প্রশ্ন# সম্প্রতি বাবুনগরী সাহেব রাসূলুল্লাহর ﷺ অবমাননাকারীদের গুপ্তহত্যাকে সন্ত্রাস হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন। আপনারা সঠিক হলে এরকম একজন শ্রদ্ধেয় আলিম আপনাদের বিরোধিতা করছে? এ ব্যাপারে আপনার বক্তব্য কি?
.
.
#উত্তর – আলিমগণ নবীদের ওয়ারিশ। একারনে আলিমদের সম্মান প্রাপ্র্য। এছাড়া বয়সে প্রবীন ব্যক্তিদের সম্মান করাও শারীয়াহর নিয়ম। আল্লামা জুনায়েদ বাবুনগরী একজন বর্ষীয়ান আলিম হিসেবে এ দুই অর্থেই সম্মানের পাত্র।
.
তবে আলিমদের সম্মানের ক্ষেত্রে আমাদের একটি বিষয়ে পরিষ্কার ধারণা থাকা প্রয়োজন। আর তা হল আলিমদের সম্মানের বিষয়টা কিসের সাথে সম্পর্কিত। আলিমদের ব্যক্তি পরিচয়ের কারনে আমরা তাদের সম্মান করি না। কোন আলিম কোন অঞ্চলের অধিবাসি, কোন শিক্ষাকেন্দ্রে তিনি পড়েছেন – এসবের উপর ভিত্তি করেও আলিমদের সম্মান করা হয় না।
.
আলিমদের সম্মান করা হয় নবীদের ওয়ারিশ হবার কারনে। আর নবীদের ওয়ারিশ হবার অর্থ নবীদের দায়িত্ব পালন করা। হক্বকে সুস্পষ্ট ভাবে বর্ণনা করা আর বাতিলকে চিনিয়ে দেওয়া - ত্বাগুতকে অবিশ্বাস এবং আল্লাহর উপর বিশ্বাস নিজে করা এবং এর দিকে আহবান করা নববী দাওয়াতের বৈশিষ্ট্য। আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআলা বলেন -
.
আমি প্রত্যেক উম্মতের মধ্যেই রাসূল প্রেরণ করেছি এই মর্মে যে, তোমরা আল্লাহর ইবাদত কর এবং তাগুত থেকে নিরাপদ থাক। [আন-নাহল, ৩৬]
.
সুতরাং আলিমদের প্রতি সম্মানে বিষয়টি বংশীয় পরিচয়ের মতো কোন বিষয় না যা জন্মসূত্রে বা সার্টিফিকেটের মাধ্যমে পাওয়া সম্ভব। এবং এ বিষয়টি এমন কিছু না যা একবার আপনি অর্জন করলে তা ক্বিয়ামত পর্যন্ত অপরিবর্তিত থাকবে। বরং এটি এমন একটি বিষয় যা কাজের সাথে সম্পর্কিত। আলিমদের সম্মানের বিষয়টি কুরআন ও সুন্নাহর অনুসরণের সাথে সম্পর্কিত।
.
যতোক্ষন একজন আলিম কুরআন ও সুন্নাহর অনুসরণ করবেন ততোক্ষন তাকে সম্মান করা হবে। যতোক্ষন একজন আলিম নববী দাওয়াতের দায়িত্ব পালন করবেন ততোক্ষন তাকে নবীর ওয়ারিশ গন্য করা হবে। কিন্তু যদি কোন সম্মানিত আলিমও কুরআন ও সুন্নাহ বিরোধী কোন বক্তব্য দেন, তখন তাকে বর্জন করতে হবে। আলিমগণ কুরআন ও সুন্নাহ থেকে প্রাপ্ত ইলমের ধারক ও বাহক হবার কারনেই তাদের সম্মান করা হয়। অতএব তারা যদি কুরআন ও সুন্নাহর বিরোধিতা করেন তবে তাদের অনুসরণ করা হবে না। কুরআন ও সুন্নাহর অনুসরণ করা হবে।
.
আর এটা অবাক হবার মতো কোন বিষয় না। বরং এরকম উদাহরণ ইসলামের প্রথম যুগ থেকেই বিদ্যমান। আল্লাহ রাসূল ﷺ এর মিরাজের ঘটনার পর শুরুর দিকে ইসলাম গ্রহণ করা বেশ কিছু লোক মুরতাদ হয়ে যায়। অর্থাৎ এক পর্যায়ে এরা সাহাবা ছিল। কিন্তু রাসূলুল্লাহর ﷺ জীবদ্দশাতেই তারা মুরতাদ হয়ে যায়। এখন কেউ কি বলবে, এমন লোকের সম্মান করতে কারন তারা রাসূলুল্লাহ ﷺ কে সচক্ষে দেখেছিলেন, এবং ওয়াহী নাযিল হওয়ার সময়ে উপস্থিত ছিলেন এবং প্রথম দিকে ইসলাম গ্রহণ করেছিলেন? অবশ্যই না।
.
হতে পারেন তিনি আল্লামা জুনায়েদ বাবুনগরী বা আল্লামা শফী, হতে পারেন শায়খ সাইফুল্লাহ মাদানী কিংবা শায়খ আবদূর রাজ্জাক বিন ইউসুফ , হতে পারেন মুফতি তাক্বি উসমানী কিংবা শায়খ বিন বায – আমরা তাদেরকে মূর্তি হিসেবে গ্রহণ করি না, যাদের অন্ধভাবে অনুসরণ করব, তারা যাই বলুক না কেন। সম্মানের কারনে হক্বকে আমরা ছেড়ে দিতে পারি না। সেই এখতিয়ার আল্লাহ আমাদের দেন নি। হক্ব হক্বের জায়গায়, সম্মান সম্মানের জায়গায়।
.
আল্লামা জুনায়েদ বাবুনগরী নবীর ﷺ অবমাননাকারীদের হত্যা করার ব্যাপারে যা বলেছেন তা সম্পূর্ণ ভাবে শরীয়ত বিরোধী কথা। বরং রাসূলুল্লাহ স্বয়ং অবমাননাকারীদের হত্যার নির্দেশ দিয়েছেন, এবং সিরাতের গ্রন্থগুলোতে এরকম অসংখ্য উদাহরণ আছে। আল্লামা বাবুনগরী যদি বিস্মৃত হয়ে থাকেন তবে বিনীত ভাবে তাকে অনুরোধ করবো যেকোন সিরাতের গ্রন্থ খুলে আবার পড়ে নিতে।
.
একইভাবে গুপ্তহত্যার অসংখ্যা উদাহরণ রাসূলুল্লাহ ﷺ এর জীবনি থেকে পাওয়া যায়। রাসূলুল্লাহ ﷺ নিজে গুপ্তহত্যার আদেশ করেছেন, তিনি ﷺ নিজে অবমাননাকারীদের হত্যার নির্দেশ দিয়েছেন। ক্বুর’আন-সুন্নাহ এবং সিরাহ থেকে প্রাপ্ত দালীলের ভিত্তিতে চার মাযহাবের ইমামগণের ইজমা, ১৪০০ বছর ধরে মুসলিম উম্মাহর ইজমা হল অবমাননাকারীর শাস্তি হল হত্যা।
.
সুতরাং যদি নবী ﷺ এর অবমাননাকারীদের হত্যা করা সন্ত্রাস হয় তাহলে, ইতিহাস সাক্ষী থাকুক আমরা সন্ত্রাসী। কারন এই “সন্ত্রাস” একটি পবিত্র ইবাদাত আর গুপ্তহত্যা একটি সুন্নাহ, যা পালন করেছেন সাহাবা রাদ্বিয়াল্লাহু আনহুম ওয়া আজমাইন নবী কারীম ﷺ এর নির্দেশে। আর নিশ্চয় যে এ সত্য অস্বীকার করে হয় সে এ বিষয়টি সম্পর্কে অজ্ঞ অথবা তাঁকে শয়তান করেছে বিভ্রান্ত ।
.
সুতরাং দ্বীনের সুস্পষ্ট কোন বিধানের বিরোধিতা করা হলে, সেটা যেই করুক, তাতে সে বিধান পরিবর্তিত হয় না। বরং যে ব্যক্তি দ্বীনের সুস্পষ্ট বিষয় নিয়ে বিভ্রান্তি সৃষ্টি করছে, তা যে কারনেই হোক তার ব্যাপারে শারীয়াহ অনুযায়ী দৃষ্টিভঙ্গি এবং অবস্থানের পরিবর্তন হয়। ইসলাম জুনায়েদ বাবুনগরীর মুখাপেক্ষী না। জুনায়েদ বাবুনগরী ইসলামের মুখাপেক্ষী। আল্লাহর রাসূলের সম্মান ﷺ এমন একটি বিষয় যার জন্য জুনায়েদ বাবুনগরী কেন সমগ্র মানবজাতি যদিও এর বিরোধিতা করে তবুও ইন শা আল্লাহ মুজাহিদিনের অবস্থান এ ব্যাপারে পরিবর্তিত হবে না।
.
কারন মুজাহিদগণ ব্যক্তির কিংবা মানব রচিত মূর্তির অনুসরণ করে না। তারা অনুসরণ করে ক্বুরআন ও সুন্নাহর, উম্মাতের ইমামগণের ইজমার। অতএব যদি আল্লাহ রাসূলের সম্মানের জন্য সমগ্র দুনিয়া জ্বালিয়ে দিতে হয় তবে হাসি মুখে মুজাহিদগণ তা করবেন।
.
রাসুলুল্লাহ ﷺ এর জন্য আমাদের পিতামাতা কুরবান হোক। আল্লাহর কসম আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের ﷺ জন্য আমাদের জীবন সস্তা। আল্লাহর কসম ! আমাদের এ জীবন অর্থহীন যদি আমরা বেঁচে থাকা অবস্থায়, আমাদের শরীরে উষ্ণ রক্ত প্রবাহিত হচ্ছে এমন অবস্থায় মুরতাদ-কাফির-ইসলামবিদ্বেষীরা অবাধে, সগর্বে রাসূলুল্লাহ ﷺ এর অবমাননা করবে আর আমরা চুপ থাকবো।
.
আল্লাহর কসম! রাসূলুল্লাহর অবমাননাকারীদের হত্যার বিষয়টি ফিলিস্তীন, কাশ্মীর, আরাকান, সিরিয়া, আফগানিস্তান,দখলকৃত সকল মুসলিম ভূমি পুনরুদ্ধারের চাইতে মুজাহিদিনের কাছে অধিক গুরুত্বপূর্ণ, অধিক প্রিয়। আল্লাহর কসম নির্যাতিত মুসলিম জনগোষ্ঠীকে সাহায্যের চাইতেও নবীর অবমাননাকারীদের শাস্তি দেওয়া অধিক গুরুত্বপূর্ণ। কারন যদি উম্মাতের নবীকেই আক্রমন করা হয়, যদি নবীরও নিরাপত্তা না থাকে, তবে সে উম্মাতের আর বাকি কি থাকে?
.
সুতরাং জুনায়েদ বাবুনগরী কিংবা অন্য যেকোন কেউ যতোক্ষন পর্যন্ত এক্ষেত্রে ক্বুর’আন ও সুন্নাহ অনুযায়ী বক্তব্য পেশ না করছেন ততোক্ষন তাদের এ কথা বাতিল বলেই গন্য হবে। বরং দুর্ভাগ্যের বিষয় হল এ আলিমগণই নবীর অবমাননাকারীদের ফাঁসির দাবিতে ত্বাগুত হাসিনার কাছে দাবি জানিয়েছিল। আর জবাবে ত্বাগুত ও তার বাহিনী নির্বিচারে শাপলা চত্বরে তাদের আক্রমন করেছিল, হত্যা করেছিল, লাঞ্ছিত করেছিল, আক্ষরিক ভাবে কানে ধরে মুসলিমদের, তালিবুল ইলমদের বিতাড়িত করেছিল।
.
না মিডিয়া, না সুশীল সমাজ, না আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়, না সরকার, না আওয়ামী লীগ, না বিএনপি, না জামায়েতে ইসলামী, না অ্যামেরিকা, না তুর্কী, না সাউদি, না ভারত, না পাকিস্তান – কেউ তখন এগিয়ে আসে নি এ যুলুম থামাতে। কেউ এগিয়ে আসেনি নবীর ﷺ অবমাননাকারীদের শাস্তি দিতে।
.
আল্লাহর ইচ্ছায় এগিয়ে এসেছিল মুজাহিদিন ফি সাবিলিল্লাহ। আল্লাহর ইচ্ছায় মুজাহিদিনরা একে হত্যা করেছেন অবমাননাকারীদের, তারা মুরতাদ-কাফিরদের শরীরকে আর মুমিনদের অন্তরকে শীতল করেছেন। যে দাবি ত্বগুতের কাছে জুনায়েদ বাবুনগরীরা নিয়ে গিয়ে লাঞ্ছিত হয়েছিলেন, সে দাবি বাস্তবায়িত করেছেন মুজাহিদিন, এবং সকল প্রশংসা আল্লাহর সাফল্য শুধুমাত্র তার পক্ষ থেকেই। অথচ আজ এসব নেতারা সরকারের মনরক্ষা করে বক্তব্য দেয় আর মুজাহিদিনের বিরোধিতা করেন। কিছু মানুষ উম্মাহর চক্ষুগুলোকে শীতল করে উম্মাহর অন্তরকে প্রশান্ত করে, আর কিছু লোক উম্মাহর সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করে। সত্য বলেছেন উম্মী নবী, সত্য বলেছেন রাহমাতুললিল আলামিন, সত্য বলেছেন আমার নবী, মুহাম্মাদ ইবন আবদুল্লাহ আল আরাবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম -
.
যদি তুমি কোন লজ্জা অনুভব না করো, তবে তোমার যা ইচ্ছে তাই করো। [বুখারি]
.
যদি রাসূলুল্লাহ ﷺ এর অবমাননাকারীদের হত্যা করা, তাদের অন্তরে ত্রাসের সৃষ্টি করা সন্ত্রাস হয় তবে ইতিহাস সাক্ষী থাক আমরা সন্ত্রাসী। ইন শা আল্লাহ এ সন্ত্রাস, এ অবমাননাকারীদের হত্যা আমাদের শরীরে এক বিন্দু রক্ত অবশিষ্ট থাকা পর্যন্ত চলবে ইনশাআল্লাহ।
.
আর উম্মতের যেসমস্ত বীর তরুণেরা এগিয়ে এসেছেন এ সমস্ত অবমাননাকারীদের তাদের প্রাপ্য বুঝিয়ে দেবার জন্য, তাদের প্রতি আমি তাই বলি যা বলেছেন আল-কায়েদা জাজিরাতুল আরবের সম্মানিত ক্কায়েদ শায়খ আবু মিক্কদাদ আল কিন্দি (হাফিজাহুল্লাহ) –
"এবং আল্লাহ তা'আলা তাদের পুরস্কৃত করুন যারা এই দ্বীন ও দ্বীনের পবিত্রতার জন্য উঠে দাড়িয়েছেন।
আল্লাহ তা'আলা এই মহান মুজাহিদিনদের বরকতময় করুন যারা "ইসলামের বিজয় ও দ্বীনের পবিত্রতা" রক্ষাকে অগ্রাধিকার দিয়েছেন।
এবং, আমাদের কোনো প্রশংসাসূচক শব্দই এসকল সম্মানিত ভাইদের সাহসিকতা ও ত্যাগের প্রতি সুবিচার করতে পারবে না, যারা ভারতীয় উপমহাদেশে দ্বীনের উপহাসকারী ও রাসুল (সা) এর অবমাননাকারীদের হত্যা করেছেন।"
সূত্রঃ "যদি তোমরা ফিরে আসো তবে আমরাও ফিরে আসব" শীর্ষক ভিডিও বার্তা, আল মালাহিম মিডিয়া
(জংগীর সাথে কথোপকথন পেজ থেকে সংগ্রহিত)
.
.
#উত্তর – আলিমগণ নবীদের ওয়ারিশ। একারনে আলিমদের সম্মান প্রাপ্র্য। এছাড়া বয়সে প্রবীন ব্যক্তিদের সম্মান করাও শারীয়াহর নিয়ম। আল্লামা জুনায়েদ বাবুনগরী একজন বর্ষীয়ান আলিম হিসেবে এ দুই অর্থেই সম্মানের পাত্র।
.
তবে আলিমদের সম্মানের ক্ষেত্রে আমাদের একটি বিষয়ে পরিষ্কার ধারণা থাকা প্রয়োজন। আর তা হল আলিমদের সম্মানের বিষয়টা কিসের সাথে সম্পর্কিত। আলিমদের ব্যক্তি পরিচয়ের কারনে আমরা তাদের সম্মান করি না। কোন আলিম কোন অঞ্চলের অধিবাসি, কোন শিক্ষাকেন্দ্রে তিনি পড়েছেন – এসবের উপর ভিত্তি করেও আলিমদের সম্মান করা হয় না।
.
আলিমদের সম্মান করা হয় নবীদের ওয়ারিশ হবার কারনে। আর নবীদের ওয়ারিশ হবার অর্থ নবীদের দায়িত্ব পালন করা। হক্বকে সুস্পষ্ট ভাবে বর্ণনা করা আর বাতিলকে চিনিয়ে দেওয়া - ত্বাগুতকে অবিশ্বাস এবং আল্লাহর উপর বিশ্বাস নিজে করা এবং এর দিকে আহবান করা নববী দাওয়াতের বৈশিষ্ট্য। আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআলা বলেন -
.
আমি প্রত্যেক উম্মতের মধ্যেই রাসূল প্রেরণ করেছি এই মর্মে যে, তোমরা আল্লাহর ইবাদত কর এবং তাগুত থেকে নিরাপদ থাক। [আন-নাহল, ৩৬]
.
সুতরাং আলিমদের প্রতি সম্মানে বিষয়টি বংশীয় পরিচয়ের মতো কোন বিষয় না যা জন্মসূত্রে বা সার্টিফিকেটের মাধ্যমে পাওয়া সম্ভব। এবং এ বিষয়টি এমন কিছু না যা একবার আপনি অর্জন করলে তা ক্বিয়ামত পর্যন্ত অপরিবর্তিত থাকবে। বরং এটি এমন একটি বিষয় যা কাজের সাথে সম্পর্কিত। আলিমদের সম্মানের বিষয়টি কুরআন ও সুন্নাহর অনুসরণের সাথে সম্পর্কিত।
.
যতোক্ষন একজন আলিম কুরআন ও সুন্নাহর অনুসরণ করবেন ততোক্ষন তাকে সম্মান করা হবে। যতোক্ষন একজন আলিম নববী দাওয়াতের দায়িত্ব পালন করবেন ততোক্ষন তাকে নবীর ওয়ারিশ গন্য করা হবে। কিন্তু যদি কোন সম্মানিত আলিমও কুরআন ও সুন্নাহ বিরোধী কোন বক্তব্য দেন, তখন তাকে বর্জন করতে হবে। আলিমগণ কুরআন ও সুন্নাহ থেকে প্রাপ্ত ইলমের ধারক ও বাহক হবার কারনেই তাদের সম্মান করা হয়। অতএব তারা যদি কুরআন ও সুন্নাহর বিরোধিতা করেন তবে তাদের অনুসরণ করা হবে না। কুরআন ও সুন্নাহর অনুসরণ করা হবে।
.
আর এটা অবাক হবার মতো কোন বিষয় না। বরং এরকম উদাহরণ ইসলামের প্রথম যুগ থেকেই বিদ্যমান। আল্লাহ রাসূল ﷺ এর মিরাজের ঘটনার পর শুরুর দিকে ইসলাম গ্রহণ করা বেশ কিছু লোক মুরতাদ হয়ে যায়। অর্থাৎ এক পর্যায়ে এরা সাহাবা ছিল। কিন্তু রাসূলুল্লাহর ﷺ জীবদ্দশাতেই তারা মুরতাদ হয়ে যায়। এখন কেউ কি বলবে, এমন লোকের সম্মান করতে কারন তারা রাসূলুল্লাহ ﷺ কে সচক্ষে দেখেছিলেন, এবং ওয়াহী নাযিল হওয়ার সময়ে উপস্থিত ছিলেন এবং প্রথম দিকে ইসলাম গ্রহণ করেছিলেন? অবশ্যই না।
.
হতে পারেন তিনি আল্লামা জুনায়েদ বাবুনগরী বা আল্লামা শফী, হতে পারেন শায়খ সাইফুল্লাহ মাদানী কিংবা শায়খ আবদূর রাজ্জাক বিন ইউসুফ , হতে পারেন মুফতি তাক্বি উসমানী কিংবা শায়খ বিন বায – আমরা তাদেরকে মূর্তি হিসেবে গ্রহণ করি না, যাদের অন্ধভাবে অনুসরণ করব, তারা যাই বলুক না কেন। সম্মানের কারনে হক্বকে আমরা ছেড়ে দিতে পারি না। সেই এখতিয়ার আল্লাহ আমাদের দেন নি। হক্ব হক্বের জায়গায়, সম্মান সম্মানের জায়গায়।
.
আল্লামা জুনায়েদ বাবুনগরী নবীর ﷺ অবমাননাকারীদের হত্যা করার ব্যাপারে যা বলেছেন তা সম্পূর্ণ ভাবে শরীয়ত বিরোধী কথা। বরং রাসূলুল্লাহ স্বয়ং অবমাননাকারীদের হত্যার নির্দেশ দিয়েছেন, এবং সিরাতের গ্রন্থগুলোতে এরকম অসংখ্য উদাহরণ আছে। আল্লামা বাবুনগরী যদি বিস্মৃত হয়ে থাকেন তবে বিনীত ভাবে তাকে অনুরোধ করবো যেকোন সিরাতের গ্রন্থ খুলে আবার পড়ে নিতে।
.
একইভাবে গুপ্তহত্যার অসংখ্যা উদাহরণ রাসূলুল্লাহ ﷺ এর জীবনি থেকে পাওয়া যায়। রাসূলুল্লাহ ﷺ নিজে গুপ্তহত্যার আদেশ করেছেন, তিনি ﷺ নিজে অবমাননাকারীদের হত্যার নির্দেশ দিয়েছেন। ক্বুর’আন-সুন্নাহ এবং সিরাহ থেকে প্রাপ্ত দালীলের ভিত্তিতে চার মাযহাবের ইমামগণের ইজমা, ১৪০০ বছর ধরে মুসলিম উম্মাহর ইজমা হল অবমাননাকারীর শাস্তি হল হত্যা।
.
সুতরাং যদি নবী ﷺ এর অবমাননাকারীদের হত্যা করা সন্ত্রাস হয় তাহলে, ইতিহাস সাক্ষী থাকুক আমরা সন্ত্রাসী। কারন এই “সন্ত্রাস” একটি পবিত্র ইবাদাত আর গুপ্তহত্যা একটি সুন্নাহ, যা পালন করেছেন সাহাবা রাদ্বিয়াল্লাহু আনহুম ওয়া আজমাইন নবী কারীম ﷺ এর নির্দেশে। আর নিশ্চয় যে এ সত্য অস্বীকার করে হয় সে এ বিষয়টি সম্পর্কে অজ্ঞ অথবা তাঁকে শয়তান করেছে বিভ্রান্ত ।
.
সুতরাং দ্বীনের সুস্পষ্ট কোন বিধানের বিরোধিতা করা হলে, সেটা যেই করুক, তাতে সে বিধান পরিবর্তিত হয় না। বরং যে ব্যক্তি দ্বীনের সুস্পষ্ট বিষয় নিয়ে বিভ্রান্তি সৃষ্টি করছে, তা যে কারনেই হোক তার ব্যাপারে শারীয়াহ অনুযায়ী দৃষ্টিভঙ্গি এবং অবস্থানের পরিবর্তন হয়। ইসলাম জুনায়েদ বাবুনগরীর মুখাপেক্ষী না। জুনায়েদ বাবুনগরী ইসলামের মুখাপেক্ষী। আল্লাহর রাসূলের সম্মান ﷺ এমন একটি বিষয় যার জন্য জুনায়েদ বাবুনগরী কেন সমগ্র মানবজাতি যদিও এর বিরোধিতা করে তবুও ইন শা আল্লাহ মুজাহিদিনের অবস্থান এ ব্যাপারে পরিবর্তিত হবে না।
.
কারন মুজাহিদগণ ব্যক্তির কিংবা মানব রচিত মূর্তির অনুসরণ করে না। তারা অনুসরণ করে ক্বুরআন ও সুন্নাহর, উম্মাতের ইমামগণের ইজমার। অতএব যদি আল্লাহ রাসূলের সম্মানের জন্য সমগ্র দুনিয়া জ্বালিয়ে দিতে হয় তবে হাসি মুখে মুজাহিদগণ তা করবেন।
.
রাসুলুল্লাহ ﷺ এর জন্য আমাদের পিতামাতা কুরবান হোক। আল্লাহর কসম আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের ﷺ জন্য আমাদের জীবন সস্তা। আল্লাহর কসম ! আমাদের এ জীবন অর্থহীন যদি আমরা বেঁচে থাকা অবস্থায়, আমাদের শরীরে উষ্ণ রক্ত প্রবাহিত হচ্ছে এমন অবস্থায় মুরতাদ-কাফির-ইসলামবিদ্বেষীরা অবাধে, সগর্বে রাসূলুল্লাহ ﷺ এর অবমাননা করবে আর আমরা চুপ থাকবো।
.
আল্লাহর কসম! রাসূলুল্লাহর অবমাননাকারীদের হত্যার বিষয়টি ফিলিস্তীন, কাশ্মীর, আরাকান, সিরিয়া, আফগানিস্তান,দখলকৃত সকল মুসলিম ভূমি পুনরুদ্ধারের চাইতে মুজাহিদিনের কাছে অধিক গুরুত্বপূর্ণ, অধিক প্রিয়। আল্লাহর কসম নির্যাতিত মুসলিম জনগোষ্ঠীকে সাহায্যের চাইতেও নবীর অবমাননাকারীদের শাস্তি দেওয়া অধিক গুরুত্বপূর্ণ। কারন যদি উম্মাতের নবীকেই আক্রমন করা হয়, যদি নবীরও নিরাপত্তা না থাকে, তবে সে উম্মাতের আর বাকি কি থাকে?
.
সুতরাং জুনায়েদ বাবুনগরী কিংবা অন্য যেকোন কেউ যতোক্ষন পর্যন্ত এক্ষেত্রে ক্বুর’আন ও সুন্নাহ অনুযায়ী বক্তব্য পেশ না করছেন ততোক্ষন তাদের এ কথা বাতিল বলেই গন্য হবে। বরং দুর্ভাগ্যের বিষয় হল এ আলিমগণই নবীর অবমাননাকারীদের ফাঁসির দাবিতে ত্বাগুত হাসিনার কাছে দাবি জানিয়েছিল। আর জবাবে ত্বাগুত ও তার বাহিনী নির্বিচারে শাপলা চত্বরে তাদের আক্রমন করেছিল, হত্যা করেছিল, লাঞ্ছিত করেছিল, আক্ষরিক ভাবে কানে ধরে মুসলিমদের, তালিবুল ইলমদের বিতাড়িত করেছিল।
.
না মিডিয়া, না সুশীল সমাজ, না আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়, না সরকার, না আওয়ামী লীগ, না বিএনপি, না জামায়েতে ইসলামী, না অ্যামেরিকা, না তুর্কী, না সাউদি, না ভারত, না পাকিস্তান – কেউ তখন এগিয়ে আসে নি এ যুলুম থামাতে। কেউ এগিয়ে আসেনি নবীর ﷺ অবমাননাকারীদের শাস্তি দিতে।
.
আল্লাহর ইচ্ছায় এগিয়ে এসেছিল মুজাহিদিন ফি সাবিলিল্লাহ। আল্লাহর ইচ্ছায় মুজাহিদিনরা একে হত্যা করেছেন অবমাননাকারীদের, তারা মুরতাদ-কাফিরদের শরীরকে আর মুমিনদের অন্তরকে শীতল করেছেন। যে দাবি ত্বগুতের কাছে জুনায়েদ বাবুনগরীরা নিয়ে গিয়ে লাঞ্ছিত হয়েছিলেন, সে দাবি বাস্তবায়িত করেছেন মুজাহিদিন, এবং সকল প্রশংসা আল্লাহর সাফল্য শুধুমাত্র তার পক্ষ থেকেই। অথচ আজ এসব নেতারা সরকারের মনরক্ষা করে বক্তব্য দেয় আর মুজাহিদিনের বিরোধিতা করেন। কিছু মানুষ উম্মাহর চক্ষুগুলোকে শীতল করে উম্মাহর অন্তরকে প্রশান্ত করে, আর কিছু লোক উম্মাহর সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করে। সত্য বলেছেন উম্মী নবী, সত্য বলেছেন রাহমাতুললিল আলামিন, সত্য বলেছেন আমার নবী, মুহাম্মাদ ইবন আবদুল্লাহ আল আরাবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম -
.
যদি তুমি কোন লজ্জা অনুভব না করো, তবে তোমার যা ইচ্ছে তাই করো। [বুখারি]
.
যদি রাসূলুল্লাহ ﷺ এর অবমাননাকারীদের হত্যা করা, তাদের অন্তরে ত্রাসের সৃষ্টি করা সন্ত্রাস হয় তবে ইতিহাস সাক্ষী থাক আমরা সন্ত্রাসী। ইন শা আল্লাহ এ সন্ত্রাস, এ অবমাননাকারীদের হত্যা আমাদের শরীরে এক বিন্দু রক্ত অবশিষ্ট থাকা পর্যন্ত চলবে ইনশাআল্লাহ।
.
আর উম্মতের যেসমস্ত বীর তরুণেরা এগিয়ে এসেছেন এ সমস্ত অবমাননাকারীদের তাদের প্রাপ্য বুঝিয়ে দেবার জন্য, তাদের প্রতি আমি তাই বলি যা বলেছেন আল-কায়েদা জাজিরাতুল আরবের সম্মানিত ক্কায়েদ শায়খ আবু মিক্কদাদ আল কিন্দি (হাফিজাহুল্লাহ) –
"এবং আল্লাহ তা'আলা তাদের পুরস্কৃত করুন যারা এই দ্বীন ও দ্বীনের পবিত্রতার জন্য উঠে দাড়িয়েছেন।
আল্লাহ তা'আলা এই মহান মুজাহিদিনদের বরকতময় করুন যারা "ইসলামের বিজয় ও দ্বীনের পবিত্রতা" রক্ষাকে অগ্রাধিকার দিয়েছেন।
এবং, আমাদের কোনো প্রশংসাসূচক শব্দই এসকল সম্মানিত ভাইদের সাহসিকতা ও ত্যাগের প্রতি সুবিচার করতে পারবে না, যারা ভারতীয় উপমহাদেশে দ্বীনের উপহাসকারী ও রাসুল (সা) এর অবমাননাকারীদের হত্যা করেছেন।"
সূত্রঃ "যদি তোমরা ফিরে আসো তবে আমরাও ফিরে আসব" শীর্ষক ভিডিও বার্তা, আল মালাহিম মিডিয়া
(জংগীর সাথে কথোপকথন পেজ থেকে সংগ্রহিত)
Comment