নেপালের মিনার মিরাকল : মুসলমানদেরকে ধোঁকায় ফেলার আরেকটি স্টেপ
একটি ইউটিউব ভিডিও নিয়ে বিশ্বজুড়ে তোলপাড় চলছে। ভিডিওটি নেপালের একটি মসজিদের মিনারকে কেন্দ্র করে। তাতে দেখা যায় যে, মসজিদের মিনারটি এমনিতেই বাতাসে ভেসে আকাশে উঠে জায়গা মতো বসে যাচ্ছে। আর তা লা-ইলাহা-ইল্লাল্লাহ জিকিরের সাথে দেখছে শত শত মুসলিম।
ভিডিওটা যা-ই হোক না কেন, তার চেয়েও আকর্ষণীয় হলো এর সাথে সংশ্লিষ্ট বক্তব্য। বলা হচ্ছে, মসজিদটির মিনার নির্মাণের পর তা উঠাতে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিবর্গ ব্যাহত হলে প্রশাসনের সাহায্য চাওয়া হয়। প্রশাসন সাফ বলে দেয়, আমরা পারব না, তোমাদের আল্লাহকে বলো। এরপর এক টুকরো মেঘ ঘিরে নেয় মিনারটিকে, আর মিনারটি আপনা আপনি উঠে যায় আকাশে, বসে যায় জায়গা মতো।
আরো একটি ঘটনা পেলাম। তা হলো, মসজিদের ইমাম সাহেব স্বপ্নে দেখেন, তাকে বলা হচ্ছে যেন তিনি একটি সাদা কাপড় দিয়ে মিনারটি ঢেকে দেন। তিনি তা করেন। পরে মিনারটি আপনা আপনি উঠে যায় আকাশে। যা শত শত মানুষ খালি চোখে প্রত্যক্ষ করে।
ভিডিওটির বিষয়ে বলার আগে কয়েকটি ভূমিকা দেয়া প্রয়োজন মনে করছি।
এক.
আমাদের মুসলমানদের ইসলামের সত্যতার জন্য এসব মিরাকল বা অলৌকিক বিষয় কেন প্রয়োজন? আল্লাহ তা’আলা বড় বড় মিরাকল আমাদের সামনে রেখে দিয়েছেন, আমরা কেন এসব ছোট ছোট মিরাকলের পেছনে পড়ি?
আমাদের জন্য সবচেয়ে বড় মিরাকল আমাদের শরীর, এর কার্যপ্রণালী।
আল্লাহ তা’আলা বলেন,
وَفِي أَنفُسِكُمْ أَفَلَا تُبْصِرُونَ ﴿الذاريات: ٢١﴾
এবং (নিদর্শন রয়েছে) তোমাদের নিজেদের মধ্যেও, তোমরা কি অনুধাবন করবে না? (৫১:২১)
এরপর রয়েছে পাহাড়-পর্বত, আকাশ-বাতাস ও প্রকৃতির সব কিছুই। আল্লাহ তাআলা বলেন,
أَفَلَا يَنظُرُونَ إِلَى الْإِبِلِ كَيْفَ خُلِقَتْ – وَإِلَى السَّمَاءِ كَيْفَ رُفِعَتْ – وَإِلَى الْجِبَالِ كَيْفَ نُصِبَتْ – وَإِلَى الْأَرْضِ كَيْفَ سُطِحَتْ – فَذَكِّرْ إِنَّمَا أَنتَ مُذَكِّرٌ
তারা কি উষ্ট্রের প্রতি লক্ষ্য করে না যে, তা কিভাবে সৃষ্টি করা হয়েছে? এবং আকাশের প্রতি লক্ষ্য করে না যে, তা কিভাবে উচ্চ করা হয়েছে? এবং পাহাড়ের দিকে যে, তা কিভাবে স্থাপন করা হয়েছে? এবং পৃথিবীর দিকে যে, তা কিভাবে সমতল বিছানো হয়েছে? অতএব, আপনি উপদেশ দিন, আপনি তো কেবল একজন উপদেশদাতা। (৮৮:১৭-২১)
জমাট রক্ত থেকে মানুষের সৃষ্টিও অনেক বড় মিরাকল।
خَلَقَ الْإِنسَانَ مِنْ عَلَقٍ ﴿العلق: ٢﴾
তিনি মানুষকে সৃষ্টি করেছেন জমাট রক্ত থেকে। (৯৬:২)
আর আল-কুরআনের চেয়ে বড় মিরাকল আর কী?
أَمْ يَقُولُونَ افْتَرَاهُ قُلْ فَأْتُوا بِسُورَةٍ مِّثْلِهِ وَادْعُوا مَنِ اسْتَطَعْتُم مِّن دُونِ اللَّهِ إِن كُنتُمْ صَادِقِينَ ﴿يونس: ٣٨﴾
মানুষ কি বলে যে, এটি বানিয়ে এনেছ? বলে দাও, তোমরা নিয়ে এসো একটিই সূরা, আর ডেকে নাও, যাদেরকে নিতে সক্ষম হও আল্লাহ ব্যতীত, যদি তোমরা সত্যবাদী হয়ে থাক।
وَإِن كُنتُمْ فِي رَيْبٍ مِّمَّا نَزَّلْنَا عَلَىٰ عَبْدِنَا فَأْتُوا بِسُورَةٍ مِّن مِّثْلِهِ وَادْعُوا شُهَدَاءَكُم مِّن دُونِ اللَّهِ إِن كُنتُمْ صَادِقِينَ ﴿البقرة: ٢٣﴾
এতদসম্পর্কে যদি তোমাদের কোন সন্দেহ থাকে যা আমি আমার বান্দার প্রতি অবতীর্ণ করেছি, তাহলে এর মত একটি সূরা রচনা করে নিয়ে এস। তোমাদের সেসব সাহায্যকারীদেরকে সঙ্গে নাও-এক আল্লাহকে ছাড়া, যদি তোমরা সত্যবাদী হয়ে থাকো।
দুই.
আল্লাহ তা’আলা নি:সন্দেহে সবকিছু করতে পারেন, সর্ব বিষয়ে শক্তিশালী। তিনি বলেন,
لِلَّهِ مُلْكُ السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضِ وَمَا فِيهِنَّ وَهُوَ عَلَىٰ كُلِّ شَيْءٍ قَدِيرٌ ﴿المائدة: ١٢٠﴾
নভোমন্ডল, ভূমন্ডল এবং এতদুভয়ে অবস্থিত সবকিছুর আধিপত্য আল্লাহরই। তিনি সবকিছুর উপর ক্ষমতাবান। (৫:১২০)
তিনি যখন যা চান তা করতে পারেন।
إِنَّمَا أَمْرُهُ إِذَا أَرَادَ شَيْئًا أَن يَقُولَ لَهُ كُن فَيَكُونُ ﴿يس: ٨٢﴾
তিনি যখন কোন কিছু করতে ইচ্ছা করেন, তখন তাকে কেবল বলে দেন, ‘হও’ তখনই তা হয়ে যায়। (৩৬:৮২)
إِنَّمَا قَوْلُنَا لِشَيْءٍ إِذَا أَرَدْنَاهُ أَن نَّقُولَ لَهُ كُن فَيَكُونُ ﴿النحل: ٤٠﴾
আমি যখন কোন কিছু করার ইচ্ছা করি; তখন তাকে কেবল এতটুকুই বলি যে, হয়ে যাও,। সুতরাং তা হয়ে যায়। (১৬:৪০)
তদুপরি তিনি সবকিছুই পৃথিবীর ব্যবস্থাপনা ঠিক রেখেই করেন। ব্যবস্থাপনার বাইরে কোনো কিছু তিনি করেন না।
কাফেররা প্রশ্ন তুলত যে, পৃথিবীতে ফেরেশতাকে কেন রাসূল হিসেবে পাঠানো হলো না। কেন আমাদের মতোই মানুষকে রাসূল হিসেবে পাঠানো হলো।
আল্লাহ এর জবাবে বলেন,
قُل لَّوْ كَانَ فِي الْأَرْضِ مَلَائِكَةٌ يَمْشُونَ مُطْمَئِنِّينَ لَنَزَّلْنَا عَلَيْهِم مِّنَ السَّمَاءِ مَلَكًا رَّسُولًا ﴿الإسراء: ٩٥﴾
বলুনঃ যদি পৃথিবীতে ফেরেশতারা স্বচ্ছন্দে বিচরণ করত, তবে আমি আকাশ থেকে ফেরেশতাকেই তাদের নিকট রাসূল করে প্রেরণ করতাম। (১৭:৯৫)
তিন.
বিধর্মীরা সব সময়ই মুসলমানদেরকে ধোঁকায় ফেলতে সচেষ্ট থাকে। তারা মুসলমানেদর আবেগ নিয়ে খেলার জন্য বিভিন্ন গল্প সাজিয়ে তাতে বিভিন্ন রং মেখে তাকে আকর্ষণীয় করে তোলে। পরে যখন মুসলমানরা সেটা নিয়ে অতি উৎসাহী হয়ে উঠে, তখন তারাই আবার সেটাকে মিথ্যা প্রমাণ করতে মরিয়ে হয়ে উঠে। মুসলমানদেরকে নিয়ে তারা হাসাহাসি করে।
কাজেই তাদের ফাঁদে পা দেয়ার আগে খুব সতর্কভাবে পা ফেলতে হবে।
এবার আসা যাক ভিডিওটির প্রসঙ্গে।
ভিডিওটির মিথ্যা হওয়ার জন্য অনেকগুলো সহজ যুক্তি রয়েছে। কঠিন যুক্তিগুলোর কথা না-ই বললাম।
১. ভিডিওটি হাজারো ওয়েবসাইটে প্রকাশিত হয়েছে। অথচ কোথাও কোনো সূত্র উল্লেখ করা হয় নি।
২. কোথাও কোথাও সূত্র হিসেবে এই লিংকটি দেয়া হচ্ছে।
অথচ এর সাথে ঘটনার কোনো সংশ্লিষ্টতা নেই।
৩. কোনো লোকাল বা ইন্টারন্যাশনাল মিডিয়া ঘটনাটিকে কভারেজ দেয়নি, বা নিদেনপক্ষে কোনো নিউজও করেনি। অথচ জিও নিউজ সহ অনেকে চ্যানেলই এ রকম ঘটনা পেলে তা সত্যি হলে লুফে নেয়।
৪. কোনো পত্রিকা এটা নিয়ে একটি লাইনও লিখে নি।
৫. এই ঘটনার একটি মাত্র ভিডিও ইন্টারনেটে পাওয়া যায়। যা হাজারো সাইটে প্রকাশিত হয়েছে। এটা কোনো ছোট ঘটনা নয়। শত শত মানুষ সেখানে উপস্থিত ছিল। তারা ঘটনাটিকে অন্য সব সাধারণ ঘটনা মনে করেছেন বলেই এর ভিডিও করেন নি, বা তা ছড়ানোর প্রয়াস নেন নি।
৬. এই ভিডিওতে দেখা যায় যে, মিনারটি একটা নির্দিষ্ট স্কেলে আকাশে উঠছে, আবার নির্দিষ্ট সমান্তরালেই তা জায়গামতো গিয়ে বসছে, কাজেই বুঝাই যায় যে, এখানে ক্রেন, রশি সবকিছুই ছিল। আকাশের শুভ্র আলোয় কিংবা সামান্য এডিটিং বা ভিডিওটির বাজে কোয়ালিটির জন্য রশি দেখা যাচ্ছে না।
(যারা সার্কাস দেখেছেন, তাদের কাছে এরকম ব্যাপার সরাসরি দেখারও অভিজ্ঞতা থাকবে। যেখানে এমন রশি ব্যবহার করা হয়, যা সামনে দাঁড়িয়েও মানব চক্ষু তা অবলোকন করতে পারে না।)
৭. ভিডিওটির শেষ দিকে দেখা যায় মিনারটিকে জায়গা মতো রাখার পর লোকজন চলে যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে। তাতে বোঝা যায় যে, তারা শুধু ঘটনাটিকে অবলোকন করার জন্যই দাঁড়িয়ে ছিলেন, কাজ শেষ হওয়ার পর অতিরিক্ত আবেগ তাদেরকে সেখানে দাঁড়িয়ে থাকতে উদ্বুদ্ধ করে নি।
আমাদের দেশেও যদি কোনো মসজিদে এভাবে ক্রেন দিয়ে মিনার ওঠানো হয়, তাহলেও কমপক্ষে কয়েক শ মানুষ সেখানে তা দেখার জন্য জড়ো হবে। উৎসুক জনতার উৎসাহ সবকিছুকে ঘিরেই। তা মিরাকল হোক, আর না-ই হোক।
সারকথা, একজন মুসলমান হিসেবে আমাদের ঈমান এসব ছোটখাটো মিরাকলের মুখাপেক্ষী নয়। আমাদের শরীর, আমাদের ভেতরের সৃষ্টি, প্রকৃতির সৃষ্টি, মায়ের পেটে শিশুর বেড়ে ওঠা –এসবই নি:সন্দেহে আরো অনেক বড় মিরাকল।
কাজেই এসব প্রতারণার ফাঁদে পা না ফেলে সতর্ক দৃষ্টি রাখা উচিৎ আমাদের। আল্লাহ আমাদের তাওফীক দিন। আমীন।
লেখাটি yusufsultan.com এর সৌজন্যে
আরও জানতে.....
একটি ইউটিউব ভিডিও নিয়ে বিশ্বজুড়ে তোলপাড় চলছে। ভিডিওটি নেপালের একটি মসজিদের মিনারকে কেন্দ্র করে। তাতে দেখা যায় যে, মসজিদের মিনারটি এমনিতেই বাতাসে ভেসে আকাশে উঠে জায়গা মতো বসে যাচ্ছে। আর তা লা-ইলাহা-ইল্লাল্লাহ জিকিরের সাথে দেখছে শত শত মুসলিম।
ভিডিওটা যা-ই হোক না কেন, তার চেয়েও আকর্ষণীয় হলো এর সাথে সংশ্লিষ্ট বক্তব্য। বলা হচ্ছে, মসজিদটির মিনার নির্মাণের পর তা উঠাতে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিবর্গ ব্যাহত হলে প্রশাসনের সাহায্য চাওয়া হয়। প্রশাসন সাফ বলে দেয়, আমরা পারব না, তোমাদের আল্লাহকে বলো। এরপর এক টুকরো মেঘ ঘিরে নেয় মিনারটিকে, আর মিনারটি আপনা আপনি উঠে যায় আকাশে, বসে যায় জায়গা মতো।
আরো একটি ঘটনা পেলাম। তা হলো, মসজিদের ইমাম সাহেব স্বপ্নে দেখেন, তাকে বলা হচ্ছে যেন তিনি একটি সাদা কাপড় দিয়ে মিনারটি ঢেকে দেন। তিনি তা করেন। পরে মিনারটি আপনা আপনি উঠে যায় আকাশে। যা শত শত মানুষ খালি চোখে প্রত্যক্ষ করে।
ভিডিওটির বিষয়ে বলার আগে কয়েকটি ভূমিকা দেয়া প্রয়োজন মনে করছি।
এক.
আমাদের মুসলমানদের ইসলামের সত্যতার জন্য এসব মিরাকল বা অলৌকিক বিষয় কেন প্রয়োজন? আল্লাহ তা’আলা বড় বড় মিরাকল আমাদের সামনে রেখে দিয়েছেন, আমরা কেন এসব ছোট ছোট মিরাকলের পেছনে পড়ি?
আমাদের জন্য সবচেয়ে বড় মিরাকল আমাদের শরীর, এর কার্যপ্রণালী।
আল্লাহ তা’আলা বলেন,
وَفِي أَنفُسِكُمْ أَفَلَا تُبْصِرُونَ ﴿الذاريات: ٢١﴾
এবং (নিদর্শন রয়েছে) তোমাদের নিজেদের মধ্যেও, তোমরা কি অনুধাবন করবে না? (৫১:২১)
এরপর রয়েছে পাহাড়-পর্বত, আকাশ-বাতাস ও প্রকৃতির সব কিছুই। আল্লাহ তাআলা বলেন,
أَفَلَا يَنظُرُونَ إِلَى الْإِبِلِ كَيْفَ خُلِقَتْ – وَإِلَى السَّمَاءِ كَيْفَ رُفِعَتْ – وَإِلَى الْجِبَالِ كَيْفَ نُصِبَتْ – وَإِلَى الْأَرْضِ كَيْفَ سُطِحَتْ – فَذَكِّرْ إِنَّمَا أَنتَ مُذَكِّرٌ
তারা কি উষ্ট্রের প্রতি লক্ষ্য করে না যে, তা কিভাবে সৃষ্টি করা হয়েছে? এবং আকাশের প্রতি লক্ষ্য করে না যে, তা কিভাবে উচ্চ করা হয়েছে? এবং পাহাড়ের দিকে যে, তা কিভাবে স্থাপন করা হয়েছে? এবং পৃথিবীর দিকে যে, তা কিভাবে সমতল বিছানো হয়েছে? অতএব, আপনি উপদেশ দিন, আপনি তো কেবল একজন উপদেশদাতা। (৮৮:১৭-২১)
জমাট রক্ত থেকে মানুষের সৃষ্টিও অনেক বড় মিরাকল।
خَلَقَ الْإِنسَانَ مِنْ عَلَقٍ ﴿العلق: ٢﴾
তিনি মানুষকে সৃষ্টি করেছেন জমাট রক্ত থেকে। (৯৬:২)
আর আল-কুরআনের চেয়ে বড় মিরাকল আর কী?
أَمْ يَقُولُونَ افْتَرَاهُ قُلْ فَأْتُوا بِسُورَةٍ مِّثْلِهِ وَادْعُوا مَنِ اسْتَطَعْتُم مِّن دُونِ اللَّهِ إِن كُنتُمْ صَادِقِينَ ﴿يونس: ٣٨﴾
মানুষ কি বলে যে, এটি বানিয়ে এনেছ? বলে দাও, তোমরা নিয়ে এসো একটিই সূরা, আর ডেকে নাও, যাদেরকে নিতে সক্ষম হও আল্লাহ ব্যতীত, যদি তোমরা সত্যবাদী হয়ে থাক।
وَإِن كُنتُمْ فِي رَيْبٍ مِّمَّا نَزَّلْنَا عَلَىٰ عَبْدِنَا فَأْتُوا بِسُورَةٍ مِّن مِّثْلِهِ وَادْعُوا شُهَدَاءَكُم مِّن دُونِ اللَّهِ إِن كُنتُمْ صَادِقِينَ ﴿البقرة: ٢٣﴾
এতদসম্পর্কে যদি তোমাদের কোন সন্দেহ থাকে যা আমি আমার বান্দার প্রতি অবতীর্ণ করেছি, তাহলে এর মত একটি সূরা রচনা করে নিয়ে এস। তোমাদের সেসব সাহায্যকারীদেরকে সঙ্গে নাও-এক আল্লাহকে ছাড়া, যদি তোমরা সত্যবাদী হয়ে থাকো।
দুই.
আল্লাহ তা’আলা নি:সন্দেহে সবকিছু করতে পারেন, সর্ব বিষয়ে শক্তিশালী। তিনি বলেন,
لِلَّهِ مُلْكُ السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضِ وَمَا فِيهِنَّ وَهُوَ عَلَىٰ كُلِّ شَيْءٍ قَدِيرٌ ﴿المائدة: ١٢٠﴾
নভোমন্ডল, ভূমন্ডল এবং এতদুভয়ে অবস্থিত সবকিছুর আধিপত্য আল্লাহরই। তিনি সবকিছুর উপর ক্ষমতাবান। (৫:১২০)
তিনি যখন যা চান তা করতে পারেন।
إِنَّمَا أَمْرُهُ إِذَا أَرَادَ شَيْئًا أَن يَقُولَ لَهُ كُن فَيَكُونُ ﴿يس: ٨٢﴾
তিনি যখন কোন কিছু করতে ইচ্ছা করেন, তখন তাকে কেবল বলে দেন, ‘হও’ তখনই তা হয়ে যায়। (৩৬:৮২)
إِنَّمَا قَوْلُنَا لِشَيْءٍ إِذَا أَرَدْنَاهُ أَن نَّقُولَ لَهُ كُن فَيَكُونُ ﴿النحل: ٤٠﴾
আমি যখন কোন কিছু করার ইচ্ছা করি; তখন তাকে কেবল এতটুকুই বলি যে, হয়ে যাও,। সুতরাং তা হয়ে যায়। (১৬:৪০)
তদুপরি তিনি সবকিছুই পৃথিবীর ব্যবস্থাপনা ঠিক রেখেই করেন। ব্যবস্থাপনার বাইরে কোনো কিছু তিনি করেন না।
কাফেররা প্রশ্ন তুলত যে, পৃথিবীতে ফেরেশতাকে কেন রাসূল হিসেবে পাঠানো হলো না। কেন আমাদের মতোই মানুষকে রাসূল হিসেবে পাঠানো হলো।
আল্লাহ এর জবাবে বলেন,
قُل لَّوْ كَانَ فِي الْأَرْضِ مَلَائِكَةٌ يَمْشُونَ مُطْمَئِنِّينَ لَنَزَّلْنَا عَلَيْهِم مِّنَ السَّمَاءِ مَلَكًا رَّسُولًا ﴿الإسراء: ٩٥﴾
বলুনঃ যদি পৃথিবীতে ফেরেশতারা স্বচ্ছন্দে বিচরণ করত, তবে আমি আকাশ থেকে ফেরেশতাকেই তাদের নিকট রাসূল করে প্রেরণ করতাম। (১৭:৯৫)
তিন.
বিধর্মীরা সব সময়ই মুসলমানদেরকে ধোঁকায় ফেলতে সচেষ্ট থাকে। তারা মুসলমানেদর আবেগ নিয়ে খেলার জন্য বিভিন্ন গল্প সাজিয়ে তাতে বিভিন্ন রং মেখে তাকে আকর্ষণীয় করে তোলে। পরে যখন মুসলমানরা সেটা নিয়ে অতি উৎসাহী হয়ে উঠে, তখন তারাই আবার সেটাকে মিথ্যা প্রমাণ করতে মরিয়ে হয়ে উঠে। মুসলমানদেরকে নিয়ে তারা হাসাহাসি করে।
কাজেই তাদের ফাঁদে পা দেয়ার আগে খুব সতর্কভাবে পা ফেলতে হবে।
এবার আসা যাক ভিডিওটির প্রসঙ্গে।
ভিডিওটির মিথ্যা হওয়ার জন্য অনেকগুলো সহজ যুক্তি রয়েছে। কঠিন যুক্তিগুলোর কথা না-ই বললাম।
১. ভিডিওটি হাজারো ওয়েবসাইটে প্রকাশিত হয়েছে। অথচ কোথাও কোনো সূত্র উল্লেখ করা হয় নি।
২. কোথাও কোথাও সূত্র হিসেবে এই লিংকটি দেয়া হচ্ছে।
অথচ এর সাথে ঘটনার কোনো সংশ্লিষ্টতা নেই।
৩. কোনো লোকাল বা ইন্টারন্যাশনাল মিডিয়া ঘটনাটিকে কভারেজ দেয়নি, বা নিদেনপক্ষে কোনো নিউজও করেনি। অথচ জিও নিউজ সহ অনেকে চ্যানেলই এ রকম ঘটনা পেলে তা সত্যি হলে লুফে নেয়।
৪. কোনো পত্রিকা এটা নিয়ে একটি লাইনও লিখে নি।
৫. এই ঘটনার একটি মাত্র ভিডিও ইন্টারনেটে পাওয়া যায়। যা হাজারো সাইটে প্রকাশিত হয়েছে। এটা কোনো ছোট ঘটনা নয়। শত শত মানুষ সেখানে উপস্থিত ছিল। তারা ঘটনাটিকে অন্য সব সাধারণ ঘটনা মনে করেছেন বলেই এর ভিডিও করেন নি, বা তা ছড়ানোর প্রয়াস নেন নি।
৬. এই ভিডিওতে দেখা যায় যে, মিনারটি একটা নির্দিষ্ট স্কেলে আকাশে উঠছে, আবার নির্দিষ্ট সমান্তরালেই তা জায়গামতো গিয়ে বসছে, কাজেই বুঝাই যায় যে, এখানে ক্রেন, রশি সবকিছুই ছিল। আকাশের শুভ্র আলোয় কিংবা সামান্য এডিটিং বা ভিডিওটির বাজে কোয়ালিটির জন্য রশি দেখা যাচ্ছে না।
(যারা সার্কাস দেখেছেন, তাদের কাছে এরকম ব্যাপার সরাসরি দেখারও অভিজ্ঞতা থাকবে। যেখানে এমন রশি ব্যবহার করা হয়, যা সামনে দাঁড়িয়েও মানব চক্ষু তা অবলোকন করতে পারে না।)
৭. ভিডিওটির শেষ দিকে দেখা যায় মিনারটিকে জায়গা মতো রাখার পর লোকজন চলে যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে। তাতে বোঝা যায় যে, তারা শুধু ঘটনাটিকে অবলোকন করার জন্যই দাঁড়িয়ে ছিলেন, কাজ শেষ হওয়ার পর অতিরিক্ত আবেগ তাদেরকে সেখানে দাঁড়িয়ে থাকতে উদ্বুদ্ধ করে নি।
আমাদের দেশেও যদি কোনো মসজিদে এভাবে ক্রেন দিয়ে মিনার ওঠানো হয়, তাহলেও কমপক্ষে কয়েক শ মানুষ সেখানে তা দেখার জন্য জড়ো হবে। উৎসুক জনতার উৎসাহ সবকিছুকে ঘিরেই। তা মিরাকল হোক, আর না-ই হোক।
সারকথা, একজন মুসলমান হিসেবে আমাদের ঈমান এসব ছোটখাটো মিরাকলের মুখাপেক্ষী নয়। আমাদের শরীর, আমাদের ভেতরের সৃষ্টি, প্রকৃতির সৃষ্টি, মায়ের পেটে শিশুর বেড়ে ওঠা –এসবই নি:সন্দেহে আরো অনেক বড় মিরাকল।
কাজেই এসব প্রতারণার ফাঁদে পা না ফেলে সতর্ক দৃষ্টি রাখা উচিৎ আমাদের। আল্লাহ আমাদের তাওফীক দিন। আমীন।
লেখাটি yusufsultan.com এর সৌজন্যে
আরও জানতে.....
Comment