বিছমিল্লাহির রহমানির রহিম
কথিত “আদ-দাউলাতুল ইসলামিয়া (Islamic state)” বিষয়ে “জাবাহাতুন নুসরাহ” এর শরীয়াহ কমিটির সম্মানিত সদস্য ‘শাইখ আবু সুলাইমান আল মুহাজির’ এর ভিডিও সাক্ষাৎকারের পূর্ণ বিবরণ।
প্রথম পর্ব:
“আল বাসীরাহ” ফাউন্ডেশনঃ- আমরা আজ শাইখ আবু সুলাইমান আল মুহাজির এর সাথে সাক্ষাতে ধন্য হলাম। শাইখের নিকট শামের মুজাহিদগণের পরিস্থিতি নিয়ে কিছু প্রশ্ন করতে চাই।
প্রশ্নঃ শাইখ আবু মুহাম্মদ জাউলানী (হাঃ) কর্তৃক জামাতুদ্দৌলাকে যে অনুরোধে সাড়া দেওয়ার ৫ দিনের মেয়াদ ঘোষণা করেছিলেন উহা কি?
শাইখ আবু সোলাইমান আল মুহাজিরঃ- সমস্ত প্রশংসা বিশ্ব জাহানের প্রতিপালক আল্লাহ তা’য়ালার জন্য। দরুদ ও সালাম নাযিল হোক সকল নাবী রসূলের সরদার আমাদের নাবী হযরত মুহাম্মদ (সঃ) এর উপর, তার পরিবার ও সাহাবাগণের উপর।
সর্বপ্রথম আমি বলব এটা শুধু জাবহাতুন নুসরারই অনুরোধ নয় বরং আমরা মনে করি ইহা শামের অধিকাংশ মুসলমান, শামের আলেমগন ও বিশ্বের বহু বড় বড় উলামাগণেরও আহবান ছিল সেটা ।
যেই মেয়াদ ঘোষণা করেছিলেন শাইখ আবু মুহাম্মদ জুলানী (হাফি শাইখ আবু খালেদ আস-সূরী (রাহিঃ)এর মৃত্যুতে শোক পালন কালে। (আল্লাহ তা’য়ালা তাঁর উপর রহম করেন ও শহীদ হিসাবে কবুল করে নিন।)
স্পষ্টভাবে বলা হয়েছে যে, আমরা ‘জাবহাতুন নুসরা’ উলামায়ে রাসিখিন (বিজ্ঞ হাক্কানী আলেম) যারা ইসলামী জ্ঞানে জ্ঞানবান। যাদের শরীয়তের আহকাম বুঝার সঠিক যোগ্যতা রয়েছে ও সকলের কাছে গ্রহনযোগ্য। যেমন- শাইখ আবু কাতাদা ফিলিস্তিনী (হাঃ), শাইখ আবু মুহাম্মদ আল মাকদিসী (হাঃ), শাইখ সুলায়মান আল উলওয়ান (হাঃ) (আল্লাহ তা’য়ালা তাদের সকলকে মুক্ত করে দিন) যখন উনাদের মধ্যে থেকে দুজন আমাদেরকে নসিহাহ করলেন- যাদের কথা শাইখ আবু মুহাম্মদ আল জাওলানী (হাঃ) উল্লেখ করেছিলেন কুরআন ও সুন্নাহর দলিলের মাধ্যমে। শাইখগণ ইহা ‘হিকমাহ’ মনে করেছেন যে, আমরা ‘জামাত আদ-দাউলার’ সাথে যেন পুনরায় যুদ্ধ ও সংঘর্ষে লিপ্ত না হই। তখন আমরা উনাদের নসিহাহ কবুল করে নিয়েছিলাম এবং এই সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম যে, আমরা খুব প্রয়োজন না হলে তাদের প্রতিউত্তর দিব না। ইহা ঐ সকল অঞ্চলে যেখানে বিরোধ ও দ্বন্দ্ব স্পষ্ট। যেমন পূর্বাঞ্চল ও হালবের কিছু এলাকায়। যতক্ষন না ‘জামাত আদ-দাউলার’ প্রকৃত অর্থে হকের দিকে ফিরে আসে এবং পরিপূর্ণ শরয়ী আদালতকে মেনে নেয়, যেখানে একই সময়ে তারা বিচারপ্রার্থী ও বিচারক হয়ে বসবে না।
“আল বাসীরাহ” ফাউন্ডেশনঃ- আল কায়েদার সাথে ‘জামাত আদ-দাউলার’ বর্তমানে কি কোন মিল রয়েছে?
শাইখ আবু সোলাইমান আল মুহাজিরঃ - আমি নিশ্চয়তার সাথে এ কথা বলতে পারি যে, ‘আল কায়েদার’ সাথে বর্তমানে ‘জামাত আদ-দাউলার’ (isis) চিন্তা চেতনায় কিংবা বাস্তবতায় কোন মিল নেই।
যে ব্যক্তি আল কয়েদার ইলমী ও আমলী বিষয়াবলী সম্পর্কে অবগত রয়েছেন, তিনি স্পষ্ট ভাবেই আল কায়েদা ও ‘জামাত আদ-দাউলার’ মধ্যকার বড় ধরনের পার্থক্য দেখতে পাবেন। বড় পার্থক্য পরিলক্ষিত হয়, যেমন- শাইখ উসামা বিন লাদেন (রহিঃ), শাইখ আইমান আল জাওয়াহিরী (হাঃ), শাইখ আবু ইয়াহইয়া লিব্বী (রহিঃ), শাইখ আতিয়াতুল্লাহ লিব্বি, শাইখ আবু মুসআব যারকাওবী (রহিঃ) সহ অন্যন্যাদের দৃষ্টিভঙ্গি বা চিন্তাধারা আর ‘জামাত আদ-দাউলার’ চিন্তাধারার মধ্যে মৌলিক পার্থক্য পরিলক্ষিত হচ্ছে। উল্লেখিত শাইখগন মানুষের সাথে আচার ব্যবহার ও কিভাবে উনারা এই উম্মাতের মধ্যে নিজেদের অবস্থানকে দেখতেন, অর্থাৎ এই উম্মাহর মধ্যে নিজেদের গ্রহণযোগ্যতা ও তাদের জিহাদের প্রাধান্য বিষয়ক চিন্তাচেতনা। এই ধরনের পার্থক্যগুলোর কারনে বাস্তব ময়দানে দুই পক্ষের চিন্তাধারাকে সমন্বয় করা দুষ্কর হয়ে পড়েছে। ‘জামাত আদ-দাউলার’ সম্পর্কে সংক্ষেপে বলা যায় যে, বাস্তবিক ক্ষেত্রে ‘জামাত আদ-দাউলার’ ‘আল কায়েদার’ অংশ হওয়ার যতগুলো গ্রহণযোগ্য ভিত্তি বা সীমা রয়েছে তার সবগুলো লংঘন করেছে ও সীমা অতিক্রম করেছে। আল কায়েদার সর্বোচ্চ নেতৃত্বের আদেশগুলো না জানার ভান ধরেছে। একথাও আমি বিশ্বাস রাখি যে, আল কায়েদার সার্বিক নেতৃত্ব হতে দেওয়া নির্দেশনা তাদের জন্য যথেষ্ট। ‘জামাত আদ-দাউলার’ ইসলামের নামে বিভিন্ন অপরাধে লিপ্ত হওয়ায় আল কায়েদার সাথে ‘জামাত আদ-দাউলার’ ভিন্ন অবস্থানকে স্পষ্টভাবে ব্যক্ত করা হল।
মুয়াছ্্ছাছা আল বাসিরাঃ- আল কায়েদার সাথে জামাতুদ্দৌলার কোন ধরনের সম্পর্ক বজায় ছিল?
শাইখ আবু সোলাইমান আল্্ মুহাজিরঃ উভয়ের মধ্যেকার যে সম্পর্ক ছিল তা কেহ অস্বীকার করবে না। তবে এ সম্পর্কটি ছিল দলের সাথে আমিরের যেমন সম্পর্ক থাকে তদ্রুপ।
আল কায়েদা কৌশলগত ছক একে ঐ অনুযায়ী পরিকল্পনা গ্রহণ করে। বিভিন্ন অঞ্চলকে পৃথক নামে নামকরণ করে, যা ইকলিম বা প্রদেশ নামে অভিহিত। যেমন আল জাযিরাতুল আরাবিয়া অঞ্চলের আল কায়েদা প্রতিনিধি ও জিম্মাদার হচ্ছেন শাইখ আবু বাসির আল ওয়াহিশি, আল মাগরিব আল ইসলামী অঞ্চলের আল কায়েদার প্রতিনিধি ও জিম্মাদার হচ্ছেন শাইখ আবু মুসআব আব্দুল ওয়াদুদ। এভাবে প্রতিটি অঞ্চলেই জিম্মাদার রয়েছেন। ইরাক অঞ্চলের দায়িত্ব প্রাপ্ত হন- শাইখ আবু বকর আল বাগদাদী। শায়খ ডাঃ আইমান আজ জাওয়াহিরি (হাঃ) এ সকল অঞ্চলের আমির। যখন ইরাকে ‘ইসলামী দাউলা’ প্রতিষ্ঠিত হয়, তখন এই দাউলা ও আল কায়েদার সাথে যে বায়আতের সম্পর্ক ছিল তা পরিপূর্ণ মেনে চলা কর্তব্য। আমি এখন ইরাকের দৌলা ঘোষণা সময়কালের রাজনৈতিক পরিস্থিতির বিস্তারিত আলোচনা করতে চাই না। আর এটা আলোচনার এখন বিষয়ও নয়। জেনে রাখা দরকার যে, প্রতিটি অঞ্চলের একজন জিম্মাদার রয়েছেন। তিনি আল কায়েদার কৌশলগত বিষয় ও যে স্থানে কার্যক্রম চালাবেন তা সমন্বয় করার দায়িত্বশীল হবেন। আর অবশ্যই উহা কাফেরদের কোনো মতবাদ বা ঐক্যমতের ভিত্তিতে পরিচালিত হতে পারবে না। যেমন “সাইক্স পিকট” এর সাথে মিল রাখা। বরং উহা সম্পূর্ণ ইসলামী মূলনীতির উপর ভিত্তি করে কৌশলগত সিদ্ধান্ত গ্রহণ করবে।
সাথে সাথে ইসলামী দিক নির্দেশনা অনুসরণ করে, ‘লাভ-ক্ষতির’ ভিত্তিতে সামনের দিকে এগিয়ে যাবে। ইহাই হচ্ছে আল কায়েদার প্রতিষ্ঠা লগ্ন থেকে রাজনৈতিক দূরদর্শিতা। কিন্তু এখানে একটি বিষয় লক্ষ্যনীয় যে, কেন বিভিন্ন অঞ্চলের দায়িত্বশীলগণকে শায়খ বাগদাদীর নিকট বায়আত নিতে দেখছি না? এর উত্তরে আমি বলব- প্রতিটি অঞ্চলের যিনি আমীর হিসেবে দায়িত্বরত আছেন তারা সকলে শাইখ আইমান যাওয়াহিরী (হাঃ) এর নিকট সরাসরী বাইআত নিয়েছেন। তাই বাগদাদীর নিকট বায়আত নেওয়ার প্রশ্নই উঠে না।
আল বাসীরাহ ফাউন্ডেশনঃ- কোন দ্বন্দ্বটি মূলত এমন পরিস্থিতির জন্য দায়ী বলে মনে করেন?
শাইখ আবু সোলাইমান আল মুহাজিরঃ অধিকাংশ লোক এটা বিশ্বাস করে যে, জামাতুদ্দৌলা ও জাবহাতুন নুসরার মধ্যে তখনই সমস্যা সৃষ্টি হয়েছে যখন ইরাক-সিরিয়া জুড়ে ইসলামী দৌলার ঘোষণা দেয়। কিন্তু এটা সঠিক নয়। মূলতঃ বিরোধ ও দ্বন্দ্ব চরম পর্যায়ে পৌঁছানোর ফল স্বরূপ এই ঘোষণা তারা দিয়েছে। আমাদের পক্ষ থেকে মত বিরোধ প্রচার করা হয়নি। যাতে আভ্যন্তরিন বিষয় আমাদের মধ্যেই গোপন থাকে, বাহিরের কেহ না জানে ও জিহাদের আমলে কোন ক্ষতি হয়ে না যায়।
ইহা সত্ত্বেও ‘জামাত আদ দাওলাহ’ প্রথম দিন থেকেই মতবিরোধগুলো প্রচার করে আসছে। তারা উন্মুক্ত সাক্ষাৎকারেও এ সকল মতবিরোধগুলো আলোচনা করতে দ্বিধাবোধ করছেনা। এমনকি কাফেরদের একান্ত মিডিয়াগুলোতেও। তারা তাদের উদ্দেশ্য বাস্তবায়নে করতে মিথ্যা ও চরম প্রতারণার আশ্রয় নিত। যা অতি শিঘ্রই আলোচনা করব ইনশাআল্লাহ । এই সকল অপকৌশলগুলোই বড় ব্যথার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। যা উম্মাহ জিহাদী বিশ্বে প্রত্যেক্ষ করছে খিলাফতের পতন লগ্ন থেকেই। পরবর্তীতে এই দ্বন্দ্বগুলো মারাত্মক সমস্যাবলীকে ঘিরে ঘূর্নীপাক খাচ্ছে। যেমন ইরাকে ভূলের পুনরাবৃত্তি ঘটেছে।
এখানে একটি কথা উল্লেখ করতে চাই এসকল দ্বন্দ্ব প্রকাশিত হওয়ার পূর্বে শাইখ আবু বকর বাগদাদী শাইখ আবু মুহাম্মদ জাওলানী (হাঃ)কে একথা বলেছিলেন যে, ইরাকের প্রকৃত পরিস্থিতি সিরিয়ায় প্রচার হওয়া আত্মহত্যার শামিল।
এখন ইরাক ও সিরিয়া জুড়ে ‘ইসলামী রাষ্ট্র’ ঘোষণা আমাদের ও তাদের মধ্যেকার বিরোধের সর্বশেষ ফলাফল মাত্র।
আমরা সর্বোত্তম উপায়ে পরিষ্কার ভাবে সংঘর্ষ এড়িয়ে ‘আল কায়েদার সর্বোচ্চ নেতৃত্ব’ কে মেনে চলার চেষ্টা করে যাচ্ছি। যেমনটি পূর্বেও উল্লেখ করেছি। বিষয়টি আমাদের ও তাদের আমির শাইখ ডাঃ আইমান আজ জাওয়াহিরী (হাঃ) এর নিকট বিস্তারিত ভাবে পেশ করা হয় । বিশেষ করে বিগত কয়েক মাসের বিরোধ নিয়ে। সমাধান সেটাই হলো যেটা আজ সকলের জানা।
আল বাসীরাহ ফাউন্ডেশনঃ- ‘দাউলাহ’ প্রতিষ্ঠার বিপরীতে আপনাদের শরয়ী আপত্তিগুলো কি কি?
শাইখ আবু সোলাইমান আল মুহাজিরঃ- এ প্রশ্নটি পুনরায় ভিন্নরূপে করা প্রয়োজন। আমরা ইসলামী রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার বিরোধী নই। মা-আযাল্লাহ (আল্লাহর আশ্রয় প্রার্থনা করছি) “তানযিম কায়েদাতুল জিহাদ” বিরতিহীনভাবে লড়াই করে যাচ্ছে ইসলামী রাষ্ট্র ফিরিয়ে আনতে। যা ইসলামী খিলাফতের বীজ রূপে প্রকাশ পাবে আল্লাহর হুকুমে। এমন দাবী করা মোটেও সঠিক নয় যে, খেলাফত প্রতিষ্ঠার মহান আমলটি ক্ষুদ্র কোন দলের বা ‘জামাত আদ-দাওলার’ মাধ্যে সীমাবদ্ধ। সংক্ষেপে এটাকে আমি মনে করি খিলাফত শব্দের দ্বারা তামাশা করার নামান্তর। যে কারণে অনেক মুখলিছ ভাইদেরকে ‘জামাত আদ-দাওলা’ তাদের পক্ষে ভীড়াতে সক্ষম হয়েছে। তাই তাদের দলের অনেকেই এটা বিশ্বাস করে যে, যিনি এই কার্যক্রম ও ‘জামাত আদ-দাওলার’ সাথে নেই, তিনি ইসলামেরও বিরুদ্ধে। আমরা মুসলিম হিসেবে জিহাদ করে যাচ্ছি যেন শরীয়াত কর্তৃক আমরা শাসিত হই। তাই বলে এটা জরুরী নয় যে, আমরাই শরীয়ত দ্বারা শাসন করব। আমরা উম্মাহর জিহাদে শরীক হয়েছি, এই উম্মাহকে শিক্ষা দিচ্ছি ও এই উম্মতের খেদমত করে যাচ্ছি।
আর এটা সকল মুসলিমের উপর ওয়াজিব। উহা সত্ত্বেও (দাউলাহ) ঘোষণার ব্যাপারে আমাদের আপত্তি হল যেটির অস্তিত্ব মুলত নেই কেন উহার ঘোষণা ?! সিরিয়াতেও ইসলামী রাষ্ট্রের অস্তিত্ব নেই, তাহলে প্রথম দিকে এই ঘোষণা কেন দিতে হবে? এই প্রশ্নটি তাদের অনেক নেতৃবৃন্দের এমনকি শাইখ আবু বকর বাগদাদীর নিকটও করা হয়েছিল। প্রশ্নটি এমন ছিল, আপনারা নিজেদেরকে ইসলামী রাষ্ট্র বলে মনে করেন, নাকি ‘জামাত আদ-দাওলা’ ? তখন উত্তরটি এমন ছিল যে, আমরা একটি জামাত যার নাম হচ্ছে “ইসলামী রাষ্ট্র ইরাক ও শাম” (ISIS)।
বাস্তবে এটা স্পষ্ট যে, এই রাষ্ট্রের ঘোষণা দেওয়া হয়েছে ছোট একটি দলের পক্ষ থেকে। অন্যান্য মুসলিমদের সাথে কিংবা একই লক্ষ্য উদ্দেশ্যে জিহাদরত জামাতের সাথে পরামর্শ করা ব্যতিত। আশা করি এই বিষয়টির আর ব্যাখ্যা করা প্রয়োজন নেই যে, কেন এই পদ্ধতিতে রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করা সম্ভবপর নয়।
বাকি অংশ নিচে..........
কথিত “আদ-দাউলাতুল ইসলামিয়া (Islamic state)” বিষয়ে “জাবাহাতুন নুসরাহ” এর শরীয়াহ কমিটির সম্মানিত সদস্য ‘শাইখ আবু সুলাইমান আল মুহাজির’ এর ভিডিও সাক্ষাৎকারের পূর্ণ বিবরণ।
প্রথম পর্ব:
“আল বাসীরাহ” ফাউন্ডেশনঃ- আমরা আজ শাইখ আবু সুলাইমান আল মুহাজির এর সাথে সাক্ষাতে ধন্য হলাম। শাইখের নিকট শামের মুজাহিদগণের পরিস্থিতি নিয়ে কিছু প্রশ্ন করতে চাই।
প্রশ্নঃ শাইখ আবু মুহাম্মদ জাউলানী (হাঃ) কর্তৃক জামাতুদ্দৌলাকে যে অনুরোধে সাড়া দেওয়ার ৫ দিনের মেয়াদ ঘোষণা করেছিলেন উহা কি?
শাইখ আবু সোলাইমান আল মুহাজিরঃ- সমস্ত প্রশংসা বিশ্ব জাহানের প্রতিপালক আল্লাহ তা’য়ালার জন্য। দরুদ ও সালাম নাযিল হোক সকল নাবী রসূলের সরদার আমাদের নাবী হযরত মুহাম্মদ (সঃ) এর উপর, তার পরিবার ও সাহাবাগণের উপর।
সর্বপ্রথম আমি বলব এটা শুধু জাবহাতুন নুসরারই অনুরোধ নয় বরং আমরা মনে করি ইহা শামের অধিকাংশ মুসলমান, শামের আলেমগন ও বিশ্বের বহু বড় বড় উলামাগণেরও আহবান ছিল সেটা ।
যেই মেয়াদ ঘোষণা করেছিলেন শাইখ আবু মুহাম্মদ জুলানী (হাফি শাইখ আবু খালেদ আস-সূরী (রাহিঃ)এর মৃত্যুতে শোক পালন কালে। (আল্লাহ তা’য়ালা তাঁর উপর রহম করেন ও শহীদ হিসাবে কবুল করে নিন।)
স্পষ্টভাবে বলা হয়েছে যে, আমরা ‘জাবহাতুন নুসরা’ উলামায়ে রাসিখিন (বিজ্ঞ হাক্কানী আলেম) যারা ইসলামী জ্ঞানে জ্ঞানবান। যাদের শরীয়তের আহকাম বুঝার সঠিক যোগ্যতা রয়েছে ও সকলের কাছে গ্রহনযোগ্য। যেমন- শাইখ আবু কাতাদা ফিলিস্তিনী (হাঃ), শাইখ আবু মুহাম্মদ আল মাকদিসী (হাঃ), শাইখ সুলায়মান আল উলওয়ান (হাঃ) (আল্লাহ তা’য়ালা তাদের সকলকে মুক্ত করে দিন) যখন উনাদের মধ্যে থেকে দুজন আমাদেরকে নসিহাহ করলেন- যাদের কথা শাইখ আবু মুহাম্মদ আল জাওলানী (হাঃ) উল্লেখ করেছিলেন কুরআন ও সুন্নাহর দলিলের মাধ্যমে। শাইখগণ ইহা ‘হিকমাহ’ মনে করেছেন যে, আমরা ‘জামাত আদ-দাউলার’ সাথে যেন পুনরায় যুদ্ধ ও সংঘর্ষে লিপ্ত না হই। তখন আমরা উনাদের নসিহাহ কবুল করে নিয়েছিলাম এবং এই সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম যে, আমরা খুব প্রয়োজন না হলে তাদের প্রতিউত্তর দিব না। ইহা ঐ সকল অঞ্চলে যেখানে বিরোধ ও দ্বন্দ্ব স্পষ্ট। যেমন পূর্বাঞ্চল ও হালবের কিছু এলাকায়। যতক্ষন না ‘জামাত আদ-দাউলার’ প্রকৃত অর্থে হকের দিকে ফিরে আসে এবং পরিপূর্ণ শরয়ী আদালতকে মেনে নেয়, যেখানে একই সময়ে তারা বিচারপ্রার্থী ও বিচারক হয়ে বসবে না।
“আল বাসীরাহ” ফাউন্ডেশনঃ- আল কায়েদার সাথে ‘জামাত আদ-দাউলার’ বর্তমানে কি কোন মিল রয়েছে?
শাইখ আবু সোলাইমান আল মুহাজিরঃ - আমি নিশ্চয়তার সাথে এ কথা বলতে পারি যে, ‘আল কায়েদার’ সাথে বর্তমানে ‘জামাত আদ-দাউলার’ (isis) চিন্তা চেতনায় কিংবা বাস্তবতায় কোন মিল নেই।
যে ব্যক্তি আল কয়েদার ইলমী ও আমলী বিষয়াবলী সম্পর্কে অবগত রয়েছেন, তিনি স্পষ্ট ভাবেই আল কায়েদা ও ‘জামাত আদ-দাউলার’ মধ্যকার বড় ধরনের পার্থক্য দেখতে পাবেন। বড় পার্থক্য পরিলক্ষিত হয়, যেমন- শাইখ উসামা বিন লাদেন (রহিঃ), শাইখ আইমান আল জাওয়াহিরী (হাঃ), শাইখ আবু ইয়াহইয়া লিব্বী (রহিঃ), শাইখ আতিয়াতুল্লাহ লিব্বি, শাইখ আবু মুসআব যারকাওবী (রহিঃ) সহ অন্যন্যাদের দৃষ্টিভঙ্গি বা চিন্তাধারা আর ‘জামাত আদ-দাউলার’ চিন্তাধারার মধ্যে মৌলিক পার্থক্য পরিলক্ষিত হচ্ছে। উল্লেখিত শাইখগন মানুষের সাথে আচার ব্যবহার ও কিভাবে উনারা এই উম্মাতের মধ্যে নিজেদের অবস্থানকে দেখতেন, অর্থাৎ এই উম্মাহর মধ্যে নিজেদের গ্রহণযোগ্যতা ও তাদের জিহাদের প্রাধান্য বিষয়ক চিন্তাচেতনা। এই ধরনের পার্থক্যগুলোর কারনে বাস্তব ময়দানে দুই পক্ষের চিন্তাধারাকে সমন্বয় করা দুষ্কর হয়ে পড়েছে। ‘জামাত আদ-দাউলার’ সম্পর্কে সংক্ষেপে বলা যায় যে, বাস্তবিক ক্ষেত্রে ‘জামাত আদ-দাউলার’ ‘আল কায়েদার’ অংশ হওয়ার যতগুলো গ্রহণযোগ্য ভিত্তি বা সীমা রয়েছে তার সবগুলো লংঘন করেছে ও সীমা অতিক্রম করেছে। আল কায়েদার সর্বোচ্চ নেতৃত্বের আদেশগুলো না জানার ভান ধরেছে। একথাও আমি বিশ্বাস রাখি যে, আল কায়েদার সার্বিক নেতৃত্ব হতে দেওয়া নির্দেশনা তাদের জন্য যথেষ্ট। ‘জামাত আদ-দাউলার’ ইসলামের নামে বিভিন্ন অপরাধে লিপ্ত হওয়ায় আল কায়েদার সাথে ‘জামাত আদ-দাউলার’ ভিন্ন অবস্থানকে স্পষ্টভাবে ব্যক্ত করা হল।
মুয়াছ্্ছাছা আল বাসিরাঃ- আল কায়েদার সাথে জামাতুদ্দৌলার কোন ধরনের সম্পর্ক বজায় ছিল?
শাইখ আবু সোলাইমান আল্্ মুহাজিরঃ উভয়ের মধ্যেকার যে সম্পর্ক ছিল তা কেহ অস্বীকার করবে না। তবে এ সম্পর্কটি ছিল দলের সাথে আমিরের যেমন সম্পর্ক থাকে তদ্রুপ।
আল কায়েদা কৌশলগত ছক একে ঐ অনুযায়ী পরিকল্পনা গ্রহণ করে। বিভিন্ন অঞ্চলকে পৃথক নামে নামকরণ করে, যা ইকলিম বা প্রদেশ নামে অভিহিত। যেমন আল জাযিরাতুল আরাবিয়া অঞ্চলের আল কায়েদা প্রতিনিধি ও জিম্মাদার হচ্ছেন শাইখ আবু বাসির আল ওয়াহিশি, আল মাগরিব আল ইসলামী অঞ্চলের আল কায়েদার প্রতিনিধি ও জিম্মাদার হচ্ছেন শাইখ আবু মুসআব আব্দুল ওয়াদুদ। এভাবে প্রতিটি অঞ্চলেই জিম্মাদার রয়েছেন। ইরাক অঞ্চলের দায়িত্ব প্রাপ্ত হন- শাইখ আবু বকর আল বাগদাদী। শায়খ ডাঃ আইমান আজ জাওয়াহিরি (হাঃ) এ সকল অঞ্চলের আমির। যখন ইরাকে ‘ইসলামী দাউলা’ প্রতিষ্ঠিত হয়, তখন এই দাউলা ও আল কায়েদার সাথে যে বায়আতের সম্পর্ক ছিল তা পরিপূর্ণ মেনে চলা কর্তব্য। আমি এখন ইরাকের দৌলা ঘোষণা সময়কালের রাজনৈতিক পরিস্থিতির বিস্তারিত আলোচনা করতে চাই না। আর এটা আলোচনার এখন বিষয়ও নয়। জেনে রাখা দরকার যে, প্রতিটি অঞ্চলের একজন জিম্মাদার রয়েছেন। তিনি আল কায়েদার কৌশলগত বিষয় ও যে স্থানে কার্যক্রম চালাবেন তা সমন্বয় করার দায়িত্বশীল হবেন। আর অবশ্যই উহা কাফেরদের কোনো মতবাদ বা ঐক্যমতের ভিত্তিতে পরিচালিত হতে পারবে না। যেমন “সাইক্স পিকট” এর সাথে মিল রাখা। বরং উহা সম্পূর্ণ ইসলামী মূলনীতির উপর ভিত্তি করে কৌশলগত সিদ্ধান্ত গ্রহণ করবে।
সাথে সাথে ইসলামী দিক নির্দেশনা অনুসরণ করে, ‘লাভ-ক্ষতির’ ভিত্তিতে সামনের দিকে এগিয়ে যাবে। ইহাই হচ্ছে আল কায়েদার প্রতিষ্ঠা লগ্ন থেকে রাজনৈতিক দূরদর্শিতা। কিন্তু এখানে একটি বিষয় লক্ষ্যনীয় যে, কেন বিভিন্ন অঞ্চলের দায়িত্বশীলগণকে শায়খ বাগদাদীর নিকট বায়আত নিতে দেখছি না? এর উত্তরে আমি বলব- প্রতিটি অঞ্চলের যিনি আমীর হিসেবে দায়িত্বরত আছেন তারা সকলে শাইখ আইমান যাওয়াহিরী (হাঃ) এর নিকট সরাসরী বাইআত নিয়েছেন। তাই বাগদাদীর নিকট বায়আত নেওয়ার প্রশ্নই উঠে না।
আল বাসীরাহ ফাউন্ডেশনঃ- কোন দ্বন্দ্বটি মূলত এমন পরিস্থিতির জন্য দায়ী বলে মনে করেন?
শাইখ আবু সোলাইমান আল মুহাজিরঃ অধিকাংশ লোক এটা বিশ্বাস করে যে, জামাতুদ্দৌলা ও জাবহাতুন নুসরার মধ্যে তখনই সমস্যা সৃষ্টি হয়েছে যখন ইরাক-সিরিয়া জুড়ে ইসলামী দৌলার ঘোষণা দেয়। কিন্তু এটা সঠিক নয়। মূলতঃ বিরোধ ও দ্বন্দ্ব চরম পর্যায়ে পৌঁছানোর ফল স্বরূপ এই ঘোষণা তারা দিয়েছে। আমাদের পক্ষ থেকে মত বিরোধ প্রচার করা হয়নি। যাতে আভ্যন্তরিন বিষয় আমাদের মধ্যেই গোপন থাকে, বাহিরের কেহ না জানে ও জিহাদের আমলে কোন ক্ষতি হয়ে না যায়।
ইহা সত্ত্বেও ‘জামাত আদ দাওলাহ’ প্রথম দিন থেকেই মতবিরোধগুলো প্রচার করে আসছে। তারা উন্মুক্ত সাক্ষাৎকারেও এ সকল মতবিরোধগুলো আলোচনা করতে দ্বিধাবোধ করছেনা। এমনকি কাফেরদের একান্ত মিডিয়াগুলোতেও। তারা তাদের উদ্দেশ্য বাস্তবায়নে করতে মিথ্যা ও চরম প্রতারণার আশ্রয় নিত। যা অতি শিঘ্রই আলোচনা করব ইনশাআল্লাহ । এই সকল অপকৌশলগুলোই বড় ব্যথার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। যা উম্মাহ জিহাদী বিশ্বে প্রত্যেক্ষ করছে খিলাফতের পতন লগ্ন থেকেই। পরবর্তীতে এই দ্বন্দ্বগুলো মারাত্মক সমস্যাবলীকে ঘিরে ঘূর্নীপাক খাচ্ছে। যেমন ইরাকে ভূলের পুনরাবৃত্তি ঘটেছে।
এখানে একটি কথা উল্লেখ করতে চাই এসকল দ্বন্দ্ব প্রকাশিত হওয়ার পূর্বে শাইখ আবু বকর বাগদাদী শাইখ আবু মুহাম্মদ জাওলানী (হাঃ)কে একথা বলেছিলেন যে, ইরাকের প্রকৃত পরিস্থিতি সিরিয়ায় প্রচার হওয়া আত্মহত্যার শামিল।
এখন ইরাক ও সিরিয়া জুড়ে ‘ইসলামী রাষ্ট্র’ ঘোষণা আমাদের ও তাদের মধ্যেকার বিরোধের সর্বশেষ ফলাফল মাত্র।
আমরা সর্বোত্তম উপায়ে পরিষ্কার ভাবে সংঘর্ষ এড়িয়ে ‘আল কায়েদার সর্বোচ্চ নেতৃত্ব’ কে মেনে চলার চেষ্টা করে যাচ্ছি। যেমনটি পূর্বেও উল্লেখ করেছি। বিষয়টি আমাদের ও তাদের আমির শাইখ ডাঃ আইমান আজ জাওয়াহিরী (হাঃ) এর নিকট বিস্তারিত ভাবে পেশ করা হয় । বিশেষ করে বিগত কয়েক মাসের বিরোধ নিয়ে। সমাধান সেটাই হলো যেটা আজ সকলের জানা।
আল বাসীরাহ ফাউন্ডেশনঃ- ‘দাউলাহ’ প্রতিষ্ঠার বিপরীতে আপনাদের শরয়ী আপত্তিগুলো কি কি?
শাইখ আবু সোলাইমান আল মুহাজিরঃ- এ প্রশ্নটি পুনরায় ভিন্নরূপে করা প্রয়োজন। আমরা ইসলামী রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার বিরোধী নই। মা-আযাল্লাহ (আল্লাহর আশ্রয় প্রার্থনা করছি) “তানযিম কায়েদাতুল জিহাদ” বিরতিহীনভাবে লড়াই করে যাচ্ছে ইসলামী রাষ্ট্র ফিরিয়ে আনতে। যা ইসলামী খিলাফতের বীজ রূপে প্রকাশ পাবে আল্লাহর হুকুমে। এমন দাবী করা মোটেও সঠিক নয় যে, খেলাফত প্রতিষ্ঠার মহান আমলটি ক্ষুদ্র কোন দলের বা ‘জামাত আদ-দাওলার’ মাধ্যে সীমাবদ্ধ। সংক্ষেপে এটাকে আমি মনে করি খিলাফত শব্দের দ্বারা তামাশা করার নামান্তর। যে কারণে অনেক মুখলিছ ভাইদেরকে ‘জামাত আদ-দাওলা’ তাদের পক্ষে ভীড়াতে সক্ষম হয়েছে। তাই তাদের দলের অনেকেই এটা বিশ্বাস করে যে, যিনি এই কার্যক্রম ও ‘জামাত আদ-দাওলার’ সাথে নেই, তিনি ইসলামেরও বিরুদ্ধে। আমরা মুসলিম হিসেবে জিহাদ করে যাচ্ছি যেন শরীয়াত কর্তৃক আমরা শাসিত হই। তাই বলে এটা জরুরী নয় যে, আমরাই শরীয়ত দ্বারা শাসন করব। আমরা উম্মাহর জিহাদে শরীক হয়েছি, এই উম্মাহকে শিক্ষা দিচ্ছি ও এই উম্মতের খেদমত করে যাচ্ছি।
আর এটা সকল মুসলিমের উপর ওয়াজিব। উহা সত্ত্বেও (দাউলাহ) ঘোষণার ব্যাপারে আমাদের আপত্তি হল যেটির অস্তিত্ব মুলত নেই কেন উহার ঘোষণা ?! সিরিয়াতেও ইসলামী রাষ্ট্রের অস্তিত্ব নেই, তাহলে প্রথম দিকে এই ঘোষণা কেন দিতে হবে? এই প্রশ্নটি তাদের অনেক নেতৃবৃন্দের এমনকি শাইখ আবু বকর বাগদাদীর নিকটও করা হয়েছিল। প্রশ্নটি এমন ছিল, আপনারা নিজেদেরকে ইসলামী রাষ্ট্র বলে মনে করেন, নাকি ‘জামাত আদ-দাওলা’ ? তখন উত্তরটি এমন ছিল যে, আমরা একটি জামাত যার নাম হচ্ছে “ইসলামী রাষ্ট্র ইরাক ও শাম” (ISIS)।
বাস্তবে এটা স্পষ্ট যে, এই রাষ্ট্রের ঘোষণা দেওয়া হয়েছে ছোট একটি দলের পক্ষ থেকে। অন্যান্য মুসলিমদের সাথে কিংবা একই লক্ষ্য উদ্দেশ্যে জিহাদরত জামাতের সাথে পরামর্শ করা ব্যতিত। আশা করি এই বিষয়টির আর ব্যাখ্যা করা প্রয়োজন নেই যে, কেন এই পদ্ধতিতে রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করা সম্ভবপর নয়।
বাকি অংশ নিচে..........
Comment