। পৃথিবীর বিভিন্ন ভূখণ্ডের সকল মুজাহিদদের প্রতি, বিশেষভাবে সুউচ্চ মজবুত পাহাড়সম ধৈর্যের অধিকারী, বিশাল সমুদ্রসদৃশ মহত ব্যক্তিত্ব মহামান্য শাইখ মোল্লা উমর রহিমাহুল্লাহ এবং তার পশতুন ও তালেবান সাথীগণের প্রতি। (তার জন্য আমার বাবা মা উৎসর্গ হোক) যারা আমাদের জন্য মজবুত প্রস্তরখন্ড ও শক্তিশালী দূর্গতুল্য”।
      এরপর তিনি তালেবান ও তাদের আমীরের প্রশংসায় একটি কবিতা আবৃতি করেছেন।
      কবিতাটি হলো:
      “হে মাজলুম! তুমি আশ্রয়গ্রহণ করো মোল্লা উমরের কাছে,
      তার অবস্থান হলো, নিরপেক্ষ, সঠিক, যার নজীর দূর্লভ,
      পশতুন ও তালেবান আমাদের (মুসলিম উম্মাহর) রক্ষাকারী।
      তারা অঙ্গীকার করেছে র‏হমানের সাথে,
      করবে না তারা বিশ্বাসঘাতকতা, করবে না তারা কখনও ইসলামের অপমান।
      যতক্ষণ সঞ্চায়িত থাকবে তাদের প্রাণ, অথবা ঝরবে রক্ত ইসলাম রক্ষায়”।

      সামনের আলোচনায় আমরা ঐসমস্ত বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনা করবো, যেগুলোর ভিত্তিতে ‘আইএস’ বর্তমান তালেবানকে পথভ্রষ্ট ও কুফরির অপবাদ দিচ্ছে। অথচ ৭ই আগস্টের পূর্বে ‘আইএস’এর তরফ থেকে ইমরাতে ইসলামিয়া আফগানিস্তানের প্রশংসার বাণী শুনানো হয়েছে। এখন দেখার বিষয় হলো, আগের তালেবানের যেসব নীতি আদর্শের উপর ভিত্তি করে বর্তমান তালেবানকে বলা হচ্ছে যে, তারা মূল আদর্শ থেকে সরে গেছে, দালালি করছে এবং কুফুরি করছে সেসব নীতি-আদর্শগুলো কী এবং তার বাস্তবতাও বা কী?
      তাহলে আমরা বুঝতে পারবো ইমরাতে ইসলামিয়া আফগানিস্তানের উপর প্রতিষ্ঠিত তালেবানের ঘটে যাওয়া বিষয়গুলো কি নতুন কোন বিষয়? না এসব বিষয় ‘আইএস’ এর ধারণামতে, আল্লাহর আদেশ পালনে অবিচল মুজাহিদ ও মুসলিম থাকাবস্থায় পূর্বের তালেবানের মাঝেও ছিলো?।
      যে সব বিষয়ের প্রতি তাকিয়ে তালেবানকে কাফের ফাতওয়া দেয়া হচ্ছে এবং মনে করা হচ্ছে তারা তাদের পুরোনো আদর্শ থেকে সরে এসেছে তার কয়েকটি নিম্নরূপ-

      প্রথম অভিযোগ: মুসলিম রাষ্ট্রের শাসককে কাফের না বলে মুসলিম বলে আখ্যায়িত করা এবং তাদের রাষ্ট্রগুলোকে ইসলমী রাষ্ট্র আখ্যা দেয়া, যেমন সৌদি আরব ও ইরান, যাকে বর্তমানের তালেবানের তরফ থেকে ‘ইসলামি প্রজাতন্ত্র ইরান’ এই নামে ভূষিত করা হয়েছে।

      মূলত তালেবানের আদর্শ ও নীতিমালা জানা না থাকার কারণে তারা এ ধরণের আপত্তি তুলছে। তালেবান তার প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকেই আরব শাসকদেরকে কাফের বলে আখ্যায়িত করে না[2]। কারণ তালেবানের ধর্মীয় আদর্শের সম্পৃক্ততা রয়েছে দেওবন্দিয়াতের সাথে। তারা ফিকহের ক্ষেত্রে হানাফী, আকিদাগত দিক থেকে মাতুরিদী এবং তাসাওয়াফের প্রতিও রয়েছে তাদের ঝোঁক। তাই তাকফিরের ক্ষেত্রে তারা খুব সতর্কতা অবলম্বন করে থাকে।
      ‘আইএস’এর ‘আল ফুরকান মিডিয়া’ এর মাধ্যমে প্রকাশিত তানযীম আল-কায়েদা ফি বিলাদ আর রাফিদাইন এর নেতা ‘আবু মুসআব আয যারকাবী’ এ বিষয়ে সাংবাদিককে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে[3] বলেন-
      “তালেবান সম্পর্কে জানা যায়, তারা দেওবন্দ মাদরাসা থেকে গ্র্যাজুয়েট প্রাপ্ত এবং তারা আকিদাগত দিক থেকে মাতুরিদী। আরো জানা গেছে, তারা আল্লাহর শরীয়াহকে শাসনরূপে গ্রহণ করেছে। তারা আল্লাহর পথে জিহাদ করছে। যদিও তাদের ছোট-খাট কিছু ভুল আমাদের সামনে আছে। কিন্তু তারা আমার কাছে তাগুত আবদুল্লাহ বিন আব্দুল আজিজের হাতে বায়আতবদ্ধ সহীহ আকিদার দাবীদার আরব উলামাদের থেকে উত্তম ও শ্রেষ্ঠ। আরব উলামায়ে কেরাম তাদের ধারণা মতে যে বিশুদ্ধ আকিদাই লালন করুক না কেন? আমি মনে করি, এই ধরনের হাজার হাজার আলেমের চেয়েও একজন মোল্লা উমর রহিমাহুল্লাহ আল্লাহর কাছে অধিক শ্রেষ্ঠ”।
      ১৯৯৮ সালের শেষের দিকে রচিত “আফগানিস্তান ওয়া তালিবান ওয়া মা’রাকাতুল ইসলাম আলইয়াউম” (أفغانستان والطالبان ومعركة الإسلام اليوم) নামক কিতাবে[4] তার লেখক আবু মুসআব আস্সুরী বলেন যে,
      “তালেবান এসব মুসলিম দেশের শাসকদেরকে কাফের ফাতাওয়া না দিয়ে তাদেরকে মুসলমান মনে করে। কেননা তাদের নিকট কিছু আরব শাসকদের অন্যায় অপরাধ এবং ফিসক এখনো পর্যন্ত কুফুরি পর্যায়ে পৌঁছেনি”।
      আরব ও মুসলিম দেশের শাসকদের সম্পর্কে ইমারাতে ইসলামিয়া আফগানিস্তানের অবস্থান কি? তারা কি তাদের কাফের মনে করে? তো এই সম্পর্কে ২০০৯ সালের মে মাসে প্রকাশিত ইমারাতে ইসলামিয়া আফগানিস্তানের তথ্য বিষয়ক দায়িত্বশীল আহমদ মুখতার আল-জাজিরা টক’কে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে বলেন:
      “আমি বলতে চাই যে, মুসলিম রাষ্ট্রের কোন শাসককে আমরা কাফের বলি না এবং তাদের সাথে সরাসরি সংঘাতেও যাবো না”।
      বরং তাদের (তালেবানের) অফিসিয়াল সূত্রে প্রকাশিত বিভিন্ন বিবৃতিতে ইরান ও সৌদি আরবের মত কয়েকটি দেশের শাসককে মুসলিম আখ্যা দেয়ার বিষয়টি উঠে এসেছে।
      ৫ই মার্চ ২০০৮ সালে “আফগানিস্তান ও বিশ্বের কিছু ঘটনা প্রবাহ” এই শিরোনামে ইমারাতে ইসলামিয়া আফগানিস্তানের রাজনৈতিক শাখা সূত্রে প্রকাশিত এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে যে,
      “(ইসলামিক প্রজাতন্ত্র) ইরান ও তার দেশের জনগনের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক নিরাপত্তা পরিষদের পক্ষ থেকে নতুন নতুন নিষেধাজ্ঞা দেয়া হয়েছে “ইমারাতে ইসলামিয়া আফগানিস্তান” এই নিষেধাজ্ঞার নিন্দা জানিয়ে তাকে বাতিল ঘোষণা করছে”।
      ২৩শে ডিসেম্বর ২০০৮ সালে সাক্ষাতকারের এক আলোচনার প্রেক্ষিতে ইমারাতে ইসলামিয়া আফগানিস্তানের আমীর ‘মোল্লা মুহাম্মাদ উমর’ রহিমাহুল্লাহ বলেছেন:
      “সৌদি বাদশাহ্ খাদিমুল হারামাইনিশ্ শারীফাঈন ‘আবদুল্লাহ ইবনে আব্দুল আজিজ’ এর কাছে আমরা কোন বার্তা পাঠাইনি”।
      ২৪শে ফেব্রুয়ারি ২০০৯ সালে প্রকাশিত ইমারাতে ইসলামিয়া আফগানিস্তানের রাজনৈতিক শাখার দায়িত্বশীল ‘মু’তাসিম আগাজান’কে ইমারাতের তথ্য বিষয়ক দায়িত্বশীল আহমদ মুখতারের দেয়া এক সংলাপে তিনি বলেছেন:
      “সৌদি সরকার ও জনগণ আফগানিস্তানে সোভিয়েত যুদ্ধে আফগান জনগণ ও মুজাহিদদের পাশে দাঁড়িয়েছেন এবং তারা মুজাহিদদের জন্য ইসলামিক এবং মানবিক সাহায্য পাঠিয়েছেন। আমরা আশা করি যে, যুগের পালা বদলে সৌদি আরব এখনো মুজাহিদদের পাশে দাঁড়াবে এবং মুজাহিদদেরকে ইসলামিক এবং মানবিক সাহায্য করবে। আমরা আন্তরিক দাবী জানাচ্ছি যে, সৌদি সরকার ও সে দেশের আত্মসম্মানবোধ সম্পন্ন নাগরিকগণ বিশেষ করে খাদিমুল হারামাইনিশ্ শারিফাঈন বাদশাহ আবদুল্লাহ ইবনে আব্দুল আজীজ (আল্লাহ তাকে হেফাজত করুক) আফগানিস্তান ও নির্যাতিত অন্যান্য দখলকৃত ইসলামী রাষ্ট্রের জনগণের সমস্যার মোকাবেলায় ধর্মীয় দায়িত্ব পালনে এগিয়ে আসবেন”।
      দ্বিতীয় অভিযোগ: চীন, রাশিয়া, কাতার ও ইরানসহ বিভিন্ন রাষ্ট্রের সাথে কুটনৈতিক সম্পর্ক গড়ে তোলা।

      এই ধরণের অভিযোগ খুবই আশ্চর্যজনক! অথচ সকলেই জানে যে, ২০০১ সালের এগারো সেপ্টেম্বরের আগে ইমরাতে ইসলামিয়া আফগানিস্তান প্রথমবার আফগানিস্তানের ক্ষমতা লাভ করার পর পাকিস্থান, সংযুক্ত আরব আমিরাত ও সৌদি আরব এই তিনটি রাষ্ট্রের সাথে কুটনৈতিক সম্পর্ক গড়ে তোলে। ফলে এসব রাষ্ট্রে ইমারাতের দূতাবাসও ছিল। পাকিস্তানে ইমারাতে ইসলামিয়া আফগানিস্তানের রাষ্ট্র দূত ছিলেন ‘মোল্লা আব্দুস সালাম যাইফ’। সংযুক্ত আরব আমিরাতে ইমারাতের রাষ্ট্র দূত ছিলেন ‘মৌলভী আজীজুর রহমান আব্দুল আহাদ’।
      তালেবান তাদের প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে আন্তর্জাতিক বিশ্বের সাথে কুটনৈতিক সু-সম্পর্ক তৈরীর জন্য কাজ করে আসছে। ১১ই জানুয়ারী ২০০১ সালে আল-জাজিরা ওয়েবসাইটে ইমরাতে ইসলামিয়ার আমিরের দেয়া একটি সাক্ষাৎকার প্রকাশিত হয়। তাতে তিনি বলেন:
      “আমরা আন্তর্জাতিক রাষ্ট্রসমূহের সাথে স্বাভাবিক সম্পর্ক বজায় রাখতে চাই। এই সম্পর্ক হবে পারস্পরিক সম্মান ও মানবিকতার ভিত্তিতে। আর মুসলিম রাষ্ট্রগুলোর সাথে আমাদের সম্পর্ক হবে ইসলামী ভ্রাতৃত্ব ও বন্ধুত্বের সম্পর্ক, যা পরিচালিত হবে ইসলামিক ভ্রাতৃত্বের মূলনীতির আলোকে”।
      ১১ আক্টোবর ২০০৭ সালে “ইলাল উম্মাতিল ইসলামিয়্যাহ, ইলা শা’বী আফগানিস্তান আল মুজাহিদি, ইলা আবতালিল খানাদিক আসসাখিনা” শিরোনামে প্রকাশিত এক বার্তায় মোল্লা উমর রহিমাহুল্লাহ বলেন:
      “ইমারাতে ইসলামিয়া তার বাস্তব ও যুক্তি সঙ্গত অবস্থান থেকে সুস্পষ্ট ভাষায় বলতে চায় যে; আমরা মনে করি, আমেরিকাসহ পুরো বিশ্ব আমাদের স্বাধীনতাকে সম্মান জানাবে এবং অবৈধ বলপ্রয়োগ ও ইসলামের উপর আঘাত হানার মত ব্যর্থ নীতিমালার ইতি টানবে ও আফগানিস্তানের মাটি থেকে তাদের সেনা প্রত্যাহার করবে। আমার দৃঢ় বিশ্বাস যে, এসব সেনাদল আফগানিস্তানের মাটি ত্যাগ করার মাধ্যমেই দেশটিতে পারস্পরিক সমাঝোতা, শান্তি ও নিরাপত্তা এবং জাতীয় ঐক্য তৈরী হওয়া সম্ভব। তখন সকলের সমন্বয় ও সহযোগীতায় একটি ইসলামি রাষ্ট্র তৈরী হবে। যাতে সকল দেশবাসী সন্তুষ্ট হবে। এরই মাধ্যমে আফগানরা চলমান সংকট থেকে মুক্তি লাভ করতে পারবে এবং পারস্পরিক সম্মান প্রদর্শনের ভিত্তিতে পুরো বিশ্বের সাথে আফগানদের আন্তর্জাতিক সুসম্পর্ক তৈরী হবে”।
      ২৫ই নভেম্বর ২০০৯ ইং সালে ঈদুল আজহা উপলক্ষে প্রকাশিত একটি বিবৃতিতে তিনি আরো বলেছেন:
      “অর্থনৈতিক উন্নতির জন্য পারস্পরিক দ্বিপাক্ষিক সহযোগিতা চায় ইমারাত। উপনিবেশিক শক্তির বিরুদ্ধে আমরা এই অঞ্চলের সকল রাষ্ট্রকে একই পরিবারের সদস্য মনে করি। আমরা এমন একটি শক্তি হিসেবে ভুমিকা পালন করবো, যেই শক্তি এই অঞ্চলের শান্তি ও নিরাপত্তা প্রতিষ্ঠায় তার দায়িত্ব পলনে সচেতন থাকবে”।
      ৮ই সেপ্টেম্বর ২০১০ইং সালে ঈদুল ফিতর উপলক্ষে প্রকাশিত একটি বিবৃতিতে তিনি বলেন:
      “প্রতিবেশী রাষ্ট্র, মুসলিম এবং অমুসলিম রাষ্ট্রগুলোর সাথে পারস্পরিক সম্পর্ক ও লেনদেন আমাদের স্বতন্ত্র পররাষ্ট্রনীতির (ইসলামের) ভিত্তিতে হবে”।
      ২০০৭ সালের ডিসেম্বর মাসে ‘আস সুমুদ ম্যাগাজিন’এর ষষ্ঠ সংখ্যায় প্রকাশিত তাদেকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে ইমারাতের বাগদেশ প্রদেশের জিহাদ ও সামরিক বিষয়ক দায়িত্বশীল “মৌলভী আব্দুর রহমান খোদায়ে রহিম” বলেন:
      “ইমারাতে ইসলামিয়া আফগানিস্তান আফগানের নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠার পর তুর্কিমিনিস্তানের সাথে এর বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক ছিলো। বর্তমানেও তুর্কিমিনিস্তান ইমারাতে ইসলামিয়া আফগানিস্তানের মুজাহিদদের সাথে সম্পর্ক মজবুত করতে আগ্রহী। তবে এখানে একটি বিষয়ের ইঙ্গিত দিতে হয়; স্বাধারণভাবে পুরো বিশ্ব, বিশেষকরে প্রতিবেশী রাষ্ট্রসমূহ ক্রুসেড বাহিনীর বিরুদ্ধে মুজাহিদদের একের পর এক বিজয় দেখে মুজাহিদদের সাথে সম্পর্ককে সুন্দর করার জন্য চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। এসব রাষ্ট্রের ভিতরে প্রতিবেশী রাষ্ট্র তুর্কিমিনিস্তান উল্লেখযোগ্য। তেমনি তুর্কিমিনিস্তানও ইমারাতে ইসলামিয়া আফগানিস্তানের মুজাহিদদের সাথে সম্পর্ক জোরদার করে। আর কার্যতই আমাদের মুজাহিদদের মাঝে এবং তুর্কিমিনিস্তানের কর্তৃপক্ষের মাঝে কয়েকবার সাক্ষাৎ ও আলাপ আলোচনা হয়েছে”।
      ২৪ই ফেব্রুয়ারি ২০০৯ সালের ইমারাতে ইসলামিয়া আফগানিস্তানের রাজনৈতিক শাখার প্রধান ‘মু’তাসেম’ ইমারাতের মিডিয়া কর্তৃপক্ষকে দেয়া একটি সাক্ষাৎকারে বলেন:
      “আফগানিস্তানের সফলতা নির্ভর করছে তার কার্যক্রমের উপর। ইতিমধ্যে ইমারাত বেশ কয়েকটি উল্লেখযোগ্য বিষয়ে সফলতা লাভ করতে পেরেছে। আর আমি তোমাদেরকে বলছি; আমরা প্রচুর ইতিবাচক সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করতে পেরেছি। এর মধ্যে অন্যতম হলো, আন্তর্জাতিক কিছু রাষ্ট্রের সাথে সম্পর্ক মজবুত করা। ইমারাত ও আফগান জাতির স্বার্থে প্রতিটি পক্ষের সাথে আমরা সমঝোতা ও লেনদেন করতে প্রস্তুত। চাই ঐ পক্ষ জাতিসংঘ হোক কিংবা ওআইসি, অথবা হোক প্রতিবেশী রাষ্ট্র কিংবা অন্যান্য আন্তর্জাতিক রাষ্ট্র বা স্বতন্ত্র কোন প্রতিষ্ঠান”।
      ২০০৯ সালের মে মাসে প্রকাশিত ইমারাতের তথ্য বিষয়ক দায়িত্বশীল “আহমদ মোখতার” আল জাজিরা টক’কে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে বলেন:
      “ইরানসহ প্রতিবেশী রাষ্ট্রসমূহের সাথে সুসম্পর্ক গড়ে তুলতে চাই। কিন্তু আমাদের আভ্যন্তরীণ ইস্যুতে তাদের নাক গলানোকে আমরা পছন্দ করি না। যেকোন রাষ্ট্র আমাদের সাথে কুটনৈতিক সম্পর্ক তৈরী করতে চাইবে আমরাও তাদের সাথে কুটনৈতিক সম্পর্ক রাখবো। এক্ষেত্রে আমাদের পূর্বের শাসনামলের নীতি পূর্ণ বহাল রয়েছে। তখনো আমরা পারস্পরিক সম্মানের ভিত্তিতে অন্যান্য রাষ্ট্রের সাথে সম্পর্ক গড়ে তোলার চেষ্টা করতাম”।
      ৩০ই আগস্ট ২০২০ সালে প্রকাশিত মধ্যপ্রচ্যের ম্যাগাজিন (জারিদাতুশ শারকিল আওসাত) কে ইমারাতে ইসলামিয়া’র অফিসিয়াল মুখপাত্র “কারী মুহম্মাদ ইউসুফ আহমাদী” এর দেয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেছেন:
      “ইমারাতের অফিসিয়াল বিবৃতিগুলো এবং ইমারাতের কর্তৃপক্ষের সাক্ষাৎকার ও সংলাপ পর্যালোচনা করলে এই বিষয়টি স্পষ্টভাবে বুঝে আসবে যে, দখলদার শক্তিকে বিতাড়িত করার পর আমরা চারটি মিশন বাস্তবায়ন করবো। আর তা হলো প্রথমত; দেশ পরিচালনা করতে সক্ষম স্বতন্ত্র শরয়ী সরকার গঠন করা, যারা আফগানের সকল মুসলিমের প্রতিনিধিত্ব করবে। দ্বিতীয়ত; আফগানের বিভিন্ন গোষ্ঠির মাঝে সমন্বয় ও জাতীয় ঐক্য এবং শান্তি প্রতিষ্ঠা করা। তৃতীয়ত; আফগানিস্তানকে উন্নয়নশীল, শক্তিশালী নতুন রাষ্ট্রে পুনর্গঠন করা। চতুর্থত; ইসলামী রাষ্ট্রসহ প্রতিবেশী রাষ্ট্র ও অঞ্চল এবং পুরো বিশ্বের সাথে সমতা ইনসাফের উপর প্রতিষ্ঠিত সম্পর্কের ব্যবস্থাপনা গ্রহণ করা। এই ক্ষেত্রে শরয়ী মূলনীতির আলোকে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হবে”।
      ১৮ই নভেম্বর ২০২০ সালে আস আস সুমুদ ম্যাগাজিনের ৫৪ সংখ্যায় প্রকাশিত সাক্ষাৎকারে ইমারাতে ইসলামিয়া আফগানিস্তানের শূরা কাউন্সেলর সদস্য মৌলভী আব্দুল কাবীর বলেন:
      “আলহামদুলিল্লাহ, আমরা মুসলমান, আর মুসলিমরা ইসলামের আলোকে প্রতিবেশীর অধিকার ভালো করে জানে। ইমারাতে ইসলামিয়া তো তার আগের শাসনামলেও প্রতিবেশী রাষ্ট্রসমূহের সাথে ভালো সম্পর্ক বজায় রাখার জন্য চেষ্টা করেছে”।
      ২১ই নভেম্বর ২০১০ সালে প্রকাশিত “লিসবন সম্মেলন” এর উদ্দেশ্য ইমারাতে ইসলামিয়া একটি বার্তায় উঠে এসেছে যে,
      “পারস্পরিক সম্মানের উপর ভিত্তি করে অর্থনৈতিক উন্নতি এবং উন্নয়নশীল ভবিষ্যৎ এবং দ্বিপাক্ষিক সহযোগীতার লক্ষে সমস্ত আন্তর্জাতিক রাষ্ট্রের সাথে ভালো প্রদক্ষেপ গ্রহণ করতে চায় ইমারাতে ইসলামিয়া। এর পাশাপাশি দখলদার শক্তির মোকাবেলায় অঞ্চলটিকে একটি দুর্গ মনে করবে ইমারাতে ইসলামিয়া আফগানিস্তান”।

      তৃতীয় অভিযোগ: ইমারাতে ইসলামিয়া আফগানিস্তানের এ ঘোষণা যে, তারা আফগানিস্তানের ভুমিকে আমেরিকা ও তার মিত্রদের হুমকির জন্য ব্যবহার করতে দিবে না।

      বাস্তবতা হলো, এমন ঘোষণা ইমারাতের পক্ষ থেকে নতুন নয়। বরং ‘আইএস’ এর মতে ইমরাতে ইসলামিয়া যখন সঠিক ইসলামী ও জিহাদী দল ছিলো তখনো ইমারাতের প্রতিটি বিবৃতিতে এই বিষয়ের প্রতি আহ্বান করা হতো। কারণ ইমারাত তার বিবৃতিগুলোতে সর্বদা এই ঘোষণা দিয়ে এসেছে যে, আমেরিকা ও তার মিত্ররা আফগানিস্তান থেকে সেনা প্রত্যাহার করলে ইমারাত কোন রাষ্ট্রের জন্য হুমকির কারণ হবে না।
      ১২ই মে ২০০৭ সালে প্রকাশিত আফগানিস্তানের নেতা মোল্লা উমরের একটি বার্তায় তিনি বলেন:
      “অন্যান্য রাষ্ট্রের আভ্যন্তরীণ ইস্যুতে অন্যায়ভাবে কখনো নাক গলাবে না ইমরাতে ইসলামিয়া। তেমনিভাবে আফগানিস্তানেও অন্য কোন রাষ্ট্রের অন্যায় হস্তক্ষেপ মেনে নিবে না ইমরাতে ইসলামিয়া”।
      ২৯ই সেপ্টম্বর ২০০৮ সালে ঈদুল ফিতর উপলক্ষে তার দেয়া এক বিবৃতিতে তিনি আরো বলেন:
      “যদি তোমরা আমাদের মাটি ছাড় তাহলে তোমাদের বের হওয়ার যুক্তিসঙ্গত একটি সুযোগ তৈরী করে দিবো, আর আমাদের পূর্বের অবস্থান জাতির সামনে দ্বিতীয়বার স্পষ্ট হবে যে, আমরা বিশ্বের কারো জন্য ক্ষতির কারণ হবো না। তারপরও যেন তোমাদের দখলদারিত্বের এই প্রতারক হিংস্র চেহারার অবসান ঘটে”।
      ২৫ নভেম্বর ২০০৯ সালে ঈদুল আজহা উপলক্ষে তার দেয়া বিবৃতিতে বলেছেন:
      “আমরা আমাদের দেশে এমন স্বতন্ত্র ইসলামী শাসন ব্যবস্তা চাই যার ছায়াতলে সমস্ত নাগরিক, নারী-পুরুষ সকলের অধিকার রক্ষা হবে। যেই শাসন ব্যবস্থা তার স্বরাষ্ট্র ও পররাষ্ট্রনীতির ক্ষেত্রে শরয়ী-ফিকহী এই মূলনীতি “নিজেও ক্ষতিগ্রস্থ হবে না এবং অন্যকেও ক্ষতিগ্রস্থত করবে না” কে সামনে রেখে সাজিয়ে তুলবে”।
      ৮ই সেপ্টেম্বর ২০১০ সালে ঈদুল ফিতর উপলক্ষে তাঁর দেয়া এক বিবৃতিতে তিনি আরো বলেন:
      “‘অন্য কেউ ক্ষতি করলে তাকে প্রতিহত করা এবং নিজে অন্যদের ক্ষতির কারণ না হওয়া’ এই মূলনীতির উপর আমরা আমদের পররাষ্ট্র নীতির ভিত্তিস্থাপন করব, ইনশাআল্লাহ”।
      ১৫ নভেম্বর ২০১০ সালে ঈদুল আজহা উপলক্ষে তাঁর দেয়া এক বিবৃতিতে তিনি আরো বলেন:
      “একটি নির্ভরযোগ্য সরকার ব্যবস্থা গঠন, নিরাপত্তা, ইসলামি ন্যায়পরায়ণতা, শিক্ষা-দিক্ষা, অর্থনৈতিক উন্নতি, জাতীয় ঐক্য এবং পররাষ্ট্রনীতির ক্ষেত্রে ইমারাতে ইসলামিয়া শরয়ী-ফিকহী এই মূলনীতি ‘নিজেও ক্ষতিগ্রস্থ হবে না এবং অন্যকেও ক্ষতিগ্রস্থত করবে না’ কে সামনে রাখবে”।
      ৭ই নভেম্বর ২০১০ সালে মার্কিন কংগ্রেসের সদস্যদেরকে লক্ষ্য করে দেয়া একটি বার্তায় ইমারাতের অফিসিয়াল মুখপাত্র কারী মুহাম্মদ ইউসুফ আহমাদী বলেছেন:
      “তোমরা মনে করছো “তোমরা আফগানিস্তান থেকে বের হয়ে গেলে আমেরিকাসহ পুরো বিশ্বের জন্য আফগানিস্তান হুমকির কারণ হবে”। এটি তোমাদের সরকারের দেয়া কাল্পনিক ভয়-ভীতি ছাড়া আর কিছু নয়। তাই এধরনের ভয়াবহতা তোমাদের মন থেকে বের করে ফেল। তোমরা ভয় পেয়ো না, কারণ তোমাদের সরকারের তরফ থেকে দেখানো ভয়-ভীতি মূলত বিভ্রান্তি মূলক প্রচারণা। যার সাথে বাস্তবতার ন্যূনতম সম্পর্কও নেই”।
      ২০০৯ সালের মে মাসে প্রকাশিত আল জাজিরা টক’কে ইমারাতের তথ্য বিষয়ক কর্তৃপক্ষ আহমদ মোখতারের দেয়া সাক্ষাৎকারে তিনি বলেছেন:
      “আমাদের আফগানিস্তান শাসনকালে আমরা পাকিস্তান নিয়ন্ত্রণে আনার জন্য অথবা প্রতিবেশী কোন রাষ্ট্রের আভ্যন্তরীণ কোন বিষয়ে হস্তক্ষেপ করার জন্য চেষ্টা করিনি”।
      ৬ই অক্টোবর ২০০৯ সালে প্রকাশিত মার্কিন দখলদারিত্বের অষ্টম বছর পূর্তি উপলক্ষে ইমারাত সূত্রে প্রকাশিত এক বিবৃতিতে উঠে এসেছে যে,
      “আমরা পুরো বিশ্বকে জানান দিচ্ছি যে, আমাদের লক্ষ্য হলো দেশের স্বাধীনতা এবং তাতে ইসলামী আইন ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করা। ইউরোপের রাষ্ট্রগুলোসহ অন্যান্য রাষ্ট্রের ক্ষতি করার জন্য আগে এবং বর্তমানে আমার কোন কার্যক্রম নেই”।
      ২রা ডিসেম্বর ২০০৯ সালে প্রকাশিত ইমারাতের অন্য আরেকটি বিবৃতিতে ইমরাতে ইসলামিয়া আফগানিস্তান আন্তর্জাতিক মহলকে জানিয়েছে যে,
      “বিশ্বের কাউকে কষ্ট দেয়ার ইচ্ছা আমাদের নেই এবং বিশ্ব নিরাপত্তার ভুয়া অজুহাতে বিদেশী দখলদার বাহিনীরও আমাদের দেশে থাকার কোন অধিকার নেই”।
      তেমনি ২১ই নভেম্বর ২০১০ সালে ইমারাতের সর্বশেষ বিবৃতিতে এসেছে যে,
      “মজবুত শাসন ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা, নিরাপত্তা, ইসলামিক ন্যায়পরায়ণতা, শিক্ষা-দিক্ষা, অর্থনৈতিক উন্নতি, জাতীয় ঐক্য তৈরী, এবং দেশ রক্ষায় অন্যের ক্ষয় ক্ষতির স্বীকার না হওয়ার এবং ভবিষ্যতে আফগানিস্তানের মাধ্যমে কেউ ক্ষতিগ্রস্থ হবে না, এসব কিছুর বাস্তবায়ন ও সমন্বয়ের জন্য ইমারাতে ইসলামিয়া আফগানিস্তানের একটি সামগ্রিক নীতিমালা রয়েছে”।

      চতুর্থ অভিযোগ: শিয়া আকিদা সম্পন্ন কিছু উপদলকে ইমারাতে ইসলামিয়া তাদের দলে শামিল করেছে।

      ‘আইএস’ এর মতে ইমারাতে ইসলামিয়া যখন সঠিক ইসলামী ও জিহাদী দল ছিলো তখন থেকে তারা যেসব বিষয়ের জন্য চেষ্টা চালিয়ে গেছে তার মধ্যে অন্যতম ছিলো এই বিষয়টি। অর্থাৎ “শিয়া-সুন্নী” নামে দলাদলি বাদ দিয়ে সকল মুসলমানকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার প্রতি আহবান করে আসছে ইমারাতে ইসলামিয়া। দেখুন, ১২ মে ২০০৭ সালে প্রকাশিত ইরাক ও আফগানি জনগনের উদ্দেশ্যে ইসলামি ইমারাত আফগানিস্তানের আমির মোল্লা মুহাম্মাদ উমরের দেয়া একটি বার্তায় তিনি বলেছেন,
      “তেমনি আমি ইরাকি ভাইদের কাছে প্রত্যাশা করছি যে, তারা শিয়া-সুন্নী নামে পরস্পর বিরোধকে পিছনে ছুঁড়ে ফেলে দখলদার শত্রুর বিরুদ্ধে একজোট হয়ে হামলা করবে। কারণ ঐক্য ছাড়া বিজয় লাভ করা অসম্ভব”।
      ২৪ই ফেব্রুয়ারি ২০০৯ সালে ইমারাতে ইসলামিয়া আফগানিস্তানের রাজনৈতিক শাখার প্রধান ‘শাইখ মু’তাসিম আগাজন’ এর একটি সাক্ষাতকার প্রকাশিত হয়। সেই সাক্ষাতকারে ইমারাতের তথ্য বিষয়ক দায়িত্বশীল আহমদ মোখতার মু’তাসিম তাকে এই সংক্রান্ত একটি প্রশ্ন করেছেন। প্রশ্নের বক্তব্য হুবহু তুলে ধরছি।
      “প্রশ্ন: আপনারা জানেন যে, আফগান জনগনের সাথে বিভিন্ন ধরণের শিক্ষা ব্যবস্থা এবং বিভিন্ন ইসলামী মতাদর্শের সম্পৃক্ততা আছে যেমন, হানাফী, সালাফী, মুসলিম ব্রাদারহুডসহ শিয়া গোষ্ঠী ইত্যাদি। তাই এইসব শিক্ষা ব্যবস্থা ও ভিন্ন ভিন্ন মতাদর্শের ব্যাপারে ইমারাতে ইসলামিয়া’র অবস্থান কী?
      উত্তর: আফগানিস্তান সকল আফগানদের মাতৃভূমি। তাই আফগানিদের দায়িত্ব হলো, পারস্পরিক সহযোগিতা, ভ্রাতৃত্ব ও বন্ধুত্বসূলভ জীবন যাপন করা। আর কোন ধরনের বৈষম্য ছাড়াই বিভিন্ন শিক্ষা ব্যবস্থা ও ভিন্ন মতাদর্শ অবলম্বনকারীদের অধিকার ও সম্মানের স্বীকৃতি দেয় ইমারাতে ইসলামি আফগানিস্তান এবং অধিকারের ক্ষেত্রে তাদের সবাইকে সমান মনে করে। আফগান জনগণ একটি ইসলামী শাসন ব্যবস্থার ছায়াতলে পূর্ণাঙ্গ নিরাপত্তা এবং স্থায়ী শান্তি ও সম্মানের জীবন জাপন করবে, এটিই ইমারাতে ইসলামিয়া’র বাসনা”।
      যদি কেউ মনে করে যে, এই ঐক্যবদ্ধতা ইসলামি ইমারাতের কুফরের প্রমান বহন করে তাহলে আব্বাসী খলিফা “আল মুসতাকফী বিল্লাহ”, “আল মুতি লিল্লাহ” এবং “আত তায়ে লিল্লাহ” এর সময়ের আব্বাসী শাসকদেরকেও কাফের ফতোয়া দিতে হবে?! কারণ এদের মতো কয়েকজন আব্বাসী খলীফা ইরাক ও পারস্যের (বায়িড্স) শিয়া রাজ্য এবং ‘মশুল’ ও ‘হালবের’ (হামদানিজ) শিয়া রাজ্যকে আব্বাসীয় খেলাফতের সাথে সম্পৃক্ত করে নিয়েছেন। শুধু তাই নয়, মা’যুদ দাওলাহ, মুআযিদুদ দাওলা, আদুদুদ দাওলা এবং সাইফুদ দাওলার তরফ থেকে এসব এলাকার শিয়া নেতাদেরকে বিভিন্ন উপাধী দেওয়া হতো। এর পাশাপাশি শিয়াদের অধীনে যে সব রাজ্য ছিলো, সেসব রাজ্যে তারা শিয়াদেরকে নেতৃত্বে বহাল তবিয়তে রেখে ছিলেন। যদি শিয়াদেরকে বিদআতি মনে করা হয়, তাহলে বিদআতির থেকে সাহায্য নেয়ার মাসআলা ফিকহী দৃষ্টিকোণ থেকে বৈধ। বিতর্কের খাতিরে শিয়াদের কাফের হওয়ার বিষয়টি যদি মেনেও নেই তারপরও তো হানাফী মাযহাবে বিশেষ একটি সুরতে যুদ্ধে কাফেরের সহযোগিতা নেয়া এমনকি ইসলামের দৃষ্টিতে রাষ্ট্রদ্রোহীদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতে কাফের থেকে সহায়তা নেয়া জায়েজ হওয়ার বিষয়টিও ফুকাহায়ে কেরাম উল্লেখ করেছেন। আর হানাফী মাযহাব হলো “ইমারাতে ইসলামিয়া আফগানিস্তান” এর নিকট নির্ভরযোগ্য মাযহাব।

      পঞ্চম অভিযোগ: ইমারাতে ইসলামিয়া আফগানিস্তান তাদের (আইএস এর) দৃষ্টিতে তাওহীদপন্থীদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে এবং আন্তর্জাতিক অঙ্গনে সেই যুদ্ধের ঘোষণা দেয়।

      তারা তাওহীদপন্থী বলতে বুঝায় একমাত্র ‘আইএস’কে। তারা এটিও দাবি করেছে যে, ইসলামি ইমারাত পশ্চিমাদের দালাল হয়ে তাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ পরিচালনা করে। অথচ এটি স্পষ্ট প্রতারণা ছাড়া আর কিছুই নয়। কারণ ইমারাতে ইসলামিয়া আফগানিস্তানের কয়েকটি বিবৃতি থেকে তার সুস্পষ্ট বাস্তবতা বুঝে আসে। ইমারাতে ইসলামিয়া আফগানিস্তানের মুজাহিদদের বিভক্তকারী ‘আইএস’ এর বিরুদ্ধে যুদ্ধ শুরু করে। এই যুদ্ধ আজকের নয় বরং তা আইএস খেলাফতের ঘোষণা দেয়া এবং আফগানের ভূমিতে তা বাস্তবায়নের চেষ্টার পর থেকে শুরু হয়েছে।
      আর ইমারাতে ইসলামিয়া জানিয়েছে যে, তারা ‘আইএস’ এর বিরুদ্ধে গত ছয় বছরের যুদ্ধে কারো থেকে সাহায্য গ্রহণ করেনি। ২৫ই ডিসেম্বর ২০১৫ সালে প্রকাশিত এক বিবৃতিতে এসেছে যে,
      “মার্কিন দখলদারিত্বে আগ্রাসনের অবসান ঘটার শেষলগ্নে আমরা (ইমারাতে ইসলামিয়া) অনেক রাষ্ট্রের সাথে সম্পর্ক স্থাপন করেছি এবং সে সম্পর্ক অব্যাহত থাকবে। আর এটি শরয়ীভাবেও বৈধ। কিন্তু আইএস এর বিরুদ্ধে আমাদের কারো সহায়তার প্রয়োজন নেই। এই ক্ষেত্রে কারো সাথে আমাদের কোন সম্পর্কও গড়েনি এবং আলাপ আলোচনাও হয়নি”।
      আর আন্তর্জাতিক অঙ্গনে ইমারাতে ইসলামিয়া’র ঘোষনা মূলত এই বিষয়টি স্পষ্ট করার জন্য যে, ইমারাতে ইসলামিয়া ও আইএস এর মাঝে কোন ধরণের সম্পর্ক বিদ্যমান নেই। আর ইমারাতে ইসলামিয়া ‘আইএস’ এর কর্মপন্থা ও বাড়াবাড়ি মূলক তাকফিরের উপর সন্তুষ্ট নয়।
      তাছাড়া এই সমস্যা স্বয়ং আইএস এর মধ্যেও রয়েছে। কেননা তারাও তাওহীদপন্থী মুসলিম জামাতকে খারেজী দাবী করে হত্যা করে এবং প্রকাশ্যে তার ঘোষণা দেয়। এই হত্যার মাধ্যমে তারা বিশ্বকে বুঝাতে চায় যে, ‘আইএস’ খারেজী অপবাদ থেকে মুক্ত এবং খারেজি কর্মপন্থার সাথে ‘আইএস’ এর কোন সম্পর্ক নেই। এরই প্রেক্ষিতে তারা ‘মুজাহিদদের সারিতে বিভাজন সৃষ্টি করা এবং খারেজি কর্মপন্থা লালন করা’র অভিযোগ তুলে নাইজেরিয়াতে ‘আবু বকর আশ্ শেকাউ’ গ্রুপের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে। এই গ্রুপটিকে নির্মূল করার পর আইএস এর কেন্দ্রীয় মিডিয়া অফিসের প্রকাশিত ‘নাবা’ পত্রিকার ২৯৩ সংখ্যায়[5] ‘আইএস’ বিবৃতি দেয়। যার বক্তব্য হলো এই-
      “এর মাধ্যমে খেলাফতের সেনাদল আল্লাহর অনুগ্রহে মুজাহিদদের জামাতকে ঐক্যবদ্ধ করে বিদআতের মুলৎপাটন করেছে, সুন্নাহ জিন্দা করেছে, মন্দ ও অকল্যাণের দরজাকে বন্ধ করেছে এবং কল্যাণের দ্বার উম্মুক্ত করেছে। আর এই লড়াই ‘আইএস’ এর পথ ও পন্থার বিশুদ্ধতা, বাড়াবাড়িকারীদের বিদআতের সাথে ‘আইএস’ এর সম্পৃক্ততা না থাকার উপর সবচেয়ে কার্যকরি প্রমান বহন করে, যা স্বাভাবিক মৌখিক বিবৃতি থেকেও অধিক শক্তিশালী। আর ‘আইএস’ এর ইতিহাস ও বর্তমান প্রেক্ষাপট এরই জানান দিচ্ছে যে, ‘আইএস’ তার প্রতিষ্ঠা লগ্ন থেকেই নববী আদর্শের উপর অবিচল, খারেজী ও মুরজিয়ার মাঝামাঝি মধ্যমপন্থা অবলম্বনকারী। আলহামদুলিল্লাহ”।
      তাদের এক দলীয় অডিও বার্তায় ‘আইএস’ এর মুখপাত্র ‘আবু হামজা আল কুরাইশী’ (وأنتم الأعلون إن كنتم مؤمنين) ‘যদি তোমরা মুমিন হও তবে, তোমরাই জয়ী হবে’ শিরোনামে একটি বক্তব্য[6] দেন। যেখানে তিনি ‘আইএস’ এর নাইজেরিয়ান শাখার সদস্যদের লক্ষ্য করে বলেন:
      “আমরা তোমাদের এই মোবারক কাজের প্রশংসা করছি যে, তোমরা নাইজেরিয়া থেকে খারেজি ফেতনার মূলৎপাটন করেছ এবং আমরা আল্লাহর প্রশংসা করছি যে, তিনি এমন ব্যক্তিদেরকে এই কাজের তাওফিক দিয়েছেন যারা সত্যকে পুনরায় প্রতিষ্ঠিত করতে শত্রুর বিরুদ্ধে লড়াই করেছে -আর আমরা তাদের হেদায়েতের জন্য দোয়া করি, যাতে তারা তাদের গোমরাহী ও ভ্রষ্টতা ছেড়ে মুসলিমদের জামাতে অংশগ্রহণ করতে পারে।
      এখানে আমি একটি বিষয়ের প্রতি দৃষ্টি আকর্ষণ করছি যে, এই লড়াই ‘আইএস’ এর পথ ও পন্থার বিশুদ্ধতা, বাড়াবাড়িকারীদের বিদআতের সাথে ‘আইএস’ এর সম্পৃক্ততা না থাকার উপর সবচেয়ে কার্যকরি প্রমান বহন করে। আর ‘আইএস’ এর ইতিহাস ও বর্তমান প্রেক্ষাপট এরই জানান দিচ্ছে যে, ‘আইএস’ তার প্রতিষ্ঠা লগ্ন থেকেই সঠিক ইসলামি রাষ্ট্রের নীতির উপর অবিচল এবং বাড়াবাড়ি থেকে মুক্ত হয়ে খারেজী ও মুরজিয়ার মাঝামাঝি মধ্যম পন্থা অবলম্বন কারী। আলহামদুলিল্লাহ”।
      এই সুদীর্ঘ ধারাবাহিক আলোচনার পর আমরা বুঝতে পারলাম যে, ‘আইএস’ বর্তমান তালেবানের উপর যেসব অভিযোগ তুলেছে এবং তারই সূত্র ধরে তালেবানকে মুরতাদ আখ্যা দিচ্ছে এর প্রতিটি বিষয় আগের তালেবানের মাঝে পরিপূর্ণ বিদ্ধমান ছিলো, যারা তাদের দৃষ্টিতে আল্লাহর আদেশ পালনে অবিচল মুসলিম ও মুজাহিদ। অপরদিকে দেখুন, এই সব অভিযোগ থাকা সত্ত্বেও শাইখ উসামা বিন লাদেন রহিমাহুল্লাহ তখনকার সময়ে ইমারাতে ইসলামিয়া’র হাতে বাইয়াত দেন।
      শাইখ উসামা রহিমাহুল্লাহ এবং তার সংগঠন ‘তানযীম আল-কায়েদা’ ইমারাতে ইসলামিয়া আফগানিস্তানের হাতে কেন বাইআত[7] দিয়েছেন? এর জবাবে তানযীম আল-কায়েদার মিডিয়া বিভাগের একটি সংস্থা ‘আস সাহাব মিডিয়া’ সূত্রে প্রকাশিত ভিডিওতে[8] শাইখ উসামা রহিমাহুল্লাহ বলেন:
      “আমিরুল মু’মিনীন (মোল্লা মুহাম্মদ উমর রহিমাহুল্লাহ) এর হাতে আমাদের এই বাইআত দেয়া কোরআন ও হাদীসে নববীতে বর্ণিত ‘বাইয়াতে উজমা’র (তথা খিলাফতের বাইয়াত) অন্তর্ভূক্ত”।
      তাছাড়াও উসামা বিন লাদেন রহিমাহুল্লাহকে শাইখ আবু মুসআব আয-যারকাবীর বাইয়াত দানের মাধ্যমে তিনি তালেবানকে বাইয়াত দেন। এসব অভিযোগ থাকা সত্ত্বেও ‘আইএস’ এর প্রথম আমীর “আবু উমর বাগদাদী” তালেবানের প্রশংসা করেছে এবং তাদের পরবর্তী আমীর আবু বকর আল বাগদাদীও তাদের প্রশংসা করে, যেই প্রশংসাবাণী উঠে এসেছে ‘আইএস’ এর সাবেক মূখপাত্র আবু মুহাম্মদ আদনানীর বক্তব্যে। শুধু তাই নয়, বরং এতসব অভিযোগের মধ্য দিয়েই ‘আইএস’ ইমারাতে ইসলামিয়া আফগানিস্তানের (তালেবানের) অনুগত সংগঠন ‘তানযীম আল-কায়েদা’র সাথে বন্ধুত্ব স্থাপন ও বশ্যতা স্বীকার করে ‘আল কায়েদা’কে কয়েকটি চিঠি পাঠিয়েছে। এসব সূত্রের কারণে এবং অভিযোগের ফলে যদি বর্তমানের তালেবান কাফের ও দালাল প্রমানিত হয়, তাহলে এসব অভিযোগের মাধ্যমে তো আগের তালেবানেরও কাফের, মুরতাদ এবং দালাল হওয়া প্রমানিত হয়। শুধু তাই নয় তাহলে তো শাইখ উসামা বিন লাদেন রহিমাহুল্লাহ এর সময়কালে তানযীম আল-কায়েদা এবং আবু উমর আল বাগদাদীর সময়কালের আইএস এর মতো আগের তালেবানের সাথে বন্ধুত্ব স্থাপনকারী সকল সংগঠনকেও কাফের, মুরতাদ এবং দালাল বলতে হবে(?)। তেমনি আবু বকর আল বাগদাদী এবং আবু মুহাম্মদ আদনানী ও তার পরবর্তী সময়কালের ‘আইএস’ সংগঠনকে কাফের, মুরতাদ বলে ফতোয়া দিতে হবে। আগের তালেবানের প্রতি বন্ধুত্ব ও প্রশংসা বানী ঘোষণা থেকে তাওবার বিষয়ে তাদের কোন বার্তাও এই পর্যন্ত প্রকাশিত হয়নি। অথচ ‘আইএস’ এই বিষয়গুলোকে পুজি করেই বহুবার দাবী করে আসছে যে, বর্তমান তালেবান কুফুরী করেছে এবং দালালি করেছে। (তবে এ ব্যপারে তারা কোন গ্রহণযোগ্য প্রমান পেশ করতে পারেনি)।
      পরিশেষে বলছি, বর্তমানের তালেবান আর আগের তালেবানের মাঝে কোন পার্থক্য নেই। ১৯৯৬ সালে তালেবান আফগানিস্তানের শাসন ক্ষমতা লাভ করার পর তালেবানের যেই পুরনো নীতি ছিলো সেই নীতি অবলম্বন করেই চলবে বর্তমানের তালেবান। কিন্তু “আগের তালেবান আর বর্তমানের তালেবান এক নয়’’ যারা এই কথা প্রচার করে, তারা হয়তো তালেবানের প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে তালেবানের আদর্শ সম্পর্কে অজ্ঞ। অথবা তারা এ আশা করে যে, যেকোনভাবেই বর্তমান তালোবন পূর্বের তালেবানের আদর্শ থেকে সরে পড়ুক, যাতে তারা হৃদয়ে লালনকৃত হিংসার তীর ছুড়তে পারে তালেবানের দিকে।

      সুত্র- আস সুমুদ, সংখ্যা-১৮৭, মুহাররাম ১৪৪৩ হিজরি, আগস্ট ২০২১ ইংরেজি, বর্ষ-১৭





      [1] লিংক- https://archive.org/details/osod_aaq2 , ১০:২৮ মিনিট থেকে ১১:১৫ মিনিট পর্যন্ত শুনুন, প্রকাশক- আল ফুরকান মিডিয়া, লিংকে ভিজিট করতে লগিন আবশ্যক। এই বার্তাটি এখনো আইএসের অফিসিয়াল শুমুখ ফোরামে বিদ্যমান রয়েছে।

      [2] এ ক্ষেত্রে আল কায়েদা ও শাইখ উসামা রহিমাহুল্লাহ ভিন্নমত পোষণ করেন।

      [3] হিওয়ার মাআশ-শাইখ আবি মুসআব আয-যারকাবী (حوار مع الشيخ أبي مصعب الزرقاوي), পৃষ্ঠা-২৩, প্রকাশক- আল ফুরকান মিডিয়া, ১৪২৭ হিজরি, লিংক- https://archive.org/details/ALZARKAWI

      [4] লিংক- https://archive.org/details/Afghanstan_201401 , প্রকাশক- মারকাজুল গুরাবা লিদ-দিরাসাত আলইসলামিয়্যাহ

      [5] আন নাবা, সংখ্যা-২৯৩, ২১ যুলকা’দাহ ১৪৪২ হিজরি, পৃষ্ঠা- ১১, লিংক- https://archive.org/details/293-21-1442

      [6] লিংক- https://archive.org/details/haded147 , প্রকাশক- আল ফুরকান মিডিয়া, যুলকা’দাহ ১৪৪২ হিজরি

      [7] মুসলিম ভূখন্ডগুলোর তাগুত শাসক ও তাদের অধীনস্ত বাহিনীদের তাকফির করা, এবং বিভিন্ন আকীদাহগত বিষয়ে মতপার্থক্য থাকা সত্ত্বেও ইসলামী ভ্রাতৃত্ব, জিহাদ ফি সাবিলিল্লাহ ও শরিয়াহ প্রতিষ্ঠার দায়িত্বের ভিত্তিতে শাইখ উসামা ও আল কায়েদা তালেবানকে বাইয়াত দিয়েছেন, এবং এই বাইয়াত অনুযায়ী কাজ করে আসছেন।

      [8] বুশরিয়্যাত (بشريات للشيخ أسامة رحمه الله), প্রকাশক- আস সাহাব মিডিয়া, মার্চ ২০১৬ ইংরেজি, লিংক- https://archive.org/details/sss1sss_dr_201603 , এটি নুখবাতুল ইলাম আলজিহাদি থেকে প্রকাশিত শাইখ উসামা রহিমাহুল্লাহ’র বক্তব্য ও রচনাবলীর টেক্সট সংকলনগ্রন্থ ‘মাজমু’ রাসায়িল ওয়া তাওজিহাত’ এও রয়েছে। পৃষ্ঠা- ৪০৬


      নিয়মিত খবর পড়তে ভিজিট করুনঃ https://alfirdaws.org

      Comment


      • #4
        সময়োপযোগী গুরুত্বপূর্ণ পোস্ট। সবাইকে পড়ার অনুরোধ করছি।
        ‘যার গুনাহ অনেক বেশি তার সর্বোত্তম চিকিৎসা হল জিহাদ’-শাইখুল ইসলাম ইবনে তাইমিয়া রহ.

        Comment


        • #5
          গুরুত্বপূর্ণ সংযোজন!


          ১/ আলোচ্য প্রবন্ধটি ইমারাতে ইসলামিয়া আফগানিস্তান (তালেবান) এর অফিশিয়াল আরবি ম্যাগাজিন "আস সামুদ" এর সর্বশেষ সংখ্যার প্রচ্ছদ রচনা- একথাটি উল্লেখ করে দিলে ভালো হতো। ওয়াল্লাহু আ'লাম।

          ২/ আলহামদুলিল্লাহ আমরা আরব রাস্ট্রসমূহ, মিশর, তুরস্ক ও বাংলাদেশসহ ঐসকল মানবরচিত সেক্যুলার আইনে পরিচালিত রাস্ট্রের শাসকশ্রেণি ও তাদের সহযোগী সেনাবাহিনীকে কাফির ও মুরতাদ মনে করি।
          আল্লাহর তাওফিকে সালাফদের মানহাজের উপর দন্ডায়মান উলামায়ে কেরাম আমাদেরকে এই মাসআলার ক্ষেত্রে সঠিক দিকেই আহবান করেছেন। আলহামদুলিল্লাহ।

          আমাদের শায়খ আতিয়াতুল্লাহ আল লিবি বলেন,
          .
          "তুরস্ক ও এ জাতীয় অন্যান্য কাফের-মুরতাদ রাষ্ট্রের সেনাবাহিনীতে চাকরি করার ব্যাপারে হুকুম হলো, এমনটা জায়েজ নয়। কারণ এরা তো মুরতাদ রাষ্ট্রের সেনাবাহিনী।
          অতএব যে ব্যক্তি এদের অধীনে থাকবে এবং এদের একজন সৈনিক হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করবে, সে কাফেরদের সৈন্যদের একজন বলে গণ্য হবে, কাফেরদের স্বার্থে তাকে প্রস্তুত করা হবে এবং তার দ্বারা তাদের সংখ্যা বৃদ্ধি ঘটবে। এমন ব্যক্তি কাফেরদের রাষ্ট্র ব্যবস্থাপনা ও সংবিধান রক্ষার কাজে নিয়োজিত থাকবে।*
          .
          এ ছাড়া অধিকাংশ ক্ষেত্রেই এসব সেনাবাহিনীতে চাকরি করার দ্বারা মানব রচিত আইন-কানুনের সহায়তা ছাড়াও আরও বিভিন্ন কুফুরি কর্মকাণ্ডে লিপ্ত হতে হয়। এসব চাকরির দরুন বিভিন্ন গুনাহ, পাপাচার ও শরীয়ত গর্হিত কাজ করতে বাধ্য থাকতে হয়।
          কারণ সৈনিককে কুফুরি কথাবার্তা শুনতে হয়। এমনকি প্রায় ক্ষেত্রে তার নিজেরও কুফরি কাজ অথবা কুফুরি উক্তি করতে বাধ্য হতে হয়। যেমন অভিশপ্ত আতাতুর্কের মত কাফের তাগুত'দেরকে সম্মান জানাতে হয়।
          .
          রাষ্ট্র তুরস্ক, তার সংবিধান ও তার পতাকাকে স্যালুট করতে হয়। একে সাহায্য করার এবং এর জন্য জীবন উৎসর্গ করার শপথ গ্রহণ করতে হয়। এমনই আরো বিভিন্ন কিছু।
          .
          অতএব এসব সামরিক বাহিনীতে অংশগ্রহণ করা নাজায়েজ। বরং আসল কথা হলো এমনটা করা কুফরি নাউজুবিল্লাহ মিন জালিক!
          .
          কিন্তু এখন প্রশ্ন দাঁড়াচ্ছে, সেনাবাহিনীতে চাকরি করা প্রতিটি ব্যক্তিকে আমরা তাকফির করব?*
          .
          এর জবাব হল: সহজ স্বাভাবিক শান্তিপূর্ণ অবস্থায় আমরা এমনটা করবো না। বরং আমরা ব্যক্তিবিশেষের অবস্থা বিবেচনা করব। সেনাবাহিনীর এই চাকরির ক্ষেত্রে লোকদের এমন কোন অপারগতা থাকতে পারে, যা তাদেরকে তাকফির করার পথে প্রতিবন্ধক।*
          .
          অথবা এমন কেউ থাকতে পারে, যে শরিয়াসম্মত বাধ্যবাধকতার শিকার হয়ে অপারগ অবস্থায় এই চাকরি নিয়েছে। কিংবা কেউ ব্যাখ্যা করলো যে, সে শরিয়াসম্মত বাধ্যবাধকতার শিকার। আল্লাহু আ'লাম- তিনি সর্বজ্ঞ!
          .
          এখন কথা হচ্ছে, মুরতাদ কোন রাষ্ট্রের সঙ্গে লড়াই চলাকালে যখন আমরা আক্রমণোদ্যত থাকবো তখন তাদেরকে কিভাবে বিবেচনা করবো?*
          .
          নিঃসন্দেহে তখন আমরা এসব বাহিনীকে মুরতাদ গণ্য করে উপযুক্ত সামরিক আচরণ করব। ইসলামী শরীয়তের বিরোধী শক্তি ধরে নিয়ে তাদের বিরুদ্ধে লড়াই করব।"
          (সূত্রঃ তুর্কী জিজ্ঞাসার জবাব)

          স্মর্তব্য যে, তালেবানদের এই অবস্থান আজকের নয়, বরং তা প্রাচীন ও সুবিদিত। অথচ, দাওলাপন্থী ও সমমনারা এবিষয়টি নিয়ে পরিস্থিতি ঘোলা করার চেষ্টা জারি রেখেছে।


          তারা তালেবানের ব্যাপারে এই আপত্তি তুলছে,
          //মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ রাষ্ট্রের শাসককে কাফের না বলে মুসলিম বলে আখ্যায়িত করা এবং তাদের রাষ্ট্রগুলোকে ইসলমী রাষ্ট্র আখ্যা দেয়া।*যেমন সৌদি আরব ও ইরান,*যাকে বর্তমানের তা/লে/বানের তরফ থেকে ‘ইসলামি প্রজাতন্ত্র ইরান’*এই নামে ভূষিত করা হয়েছে।//
          লেখক সুন্দর বলেছেন,
          "মূলত তালেবানের আদর্শ ও নীতিমালা জানা না থাকার কারণে তারা এ ধরণের আপত্তি তুলছে। তালেবান তার প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকেই আরব শাসকদেরকে কাফের বলে আখ্যায়িত করে না।

          কারণ তালেবানের ধর্মীয় আদর্শের সম্পৃক্ততা রয়েছে দেওবন্দিয়াতের সাথে। তারা ফিকহের ক্ষেত্রে হানাফী, আকিদাগত দিক থেকে মাতুরিদী এবং তাসাওউফের প্রতিও রয়েছে তাদের ঝোঁক। তাই তাকফিরের ক্ষেত্রে তারা খুব সতর্কতা অবলম্বন করে থাকে।"

          এক্ষেত্রে আমাদের অবস্থান হলো,
          তালেবানদের কিছু ভুল থাকতে পারে, যা এড়িয়ে যাওয়াই কাম্য। এবং যদি তা প্রকাশ্য কুফর বা দীনবিরোধী পর্যায়ে না যায়, ততক্ষণ পর্যন্ত তাদের আনুগত্য, সাহায্য-সহযোগিতা আমরা জরুরী মনে করি ও করব এটাই হয়তো সঠিকতার নিকটবর্তী। ওয়াল্লাহু আ'লাম।

          আলহামদুলিল্লাহ, কেননা এই সময়ে শরিয়াহর শাসন নিশ্চিতকরণ এবং দীনের জন্য সর্বাধিকারপ্রাপ্য কর্তব্য পালনে তারাই অগ্রগামী।


          আমাদের আমির ও শায়খ আতিয়াতুল্লাহ রহঃ এর গুরুত্বপূর্ণ সতর্কতাটিও স্মরণ রাখা কাম্যঃ-
          .

          "জানা আবশ্যক যে, আহলে সুন্নাতের কতিপয় ওলামা কখনো এমন কথা বলে থাকেন, যা পূর্বোক্ত ইরজা-আক্রান্ত কিছু কিছু বক্তব্যের সঙ্গে কখনো কখনো মিলে যায় এবং তাতে সামান্য পর্যায়ের ও অস্পষ্ট রকমের ইরজা পাওয়া যায়।
          .
          যদিও তারা সামগ্রিক বিবেচনায় আহলে সুন্নাত ওয়াল জামা'আতের আকিদাহর উপর প্রতিষ্ঠিত, কিন্তু তবুও সেসব ক্ষেত্রে তারা ভুলের শিকার। ইজতিহাদের পর তারা এমন কিছুকে সঠিক বলে ধরে নিয়েছেন, যা মুরজিয়া গোষ্ঠীর কথার সঙ্গে মিলে যায়।
          .
          এমন ব্যক্তিদেরকে আমরা তাড়াহুড়ো করে মুরজিয়া বলে আখ্যায়িত করবো না।

          এমতাবস্থায় যদি ব্যাপারটা এমন গুরুতর হয় যে, তার এই পদস্খলনের কথা প্রকাশ করে মানুষকে তা থেকে বিরত রাখা একান্ত জরুরি, তবে সে ক্ষেত্রে এভাবে বলতে হবে,
          .
          "অমুক মাসআলায় তিনি ভুল করেছেন এবং মুরজিয়াদের সঙ্গে সহমত পোষণ করেছেন; তিনি এমন বক্তব্য দিয়েছেন যা পরিণতিতে মুরজিয়া গোষ্ঠীর বক্তব্য হয়ে দাঁড়ায় আর তা হচ্ছে এই এই এই..."
          .
          আসলে মানুষকে তার বাহ্যিক ও সামগ্রিক অবস্থা বিবেচনা করেই কোন কিছুর দিকে সম্পর্কিত করা উচিত।
          এককথায় এসব ক্ষেত্রে যাচাই-বাছাই, সর্তকতা অবলম্বন এবং কাউকে বিদআতি বলে আখ্যা দেয়ার ক্ষেত্রে সাবধানতা একান্তই জরুরী। বিশেষ করে ওলামায়ে কেরামের ক্ষেত্রে, যাদের ফজিলত সকলের সামনে স্পষ্ট।
          .
          অধিকাংশ ক্ষেত্রেই যারা কল্যাণের পথে ও সঠিক সিদ্ধান্তে উপনীত। যারা সুন্নাহ'কে দৃঢ়ভাবে ধারণকারী, সুন্নাহর প্রতি অতি আগ্রহী, সুন্নতের পক্ষে প্রতিরক্ষাকারী এবং সুন্নাহ অনুসরণে অতিশয় মনোযোগী বলে লোক সমাজে পরিচিত।"

          আল্লাহ তা আলা বিষয়টি বোঝার তাওফিক দিন। আমিন।i

          Comment


          • #6
            গুরুত্বপূর্ণ সংযোজন!

            মুহতারাম Hasan Abdus Salam হাফিজাহুল্লাহকে অসংখ্য ধন্যবাদ। গুরুত্বপূর্ণ সংযোজন! সংযুক্ত করে দেওয়ার জন্য।
            আল্লাহ মুহতারাম ভাইয়ের আফকারে আরো বরকত দান করুন। আমীন
            ‘যার গুনাহ অনেক বেশি তার সর্বোত্তম চিকিৎসা হল জিহাদ’-শাইখুল ইসলাম ইবনে তাইমিয়া রহ.

            Comment

            Working...
            X