ইশরাকের দুই রাকাত সালাত আদায় করলে কি হজ্জ করার দরকার নেই?
আনাস বিন মালিক (রাদি) হতে বর্ণিত,
রাসুলুল্লাহ ﷺ বলেন, "যে ব্যক্তি ফজরের নামায জামাতের সহিত আদায় করে। অতঃপর, সূর্যোদয় পর্যন্ত আল্লাহ্* তা'আলার জিকিরে মশগুল থাকে, তারপর দুই রাকাত নফল পরে তবে সে হজ্জ ও উমরার সাওয়াব লাভ করে।
আনাস (রাদি) বলেন, নবী করিম ﷺ তিন বার বলেন, পরিপূর্ণ হজ্জ ও উমরার সাওয়াব।"
("মুন্তাখাবে হাদিস", মাওলানা ইউসুফ কান্ধলভি কর্তৃক সংকলিত, পৃষ্ঠা ২৫৪, অধ্যায়- নামায, হাদিস ১৭৪)
রাসুলুল্লাহ ﷺ বলেন, "যে ব্যক্তি ফজরের নামায জামাতের সহিত আদায় করে। অতঃপর, সূর্যোদয় পর্যন্ত আল্লাহ্* তা'আলার জিকিরে মশগুল থাকে, তারপর দুই রাকাত নফল পরে তবে সে হজ্জ ও উমরার সাওয়াব লাভ করে।
আনাস (রাদি) বলেন, নবী করিম ﷺ তিন বার বলেন, পরিপূর্ণ হজ্জ ও উমরার সাওয়াব।"
("মুন্তাখাবে হাদিস", মাওলানা ইউসুফ কান্ধলভি কর্তৃক সংকলিত, পৃষ্ঠা ২৫৪, অধ্যায়- নামায, হাদিস ১৭৪)
এখন কেউ যদি একথা বলে, "যে ব্যক্তির ফজর সালাত জামাতের সাথে আদায় করার পর সূর্যোদয় পর্যন্ত জিকির করে এবং অতঃপর দুই রাকাত চাশতের নামায পরে তবে সে নিষ্পাপ শিশুর মত হয়ে যাবে, কেননা হজ্জ করার পর মানুষ মাসুম শিশুর মত গুনাহমুক্ত হয়ে যায়।" তবে তাকে অপব্যখ্যাকারী বলা হবে কি?
কেউ যদি হজ্জকালীন কাবা তাওয়াফ, আরাফার ময়দানে অবস্থানের সকল ফজিলত ইশরাকের সালাতের সাথে সম্পৃক্ত করে তবে তাকে অপব্যখ্যাকারী বলা হবে কি?
কেউ যদি ইশরাকের সালাতের ফজিলত বর্ণনা করতে গিয়ে হজ্জ ও উমরাহ'র সকল ফজিলত নিয়ে আসে তবে তাকে অপব্যখ্যাকারী বলা হবে কি?
#এবং কেউ যদি ফজরের পর সূর্যোদয় পর্যন্ত জিকির-আজকার করে ২রাকাত ইশরাকের সালাত আদায় করে হজ্জের ফরজিয়াত আদায়ের দাবী করে বসে তবে সেটা কি গ্রহণযোগ্য হবে!!!?
ইশরাকের সালাতের ফজিলত বর্ণনা করতে গিয়ে হজ্জ-উমরাহ'র ফজিলত সংক্রান্ত সকল আয়াত-হাদিস ব্যাপকভাবে ব্যবহার করা যদি অপব্যখ্যা ও গোমরাহি হয় তবে,
জিহাদ ফি সাবিলিল্লাহ'র সকল আয়াত ও হাদিস দাওয়াত ও তাবলীগের ক্ষেত্রে ব্যাপকভাবে ব্যবহার করা কেন অপব্যখ্যা ও গোমরাহি হবে না??? !!
আশা করি, তাবলীগের সাথী ভাইয়েরা ও মুরুব্বিরা বিষয়টি নিয়ে ফিকির করবেন...
=====
জেনে রাখুন, ইশরাকের সালাতের ফজিলত বোঝানোর জন্য হজ্জ ও উমরাহ'র সাথে তুলনা দেয়াই যথেষ্ট। ইশরাকের সালাতের ফজিলত বর্ণনার উদ্দেশ্যে হজ্জ-উমরাহ সংশ্লিষ্ট সকল ফজিলতের আয়াত-হাদিস ব্যবহার কোনোভাবেই জায়েজ নেই।
দেখুন দেওবন্দের শাইখুল হাদিস সাঈদ আহমাদ পালনপুরি (দা বা) কী বলছেন -
"জিহাদ ইসলামের একটি বিশেষ পরিভাষা। কুরআন ও হাদীসে যখন এই শব্দ উল্লেখ করা হয় তখন এর দ্বারা قتال في سبيل الله (ক্বিতাল ফি সাবিলিল্লাহ) উদ্দেশ্য হয়। তবে হ্যাঁ কিছু কিছু কাজকে জিহাদের সাথে মিলানো হয়েছে। এ মিলানোটুকুই এ কাজগুলোর ফজিলতের জন্য যথেষ্ট। যেমন হাদীসে আছেঃ
রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন যে ইলমের খোঁজার জন্য বের হয় সে ফিরে আসা পর্যন্ত আল্লাহর রাস্তায় আছে।‘
.
এখানে রাসূলুল্ললাহ ﷺ ইলম অন্বেষণের পথকে في سبيل الله (ফি সাবিলিল্লাহ) আখ্যা দিয়ে জিহাদের সাথে তুলনা করলেন। এই তুলনা করাটাই তালেবে ইলমের জন্য ফজিলত। এর থেকে আগে বাড়ার কোন অধিকার কারো নেই। এমনিভাবে দাওয়াত ও তাবলীগের কাজকেও في سبيل الله (ফি সাবিলিল্লাহ) এর সাথে মিলানো যেতে পারে।
আর মিলানোটাই তার ফজিলত হবে। কিন্তু তাই বলে জিহাদের সমস্ত ফজিলত তার সাথে প্রয়োগ করা في سبيل الله جهاد (জিহাদ ফি সাবিলিল্লাহ) কে তাবলীগের সাথে ‘খাস’ করা বা في سبيل الله (ফি সাবিলিল্লাহ) কে ‘আম’ করে তাবলীগকেও এর উদ্দেশ্য বানানো সম্পূর্ণ ভ্রান্ত ও ভিত্তিহীন দাবি ছাড়া আর কিছুই নয়। এ কথাগুলো অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। সর্বদা স্মরণ রাখা জরুরী।"
এছাড়াও আল্লামা তাকি উসমানি অন্য ক্ষেত্রে জিহাদের ফজিলত ব্যবহারের ক্ষেত্রে স্বতন্ত্র দলীল অপরিহার্য বলে উল্লেখ করেছেন (দেখুন- তাকমিলায়ে ফাতহুল মুলহিম), যেমনটা সাইদ আহমাদ পালনপুরি (দা বা) উল্লেখ করেছেন।
একইভাবে, ফি সাবিলিল্লাহ একটি বিশেষ পরিভাষা। কুর'আনের ভাষায় এর পারিভাষিক অর্থ "কিতাল ফি সাবিলিল্লাহ ও এর সংশ্লিষ্ট সকল কাজ!"
(সূত্রঃ তাফসিরে তাওজিহুল কুর'আন, আল্লামা তাকি উসমানি)।
ইমাম আবু হানিফা (রহঃ) -এর মতে,
الجهاد بذل الوسع والطاقة بالقتال في سبيل الله عزوجل بالنفس والمال واللسان وغير ذلك
অর্থ, ‘জিহাদ হলো আল্লাহর পথে জান, মাল, জবান ইত্যাদির সর্বশক্তি দিয়ে (কাফিরের মোকাবেলায়) যুদ্ধ চালিয়ে যাওয়া।’
(বাদায়ে ওয়াস সানায়ে, ৬ষ্ট খন্ড, ৫৭ পৃষ্ঠা)
ইমাম আবু হানিফা (রহঃ)'র ব্যখ্যার বিপরীতে তদীয় সুবিধানুজায়ী তাবলীগের মুরুব্বিদের ব্যখ্যা গ্রহণ করাই হচ্ছে অন্ধ তাকলিদের একটি প্রকার যেমনটা আল্লামা তাকি উসমানি স্বীয় কিতাব "মাজহাব কী ও কেন" তে উল্লেখ করেছেন।
দাওয়াত ও তাবলীগ সংশ্লিষ্ট কাজের ফজিলত বর্ণনা করতে গিয়ে ফি সাবিলিল্লাহ'র সকল আয়াত-হাদিস ব্যবহার করা কোনোভাবেই জায়েজ নেই। বরং এথেকে বেঁচে থাকা ফরজ।
(মাওলানা আব্দুল মালেক দা বা, "কিতাবুল জিহাদ" গ্রন্থের ভূমিকা, পৃষ্ঠা ৩৭)
(দাওয়াত ও তাবলীগের ক্ষেত্রে ফি সাবিলিল্লাহ'র আয়াত/হাদিস ব্যাপকভাবে ব্যবহারের স্বপক্ষে, ইমাম বুখারি রহঃ ফি সাবিলিল্লাহ সংক্রান্ত একটি হাদিস 'জুমু'আর সালাতে গমন' অধ্যায়ে উল্লেখ করেছেন মর্মে একটি দলীল তাবলীগের মুরুব্বিগণ পেশ করে থাকেন। ইনশা'আল্লাহ এব্যাপারে আলাদা আলোচনা হবে)
প্রশ্নঃ তাবলীগ বিরোধিতা কেন?
উত্তরঃ তাবলীগের সাথে জড়িত লক্ষ-কোটি মানুষ যাতে অপব্যখ্যা থেকে দূরে থেকে কবিরা গুনাহ থেকে বাঁচতে পারেন।
উল্লেখ্য, তাবলীগ জামাতের ঢালাও বিরোধিতা কখনোই উদ্দেশ্য নয়। সকল মুসলিম জামাতের মধ্যেই কিছু না কিছু ভালো দিক রয়েছে।
যেমন- বেরলবিদের বিরোধিতা বলতে সামগ্রিকভাবে তাদের সকল কাজের বিরোধিতা বোঝায় না। তাদের হাজির-নাজির, নুর-বাশার সংক্রান্ত আকিদা বিশ্বাসের বিরোধিতাকেই বোঝায়। তেমনি, তাবলীগের বিরোধিতা বলতে মসজিদে তিন দিন, চল্লিশ দিন সময় দেয়া কিংবা তাদের অন্যান্য ভালো কাজের বিরোধিতাকে বোঝানো হয় না।
জামাতে তাবলীগের একজন হিতাকাঙ্খী হিসেবেই এবিষয়গুলোর অবতারণা করেছি। দুশমনি থেকে নয়। আল্লাহ্* তা'আলা আমাকে মাফ করুন। আমিন।
"যে লোক সৎকাজের জন্য কোন সুপারিশ করবে, তা থেকে সেও একটি অংশ পাবে। আর যে লোক সুপারিশ করবে মন্দ কাজের জন্যে সে তার বোঝারও একটি অংশ পাবে। বস্তুতঃ আল্লাহ সর্ব বিষয়ে ক্ষমতাশীল।" - (সুরা আন নিসা, ৪:৮৫)
আল্লাহ্* তা'আলা আমাদের বিষয়টি বোঝার এবং তদানুজায়ী আমল করার তাওফিক দান করুন। আমিন।
Comment