অনলাইন এর একজন ভাই এর লিখা থেকে সংগৃহীত, আল্লাহ ভাইকে উত্তম প্রতিদান দিন,
"মুহাজির+আনসার=খিলাফাত" তত্ত্বের বিশ্লেষণ !
বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম
বিষয়ঃ হিযবুত তাহরির যারা শরীয়া’হ ও রাজনৈতিক বিষয়াদি সম্পর্কে সজাগ, তা সত্ত্বেও তারা কেন নুসরাহ অন্বেষনের জন্য জোর তাগিদ দেয়? কেনই বা অম্য কোন পন্থায় খিলাফাত প্রতিষ্ঠার জন্য কাজ করে না যথেষ্ট সুযোগ থাকা সত্ত্বেও?
উত্তরঃ তাদের মানহাজের গুরুত্বপূর্ণ কিছু ভুল যা তারা এড়িয়ে যায় তা নিম্নে পয়েন্ট আকারে দেয়া হলঃ
~হিযব দাবি করে থাকে যারা নুসরাহ দিয়ে ক্ষমতা হস্তান্তর করবে হিযবের কাছে তাদের আনসার বলা হয় এখন~
**কুরআন এবং তাফসীর কি বলে আনসার এবং মুহাজির বলতে**
এতে কোন সন্দেহ নেই যে, যারা ঈমান এনেছে, দেশ ত্যাগ করেছে, স্বীয় জান ও মাল দ্বারা আল্লাহর রাহে জেহাদ করেছে এবং যারা তাদেরকে আশ্রয় ও সাহায্য সহায়তা দিয়েছে, তারা একে অপরের সহায়ক। আর যারা ঈমান এনেছে কিন্তু দেশ ত্যাগ করেনি তাদের বন্ধুত্বে তোমাদের প্রয়োজন নেই যতক্ষণ না তারা দেশত্যাগ করে। অবশ্য যদি তারা ধর্মীয় ব্যাপারে তোমাদের সহায়তা কামনা করে, তবে তাদের সাহায্য করা তোমাদের কর্তব্য। কিন্তু তোমাদের সাথে যাদের সহযোগী চুক্তি বিদ্যমান রয়েছে, তাদের মোকাবেলায় নয়। বস্তুতঃ তোমরা যা কিছু কর, আল্লাহ সেসবই দেখেন।- আনফালঃ৭২এই ধন-সম্পদ দেশত্যাগী নিঃস্বদের জন্যে, যারা আল্লাহর অনুগ্রহ ও সন্তুষ্টিলাভের অন্বেষণে এবং আল্লাহ তাঁর রসূলের সাহায্যার্থে নিজেদের বাস্তুভিটা ও ধন-সম্পদ থেকে বহিস্কৃত হয়েছে। তারাই সত্যবাদী।~যারা মুহাজিরদের আগমনের পূর্বে মদীনায় বসবাস করেছিল এবং বিশ্বাস স্থাপন করেছিল, তারা মুহাজিরদের ভালবাসে, মুহাজিরদেরকে যা দেয়া হয়েছে, তজ্জন্যে তারা অন্তরে ঈর্ষাপোষণ করে না এবং নিজেরা অভাবগ্রস্ত হলেও তাদেরকে অগ্রাধিকার দান করে। যারা মনের কার্পণ্য থেকে মুক্ত, তারাই সফলকাম। সুরা হাশরঃ ৮-৯
তাফসীরে ইবন কাসির থেকে পাওয়া, সুরা আনফালের৭২ নাম্বার আয়াতের তাফসীরে(পৃষ্ঠা-৬২৬),
মুহাজিরের বলতে তাদের বুঝানো হয়েছে যারা,
১.যারা আল্লাহর নামে স্বদেশ ত্যাগ করেছেন।
২. তারা আল্লহর দ্বীনের উপর প্রতিষ্ঠিত থাকার জন্য সবকিছু ত্যাগ করেছেন
৩. তারা জীবনকে জীবন এবং মালকে মাল মনে করেননি আল্লহর সন্তুষ্টির জন্য
৪.মক্কার কাফের মুশরিকদের মাত্রাতিরিক্ত বেড়েযাওয়া অত্যাচার নির্যাতনের হাত থেকে নিজেদের রক্ষায় জন্য হিজরত করেছেন(আল বিদায়া ওয়ান নিহায়া)
অন্যদিকে, কুরআনে আল্লাহ তায়ালা মদিনাবাসিদের বিশেশভাবে আনসার উপাধি দিয়ে সম্মানিত করেছেন, কারনগুলো হল,
১.মুহাজিরদেরকে নিজেদের কাছে আশ্রয় দিয়েছেন
২.নিজেদের সম্পদের ভাগ দিয়েছেন
৩.তাদের সাথে মিলিত হয়ে যুদ্ধ করেছেন
৪.আনসারগন মুহাজিরগনকে এত আপন করেছিলেন যে আত্মীয়ের সম্পর্ককেও হার মানিয়েছিল।
~সুরা হাশরের ৮-৯ নাম্বার আয়াতের তাফসীরেওএরকমই বলা আছে~
১. আল কুরআন এবং সবচেয়ে নির্ভরযোগ্য, পূর্ণাঙ্গ আল কুরআনের ব্যাখ্যা-গ্রন্থ তাফসীরে ইবন কাসিরের কোথাও আনসার এবং মুহাজিরের বিষয়টিকে ইসলামিক ইমারাহ, ক্ষমতা অথবা খিলাফাতের সাথে কোনভাবেই সম্পৃক্ত করা হয় নি। কুরআনে আল্লাহ তায়ালা কি কোথাও রাসুল(সা)কে খিলাফাত প্রতিষ্ঠায় সাহায্য করার জন্য মদিনার প্রভাবশালীদের আনসার বলেছেন? এবং মক্কার মুহাজিররা কি খিলফাত প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে মদিনায় গিয়েছিলেন?
২.এখান থেকে প্রশ্ন আসে যে, আল-তাবারি এবং ইবন কাসিরের মত ব্যক্তিগন কি একদমই বুঝতে পারেন নি যে, কুরআনে আনসার বলা হয়েছ খিলাফাত প্রতিষ্ঠায় সাহায্য করার জন্য? এবং মুহাজির বলা হয়েছে খিলাফাত প্রতিষ্ঠার সাহায্য অন্বেষণ করার এবং পাওয়ার জন্য? (NB: তাফসীরে আল-তাবারি থেকেই তাফসীরে ইবন কাসির সঙ্কলিত হয়েছে)
৩. হিযব বিভিন্ন দেশের “প্রভাবশালীদের”সম্ভাব্য আনসার বলে থাকে। অর্থাৎ তাদের দাবি অনুযায়ী প্রভাবশালিরাই আনসার হবেন।কিন্তু এখানে একটি সমস্যা হল, মদিনার প্রভাবহীন দুর্বল মুসলিমদেরও আনসার বলা হয়েছে যারা মুহাজির সাহাবীদের নিজের ঘরে নুসরাহ দিয়েছিলেন। শুধু মদিনার ক্ষমতাশালীদের আলাদাভাবে আনসার কোথাও বলা হয় নি। অর্থাৎ আনসার বলতে শুধু ক্ষমতাশালী বা প্রভাবশালীদের বুঝানো হয় নি। যেটা দ্বারা পরিস্কার হয়, নুসরাহ বিষয়টা খিলাফাত প্রতিষ্ঠার সাথে সম্পর্কিত নয় বরং সাহাবীদের আশ্রয় দানের সাথে সম্পর্কিত।
৪. রাসুল(সা) বিভিন্ন গোত্রের কাছে যাওয়ার কারন/উদ্দেশ্য হিসাবে সিরাতে আছে যে,
‘’ইবন ইসহাক বলেন, আবু তালিবের মৃত্যুর পর কুরায়েশরা রাসুল(সা)এর উপর এমন অত্যাচার শুরু করে যা আবু তালিবের জীবদ্দশায় কখনই করতে পারত না। তখন রাসুল(সা) তায়েফের উদ্দেশ্যে রওনা হলেন‘’
অর্থাৎ মক্কায় মুসলিমরা এবং রাসুল(সা) অনেক বেশি অত্যাচার নির্যাতনের সম্মুখীন হওয়ায় আল্লাহ নির্দেশ দিলেন বিভিন্ন গোত্রের কাছে যেন নিজেকে উপস্থাপন করেন । খিলাফাত প্রতিষ্ঠার উদ্দেশ্যে যেতে বলেছেন এরকম দলিল কুরআন সুন্নাহের কোথাও পাওয়া যায় না, কেউ দেখাতেও পারবে না ইন শা আল্লাহ।বরং এটি হিযবের ধারনা মাত্র যে, খিলাফত প্রতিষ্ঠার নির্দেশ পেয়ে বিভিন্ন গোত্রেরকাছে গেছেন, অন্যভাবে আল্লহ তায়ালা বিভিন্ন গোত্রের কাছে যেতে বলেছেন শুধু খিলাফাত প্রতিষ্ঠার জন্য । এই বিষয়টি কি রকম ধারনা? উদাহরন দিলেই পরিস্কার হয়ে যাবে,
~রাসুল(সা) হেরা গুহায় হেদায়েত পাওয়ার আগে ধ্যান করতেন, এক সময় জিবরাঈল(আ) উনার কাছে হেরা গুহায় ধ্যান করা অবস্থায় আসেন । এখন কি আপনি বলবেন, হেরা গুহায় ধ্যান করার উদ্দেশ্য ছিল জিবরাঈল(আ) এর সাথে দেখা করা? আপনি কি বলবেন, গুহায় ধ্যান না করলে অথবা ধ্যান করে জিবরাঈল(আ) এর দেখা না পায় তাহলে হেদায়েত পাওয়া যাবে না?
~রাসুল(সা) মেরাজে গিয়ে ৫ ওয়াক্ত ফরয সালাত উপহার পান আল্লাহর কাছ থেকে, এখন আপনি কি বলবেন মেরাজেযাওয়ার উদ্দেশ্য ছিল ফরয নামায? এখন কি দাবি করবেন, কেউ মেরাজে না গিয়ে থাকলে তার জন্য ৫ ওয়াক্ত নামায ফরয হবে না?
হিযবুত তাহরিরের বিভিন্ন গোত্রের কাছে যাওয়ার উদ্দেশ্য খিলাফাতের সাথে সম্পৃক্ত করাটাও এরকমই অবান্তর।
৫. বিভিন্ন গোত্রের কাছে যাওয়ার উদ্দেশ্য যদি হত খিলাফাত প্রতিষ্ঠা, তাহলে রাসুল(সা) বনু কা'ব গোত্রের ঈমানহীন, খিলাফাতবিহীন প্রস্তাব কেন গ্রহন করলেন? রাসুল(সা) কি জানতেন না যে বিভিন্ন গোত্রের কাছে যাওয়ার উদ্দেশ্যকি? আল্লাহ কি জন্য বিভিন্ন গোত্রের কাছে যেতে বলেছেন তা কি উনি স্মরন রাখতে পারেন নি? নাকি উনি ভুলে প্রস্তাব গ্রহন করেছেন? তাদের সাথে থাকার সময় উনি কেন আর কোন নুসরাহ অন্বেষণ করেন নি?
৬. মুহাজিরদের কারও কাছেই কোন ইসলামিক রাষ্ট্র পরিচালনার জ্ঞান ছিল না, এবং হিজরতের আগে কোন রাষ্ট্রনীতির কোন কিছুই ছিল না রাসুল(সা)এর কাছে। যে কারনে মদিনার প্রভাবশালীরা রাসুল(সা)এর উপর আস্থা রেখেছিলেন তার সবচেয়ে বড় কারন ছিল উনি আল্লাহর মনোনীত রাসুল। আর রাসুলের আনুগত্য করে কেউ কখনো ঠকে নি এই জ্ঞানটা তাদের মাঝে আগে থেকেই ছিল। তারা রাসুল(সা) এর সাথে বেশ আগে থেকেই যোগাযোগ করে আসছিলেন, তখন থেকেই এমন কিছু factors পেয়েছিলেন রাসুল(সা)এর মাঝে যা আল্লহ প্রদত্ত রাসুল(সা)এর উপর বিশেষ নুসরাহ(সাহায্য)। এই বিষয় নিয়ে পরে বিস্তারিত লিখব ইন শা আল্লাহ।
৭.রাসুল(সা) বিভিন্ন গোত্রের কাছে দাওয়াত প্রদান করার জন্য কোন দল তৈরি করেন নি এবং নিজে ভিন্ন অন্য কাউকে পাঠান নি অনেক সুযোগ থাকা সত্ত্বেও, অর্থাৎ নিজেই গিয়েছেন, এর জন্য দলগত কোন কাজ করেন নি। সকল মুসলিমদের এই কাজে অংশ গ্রহণও করতেও বলেন নি। দুইএকজন সাহাবী শুধু উনাকে সঙ্গ দিতেন বা পৌছিয়ে দিতেন মাত্র। পুরো ব্যাপারটি ছিল শুধু নিজেকে উপস্থাপন করা এবং একক প্রচেষ্টা। তো এখান থেকে বুঝা যাচ্ছে যিনি প্রধান হবে ইসলামি রাষ্ট্রের তাকে সরাসরি এসে নুসরাহ চাইতে হবে, অন্য কাউকে দিয়ে না বা সাধারন জনগনের সোচ্চার হওয়া দিয়ে না ।
৮. ইহুদীদের সাথে বসবাস করার কারনে আওস এবং খাওজরাজ গোত্র আগে থেকেই জানতেন একজন নবী আসবেন, যিনি হবেন শেষ নবী এবং সারা বিশ্ব জয় করবেন । তাই তারা রাসুল(সা)এর আগমনের আগে থেকেই সেই নবীর জন্য অপেক্ষারত ছিলেন। নবী(সা) সাথে প্রথম দেখা হয়েই তারা বুঝে ফেলে সব কিছু এবং উনাকে(সা)কে গ্রহন করার জন্য প্রতিযোগিতা আরম্ভ করেন । তাই প্রথম খিলাফাত প্রতিষ্ঠায় মদিনাবাসির সাহায্যের ব্যাপারটি ছিল ওই একবারের জন্যই এবং পূর্বনির্ধারিত। এখন তাই কেউ নুসরাহ চাইতে গেলে তাকেও বা তাদেরও সফলতার জন্য শর্ত হল তাদের আনসাররা আগে থেকেই সম্যক অবগত থাকবেন রকম আওস এবং খাজরাজ গোত্র জেনেছিল। কিন্তু এটা আর সম্ভব না। প্রথম খিলাফাত ছিল আল্লাহ্র বিশেষ অনুগ্রহ শুধুমাত্র তাঁর প্রিয় রাসুল(সা)এর প্রতি। অর্থাৎ নবী(সা) খিলাফাত পেয়েছিল কারন তাঁর(সা) সম্পর্কে ভবিষ্যদ্বাণীর তথ্য ছিল আওস এবং খাজরাজের কাছে । তাই কেউ রাসুল(সা) খিলাফাত পাওয়ার একটি গুরুত্বপূর্ণ শর্ত হল তাদের সম্পর্কে আগাম ভবিষ্যদ্বাণী থাকা। বুঝা গেল?
৯. রাসুল(সা) কি মক্কায় খিলাফাত প্রতিষ্ঠা করতে চান নি? যদি চেয়ে থাকেন তবে সেখানে খিলাফাত প্রতিষ্ঠার শর্ত "নুসরাহ" কেন অন্বেষণ করেন নি? হয় সেখানে "নুসরাহ" জাতীয় কোন শব্দ উনি ব্যবহার করেন নি বলে সেখানে খিলাফাত প্রতিষ্ঠা করতে চান নি, না হয় কালেমার ভিতরেই নবীর(সা) প্রধান হওয়ার সকল মর্ম নিহিত আছে। আশা করি আপনি বুদ্ধি খাটিয়ে ব্যাপারটা বুঝতে পারবেন । সীরাত থেকে যেহেতু পাওয়া যায় যে, নুসরাহ-বিহীনভাবে উনি(সা) মক্কায় খিলাফাত প্রতিষ্ঠা করতে চেয়েছিলেন, তারমানে "নুসরাহ" আসলে খিলাফাত প্রতিষ্ঠার জন্য কোন বিষয়ই না, শর্ত তো দুরের কথা।
"মুহাজির+আনসার=খিলাফাত" তত্ত্বের বিশ্লেষণ !
বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম
বিষয়ঃ হিযবুত তাহরির যারা শরীয়া’হ ও রাজনৈতিক বিষয়াদি সম্পর্কে সজাগ, তা সত্ত্বেও তারা কেন নুসরাহ অন্বেষনের জন্য জোর তাগিদ দেয়? কেনই বা অম্য কোন পন্থায় খিলাফাত প্রতিষ্ঠার জন্য কাজ করে না যথেষ্ট সুযোগ থাকা সত্ত্বেও?
উত্তরঃ তাদের মানহাজের গুরুত্বপূর্ণ কিছু ভুল যা তারা এড়িয়ে যায় তা নিম্নে পয়েন্ট আকারে দেয়া হলঃ
~হিযব দাবি করে থাকে যারা নুসরাহ দিয়ে ক্ষমতা হস্তান্তর করবে হিযবের কাছে তাদের আনসার বলা হয় এখন~
**কুরআন এবং তাফসীর কি বলে আনসার এবং মুহাজির বলতে**
এতে কোন সন্দেহ নেই যে, যারা ঈমান এনেছে, দেশ ত্যাগ করেছে, স্বীয় জান ও মাল দ্বারা আল্লাহর রাহে জেহাদ করেছে এবং যারা তাদেরকে আশ্রয় ও সাহায্য সহায়তা দিয়েছে, তারা একে অপরের সহায়ক। আর যারা ঈমান এনেছে কিন্তু দেশ ত্যাগ করেনি তাদের বন্ধুত্বে তোমাদের প্রয়োজন নেই যতক্ষণ না তারা দেশত্যাগ করে। অবশ্য যদি তারা ধর্মীয় ব্যাপারে তোমাদের সহায়তা কামনা করে, তবে তাদের সাহায্য করা তোমাদের কর্তব্য। কিন্তু তোমাদের সাথে যাদের সহযোগী চুক্তি বিদ্যমান রয়েছে, তাদের মোকাবেলায় নয়। বস্তুতঃ তোমরা যা কিছু কর, আল্লাহ সেসবই দেখেন।- আনফালঃ৭২এই ধন-সম্পদ দেশত্যাগী নিঃস্বদের জন্যে, যারা আল্লাহর অনুগ্রহ ও সন্তুষ্টিলাভের অন্বেষণে এবং আল্লাহ তাঁর রসূলের সাহায্যার্থে নিজেদের বাস্তুভিটা ও ধন-সম্পদ থেকে বহিস্কৃত হয়েছে। তারাই সত্যবাদী।~যারা মুহাজিরদের আগমনের পূর্বে মদীনায় বসবাস করেছিল এবং বিশ্বাস স্থাপন করেছিল, তারা মুহাজিরদের ভালবাসে, মুহাজিরদেরকে যা দেয়া হয়েছে, তজ্জন্যে তারা অন্তরে ঈর্ষাপোষণ করে না এবং নিজেরা অভাবগ্রস্ত হলেও তাদেরকে অগ্রাধিকার দান করে। যারা মনের কার্পণ্য থেকে মুক্ত, তারাই সফলকাম। সুরা হাশরঃ ৮-৯
তাফসীরে ইবন কাসির থেকে পাওয়া, সুরা আনফালের৭২ নাম্বার আয়াতের তাফসীরে(পৃষ্ঠা-৬২৬),
মুহাজিরের বলতে তাদের বুঝানো হয়েছে যারা,
১.যারা আল্লাহর নামে স্বদেশ ত্যাগ করেছেন।
২. তারা আল্লহর দ্বীনের উপর প্রতিষ্ঠিত থাকার জন্য সবকিছু ত্যাগ করেছেন
৩. তারা জীবনকে জীবন এবং মালকে মাল মনে করেননি আল্লহর সন্তুষ্টির জন্য
৪.মক্কার কাফের মুশরিকদের মাত্রাতিরিক্ত বেড়েযাওয়া অত্যাচার নির্যাতনের হাত থেকে নিজেদের রক্ষায় জন্য হিজরত করেছেন(আল বিদায়া ওয়ান নিহায়া)
অন্যদিকে, কুরআনে আল্লাহ তায়ালা মদিনাবাসিদের বিশেশভাবে আনসার উপাধি দিয়ে সম্মানিত করেছেন, কারনগুলো হল,
১.মুহাজিরদেরকে নিজেদের কাছে আশ্রয় দিয়েছেন
২.নিজেদের সম্পদের ভাগ দিয়েছেন
৩.তাদের সাথে মিলিত হয়ে যুদ্ধ করেছেন
৪.আনসারগন মুহাজিরগনকে এত আপন করেছিলেন যে আত্মীয়ের সম্পর্ককেও হার মানিয়েছিল।
~সুরা হাশরের ৮-৯ নাম্বার আয়াতের তাফসীরেওএরকমই বলা আছে~
১. আল কুরআন এবং সবচেয়ে নির্ভরযোগ্য, পূর্ণাঙ্গ আল কুরআনের ব্যাখ্যা-গ্রন্থ তাফসীরে ইবন কাসিরের কোথাও আনসার এবং মুহাজিরের বিষয়টিকে ইসলামিক ইমারাহ, ক্ষমতা অথবা খিলাফাতের সাথে কোনভাবেই সম্পৃক্ত করা হয় নি। কুরআনে আল্লাহ তায়ালা কি কোথাও রাসুল(সা)কে খিলাফাত প্রতিষ্ঠায় সাহায্য করার জন্য মদিনার প্রভাবশালীদের আনসার বলেছেন? এবং মক্কার মুহাজিররা কি খিলফাত প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে মদিনায় গিয়েছিলেন?
২.এখান থেকে প্রশ্ন আসে যে, আল-তাবারি এবং ইবন কাসিরের মত ব্যক্তিগন কি একদমই বুঝতে পারেন নি যে, কুরআনে আনসার বলা হয়েছ খিলাফাত প্রতিষ্ঠায় সাহায্য করার জন্য? এবং মুহাজির বলা হয়েছে খিলাফাত প্রতিষ্ঠার সাহায্য অন্বেষণ করার এবং পাওয়ার জন্য? (NB: তাফসীরে আল-তাবারি থেকেই তাফসীরে ইবন কাসির সঙ্কলিত হয়েছে)
৩. হিযব বিভিন্ন দেশের “প্রভাবশালীদের”সম্ভাব্য আনসার বলে থাকে। অর্থাৎ তাদের দাবি অনুযায়ী প্রভাবশালিরাই আনসার হবেন।কিন্তু এখানে একটি সমস্যা হল, মদিনার প্রভাবহীন দুর্বল মুসলিমদেরও আনসার বলা হয়েছে যারা মুহাজির সাহাবীদের নিজের ঘরে নুসরাহ দিয়েছিলেন। শুধু মদিনার ক্ষমতাশালীদের আলাদাভাবে আনসার কোথাও বলা হয় নি। অর্থাৎ আনসার বলতে শুধু ক্ষমতাশালী বা প্রভাবশালীদের বুঝানো হয় নি। যেটা দ্বারা পরিস্কার হয়, নুসরাহ বিষয়টা খিলাফাত প্রতিষ্ঠার সাথে সম্পর্কিত নয় বরং সাহাবীদের আশ্রয় দানের সাথে সম্পর্কিত।
৪. রাসুল(সা) বিভিন্ন গোত্রের কাছে যাওয়ার কারন/উদ্দেশ্য হিসাবে সিরাতে আছে যে,
‘’ইবন ইসহাক বলেন, আবু তালিবের মৃত্যুর পর কুরায়েশরা রাসুল(সা)এর উপর এমন অত্যাচার শুরু করে যা আবু তালিবের জীবদ্দশায় কখনই করতে পারত না। তখন রাসুল(সা) তায়েফের উদ্দেশ্যে রওনা হলেন‘’
অর্থাৎ মক্কায় মুসলিমরা এবং রাসুল(সা) অনেক বেশি অত্যাচার নির্যাতনের সম্মুখীন হওয়ায় আল্লাহ নির্দেশ দিলেন বিভিন্ন গোত্রের কাছে যেন নিজেকে উপস্থাপন করেন । খিলাফাত প্রতিষ্ঠার উদ্দেশ্যে যেতে বলেছেন এরকম দলিল কুরআন সুন্নাহের কোথাও পাওয়া যায় না, কেউ দেখাতেও পারবে না ইন শা আল্লাহ।বরং এটি হিযবের ধারনা মাত্র যে, খিলাফত প্রতিষ্ঠার নির্দেশ পেয়ে বিভিন্ন গোত্রেরকাছে গেছেন, অন্যভাবে আল্লহ তায়ালা বিভিন্ন গোত্রের কাছে যেতে বলেছেন শুধু খিলাফাত প্রতিষ্ঠার জন্য । এই বিষয়টি কি রকম ধারনা? উদাহরন দিলেই পরিস্কার হয়ে যাবে,
~রাসুল(সা) হেরা গুহায় হেদায়েত পাওয়ার আগে ধ্যান করতেন, এক সময় জিবরাঈল(আ) উনার কাছে হেরা গুহায় ধ্যান করা অবস্থায় আসেন । এখন কি আপনি বলবেন, হেরা গুহায় ধ্যান করার উদ্দেশ্য ছিল জিবরাঈল(আ) এর সাথে দেখা করা? আপনি কি বলবেন, গুহায় ধ্যান না করলে অথবা ধ্যান করে জিবরাঈল(আ) এর দেখা না পায় তাহলে হেদায়েত পাওয়া যাবে না?
~রাসুল(সা) মেরাজে গিয়ে ৫ ওয়াক্ত ফরয সালাত উপহার পান আল্লাহর কাছ থেকে, এখন আপনি কি বলবেন মেরাজেযাওয়ার উদ্দেশ্য ছিল ফরয নামায? এখন কি দাবি করবেন, কেউ মেরাজে না গিয়ে থাকলে তার জন্য ৫ ওয়াক্ত নামায ফরয হবে না?
হিযবুত তাহরিরের বিভিন্ন গোত্রের কাছে যাওয়ার উদ্দেশ্য খিলাফাতের সাথে সম্পৃক্ত করাটাও এরকমই অবান্তর।
৫. বিভিন্ন গোত্রের কাছে যাওয়ার উদ্দেশ্য যদি হত খিলাফাত প্রতিষ্ঠা, তাহলে রাসুল(সা) বনু কা'ব গোত্রের ঈমানহীন, খিলাফাতবিহীন প্রস্তাব কেন গ্রহন করলেন? রাসুল(সা) কি জানতেন না যে বিভিন্ন গোত্রের কাছে যাওয়ার উদ্দেশ্যকি? আল্লাহ কি জন্য বিভিন্ন গোত্রের কাছে যেতে বলেছেন তা কি উনি স্মরন রাখতে পারেন নি? নাকি উনি ভুলে প্রস্তাব গ্রহন করেছেন? তাদের সাথে থাকার সময় উনি কেন আর কোন নুসরাহ অন্বেষণ করেন নি?
৬. মুহাজিরদের কারও কাছেই কোন ইসলামিক রাষ্ট্র পরিচালনার জ্ঞান ছিল না, এবং হিজরতের আগে কোন রাষ্ট্রনীতির কোন কিছুই ছিল না রাসুল(সা)এর কাছে। যে কারনে মদিনার প্রভাবশালীরা রাসুল(সা)এর উপর আস্থা রেখেছিলেন তার সবচেয়ে বড় কারন ছিল উনি আল্লাহর মনোনীত রাসুল। আর রাসুলের আনুগত্য করে কেউ কখনো ঠকে নি এই জ্ঞানটা তাদের মাঝে আগে থেকেই ছিল। তারা রাসুল(সা) এর সাথে বেশ আগে থেকেই যোগাযোগ করে আসছিলেন, তখন থেকেই এমন কিছু factors পেয়েছিলেন রাসুল(সা)এর মাঝে যা আল্লহ প্রদত্ত রাসুল(সা)এর উপর বিশেষ নুসরাহ(সাহায্য)। এই বিষয় নিয়ে পরে বিস্তারিত লিখব ইন শা আল্লাহ।
৭.রাসুল(সা) বিভিন্ন গোত্রের কাছে দাওয়াত প্রদান করার জন্য কোন দল তৈরি করেন নি এবং নিজে ভিন্ন অন্য কাউকে পাঠান নি অনেক সুযোগ থাকা সত্ত্বেও, অর্থাৎ নিজেই গিয়েছেন, এর জন্য দলগত কোন কাজ করেন নি। সকল মুসলিমদের এই কাজে অংশ গ্রহণও করতেও বলেন নি। দুইএকজন সাহাবী শুধু উনাকে সঙ্গ দিতেন বা পৌছিয়ে দিতেন মাত্র। পুরো ব্যাপারটি ছিল শুধু নিজেকে উপস্থাপন করা এবং একক প্রচেষ্টা। তো এখান থেকে বুঝা যাচ্ছে যিনি প্রধান হবে ইসলামি রাষ্ট্রের তাকে সরাসরি এসে নুসরাহ চাইতে হবে, অন্য কাউকে দিয়ে না বা সাধারন জনগনের সোচ্চার হওয়া দিয়ে না ।
৮. ইহুদীদের সাথে বসবাস করার কারনে আওস এবং খাওজরাজ গোত্র আগে থেকেই জানতেন একজন নবী আসবেন, যিনি হবেন শেষ নবী এবং সারা বিশ্ব জয় করবেন । তাই তারা রাসুল(সা)এর আগমনের আগে থেকেই সেই নবীর জন্য অপেক্ষারত ছিলেন। নবী(সা) সাথে প্রথম দেখা হয়েই তারা বুঝে ফেলে সব কিছু এবং উনাকে(সা)কে গ্রহন করার জন্য প্রতিযোগিতা আরম্ভ করেন । তাই প্রথম খিলাফাত প্রতিষ্ঠায় মদিনাবাসির সাহায্যের ব্যাপারটি ছিল ওই একবারের জন্যই এবং পূর্বনির্ধারিত। এখন তাই কেউ নুসরাহ চাইতে গেলে তাকেও বা তাদেরও সফলতার জন্য শর্ত হল তাদের আনসাররা আগে থেকেই সম্যক অবগত থাকবেন রকম আওস এবং খাজরাজ গোত্র জেনেছিল। কিন্তু এটা আর সম্ভব না। প্রথম খিলাফাত ছিল আল্লাহ্র বিশেষ অনুগ্রহ শুধুমাত্র তাঁর প্রিয় রাসুল(সা)এর প্রতি। অর্থাৎ নবী(সা) খিলাফাত পেয়েছিল কারন তাঁর(সা) সম্পর্কে ভবিষ্যদ্বাণীর তথ্য ছিল আওস এবং খাজরাজের কাছে । তাই কেউ রাসুল(সা) খিলাফাত পাওয়ার একটি গুরুত্বপূর্ণ শর্ত হল তাদের সম্পর্কে আগাম ভবিষ্যদ্বাণী থাকা। বুঝা গেল?
৯. রাসুল(সা) কি মক্কায় খিলাফাত প্রতিষ্ঠা করতে চান নি? যদি চেয়ে থাকেন তবে সেখানে খিলাফাত প্রতিষ্ঠার শর্ত "নুসরাহ" কেন অন্বেষণ করেন নি? হয় সেখানে "নুসরাহ" জাতীয় কোন শব্দ উনি ব্যবহার করেন নি বলে সেখানে খিলাফাত প্রতিষ্ঠা করতে চান নি, না হয় কালেমার ভিতরেই নবীর(সা) প্রধান হওয়ার সকল মর্ম নিহিত আছে। আশা করি আপনি বুদ্ধি খাটিয়ে ব্যাপারটা বুঝতে পারবেন । সীরাত থেকে যেহেতু পাওয়া যায় যে, নুসরাহ-বিহীনভাবে উনি(সা) মক্কায় খিলাফাত প্রতিষ্ঠা করতে চেয়েছিলেন, তারমানে "নুসরাহ" আসলে খিলাফাত প্রতিষ্ঠার জন্য কোন বিষয়ই না, শর্ত তো দুরের কথা।
Comment